আইবুড়ো নবমী
নবমীর সকালে অন্য তোড়জোড় শুরু হত। সেদিন সোদপুরে বড়মামার বাড়ি যাওয়া হত। ডেয়ার ডেভিল বড়মামা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি চালাত। ফোন এলে যে, যে অবস্থায় থাকুক, কয়েক মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে পড়তে হয়, ইউনিফর্ম পরে, রেডি হয়ে। কলকাতায় কোথাও ডিউটি শেষ হলে, বড়মামা আমাদের বাড়িতে চলে আসত, সময়ের ঠিক ঠিকানা থাকত না। যত ক্লান্তিই থাকুক, এসেই হৈ চৈ শুরু করে দিত। মাকে বলত, কি রে খুকু, কী রান্না করেছিস? তাড়াতাড়ি ভাত বাড়, খুব খিদে পেয়ে গেছে। তারপরেই ট্রেনের হকাররা কীরকম করে জিনিস বিক্রি করে, কেমন করে টিটি বিনা টিকিটের যাত্রী ধরে, এসব হরেকরকমবা গল্প ফেঁদে বসত। কখনও আমাদের দু’ বোনকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ত। আর আমাদের ইউনিফর্মের দু’দিকে প্যান্টের দুটো পকেট ধরে হাঁটতে বলত। নিজের হাত ফাঁকা রাখত। আজ ভাবি, ডিউটিতে কত মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা নিয়ে আসত। আর সেগুলো ভোলার জন্যই মনে হয়, এসব মজার মজার কাণ্ড করত।
সেদিনের সোদপুর কলকাতার তুলনায় অনেক ফাঁকা, গাছগাছালি ঘেরা ছিল। বড়মামার একতলা বাড়ি, একধারে সিমেন্ট ঘেরা নলকূপ। কলতলা পেরিয়ে সিঁড়ির মুখে দাঁড়ালেই তিন মামাতো দাদা লাফিয়ে এসে নিয়ে যেত আমাদের। নবমীতে বড়মামা আবার কচি পাঁঠার মাংস আনত। বড়মাইমা একটু বেশি মিষ্টি দিয়ে রান্না করত। বড়মাইমার বাপের বাড়ি আর আমার দিদার বাপের বাড়ির বংশ এক। তাই বড়মাইমার রান্নার শৈলী আমার মায়ের সঙ্গে মিলত। তবে বড়মাইমার হাতের একটা জিনিসের প্রতি আমার খুব লোভ ছিল। সেটা হল নারকেল ছাপা সন্দেশ। বড়মাইমার কাছে, নারকেল ছাপা কেমন করে কর, বারবার জানতে চাইতাম। মায়ের সময়াভাবের জন্য আমাদের বাড়িতে ওসবের পাট ছিল না। বায়না করে করে রেসিপিটা জেনে নিয়েছিলাম। মিহি নারকেল কোরা, ঘন দুধে মিশিয়ে, খুব ঢিমে আঁচে নাড়াচাড়া করতে হয়। দু’কাপ পরিমাণ নারকেল কোরায় এক কাপ ঘন দুধ লাগবে। সাধারণ দুধ দু’কাপ ফুটিয়ে এক কাপ পরিমাণ করে নেওয়া করে যেতে পারে। আবার এক কাপ দুধে গুঁড়ো দুধ বা কনডেন্সড মিল্ক মিশিয়ে ঘন করা যেতে পারে। কড়াতেই এবার ধীরে ধীরে দু’কাপ চিনি অন্তত তিন খেপে মেশাতে হবে। আর খুন্তি নাড়া থামালে চলবে না। চিনি গলবে, মিশবে, কিন্তু লাল হবে না। এই মিষ্টির আসল উপকরণ হল ধৈর্য আর তরিবত। মণ্ডটা বেশ শুকিয়ে এলে, একটু খুন্তিতে নিয়ে গোল পাকিয়ে দেখতে হবে, যে কোনো আকৃতি দেওয়া যাচ্ছে কিনা। দেওয়া গেলে, আঁচ বন্ধ করে, মণ্ড ঠান্ডা করতে হবে। আঁচ বন্ধ করার আগে চাইলে এলাচগুঁড়ো মেশানো যেতে পারে। ঠান্ডা হলে নাড়ু পাকিয়ে সন্দেশের ছাঁচে চেপে বসিয়ে দিতে হবে। বসানোর আগে ছাঁচে একফোঁটা ঘি মাখিয়ে নিলে মন্দ হয় না। সন্দেশটা উঠবে ভালো। বাটিতে পাশে জল রাখতে হবে। প্রতিটা সন্দেশ হয়ে যাবার পর ছাঁচটা ধুয়ে নিতে হবে। কারণ আগের বারের টুকরোর ওপরে বসালে, পরের সন্দেশে ছাঁচের ছাপ ভালো উঠবে না।
সারাদিন হুটোপাটি করে, বিকেলের মুখে সুখচর গির্জার পাশের বাস স্ট্যান্ড থেকে বড়মামা আমাদের বাসে তুলে দিত। সবাই বলত বটে গির্জা গির্জা, কিন্তু কোনো চার্চ, যিশুর মূর্তি বা ক্রুশ কিছুই খুঁজে পেতাম না।
- ও বড়মামা, গির্জা কই?
- এই তো, তোর পিছনে।
- এইটা? এটা তো আদ্যিকালের টাওয়ার মনে হচ্ছে। ইঁট বার করা থামটা গির্জা কি করে হয়? কে বানাল এটা?
- ফিরিঙ্গিরা করেছে। মানে ইংরেজ। বহু পুরোনো টাওয়ার। তাই হয়তো নাম হয়েছে গির্জা।
- ভারি অদ্ভুত।
মানুষ তো ভবিষ্যত দেখতে পায় না। অতীতকে দেখে। তাই সেদিন জানতাম না, যে একদিন এইসব টাওয়ার নিয়ে আমাকে পড়াশোনা করতে হবে। ১৮১৮ সালে গ্রেট ট্র্যাঙ্গুলেশন সার্ভে করে সারা ভারতবর্ষের টোপোগ্রাফিক মানচিত্র বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল। বাংলার সমভূমিতে নদীনালা খাত বদলায়। পাহাড় পর্বত জায়গা বদল করে না। অমন দু’ তিনটে স্থায়ী বিন্দু না পাওয়া গেলে বেস ম্যাপটা বানানো অসম্ভব। তাই ইংরেজ ইঞ্জিনিয়ার সার্ভেয়ররা যুক্তি করে বিভিন্ন জায়গায় টাওয়ার বানিয়ে, সেগুলো স্থায়ী কন্ট্রোল পয়েন্ট ধরে নেয়। এই টাওয়ারগুলোর অবস্থানকে রেফারেন্স ধরে বাংলার ম্যাপ বানানোর কাজ সম্পন্ন হয়। এই সেদিন ২০১৮ সালে ন্যাশনাল লাইব্রেরির ভাষা ভবনে এর দু’শ’ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান হল। ইংল্যান্ডের** বেলফাস্ট ইউনিভার্সিটি, আমাদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, এই তিন মাথা ছিল উদ্যোক্তা। এখনও এইসব টাওয়ার, যেগুলো টিকে আছে, স্থানীয় মানুষ যাদের গির্জা বলে, সেগুলোর ছবি আর ইতিহাস দিয়ে একটা চটি বইও প্রকাশিত হয়েছিল। আজ ঐ সুখচর গির্জা সারিয়ে সরকার বোর্ড বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেখাবার জন্য বড়মামাকে পাই না। বড়মামা ফায়ার ব্রিগেডের লাল গাড়ি চেপে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, খুঁজে পাচ্ছি না।
বিটি রোড ধরে বাস চলে আসত আবার পাঁচ মাথার মোড়ে। এবারে কিন্তু আর ঠাকুর দেখা নয়। বাবার মাথায় অন্য ছক থাকত। নবমী সন্ধ্যায় আমরা থিয়েটার দেখতাম। এখন ভাবি, বাবা শত কাজের ফাঁকে ঠিক মনে করে টিকিট কেটে রাখত। নেশাটা কার ছিল? বাবার না মায়ের? আড়বেলেতে তো কখনও অভিনয় সংক্রান্ত আলোচনা শুনিনি। অভিনয় চর্চার তীর্থ ছিল মামার বাড়ি। ছোটো মামা এককালে টালিগঞ্জের স্টুডিওতে সহকারী পরিচালক ছিল। এরল ফ্লিনের রবিন হুড, গানস্ অফ নাভারোন, রোমান হলিডে, মাতাহারি, টাওয়ারিং ইনফার্নো – এমনভাবে ফ্রেম বাই ফ্রেম গল্প বলত, শুনে গুলিয়ে যেত, যেন আমিই দেখেছি সিনগুলো। কার কেমন সাজগোজ, পোষাক, ভ্রূভঙ্গি, চোখের দৃষ্টি, আর ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে কোথায় পার্থক্য – সব বলত। মামা নিজে যাত্রা করত। মায়েরও খুব আগ্রহ ছিল। রেডিওর নাটক নিয়েও বাড়িতে আলোচনা চলত। অজিতেশের ডায়লগ থ্রোয়িং, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্রের যুগলবন্দী – এসব শোনার সময়ে মা বলে দিত, কোনগুলো খেয়াল করতে হবে।
দুর্গাপুজোয়, এক সপ্তমীর রাতে, বিবেকানন্দ রোডের মণ্ডপে মাইকে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনেছিলাম। নবমী রাতে একবার হাতিবাগানের বয়েজ ওন হলে, গিন্নি আর লেডি হোম ম্যানেজারকে নিয়ে মজার নাটক দেখেছিলাম। নামটা মনে নেই। নহবৎ দেখেছি। যে বাংলা পান চেয়েছে, তাকে ভুলো মানুষ কুমড়োর ছক্কা এনে দিচ্ছে, এমনতরো হাজারো হাসির গোলমাল। শেষ দৃশ্যে কান্না ছিল, বেহালায় ‘তোমার হল শুরু ...’ গান বাজছিল। ঐ নাটক দেখতে গিয়েই ক্যানসার রোগটার কথা শুনলাম, যাতে মানুষ বাঁচে না। হলের বাইরে এসেই মাকে ধরলাম।
- মা কুমড়োর ছক্কা কী? কেমন করে রাঁধে?
- শেষে থিয়েটার দেখে রান্না? কুমড়ো খেতে চাস না তো?
- এবার খাব, বল না।
- ঠিক তো?
- আরে বাবা, ঠিক, ঠিক, ঠিক। বল এবার।
- কিছুই না। বাকি চচ্চড়ির মতই নিয়ম খানিকটা। একটু আলাদা। কুমড়োটা চৌকো চৌকো ডুমো করে কেটে নিতে হবে। তবে আমার তাড়াহুড়ো থাকে, তাই একেবারে কিউব কাটি না। চৌকো, কিন্তু পাতলা কাটি, ভাজতে সুবিধে। আর কুমড়োটা মিষ্টিকুমড়ো হতে হবে অবশ্যই। তবে একেবারে পাকা কুমড়ো আমার ভালো লাগে না। রান্নার পর গ্যাদগ্যাদে হয়ে যায়। কাঁচা কুমড়োয় স্বাদ ভালো হয়।
- কাঁচা কুমড়ো মানে হলুদ নয়?
- না এটাও হলুদ, তবে কাঁচা আর পাকার হলুদের শেডের পার্থক্য আছে। বাবার সঙ্গে যখন বাজারে যাবি, খেয়াল করে দেখে নিবি।
- আচ্ছা, তারপর?
- ডুমো করে ছোটো ছোটো আলু কাটতে হবে। তবে আলু আর কুমড়োর অনুপাত বুঝে নিতে হবে। আলু যদি বেশি হয়ে যায়, তবে কুমড়োকে আউট করে আলু ছক্কা মেরে দেবে। তুই হেরে যাবি।
- তাহলে কুমড়ো বেশি দিয়ে ফুলটস বল দেব?
- না, কুমড়ো বেশি হলে রান্না ঝরঝরে থাকবে না। পিচে না ছুটে খোঁড়াবে, রান আউট হয়ে যাবে।
- যাঃ তারা, এ তো ভারি মুশকিল।
- একবারে তো কপিলদেব হতে পারবি না। কয়েকবার ঠকে, সমালোচনা শুনে, তবে তো অলরাউন্ডার হবি।
মা হাসে।
- ধুর। তারপর বল।
- এবার কড়াতে তেল গরম করে পাঁচফোড়ন, শুকনো লঙ্কা আর তেজপাতা ফোড়ন দিবি। বেশ গন্ধ উঠলে, কুমড়ো আলু ভালো করে ভেজে নিতে হবে। হাল্কা ভাজায় স্বাদ খুলবে না।
- ভালো ভাজা হল কিনা, বুঝব কি করে?
- আঁচ বাড়িয়ে প্রথমে নাড়বি, তারপর আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিবি। একটু পরে আবার খুন্তি দিয়ে নিচের আনাজ ওপরে করে দিবি। ভাজা হয়ে এলে দেখবি, একটা সুবাস পাবি। কড়ায় আনাজের পরিমাণ কম মনে হবে। মানে, আয়তন কমে আনাজগুলো জরে যাবে। আনাজ কড়ায় দেবার আগে হলুদ মাখিয়ে নেয় অনেকে। না নিলেও অসুবিধে নেই। হলুদ পরে দেওয়া যাবে। কাঁচা রাঁধুনির হাতে হলুদে পোড়া ধরে যেতে পারে। আর নুনটা প্রথমেই দিবি না। একটু ভাজা হবার পর দিবি। নুন দেবার পর আনাজ থেকে জল বেরিয়ে যায়।
- বাবা! অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয় দেখছি।
- অনেক কিছুর ব্যাপার নয়। ধারণা হয়ে গেলে দেখবি থোড় বড়ি খাড়া। রান্নাও তো বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান। নিয়ম, সূত্র, পরিচ্ছন্নতা, শৈলী, ঘরানা সব মিশে আছে।
- বা-বা! তারপর বল।
- ভাজা হবার পর আনাজ অন্য পাত্রে ঢেলে নিতে হবে। এবার কড়ায় যদি বাড়তি তেল থাকে ভালো, নইলে আর এক পলা তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে। তারপর আদাবাটা দিতে হবে, তবে আদাবাটার আগে দুটো কাঁচা লঙ্কা থেঁতো ভালো করে ভেজে নিলে ঝাল বেশি হবে না, কিন্তু স্বাদে-গন্ধে একটা বাড়তি মাত্রা দেবে। তারপর জিরেগুঁড়ো, ধনেগুঁড়ো, হলুদ দিয়ে কষিয়ে নিয়ে ভাজা কুমড়ো আর আলুটা ঢেলে দিতে হবে। স্বাদটা চেখে, নুনটা পরখ করে নিতে হবে। আলু-কুমড়ো-মশলা ভালো করে মিশে গেলে, অল্প জল দিয়ে ঢাকা দিতে হবে । কয়েক মিনিট পর কুমড়ো ও আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে এবং মশলা গায়ে মাখামাখা হয়ে শুকনো হয়ে এলে, অনেকে ঘি, গরম মশলা ও ভাজা মশলা দেয় বটে, আমি একটু অন্যরকম করি। আমার মা যেমন করত।
- সেটা কীরকম?
- ঘি গরম মশলা না দিয়ে, আমি আলাদা করে সর্ষের তেলে হিং ফোড়ন দিই। আর রান্নাটা খুব শুকনো করি না। একটু রসালো রাখি। দেখ, একই রান্নার হাজারো শৈলী থাকতে পারে, কেউ ছোলা দিয়ে কুমড়োর ছক্কা করে। ছোলাটা আগে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর রান্নার মধ্যে ভাজা হয়ে যায়।
- তুমি ছোলা দাও না কেন?
- আমার বাপের বাড়িতে ছোলা দেওয়া হত। কিন্তু তোর বাবা ছোলা পছন্দ করে না, তাই দিই না। কেউ আবার নারকেল কোরা দিয়েও করে। আমি এইভাবে করি। আমার এক বন্ধুর মা আলু না দিয়ে কাজু, কিশমিশ, আমচুর পাউডার দিয়ে এই কুমড়োর ছক্কা করতেন। তবে একটা কথা, আমার রেসিপিতে হিং ফোড়ন সমেত তেল ঢেলে দেওয়ার পর কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে কড়া ঢাকা দিতে হবে। এক মিনিট পর আঁচ বন্ধ করবি কিন্তু কড়া ঢাকাই থাকবে। নইলে ফোড়নের গন্ধ উড়ে যাবে, তরকারির সঙ্গে মিশবে না।
একটু বড় বয়সে নবমী রাতে দেখেছি সাবিত্রী সর্বেন্দ্রের অমরকন্টক। এখনও মনে গাঁথা হয়ে আছে এক একটা সিন। “লেখক, একদিন বনফুলের মালা গেঁথে সোহাগ করে গলায় পরেছিলাম, ফুলগুলো সব অকালেই ঝরে গেল। শুধু মৃত্যুহীন কাঁটাগুলো অবিরত বিঁধে বিঁধে আমায় জানিয়ে দিচ্ছে, এ কাঁটার মৃত্যু নেই, এ আমার অমরকন্টক। আ - মা - র অ-ম-র-ক-ন্ট-ক” – মঞ্চে বলছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। ভেজা চোখে দর্শকাসনে বসে আছি আমি। পাশে বাবা, মা আর বোন। আলোয় মঞ্চের ওপর গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট। উফফ, ভাবা যায় না। একবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি নাটক দেখেছিলাম। সেখানে তিনি পুলিশ অফিসার, স্ত্রীয়ের চরিত্রে লিলি চক্রবর্তী। গঙ্গাজল সিনেমার গল্পের মত অপরাধীর চোখে অ্যাসিড ঢালার প্লট। নামটা মনে পড়ছে না – নীলকন্ঠ কি? স্টার, মিনার্ভা, রংমহল, রঙ্গনা – পরের দিকে গিরিশ মঞ্চ – এই ছিল আমাদের দরবার। বিশ্বরূপা বা প্রতাপ মঞ্চে ‘এ’-মার্কা থিয়েটার হত, তাই সে তল্লাটে আমরা যেতাম না। যা হোক, রাতে নাটক দেখে বেরিয়ে বাইরে খেয়ে আসা হত। সেদিন ঠাকুর না দেখলেও, দুর্গাপুজো আকন্ঠ পান করতাম। পথ আলোয় ভেসে যায়, এক পাড়া ছাড়িয়ে অন্য পাড়ার কাছাকাছি হলে মাইকে নতুন গান শোনা যায়। পুজোর গল্প কি শেষ হয়? এক পুজোর আগে গিরিশ মঞ্চে সায়কের দায়বদ্ধ দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমি এমএসসি পাশ করে চাকরি করি। অফিস কলিগেরা, হবু বর, বাবা, মা, বোন সকলে ছিল দর্শক। ঐ মঞ্চের সামনেই আমার পছন্দসই হবু কর্তার সঙ্গে আলাপ করিয়েছিলাম বাবা মার। পরে কর্তার সঙ্গে দেখেছিলাম সৌমিত্র – কৌশিক যুগলবন্দী টিকটিকি। অনেক বছর পর, মিনার্ভা রেপার্টরিতে আবার কন্যা নিয়ে সপরিবারে সাক্ষী হয়েছি সৌমিত্রবাবু অভিনীত রাজা লিয়রের।
যাক, আবার ছোটবেলায় ফিরে আসি। একটু সন্ধে করে নাটক ভাঙলে, চাঁদনি চকে নিয়ে যেত বাবা। সেখানে সাবিরের মাটন রেজালা খেতাম। পাতলা সোনালি ঝোলে মাংসখণ্ড। সঙ্গে বাটার নান। তাছাড়া আর একটু এগিয়ে ডালহৌসির দিকে বাবার অনেক চেনা ঠেক ছিল। তাই প্রতি বছর বাবা নতুন নতুন খাবারের ঠিকানায় নিয়ে যেত – টিকিয়া ছোলে, চানা বাটোরা, নানারকম চাট বা দক্ষিণ ভারতীয় দোসা, ইডলি, বড়া – এমন সব খাবার প্রথম চেখেছি নবমী রাতে বাবার দৌলতে। মা বলেছিল, বাবা কুমড়োতে দিশি ছোলা পছন্দ করে না, কিন্তু দোকানের কাবলি ছোলা বাবা দিব্যি পছন্দ করত। অতঃপর আর কী, সেদিনের মতো ইতি। আবার বাসে করে রাতে গৃহে আগমন। কর্তিত কদলীতরু হয়ে বিছানায় শয়ন। ঝিলমিল স্বপ্নপথ বেয়ে বিজয়া দশমীতে গমন।
** আয়ার্ল্যান্ডের (সংশোধিত)