এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • সীমানা - ২

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০২ এপ্রিল ২০২২ | ৪৪৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • শুরু হলো শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়ের নতুন পাক্ষিক ধারাবাহিক উপন্যাস - 'সীমানা'।
    বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশক এই উপন্যাসের সময়কাল। রাজনৈতিক আন্দোলন ছাড়াও সমাজ শিল্প এবং সাহিত্যের নানা আন্দোলনের কারণে গত একশো বছরের ভারতীয় ইতিহাসে এই সময়কাল বিশিষ্ট। উপন্যাসটির নায়ক এই সময়কালই।
    এই রচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন কাজি নজরুল ইসলাম। নজরুলের কর্মজীবনও এই দুই দশকেই ব্যাপ্ত।
    ছবি: সুনন্দ পাত্র





    মিছিল মিছিল

    গোলদীঘির লোহার বেড়ার বাইরে সীনেট হলের ঠিক উল্টো দিকের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে মুজফ্‌ফর। হ্যারিসন রোডের দিক থেকে একটা আওয়াজ, বেশ জোরে সমবেত শব্দ। ফিরে তাকায় মুজফ্‌ফর। কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট ধরে একটা মিছিল আসছে। আজ রোববার, সকাল এখন দশটা-টশটা হবে। রাস্তায় অন্য দিনের তুলনায় ভীড় একটু কম। গত কয়েকমাস ধরেই কলকাতার রাস্তায় মিছিল একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে, নানা কারণে। এক-আধটা মিছিলে হেঁটেওছে মুজফ্‌ফর। পঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগের নারকীয় গণহত্যার প্রতিবাদে যে মিছিল বেরিয়েছিল কলকাতায়, সেই মিছিলেও সামিল হয়েছিল সে। সেই মিছিল শেষ হতে পারেনি। গুলি চলেছিল সেখানে। কলকাতায় পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ছ'জন, আহত বারো-তেরো জন। সেই থেকেই মিছিল কলকাতায় এখন প্রতিবাদের একটি জোরালো ভাষা।

    মুজফ্‌ফর একটু কৌতূহল নিয়েই তাকিয়ে থাকে মিছিলটার দিকে। সামনেই ক্যালকাটা পুলিশের একটা প্রিজন-ভ্যান, তার ভিতর উর্দি-পরা পুলিশের লোক কয়েকজন। মিছিলের একেবারে পুরোভাগে, চেহারা দেখে মনে হয় কলেজের ছাত্র, এমন কয়েকজন। এরা প্রত্যেকে ধরে আছে হাত-দিয়ে-ধরে-থাকা-যাবে এমন একটা লম্বা কাঠের টুকরো, যার সঙ্গে লাগানো আছে একটা করে চাটাই। সেই চাটাইয়ে হাতে-লেখা একটা করে পোস্টার সাঁটা: রবীন্দ্রনাথের নাইটহূড ত্যাগে কংগ্রেস-অধিবেশন নীরব কেন?

    একটু অবাক হয় মুজফ্‌ফর। তার মানে, কংগ্রেস-বিরোধী মিছিল কলকাতার রাজপথে। এবং সেই মিছিলের
    শান্তিরক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে বৃটিশ পুলিশ! একটু পরেই অবিশ্যি আরও অবাক হবার পালা। সামনের দিকের ছাত্রদের পরেই মিছিলে দেখা যায় নানা বয়েসের অনেক লোককে। তাদের পোস্টার ব্যানার ইত্যাদি একটু অন্য রকমের, সেখানে কোন বিশেষ দাবির কথা নেই, কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদও নেই কিছু। তাদের পোস্টারে লেখা: মজুর-মিস্ত্রী-ফোরম্যান-অফিস কর্মচারী এক হও। সামনের ছাত্রদের অংশটুকুর তুলনায় মিছিলের এই অংশে মানুষ অনেক বেশি। ধুতি-শার্ট বা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা তথাকথিত ভদ্রলোক-চেহারার অনেক মানুষকেও দেখা যায় এই অংশে। আরও একটা ব্যাপার চোখে পড়ে মুজফ্‌ফরের, কলেজ স্ট্রীট-হ্যারিসন রোডের সংযোগস্থলে তারই মতো দাঁড়িয়ে-থাকা দর্শকদের অনেকে – এদের অনেককেই কেমন যেন চেনা-চেনা লাগে মুজফ্‌ফরের, রাস্তা-ঘাটে দেখেছে মনে হয়, হয়তো আশপাশের মেস-টেসের বাসিন্দা কেউ কেউ – দৌড়িয়ে গিয়ে মিছিলের এই অংশে মিশে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রদের অংশটা যেমন নীরব, এই অংশটা তেমন নয়। মিছিলের মাঝে মাঝে এক-একজন মানুষ মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শ্লোগান দিচ্ছে, মজুর-মিস্ত্রী-অফিস কর্মচারী এক হও, আর সঙ্গে সঙ্গে মিছিল থেকে সমবেত আওয়াজ, এক হও এক হও।

    নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকব, না মিছিলটার সঙ্গে হাঁটব একটুখানি – মুজফ্‌ফর মনস্থির করতে পারে না। দুটো ঘটনা একই সঙ্গে ঘটে গেল এমন সময়। রাস্তার ওপারে, খানিকটা কোনাকুনি দূরত্বে, আপাতত প্রেসিডেন্সী
    কলেজ-শানকিভাঙা পার করে সামনেটায়, ফুটপাত দিয়ে মিছিলের সঙ্গে সমান্তরালে হাঁটতে হাঁটতে, হাত তুলে, সম্ভবত তারই দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে কেউ। পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়ায় মুজফ্‌ফর, আর দেখতে পায় কয়েকদিন-আগে-আলাপ-হওয়া পিংলার মুখ। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই তার বাঁ-দিকের কাঁধে চাপ পড়ে একটা।
    বাঁ-দিকে ফিরে মুজফ্‌ফর যাকে দেখে তার নাম পবিত্র গাঙ্গুলি। বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীটের দোতলায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার রিডিং রূমে আলাপ এর সঙ্গে, প্রায়ই পড়তে আসে সেখানে, আর তারপর আড্ডায় জমে যায়। একটু হেসে, পবিত্রর ডান হাতখানা নিজের বাঁ-হাতের মুঠোয় ধরে মিছিলের গতিপথেই ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পিংলাকে দেখায় মুজফ্‌ফর, ঐ দেখুন পিংলা, যার কথা আপনাকে বলেছিলাম। নজরুলের বন্ধু। হাঁটতে থাকে পবিত্র আর মুজফ্‌ফর, ফুটপাত দিয়েই, মিছিলের সঙ্গে সঙ্গে। পিংলাকে কিছু বলতে হয় না। সে-ও এগোয়।

    এ ভাবে খানিকটা হাঁটার পর পবিত্র বলে, একটুখানি দাঁড়ানো যাক। মিছিলটা পুরোটাই দেখি। হাঁটতে যদি হয়, মিছিলের শেষে থাকব। মিছিলেও হাঁটলাম, অথচ ধারণা হল না কিসের মিছিল, কত বড়ো মিছিল, কারা হাঁটছে মিছিলে, এটা ঠিক নয়। দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা, হাত নেড়ে পিংলাকেও দাঁড়াতেই বলে। তারপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই মিছিলটাকে লক্ষ্য করে ভালোভাবে।

    কর্ণওয়ালিস স্ট্রীটের দিকে তাকিয়ে মিছিলের শেষ সম্বন্ধে কোন ধারণাই পাওয়া যায় না। নানারকমের পোস্টার, নানারকমের ব্যানার। হাজার হাজার মানুষ হাঁটছে। কখনও জোর শ্লোগান, কখনও বা শ্লোগান ছাড়াই হাঁটছে মানুষ। খদ্দর পরিহিত কংগ্রেস-কর্মীদের দেখা গেল, একই সঙ্গে পায়জামা-ফেজ পরিহিত খিলাফৎ আন্দোলনকারীরা। রাওলাট অ্যাক্ট প্রত্যাহারের দাবি কোন ব্যানারে, কোথাও বা পবিত্র মক্কা-মদিনার ওপর বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধ রাখার দাবি। মেসোপটেমিয়া আরব সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে খলিফার উপর খবরদারির চেষ্টার প্রতিবাদ। মিছিলের এই অংশে কোন কোন মানুষ মুজফ্‌ফরের পরিচিত। কয়েকবছর আগে খিদিরপুরের যে মাদ্রাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিল ও, সেখানকার কয়েকজন শিক্ষককেও দেখতে পেল। দেখতে পেল এমনকি নোয়াখালির সন্দ্বীপের থেকে ওরই মতো কলকাতায় ভাগ্যান্বেষণে আসা দুয়েকজনকেও। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাত নাড়িয়ে মুজফ্‌ফরকে মিছিলে যোগ দেবার জন্যে ডাকে। হাতের এবং শরীরের ভাষায় বোঝায় মুজফ্‌ফর, মিছিলেই ও আছে।

    মিছিলে এ-ছাড়াও দেখা যায় চটকল এবং সুতাকল শ্রমিকদের দীর্ঘ লাইন। ট্রামকর্মীরাও সেই সঙ্গে। ট্রামকর্মীদের মিছিলের পুরোভাগে মুজফ্‌ফর দেখতে পায় মহম্মদ দাউদকে। দাউদ আলিপুর কোর্টের উকিল। সন্দ্বীপ থেকে আসা কলকাতা বন্দরের বেশ কিছু শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ হয়েছে ওর। সেই আলাপের সূত্রেই পরিচয় হয়েছে দাউদ সাহেবের সঙ্গে। এই শ্রমিকদের মজুরীর একটা বড় অংশে ভাগ বসায় বন্দর অঞ্চলের এক ধরণের দুষ্কৃতিকারী। এরাই জাহাজের মালিকদের সঙ্গে সংযোগে কাজ যোগাড় করে দেয় অশিক্ষিত, কলকাতায় সহায়-সম্বলহীন, নতুন-আসা শ্রমিকদের। খিদিরপুরের নানা বস্তি এদের দখলে। সেই বস্তিগুলোতে থাকবারও ব্যবস্থা হয় শ্রমিকদের। জাহাজ-মালিকদের নানা অত্যাচার, যখন-তখন মজুরীর অংশ কেটে নেওয়া, এ-সবের প্রতিবাদ চলে না। শ্রমিকদেরই উপার্জনের পয়সায় জাহাজ-মালিকরা পোষে এই দুষ্কৃতিদের, এদের ছাড়া মালিকদের চলে না। এমনকি কিছুদিন আগে পর্যন্ত, চলত না নতুন-আসা শ্রমিকদেরও। এখন অবিশ্যি কোন কোন শ্রমিক তার কোন ওপরওয়ালার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মাঝে মাঝে কাজে ঢোকাতেও পারে তার গ্রাম থেকে নতুন আসা কোন কর্মপ্রার্থীকে। দাউদ এখন বন্দর ও জাহাজ-শ্রমিকদের নিজস্ব সংগঠন তৈরি করেছে। সে কংগ্রেসী নয়, খিলাফতিও নয়। আদালতের যোগাযোগে সে খানিকটা বলীয়ান। ইদানিং ট্রাম-শ্রমিকদেরও সংগঠিত করবার চেষ্টা করছে সে। মিছিলে তাদের শ্লোগানে শ্লোগানে উচ্চকিত ক্ষোভ। প্রতিবাদ মিছিলকারীদের শারীর-ভাষাতেও। সুলভ মূল্যে খাদ্য ও বস্ত্রের দাবি। আকাশছোঁয়া বাড়িভাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। সোহ্বিয়েত শ্রমজীবী বিপ্লবের জয়ধ্বনি কলিকাতা-কর্পোরেশন-শ্রমিক-কর্মচারীদের কণ্ঠে।

    মিছিলের সামনে ক্যালকাটা পুলিশের একটাই প্রিজন-ভ্যান দেখেছিল মুজফ্‌ফর, এবার পেছনে গোটা দশেক একই রকমের ভ্যান দেখা গেল। তার মানে এখানেই মিছিলের শেষ। ওদের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে-থাকা পিংলাকে হাত তুলে সঙ্কেত দিয়ে কর্পোরেশনের মিছিলকারীদের পিছনে ঢুকে পড়ে মুজফ্‌ফর আর পবিত্র। পিংলাও যোগ দেয়। হাঁটতে থাকে ওরা।

    হাঁটতে হাঁটতেই পিংলার সঙ্গে পবিত্রর পরিচয় করিয়ে দেয় মুজফ্‌ফর। পিংলা বলে, কাজিদার কাছ থেকে একটা চিঠি পেয়েছি কাল। বলতে বলতেই জামার বুক-পকেট থেকে বের করে আনে একটা পোস্টকার্ড।

    কী লিখেছে? – পোস্টকার্ডটা একবার আড় চোখে দেখে হাঁটতে হাঁটতেই প্রশ্ন করে মুজফ্‌ফর।

    আর দশদিনের মধ্যেই কলকাতায় পৌঁছোবে। এসেই জানাবে আমাকে। আপনার সঙ্গে আমি নিজে-নিজেই আলাপ করে নিয়েছি জেনে খুশিই মনে হল।

    টিকিট কিনেছে ট্রেনের? সে ব্যাপারে লিখেছে কিছু?

    নাঃ, তা লেখেনি, লিখেছে কিনবে।

    তার মানে, বুঝতে পারছেন তো, সমস্তটাই অনিশ্চিত?

    শুধু শুধু ওকে ঘাবড়িয়ে দিচ্ছেন কেন? – পবিত্র নাক গলায়।

    না না ঘাবড়িয়ে দিচ্ছি না, নজরুলের চরিত্রের মধ্যে যে একটা টেন্‌টেটিভ ব্যাপার আছে, সেটা সম্বন্ধে সতর্ক করে দিচ্ছি পিংলাকে। আপনাকে বলেছিলাম না, ওর 'ক্ষমা' কবিতাটা ওর অনুমতি ছাড়াই নাম বদলিয়ে আমি 'মুক্তি' করে ছাপিয়ে দিয়েছিলাম? আর 'ব্যথার দান' গল্পের 'লালফৌজ'-কে 'মুক্তিসেবক সৈন্যদের দল?' ও কিন্তু রেগে যায়নি একেবারেই, মনে হল খুশিই হয়েছে। ওর সঙ্গে প্রায় দু'বছরের পত্রমিতালী তো আমার, আমি খানিকটা দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি, খুব একটা ভেবেচিন্তে কিছু বলার বা করবার লোক ও নয়। দলে পড়ে অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারে মনে হয়। যা মনে এল বলে দিল তা-ই – এই টাইপের।

    আপনি ভুল বলেননি দাদা, পিংলা বলে, ওই জন্যেই তো রেগেও যায় তাড়াতাড়ি, আর পরের মুহূর্তেই হো হো করে হেসে, চল পানসি বেলঘরিয়া!

    চল পানসি বেলঘরিয়া, বলে হাসতে থাকে পবিত্র, কিন্তু আমাদের পানসি এখন চলতে চলতে যাচ্ছেটা কোথায় আহ্‌মদ সাহেব?

    দেখা যাক না কতদূর যায়, হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যথা হয়ে গেলে না-হয় আর এগোব না। কিন্তু পিংলা ভাই, বলে মুজফ্‌ফর, আপনি তো হাওড়ায় ফিরবেন, আপনার অসুবিধে হবে না তো?

    না না, ঠিক আছে, আমার তো হাঁটতে ভালোই লাগে।

    আপনি এলেন কীভাবে, অতদূর থেকে?

    হ্যাঁ, একটু হাঙ্গামা হল, পিংলা জানায়। সকাল সাড়ে সাতটা-আটটায় বেরিয়েছি, হাওড়া ময়দানে বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলুম, ট্রাম পেলুম না। একটাও ট্রামের দেখা নেই। হাঁটতে হাঁটতে হাওড়া স্টেশন। স্ট্র্যাণ্ড রোডে বড়বাজারের মুখটাতেও ট্রাম নেই। অনেকে বলল, ট্রাম নাকি চলছে না আজ। হ্যারিসন রোড ধরে হাঁটতে শুরু করলুম। চিৎপুরে এসে আটকিয়ে গেলুম। বিরাট একটা মিছিল যাচ্ছে। নাখোদা মসজিদের দিক থেকে এসে হ্যারিসন রোড পেরিয়ে সোজা যাচ্ছে উত্তরের দিকে।

    আজই? আজই আসার পথে দেখলেন এই মিছিল? – প্রশ্ন করে পবিত্র।

    হ্যাঁ, আজই তো। আর এই যে মিছিলটায় হাঁটছি আমরা, এটার মতো শান্তশিষ্ট মিছিল নয় কিন্তু সেটা। ন'জন মানুষকে নাকি ওই চিৎপুরেই গুলি করে মেরেছিল পুলিশ কয়েকমাস আগে, তারই প্রতিবাদে এই মিছিল। শুনলুম, মারোয়াড়ি মজুতদাররা দাম বাড়াবার মতলবে কাপড় মজুত করে রেখে দিয়ে বাজারে কাপড়ের কৃত্রিম অভাব তৈরি করার চেষ্টা করছিল, তারই প্রতিবাদে গণ্ডগোল হয়েছিল নাকি চিৎপুরে। সেই সময় পুলিশ গুলি চালায়। আজকের মিছিলে তো “পুলিশ তোমায় দেখে নেব” আর “মজুতদার সাবধান” শ্লোগান শুনলুম। বেশ মারমুখী মানুষজন। ওদের মিছিল হ্যারিসন রোড ছাড়াবার পর আমি হাঁটতে হাঁটতে আসছি। এসে, এখানে আবার দেখি মিছিল। আহ্‌মদ সাহেবের কাছে যাব ভেবে বাড়ি থেকে বেরোলুম, এত বাধা পেয়ে ভাবলুম, আজ আর দেখা হবে না। এমন সময় মিছিলের ওপারের ফুটপাতে দেখি আহ্‌মদ সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকক্ষণ ধরে হাত নাড়াচ্ছি। শেষ পর্যন্ত আহ্‌মদ সাহেব দেখতে পেলেন। না হলে এতদূর এসে দেখা না করেই আবার ফিরে যেতে হত।

    একটা কথা আপনাকে বলে দিই, মুজফ্‌ফর বলে, এত দূর এসে আমার সঙ্গে দেখা যদি না-ও হয়, ফিরে যাবেন না কখনো। আমি আর যাব কোথায়? বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির আমি হোল-টাইমার। ঐ অফিসেই কাজ করি। থাকিও ওখানেই। যেখানেই যাই, শেষ পর্যন্ত ফিরে আসবই। আমার জন্যে অপেক্ষা করবেন যতক্ষণ না আসি। আর তা ছাড়া, অপেক্ষা করতেও এমন কিছু খারাপ লাগবে না। আমাদের সব ভালো ভালো বন্ধুরা আছেন। এই যে পবিত্রকে দেখছেন, এঁরাই। জমিয়ে আড্ডা হয়, দরকার হলে থেকে যাবেন রাতে।

    জবাব না দিয়ে হাসে পিংলা।

    পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনে পবিত্র এমন সময় তাকায় পেছনের দিকে, পিংলাকে বলে, দেখুন তো চিৎপুরের মোড়ে এদেরই দেখেছিলেন কিনা। পিংলা পেছনের দিকে ফেরে, মুজফ্‌ফরও। পুলিশ ভ্যানগুলো পেরিয়ে আর একটা মিছিলের এক দল লোক জমা হচ্ছে ওদের ঠিক পেছনেই। সামনের লোকদের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রাসী তারা। গলায় জোর শ্লোগান, পুলিশ তোমায় দেখে নেব – পার যদি চালাও গুলি। পিংলা বলে, হ্যাঁ, এরাই তো। এরা কোথা থেকে এল এখানে?

    আপনি যে কলকাতা বিশেষ চেনেন না সেটা বোঝা যাচ্ছে, হেসে বলে পবিত্র, চিৎপুরের ক্রসিং পেরিয়ে যে-কোন একটা ডান দিকের রাস্তা ধরলেই কর্ণওয়ালিস স্ট্রীটে পড়া যায়। ডানদিকের রাস্তাগুলোতে অনেক মুসলমান বস্তি আছে। ওরা বোধ হয় ওই বস্তিগুলোর মানুষদেরও ওদের মিছিলে নিতে চেয়েছিল। আমরা যে মিছিলে হাঁটছি, এটাই মূল মিছিল। মনে হয় চলার পথে এরকম আরও মিছিল আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।

    তা-ই হল। বৌবাজার পেরিয়ে আর একটু এগোনোর পর ওয়েলিংটন স্কোয়ার। ওয়েলিংটন স্কোয়ারের দক্ষিণ দিকের রাস্তা দিয়ে আর একটা মিছিল প্রায় দৌড়িয়ে এসে মিলে যাচ্ছে ওদের মিছিলে। এই মিছিলটা একটু অন্যরকমের। যে মানুষরা হাঁটছে এতে, তাদের পোশাক এলোমেলো, অধিকাংশেরই খালি-গা, কারো-কারো উর্ধাঙ্গে একটা গেঞ্জী বা ফতুয়া বা যাহোক কিছু। লুঙ্গি পরে আছে কেউ, কেউ-বা খাটো ধুতি। সামনে যে ব্যানারটা ধরে আছে চার-পাঁচ জন, তাতে লেখা: অসংগঠিত শ্রমিকদের বাঁচার অধিকার চাই। নানারকমের দাবি লেখা পোস্টার আর ফেস্টুন। তার দুয়েকটা অবাক করে পিংলাকে। কোনটাতে লেখা, ফুটপাতের হকারদের উপর পুলিশি অত্যাচার বন্ধ কর; কোনটাতে বা, বাজারে বাজারে ঝাঁকা-মুটেদের অফিস চাই! একটা পোস্টার বিশেষ করে চোখ টানে পিংলার, কাজের মাঝে নামাজের ছুটি দিতে হবে, মজুরি কাটা চলবে না। এক দলের হাতে আর একটা কাপড়ের ব্যানার, কর্পোরেশনে সব মানুষের ভোটের অধিকার চাই। মূল যে মিছিলটায় মুজফ্‌ফররা হাঁটছিল সেই মিছিলের মাঝামাঝি ঢুকে পড়ল এই মিছিলের মানুষজন, ফলে মিছিলটা লম্বায় বেড়ে গেল আরও খানিকটা।

    ভোটের অধিকারটা কী ব্যাপার? – ব্যানারটা দেখে মুজফ্‌ফরকে জিজ্ঞেস করে পিংলা।

    এটা খুব ইনটারেস্টিং, মুজফ্‌ফর বলে। এই কলকাতা সহরের নানা ফুটপাতে আর খোলার চালের নীচে কিংবা চটের আর টিনের দেয়ালের ঘেরাটোপে কত লোক বাস করে জানেন আপনি? সেই আঠেরোশো পঞ্চাশ-টঞ্চাশ থেকে আমাদের এই বাংলার গ্রাম থেকে – আর বাংলাই বা বলি কেন – বিহার উড়িষ্যা বা এমনকি যুক্তপ্রদেশ থেকেও দলে দলে গরীব মানুষ কাজের সন্ধানে আসছে এই কলকাতা সহরে। এদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান দু' দলই আছে। মুসলমানই বেশি বলে আমার মনে হয়, কারণ তারাই অপেক্ষাকৃত বেশি গরীব। কলকাতায় এরা সব থাকে কোথায়? প্রথম-প্রথম ফুটপাতে, আর তারপর নানা বস্তিতে। আমি শুনেছি ভদ্রলোকদের চাপে আঠেরোশো ছিয়াত্তর-টিয়াত্তরে কলকাতার কর্পোরেশন নানারকমের নাগরিক সুখ-সুবিধের ব্যাপারে সহরবাসী মানুষদের একটা অধিকার দিয়েছে। কী অধিকার? একটা কর্পোরেশন পরিচালক সমিতি, যার আসল নাম কাউন্সিল, তার সভ্য হওয়া। তার মানে কাউন্সিলর হবার অধিকার। এবং অবশ্যই, ভোট দিয়ে সেই কাউন্সিলার নির্বাচন করা। এই ভোটের অধিকার কিন্তু আছে মাত্র তিন ধরণের লোকের। যাদের নিজেদের জমি-জমা সম্পত্তি আছে, অথবা কলকাতায় কর্পোরেশনের অনুমোদিত ব্যবসা আছে, তাদের। আর এ ছাড়াও য়্যুনিভার্সিটির ছাপ-পাওয়া শিক্ষিত ভদ্রলোকদের। এখন ধরুন চিৎপুরের যে সব বস্তির কথা পবিত্র বলছিলেন, সেই রকম কোন একটা বস্তিতে থাকে পাঁচশো লোক, কিন্তু যে জমির ওপর বস্তিটা তার মালিক মাত্র একজন বা দুজন। আর এটা নিশ্চিত যে ওই যে একজন বা দুজন যারা মালিক, নিজেরা কিন্তু বস্তিতে থাকেই না তারা। তবুও, ভোটের অধিকার সেই দুজনেরই! শুধুমাত্র সেই দুজনেরই! অথচ যে পাঁচশো বস্তিবাসী মানুষকে কর্পোরেশনের নানা সার্ভিসের ভরসায় থাকতে হয় বস্তিটাতে, তাদেরই কোন ভোটের অধিকার নেই। এই ব্যবস্থাটারই প্রতিবাদ করছে এই মানুষগুলো।

    আর নামাজের ছুটিটা কী?

    এই মিছিলে যাদের দেখছেন, বলে পবিত্র, এদের একেবারে সামনে, গোড়াতেই যে ব্যানারটা ছিল, সেটা লক্ষ্য করেছেন? অসংগঠিত শ্রমিকদের বাঁচার অধিকার চাই, লেখা ছিল ব্যানারটাতে। অসংগঠিত শ্রমিক মানে হল সেই সব শ্রমিক যারা কোন মিল-টিল বা অফিস-টফিসে কাজ করে না। কাজেই এদের কোন ইউনিয়ন, মানে সংগঠন, নেই। তাই এরা অসংগঠিত। দিনমজুর, দিন আনে দিন খায়। ধরুন আপনি একটা বাড়ি তৈরি করছেন, কয়েকজন মুসলমান রাজমিস্ত্রী কাজ করছে সেখানে। আপনি তাদের মজুরির পয়সা দেন রোজের হিসেবে। পেটের দায়ে কলকাতায় কাজ করতে এসেছে ঠিকই কিন্তু অন্তত শুক্কুরবারের নামাজটা পড়বে না? অথচ পড়ে যদি, আপনি আপত্তি করবেন। না-ও যদি করেন, যে সময়টুকু নামাজ পড়ে নষ্ট করল সেটুকুর দাম তো দিতে চাইবেন না নিশ্চয়ই। অথচ মিল-টিলে কাজ করে যারা, তাদের ইউনিয়ন হয়তো মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে নিয়েছে, ওই নামাজ-পড়ার ছুটিটা সবেতন। কিন্তু আপনার রাজমিস্ত্রীর তো তা নয়। ওরা সেটাই চাইছে, সেটাই ওদের দাবী, তা-ই মিছিল।

    এই সব কথা বলতে বলতে ধর্মতলা স্ট্রীটের মোড় ছাড়িয়ে ওয়েলেসলী প্রায় পেরিয়ে পার্ক স্ট্রীটের কাছাকাছি এসে পড়েছে ওরা। আসার পথে প্রায় প্রতিটি ছোটখাটো মোড়েই ওদের মিছিলে মিশে গেছে আরও অনেক মিছিল। তাদের মধ্যে হঠাৎ একটা মিছিল এসে তাক লাগিয়ে দিল। মিছিলের মানুষগুলো তাকিয়ে দেখবার মতো। ঝকঝকে চেহারায় সাদা পরিষ্কার সদ্য-ইস্ত্রি-ভাঙা প্যান্ট-কোট পরা কোটে চকচকে পেতলের বোতাম লাগানো সব লোক। কারো কারো মাথায় আবার লম্বা লম্বা সাদা টুপি। ইংরিজিতে লেখা তাদের ব্যানারটাও অনেক ঝকঝকে, অনেক পরিষ্কার। তাতে লেখা, অ্যাসোসিয়েশন অব শেফ্‌স্‌ অ্যাণ্ড বাটলার্স। আজ রবিবার, ছুটির দিন। অন্য কোন দিন হলে পুলিশ এত দীর্ঘ একটা মিছিলকে পার্ক স্ট্রীটে ঢুকতেই দিত না। আজ ঢুকতে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কিছু একটা হয়েছে বোধ হয়। কলেজ স্ট্রীটে যদিও মিছিলের একেবারে শেষে ছিল ওরা, এতক্ষণ পথ পরিক্রমার পর – এবং ওদের পিছনেও অনেক মিছিল ধীরে ধীরে যোগ দেবার পর – ওরা মোটামুটি মিছিলের মাঝামাঝি এখন। সামনের দিকে ঠিক কী হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু মিছিলটা দাঁড়িয়ে গেছে, আর এগোচ্ছে না। ওরা খেয়াল করেছিল মিছিলের একেবারে সামনে ছিল একটা প্রিজন ভ্যান, আর কলেজ স্ট্রীটে মিছিলের যেখানে ওরা ছিল তার ঠিক পেছনেই ছিল আরও গোটা কয়েক প্রিজন ভ্যান, যদিও এতটা পথ আসতে আসতে, এবং আরও অনেক মিছিল পথিমধ্যে ঢোকার ফলে, সামনের বা এই পেছনের প্রিজন ভ্যানগুলোও আর দেখা যাচ্ছিল না। এখন কিন্তু দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু পুলিশ সার্জেন্ট রাস্তায় নেমে পড়েছে, মিছিলটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে, এবং বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েই আছে মিছিলটা, এগোচ্ছে না।

    একটু উসখুস করতে করতে পবিত্র বলে, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। চলুন না, একটু এগিয়ে দেখি কী হল। মিছিল থেকে ওরা বেরিয়ে আসে, মিছিলের পাশের সরু ফুটপাত দিয়ে এগিয়ে যায়। ফ্রী স্কুল স্ট্রীটের কাছাকাছি পৌঁছোতে একটা গণ্ডগোল দেখা গেল। কয়েকজন পুলিশ সার্জেন্ট ফ্রী স্কুল স্ট্রীট দিয়ে মিছিলটাকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু মিছিলের মানুষরা রাজি হচ্ছে না। এই মিছিলের অনুমতি পুলিশের কাছ থেকে আগেই নেওয়া ছিল। মিছিল পার্ক স্ট্রীট এবং চৌরঙ্গীর মোড় থেকে মেয়ো রোড ধরে এগোবার কথা। বজবজের একটা এবং পোর্ট অঞ্চলের একটা মিছিল একই সঙ্গে সেখানে এই মিছিলে মিলবে এবং তারপর সেই মিলিত মিছিল পৌঁছোবে মনুমেন্টের পাদদেশে, এই কথাই পুলিশকে বলা ছিল। পুলিশ এখন কথার খেলাপ করছে।

    পুলিশ যখন কোন কথাই শুনছে না এবং জোর করে মিছিলের মুখটা ফ্রী স্কুল স্ট্রীটে ঢুকিয়ে দেবার চেষ্টা করছে, তখনই কে যেন হাঁপাতে হাঁপাতে এসে খবর দিল, খিদিরপুরে নাকি গুলি চালিয়েছে পুলিশ। উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের একটা খণ্ডযুদ্ধ লাগার অবস্থা যখন, মুজফ্‌ফর প্রস্তাব দিল, ওরা আর মিছিলে না হেঁটে আলাদা করে সদর স্ট্রীটের মধ্যে দিয়ে চৌরঙ্গীতে বেরিয়ে মনুমেন্ট পর্যন্ত হেঁটে দেখবে সেখানে কী পরিস্থিতি।

    মনুমেন্টের পাদদেশে গোটাকয়েক চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছে কয়েকজন, খুবই উত্তেজিত তারা। খিদিরপুরে পুলিশের গুলিচালনার খবর সেখানে তারাও পেয়েছে, কিন্তু কী করবে বুঝতে পারছে না। মুজফ্‌ফর-পবিত্র-পিংলার মতো আরও কেউ কেউ ঘোরাঘুরি করছে ওখানে, তারা হয়তো এই শ্রমিক আন্দোলনের সমর্থক, কিন্তু মিছিলে না এসে সরাসরি এসেছে সভাস্থলে। পবিত্র বলল, এই মানুষদের মধ্যে দু-চারজন সাদা পোশাকের পুলিশ থাকাও বিচিত্র নয়।

    শেষ পর্যন্ত ফিরে যাবারই সিদ্ধান্ত নেয় ওরা। পুরো রাস্তাটাই হেঁটে যেতে হবে, মনে হয় না ট্রাম পাওয়া যাবে আজ। পিংলাকে বলে মুজফ্‌ফর, আজ আপনার আমাদের সঙ্গে থেকে যাওয়াই ভালো, কাল সকালেই না হয় ফিরবেন।


    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০২ এপ্রিল ২০২২ | ৪৪৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন