১
লকডাউনের জানালা মানে আমার জানালা। কোভিড ১৯-এর লকডাউনে বাড়িতে আটকে আছি, আজ দুটমাস পেরিয়ে তিন মাসে পড়ল। এখন মে মাসের শেষ। সেই ১৬ই মার্চ থেকে কলেজ বন্ধ। ১৪ই মার্চ দিনটা ছিল শনিবার। ক্যান্টিনে আলুর চপ ভাজা হয়েছিল। আমরা রুটিন ক্লাসের শেষে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস খুলে সবে বসেছি। এখনও ছাত্রছাত্রীর ভিড় শুরু হয়নি। বসে বসে আমরা যে যার জীবনের ক্যান্টিনে খাওয়ার অভিজ্ঞতা বলছিলাম। সবাই মিলে চপ-মুড়ি খাওয়া হচ্ছিল।
আমাদের নিবেদিতা ইস্কুলে বয়স্ক মহিলাদের জন্য শিল্পবিভাগ ছিল। মুখে মুখে নাম হয়ে গিয়েছিল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল’, কেন যে অমন অদ্ভুত নাম হয়েছিল কে জানে! ওখানে আসলে সেলাই শেখানো হত। আর ওখানকার ছাত্রী-দিদিরা বড়বাড়ির, মানে মাধ্যমিক বিভাগের, ক্যান্টিন চালাতেন। কোনোদিন নতুন কিছু হলে আগের দিন নোটিশ পড়ত। ছাত্রীরা যেন টাকা নিয়ে আসে। একবার ছোট্ট ব্ল্যাক বোর্ডে নোটিশ পড়ল – আগামীকাল আলু বন্ডা হবে। আমরা তখন প্রাথমিক পার করে সবে ক্লাস সিক্স। জেমস বন্ড কানে এসেছে। বাবার সঙ্গে টকিশো হাউসে বসে দেখেছিলাম রজার মুরের ‘লিভ অ্যান্ড লেট ডাই’। কিন্তু আলু বন্ডা কী জিনিস? সারা ক্লাসে সাড়া পড়ে গেল। লাইন দিয়ে পঞ্চাশ পয়সা করে আলু বন্ডা কিনতে গিয়ে টিফিনের ঘণ্টা গেল পড়ে। ফিফ্থ পিরিয়ডে প্রভাতীদির বাংলা ক্লাস। তিনি আবার ভীষণ রাগী, নিয়মের নড়চড় পছন্দ করেন না। বন্ডা তো পাওয়া গেছে। কিন্তু আগুন গরম। কচি বয়েসের নরম ঠোঁট, লোভী জিভ, পড়ে যাওয়া ফাঁকা খুদি দাঁতের পাটি – না পারে বন্ডার গরম সামলাতে, না পারে মুখ হাত ধুয়ে সময়ে ক্লাসে পৌঁছতে। সে কী হুড়োহুড়ি, সিঁড়ি দিয়ে হুড়মুড় দৌড়! কী টেনশন! প্রত্যেকের গল্প শুনে সবাই হাসি। মধুরিমা – আমাদের জুনিয়র স্টাফ – জিজ্ঞেস করে,
- আলু বন্ডা কী দিদি? আমি তো খাইনি।
- আলু বন্ডা মানে বলতে পারিস সাউথ ইন্ডিয়ান আলুর চপ। আমাদের কলেজ ক্যান্টিনের চপের থেকে বেশ আলাদা। আমি মাঝেমধ্যে করি বাড়িতে, বেশ একটু স্বাদবদল হয়।
- কী করে হয়, একটু বলুন না দিদি।
আমি হাসি। ওর নতুন সংসার তো, নতুন কিছু করে শ্বশুরবাড়িতে তাক লাগাতে চায় মনে হয়। মুখে বলি,
- কেন রে, শাশুড়ি মাকে করে খাওয়াবি?
- আসলে দিদি কলেজ থেকে ফিরে কী যে টিফিন করব, থোড় বড়ি খাড়া সবসময়ে ভাল লাগে না। শ্বশুর মশাই মশলাদার কিছু খেতে পারেন না। তাই ওঁদের সামনে আমরাও দোকান থেকে রোল, চাউমিন কিছু আনিয়ে খেতে পারি না। খারাপ লাগে। সাউথ ইন্ডিয়ান রান্নায় তো মশলা কম থাকে, ওঁরা নিশ্চয়ই খেতে পারবেন। একটু শিখিয়ে দিন না দিদি।
- তা শিখিয়ে দিচ্ছি, তবে একদিন করে এনে আমাদের খাওয়াতে হবে বলে দিলাম। শোন, সকালে কলেজ বেরোনোর আগেই চারটে মত আলু সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দিবি। তাহলে সন্ধেবেলা চটপট হয়ে যাবে।
- আচ্ছা।
- পেঁয়াজটাও চাইলে কুচিয়ে রেখে যেতে পারিস। সুবিধে হবে। আর একটু কারিপাতা যোগাড় করে রাখবি। আদাবাটা কি ফ্রিজে করে রেখে দিস?
- না ঐ ঘিষনিতে ঘষে নিই। দেখুন না তাড়াহুড়োতে আঙুলে কেমন ছাল উঠে গেছে।
- ওঃ, নতুন গিন্নি তো! শোন, খেলা শিখতে গেলে অমন অনেক চোট লাগে। ওটা নিয়ম। টেকনিক রপ্ত করতে সময় লাগে। একটা মিনি মিক্সি কিনে নিবি, আর ছোট ছোট চ্যাপ্টা টিফিন কৌটো। ছুটির দিন, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, সর্ষে সব বেটে আলাদা আলাদা টিফিন কৌটোয় পুরে ফ্রিজে যেখানটায় দুধ, দই থাকে, সেখানে রেখে দিবি। তিন-চারদিন আরামসে কাটবে। শুধু সর্ষে বেটে রাখলে তাতে দু’পলা সর্ষের তেল দিয়ে দিবি, নইলে গন্ধ হয়ে যায়।
- ঠিক আছে, কিন্তু তিন-চার দিন কাটবে, বাকি দিন? তখন তো সেই তাড়াহুড়ো।
- সপ্তাহের বাকি দিনের জন্য গুঁড়ো মশলা।
- আদা গুঁড়ো হয় বুঝি? রসুন গুঁড়ো?
- রসুন বাটা শেষ হয়ে গেলে আস্ত চার্জ করবি। আর আদা গুঁড়ো হয় তো। অনলাইন আছে, দক্ষিণাপন আছে। আরও অনেক ঠেক আছে। তোর যেমন রুচি।
- বাঃ, তাহলে তো খুব সুবিধে হয়, আজ থেকেই সব ব্যবস্থাপাতি শুরু করে দেব। এবারে বন্ডাটা বলুন।
- তেমন কিছু জটিল নয় রে। একটু তেলে গোটা সর্ষে, কাঁচা লঙ্কা, কারিপাতা ফোড়ন দিবি। একটু হলুদ দিবি। বয়স্ক মানুষ খাবেন। তাই লঙ্কা গুঁড়োটা বুঝে দিবি, বাদ দিতে পারিস। একটু আদা, ব্যস্। ঐ ফোড়নে আলু সেদ্ধ কষে নিবি, সঙ্গে স্বাদমত নুন। এবারে কড়া নামিয়ে ছাতু গুলে ব্যাটার করে নিবি। খুব পাতলা না হয়ে যায়। ছাতুতে এক টিপ হলুদ, নুন আর জোয়ান দিবি। এবারে আলুটা হাতে গোলা পাকিয়ে ছাতুগোলায় ডুবিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে নিবি। ঝাড়াঝাপ্টা রেসিপি। ঝামেলা নেই, সময়ও কম লাগে।
- আজকালের মধ্যেই চেষ্টা করব দিদি। কিছু অসুবিধে হলে আপনাকে ফোন করব, ঠিক আছে?
- নো প্রবলেম। অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস, মাদাম।
গল্পে গল্পে গত শনিবারের কথাও উঠে পড়ে। ঐদিন নারী দিবসের অনুষ্ঠান ছিল। আসলে নারী দিবস এখন আমাদের কলেজে পালন করা হয় না। আগে খুবই ঘটাপটা হত। কিন্তু ছ’বছর আগে আমাদের অঙ্কের তরুণ অধ্যাপক বঙ্কিম বাইক অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেল। ঐ আটই মার্চের অনুষ্ঠান শেষে আমাকে বলে গেল, “শারদাদি আসছি”, আমি বললাম – “এস”। কিন্তু ও কথা রাখতে পারল না। তাড়াহুড়োয় ছিল। কলেজ থেকে সোজা বিই কলেজে পিএইচডি গাইডের কাছে যাচ্ছিল বাইকে চড়ে। ইন্ডিয়ান অয়েলের ট্যাঙ্কারের তলায় বাইকটা শেষ আশ্রয় নিল। বঙ্কিম একটু কম কথা বলত, ওপর থেকে মনে হত গম্ভীর প্রকৃতির, কঠিন কঠিন অঙ্ক নিয়ে চিন্তা করছে। আসলে তা নয়। কম কথা বলত বলে সবাই মিলে ওর পিছনে লাগতাম। আমি একদিন বিরক্ত হয়ে বললাম, “বঙ্কিম, কী ব্যাপারটা বলত, এই যে গান বেরোল – চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন। কিন্তু ট্রামলাইনেরা তো সমান্তরাল রেখা, মিল হওয়া তো সম্ভব নয়। রাস্তা মানে আর্থ সারফেস। এখন পৃথিবীটাকে গোল ধরে অ্যালং এনি গ্রেট সার্কল অর স্মল সার্কল যদি রাস্তা যায় তবে তো ট্রাম লাইনদুটো ফুল সার্কল হয়ে যাবে। কলকাতার রেডিয়াল লাইনের ট্যানজেন্ট বরাবর লাইনগুলোর অসীমে যাওয়া কী সম্ভব? তুমি পিওর সায়েন্সের লোক, এ ব্যাপারে তোমার মতামতটা কী?” বঙ্কিম গোঁফের ফাঁকে মুচকি হেসে প্রম্ট উত্তর দিল – “চিন্তা করবেন না দিদি, অসীমে যেতে হবে না। ট্রামডিপোয় কিছু ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।” ব্যস, স্টাফরুমে হুল্লোড় পড়ে গেল। তার মানে ঐ গানটা ট্রাম লাইন নয় আসলে ট্রাম ডিপোর কথা বোঝাচ্ছে। বঙ্কিম না বলে দিলে এই সহজ কথাটা কারোরই হয়তো মাথায় আসত না। ব্যাচেলর কলিগদের ধরে ধরে জানতে চাওয়া হল, তারা ট্রামডিপো ভিজিট করতে আগ্রহী কিনা। সে কী হৈ হৈ। সেই বঙ্কিম তো আজ আর নেই। এমন হঠাৎ করে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারিনি। তাই ঐ দিনপালন বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু এখন নতুন প্রিন্সিপাল এসেছেন, তিনি চান নারীদিবস পালন হোক, তাতে ন্যাক ভিজিটের সময়ে সুবিধে হবে। ভাগ্যক্রমে এবার দিনটা রবিবার পড়ে গেছে, তাই শনিবার সাতই মার্চ এতবছর পরে কিছু হল। দিনের দিন হলে আমাদের পক্ষে যোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না। যা হোক, পরিবর্তনই জীবনের নিয়ম। পুরোনো ঘটনাকে সকলেই যে আঁকড়ে থাকবে, তার তো কোন মানে নেই। ঐদিন স্থানীয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা খাওয়ানোর ভার নিয়েছিল। ওরা ঘরোয়া রান্না করে, আর দামটাও কম নেয়। এখন আমাদের প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা চলছে তো। এক্সটার্নালের জন্য ওদের কাছ থেকেই খাবারটা নিচ্ছি। গতদিন ওদের যা আনাজ বেশি হয়েছিল, তাই দিয়ে পাঁচমিশালি চপ ভেজে এনেছিল। বলল, যে দুপুরের আগে অল্প খিদে লাগলে খাবেন। কিন্তু বাড়তি কোনো টাকা চায়নি। ভারি ভাল লেগেছে ওদের ব্যবহার। কুমড়োর চপ, টমেটোর চপ, লঙ্কার চপ নানারকম করেছিল। লঙ্কার চপটা মাত্র চারটে ছিল, ওগুলো নিয়েই কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। কোনটায় আলুর চপের ঝাল ঝাল পুর বানিয়ে তাতে টমেটোর একটা মোটা চাকা টুকরো দিয়ে বেসনে ডুবিয়ে ভাজা, কোনটাতে আবার টমেটোর বদলে কুমড়ো বা কপি রয়েছে। আর লঙ্কার চপ দুটোয় মোটা লঙ্কা মাঝখান থেকে চিরে, ভেতরটা কুরিয়ে ফাঁকা করে, তারমধ্যে পুরটা ঠেসে দিয়েছে। তারপর যেমন বেসনে ডুবিয়ে ভাজা হয় তেমন। ভিতরের বীজ বার করে দেবার জন্য ঝালটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু লঙ্কার গন্ধটা – উমমম।
বেশ জমাটি একটা আড্ডা হচ্ছিল। এমন সময়ে অফিস থেকে হেমন্ত এসে বলে – ‘দিদি কলেজ এখনই বন্ধ করতে হবে।’
- এ কী বলছ হেমন্ত? আজ হোম অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়া, স্টাডি মডিউলের বই দেওয়া অনেক কাজ আছে। নোটিশ দেওয়া আছে। ছেলেমেয়েরা আসবে।
- কিচ্ছু করার নেই দিদি, যা করার তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিন। এই দেখুন কী মেল ঢুকেছে এক্ষুনি। কলেজ বন্ধ হয়ে যাবে। ঐ যে কী অসুখ…
- করোনা?
- হ্যাঁ হ্যাঁ ঐটার জন্যে।
- তা খুলবে কবে?
- সেটা তো লেখা নেই দিদি। পরে হয়তো নোটিশ আসবে আবার। আপনারা ছেলেমেয়েদের বলুন তাড়াতাড়ি যেন বাড়ি চলে যায়। আমরাও এদিক থেকে বলছি।
- এই খবরটা কি অলরেডি টিভি, রেডিওতে বলে দিয়েছে? সেই জন্যে এতক্ষণ হয়ে গেল, অথচ ছেলেমেয়ে আসছে না।
- সেটা তো বলতে পারব না দিদি। অনলাইন নিউজ পোর্টালে তলায় স্ক্রোল করছে। এইমাত্র দেখলাম।
- নেটটা অন করতে হবে তবে।
ভারি মুশকিল হল তো। অনেক বছর আগে একবার যেদিন সংসদে জঙ্গি হামলা হল, সেদিন সবাই মিলে ঘরে ঘরে, ল্যাবরেটরিতে আঁতিপাঁতি খুঁজে সব ছাত্রছাত্রীকে বাইরে বার করে বাড়ি পাঠিয়েছিলাম। ছেলেমেয়েগুলো অনেকেই রেলপথে দূর থেকে আসে। কখন কী ঘটে যায় আশঙ্কা ছিল। এখন তো সেসব কিছু হয়নি রে বাবা। দাঙ্গা-হাঙ্গামা দূর, মারপিটও হয়নি কোথাও। চারদিক শান্ত। অসুখের জন্য কলেজ বন্ধ হয় – এ কেমন অসুখ! আশ্চর্য তো।
কলেজ ফাঁকা করা তো সোজা কাজ নয়। ছ’-ছ’খানা বিল্ডিং। ফাঁকা করতে ঘণ্টা দেড়েক গেল। সব গুছিয়ে বেরোচ্ছি, পথের মুখে অমিতের সঙ্গে দেখা। অমিত আর ওর স্ত্রী দু’জনেই আর্ট কলেজ থেকে পাশ করে সুন্দর একটা দোকান করেছে – ‘ক্যামেলিয়া’।
- এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছেন দিদি? শনিবার তো আপনার ফুল ডেই থাকে। হাফ ডে তো হয় না।
- আর বোল না, অফিসিয়াল মেল এসেছে কলেজ বন্ধ।
- সে কী? কেন? আপনার ছেলেমেয়েরা সব অর্ডার দিয়ে গেল – বলল ভূগোলে ঐ একুশ তারিখে কী একটা প্রোগ্রাম আছে। আবার পাশের দোকানে বলে রেখেছে কুড়ি টাকা করে লুচি আলুর দমের প্যাকেট হবে, আমাকে সব গল্প করে গেল।
- প্রোগ্রাম আছে তো, ভার্নাল ইকুইনক্স মানে মহাবিষুবের দিন। ঐ দিন সারা পৃথিবীতে দিনরাত সমান হয় তো, মনে রাখানোর জন্যে সেলিব্রেশন।
- তাহলে জিনিসগুলো কি বানাব না?
- বানাবে না কেন? আজ তো সবে চোদ্দ তারিখ। পার্ট থ্রি প্র্যাকটিকাল চলছে। অতদিন বন্ধ থাকে নাকি। কোনো কারণে নোটিশ এসেছে, একুশের মধ্যে নিশ্চয়ই খুলে যাবে। ফোনে কথা বলে নেব।
- দিদি মাহেশ্বরী আর ঘিচার একদম নিউ কালেকশন এসেছে। একবার দেখে যাবেন না? আজ তো মমতাদি আপনার তাড়াতাড়ি ছুটি করে দিয়েছেন। কিন্তু সাত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলে বাড়িতে আবার আপনাকে বকবে। শাড়িগুলো একবারটি দেখে যান।
- দেখবো দেখবো, কলেজ কি পালিয়ে যাচ্ছে নাকি। আজ যখন তাড়াতাড়ি হয়ে গেল, মেয়েকে নিয়ে পিভিআর-এ একটা সিনেমা দেখতে যাব। অনেক দিন থেকে বায়না করছে।
- ঠিক আছে। তবে তাই হোক। মেয়েকেও তো সময় দেওয়া দরকার। চলি দিদি।
অমিতকে হাত নেড়ে আন্দুল রাজবাড়ি, অন্নপূর্ণা মন্দির, পুকুর পাড় – সবের পাশ দিয়ে ধীরে সুস্থে হেঁটে বাস স্টপের দিকে এগিয়ে যাই। এমনভাবেই চলেছি আজ দু’দশক। বিকেলের রোদটা বড় মিঠে। একটা মৃদু বাতাস দিচ্ছে। পুকুরের কচুরিপানাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। ফুচকার দোকানগুলোর সামনে ইতিউতি ভিড়। ছেলেমেয়েগুলো দল বেঁধে বেরিয়েছে তো। মনে একটা হাল্কা চিন্তার কাঁটা খচখচ করছে। থার্ড ইয়ার প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা চলছে। সোমবারও পরীক্ষা আছে। হেমন্ত বলল, পরীক্ষাও নাকি বন্ধ। পরীক্ষাগুলো একটানে হয়ে শেষ হয়ে গেলে ভাল হত। গ্যাপ পড়ে গেলে আর প্র্যাকটিস করবে না। তখন রেজাল্ট খারাপ করে বসে থাকবে সব। অ্যানুয়াল সিস্টেম শেষ। এবার থেকে সব সি বি সি এস, সেমেস্টার সিস্টেম – কেউ আটকে গেলে সামনের বছর আর ওদের সিলেবাসের ক্লাস পাবে না। কী হবে কে জানে! আমি বরং হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে এক্সারসাইজ দিয়ে দেব। ওদের বলব টাইমের মধ্যে সল্ভ করে গুগল ক্লাস রুমে আপলোড করতে। তাহলে প্র্যাকটিসটা বজায় থাকবে। ফাইনাল ইয়ার। কী যে মুশকিল হল!
ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরলাম। সেই যে ফিরলাম, আর বেরোনো হল না। পরের সপ্তাহে পুরো দেশটাই বন্ধ হয়ে গেল। এতদিন লক আপ শুনেছিলাম, এবার জানালাম লক ডাউনও হয়। আচ্ছা মেঘদূতের যক্ষ লক আপে ছিল নাকি লকডাউনে?
কোনোদিন তো ভাবতে পারিনি এমন হবে। পাড়ার কিছু ছেলে পুরসভার অনুমতি নিয়ে, বাড়ি বাড়ি বাজার পৌঁছে দিতে লাগল। কিছু লোক তাও ঘোরাঘুরি করছিল বটে, পুলিশের টহল আর রুলের বাড়ি পড়ার পর তাও ফাঁকা। বাইরে বেরোতে পারছি না বটে, কিন্তু অবাক হয়ে যাচ্ছি, যে আমার বাড়িতে জানালা অনেক বেড়ে গেছে, এতগুলো জানালা আগে কখনও ছিল না।
শহরের ঘিঞ্জি গলিতে দোতলার ছোট ফ্ল্যাট। এক চিলতে বারান্দা, জানালার এক্সটেনশন। যে দিকে চাই, নজর আটকে বড় বড় বাড়ি। খুব কষ্ট করে ফালি আকাশ দেখা যায়। দুটো বাড়ির ফাঁক দিয়ে দেখি একটু রাস্তার আভাস। ঘরে রোদের মুখ দেখি না তাই দিনেও বিদ্যুতের আলোয় কাজ চালিয়ে নিতে হয়। তিনটে ঘর আর রান্নাঘর মিলে জানালা সাকুল্যে ছ’টি। এতদিন এসব নিয়ে মাথা ঘামাইনি, কারণ দরকার হয়নি। সকাল হলেই নাকে-মুখে গুঁজে কলেজে ছুটি। বাড়ি ফিরতে সেই সন্ধ্যে। ঘরে রোদ হাওয়া ঢুকেছিল কিনা খোঁজ নিইনি কোনোদিন। ছুটি থাকলে রবীন্দ্রভারতীর দূরশিক্ষার ক্লাসের জন্য সোজা সল্টলেক। নইলে কোনো মেলা, প্রদর্শনী, আমন্ত্রণ, অ্যাকাডেমির নাটক বা পিভিআর-এর সিনেমা। বাড়িতে থাকলে কম্পিউটারে লেকচার রেডি, খাতা দেখা আর রোজকার পড়াশোনা। ঘরের কাজ, রান্না – এগুলো বেঁচে থাকার উপায়, তাই উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। এসবের মধ্যে বাড়িটা ছিল, বারান্দা আর জানালাগুলোও ছিল। আলাদা করে চোখে পড়ত না। কারণ বাড়িটা ছিল কেবল ঘুমোনোর জায়গা।
এখন আমি রোজ জানালায় আর বারান্দায় যাই। কিছুক্ষণ বসি অথবা দাঁড়িয়ে থাকি স্থির হয়ে, বলা ভাল সুস্থির হয়ে। ছোটবেলার গরমের ছুটির কথা মনে আসে। সেই দিনগুলোর পরে আমার জীবন কখনো এমন সুস্থির ছিল না।
পিছনের বাড়িটার পাঁচিলের গায়ে, ছায়া পেয়ে অনেকগুলো ফার্ন গজিয়ে উঠেছে। ওদের গায়ে গায়ে ওটা তো পুঁইশাক মনে হয়। অনেক ছোটবেলায় বসিরহাটের দেশের বাড়িতে পাকা পুঁইমিটুলির চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খেতাম। এক অদ্ভুত মিষ্টি স্বাদ। ভাতটা লাল হয়ে যেত। পরে আর কখনো খাইনি। ওদের পেঁপে গাছটায় কত পেঁপে ধরেছে রে বাবা। সব কি ওরাই খাবে? তেমন আলাপ নেই। থাকলে দুটো চাইতাম। পাশে উঁচু ফ্ল্যাট বাড়িটার সারা গায়ে দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় গাছ গজিয়ে উঠেছে। বাড়িটা তো বেশি দিন হয়নি! সুন্দর রং, মলিনতার ছাপ পড়েনি। এরা কি কিছু দেখেও না। আচ্ছা আমাদের বিল্ডিংটায়ও এমন হয়েছে নাকি? আমার সামনেই ওদের দেওয়ালে পাইপের বাঁকে ঝাঁপড়া অশ্বত্থের চারা। ওখানে বসে খুঁটে খুঁটে কিছু খাচ্ছে একটা সাদা বক। মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে, আবার বসছে। আশ্চর্য! আমি বাড়ি বসে এ তল্লাটে বক কখনো দেখিনি।
দুটো বিড়ালছানা ডানদিকের বাড়ির পিছনে খেলা করছে। একটা লালে সাদায় মেশানো, অন্যটা ঝিম কালো। ওদের মা এবাড়ি ওবাড়ির পাঁচিলে পাঁচিলে, পাম্পঘরের নিচু ছাদে ঘোরে। বাড়ি বাড়ি অভিযানও চালায়। বারকতক আমাদের বাড়িও এসেছিল। পাখি আছে তো, সাবধান থাকতে হয়। সপ্তা দুয়েক আগে সারা রাত ম্যাও ম্যাও কান্না। জানালা দিয়ে ঝুঁকে দেখি, ছানা হয়েছে, তাদের নিয়ে বসে আছে। কিন্তু হলটা কী? আজ তো ঝড় জল কিছু নেই। সকালে জানালাম তিনটে ছানার একটা ছানা মরে গিয়েছে। আহা রে, ঐজন্যই কাঁদছিল।
লকডাউনের এই তিনমাসের মধ্যে অনেকেই চলে গেলেন, চুনী গোস্বামী, ইরফান খান, ঋষি কাপুর, আমার নিজের মেসোমশায়। ফোন আর টিভির জানালা দিয়ে দেখলাম, বেরোতে পারলাম না। শুধু ঘরের জানালার সামনে তাকিয়ে রইলাম বাইরে। একচিলতে আকাশে জ্বলজ্বলে অনেক তারা। রাস্তায় গাড়ি নেই, তাই ধোঁয়া ধুলোর পরত গেছে মুছে। এত পরিষ্কার আকাশে কি প্রিয় মানুষদের খুঁজে পাওয়া যাবে না?
বুদ্ধপূর্ণিমার রাতে, আমার শোবার ঘরের জানালা দিয়ে রোদ্দুর পড়ল ঘরে। এল কোথা থেকে? গ্রিলে নাক ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ে দেখি একচিলতে আকাশে হাজার ওয়াটের এলইডি বাতি হয়ে ঝলমল করছে পূর্ণিমার চাঁদ। হতবাক হয়ে যাই। জীবনে একবার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে এক লক্ষ্মী পুজোর রাতে পথ হেঁটেছিলাম এমনই জোছনা মাখা রোদ্দুরে। সে রোদ্দুর শহরের ঘিঞ্জি গলিতে আমার বাড়িতে!! বিশ্বাস হতে চায় না।
আজকাল অবিশ্বাস্য অনেক কিছুই ঘটছে। চড়ুই-এর ডাকে ভোর থেকে কান ঝালাপালা। বেরোনোর তাড়া নেই, একটু বেলা করে যে ঘুমিয়ে থাকব – তার যো-টি নেই। খেয়াল করে শুনি, দু’রকম আওয়াজ আসছে। একটা সাধারণ, আর একটা আরও মিহি একটানা চুঁ চুঁ। একটার পর অন্যটা। ঠিক যেন সংলাপ। জানালায় পর্দার আড়ালে আড়ালে তদন্ত চালাই। ব্যাপার বুঝে তো আমি থ’। মেয়ের আবদারে, কলেজের সামনে শচীনদার কাঠের দোকান থেকে বানিয়ে এনেছিলাম পাখির বাসা। ঘটা করে জানালায় বাঁধা হয়েছিল। এতদিন লাভ কিছু হয়নি। লকডাউনে সেটি বারান্দার মাথায় বাঁধা হল। কর্তা সময় কাটাতে টবে শসার চাষ করছিলেন। সবুজ নরম ডাল, আর বড় বড় পাতা আমাদের বারান্দার গ্রিল ছেয়ে ফেলেছে। কাঠের বাক্সেও এখন পাতার আড়াল। ভরসা পেয়ে এতদিনে চড়ুই দম্পতি সেখানে সংসার পেতেছে। সেই সংসারেই আজ নতুন অতিথি। কাঠের বাক্সটা এতদিন পড়ে আছে। সেখানে নতুন প্রাণ আসবে, আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বারান্দা থেকে শসা পেড়ে, রায়তা করে, স্যালাড করে, লম্বা কেটে নুন মরিচ মাখিয়ে কচমচিয়ে খাবো, এ-কথাই কি ভেবেছি কোনোদিন? চড়ুইছানাদের কলরব আর তদের বাবা মায়ের ব্যস্ততা, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ আসা যাওয়া দেখে কলেজের হৈচৈ এর কথা মনে পড়ে। ক্লাসের সময়ে, কাজের সময়ে হট্টগোলে কত বিরক্ত হয়েছি, আজ সেই হট্টমেলায় মন টানে। ছেলেমেয়েদের সাথে অনলাইনে দেখা হয়। পুরোনো ল্যাপটপটা জাদুবলে আজ জানালা হয়ে উঠেছে।
সপ্তা’ তিনেক গেল বড় হয়ে চড়ুই ছানাদের ওড়া শিখতে। ওরা যেদিন বাসা ফাঁকা করে উড়ে গেল, তার দু’দিন পরেই এল, ভয়ানক উম্পুন ঝড়। ফ্ল্যাটের সব দরজা জানালা বন্ধ করেও করা যাচ্ছে না। ঝড়ের ধাক্কায় খুলে যাচ্ছে। হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখা যাচ্ছে না। জলের ঝাপটার তোড়ে বাড়ি ভেসে যাচ্ছে। চার পাশের বাড়ির, দোকানের, গ্যারেজের অ্যাসবেস্টস বা টিনের চালা ঘুড়ির মতো উড়ে যাচ্ছে। জানালার কাচ চুরচুর হয়ে ভেঙে পড়ছে। গাছ উল্টে পড়ছে। আমার ঊনপঞ্চাশ বছরের জীবনে নানা জায়গায় অনেক রকম ঝড়, বন্যা দেখেছি। এমন ভয়াবহ দেখিনি। কোনোক্রমে দীঘায় শ্বশুর বাড়ি থেকে সব তছনছ আর ধ্বংসের খবর এসেছে। কর্তার চোখে জল। ঝড়ের দাপটে আদরের শসা গাছটা আর বেঁচে নেই।
আড়বালিয়ায় আমাদের পৈতৃক ভিটে। সেখানে ছিল বেশ কয়েকটা আমগাছ। অনেক পুরোনো। কোনোটা আমার জ্যাঠামশাইয়ের লাগানো, কোনোটা বা বাবার নিজের হাতে পোঁতা। রথের মেলায় চারা কিনেছিল। বাকিগুলো হয়তো ঠাকুরদার লাগানো, বা তাঁর বাবার। গাছগুলো ছিল। প্রতিটা গাছের এক একটা পারিবারিক নাম ছিল – লেবুর গন্ধওলা মেজজেঠুর ভাগের গাছটার নাম ছিল লেবুচারা। বড়জেঠুর ভাগের একটা গাছ ছিল ছোট ছোট গোল গোল হলুদ রঙের মিষ্টি আম – নাম ছিল গোল ল্যাংড়া। বাবার ভাগে একটা বিশাল গাছ ছিল হিমসাগরের। ঠাকুরদার আমলে কোনো ঝড়ে তার মগডাল একবার ভাঙা পড়েছিল। তাই ঐ গাছটার নাম ছিল ঘাড়ভাঙা। যে বছর গাছ আমে ভরে যেত, বস্তা করে আম আসত শহরের বাড়িতে। খাটের তলায় আশশ্যাওড়ার পাতা বিছিয়ে বাবা আম সাজিয়ে রাখত। রোজ সকালে বেছে বেছে বার করত, আজ কোনগুলো পেকে খাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। বড়জেঠু, মেজজেঠু, ঠাকুরদা, ঠাকুরদার বাবা – কেউ তো আজ নেই, তবু সবার ছোঁয়া বেঁচে ছিল গাছগুলোর গায়ে। উম্পুন ঝড় এল, এমন কত ঝড়ই তো হয়। তবু এ ঝড়টার মনে কী ছিল? – সব আমগাছগুলোকে সঙ্গে নিল। গাছের সঙ্গে চলে গেল বাপ পিতেমোর ছোঁয়া। আমরা ছিলাম আম্রধনী। কোনোদিন আম কিনতে হয়নি। বাবা কিনত বটে, তবে শখে। আমরা রাগ করতাম। আবার আম এনেছ? এক একটা গাছের আমের জেলি, আমসত্ত্ব, মোরব্বার আলাদা আলাদা স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ ছিল। স্বাদ নেবার আগে বোতল দেখেই চেনা যেত, স্বাদ তো চিরকালের চেনা। আজ তারা নেই। তবু মনে করলেই স্বাদ পাই। আহা, আমার মেয়ে তো দেখলে না সে সব দিন। বাঁশঝাড়ের পাশে ছিল মধুগুলগুলির গাছ। ও আম কাটতে লাগে না। হাতে ধরে দু’তিনবার ডলে নিয়ে তলার দিকে ফুটো করে চুষে খেতে হয়। কোথায় লাগে কোম্পানিদের ম্যাঙ্গো ড্রিংক! মনটা বড্ড খারাপ হয়ে আছে। কিচ্ছু ভাল লাগে না।
শ্বশুরবাড়ির কাছে হীরাকোনিয়ার বিশাল বটগাছটা পড়ে গেছে। ওর মোটা মোটা ঝুরির ফাঁক ফোকরে অনেক বাচ্চা খেলা করত। আমরাও পুজোর সময়ে ভিড় এড়াতে ঐ ঝুরির মধ্যে দিয়ে শর্টকাট করতাম। আরও বট উল্টেছে এ-পাশ ও-পাশ। শুনলাম পঞ্চায়েত থেকে কাঁচা ঘরের মানুষদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল – কে কার পাকা ঘরে যাবে। কিন্তু অনেকেই যেতে চাইছিল না। ইতিউতি বট ওল্টানো শুরু করাতে তখন বাড়ি ছেড়েছে। দেওরের ফোন সবসময়ে পাওয়া যাচ্ছিল না। বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। ফোনে চার্জ দিতে পারছে না। ওরা একসঙ্গে পুরো গ্রামে খিচুড়ির লঙ্গর খুলেছে। কর্তার এক বন্ধু হঠাৎ কীভাবে ফোন পেয়ে হাউহাউ করে কাঁদছে। তার ছোটবেলার বিরাট জামগাছটা আর নেই। আমার বাপের বাড়ি আড়বালিয়ার অবস্থাও তো ভাল নয়। ঘরের পাশে বটতলা। সে বট যে কতকালের কেউ জানত না। বাবা, জেঠুরাও বলতে পারেনি। বটতলার পুকুর পাড়ে যে রাস্তা, তা আসলে ঝুরির মাঝখান দিয়ে করা। তার আসল গুঁড়ি কবে নষ্ট হয়ে গেছে। পাতলা ঝুরিগুলো ধরে বাচ্চারা সাঁতার শেখে। ভাইপো ফোন করল, পুকুরের দিকের অংশটা উপড়ে গেছে। ছবি যা পাঠিয়েছে দেখে বুকটা ফেটে যায়। আড়বালিয়ার বোসেদের ছেলে অভিনেতা বিশ্বনাথও দেখলাম ফেসবুকে ঐ বটের ছবি শেয়ার করেছে। ও-গাছে হাজার হাজার বাদুড় থাকে। মেয়েকে ছোটবেলায় বাদুড় দেখিয়ে দেখিয়ে ভাত খাওয়াতাম। ওরা কি কেউ বেঁচে নেই? বাড়ি ভেঙে গেলে বাঁচবে কী করে? আমি শহরে বড় হয়েছি, সামনে কাঁদিনি। কর্তারা সব গ্রামে বড় হয়েছে তো। গাছের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক আরও গভীর, তাই নিজেদের সামলাতে পারছে না।
আজ এখন ঝড়ের জন্য টিভি, ফোন, ইন্টারনেট সব জানালা বন্ধ। তবু নিজেকে বলি সব তালারই চাবি থাকে, রাতের পরে দিন থাকে, তাই চাষা মরলেও আশা রাখে। সেই আশাতে ভর করে, মনের জানালা আমি হাট করে খুলে রেখেছি।
আমার জীবনে এখন শুধুই
জানালার ঝিলিমিলি।
রয়েছে এখন অনেক সময়,
আলাপের নিরিবিলি।
দিনটা ঝিমোয়, ছড়িয়েছে কত
মনখারাপের কল।
নির্ঘুম রাত অনিমেষ আঁখি
জ্বালা করে অবিরল।
মন্বন্তরে মরিনি আমরা
মারী নিয়ে বাঁচবই।
দু’বেলার মরা মরব না দেখো
মন্ত্র জানি মাভৈ।