২
আমাদের খুঁজলে পাবে,
সোনায় লেখা ইতিহাসে।
সেনবাড়ি এতবড় পরিবার – সবসময়েই জন্মদিন, বিয়ে, অন্নপ্রাশন কিছু না কিছু লেগে থাকত। আর মোহনবাগান জিতলে তো আর কথাই নেই। খেলার পরে খেলোয়াড়রা আসত। উৎসব লেগে যেত। চপ, কাটলেট, মাছের কচুরি, মাটন রোস্ট – এসব বাড়িতেই হত। আমার মামার বাড়িতে দিনরাত সেনবাড়ির গল্প হত। আর নারানমামা এলে নানারকম গল্প করত।
-মাছের কচুরি কেমন গো মা? কোনোদিন তো খাইনি।
- ওসব আমাদের কালের খাবার, বাড়িতে হত, দোকানে পাওয়া যেত।
- এখানে তো এত মাছ, পুকুরের মাছ, সাগরের মাছ, এখানে কর।
- সাগরের নোনা মাছে এসব হয় না। আর পুকুর? গতকাল তো উঠল, দেখলি না – সি-ল-ভা-র কার্প। বনেদী খাবারদাবার এসব দিয়ে হয় না। এর জন্য রইসি রুই, কাতলা বা ভেটকি লাগে।
- কীভাবে করে?
- ভেটকি হলে কাঁটা কম। যেকোনো ধরণের পিস নেওয়া যায়। আর রুই বা কাতলা হলে পেটির দিকের টুকরো নিত মা। ওতে কাঁটা ছাড়ানো সুবিধে হয়। টুকরোগুলো জলে নুন, হলুদ, ভিনিগার আর গোল মরিচ দিয়ে আগে হাল্কা সেদ্ধ করে বা ভাপিয়ে নিতে হবে। তারপর মাছটা ঠান্ডা করে কাঁটা ছাড়িয়ে নিতে হবে। এবার পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচালঙ্কা ভাল করে বেটে নিয়ে, ঐ মশলা দিয়ে মাছ সেদ্ধটা কষে একেবারে শুকনো শুকনো ভাজা ভাজা করে ফেলতে হবে। এতে ভাজা মশলা, গরম মশলা সবই দেওয়া যায়, আপ রুচি খানা। পুরটা রেডি হয়ে গেলে ময়দার লেচিতে পুর ভরে বেলে নিয়ে ছাঁকা তেলে ভাজতে হবে। কিন্তু বেলার সময়ে বেলনটা কায়দা করে একটু পাশ দিয়ে দিয়ে বেলতে হবে। তুই যদি মাঝখান দিয়ে চেপে বেলতে যাস, কচুরি ফেটে যাবে, তখন আর তেলে দিলে ফুলবে না।
- শুধু বললে হবে না। করবে একদিন। আচ্ছা মা, সেন বাড়ির সঙ্গে তোমার কীরকম সম্পর্ক? মোহনবাগানই বা সেনবাড়ির সঙ্গে কীভাবে যুক্ত ?
- সেটা বলতে গেলে তো এককথায় হবে না। অনেক কথা বলতে হবে। সেসব কি তোদের শোনার ধৈর্য্য আছে?
- আমাদের কী মনে কর বল তো মা? ধৈর্য্য আছে, তুমি বল।
- শোন তবে।
মায়ের কাছে কীর্তি মিত্তিরের বাড়ির গল্প শুনতাম, সেনবাড়ির গল্প শুনতাম। এও শুনেছিলাম – বোসেরা, সেনেরা আর মিত্রেরা মিলে মোহনবাগান তৈরি করেছে। মায়েরা ছোটবেলায় বাগবাজারে থাকত। মামারা সকলে বাগবাজারী শৈলীতে লুচিকে নুচি, লেবুকে নেবু, লুকোতেকে নুকুতে, ঘড়িতে দেড়টাকে ডেড্ডা বলত। মুষলধারে বৃষ্টিকে উপঝ্ঝান্তে বৃষ্টি বলা হত। জানিনা কী শব্দ থেকে কথাটা এসেছে। আর সেনেদের বাড়ি উচ্চারণে হত স্যানেদের বাড়ি। দিনরাত দাঁতি দা, মাল দা, বাচি দা, ভাউ দার গল্প হত।
- এঁরা কারা?
- এঁরা সব মায়ের দাদা। আমার মামা। মা বলত, জানিস, সবাই মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত। মা আরও বলত, মায়ের পূর্বপুরুষেরা মানে বোসেরা মোহনবাগানের তৈরির সময়ে মোটা অনুদান দিয়েছিল।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পেরিয়ে, ভূপেন বোস এভিনিউ বরাবর হেঁটে, মনীন্দ্র কলেজের লাগোয়া গলি দিয়ে, শ্যাম পার্কের পাশ দিয়ে, আমি, মা আর বোন গিরিশ এভিনিউ-এ পড়তাম। বলরাম মন্দির, বোরোলীন হাউস আর গিরিশ ঘোষের বাড়ির পাশে নিবেদিতা লেন। সেই গলিতে আমাদের ইস্কুল। কিন্তু তখন জানতাম না ভূপেন বোস কে। ফেরার পথে শ্যামপার্কের ধারে বাগবাজারের সেনবাড়িতে যেতাম মাঝে মাঝে। পরিণত বয়সে যখন আমার কম্পিউটার হল, আন্তর্জাল-সংযোগ হল, মনপ্রাণ দিয়ে আমার অনুসন্ধান শুরু করলাম। মানে টুকরো স্মৃতি, টুকরো কথা, কিছু পাঠ – সূঁচ-সুতো দিয়ে জুড়তে শুরু করলাম।
শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব তাঁর পিতা গোপীমোহন দেবের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে ফড়িয়াপুকুরে এক বিরাট বাগান পেয়েছিলেন। সেই বাগানই মোহনবাগান। গোপীমোহনের পালক পিতা হলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। হয়তো গোপীমোহন পেয়েছিলেন নবকৃষ্ণের থেকে।
- পালক পিতা মানে?
- নবকৃষ্ণের নিজের পুত্র ছিল না বলে, তিনি দাদা রামসুন্দরের ছেলে মানে নিজের ভাইপোকে দত্তক নিয়েছিলেন।
- নিজের দাদা?
- হ্যাঁ। ঐ বাগান পরে গোপীমোহনের উত্তরপুরুষের কাছ থেকে কিনে নেন প্রখ্যাত পাট ব্যবসায়ী কীর্তি মিত্র। তিনি ঐ বাগানে তখনকার ডাকসাইটে স্থপতি নীলমণি মিত্রকে দিয়ে নকশা করিয়ে মোহনবাগান ভিলা নামে শ্বেতপাথরের এক চোখ ধাঁধানো বিশাল প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন, যদিও বেশিদিন এই প্রাসাদ তিনি ভোগ করতে পারেননি।
- কেন?
- প্রাসাদ তৈরির কিছুদিন পরে ওঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর মালিক হলেন তাঁর পুত্র প্রিয়নাথ মিত্র। তিনি ব্যরিস্টার হরিদাস বোস, আইনজীবী ভূপেন বোস এবং আরো কয়েকজন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই মোহনবাগান ভিলার লাগোয়া মাঠে খেলা ছেলেদের নিয়ে একটা ফুটবল দল গঠন করেন। সেই দলই অনেক পথ পেরিয়ে আজকের “এ.টি.কে. মোহনবাগান”।
- আচ্ছা!
- শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেবের সেজ মেয়ের বর মহেশচন্দ্র বোস রাজবাড়িতেই ঘরজামাই হয়ে সংসার পাতেন। এই মহেশের ছেলে শরৎচন্দ্র বসু, মায়ের মানে কৃষ্ণার ঠাকুরদা ইংরেজদের সঙ্গে বস্ত্র উপকরণ রপ্তানি এবং বস্ত্র ও কাগজ আমদানির ব্যবসা করতেন। তাঁর স্ত্রী, মানে কৃষ্ণার ঠাকুমা কুমুদিনী বসু লেখিকা, সমাজসেবী, ভগিনী নিবেদিতার সহযোগী। শরৎ- কুমুদিনীর ছোট ছেলে হলেন আমার দাদু, বিকাশচন্দ্র বোস। দাদুরা পাঁচ ভাই, তিন বোন। বড় বোন লীলার বিয়ে হয় বাগবাজারের সেন পরিবারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভবনাথ সেনের ছোট ছেলে শ্রীশচন্দ্র সেনের সঙ্গে আর ছোট বোন ইন্দিরার বিয়ে হয় প্রখ্যাত পাট ব্যবসায়ী কীর্তি মিত্রের নাতি এবং পি. মিত্রের ছেলে রবীন মিত্রের সঙ্গে।
- তার মানে সেন বাড়ি আর মিত্রবাড়ি কি তোমার পিসির বাড়ি হল?
- আমার পিসি নয়, আমার মায়ের পিসি। আমার পিসি দিদার বাড়ি। মায়ের বড় পিসিমার শ্বশুরবাড়ি হল সেন বাড়ি আর ছোটপিসিমণির শ্বশুরবাড়ি হল মিত্রবাড়ি। আমার পিসি তো ধান্যকুড়িয়ার যে গাইন গার্ডেন সবাই দেখতে যায়, সেই গাইনবাড়ির বৌ।
বড় পিসিদিদার শ্বশুর ভবনাথ সেন ইংরেজদের কাছ থেকে কলকাতার ধাপা লিজ নিয়ে, জঞ্জালের ওপরে ফসল ফলাতে সফল হন। আজ যে পূর্ব কলকাতার জলাভূমি কলকাতার কিডনি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তার সূত্রপাত ভবনাথ সেনের হাত ধরে।
- কলকাতার কিডনি কী?
- ময়দানকে বলা হয়, কলকাতার ফুসফুস। কারণ ফাঁকা জায়গা, গাছগাছালি আছে। পূর্ব কলকাতার জলাভূমিকে বলা হয় কলকাতার কিডনি। কারণ উত্তর কলকাতায় বাগজোলা খাল, মধ্যে কেষ্টপুর খাল আর দক্ষিণ কলকাতার টালি নালা – এই তিনটে প্রবাহ কলকাতার সব ময়লা জল টেনে নিয়ে ঐ জলাভূমিতে ফেলে। জলাভূমির মধ্যে মাছ চাষ হয়, মাছগুলো ঐ ময়লা জলের সঙ্গে ভেসে আসা জৈব পুষ্টিকর পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্য কোনো খাবার দেওয়া হয় না। জলাভূমিগুলোর মাঝখানে আবার সবজি চাষও হয়। মাছ ময়লা খেয়ে ফেলে বলে, ঐ জলাভূমিতে কলকাতার নোংরা জল পরিষ্কার হয়ে যায়। ঐ ভাল জল জলাভূমি থেকে যায় কুল্টি গাঙ বলে একটা নদীতে। সেই নদী আবার মিশেছে মাতলা নদীতে। ঐ নদীপথ ধরে সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে কলকাতার ব্যবহৃত জল চলে যায় বঙ্গোপসাগরে। যদি এতবড় শহরের ময়লা জল সরাসরি যেত, তবে সুন্দরবনের অনেক বেশি ক্ষতি হত। মাঝখানে ময়লা টেনে পরিষ্কার করে দেয় বলে ঐ জলাভূমিকে কলকাতার কিডনি বলে।
- আচ্ছা, বুঝলাম। কিন্তু এর সঙ্গে ধাপার লিজের কী সম্পর্ক?
- এলাকাটা তো একই। জলাভূমিতে যেমন মাছগুলো জলের ময়লা খেয়ে বড় হয়, তেমন জমিতে কলকাতার ফেলে দেওয়া কঠিন বর্জ্যের ওপরেই চাষ হয়। কলকাতা শহর তৈরির শুরুতে শহরের নোংরা আবর্জনা সব ফেলা হত সোজা আমাদের ভাগীরথী – হুগলী নদীতে মানে গঙ্গার জলে। কিন্তু ইংরেজরা দেখল, নদী থেকে খাবার জলের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনিতেই গঙ্গার ঘোলাজল পানের উপযুক্ত করতে অনেক টাকা খরচ, তার ওপর ময়লা ফেললে আরও মুশকিল হবে। তারপর বেশ কয়েক বছর ভরাট করা হত মজে যাওয়া খাল, নীচু জমি ওই নোংরা দিয়েই। এ ভাবেই সার্কুলার খাল বুজিয়ে সার্কুলার রোড তৈরি হয়েছে, সরু জলধারা বুজিয়ে ক্রিক রো হয়েছে। কিন্তু তারপর? কোনো স্থায়ী জায়গা তো চাই। শহর যত বপুতে বাড়ছে আবর্জনার স্তূপও বড় হয়ে যাচ্ছে।
তখন, ১৮৬৫ সালে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির ধারে ধাপা অঞ্চলের এক বর্গ মাইল অঞ্চলকে, বেছে নেওয়া হল শহরের ময়লা ফেলার জন্য। কিন্তু জঞ্জালগুলো তো কোনো কাজে লাগাতে হবে, নইলে বছরের পর বছর জমতে জমতে তো শহরটাই ঢাকা পড়ে যাবে। দূষিত গ্যাস তৈরি হবে, যেটা শহরবাসীর স্বাস্থ্যের পক্ষে একেবারেই ঠিক হবে না। তাই ইংরেজরা চাইছিল, এই আবর্জনার ওপরে যেন চাষবাস করা যায়। জঞ্জালের ওপরে চাষ করতে ভবনাথ সেন প্রথম সফল হন। পাটনা থেকে তিনি অভিজ্ঞ চাষি নিয়ে আসেন। তাদের ওখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। তাদের কাজ দেখে স্থানীয় চাষিরাও উৎসাহী হয়ে জঞ্জালের ওপরে চাষ করতে এগিয়ে আসে। ভবনাথ বুদ্ধি খাটিয়ে ময়লা জলে মাছ চাষ শুরু করেন। আবার ঐ মাছ বিক্রির জন্য ইংরেজদের কাছে আবেদন করে একটা হাট তৈরি করার ইজারাও ভবনাথ পেয়ে গেলেন।
- আচ্ছা! এর সঙ্গে মোহনবাগান কীভাবে এল?
- বলছি তো, শোন আগে।
যে সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র গ্র্যাজুয়েট হয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হলেন, সেই সময়কালে ভবনাথ সেনের দাদা ব্রহ্মনাথ সেনও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন। তাঁর ছেলে মণিলাল সেনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আর এক খ্যাতনামা আইনজীবী ভূপেন্দ্রনাথ বসুর মেয়ে নীরোদবালার। রামরতন বসু ও দয়াময়ী দেবীর পুত্র ভূপেন্দ্রনাথ পরে আইনসভার সদস্য, জাতীয় কংগ্রেসের নেতা এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন নিখাদ ক্রীড়াপ্রেমী। আবার মণিলাল সেন মোহনবাগানের ফুটবল এবং ক্রিকেট – দুটো দলেরই প্রথম অধিনায়ক। বাংলায় তিনি প্রথম রাউন্ড দ্য আর্ম বোলিং শুরু করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি নামকরা অ্যাটর্নি হন। মণিলাল – নীরোদবালার ছেলে দীনবন্ধু সেন বা দাঁতি সেন। মণিলাল সেনের খুড়তুতো ভাই ভবনাথ সেনের এক ছেলে হেমচন্দ্র সেনও মোহনবাগানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। দাঁতি সেন আমার দাদুর বিয়ের সম্বন্ধ করেন তাঁর শ্যালিকার সঙ্গে। এই শ্যালিকাই লাবণ্যপ্রভা। আমার দিদা।
- দাঁড়াও দাঁড়াও মা, সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
- ভাল করে বোঝ, বিকাশ বোস, আমার দাদু। তার বড় ভগ্নীপতি শ্রীশ সেন বা ভূতিবাবু। এই ভূতিবাবুর জেঠতুত দাদা মণিলাল সেন। মানে আমার বড় পিসিদিদার ভাশুর। ব্রহ্মনাথ আর ভবনাথ তো দুই ভাই। ব্রহ্মনাথের ছেলে মণিলাল, ভবনাথের ছেলে ভূতিবাবু – মায়ের বড় পিসেমশাই। তাহলে ভূতিবাবুর জেঠতুত দাদা মণিলাল হলেন তো। মণিলালের ছেলে দাঁতি সেন। আর ভূতিবাবুর ছেলেরা হল নমে সেন, হুঁকুজ সেন, বাচি সেন। এনারা তিনজন মায়ের পিস্তুত দাদা, আমার মামা। দাঁতি সেন মায়ের পিস্তুত দাদাদের জেঠতুত দাদা। একবাড়ি তো, যৌথ পরিবার। দাদার দাদাও দাদা। এবারে বুঝেছিস?
- আচ্ছা বুঝলাম। এবারে শ্যালিকার ব্যাপারটা বল।
- দাঁতি সেনের স্ত্রী ফুলরানী সেন (বসু) চিকিৎসক আর জি করের ভাই রাধামাধব করের দৌহিত্রী এবং ফনীন্দ্রনাথ বসুর কন্যা। আর আমার দিদা লাবণ্য হলেন আর জি করের ছোট ভাই রাধাকিশোর করের দৌহিত্রী এবং ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষের কন্যা। ফনীন্দ্রনাথও আইনজীবী। আর ধীরেন্দ্রনাথেরা হলেন খানাকুলের ঘোষ মানে বালীর ঘোষেদের শাখা। ইনি, এঁর পরিবার – সব ব্যবসায়ী।
- দৌহিত্রী মানে কি?
-দৌহিত্রী মানে মেয়ের মেয়ে, মেয়ের দিকে নাতনি। ফুলরানী আর লাবণ্য দুই ভায়ের নাতনি। মানে সম্পর্কে বোন।
সেন পরিবার খেলাধূলায় খুবই উৎসাহী ছিল। দাঁতি সেন পরিণত বয়সে খ্যাতনামা অ্যাটর্নি হন। কিন্তু প্রথম জীবনে তিনি মোহনবাগানের খেলোয়াড় এবং পরবর্তীতে কর্মকর্তা। স্বাধীনতার পরে বেশ কিছু বছর তিনি মোহনবাগানের সহসভাপতি ছিলেন। এই দলে সেন পরিবারের অবদান শুধু ফুটবলে নয়, ক্রিকেট, হকি এবং টেনিস সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। মণিলালের আর এক পুত্র কানাই সেন ওরফে রবীন্দ্রনাথ সেনও ফুটবল এবং ক্রিকেট দুটি দলেরই অধিনায়ক হয়েছিলেন। এঁদের এক ভাই সত্যেন্দ্রনাথ সেন বা মাল সেন মোহনবাগানে টেনিস বিভাগের প্রবর্তন করেন এবং ঐ বিভাগের সচিব ছিলেন। শুনেছি ছায়াছবির প্রয়োজনে উত্তমকুমার তাঁর কাছে টেনিসের কৃৎকৌশল শিখতে এসেছিলেন।
- উত্তমকুমার? তোমার গল্পে উত্তম-সুচিত্রাও আছেন?
- আছেন তো। সরাসরি না হলেও লাবণ্য আর কৃষ্ণার যুগটা তো উত্তমকুমারের যুগ। তাই আছেন। তবে সেটা শরৎ - কুমুদিনীর মেজমেয়ের মানে আমার মেজপিসিদিদার বাড়ির গল্প। এখন তো বড় আর ছোট পিসিদিদার বাড়ির গল্প বলছি।