৭
জন্মেছি মাথায় নিয়ে,
খেলোয়াড়ি পরোয়ানা।
বুকের এই কলজে বলে,
লড়াই করো হার না মানা।
আমাদের তূণের ভেতর,
সবুজ মেরুন এক ঝাঁক বাণ।
আমরাই মোহনবাগান।
- মা, সেনবাড়ি ভাল, কুমুদিনীকে বাঁচাল। যে দেশসেবা করছে, তার পাশে তো দাঁড়ানো উচিত। সেই সময়ে ঐ সাপোর্ট না দিলে কৃষ্ণা, তুমি, আমি – কেউই এই পৃথিবীতে আসতে পারতাম না।
- সে তো বটেই। সেনবাড়ি শুধু কুমুদিনীকে নয়, মোহনবাগানকেও বাঁচাল তো। কুমুদিনীকে জানতে গিয়ে, মোহনবাগানকে তোরা ভুলে যাচ্ছিস।
- ওহ্! তাই তো, মোহনবাগানটা বল।
- প্রিয়নাথ মিত্র, মানে ছোটপিসিদিদার শ্বশুরমশাই রাজা রাজবল্লভ স্ট্রিটে তৈরি করেছিলেন অ্যাশক্রফ্ট হল। সেখানে ১৯২০ সালে ইংলিশ ফার্স্ট বুক প্রণেতা প্যারীচরণ সরকারের ছোট ছেলে শিক্ষাবিদ বাবু শৈলেন্দ্র সরকার একটি স্কুল তৈরি করেন। নাম সরস্বতী ইনস্টিটিউশন। পরে অবশ্য ঐ ইস্কুল নতুন ঠিকানায় উঠে যায়, এখন যার নাম শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয়। প্রাক্তন রাজ্যপাল ও প্রধান বিচারপতি শ্যামল সেন এই ইস্কুলে পড়েছেন। এখন তিনি ওখানকার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
- দাঁড়াও দাঁড়াও, সরস্বতী ইসকুল? আমার একটা বন্ধু আছে মা নীলাঞ্জনা, তার দিদা ছোটবেলায় সরস্বতী ইস্কুলে পড়তেন বলে ও বলেছিল।
- আমারও একজন ইস্কুলের বন্ধু আছে সেঁজুতি। সেও কলেজে পড়ায়। তার মাও ছোটবেলায় সরস্বতী ইস্কুলে পড়তেন। কাছাকাছি এলাকায় প্যারীচরণের নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি বালিকা বিদ্যালয়ও আছে – প্যারীচরণ গার্লস হাইস্কুল। শরৎ কুমুদিনীর মধ্যম পুত্রবধূ, মানে আমার মেজদিদা – প্যারীচরণের বাড়ির মেয়ে। এই প্যারীচরণ সরকারের নাতি স্যার নৃপেন্দ্রনাথ সরকার মোহনবাগানের প্রথম দিকের কমিটির সদস্য ছিলেন। আবার প্রথম কমিটির আর এক সদস্য হলেন রায়বাহাদুর চুনীলাল বসু। তিনি ছিলেন সে যুগের থেকে একজন এগিয়ে থাকা মানুষ। স্বাস্থ্যব্যবস্থা, খাদ্যে ভেজাল, সুষম আহার এইসব বিষয়ে গবেষণা করে জনসচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করছিলেন। কলকাতার শেরিফও হয়েছিলেন। এই চুনীলাল বসুকে নিয়ে সেন বাড়ির একটা দারুণ গল্প আছে, শুনলে বুঝবি সেন বাড়ি কেমন।
-বল।
- হাইকোর্টের জজ স্যার চারুচন্দ্র ঘোষের বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছিল রসায়নবিদ, লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো, ডাক্তার চুনীলাল বসুর বড় ছেলে ব্যারিস্টার অনিল প্রকাশ বসুর সঙ্গে। এই চুনীলাল আবার বাগবাজারের বসু বাটীর ছেলে, মানে সেন বাড়ির আত্মীয়। ইনি খাদ্য, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিষয়ে মোট বারোখানা বই লিখেছেন।
- বাপরে, বিরাট লোক।
-হুম, আবার চারুচন্দ্রের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ ছিলেন সেকালের একজন নামকরা সমাজ সংস্কারক। তিনি বাল্যবিবাহ রোধ এবং বিধবা বিবাহ আন্দোলনের একজন পুরোধা। এই দেবেন ঘোষ নিজের বালবিধবা মেয়ের আবার বিয়ে দিয়েছিলেন।
- খুব পুণ্যের কাজ করেছিলেন মা।
- কিন্তু তখনকার কুচুটে সমাজপতিরা ওঁদের একঘরে করেছিল।
- সে তো করবেই, ওটাই ওদের কাজ। তা তারা জব্দ হল?
- হল তো, সেন বাড়ি জব্দ করল।
- কীরকম, কীরকম?
- ঘটনাটা ঘটল ভবনাথ সেনের স্ত্রী জয়কালী সেনের মৃত্যুর পরে। জয়কালী সেন ছিলেন বেথুন ইস্কুলের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তাঁর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে সমাজের তাবড় তাবড় লোক নিমন্ত্রিত ছিলেন। এবারে ঐ সমাজপতির দল ভবনাথ সেনকে এসে ধরল, যে চারুচন্দ্র আর চুনীলালকে নেমন্তন্ন তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে, নইলে কেউ খেতে আসবে না।
- কেন?
- গা জোয়ারি। চারু ঘোষের বোনের বিধবা বিবাহ হয়েছে, তাই ঐ পরিবার সমাজচ্যুত। আর চুনীলাল বোস সব জেনেশুনে সেই চারু ঘোষের মেয়েকেই পুত্রবধূ করেছেন। তাই তিনিও সমাজচ্যুত।
- বা বা! চমৎকার। ভারি তো আবদার। যারা বলতে এসেছিল, তারা ঐ দু’জনের নখের যুগ্যি ছিল?
- তা তো জানি না। ভবনাথ সেন তখন দুঁদে আইনজীবী ভূপেন বোসের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। কারণ ভূপেন বোস হলেন ওঁর বেয়াই, ভাইপো মণিলাল সেনের শ্বশুরমশাই। দু’জনে যুক্তি করে সমাজপতিদের বলা হল যে, ছেলেরা শ্রাদ্ধ করছে। যা করার তারা করবে। এবারে সেই কুচুটেরা গেল ছেলেদের কাছে। বড় ছেলে প্রিয়নাথ সেন তো প্রস্তাবটা একেবারে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিলেন। তখন সমাজপতিরা লিফলেট ছাপিয়ে নানা কুৎসা করতে শুরু করল। আর প্রিয়নাথ সেন সেদিনের অনুষ্ঠানে সেই চারু ঘোষ আর চুনী বোসকেই অতিথি আপ্যায়নের ভার দিলেন। সব কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন হল।
- দারুণ দারুণ (দুই মেয়ে হাততালি দেয়)। বাজে সমাজপতিদের থোঁতা মুখ ভোঁতা করে দিয়েছে সেন বাড়ি। এত লোকের নাম, তাদের ঠিকুজি-কুষ্ঠি কী করে মনে রাখো গো মা?
- হুম, ছোটবেলায় কানের কাছে, মা, মামারা বলত। তখন সব কান করে শুনতাম না। এখন বই পড়ে সব ঝালিয়ে নিয়েছি।
- কী বই?
- অনেকরকম বই। ধর জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমারের বংশ পরিচয় বইয়ের দ্বাদশ খণ্ডে এই চারু ঘোষেদের আর চুনী বোসের সব সম্পর্ক, ফ্যামিলি ট্রি লেখা আছে। আবার এই শ্রাদ্ধের ঘটনাটার অনুপুঙ্খ বর্ণনা রয়েছে স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ সম্পাদিত ধন্য বাগবাজার বইতে।
- আচ্ছা মা, মধ্যম পুত্রবধূ মানে কী?
- মেজ বৌ, কুমুদিনীর মেজ ছেলের বৌ, আমার মেজদিদা।
- সতীশ বড়, তারপর সুরেন, ক্ষিতীশ, বিকাশ।
- সতীশ চন্দ্রের পর আর একজন মেজছেলে ছিল জ্যোতিষচন্দ্র।
- যে মায়ের ছবি এঁকেছিল? তার কি হল, কিছু আগে বললে না তো।
- বলিনি কারণ আছে। সে বাড়ি ছেড়ে, দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
- কোথায়?
- বর্মামুলুকে, মানে আজকের মায়ানমারে।
- কেন মা?
- মেজছেলে জ্যোতিষচন্দ্রের বিয়ে হয়েছিল ইংলিশ ফার্স্ট বুক প্রণেতা প্যারীমোহন সরকারের ভাইঝির সঙ্গে বা ভাইয়ের নাতনির সঙ্গে, সম্পর্কটা নিশ্চিত বলতে পারছি না। জ্যোতিষচন্দ্র ছিলেন চিত্রশিল্পী। তাঁর শিল্পকলা, চিত্রাঙ্কনের কিছু নমুনা আজও পরিবারে রাখা আছে। বাবলিদির কাছে শুনলাম এসপ্লানেড এলাকায় ওঁর একটি বড় স্টুডিয়ো ছিল। মেজদাদু তাঁর বাবা শরৎচন্দ্রের মত ইংরেজি ও ফার্সি ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। এই স্টুডিয়োতে ইউরোপিয়ানরা তো বটেই, অনেক অভিজাত নামকরা লোকও পোট্রেট আঁকাতে আসতেন। স্টুডিওটার নাম বাবলিদির মনে নেই। তবে ও শুনেছে ওটা তখনকার খুব নামকরা জনপ্রিয় স্টুডিয়ো ছিল। আমার এই দিদিমার বিয়ের সময় বয়স ছিল নয় বছর। ইনি খুব সুন্দরী ছিলেন। কিন্তু একটু বড় হতে বোঝা যায়, যে তাঁর মানসিক ভারসাম্যের একটু অভাব আছে। তিনি শাড়িও নিজে পরতে পারতেন না বা চাইতেন না। এই বিষয়টি জ্যোতিষচন্দ্র মেনে নিতে পারেননি। সম্ভবত পারিবারিক ব্যবসায়ও তাঁর মতি ছিল না। এই দুই কারণে বড় ভায়ের মৃত্যুর পরে ভাগ্যান্বেষণে তিনি বর্মামুলুকে চলে যান। সুদূর বর্মাদেশে তিনি আবার এক বর্মী মেয়ে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি কন্যা ছিল, নাম মরিয়ম। জ্যোতিষচন্দ্র মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন। তবে এই দ্বিতীয় স্ত্রী বা কন্যাকে তিনি দেশে কখনও আনেননি। তাঁর বাড়ি আসার স্মৃতি আমি বড়মামার মুখে শুনেছি। ওপরে ইউরোপীয়দের মত কোট, টাই আর পরনে বর্মীদের মত সিল্কের লুঙ্গি পরে তিনি ফিটন গাড়ি করে গড়ের মাঠে বেড়াতে যেতেন। সঙ্গে বড়মামাও যেত। ঐ পোষাক দেখে অবাক হয়ে অন্যান্য লোকের কেমন প্রতিক্রিয়া হত তা বড়মামা ছোট হলেও মনে করে রেখে দিয়েছিল, আর আমাদের অভিনয় করে দেখাত। আমরা হেসে গড়াগড়ি খেতাম।
আর একটা কথা বড়মামা বলেছিল, যে মেজদাদু দেশে ফিরে চিংড়ি মাছ দিয়ে ঝাল ঝাল কেমন একটা ভাত রান্না করতেন। এটা নাকি একটা বর্মী রান্না। আর সবাইকে ধরে ধরে খাওয়াতেন। বাচ্চা-বুড়ো কারোর পালাবার জো নেই। মেজদাদু যেহেতু রান্না করেছেন, ঐ ঝাল ভাত নাকি সবাইকে খেতেই হবে। ঐ ভাতের সঙ্গে মেজদাদু নাকি পাঁপড় খেতেন।
- ঝাল ভাতটা আবার কী ধরনের খাবার?
- বড়মামা ছোট ছিল তো, তাই রেসিপি কিছু বলতে পারেনি। শুধু বলেছিল, খুব ঝাল আর নারকেল দেওয়া। হয়তো এমন কিছু ঝাল নয়, ছোটবেলায় খুব ঝাল লেগেছিল। পরে বড় হয়ে, আমি ইন্টারনেটে খুঁজে দেখেছি, সত্যিই ঝাল স্বাদের ভাত ওদেশে রান্না করে।
- কী রকম?
- প্রথমে বাসমতি চাল খুব ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর জল ঝরিয়ে, থালায় ছড়িয়ে জল শুকিয়ে নিতে হবে। এবার একটা হাঁড়িতে বেশ খানিকটা নারকেল-এর দুধ নুন দিয়ে গরম করে নিতে হবে। গরম হলে শুকনো চাল ওর মধ্যে দিয়ে ফোটাতে হবে। রান্না হবে ঢিমে আঁচে, যাতে নারকেলের স্বাদ চালে ভালভাবে ঢুকে যায়। একটু পরে কড়াইশুঁটি আর কাজুবাদাম মেশাতে হবে। আগেই কড়ায় তেল দিয়ে চিংড়ি মাছ নুন, হলুদ ও লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে মেখে ভেজে রাখতে হবে। ভাত প্রায় হয়ে এলে হাঁড়ির ঢাকনা খুলে বেশ কয়েকটা কাঁচালঙ্কা কুচো করে মিশিয়ে দিতে হবে। ফ্যান গালা হবে না। পোলাওয়ের মত জল ভাতের মধ্যেই শুকিয়ে যাবে। নারকেল ভাত হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে উপরে চিংড়ি মাছ ভাজা ছড়িয়ে ঢাকনা দিয়ে রাখতে হবে। ভাত একটু নেড়েচেড়ে দিতে হবে। ভাতের ভাপেই চিংড়ি নরম হয়ে যাবে, আর নির্যাসটাও মিশে যাবে। এই ভাতটা ঠান্ডা খাওয়ার চেয়ে গরম গরম খেলেই নাকি সঠিক স্বাদ পাওয়া যাবে। এই নারকেল ভাত ও দেশে পাঁপড় জাতীয় মচমচে খাবার দিয়ে খাওয়া হয়।
- বেশ অদ্ভুত। খেতে কেমন লাগবে কে জানে! তবে আমরা তো সর্বভুক জেঠিমা, জ্যোতিষচন্দ্রের নামে একদিন ঝাল ভাত করে খেলে হয়। সবরকম ট্রাই করলে গল্পগুলো পেটের মধ্যে দিয়ে মাথায় বসে যাবে। তারপর বল।
- ঐ বর্মামুলুকেই মেজদাদুর জীবনাবসান হয়। মরিয়মের চিঠিতে বাড়ির লোক তাঁর মৃত্যুর খবর পায়। তখন নিয়মমত অশৌচও পালন করা হয়েছিল। তবে এ সবই ঘটেছে আমার জন্মের অনেক আগে। জানিনা মরিয়ম বা তার পরিবার কোথায় কীভাবে আছে। জ্যোতিষচন্দ্রের প্রথম স্ত্রীকে বাবলিদি দেখেছে। কলকাতায় বিডন স্ট্রিটে কোথাও ওঁর বাপের বাড়ি ছিল। ও বলেছিল – “আমি বাবির (আমার বকুল মামা) সঙ্গে সেখানে একদিন গিয়েছিলাম। আমার কিন্তু ঠাকুমাকে দেখে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি। অসামান্যা রূপসী। খুব ভাল ব্যবহার করেছিলেন। আমাদের দেখে খুব খুশি হয়ে ছিলেন”। হয়তো স্বামী পরিত্যাগ করার পরবর্তীকালে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। সারাজীবন স্বামী পরিত্যক্তা তকমার কাঁটার মুকুট পরে দিন কেটেছে। কুমুদিনী নিজে ঊনবিংশ – বিংশ শতকের ফেমিনিস্ট অ্যাকটিভিস্ট। তাঁর পরিবারে মেজ বৌমার এমন ভবিতব্য একটা বিরাট ট্র্যাজেডি।
- তখন ন’ বছর বয়সে বিয়ে হত?
- হ্যাঁ, পাঁচ বছরেও হত – বলা হত গৌরীদান। আমার যে সন্দেহ হয়, যে কুমুদিনীর সঙ্গে কোনো ব্রাহ্ম সংযোগ ছিল – তার আর একটা কারণ হল, ব্রাহ্মরা খুব ছোটবয়সে মেয়ের বিয়ে দিত না। ওঁর নিজের তেরো-চোদ্দো বছরে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু শোভাবাজার রাজবাড়িতে এই নিয়ম খাটেনি। অনেক আপস করতে হয়েছিল। বড় মেয়ে লীলার সেনবাড়িতে বিয়ে হয়েছিল পাঁচ বছর বয়সে। ছোটমেয়ে ইন্দিরার বিয়েও ঐ রকম বয়সেই হয়েছিল। মা গল্প করত, সেন বাড়িতে বৌ নিয়ে ভূতিবাবু ফেরার কিছুক্ষণ পরে বৌকে আর কেউ খুঁজে পায় না। ছোট্ট মেয়ে নতুন বাড়িতে গেল কোথায়? খোঁজ খোঁজ। তারপর একজন রান্নার ঠাকুর দেখে, ভাঁড়ার ঘরে দেরাজের পিছনে বৌ ঘুমিয়ে আছে। এই দেখে গিন্নিরা কোলে করে তাকে নিয়ে গেল। বাচ্চা মেয়ে, অত লোকজন দেখে ভয়েতে লুকিয়ে পড়েছিল, তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
- এ বাবা!
- বাবলিদি বলেছে, ছোটবেলায় বাবলিদিরা বাগবাজারে নিবেদিতা লেন-এ থাকত। সেইসময় বাবার (বকুলচন্দ্র – আমার দাদু বিকাশচন্দ্রের বড়দা সতীশ চন্দ্রের ছেলে, আমার বকুল মামা) সঙ্গে শোভাবাজার রাজবাড়িতে যেত। শোভাবাজার রাজবাড়িতে ঠাকুর দালানে যেখানে দুর্গা প্রতিমা থাকে, ঠিক তার ডানদিকে দোতলা যে অংশ আছে – সেখানেই ছিল বসু পরিবারের বাস। রাজবাড়িতে ঠাকুর দালানের বাঁদিকে বাগানে যাওয়ার পথ। কুমুদিনী বা বাড়ির মেয়েরা গঙ্গা স্নান করতে গেলে দোতলার সিঁড়ি থেকে বাগান পর্যন্ত চিক ফেলা হত আর পালকি করে মেয়েদের গঙ্গার পাড়ে নিয়ে গিয়ে একেকটা পালকি গঙ্গায় চোবানো হত। বাড়িতে এসে তারা ভিজে কাপড় ছাড়ত। কুমুদিনী বিদূষী, লেখিকা হলেও এই নিয়ম মানতে হত।
- রাজবাড়িতে লেখাপড়া শিখেও এত আচারবিচার?
- এসব মেয়েদের জন্যে। রান্নাঘরে ছেলেদের জন্য কিন্তু, কোফ্তা, কাবাব, কাটলেট, ফ্রাই চলছে। দিনরাত সাহেব-সুবো অতিথি আর সাহেবী খানাপিনাও চলছে। আর শুনেছি, রাম বা ওয়াইন দিয়ে একরকম অদ্ভুত পুডিং বানানো হত – টিপসি পুডিং – যা খেয়ে নেশা হত। কুমুদিনী সেই যুগে কেক আর কুকিজও বানাতে পারতেন। অল্পবয়সে কুমুদিনীর জন্য মেম টিচার আসত। মেজছেলে জ্যোতিষের আঁকা একটা পোর্ট্রেট আছে বাবলিদির কাছে। ছবিটা কুমুদিনীর মেম টিচারের। যাকগে, মোহনবাগানের মহাভারতটা শেষ করি।
এক এক করে প্রতিমা, ভারতী আর মুকুল যখন মারা যায়, সেই সময় খবর আসে ছোট জামাই রবীন মিত্রের পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু ঘটেছে।
- সে কী? ছোট জামাইও চলে গেল?
- হ্যাঁ। রবীনের বাবা প্রিয়নাথ মিত্র ব্যবসা বিষয়ে ছেলের ওপরে খুবই ভরসা করতেন। কারণ অন্য ছেলেদের একজন আইনজীবী। একজন ছোটখাটো জীবনবীমা জাতীয় কাজে ব্যস্ত থাকতেন। রবীনের মৃত্যুর পরে কীর্তি মিত্রের ব্যবসার সাম্রাজ্য ধসে পড়ে। পাওনাদারেরা ছেঁকে ধরে এবং তারাই মোহনবাগান ভিলা নিলামে তুলে দেয়। শেষে ভূপেন বসু এবং নিমাইচরণ বসু তখনকার দেড়লক্ষ টাকায় ঐ সম্পত্তি কিনে নেন। রবীন মিত্রের এক পুত্র অশোক এবং এক কন্যা বিবি। অশোক মামা এখন দিল্লিতে থাকে, বয়স নব্বই। বিবি মাসি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের বিষক্রিয়ায় বালিকা বেলায় মারা যায়। সব মিলিয়ে প্রিয়নাথ খুবই ভেঙে পড়েন। মোহনবাগান ভিলার একপাশে নয়নচাঁদ দত্ত স্ট্রিটে একটি ছোট বাড়ি ছিল। ওখানে অফিস ছিল, খেলোয়াড়েরা চুক্তিপত্রে সই করত, দরকার হলে থাকত। সেই বাড়িতেই প্রিয়নাথ থাকতে শুরু করেন। শেষ জীবন তিনি ওখানেই অতিবাহিত করেন। শিলি দাদু বাকিদের নিয়ে বিডন স্ট্রিটের একটি বাড়িতে উঠে আসেন। ছোট পিসিদিদা ওখানেই থাকতেন। দু’টি পরিবারের এই বিপর্যয়ে মোহনবাগানের আকাশেও মেঘ জমে ওঠে। আর বৃহৎ সেন পরিবার এই বিপর্যয় কাটাতে তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে।
মোহনবাগান আগেই শ্যামপুকুরের দুর্গাচরণ লাহাবাবুদের মাঠ ছেড়ে সেনবাড়ির লাগোয়া শ্যাম স্কোয়ারে উঠে এসেছিল। শুনেছি ঐ মাঠ প্রতিষ্ঠায় শোভাবাজার রাজবাড়ির কিছু ভূমিকা ছিল। ফেসবুকের পুরোনো কলকাতার গল্প গ্রুপে একজন লিখেছেন রাধাকান্ত দেবের দৌহিত্র আনন্দকৃষ্ণ বসু এবং তাঁর ভাই যোগেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর তত্ত্বাবধানে শ্যাম পার্কের মাঠ প্রতিষ্ঠা হয়, তবে এ বিষয়ে অন্য কোনো নথি পাইনি। এই আনন্দকৃষ্ণ বসুর কাছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আসতেন ইংরেজি শিখতে। যা হোক, এইসব ঘটনার পর সেনবাড়ি অর্থাৎ ৪৪ নং রামকান্ত বোস স্ট্রিট হয়ে ওঠে মোহনবাগানের তৃতীয় অফিস। একদিকে ঐ বংশের ছেলেরা খেলা, সংগঠন, প্রশাসন সবেতে জড়িয়ে পড়েন, অন্য দিকে বড়জামাই শ্রীশচন্দ্র ওরফে ভূতনাথ সেন বা ভূতিবাবু কুমুদিনীকে তাঁর পরিবার সমেত নিজের আওতায় নিয়ে আসেন। পরিবারটি সেনবাড়ি লাগোয়া দাঁতি সেনের একটি বাড়িতে ভাড়ায় উঠে আসে। ঐসময়েই দাঁতি সেন নিজের শ্যালিকা লাবণ্যপ্রভার সঙ্গে কুমুদিনী-পুত্র বিকাশ চন্দ্রের পুনর্বিবাহ দিয়ে সংসারটা আবার বসিয়ে দেন। বিকাশ – লাবণ্য আমার মায়ের বাবা মা। বিকাশের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ভারতীর পুত্র বিমানচন্দ্র তখন শিশু। দাঁতি সেনের বাড়িতেই আমার মামা সুজিতচন্দ্র, মা কৃষ্ণা (রাজকুমারী), দুই মাসি কাবেরী ও সুরভির জন্ম হয়। বিকাশচন্দ্রের পাঁচ সন্তান সেন বাড়ির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বড় হতে থাকে। এই কারণে তাদের জগৎটাও মোহনবাগানময় হয়ে যায়।
সেজদাদু সুরেন্দ্রনাথ যখন মারা যান, দিদা তখন কিশোরী, কোলে সদ্যজাত কন্যা অমিয়া। তিনিও এই সেনবাড়িকেই ভরসা মনে করতেন। একদিকে এই পরিবার মোহনবাগানকে বাঁচিয়ে যেমন বাংলার ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে, তেমনি জ্ঞাতিদের শত্রু না মনে করে, আপন করেছে। দত্ত, মিত্র, বোস সবাইকে বিপদের দিনে মানসিক আশ্রয় দিয়েছে। এই সুকৃতির ফলও এই বংশ পেয়েছে। বাকিরা যে যার মত ছিটকে পড়লেও, আজও বাগবাজারের সেনেদের যৌথ পরিবারের মহিমা অক্ষুণ্ণ আছে। আমি ঠিক জানি না, বাংলার আর কোনো পরিবারের এতজন কর্তা ডাকনামে সুপরিচিত কিনা। কলকাতা হাইকোর্টের নথিতে দীনবন্ধু সেন, ব্র্যাকেটে দাঁতি লেখা দেখে আমি তো তাজ্জব। এখন ঐ পরিবারের লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে। অনেকেই অন্যত্র বাসস্থান ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন। তবু আমি চাই ঐ সেনবাড়ি যেন স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকে।
আমার মামা বলত, অল্পবয়সে মামা মোহনবাগানের বার পুজোয় যেত।
- বার পুজো কী? শনিবার?
- আরে না না। পয়লা বৈশাখে ফুটবলের বারপোস্ট পুজো করা হত। এখনও হয়। তবে আগের মত জৌলুস নেই। ঐ দিন সেনবাড়ির কর্তারা সেজেগুজে যেতেন। মামাও যেত। মামা বলত, ষাট-সত্তর দশকে চৈত্র মাসের আগে শেষ হত খেলোয়াড়দের দলবদল। পয়লা বৈশাখে নতুন মরুশুমের সূচনা হত বারপোস্ট পুজো করে। অধিনায়কের নাম ঘোষণা হত। নতুন ক্যাপ্টেন বার ছুঁয়ে মন্ত্র বলত। পুজোর পর মামা সবার সঙ্গে লাইন দিয়ে লুচি, বোঁদে আর পান্তুয়া খেত।
- মজার ব্যাপার তো। বারপোস্ট পুজো কেন? বলটাকে পুজো করা উচিত।
- আরে বোকা, বারপোস্ট রেগে গেলে গোল করার সময়ে জালে না জড়িয়ে, বলটা যদি ধাক্কা মেরে ফিরিয়ে দেয়, তখন কী হবে? বল পুজো করলে, তাকে লাথি মারবে কী করে? বাবলিদিও ছোট বেলায় মোহনবাগানের খেলা হলে যেত। বকুল মামা ট্যাঁকে করে নিয়ে যেত। মোহনবাগান তাঁবুতে বসে থাকত। খেলা শেষ হলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসে তেলেভাজা খেয়ে সেন বাড়ির গাড়ি চড়ে আবার বাড়ি ফিরে আসত।
- বুঝলাম। আচ্ছা জেঠিমা, আমরা তিনজন যে মোহনবাগানের মেয়ে হলাম, সেটা কি ধোপে টিকবে?
- কেন? টিকবে না কেন?
- আমরা যে খুব ইলিশ খাই।
- তাতে কী? মোহনবাগানীরাও ইলিশ খায়, ইস্টবেঙ্গলীরাও চিংড়ি খায়। তাতে ভালবাসা কমে না।
- বাড়িতে যে নোনা মাছ আছে বলছ, তাতে ইলিশ আছে?
- আছে তো।
- উমম, কাল তবে ইলিশের কী হবে?
- লাবণ্যর হাতের একটা রেসিপি করতে পারি, খাবি? কৃষ্ণার কাছে শিখেছি, কাঁচা ইলিশের ঝাল।
- হ্যাঁ খাবো তো বটেই জেঠিমা। পুরোনো দিনের রেসিপিতে করা রান্না খেলে, তবে তো পুরোনো গল্প জীবন্ত হয়ে উঠবে।
- মা, রান্নাটা কিন্তু দেখব, কীভাবে কর। কুমুদিনী-লাবণ্য-কৃষ্ণা-শারদা – আর একটা নাম জুড়ে যাবে রঞ্জাবতী। মানুষ থাকবে না, রান্নার ঘরানা চলতে থাকবে।
- ঠিক, ঠিক।
- কাল কাঁচা ইলিশের ঝাল করলে পরশু ডাব চিংড়ি করবে জেঠিমা।
- ঠিক হ্যায়, করতেই হবে। আজ ইস্টবেঙ্গলী ইলিশ রান্না হলে কাল তো মোহনবাগানী চিংড়ি রান্না হতেই হবে।
- রান্নাদুটো আমরা করতে পারি মা? তুমি বলে বলে দেবে।
- এ তো উত্তম প্রস্তাব। তাহলে আমি ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিচ্ছি, কাল, পরশু বাড়িতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের নামে ফুটবল – খাদ্য উৎসব হবে, অরগানাইজড বাই আওয়ার টু প্রিন্সেসেস।
- ফুটবল – খাদ্য উৎসব কিন্তু কুমুদিনীর নামে হবে মা। কুমুদিনী স্মৃতি উৎসব।
- তথাস্তু। মোহনবাগানের যে দল ইংরেজকে হারিয়েছিল, সেই দলে গোল করেছিলেন শিবদাস ভাদুড়ি আর অভিলাষ ঘোষ। তাহলে রঞ্জা হবে শিবদাস আর কর্ণা হবে অভিলাষ। শিবদাস বাঙাল ছিলেন। অভিলাষ বাঙাল না ঘটি, তা অবশ্য ঠিক জানি না। তাই ইলিশ যে রাঁধবে সে শিবদাস। আমি রেফারি। দেখি তোরা গোল করতে পারিস কিনা।
তাহলে কুমুদিনী স্মৃতি ফুটবল উৎসবে রঞ্জাবতীর করা কাঁচা ইলিশের ঝাল কেমন হল?
পাকা বুড়ি ইলিশের টুকরোগুলো নিজে হাতে একটু সর্ষের তেল আর পরিমাণমত নুন মাখাল। কিন্তু হলুদ মাখাল না। এবারে কড়ায় সর্ষের তেল ঢেলে তেলটা গরম করল। বেশ ধোঁয়া ওঠা কষকষে গরম তেলে পাঁচফোড়ন, আর কয়েকটা চেরা কাঁচালঙ্কা দিয়ে তেলটা ঢাকা দিয়ে গ্যাস কমিয়ে দিল। সর্ষে আর কাঁচালঙ্কা একসঙ্গে বাটা ছিল। খানিকটা ঐ বাটা একটা বাটিতে জলে গুলে তেলের ওপরে ঢেলে দিল। গ্যাস কমিয়ে দিয়ে জল ঢালাতে এই মূহূর্তে কড়ায় উত্তাপ কম। এবারে অল্প টক দই ফেটিয়ে তাতে চিলতে খানিক ময়দা মিশিয়ে ঐ ঝোলে মিশিয়ে দিল। দইয়ের পরিমাণটা আমি নিক্তি মেপে দিলাম, যাতে ঝোলটা কোনোভাবেই টক না মনে হয়। দইটা ঝোলে মিশে গেলে মাছের টুকরোগুলো এক এক করে ঝোলে ছেড়ে দিল রঞ্জা। এবারে ঝোলটা আঁচ বাড়িয়ে ফুটতে দিল। ধীরে ধীরে মাছের তেল ছেড়ে ঝোলের ওপরে উঠে এল। ঠিক লাবণ্যর মতই ঝোলের নুন চেখে, কয়েক দানা চিনি ছড়িয়ে দিল রঞ্জা। এতে ইলিশের ঝোলের স্বাদটা মিষ্টি হবে না, কিন্তু ধারালো হবে। ইলিশ নরম মাছ বেশি ফুটবে না। ঝোল পাতলা হবে, ঘন বা মাখামাখা নয়। হলুদ না দিলেও সর্ষের তেল আর সর্ষে বাটার জন্য ঝোলে একটা খুব হাল্কা বাসন্তী রং ধরে। নামানোর তিন-চার মিনিট আগে ঝোলের ওপর কাঁচা সর্ষের তেল ছড়িয়ে কয়েকটা গোটা কাঁচা লঙ্কা ফেলে ঢাকা দিতে বললাম। এতে গ্রেভি ঝাল হবে না, কিন্তু সর্ষের তেলের ঝাঁজ আর কাঁচা লঙ্কার সুগন্ধ মিশে একটা বাড়তি মাত্রা দেবে।
পরদিন কর্ণাবতী রাঁধল ডাব-চিংড়ি। আমাদের বক্সিবাড়ির বর্তমান চৌকিদার কাম অভিভাবক রুণাদা নরম শাঁসওলা গোটা চারেক ডাবের মুখ কেটে দিল চওড়া করে। তলাগুলোও কেটে দিল সমান করে। কর্ণা এবার মাঝারি মাপের চিংড়িগুলো সর্ষের তেলে হাল্কা করে ভেজে নিল। এবারে কড়ায় মাখন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি, আদা রসুন বাটা, নুন আর লঙ্কাগুঁড়ো ছড়িয়ে ভাজা ভাজা করে নিল। হয়ে গেলে ফ্রেশ ক্রিম মিশিয়ে আঁচ বন্ধ করল। ডাবের শাঁস চামচ দিয়ে কুরিয়ে বার করে ভাল করে একজন বেটে দিল। এবার কিছুটা ডাবের জল, ডাবের শাঁসবাটা, ভাজা চিংড়ি আর মাখনে নাড়া মশলা একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এই পুরো জিনিসটা ডাবের মধ্যে পুরে, ডাবের মাথাটা ঢাকা দিয়ে দিল কর্ণা। পাশে একজন আটা মেখে রেখেছিল, সে ঐ আটা দিয়ে ডাবের মাথা, বাকি অংশের সঙ্গে চেপে আটকে দিল। এভাবে চারটে ডাবই প্রস্তুত করা হল। এবার রান্নাঘরের ভিতরের উনুনের পেটের ভিতর দুটো ডাব আর বাইরের উনুনের ভিতর দুটো ডাব ঢুকিয়ে রাখা হল। নিভন্ত আঁচে, সব মশলা মিশে তৈরি হল ডাব চিংড়ি। উপরি পাওনা হল, একটা মৃদু ধোঁয়া ওঠা গন্ধ।
দু’দিন দু’মেয়ের রান্না সামলাতে গিয়ে, জনাচারেক সাহায্যকারিণী, তেল, নুন, ঝাল, বাটা, কাটা সব এগিয়ে দিতে গিয়ে এক রৈ রৈ কাণ্ড বেধে গেল, যেন বাড়িতেই পিকনিক হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, রান্না দুটোই উতরে গেছে। মেয়েদের হাতে খেয়ে বাবাদের মুখেও বেশ গর্বভাব ফুটে উঠেছে। আর দু’দিনই খেয়ে ওঠার পর, সকলকে “জয় মোহনবাগান” ধ্বনি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। খুব একটা বাধা আসেনি কারোর কাছ থেকেই। দেওরের এক বন্ধু এসেছিলেন বাড়িতে। কেবল তিনি সব শুনেটুনে খেয়েদেয়ে ইস্টবেঙ্গলের জয় দিয়েছেন, কারণ তিনি বাঙাল। এতে আপত্তিরও কিছু দেখি না। অবিভক্ত বাংলায় আমাদের কোন পুরুষে কোন মা পুববাংলার ছিলেন, সেটাই কি জানি ছাই! দেশভাগ তো হল এই সেদিন উনিশশো সাতচল্লিশে। ১৮৮৯-এ মোহনবাগানের ধারণায় কোনো ঘটি-বাঙাল ছিল নাকি?
পুনশ্চ:
শহর-ঘরে তো উনুন নেই। তাবলে কি ডাব চিংড়ি হবে না নাকি? মাইক্রোওভেনে নর্মাল মোডে মশলা-পোরা, মাথা-ঢাকা ডাব ঢুকিয়ে দশ মিনিট রেখে দিলেই কেল্লা ফতে। বের করে শুধু খাওয়ার অপেক্ষা।