এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  উপন্যাস  শনিবারবেলা

  • সীমানা - ২৪

    শেখরনাথ মুখোপাধ্যায়
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ২৩৩০ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • ছবি: সুনন্দ পাত্র


    ২৪

    অশান্ত বিদ্রোহী



    সেই বিকেলেই মুজফ্‌ফরের কাছ থেকে দুঃসংবাদটা শুনল কাজি। ন্যাশনাল জর্ণল্‌স্‌ লিমিটেড-এর যে বিজ্ঞাপন নানা কাগজে দেওয়া হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়া আশানুরূপ নয়। মুহম্মদ দাউদ বা মাখনলাল গাঙ্গুলির মতো দুয়েকজন বন্ধু, যাঁরা এমনকি বিজ্ঞাপন না দিলেও বেশ কিছু শেয়ার নিজে থেকেই হয়তো কিনতেন, তাঁরা ছাড়া আর বিশেষ কেউই ন্যাশনাল জর্ণল্‌স্‌-এর শেয়ারে উৎসাহ দেখায়নি। নিয়ম অনুযায়ী যথেষ্ট শেয়ার বিক্রি না হওয়ার ফলে যে জয়েন্ট-স্টক-কম্পানী গঠন করবার কথা ছিল, তা হয়নি। মুজফ্‌ফর বলল, কুত্‌বুদ্দিন সাহেবের এতগুলো টাকা একেবারেই জলে গেল। এখন মনে হচ্ছে, তাঁর কথা শুনে যদি আমরা একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার কথা ভাবতাম, সেটাই ভালো হত। কুত্‌বুদ্দিন সাহেব অবিশ্যি লোকসানটা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছেন, আমার কিন্তু নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল। নজরুলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করবার জন্যে মুজফ্‌ফর বলল, লেগে যাও সেবকে, মাওলানা আকরম খান যদিও একটু বেশি মাত্রায় ধর্মপিপাসু, কাগজটা উনি ভালোই চালাচ্ছিলেন।

    নবযুগের মতো সেবক নতুন কাগজ নয়। যতই কম হোক সেবকের কিছু নিয়মিত পাঠক আছে। আর পাঠক থাকার অর্থ, এই কাগজের সুরে সেই নিয়মিত পাঠকরা অভ্যস্ত। সেবকের সম্পাদনার দায়িত্ব নেবার পর কাজিকেও ধীরে ধীরে একই সুরে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করতে হয়। এমন সময় ঘটে গেল এক অভাবনীয় কাণ্ড। সেবকে নজরুলের এক মাসও হয়নি, হঠাৎ মারা গেলেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, তিনি তখন চল্লিশও পেরোননি। শোনা যায় নজরুলের কবিতা তিনিই প্রথম রবীন্দ্রনাথকে শুনিয়েছিলেন, শুধুমাত্র তার কবিতার গুণগ্রাহীই ছিলেন না সত্যেন দত্ত, বিশেষ স্নেহ ছিল তাঁর নজরুলের প্রতি।

    সত্যেন্দ্রনাথের শরীর ভালো যাচ্ছিল না, কিন্তু মৃত্যুর কথা কেউ ভাবেনি। অপ্‌টিক নার্ভের অসুখ হয়েছিল তাঁর,  দৃষ্টিশক্তি অতি দ্রুত ক্ষীণ হয়ে আসছিল, হয়তো আর একেবারেই দেখতে পাবেন না এই দুশ্চিন্তা ভর করেছিল তাঁকে। উনিশশো একুশের আগস্ট মাসের মোসলেম ভারত পত্রিকায় খাঁচার পাখী শিরোনামে তিনি আক্ষেপ করেছিলেন:  অসাড় ডানা ঝাপসা দু'চোখ, / খাঁচার জীবন একটানা; / তার মাঝে আজ উঠল কি ঢেউ? / দখিন হাওয়া দেয় হানা? / ঘেরাটোপের পর্দা কাঁপে, / কাঁপছে আমার সকল গা, / ঝলক দিয়ে ক্ষীর সায়রে / ছুটছে পুলক অ-বল্‌গা! / হঠাৎ কেমন হচ্ছে মনে / ফুল ধরেছে সব গাছে, / সবুজ পাতা সার দিয়েছে / এই খাঁচারই খুব কাছে।

    শেষ চার লাইনে লিখলেন, কান্না-রোলে কাঁপছে গলা / কণ্ঠে কেঁপে যাচ্ছে তান, / বল্‌তো তোরা বকুল চাঁপায় / বসন্ত কি মূর্তিমান?

    এই কবিতা পড়ে কাতর কাজি পরের সংখ্যার মোসলেম ভারতে দিল-দরদী নামে উত্তর দিল। তার শেষ দুটি চরণ:


                                                    বাদশা-কবি! সালাম জানায় বুনো তোমার ছোট্ট ভাই!–
                                                    কইতে গিয়ে অশ্রুতে মোর যায় ডুবে হায় সব কথাই।


    সেই সত্যেন্দ্রনাথের মৃত্যু! কাজি সেবকে সম্পাদকীয় লিখল। সেই সম্পাদকীয় থেকে যেন কাজির বুক-ফাটা কান্নার শব্দ শোনা যায়! এবং আবেগপ্রবণ কাজি নজরুলের যা সিগনেচার স্টাইল, তা কোন ধর্মীয় অনুশাসন মানে না, কতটুকু কোন্‌ অনুশাসন অনুমতি দেয় তার পরোয়া করে না, অগ্রজবিয়োগে অনুজের সব-হারানো বেদনার শুধু সংক্রমণ হয় পাঠকের হৃদয়ে। কিন্তু সেবক তো ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে যাবে না। নজরুলের নানা পৌত্তলিক রূপকল্পতে সেবকের সুর ভেঙে যায়, তাল কাটে! শেষ পর্যন্ত কাটাছেঁড়ার পর কাগজে যা বেরোল, নজরুলের পক্ষে তা মেনে নেওয়া কঠিন।

    এই চাকরি করা চলবে না জেনে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে যখন কাজি মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সেই সময়েই এল নতুন এক সুযোগ। কয়েকদিন আগেই একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের প্রস্তাব এসেছিল মস্‌উদ আহ্‌মদ নামে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের পূর্ব পরিচিত একজনের কাছ থেকে। মস্‌উদের জমানো আড়াইশো টাকা আছে, সেই পুঁজিই সম্বল। মাত্র আড়াইশো টাকার ওপর ভরসা করে পত্রিকা বের করতে রাজি নয় মুজফ্‌ফর। মস্‌উদ আহ্‌মদ তখন যোগাযোগ করল কাজির সঙ্গে। বলল, আড়াইশো টাকা প্রথমেই দেব, তারপর মাসে মাসে আরও কিছু। কিন্তু 'সলিড' রাজনীতি চাই। আপনিই পারবেন।

    নজরুল এক কথায় রাজি। তার লেখা সম্পাদকীয় কাটা-ছেঁড়া হয়েছে এটা সে মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই। সে বলল, ওই যে 'সলিড' রাজনীতির কথা বলছেন, সাপ্তাহিকে সে-জিনিষ দাঁড়াবে না। দৈনিকই আদর্শ, দৈনিক যদি না-ই হয়, অন্তত সপ্তাহে দুবার বের করা চাই, আমার পত্রিকা হবে অর্ধসাপ্তাহিক।

    মুজফ্‌ফরও এর মধ্যে নিজের কাজে খানিকটা এগিয়েছে। অনুশীলনের ভূপেন্দ্রকুমার দত্ত ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এম-এন রায়ের সঙ্গেও অচিরেই যোগাযোগের সম্ভাবনা। এই-সব কাজ ছেড়ে ঠিক এখনই কোন পত্রিকায় আর উৎসাহ নেই তার। আবদুল হালীমের সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুজফ্‌ফর বুঝে নিয়েছে যে সে এক রত্ন আবিষ্কার করেছে, যেটুকু ঘষামাজা দরকার হালীম তা নিজেই করে নেবে। এখনই আর পত্রিকা নয়, সমাজতন্ত্রের আন্তর্জাতিক লড়াই সম্বন্ধে ধীরে ধীরে তার ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে, যোগাযোগও তৈরি হচ্ছে। তবে, কাজি যদি সত্যিই কোন পত্রিকা বের করে, ওর নৈতিক সমর্থন থাকবে।

    বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির সাবলেট-করা আফজালুল হকের ঘরই হবে নতুন পত্রিকার ঠিকানা, বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীট। মুদ্রাকর ও প্রকাশক হিসেবে চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ডিক্লারেশন দিল আফজাল। স্বত্বাধিকারী ও সম্পাদক কাজি নজরুল ইসলাম। সপ্তাহে দু'দিন বেরোবে পত্রিকা – অর্ধসাপ্তাহিক। ধূমকেতু।

    পত্রিকার নাম ধূমকেতু, তার সম্পাদককে বলা হল সারথি। উনিশশো বাইশের এগারই আগস্ট বেরল প্রথম সংখ্যা ধূমকেতু, রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী তার শিরোভূষণ। এর এক বছর আগে, উনিশশো একুশের সেপ্টেম্বরে, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে এক বহুল প্রচারিত আলোচনায় রবীন্দ্রনাথকে অসহযোগ আন্দোলন, বিদেশী বস্ত্র বয়কট এবং চরকাস্ত্র প্রয়োগে স্বরাজের ভাবনায় নিজের মতে আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন গান্ধী। এক বছর পর নজরুলের এই প্রয়াসকে প্রাণ-ভরে আশীর্বাদ জানালেন কবি!


                                                                আয় চলে আয়, রে ধূমকেতু,
                                                                আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু,
                                                                দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে
                                                                            উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন!
                                                                অলক্ষণের তিলক রেখা
                                                                রাতের ভালে হোক্‌ না লেখা
                                                                জাগিয়ে দে রে চমক্‌ মেরে'
                                                                            আছে যারা অর্দ্ধচেতন!


    প্রথম সংখ্যা থেকেই হৈ হৈ। আড়াইশো টাকা পুঁজিতে সপ্তাহে দু'দিন পনের ইঞ্চি লম্বা দশ ইঞ্চি চওড়া চার পৃষ্ঠার কাগজ বের করা সহজ নয়, বিশেষ করে কাগজের বিক্রয়মূল্য যদি মাত্র এক পয়সা হয়! কিন্তু নবযুগের সময় পরিচয় হয়েছিল যে দুবের সঙ্গে – যে ছিল নবযুগের সোল সেলিং এজেন্ট – সেই দুবে যেন এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল ধূমকেতুর জন্যে। অবিশ্যি ধূমকেতুর 'ডিমাণ্ড' ভালো না হলে যতই ইচ্ছে থাকুক দুবে সাহায্য করতে পারত না। হাতে নগদ টাকা ছাড়া একটা নিয়মিত পত্রিকা চালিয়ে যাওয়া কঠিন কাজ, প্রায় অসম্ভব। এ-কথা জেনে হকারদের কাছে দুবে কাগজ দিচ্ছে নগদ-মূল্য অগ্রিম নিয়ে, অবিক্রিত কাগজ ফেরত নেওয়া হবে না এই শর্তে। পাড়ায় পাড়ায় গ্রাহকরা অপেক্ষা করে থাকে কাগজের হকার কখন আসবে ধূমকেতু নিয়ে। এ-ছাড়াও এক্সপার্ট অ্যাডভার্টাইসিং এজেন্সী নামে এক বিজ্ঞাপনের এজেন্ট বেশ কিছু বিজ্ঞাপন যোগাড় করে দিলেন, অনেকগুলো আবার অগ্রিম মূল্যে।

    প্রথম থেকেই নানা সরকারী ডিপার্টমেন্ট শ্যেনচক্ষু-নজর রাখছে ধূমকেতুর ওপর। নজরুল ইসলামের কাগজ, আপত্তিকর মন্তব্য না-থেকে যায় না। সাহেব প্রভুদের গুরুমারা নানা বাঙালি চেলারা শুরু থেকেই হরেক কিসিমের 'নোট' পাঠিয়ে যাচ্ছে নবযুগের বিরুদ্ধে। কলকাতায় জোর গুজব, নবযুগের বেআইনী ঘোষণার আর দেরি নেই। বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীটের বাড়ির মালিকরা আতঙ্কগ্রস্ত, এই বুঝি পুলিশ ঢোকে বাড়িতে!

    আর, ঢুকবে না-ই বা কেন! এমনিতেই আফজালুল হককে যে মুসলমান সাহিত্য সমিতি একখানা ঘর সাবলেট করল, তার জন্যে সমিতি অনুমতি নিয়েছে কার? তার উপর ওই সাবলেট করা ঘর থেকে এক অচেনা-অজানা লোক কারো অনুমতির তোয়াক্কা না-করে রীতিমত একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে ফেলল আর তার দপ্তর হল ঠিক ওই ঘরেই! আর ব্যবসা বলে ব্যবসা! পণ্যটা কী? না, সরকার-বিরোধী খবরের কাগজ! সম্পূর্ণ বেআইনী! বাড়ির মালিকদের এক ভাই উকিল। তিনি একদিন এসে চেঁচামেচি করে গেলেন।

    এবারও ত্রাতার ভূমিকায় দুবে। মেডিকাল কলেজের ঠিক উল্টো দিকে সাত নম্বর প্রতাপ চাটুজ্যে লেনের দোতলা বাড়িটি যোগাড় করে দিল দুবে। বেশ বড় বড় তিনখানা ঘর উপরে, নীচে স্নানাগার ইত্যাদি। অর্থাৎ শুধুই যে অফিস তা নয়, প্রয়োজন হলে কেউ থেকে যেতেও পারে।

    এই বাড়িতেই জমে উঠল ধূমকেতু।

    জমে উঠল ধূমকেতুর আড্ডাও। ছাত্র-শিক্ষক-বন্ধুবান্ধব-শুভার্থীদের ভীড়; আসে হুমায়ুন কবীর, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়, এমনকি আসেন মোহিতলালও। বসে-যাওয়া বিপ্লবীরা আসেন খুবই ঘনঘন। পুলিশের নজর বাড়ে, শুনতে পাওয়া যায় যুগান্তর দলের কেউ কেউ বলছেন, ধূমকেতু তো আমাদেরই কাগজ।

    আর, লেখাও যেন খানিকটা তেমনই। গত বছরের সত্যাগ্রহী অসহযোগী অহিংস নজরুল এ বছরেই খানিকটা আক্রোশেই মনে হয় বন্ধ করেছে সেরকম লেখা। আশ্বিনের কোন এক সংখ্যায় সে লিখল ক্ষুদিরামের মা: কোথায় ভাই ক্ষুদিরাম? আঠারো মাসের পর আসবে বলে গেছ এসেওছ হয়তো প্রতি ঘরে ঘরে। কিন্তু আঠারো বছর যে কেটে গেল ভাই, সাড়া দাও সাড়া দাও আবার, যেমন যুগে যুগে সাড়া দিয়েছ ঐ ফাঁসি-মণ্ডপের রক্ত-মঞ্চে দাঁড়িয়ে। তোমার সাথে আমাদের বারবার দেখাশুনা ঐ ফাঁসিপরা হাসিমুখে।... এসো আবার ফাঁসিমঞ্চে, আর একবার নতুন করে আমাদের সেই চিরনতুন চিরপুরাতন গান ধরি।

    গত বছরেও অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধী তো স্পষ্টতই ডোমিনিয়ন স্টেটাসের কথা বলছিলেন। ধূমকেতুর নজরুল কিন্তু বলল অন্য কথা: ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীনে থাকবে না। স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, কেন না ও-কথাটার মানে এক এক মহারথী এক এক রকমের করে থাকেন। ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা-রক্ষা, শাসনভার সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। তাতে কোন বিদেশীর মোড়লি করবার অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না।

    এর পরেও পুলিশ নির্বিকার চিত্তে বসে থাকতে কি পারে? পুজোর ঠিক আগেই, ছাব্বিশে সেপ্টেম্বর, ধূমকেতুতে প্রকাশিত নজরুলের কবিতা, আনন্দময়ীর আগমনে, বাজেয়াপ্ত করল পুলিশ। আর হবেই বা না কেন, এ-কবিতায় যুগান্তর-অনুশীলনের বার্তা তো স্পষ্টই।


                                                    ...বছর বছর এ অভিনয় অপমান তোর, পূজা নয় এ,
                                                    কি দিস আশিস কোটি ছেলের প্রণামচুরির বিনিময়ে?
                                                    অনেক পাঁঠা মোষ খেয়েছিস রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা;
                                                    আয় পাষাণী, এবার নিবি আপন ছেলের রক্তসুধা!
                                                    দুর্বলদের বলি দিয়ে ভীরুর এ হীন শক্তিপূজা
                                                    দূর করে দে, বল মা ছেলের রক্ত মাগে মা দশভূজা।
                                                    সেদিন হবে জননী তোর সত্যিকারের আগমনী
                                                    বাজবে বোধন বাজনা সেদিন গাইব নবজাগরণী।
                                                    'ম্যয় ভুখা হুঁ মায়ি' বলে আয় এবার আনন্দময়ী
                                                    কৈলাস হতে গিরিরাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি
                                                                                        আয় উমা আনন্দময়ী।


    এ কবিতা যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে এমন খবর কিন্তু পুলিশ তখনও গোপন রেখেছে, জানায়নি কাউকে; কিন্তু বাজারে জোর গুজব নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা বেরোচ্ছে। বন্ধুবান্ধব শুভাকাঙ্খীরা সবাই গা-ঢাকা দেবার পরামর্শ দিল। এমনকি য়্যোরোপ থেকে এম-এন-রায়ও মুজফ্‌ফরের কাছে প্রস্তাব পাঠালেন নজরুলকে য়্যোরোপে পাঠিয়ে দিতে। নজরুল যেতে নারাজ। পুজোর সময় সে চলে গেল সমস্তিপুর, যেখানে দুলির মামারা থাকেন। দুলির চিঠিতে সে জেনেছে দুলি আর তার মা পুজো কাটাবেন সমস্তিপুরে। তারা চায়, ফেরবার সময় সেখান থেকে তাদের কাজিই নিয়ে যাক কুমিল্লায়। গ্রেপ্তারী পরওয়ানা বেরোবার কথাটা যদি সত্যিই হয় তাহলে ধূমকেতুর স্বত্বাধিকার নজরুলের না থাকাই ভালো, সেটা বিরজাসুন্দরী মায়ের নামে হস্তান্তরও করে দিতে পারবে সে কুমিল্লায় এসে। আর তা ছাড়া, দুলির ব্যাপারে একটা হেস্তনেস্তও চাই তার! এখন যেমন চলছে, ওদের দুজনের গোপন যোগাযোগ, এ পছন্দ নয় কাজির। সেই তেওতায় নিভৃতে দুলির সঙ্গে যে কথা হয়েছিল তা তো সে ভোলেনি। ক্রন্দনরতা দুলিকে সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে সে তখন বলেছিল, কেঁদো না আর। কাউকে কিছু বলার দরকারও নেই। তুমি জানলে, আর আমি। আর যে ক'দিন এই তেওতা গ্রামে আছি, তুমি একা এই ঘরে আসবে না আর। নিয়ন্ত্রণ হারাবার ভয় আছে আমাদের দুজনেরই। তুমি বড় হয়েছ দুলি, বুঝতে পারছ?

    দুলি বুঝেছিল। তেওতায় নজরুল ছিল যে-ঘরে সে-ঘরে সে আসেনি আর। এমনকি কুমিল্লায় ফিরেও, যদিও কাজির সঙ্গে ছোটখাটো বাক্য এবং নানা অছিলায় প্রেমের বিনিময় হয়েছে কয়েকবার কয়েক মুহূর্তের জন্যে, কাজির নির্দেশ মতো তা হয়েছে গোপনে, সকলের অলক্ষ্যে। দুলির ব্যবহারে কারো পক্ষে তা বোঝা সম্ভব ছিল না। এই লুকোচুরি কাজির পছন্দ নয়। দুলির মা, যাঁকে সে মাসিমা সম্বোধন করে, তাঁকে অন্তত জানানো দরকার। কুমিল্লায় কারো সঙ্গেই একেবারে নিভৃতে কথা বলা সম্ভব নয় কাজির পক্ষে। সেখানে কাজির সঙ্গে সব-সময়েই কেউ-না-কেউ! তাই সমস্তিপুরই সব দিক থেকে ভালো।

    সমস্তিপুরে অবিশ্যি কলকাতা থেকে সোজা আসেনি কাজি। তার কিছু টাকা-পয়সার প্রয়োজন ছিল। খালি-হাতে সে যে কখনও কুমিল্লায় যায়নি তা তো নয়, কিন্তু কেমন যেন একেবারে খালি হাতে দুলির মামার বাড়িতে যেতে সঙ্কোচ বোধ হচ্ছিল তার। আর্য পাবলিশিং হাউজ-এর শরচ্চন্দ্র গুহর বাসস্থান বালি। কাজি তার বন্ধু অবনী চৌধুরির সঙ্গে বালিতে কাটাল দু' রাত্তির। তারপর গুহ মশায়ের কাছ থেকে টাকা পেয়ে ভীম নাগের দোকান থেকে বিরাট এক বাক্স সন্দেশ নিয়ে সে উঠল মিথিলা এক্সপ্রেসে।

    আপ্যায়নের অভাব হল না। কাজি অবিশ্যি সুযোগ খুঁজছিল মাসিমা অর্থাৎ দুলির মা গিরিবালাকে একটু একান্তে পাবার। এ বাড়ির বাইরের দিকে একটা বড় রকের মতো, রকটা রাস্তার প্রায় উপরেই, রাস্তাটা পেরিয়ে একটা বড়সড়ো জলাশয়। সেই জলাশয়ের দিকে তাকিয়ে কাজি এক দুপুরে বসে ছিল একা। এমন সময় গিরিবালা এলেন, হাতে একটা ছোট বাঁশের টুকরিতে গোটাকয়েক কমলালেবু। বললেন, কমলালেবু উঠেছে বাজারে। নেপাল হয়ে এখানে আসে। এরা বলে ভূটান থেকে এসেছে। কলকাতায় তো কমলালেবু উঠতে এখনো অন্তত মাসখানেক। খাবে?

    খাব, বলে কাজি, আমি আপনাকেই খুঁজছিলুম। আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে আমার। শুধু আপনার সঙ্গেই, প্রাইভেটলি।

    টুকরিটা কাজির পাশে রেখে ঘরের থেকে একটা মোড়া গোছের কিছু টেনে এনে বসেন গিরিবালা।

    কাজি বলে, মাসিমা, আপনার কাছে কিছু যদি চাই, দেবেন?

    তোমাকে দেব না? আমার সাধ্যে যা আছে তুমি চাইলে নিশ্চয়ই দেব।

    কাজি সময় নষ্ট করে না। বলে, দুলিকে আমি চাই। আমাকেও দুলি চায় বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু দুলির চাওয়াকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেবেন আমি জানি না। ও তো অনেক ছোট।

    হুঁ, ছোট; ছোট তো বটেই, বলেন গিরিবালা, ও তো এই চোদ্দ পেরোল, আর তুমি বাইশ-তেইশ, তাই না? তবে এখন যতটা ছোট মনে হচ্ছে, এই ধর পাঁচ-ছ' বছর পরে, তখন কি আর অতটা ছোট মনে হবে? তখন ও হবে উনিশ-কুড়ি, আর তুমি আটাশ-টাটাশ।

    আটাশ নয় উনত্রিশ, বলে কাজি, আমি ওর চেয়ে পুরো ন' বছরের বড়।

    সেটা এমন কিছু নয়, তোমার মেসোমশাই আমার চেয়ে চোদ্দ বছরের বড় ছিলেন, মিনিটখানেক চুপ করে থাকেন গিরিবালা, তারপর বলেন, কিন্তু দৌলতপুরের সেই মেয়েটি, সে-ও তো তোমাকে চেয়েছিল আর তুমিও চেয়েছিলে তাকে।

    ঠিকই, বলে কাজি, চেয়েছিলুম ঠিকই, কিন্তু, না থাক।

    না থাক বোলো না কাজি, না থাক নয়; আমি তো মা, আমি জানি আমার মেয়েটা পাগলের মতো চায় তোমাকে, কিন্তু তোমার চাওয়া-না চাওয়ার ব্যাপারটা আমি একটু বুঝতে চাই। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি বোঝবার বিষয়।

    আমি কী বলব আপনাকে জানিনা, আসলে আমি তো ছেলেমানুষ নই যে বলব আমাকে ভুল বোঝান হয়েছিল। তবুও, জিজ্ঞাসা করছেন আপনি, আর জিজ্ঞাসা করছেন সেই মুহূর্তে, যখন আমি আপনাকে আপনার পক্ষে সবার চাইতে গুরুতর সিদ্ধান্তটা নিতে বলেছি! একটু দম নেয় কাজি, তারপর বলে, আমার মনে হয় আমি এমন একটা অবস্থায় পড়েছিলাম, যখন আমার চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান একজন মানুষ তার নিজের মতলব হাসিল করবার জন্যে তার বুদ্ধির জোরে, তার মতলবী বুদ্ধির জোরে, আমাকে কয়েকদিনের জন্যে একেবারে...একেবারে নির্বোধ...সম্পূর্ণ ভালোমন্দের জ্ঞানরহিত...আমি জানি না, আমি সত্যিই জানি না; কিন্তু ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যে শেষ মুহূর্তে তিনি আমার বোধবুদ্ধি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, আমি কোনরকমে বেঁচে গিয়েছিলুম।

    এই পর্যন্ত বলে একটু দম নেয় কাজি, সে হাঁপাচ্ছে বলে মনে হয়, তারপর পাশে রাখা টুকরিটা থেকে একটা কমলালেবু তুলে নিয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে একটা কোয়া মুখে পুরে দিয়ে তারপর বলে, এই কমলালেবুটা দেখুন। একটা ফলের মধ্যে কোয়াগুলো সব পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া, একটার পর একটা সারি। শুধু তাই নয়, এই সুতোগুলো দেখেছেন? কেমন সুতো দিয়ে ওদের বেঁধে রাখা হয়েছে? কে বাঁধল? কেন বাঁধল? দৌলতপুরে কেমন হল দেখুন, বাঁধবার আগেই ছিঁড়ে গেল সুতোটা। অথবা কে জানে, বাঁধা হয়তো ছিলই না! কিছুক্ষণ নীরব থাকে কাজি, তারপর হঠাৎ বলে ওঠে, আপনি বললেন দুলি আমাকে পাগলের মতো চায়, আপনি জানলেন কীভাবে? ও কি কিছু বলেছে?

    বলেনি, বলেন গিরিবালা, মেয়ে না বললেও মা বুঝতে পারে, তাই তো সে মা। আমরা যখন তেওতায় গিয়েছিলাম কয়েকমাস আগে, কুমিল্লার সবাই ফিরে এল কুমিল্লায়, দুলি আর আমি থেকে গেলাম। থেকে গেলে তুমিও। তখন একদিন আমি গ্রামে আমার ছোটবেলার একজন সইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম তার বাড়িতে । দুলি আমার সঙ্গে যেতে চাইল না। ফিরে এসে আমি ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছি, ঘুমিয়েও পড়েছি একটু। এমন সময় একটু চটকা দিয়ে ঘুমটা পাতলা হয়ে এল, বুঝলাম দুলি আমার গলা জড়িয়ে আমার পাশে শুয়েছে। আর শুয়েই হাউ হাউ কান্না। আমি চোখ খুললাম না ইচ্ছে করে। ও কেঁদেই চলল, আমি চুপ করে শুয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে ওর কান্না থেমে গেল, ঘুমিয়েই পড়ল ও। আমি সেদিন ওকে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু তারপর থেকেই এরকম হয়েছে কয়েকবার। আগের বার কুমিল্লা থেকে তুমি যখন কলকাতায় ফিরে গেলে, সেদিন রাতেও ও আবার আমার গলা জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে এমন কেঁদেছে, আমি ঠিক করলাম ওর সঙ্গে কথা বলতেই হবে। জানতেই হবে ব্যাপারটা কী হচ্ছে। সেদিন ও আমার কোন কথার উত্তর দেয়নি। আমি যখন অনেক রাগ করলাম শেষ পর্যন্ত ও শুধু বলল, কাজিদাদা। বুঝতেই পারছ বাবা, আমি মা। আমি একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম। একটু ধমক দিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, কী করেছে কাজিদাদা? পুরো উত্তরটা দিতে পারল না, কাঁদতে কাঁদতে যা ও বলার চেষ্টা করল – যা আমি বুঝলাম – তা হল কাজিদাদা ওকে বলেছে ও বড় হয়েছে, কাজিদাদার কাছে আর যেন বেশি না আসে।

    বুঝলুম, বলে কাজি, আমরা চিঠিপত্রেও যোগাযোগ করব না এমনটাই আমাদের ঠিক ছিল।

    এই যে এবার সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় আমাদের নিয়ে যাবার জন্যে ও তোমাকে যে চিঠিটা লিখেছে সেটা লিখেছে আমারই কথায়, বলেন গিরিবালা, যেন দুলির চিঠি লেখার ব্যাপারটার কৈফিয়ৎ দিচ্ছেন।

    যদিও সেপ্টেম্বর থেকেই সকলে জানে নজরুল প্রেপ্তার হবে যে-কোন দিন, বাস্তবে কিন্তু হল না তেমনটা। পুলিশের  কাজের ধরণটাই অবিশ্যি এরকমই। এতদিনেও যখন নজরুলের খোঁজও নিচ্ছে না পুলিশ, তখন – সত্যিই যদি
    গা-ঢাকা দিয়েও থাকে সে – তাহলে সে সাহস পাবে মনে, আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে আবার। আর, তখনই সুযোগ তৈরি হবে পুলিশের জন্যে।

    এমনটাই ছিল হয়তো পুলিশের হিসেব। তাই সেপ্টেম্বর গেল, গেল অক্টোবরও। আটুই নভেম্বরের সকালে মুজফ্‌ফর আর আবদুল হালীম গেছে ধূমকেতুর অফিসে একটু আড্ডার আশায়, হঠাৎ সিঁড়িতে ভারী বুটের শব্দ। এক দল পুলিশ। তারা সার্চ ওয়রেন্ট নিয়ে এসেছে। ছাব্বিশে সেপ্টেম্বরের ধূমকেতু যতগুলো ছিল সবই পুলিশ নিয়ে গেল। সঙ্গে আরও কিছু কাগজপত্র। সীজার লিস্টের একটা কপিও তারা দিয়ে গেল মুজফ্‌ফরের কাছে। পু্লিশ জানাল, এই দিনের এই কাগজে আনন্দময়ীর আগমনে নামে একটা কবিতা ছাপা হয়েছে। সেটাকে সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। আর, শুধু আনন্দময়ীর আগমনেই নয়, ওই একই দিনের পত্রিকায় বাজেয়াপ্ত হয়েছে আর একটি লেখা। এটির নাম বিপ্লবীর কৈফিয়ৎ। রচনা যার, তার নাম লীলা মিত্র, দশ-বার বছর বয়েসের একটি মেয়ে!

    পরে জানা গেল, যখন প্রতাপ চাটুজ্যে লেনের ধূমকেতু অফিসে হানা দিয়েছিল পুলিশ, ঠিক সেই মুহূর্তেই আর এক দল পুলিশ বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীটে আফজালের ঘরে পৌঁছয়। তারা শুধু যে ছাব্বিশে সেপ্টেম্বরের ধূমকেতুগুলোই নিয়ে গেল তা নয়, গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল আফজালুল হককেও; সে ধূমকেতুর প্রকাশক ও মুদ্রাকর।

    কলকাতায় যখন এইসব কাণ্ড পুলিশ তখনও নজরুলের হদিশ জানে না সম্ভবত। শেষ পর্যন্ত বাইশে নভেম্বর সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় পৌঁছনর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার হল নজরুল। ধূমকেতুর স্বত্বাধিকার বিরজাসুন্দরীকে হস্তান্তর করবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে এনেইছিল কাজি কলকাতা থেকে, সে কাজটা করতে বেশি সময় লাগল না। গিরিবালাকে আলাদা করে বলে এল সে, সম্ভবত জেলেই যেতে হবে আমাকে। কতদিনের জন্যে, জানিনা। কিন্তু ছাড়া যখন পাব, চলে আসব আমি, সে যতদিনেই হোক না কেন। কাগজ-পত্রে জানতে পারবেন সবই। দুলিকে বলবেন, ওর জন্যে অপেক্ষা করে থাকব আমি।

    চাটগাঁ মেল-এ নজরুলকে কলকাতায় নিয়ে এল পুলিশ। চব্বিশে নভেম্বর কলকাতার চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে তোলা হল তাকে। মামলার দিন ধার্য হল উনত্রিশে নভেম্বর। এ মামলায় নজরুলের পক্ষে কোন উকিল দেওয়া হয়নি। সে শুধু তার স্বরচিত একটি দীর্ঘ বিবৃতি আদালতে পেশ করেছিল। বিবৃতিটি আইনের শরণাপন্ন হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে নয়, পরাধীন দেশের আত্মসম্মান-বোধ সম্পন্ন এক যুবকের যথাযোগ্য কর্তব্যপালনের দায় স্বীকার:

     ...বিচারক জানে আমি যা বলেছি, যা লিখেছি তা ভগবানের চোখে অন্যায় নয়, ন্যায়ের এজলাসে মিথ্যা নয়। কিন্তু তবু হয়তো সে শাস্তি দেবে। কেন না সে সত্যের নয়, সে রাজার। সে ন্যায়ের নয়, সে আইনের। সে স্বাধীন নয়, সে
    রাজ-ভৃত্য। তবু জিজ্ঞাসা করছি, এই যে বিচারাসন, – এ কার?, রাজার না ধর্মের? এই যে বিচারক, এর বিচারের জবাবদিহি করতে হয় রাজাকে, না তার অন্তরের আসনে প্রতিষ্ঠিত বিবেককে, সত্যকে, ভগবানকে? এই বিচারককে কে পুরস্কৃত করে? – রাজা, না – ভগবান? – অর্থ না – আত্মপ্রসাদ?...

    উনিশশো তেইশের ষোলই জানুয়ারি রায় শোনালেন চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট, ভারতীয় দণ্ডবিধির একশো চব্বিশের এ ধারা অনুযায়ী এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড কাজি নজরুল ইসলামের। নজরুল নিয়োগ না করলেও মলিন মুখোপাধ্যায় নামে এক তরুণ আইনজীবী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নজরুলের পক্ষে কথা বলছিলেন মাঝে মাঝেই। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আদালত অন্তত নজরুলকে বিশেষ শ্রেণীর কয়েদী হিসেবে ঘোষণা করুক। ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, বিশেষ করে এই ঘোষণার প্রয়োজন নেই, রাজনৈতিক বন্দীরা সবাই বিশেষ শ্রেণীর বন্দী।

    সতেরই জানুয়ারি, মাঘের প্রথম সপ্তাহ, কাজি নজরুলকে পাঠিয়ে দেওয়া হল আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সারথি-সম্পাদক কাজি নজরুল নিজেই কারান্তরালে, অতএব শুধুই সম্পাদক নয়, প্রধান লেখক কাজিই নেই। কাজিরই ব্যবস্থাপনায় বিরজাসুন্দরী ধূমকেতুর স্বত্বাধিকারী এখন। বারই মাঘ কাজি নজরুল সংখ্যা হিসেবে বেরল সেই পর্যায়ের শেষ ধূমকেতু, আদালতে দেওয়া কাজির সম্পূর্ণ জবানবন্দিই সেই সংখ্যার প্রধান আকর্ষণ, সঙ্গে মায়ের আশিস নামে বিরজাসুন্দরীর একটি কবিতা।

    অসহযোগ আন্দোলন হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, সারা দেশে – বিশেষ করে বাংলায় – একটা স্থিতিজাড্যের পরিস্থিতি। এই অবস্থা অসহ্য হয়ে উঠেছিল কাজির পক্ষে। দেশনেতারা প্রায় সবাই কারারুদ্ধ; বাইরে যাঁরা, তাঁরাও বিশেষ কোন উৎসাহব্যঞ্জক পরিকল্পনা দিতে ব্যর্থ। সেই যে নবযুগের কাজ ছেড়ে নিবারণ ঘটক স্যরের সঙ্গে দেখা করেছিল কাজি কীভাবে দেশের কাজে সে লাগতে পারে বোঝবার জন্যে, সেখান থেকেই সে শেষ অবধি পৌঁছিয়ে যায় কুমিল্লায়। কুমিল্লাই তাকে বুঝিয়ে দেয় তার হাতে দেশের কাজ করার জন্যে যে যে অস্ত্র আছে তাদের নাম কলম সুর আর কণ্ঠস্বর। ধূমকেতুতে এই অস্ত্রেরই যথাযথ প্রয়োগ করল কাজি। প্রকৃতির ধূমকেতুর মতোই কাজির ধূমকেতুও জাড্যজনিত স্থিতির পুরো অবস্থাটাকে একটা প্রবল নাড়াচাড়া দিয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ প্রথম থেকেই বুঝেছিলেন নজরুলকে। তাই ধূমকেতুর জন্যে আশীর্বাণী চাইবার সঙ্গে সঙ্গেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাণী।

    এবার নজরুল যখন কারাবন্দী, তাকে তাঁর বসন্ত গীতিনাটক উৎসর্গ করলেন কবি। কলকাতার ম্যাডান থিয়েটারে বসন্তবরণের আয়োজন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেই উপলক্ষেই বসন্ত প্রকাশিত হয়। কাজির বিশিষ্ট বন্ধু পবিত্র গাঙ্গুলিকে জোড়াসাঁকোয় ডেকে পাঠালেন কবি। তার কাছে স্পষ্টই বললেন রবীন্দ্রনাথ, জাতির জীবনে বসন্ত এনেছে নজরুল। তাই আমার সদ্যপ্রকাশিত বসন্ত গীতিনাট্যখানি ওকেই উৎসর্গ করেছি। সেখানে নিজের হাতে তাকে দিতে পারলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু আমি যখন নিজে গিয়ে দিয়ে আসতে পারছি না আমার হয়ে তুমিই বইখানা ওকে দিও।

    দুখানা বইয়ের একটায় নিজের নাম সই করে কবি বললেন, তাকে বোলো, আমি নিজের হাতে তাকে দিতে পারলাম না বলে সে যেন দুঃখ না করে। আমি তাকে সমগ্র অন্তর দিয়ে অকুণ্ঠ আশীর্বাদ জানাচ্ছি। আর বোলো, কবিতা লেখা যেন কোন কারণেই সে বন্ধ না করে। সৈনিক অনেক মিলবে, কিন্তু যুদ্ধে প্রেরণা যোগাবার কবিও তো চাই।

    কারান্তরালের ভেতরের বন্ধুকে গরাদের বাইরে থেকে রবীন্দ্রনাথের উৎসর্গীকৃত বসন্তখানা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দু'হাতে গরাদ ধরে শুরু হয় প্রাপকের উদ্দাম নাচ। দেখে, বিস্মিত য়্যোরোপীয়ান ওয়ার্ডার পবিত্রকে জিজ্ঞাসা করে, ব্যাপারখানা কী? ব্যাপারখানা পবিত্র বুঝিয়ে দেবার পর সাহেব গরাদের দরজা খুলে দিয়ে পবিত্রকে ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ করে দেয়, বিনিময়ে দ্বিতীয় কপি বইখানা।

    কাজি ভাবল, তার কারাবন্দী জীবনে শীত ছাড়িয়ে সত্যি সত্যিই এল বসন্ত।

    কিন্তু, সে বসন্তে ফুল ফুটতে দেবে কি সরকার?

    চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট হয়তো সত্যি-সত্যিই ভেবেছিলেন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে কাজি নজরুল ইসলামের বিশেষ শ্রেণীর বন্দী হওয়াটাই স্বাভাবিক, তার জন্যে আলাদা করে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ নানা সূত্রে নানা নির্দেশ পায়। সাধারণত রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করার উদ্দেশ্য জনগণের থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা, কিন্তু কোন কোন রাজবন্দীর ক্ষেত্রে আরও কঠিন বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ধূমকেতু প্রথম থেকেই চাঁচাছোলা ভাষায় সরকার-বিরোধীতা করেছে, এমনকি “রাজা বা শাসক হয়ে এ দেশে মোড়লি করে দেশকে শ্মশানভূমিতে পরিণত” করার অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে তুলে তাদের “পাততাড়ি গুটিয়ে, বোঁচকা-পুটলি বেঁধে সাগরপাড়ে পাড়ি” দেবার নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করার জন্যে কবিতা-প্রবন্ধ-সম্পাদকীয় লিখে দেশবাসীকে রক্তক্ষরণে উদ্বুদ্ধ করবার চেষ্টা করেছে। এ তো রক্তাক্ত বিপ্লবের ডাক!

    বিপ্লব চায় কাজি? বিপ্লব?

    বিপ্লব মানে তো আমূল পরিবর্তন। অতি অল্প সময়ে আমূল পরিবর্তন। তবে তা-ই হোক।

    আলিপুর সেন্ট্রাল থেকে হুগলি জেলে কাজিকে পাঠানো হল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই। এবং বন্দীর হিস্ট্রি শীটের নানা মন্তব্যের মধ্যে প্রধানটি হল, এর কয়েদ সাধারণ বন্দী হিসেবে, কোন বিশেষ শ্রেণী এর জন্যে নয়।

    কলকাতা থেকে হুগলি জেলে আসতে হুগলিঘাট স্টেশনে নামতে হয়। তখন হুগলিঘাট স্টেশনে কলকাতা থেকে সোজা কোন রেললাইন ছিল না। নৈহাটিতে নেমে গাড়ি-বদল করতে হত। ততদিনে নজরুল বাংলায় অতি-পরিচিত মুখ। নৈহাটি স্টেশনে পুলিশের হেপাজতে তাকে দেখতে পেয়ে প্ল্যাটফর্মে অনেক মানুষই বুঝল কাজিকে হুগলি জেলে পাঠানো হচ্ছে। খবরটা ওই অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল, ফলে হুগলিঘাট স্টেশনে স্থানীয় অনেক মানুষই ভীড় করল তাকে দেখবার জন্যে। জেলটা স্টেশনের একেবারেই গায়ে-লাগা, কিন্তু স্টেশনটা মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে, ফলত স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালেই জেলের ভেতরটা দেখতে পাওয়া যায়। বিস্মিত স্থানীয় মানুষ প্রায় অবিশ্বাসের সঙ্গে নজরুলকে দেখল জাঙিয়া আর হাত-কাটা কুর্তা পরিহিত। বোঝা গেল তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সাধারণ কয়েদীর স্তরে। এ খবরটা চেপেই রাখা হয়েছিল। হুগলি জেলের ভেতরে নিয়ে গিয়ে কাজির পোশাকে পরিবর্তন করানো হয়, সে-খবর কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছোতে দেরি হল না।

    জাঙিয়া-হাত-কাটা-কুর্তায় কাজির কিছু যায়-আসে না। কিন্তু জেলার যিনি, থার্স্টন সাহেব, তিনি বোধ হয় দুর্ব্যবহারে বিশেষভাবে শিক্ষণপ্রাপ্ত। বিনা কারণে বন্দীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে তাঁর জুরি নেই। মজাই পায় কাজি। কয়েদীদের একমাত্র সম্পত্তি একটি লোহার থালা, সেটা পিটিয়ে, সে আর সহবন্দীরা প্রতি সকালে তাঁকে স্বাগত জানায় গান গেয়ে:


                                                    তোমারি জেলে পালিছ ঠেলে       তুমি ধন্য ধন্য হে,
                                                    আমার এ গান তোমারই ধ্যান     তুমি ধন্য ধন্য হে।
                                                    রেখেছ সান্ত্রি-পাহারা দোরে
                                                    আঁধার কক্ষে জামাই-আদরে
                                                    বেঁধেছ শিকল প্রণয়-ডোরে        তুমি ধন্য ধন্য হে।
                                                   
                                                    আকাঁড়া চালের অন্ন-লবণ
                                                    করেছে আমার রসনা লোভন,
                                                    বুড়ো ডাঁটা-ঘাঁটা লপসি শোভন    তুমি ধন্য ধন্য হে।
                                                   
                                                    ধরো ধরো খুড়ো চপেটা মুষ্টি
                                                    খেয়ে গয়া পাবে সোজা সগুষ্টি
                                                    ওল-ছোলা দেহ ধবল-কুষ্টি         তুমি ধন্য ধন্য হে।


    এই বাংলা গানের ইংরিজি তর্জমা করবার লোকের অভাব হয় না। ফলত যে অখাদ্য ভোজনের সুব্যবস্থাকে প্রায় আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন থার্স্টন সাহেব, তারও পরিমাণ কমে, নানা শাস্তির মধ্যে আরও নতুন শাস্তিও যুক্ত হয়, নজরুলের অঙ্গে ওঠে লোহার শিকলের নানা ধরনের বন্ধন। অত্যাচার প্রায় সীমা ছাড়াতে থাকে যখন তখন বাইশ-তেইশজন বন্দী প্রতিবাদে অনশন শুরু করে। অনশনে কর্তৃপক্ষের খুব একটা আপত্তি নেই। খবরটা খুব একটা চাউর না হলেই হল! বিনা অস্ত্রে যদি নজরুল নিধন হয়েই যায়, মন্দ কি?

    কিন্তু বাদ সাধে জেলখানার অবস্থান। প্রথম দিন থেকেই হুগলির তরুণরা – এমনকি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকেই – বন্দীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে সহজেই। চিঠিপত্র ছুঁড়ে দেওয়া, পাঁচিলের ও-পার থেকে ছুঁড়ে-দেওয়া কাগজে লিপিবদ্ধ নানা অভিযোগ, সহজেই হস্তগত হয় স্থানীয় যুবকদের। অতএব এত জন কারাবন্দীর অনশনের খবর কলকাতার একাধিক দৈনিকে ছাপা হয়, তাদের যে খাওয়াবার কোন চেষ্টাই করা হচ্ছে না, খবরের কাগজে সে খবরও বেরিয়ে যায়। থার্স্টন সাহেবের রোষ এতে বেড়েই চলে। আবদুল হালীমকে লেখা কাজির একটা চিঠি – যা জেলের বাইরে কোন রাস্তার একটা ডাকবাক্সে কেউ ফেলে দিয়েছিল – সহজেই পৌঁছিয়ে যায় উদ্দিষ্ট প্রাপকের কাছে, দু'দিনের মধ্যেই হালীম পবিত্র আর নলিনী সরকার জেলের বাইরে হাজির। তাদের কয়েদীর সঙ্গে দেখা করবার অনুমতি দেওয়া হয় না। জেলের পাঁচিলের বাইরে থেকে তারা করজোড়ে কাজিকে অনুরোধ করে অনশনের এই মারাত্মক খেলা বন্ধ করতে; এ জেলের কর্ত্তৃপক্ষ অনশনে কাজির মৃত্যুই চায়।

    ক্রমে বন্দীদের অনেকেই কর্তৃপক্ষের চাপে অনশন ভঙ্গ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনজন বন্দী – কাজি নজরুল ইসলাম, মৌলবি সিরাজউদ্দীন আর গোপালচন্দ্র সেন – অনশন চালাতেই থাকেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় তিন বন্দীর দু' সপ্তাহের অনশনের খবর ছাপা হল। জানা গেল, নজরুলের প্রতি রাত্রেই জ্বর হচ্ছে, এবং জ্বরের সময় সে জ্ঞানও হারাচ্ছে নিয়মিত। এর পর ছোলতান পত্রিকা বন্দীদের চার সপ্তাহ অনশনের খবর দিয়ে জানাল, কাজি সাহেবের পঁচিশ পাউণ্ড ওজন কমেছে। সমস্ত দেশ উদ্‌বিগ্ন, সরকারের কোন সাড়া-শব্দ নেই। অমৃতবাজার পত্রিকা কলকাতার কলেজ স্কোয়ারের এক জনসভার বিবরণ প্রকাশ করে জানায়, সাংবাদিক সংগঠনের একাধিক সদস্য ও সম্পাদক মৃণালকান্তি বসু অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধকল্পে বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো সত্ত্বেও সে আবেদন খারিজ করা হয়েছে। শিলং থেকে প্রেসিডেন্সী জেলের ঠিকানায় তারযোগে নজরুলকে পাঠানো রবীন্দ্রনাথের অনশনভঙ্গ করার অনুরোধ 'অ্যাড্রেসী নট ফাউণ্ড' মন্তব্যসহ ফেরৎ পাঠানো হয়। কর্তৃপক্ষ যে অনশনকারীদের মৃত্যুর অপেক্ষাতেই আছে, তা বুঝতে যখন কারো আর সন্দেহ নেই, তখন আইন-সভায় জেল-কমিটির সদস্য হিসেবে ডঃ আবদুল্লা সোহ্‌রাওয়র্দী ২০শে মে নজরুলের সাক্ষাৎপ্রার্থী হয়ে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে একটি তারবার্তা পাঠান। বাইশে মে তাঁকে অনুমতি দেবার পর সদলে সোহ্‌রাওয়র্দী নজরুলের সঙ্গে কারাগারে দেখা করেন এবং নানা জনসভার আকুতি জানিয়ে তাকে অনশনভঙ্গ করতে অনুরোধ জানান। সে অনুরোধও নিষ্ফল হল। অবশেষে তেইশে মে কুমিল্লা থেকে এসে বিরজাসুন্দরী মা নিজে হুগলি জেলে কাজির সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর অনুরোধও যখন – না, আমি অন্যায় সইব না – বলে বারবার প্রত্যাখ্যান করছে কাজি, তখন বিরজাসুন্দরী – আমি মা, মার আদেশ সব ন্যায়-অন্যায়বোধের উপরে – বলে অনশন ভাঙবার হুকুম দেন, এবং নিজের হাতে নেবুর রস খাইয়ে আটত্রিশ দিনের অনশন ভঙ্গ করান।

    অনশনভঙ্গে সারা দেশ যখন মুক্তির নিশ্বাস ফেলছে, সরকার তখন ফুঁসছে রাগে। পঁচিশে মে – অনশনভঙ্গের দু'দিন পরেই – জোর করে কাঁধে উঠিয়ে নজরুলকে এক মাসের জন্যে আবার নিঃসঙ্গ 'সেল'-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয় শাস্তি হিসেবে!

    'চিরবিদ্রোহী' কিন্তু 'রণক্লান্ত' হয় না। কোন লিঙ্ক ফেটার্স বার ফেটার্স ক্রস ফেটার্স তার মাথা নোয়াতে পারে না।

    আঠেরোই জুন অবশেষে বিশেষ শ্রেণীর কয়েদী হিসেবে নজরুলকে হুগলি থেকে বহরমপুর জেলে পাঠাবার আদেশ আসে।



    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৪ মার্চ ২০২৩ | ২৩৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রঞ্জন রায় | 2405:201:3002:4135:a41e:6ba6:f8ed:***:*** | ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৯:৪৩517040
  • আপনার গবেষণা এবং কলম--দুটোকেই কুর্নিশ! 
     
    'তোমারই গেহে'র প্যারডি? কিছুই জানতাম না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন