৩
“আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।
নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই – লুকোচুরি খেলা॥”
– আজ কী রান্না হবে গো মা? তরকারি খেতে ভাল লাগছে না একদম। কিছু অন্যরকম করা যায় না?
– অন্যরকম বলতে?
– মানে ঝোল-টোল নয়, কিছু শুকনো কিন্তু টেস্টি। এমন দুপুরে করা যায় না?
– শুকনো, টেস্টি, অন্যরকম! একটু ভাবতে হবে।
– ভাল করে ভাবো, আমরা মাম্পিদিদির বাড়িতে খেলতে চললাম।
– সে কী, কার সঙ্গে যাচ্ছিস?
– ঐ তো মাম্পি দিদি এসেছে আমাদের নিয়ে যাবে বলে। এসে যেমন বললাম, তেমন মেনু যেন পাই। টা টা।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ’কথাটাই মাথায় ঘোরে, মেয়েদুটো বাড়ি নেই। বলে দিলে ভাল হত, বাড়িতেই যেন খেলে, তিনজনে আবার অ্যাডভেঞ্চার করে দূরে কোথাও না যায়। নাঃ, বেশি ভেবে লাভ কী? পাড়ায় সকলেই ওদের চেনে। কিছু হবে না। শহরে তো বন্ধুর বাড়ি খেলতে যাওয়া – আজকাল উঠেই গেছে এসব। এখানে এসে একটু মুক্তি পায় পাক। মাম্পি তো একটু বড় ওদের থেকে, আর খুব দায়িত্বশীল মেয়ে। ও ঠিক ওদের সামলে রাখবে। মনটা আবার ছোটবেলার রেলগাড়িতে চেপে বসে। আমরা ছোটবেলায় পাতিপুকুরের সরকারি আবাসনে থাকতাম। কিন্তু মা কোনদিনও পাড়ায় আমাদের মিশতে দেয়নি। অথচ আবাসনের ভিতরে দু’-দুটো খেলার মাঠ ছিল। মা খুব সাধারণ জীবনযাপন করলেও, এখন বুঝি মায়ের মধ্যে বংশগৌরব নিয়ে একটা চাপা দেমাক ছিল। পাতিপুকুর যে বাগবাজারের মতো বনেদী জায়গা নয়, এই ক্ষোভ মায়ের কথায় কখনও সখনও বেরিয়ে পড়ত। আবাসনের বাচ্চারা কত ছোটাছুটি করে খেলাধুলো করত। আমার ভীষণ ইচ্ছে করত ওদের সঙ্গে খেলতে। আমি শুধু জানালা দিয়ে ওদের ধরাধরি, চোরপুলিশ, লক এন কি, ঘোরো ঘোরো ঘোরো স্ট্যা – চু, ওপেনটি বায়োস্কোপ – এইসব কত খেলা দেখতাম। বাচ্চাদের খেলা হয়ে গেলে, একটু বড় ছেলেরা ফুটবল নিয়ে নামত। রাত হলে আরও বড়রা মাঠে নামত, গরমে ভলিবল, শীতে ব্যাডমিন্টন। আমি পড়ার ফাঁকে ফাঁকে কেবল জানালা দিয়ে দেখতাম কখন কী খেলা হচ্ছে। আর ঐ মনখারাপ কাটানোর জন্য বাড়িতে থাকলে যতক্ষণ পারা যায়, রেডিওতে কেবল খেলার রিলে শুনতাম। বিকেলে ফুটবল, আর টেস্ট ক্রিকেট হলে তো কথাই নেই। ছুটির দিনে সারাদিন সেই রেডিও নিয়ে পড়ে থাকা।
চিন্তাসূত্র কেটে গেল, কারণ কর্তা বাজার নিয়ে ফিরল। যাই, কী এনেছে দেখি – কচি পটল, সজনে ডাঁটা, বেগুন আরও অনেক কিছু। কিন্তু এগুলো দিয়ে শুকনো, টেস্টি, অন্যরকম কী করা যায়? মাছটা দেখি। উমমম, দারুণ জিনিস এনেছে আজ, মাঝারি সাইজের একেবারে টাটকা জীয়ন্ত চিংড়ি মাছ। পুরোনো স্মৃতি মনে আসে। ওয়েটল্যান্ডে যখন দু’জনে চাকরি করতাম, কর্তা একবার পুকুরের গলদা চিংড়ি রান্না করে অফিসে নিয়ে গিয়েছিল। চিংড়িগুলো এতটাই তাগড়া ছিল, যে দুটো চিংড়ি ছ’ টুকরো করে আমরা ল্যাবের ছ’জন প্রোজেক্ট সায়েন্টিস্ট টিফিনে হাপুস হুপুস করে খেয়েছিলাম। সে গলদার দাঁড়াগুলো একেবারে নেভি ব্লু আর মোটা মোটা। কাঁকড়ার দাঁড়ার মতো দাঁতে চেপে ভেঙে খেতে হয়েছিল। কিন্তু এগুলো গলদা নয়, চাপড়া চিংড়ি। রান্নার বৌদের হাতে ছাড়লে ওরা সেই একটাই জানে – সেটাই করবে। ডুমো ডুমো আলু, নারকেল বাটা, আর সেই কাঁচা কাঁচা পেঁয়াজ বাটা দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি ঝোল। ওরা যা পারে করুক। আমি একটু চিংড়ি আলাদা করে চিংড়ি থেঁতো বানাব। যদিও এইভাবে থেঁতো করে খাওয়া আমি এখানে শাশুড়ি মায়ের কাছেই শিখেছি। আর প্রথমবার খেয়েই একেবারে প্রেমে পড়ে গেছি, যাকে বলে লাভ অ্যাট ফার্স্ট টেস্ট। আমার মেয়েদের ভাষায় বলা যায় ইয়াম্মি টেস্টি। আর এই থেঁতো বানানোটাও খুব সহজ। ঝিরিঝিরি করে কাটা পেঁয়াজ, কাঁচা তেল আর নুন দিয়ে মেখে জরিয়ে রাখতে হবে। পেঁয়াজ এমনিতেই নরম হয়ে যাবে, ভাজতে হবেনা। এবারে চিংড়িগুলো নুন হলুদ মাখিয়ে ভেজে নিয়ে, হাল্কা থেঁতো করে এই পেঁয়াজ মাখার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। ব্যস হয়ে গেল। এর সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে টাকনা দিলে পুরো ভাত উঠে যায়। তবে হ্যাঁ, এভাবে খেলে জনপ্রতি চিংড়ির খরচটা বেশি। তা হোক গে। আজ এটাই ফাইনাল। বাড়িতে এমনিতে ডাল তো হবেই। আজ একটু পাতলা করে জিরে ফোড়ন দিয়ে মুসুর ডাল করতে বলব রুণাদাকে। আর সঙ্গে কী করা যায়, যাই রুণাদাকে ডাকি, দু’জনে একটু পরামর্শ করে নিই। শুকনো, টেস্টি, অন্যরকম বিষয়ে ওর কোনো আইডিয়া থাকতে পারে। কিন্তু রুণাদা গেল কোথায়? ঐ তো গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে। নতুন বাছুর হয়েছে, তাই হয়তো একটু বেশি দেখভাল করতে হচ্ছে। বাছুরটা খয়েরি রঙের, কপালে ছোট্ট সাদা চাঁদা রয়েছে। মেয়ে তাই ওর নাম রেখেছে চন্দ্রাই। যে কোনো কিছুর নাম দেওয়াটা ওর একটা বাতিক। যে চাদরটা গায়ে দিয়ে শোয়, তার নাম চিরুচিরু, এখনও ছোটবেলার দু’খানা প্যাতা বালিশ হাতে ধরে ঘুমোয় – তাদের নাম চম্পা-ঝুম্পা, পাশ বালিশের নাম হল পম্পা। সব মায়ের টুম্পা নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা। কিন্তু রুণাদা হাসতে হাসতে আমায় হাত তুলে কী দেখাচ্ছে ওটা? আ – রে! এ তো কাঁচা আম দেখছি আর ও হাতে কী? পুদিনাপাতার গোছা মনে হচ্ছে। বাবা এখন এগুলো পেল কোথায়?
– পুদিনা আর আম কোথায় পেলে রুণাদা?
– সকালে কাঁথি গিয়েছিলাম, বাছুরটা ঠিকমত খাচ্ছে না, তাই ডাক্তার কে খবর দিতে। বিকেলে এসে দেখে যাবে। ওখানেই সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ডে বিক্রি হচ্ছিল। নিয়ে এলাম।
বাঃ, দারুণ, রাস্তা পেয়ে গেছি, এবারে মেয়েদের পছন্দমত টেস্টি জিনিস হয়ে যাবে। পুদিনা আমের চাটনি করব, কিন্তু নো আঁচ বিজনেস। রান্না করা হবে না। কাঁচা বাটার ওপরে হবে। এইরকম চাটনি প্রথম খেয়েছিলাম রাঁচীতে। আমাদের ছোটবেলায় বাড়িতে ধনেপাতা বাটা আর তেঁতুল দিয়ে চাটনি হত, পুদিনা পাতা বাড়িতে আসত না, তাই খেতেও জানতাম না। রাঁচীতে প্রথম আম পুদিনার চাটনি খেয়ে সেই যে মুখে লেগে গেল, আজ অবধি ভুলতে পারলাম না। বেশিকিছু তরিবতও তো দরকার নেই। ঝাড়াঝাপ্টা রেসিপি। দেখি তো, রুণাদা কেমন পুদিনা এনেছে, সাতবাস্টে নাকি টাটকা। হুম, রুণাদা আজেবাজে তো আনবে না বাবা! ও যখন এনেছে তো দেখেই এনেছে। বা বা এ তো বেশ সতেজ সবুজ, একেবারে প্রীতি জিন্টা পুদিনা, বেশ সুবাস। মনে মনে ভেবে নিই। দু’মুঠো পুদিনা পাতা ডাঁটি ফেলে বেছে নেব। দুটো কাঁচা আমের খোসা ছাড়িয়ে শাঁসটা নেব। কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা, পনেরো ষোলো কোয়া কাঁচা রসুন একসঙ্গে বেটে নিয়ে তাতে স্বাদমত নুন আর হাল্কা এক টিপ মিষ্টি দেব। চাটনিটা নোনতা হবে, কেবল স্বাদের ধার আনার জন্য ঐ একটু যা মিষ্টি ছোঁয়াতে হয়। রাঁচীতে মাইমারা এই চাটনি অনেকটা বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিত। আর কেউ রাঁচীর সেই ঠা ঠা রোদে পুড়ে বাড়ি ফিরলে ঐ চাটনি দু’চামচ এক গ্লাস জলে মিশিয়ে একটু চিনি গুলে খেতে দিত। গরমে এটা খাওয়া নাকি দারুণ উপকারী। আর কাঁচা রসুন যারা খেতে পারে না, এইভাবে খেলে তাদেরও কোনো অসুবিধে হয় না। সঙ্গে দোসর পুদিনা ওষধি, কাঁচা আম আর কাঁচা লঙ্কা, তাই জিভের তারের সঙ্গে ভিটামিন আর সহজ পুষ্টিতেও এ চাটনি ভরপুর।
রান্নাঘরে টুকিটাকি কাজে ব্যস্ত থাকি। মনের ভিতর বায়োস্কোপ চলতে থাকে। আমাদের ওপর মায়ের এত শাসন সবকিছু রাঁচী গেলেই কেমন যেন আলগা হয়ে যেত। কারণ মা নিজেই হয়ে যেত কচি খুকু। বড়দাদুর সামনে আমাদের কিছুই বলতে পারত না। অথচ বড়দাদু ছিল মাটির মানুষ। গল্প শুনেছি আমার দোর্দণ্ডপ্রতাপ দাদুভাই বিকাশচন্দ্রও নাকি শ্যালক অরুণ ঘোষের সামনে গলে জল হয়ে যেত। আমারও বড়দাদুকে খুব পছন্দ হত – ভারী মিষ্টি হাসি মুখ, মিশুকে আর দারুণ গল্প বলিয়ে। সবার মাঝে অজাতশত্রু এক মানুষ।
দুপুরে খাবার টেবিলে আবার যে কে সেই আড্ডার আসর বসল।
– মা, আগে তো কোনোদিন আম পুদিনার চাটনি করনি। গাছ থেকে স্বাদ বানানোর ব্যাপারে এটা কি তোমার নতুন আবিষ্কার?
– না রে বাবা, এ আমার আবিষ্কার নয়, পূর্ব অভিজ্ঞতা। গাছের ব্যাপারে কোনো আবিষ্কার করার চেষ্টা আমি ছেড়ে দিয়েছি।
– কী রকম?
– এই চাটনি রাঁচীতে হত, তোরা রাঁচীর গল্প শুনতে চাইছিলি, তাই রেসিপিটা মনে পড়ে গেল।
– আবিষ্কার করার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছ কেন জেঠিমা?
– সে অনেক কারণ আছে।
– কী কারণ?
– তোর জেঠু তো আমাদের শহরের ফ্ল্যাটের এক চিলতে বারান্দায় সবজি ফলায় জানিস। এছাড়া অন্য গাছও কিছু আছে। তার মধ্যে একটা বনসাই বটগাছ আছে। আমি একবার আমতা গুরুসদয় কলেজে একটা ওয়ার্কশপ করাতে গিয়েছিলাম, ওখানে সেই গাছের চারা দিয়েছিল। একটা চওড়া টবে গাছটা এখন আছে, বড় হয়ে বেশ ঝুরি নামিয়েছে। তা একদিন আমি দেখি গাছের কয়েকটা ডাল বারান্দার গ্রিলের বাইরে বেরিয়ে গেছে বেশি আলো পাবার জন্যে। সেই ডাল থেকে ঝুরি নামাও শুরু হয়েছে। কিন্তু সে ঝুরি তো শূন্যে দোদুল্যমান। ওকে মেঝে পেতে গেলে নিচের উঠোনে দোতলা আন্দাজ নামতে হবে। দেখি গাছটা কী করে! ব্যাপারটা নজর করতে লাগলাম। ওমা! দিন তিনেক পরেই দেখি ঝুরিগুলো এত চালাক, বাইরে থেকে বেঁকে আবার বারান্দায় ঢুকেছে। আর ঢুকেছে শুধু না, ওর নিজের টবের মাটিতেই গেঁড়ে বসতে চাইছে। আমি তো অবাক। ভাল করে দেখলাম, এ তো আলোর উল্টো দিকে চলা। তার মানে ঝুরিতে নিশ্চিত মাটি কোথায় বোঝার জন্য লুকানো সেনসর আছে। খুব ভাল বুঝতে পারলাম, গাছের বিষয়ে আমি একটা দারুণ জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছি, এবার শুধু জগৎসভায় জানানোর অপেক্ষা। সবার আগে তোর জেঠুকে জানাতে গেলাম। আর তখনই মনটা ভেঙে গেল। জানতে পারলাম ঝুরিগুলো নিজে নিজে নয়, তোর জেঠু বাইরে থেকে টেনে এনে আবার টব ধরিয়ে দিয়েছে। সেই যে দাগা পেলাম, আর গাছের বিষয়ে কোনো আবিষ্কার করা ছেড়ে দিয়েছি।
– হা হা হা হা, জেঠিমা তুমি এত কিউট কেন বল তো। জেঠুর বাগান নিয়ে আরও কিছু বল প্লিজ – আবিষ্কার না হোক অন্তত পূর্ব অভিজ্ঞতা।
– কী আর বলি বল। তোর জেঠু অনলাইনে পদ্মবীজ আনিয়ে ভিডিও দেখে ফেল হয়ে গেল। বীজ অঙ্কুরিত হল না। এভাবে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করতে করতে একবার বারান্দায় বাম্পার শসা ফলাল। বারান্দা পুরো সবুজ পাতায় ঢাকা, কিন্তু ঘরে আলো ঢোকা কমে গেছে। রোজই দেখি বারান্দায় গিয়ে তোর জেঠু অনেকক্ষণ ধরে কীসব খুটুর খাটুর করে। আমিও তক্কে তক্কে ছিলাম, পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে একটুকু ফাঁক দিয়ে নজর রাখছিলাম, জল তো দেওয়া হয়ে যায় আগে, রোজ এতক্ষণ কী করে। ওমা, কী দেখলাম জানিস? গাছ ভরা হলুদ শসার ফুল। কী সুন্দর। তার মধ্যে তোর জেঠু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা একটা ফুল ছিঁড়ছে। ছিঁড়েও তার শান্তি হচ্ছে না একটা একটা করে পাপড়ি ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তারপর বোঁটা ধরে ফুলের ভিতরের রেণু ডাঁটিটা আর একটা ফুলের মধ্যে লুকিয়ে দিচ্ছে। এই একই কাজ করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে। আমি রুদ্ধশ্বাসে দেখছি, তোর জেঠু এত নিষ্ঠুর, আর আমি জানতামই না, কোনো মানুষ নিজের করা ফুল এভাবে ছিঁড়তে পারে? শেষে আর পারলাম না। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে জেঠুকে হাতেনাতে ধরে ফেললাম, আর কড়া গলায় বললাম, “কী হচ্ছে এসব?”
– তারপর?
– আমাকে পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে জেঠু তো অবাক। হুঁ হুঁ বাবা, সবাই আমাকে আলাভোলা ভাবে। কিন্তু আমি কী কম গোয়েন্দা? কম ফেলু মিত্তির, ব্যোমকেশ, মিস মার্পল পড়েছি?
– তারপর?
– তারপর আবার আমার মন ভাঙল।
– কেন, কেন?
– জেঠু আমাকে দেখাল, রোজ একটা করে মেয়ে ফুল ফোটে তো সাত আটটা ছেলে ফুল ফোটে। মেয়েফুল থেকে শসা হয়। মৌমাছি তো নেই, তাই জেঠু তাজা ছেলে ফুল বেছে পরাগমিলন করায়। আর সেইজন্যেই শসা ফলছে। আমি না বুঝে মিছিমিছি ওসব নিষ্ঠুর কথা ভেবে ফেলেছিলাম।
– উফ জেঠিমা তোমায় নিয়ে না আর পারা যায় না। তবে ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ, কোনো কথা হবেনা। বারান্দায় সবজি ফলায় জেঠু চাষি, আবার ফুলের পরাগমিলন করায় জেঠু মৌমাছি। হি হি।
– পরে আর কিন্তু জেঠুকে মৌমাছির কাজ করতে হত না।
– কেন?
– প্রথম রাউন্ড শসা ফলানোর পরে দুটো ক্ষুদে মৌমাছি আর দুটো কালো পোকা আসত, তারাই পরাগমিলন করত।
– তাই নাকি? তার মানে ওরা শহরের ঐ ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলেই কোথাও থাকে। আর কোথায় কী হচ্ছে, তার খবর রাখে, ভারি অদ্ভুত।
– হ্যাঁ, আমরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক, তোরা যেমন চাইছিলি, তরকারি ছাড়া টেস্টি অন্যরকম, তেমন কিছু কি পেলি?
– পেলাম পেলাম মা। চিংড়ি থেঁতো আর আম পুদিনা দুটোই লাজবাব। তা শেষেরটা তো রাঁচীর রেসিপি বললে, বাকি যেগুলো বলছিলে সেগুলো খাওয়াবে না? ধুসকা, বাঁশের আচার আর দেহাতি চিকেন?
– অ্যাই! চুপচাপ খা, একটা খাওয়া শেষ হল না, আবার পরেরটা খাবার চিন্তা!