ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি
আমরা সবাই বায়না বুড়ি।
সেটা এক শেষ বর্ষার দিন। সকাল থেকেই ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি হয়ে চলেছে। আর কর্তারা সঙ্গী-সাথী জুটিয়ে দীঘা মোহনায় চলে গেছে কাকভোরে। রাতে ফোন এসেছিল – ভাল ক্যাচ হয়েছে। মানে ভাল আকারের ইলিশ উঠেছে। কর্তারা সঙ্গে নিয়েছে বেশ কয়েকটা থার্মোকলের বড় বড় বাক্স, চওড়া সেলোটেপ, কাঁচি। কেউ শুনলে অবাক হবে। মাছ কিনতে এসবও লাগে। আসলে যতবার আমার গাড়ি করে কর্তা নোনামাছ আনে, ততবার পরের দশদিন গাড়িতে গন্ধে ভুত পালায়। ইলিশ আনলে তো কথাই নেই। কলেজে কেউ আমার গাড়িতে উঠলেই বলে, ‘শারদা, আমাদের না দিয়ে, একা ইলিশ খাওয়া কি ঠিক হচ্ছে?’, তারপর সবাই জেনে যায়। তাই কর্তা এখন মাছ কিনে, জলরোধক মোড়কের জন্য থার্মোকলের বাক্স বন্ধ করে চওড়া সেলোটেপ দিয়ে মোড়ম্বা করে বেঁধে নেয়, যাতে ভেতরের বরফ-গলা আঁশটে জল গাড়িতে না পড়ে।
সেদিন সকালের জলখাবারে হয়েছে পরোটা আর আলুভাজা। কিন্তু দেখলাম কড়ায় চারখানা ম্যাগির কিউব ফুটছে। কী ব্যাপার? খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, রাঁধুনিদের ছানাপোনারা পরোটা খাবে না, ভাল লাগে না, তারা ম্যাগি পেলে খুশি। কিন্তু আমার কন্যারা কোথায়, খেতে আসছে না কেন? দেখি উঠোনের একপাশে তারা দু’জন দুটো বড় প্যাকেট পটেটো চিপস নিয়ে বসে গেছে আর চটচটে নুনগুলো আঙুল চেটে খাচ্ছে, আর দু’জনেই নিজের মোবাইলে বুঁদ হয়ে আছে। হাজার বললেও এরা শোনে না। ভাবি বায়না আমাদেরও ছিল, কিন্তু একটু অন্যরকম। কোনোরকমে চিপসের প্যাকেট কেড়ে নিয়ে তাদের খেতে বসানো তো গেল, কিন্তু তারা নানা রকম অনুযোগ করতে লাগল –
- তোমাদের কি বায়না ছিল না নাকি, তোমরা দোকানের জিনিস খেতে না নাকি?
আমি বলি,
- ওরে, বায়না আমাদের ছিল। কিন্তু বাড়ির খাবার নষ্ট করে বাইরের খাবার খাওয়ার মত বিলাসিতা করা আমাদের কালে সম্ভব ছিল না। তোদেরও অমন করা উচিত নয়। এই তো ক’দিনের ছুটিতে আমরা সকলে একসঙ্গে হয়েছি। খাওয়ার টেবিলে একটু গল্পসল্প হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কথাবার্তা না বলে, আলাদা হয়ে, তোরা যদি মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকিস, আমাদের তো ভাল লাগে না।
- তোমরা কথা বলতে, আমরা চ্যাট করি। সেটাও তো কথা।
- তাই বলে সামনের লোকের সঙ্গে কোনো কথা বলবি না? আলোচনা করবি না? কিছু জিজ্ঞেস করবি না?
- কিছু জানতে হলে গুগলকে জিজ্ঞেস করি তো।
- গুগল? সে কি কাছের মানুষদের মনের কথা জানে?
- মনের কথা? (মেয়ে হেসে ওঠে), তুমি ছোটবেলায় ভীষণ বায়নাওলা, তর্ক-করা আর ছিনেজোঁক বাচ্চা ছিলে মা। আমাদের ওপর যেমন জোর খাটাচ্ছ তাতেই বুঝতে পারছি। বেশি জোর করলে বাংলার দিদিকে মেল করে দেব।
এই বলে মেয়ে পরোটা ছিঁড়ে মুখে পোরে। খুব হাসি পেয়ে যায় আমার, বাংলার দিদি? আমাদের কালে আমরা ইন্দিরা গান্ধীর রেফারেন্স দিতাম। একথা সত্যি, আমার বায়না ছিল, খুব ছিল – এটা কেন, ওটা কেন – প্রশ্ন ছিল। মনটা ভেসে যায় উল্টো মুখে, আর কু-ঝিক-ঝিক করে একটা রেলগাড়ি আমায় নিয়ে চলে ছোটবেলার দিকে। খাবার টেবিলে বসে আছি, তবু যেন আমি নেই। কানের পাশ দিয়ে ছুটে যায়, ঘুরপাক খায় কিছু সুর। “খ্যাপ, খ্যাপ, খ্যাপ ক্ষ্যাপন বুড়ি...”; “ছনছা মনছা কই লো...”। আর সেই রেলগাড়ি আমায় দাঁড় করিয়ে দেয় বিস্মৃতি মেঘের ছায়াঘেরা এক প্ল্যাটফর্মে। দেখি,
মিষ্টি পিসিমণির দোতলার বারান্দায় – আপাদমস্তক উলের পোষাকে ঢেকে আমি একটা নীল প্লাস্টিক ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে দাঁড়াচ্ছি আর মা একটা লাল টুকটুকে বল ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমি একবারও ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে পারছি না কিন্তু বারান্দার ব্যাটিং পিচে খুব দৌড়োদৌড়ি করছি, এদিক থেকে ওদিক আবার ওদিক থেকে এদিক। বলটা রেলিং পেরিয়ে টুক করে পড়ে গেল নিচের উঠোনে আর অমনি মেঝেতে পড়ে হাত মুঠো করে কাঁপছি, চ্যাঁচানির চোটে গগন ফাটে। ঠিক তখনই ভেসে আসে এক অবয়ব, হাতে কাঁসার বাটি নিয়ে লাল-পাড়-শাড়ি পরা কেউ দাঁড়িয়ে আছে, পান খেয়ে রাঙা ঠোঁটে বলছে
- খ্যাপ খ্যাপ খ্যাপ ক্ষ্যাপন বুড়ি, ক্ষেপিমণি কী নেবে?
আমি বলছি,
- নালতা
- লাল বলটা? পরে তুলে দেব। ক্ষেপিমণি এখন পায়েস খাবে।
ওটা মিষ্টি পিসিমণি। বোন যখন জন্মায়নি, তখন পাইকপাড়ায় মিষ্টি পিসিমণিদের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম আমরা। আমায় চামচে করে পায়েস খাইয়ে দিচ্ছে মিষ্টি পিসিমণি, মিষ্টি মিষ্টি স্বাদ আর খুব সুন্দর একটা গন্ধ।
আবার কখনও মনে পড়ে – সরস্বতী পুজো হচ্ছে, সদর দরজার কাছে বাঁদিকে প্রথম ঘরে ঠাকুর। ঘর জুড়ে অনেক কিছু সাজানো। দূরে ঠাকুরের পাশে কয়েকটা বই রাখা, ওপরেরটা আমার। নীল মলাটের ওপর লাল আর সাদা দিয়ে লেখা। আমার বইটা নিয়ে নিয়েছে সবাই। এত জিনিস টপকে আমি যেতেও পারছি না যে তুলে আনব। মা সমানে বোঝাচ্ছে, যে, ঠাকুরের কাছ থেকে বই তুলে নিতে নেই। কিন্তু আমার ভবি ভোলার নয়। বারবার দরজা দিয়ে বইটা দেখছি, সদর দরজা অবধি দৌড়োচ্ছি আর প্রচণ্ড চেঁচিয়ে কাঁদছি। আচ্ছা, কী বই ছিল ওটা? দেওয়ালে ক্যালেন্ডার, মা কোলে করে ক্যালেন্ডারের সামনে আমায় নিয়ে গিয়ে বলছে, ‘এটা কে? আমি বলছি বিবেকান্দ-নন্দ।’ মা হাসছে, আমি হাততালি দিচ্ছি।
আসলে আমার বোন সর্বানী আমার থেকে খুব কিছু ছোট নয়। তবে বোনের জন্মের আগের বেশ কিছু স্মৃতি এখনো আমি স্পষ্ট মনে করতে পারি। পাইকপাড়ায় যে বাড়িতে শিশুকালে আমরা ভাড়া থাকতাম, সেই পরিবারের সঙ্গে এতটাই ভাল সম্পর্ক ছিল, যে বড়বেলাতেও সে বাড়ি যেতাম। গৃহকর্ত্রীকে মিষ্টি পিসিমণি বলে ডাকতাম। একজন দিদিভাই ছিল ব্রততী, ডাকনাম বনি, পিসিমণির মেয়ে। মাঝখানে একটি খোলা উঠোন, চারপাশে রেলিং দেওয়া বারান্দা মোজেইক করা। একতলায় আমরা থাকতাম, আর দোতলায় পিসিমণিরা। মিষ্টি পিসিমণি খুব ভাল রান্না করত। মা গল্প করেছে পরে। আমার আবছা মনে পড়ে, মা আমাকে আপেল সেদ্ধ করে দিত। যদিও আপেল সেদ্ধ করে খাওয়ার কোনো মানে নেই, তবু তখন বাচ্চাদের এরকম খাওয়ানোর চল ছিল।
ছোট থেকেই আমি খিদে একদম সহ্য করতে পারি না। সেই স্বভাব এখনও আছে। যেই খিদের চোটে আমার কান্না শুরু হত, অমনি দোতলা থেকে বনি দিদিভাইয়ের ঠাকুমার গলা শুনতাম, সুর করে বলছেন -
“ছনছা মনছা কই লো -
লোহার কড়াই কে খেল?
হীরামন রাক্ষুসী ঐ এল।”
ঐ ডাক শুনে যেই একটু চুপ করতাম, ঐ অবসরে মা খাবারের বাটি রেডি করে ফেলত।
নিজের দাদু, দিদা, ঠাকুমা, ঠাকুরদা সবাই চলে গেছেন আমার জন্মের আগে। তাই এই ঠাকুমার স্মৃতি মনের মাটিতে ঝুরি নামিয়ে বসে আছে।
আমাদের তখন হিটার ছিল, মা হিটারে দুধ গরম করত। দুধে ছাতু আর কলা মিশিয়ে খাইয়ে দিত। আমি একটু মোটাসোটা ছিলাম। পাড়ায় সকলে বলত গ্ল্যাক্সো বেবি, যদিও গ্ল্যাক্সো আমি কোনোদিনও খাইনি। বাবাকে অফিস যেতে দিতে চাইতাম না। খুব কাঁদতাম। বাবা রোজ অফিস যাওয়ার সময়ে আমাকে দুটো করে মাছ লজেন্স কিনে দিয়ে যেত। তখন সিগারেট লজেন্সও পাওয়া যেত। সেই যে লজেন্স খাওয়া অভ্যেস হয়ে গেল, বড় বয়সেও আর ছাড়তে পারলাম না। খুব কম লোক – যারা আমায় ঘনিষ্ঠভাবে চেনে – কেবল তারাই আমার এই লজেন্স-প্রীতির কথা জানে। শ্বশুর বাড়িতে এসে আমার প্রথম প্রথম খুব হাসি পেয়ে যেত। এখানে লজেন্স শব্দের ব্যবহার নেই। লজেন্স কে সবাই বলে চক্লেট, আর চকোলেটকে বলে ক্যাডবেরি, তা সে যে কোম্পানিরই হোক।
যা হোক, লজেন্স খেয়ে খেয়ে দাঁতে এমন ব্যথা হল যে দুধে দাঁত তুলতে হল। দাঁতের ব্যথায় সারা দেওয়ালে পেনসিল দিয়ে লিখে রাখতাম, দাঁত কনকন করছে। দাঁত তুলেও খুব কেঁদেছি। বাবা আমাকে ভোলাতে সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল, পথের পাঁচালি। তারপরে সারাজীবনে অসংখ্যবার সিনেমাটা দেখলাম। তবু বাবার সঙ্গে সেই প্রথম দেখার স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে। বাবা ফেরার পথে শ্যামবাজারে দ্বারিকের দোকান থেকে পান্তুয়া কিনে দিয়েছিল। এই পান্তুয়ার প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে গেল। যে কোনো মিষ্টি কেনার বিষয়ে বাবার দ্বারিকের ওপরে দুর্বলতা ছিল। মায়ের এক বান্ধবী, লীনা মাসি, আবার সব সময়ে সেন মহাশয়ের সন্দেশ কিনত। আর মা পান্তুয়া ভালবাসত, কিন্তু মায়ের ধারণা ছিল, পান্তুয়াটা হাতিবাগানের নদীয়া সুইটস সবচেয়ে ভাল করে, এমনকি এমনও হতে পারে যে হয়তো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভাল করে। মায়ের কথা শুনে সবাই হাসত। জিজ্ঞেস করত, নদীয়া সুইটসে কী আছে? মায়ের একটা অদ্ভুত যুক্তি ছিল, টুম্পার (মানে আমার) অন্নপ্রাশনে নদীয়া সুইটসের পান্তুয়া খেয়ে সবাই খুব ভাল বলেছে। ওরাই সবচেয়ে ভাল। এর ওপরে আর কথা চলে না। “এই দুনিয়ার সকল ভাল, আসল ভাল নকল ভাল... কিন্তু সবার চাইতে ভাল পাঁউরুটি আর ঝোলা গুড়।” ভাল-মন্দ যার যার নিজের ওপর।
মনে পড়ে, রাস্তার উল্টোদিকে, অল্প দূরে, আমার নিজের পিসির বাড়ি যেতাম। পিসির বাড়ির লম্বা জানালা, উঁচু খাট। মাদুর পেতে খাটের তলায় লাল সিমেন্টের মেঝেতে শুতাম। লম্বা জানালার নিচের অংশ দিয়ে বিকেলের রোদ ঢুকে খাটের তলায় আঁকিবুকি কাটত। আমি দেখতাম। এখন বুঝি, আমরা ছিলাম একেবারেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। তবে সামান্য উপকরণে কত আনন্দ ছিল। অভাব কোনোদিন কিছু বুঝতে পারিনি। আড়বেলে থেকে গাছের আম কাঁঠাল আসত। পিসি কাঁঠাল-বিচি-সেদ্ধ দিয়ে গরমভাত মেখে খাইয়ে দিত। রাতে তরকারি না থাকলে দুধ-আম দিয়ে ভাত খাইয়ে দিত বাবা। যে আলু দিয়ে দুপুরের তরকারি হত, সেই আলুর খোসা ভাজা দিয়ে রুটি খেতাম সকালের জলখাবারে। যেদিন লাউ দিয়ে মুগ ডাল হত, সেদিন লাউয়ের খোসাভাজা দিয়ে সকালে রুটি খেতাম আমরা।
পিসির বাড়ি ছোট হলেও ছিল তকতকে। খাটের তলাতেও কোনো ঝুল বা ধুলোর প্রবেশাধিকার ছিল না। আর মা বলত, আমার পিসি ঘরে ম্যানেজার রাখলেও রান্নাঘরে স্টিলের, এ্যালুমিনিয়ামের আর হিন্ডালিয়ামের বাসনগুলো রুপো আর পিতল কাঁসার বাসনগুলো সোনা করে রাখত ঘষে ঘষে। বাসনে কোনোদিন কোনো দাগ ধরতে দেয়নি। বয়সকালে এই পরিষ্কার করাই বাতিক হয়ে কিছুটা শুচিবাইগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল।
ঐ কচি বয়সের স্মৃতি আমার আড়বেলেতেও আছে। বিকেলের হলুদ আলো, উঁচু অবধি বাঁশের ভারা, মানে আসলে ভারা নয়, ওটা চড়ক গাছ। অনেক বাচ্চা সেই উঁচুতে বাঁশে দাঁড়িয়ে। নিচে অনেকে মিলে একটা বড় জাল টেনে ধরে রেখেছে। ঐ জালে একটা করে বাচ্চা লাফ দিচ্ছে। বাবার কোল থেকে আমি অবাক হয়ে দেখছি। তারপরে রোদের মধ্যেই গায়ে জল পড়ল। বৃষ্টি নামল। বাবা একটু ঝুঁকে আমাকে দুটো হাত দিয়ে আড়াল করল। বাবা দৌড়োচ্ছিল। আমি বাবার ওমে ছিলাম, তখন আমার গায়ে জল পড়ছিল না। তারপরে কি ঘুমিয়ে গেলাম? স্মৃতিটা আর নেই। পরে বড় হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-মা, এমন কিছু কি ঘটেছিল, নাকি স্বপ্ন?
মা অবাক হয়ে বলেছিল,
- আড়বেলের চড়কের মেলা, বাঁশে বাঁধা চড়কগাছ। বৃষ্টি এল, তোর বোন তখন পেটে। হিসেবমত তোর তখন একবছর চার মাস। এসব কথা বলছিস কী করে রে?
- মনে যে ছবি ভেসে আসে, মা।
- এ কী অদ্ভুত রে?
- আচ্ছা মা, বিয়েবাড়ি, উঠোনে ইংরেজি এইচের মত কমলা রঙের কাঠের চেয়ার, সামনে সাইকেল ভ্যান, তাতে অনেক কলাপাতা, কাপড় দিয়ে ঢাকা, এমন কিছু হয়েছিল?
- হ্যাঁ, সে তো বকুলদার মেয়ে বাবলির বিয়ে, দমদমে।
- মা শোনো না, একটা সিনেমা হচ্ছে, একজন লোক, দরজার পর দরজা পেরিয়ে যাচ্ছে, ওটাও তাহলে সত্যি!
- ওটা তো প্রমথেশ বড়ুয়ার মুক্তি।
- প্রমথেশ বড়ুয়া! উত্তম কুমারের আইডল – পি সি বি?
- হ্যাঁ, সেই পি সি বি। বাবা! ধন্যি তোর মনের ছবি!
- আচ্ছা মা, একজন সাদা শাড়ি পরা, সেজজেঠুর সোফায় বসে। সোফায় সবুজ ছোট ছোট ফুলওলা ঢাকা। খুব বুড়ি মানুষ, খুব রোগা। আমাকে আদর করছে। একটু আচার দিচ্ছে মুখে, টক টক, মিষ্টি মিষ্টি। আমি আবার খাব বলে কাঁদছি, তার দিকে ঝুঁকে ঝুঁকে যাচ্ছি। তুমি বকছ, সে কে গো মা?
- বলছিস কী রে? সে তো আদুরী দিদিমা। তাকে মনে আছে তোর? ভীষণ জেদ আর বায়না তোর। জেদ ধরলে ছাড়ান পাওয়া মুশকিল হয়ে যেত। তুই দিদিমাকে দেখলেই কোলে যাওয়ার জন্য ঝুঁকে যেতিস, বুড়ি গ্ল্যাক্সো বেবিকে কোলে নিতে পারত না। মুখে আচার দিত।
- আদুরী কে গো মা?
- আমার শাশুড়ির, মানে তোর ঠাকুমার এক পিসি। তোর বাবাকে ছোটবেলায় মানুষ করেছে। বালবিধবা, বড় দুঃখী মানুষ। চিরকাল পরের হেঁশেল ঠেলে ঠেলে, আর পরের সেবা করতে করতে জীবন গেল। সমাজ এদের শুধু শোষণ করে। বড় হয়ে এমন দুঃখী মানুষদের জন্য তুই কিছু করিস।
- কী করব মা?
- তা তো জানি না। তোর বুদ্ধি আছে, জেদ আছে। তুই বরং মেয়েদের পড়াবি। পড়াশোনা করতে পারলে, মেয়েরা অনেক বিপদ, হেনস্থা থেকে মুক্তি পাবে।
আদুরী দিদিমার গল্প শুনেছি মেজজ্যাঠাইমার মুখে। এখন আবার বর্তমান গল্পে ফিরি।