কলকাতায় পড়াশোনা, রোজকার জীবন চলত বাঁধা গতে। কিন্তু ছুটিছাটা পড়লে বা অনুষ্ঠান বাড়ি পড়লে আমরা আড়বালিয়ায় গ্রামের বাড়ি চলে যেতাম। আমার ঠাকুমার মেজবোনের সংসার ছিল যদুরহাটিতে। মাসি ঠাকুমা অল্পদিনই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তাঁর এক ছেলে ছিল, বাবার মাসতুতো দাদা, আমাদের তারা-জেঠু। টেলিফোন বিভাগে চাকরি করতেন। তখনকার দিনে, বাড়িতে তো টেলিফোন কারোর ছিল না। তারাজেঠুর ঢাউস ব্যাগে সবসময় একটা কালো ল্যান্ড-ফোনের সেট থাকত। কলকাতায় জেঠু কোনোদিন বাড়িতে এলেই আমাদের তো বিরাট আনন্দ। সেই টেলিফোন নিয়ে খেলা শুরু করে দিতাম। জেঠুকে মানুষ করেছিলেন তাঁর জ্যাঠাইমা। বৃদ্ধা বয়সে তাঁকে আমি দেখেছি। তারাজেঠু তাঁকেই মা ডাকতেন।
আড়বালিয়ায় যখন থাকতাম, আমরা মাঝেমধ্যেই সাইকেল-ভ্যানে করে তারাজেঠুর বাড়ি যেতাম। সে বাড়ির বড় উঠোনে একটা লম্বা পানগাছ ছিল। মাচায় লাউ, শশা, চালে চালকুমড়ো ছিল। মাটিতে কুমড়ো গাছ লতিয়ে ছিল। জেঠিমা ছিলেন সুন্দরী, নাম সুদেবী। একবার বসন্তকালে তারাজেঠুর মেয়ের বিয়েতে আমরা চললাম সদলবলে। ও তল্লাটে যাতায়াত তখন সাইকেল-ভ্যানে। আমরা শুধু ভ্যান বলতাম। কিন্তু দুটো পাওয়া গেল না। একটা ভ্যানে সামনে চালকের দু’পাশে পা ঝুলিয়ে বাবা আর সেজজেঠু। পিছনে পা ঝুলিয়ে মা আর সেজজ্যাঠাইমা। মাঝখানে জড়ামড়ি করে আমি, বোন আর ছোড়দা – সেজজেঠুর বড়ছেলে। দশজনের সবচেয়ে ছোটো ভাই, মানে সেজজ্যাঠাইমার ছোটো ছেলে তখনও জন্মায়নি। আঁধার রাতে উতল হাওয়া কেটে ভ্যান চলেছে। আলো বলতে ভ্যানের সামনে ঝোলানো একটা ছোট্ট টিমটিমে লম্ফ, আমরা বলতাম কুপি।
আকাশে চাঁদ ছিল না, কিন্তু ফুটি ফুটি এত তারা, যে আকাশের কালো দেখা যাচ্ছিল না। বাবা ভ্যানে যেতে যেতে আমাদের আকাশ গঙ্গা দেখিয়েছিল। আগে বাবা সপ্তর্ষিমণ্ডলও চিনিয়ে দিয়েছিল একদিন। বলেছিল সারা বছরই ওঠে, সময় আর দিক বদলায়, তাকে তাকে থাকতে হয়। দেখতে দেখতে কবে আকাশের কোনদিকে তাকাতে হবে, সেটা বুঝে নিতে হয়। ভ্যানে হৈ চৈ করে গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ অন্ধকারে সামনে একটা জটলা মনে হল। রাস্তা বন্ধ। দেখার জন্য বাবা আর সেজজেঠু নেমে গেল, ভ্যানচালকও এগিয়ে গেল হ্যান্ডেল ছেড়ে। আর কী যে হয়ে গেল, দেখলাম ভ্যানের ওপরে যে যেখানে বসেছিলাম, ঠিক তেমনি বসে আছি রাস্তায়। শুধু একটু দূরে দূরে। পিছন ভারি হয়ে, ভ্যান উল্টে গেছে। কোমরে ব্যথা লেগেছে। বোন কেঁদে উঠল। আমারও চোখ ছলছল। বাবা অন্ধকারে এগিয়ে এসে বোনকে কোলে নিল, আর আমাকে চুপিচুপি বলল,
- কালপুরুষ দেখবি?
- কোথায়? (ক্লাস থ্রিয়ের বিজ্ঞান বইতে কালপুরুষের ছবি ছিল)
- ঐ দেখ লুব্ধক।
- চকচকে বাবা।
- ঐ তারাগুলো দেখ, ধনুক।
বাবা ভ্যানে বসিয়ে দিল।
- তোমাকে কালপুরুষ আঁকতে শিখিয়ে দিয়েছি। বাকিগুলো খুঁজে নাও। চারপাশে আছে।
আমি কালপুরুষ কল্পনা করে করে তারা খুঁজছিলাম। ভ্যানটা বাকি রাস্তা পেরিয়ে গেল চুপচাপ। হঠাৎ দেখি বিয়েবাড়ি এসে গেছে।
এর অনেক বছর পর কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পশ্চিম হিমালয়ের কৌশানিতে গিয়ে এমন তারাভরা আকাশ দেখেছিলাম। ছেলেমেয়েরা বন ফায়ার করছিল। আমি একপাশে আকাশ দেখছিলাম। বাবা পাশে ছিল না। কোনো তারা চিনতে পারিনি।
বিয়েবাড়িতে হ্যাজাকের আলো। চিমনির গায়ে অনেক আলোর পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে। একটা ছেলে সকলকে গোলাপ দিচ্ছিল। রাংতা মোড়া, ঝাউপাতা দেওয়া গোলাপ নয়। ছোটো ছোটো ডাঁটি ওলা গোলাপ, একটু আধটু পাতা আর কাঁটা লেগে ছিল। বড়দেরকে বড়, ফোটা গোলাপ দিল। আমায় দিল কুঁড়ি গোলাপ। একটু রাগ হয়েছিল বা। পরে দেখলাম, হাতে হাতে বড় গোলাপের পাপড়ি ঝরে যাচ্ছে, আর আমার কুঁড়ি গোলাপ অটুট রইল। ছোটো ছিলাম তো, সব জায়গায় ঘুরঘুর করা স্বভাব ছিল। একজায়গায় দেখলাম হ্যাজাকের আলোয় মাখা-সন্দেশ গোল গোল করে পাকানো হচ্ছে। দইয়ের হাঁড়ি কাঁথা দিয়ে চাপা দেওয়া। আর কড়া থেকে বড় ছান্তা দিয়ে বোঁদে তুলছে হালুইকর। মাকে দেখালাম। মা বলল ভিয়েন বসেছে, মানে বাড়িতে মিষ্টি বানানো হচ্ছে। সতরঞ্চি নয়, সরু লম্বা টেবিলে খেতে বসলাম। সাদা কাগজ পাতা, তার ওপর জল ছড়ানো। হাওয়া দিলে কাগজ উড়বে না। কলাপাতার পাশে মাটির কটরা, মানে গেলাস। আমারটা ফুটো ছিল। জল পড়ে যাচ্ছিল, তাই একটা দাদা বদলে দিল। লুচি, ছোলার ডাল, সাদা ভাত, ঘি, বোঁটাওলা বেগুনভাজা, ছ্যাঁচড়া, পোনা মাছের কালিয়া, চাটনি, দই, বোঁদে, সন্দেশ – এই ছিল মেনু। সে যুগে খেতে বসিয়ে মোটা নান বা বোগড়া রাধাবল্লভী খাইয়ে মুখ মেরে দেওয়ার কৌশল আবিষ্কার হয়নি। লোকে খানকয়েক ফুলকো লুচি খেয়ে পাতে ভাত নিত। কোনো অসুবিধে হত না।
বেশ রাতেই ঐ সাইকেল ভ্যানে বাড়ি ফিরলাম। নিচে এত আঁধার – মাঠ, গাছ সব যেন অদৃশ্য। আর ওপরে তাকালে তারার আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। একটুখানি কুপির আলোয় আবছা পথের রেখা, চলেছি যেন তারার দেশে। মৃদু একটা হিমেল হাওয়া। বোনকে মা আঁচল দিয়ে ঢেকেছে। আমি বাবার গরম পিঠের কাছে ঘেঁষে বসি। মা আর সেজজ্যাঠাইমা মাঝে মাঝে বিয়েবাড়ির দু’-একটা গল্পগাছা করছে। সব ছাপিয়ে ভ্যানের প্যাডেল করার আওয়াজ, আর কানে তালাধরা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনতে শুনতে ঝিম ধরে। বাবার পিঠে মাথা দিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হই।
আমার ঠাকুমা হেমনলিনীর বাপের বাড়ি আড়বালিয়ার পাশে শুকপুকুরিয়ায়। বিরাট বাড়ি, পুকুর, বাগান। যৌথ সংসার। বড়দাদু, ছোড়দাদু, আর তাদের ছেলেমেয়েরা। বাবার মামাতো ভাইবোন। ও’বাড়িতে আমাদের কাকা, পিসি অনেক। বড় তরফে পাঁচ পিসি সবিতা, অনিতা, সন্ধ্যা, রূপম, মধুমিতা আর দুই কাকা, শৈলেন আর ধনঞ্জয়। ছোটোতরফে তিন পিসি – অমিতা, গীতা, সুরূপা আর ছয় কাকা – বিপ্রদাস, কুমারেশ, সুজয়, অজয়, সুব্রত, দেবব্রত। এত লোকজন, কাজেই কিছুদিন পরপরই ও বাড়িতে কারুর না কারুর বিয়ে লাগত। আর নেমন্তন্ন হলেই আমাদের মজা। বাবার মামার বাড়ি বলে কথা। ও’বাড়ি সেকালে বাদুড়িয়ার একমাত্র সিনেমা হলের মালিক ছিল। বাবার অনেক ছোটোবেলায়, মানে দশ বছর বয়সে ঠাকুমা মারা গিয়েছিলেন। তাই মামার বাড়িতে মা-মরা ভাগ্নে বলে বাবার খুব আদর ছিল। আমরাও তার ভাগ পেতাম।
বড়দাদুকে আজও যেন পষ্টো দেখি। সাদা ধুতি পরে চৌকির ওপরে বসে আছেন। মাথায় চকচকে টাক। কিন্তু ধারে ধারে কোঁকড়া সাদা চুল। সাদা গোঁফের তলায় মিষ্টি হাসি। ছোড়দাদুকে দেখিনি, তিনি বাবার কিশোরবেলায় চলে গেছেন। তবে দুই দিদা ছিলেন ছোড়দিদা রেণুকাবালা আর বড়দিদা নির্মলাবালা। বড়দাদু ছিলেন বাদুড়িয়া মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান, তখনকার দিনে ও তল্লাটের ডাকসাইটে কংগ্রেসি নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী। পুরো বসিরহাটেই স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল ইতিহাস আছে। ছোড়দাদুর রেশন দোকানের ডিলারশিপ ছিল, কিন্তু তখনকার দিনে বলা হত কন্ট্রোলের দোকান। কাকারা ঐ দোকান চালাতেন। গল্প শুনেছি, ছোড়দাদুর ছিল রান্নার নেশা। সে গ্রামে অষ্টপ্রহর সংকীর্তন হোক বা কংগ্রেসের সভা, রান্না খাওয়ার দায়িত্ব নিতেন ছোড়দাদু। তাঁর চলে যাবার পর দাদুর ছেলেরা সেই ধারা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
যাই হোক, শুকপুকুরে খাওয়া দাওয়ার সংস্কৃতি ছিল বেশ জম্পেশ। ও’বাড়ি গেলেই অনেকটা করে তালের ফোঁপল পেতাম। বিয়েবাড়িতে সে’যুগের তুলনায় বেশ বাহারি খাওয়াদাওয়া হত। মাছের সঙ্গে খাসির মাংস হত, মিষ্টিতে বোঁদে, দই না হয়ে, রাজভোগ আর আইসক্রিম হত। বিয়েবাড়িতে ঢুকলে সরবত দিত। লুচির সঙ্গে ডাল না হয়ে, বাহারি আলুরদম হত। ঝুরো আলুভাজা হত। শেষে মিষ্টি মশলার পান থাকত। আমি মাছ এলেই হাত নাড়তাম। কাঁটা বাছতে পারি না। দু’ হাত দিয়ে কাঁটা বেছে নাকাল হই। তাই খালি ডাল নিতাম। ওটাই নিরাপদ। সেজজেঠু অট্টহাসি হেসে বলত, এ মেয়ের মেছোর ঘরে বিয়ে হবে। পরে অবশ্য এ’কথা সত্যি হয়েছে।
ফেরার সময়ে ভ্যান থাকত না। হেঁটে ফিরতাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে সব গাছগুলোই শ্যাওড়া গাছ মনে হত। মেঠো পথ দিয়ে চলতে চলতে মাঝেমাঝেই মোটা গাছের শিকড়ে হোঁচট খেতে হত। সবার হাতে তো আলো থাকত না। দু’ একজনের হাতে টর্চ, তাও আবার একটানা জ্বলে না। যতক্ষণ টিপে থাকা যায়, ততক্ষণ আলো। অগত্যা চাঁদের আলোতেই পথ চলতে হত। আমি বাবার হাত ধরে যেতাম। ঘন ঝুপসি গাছ এলে চোখ বন্ধ করে হাঁটতাম। কারণ চাঁদের আলোয় বড় গাছের ছায়া আরও ঘোর হয়ে ঘিরে ধরত। আর যখন নাগচৌধুরীদের বিশাল সিংহওলা গেটের পাশ দিয়ে যেতাম, তখন তো আর তাকানোর কোনো প্রশ্নই ছিল না। কারা যেন সিংহের হাঁ মুখে একটা ছোটো হলুদ বাল্ব জ্বালিয়ে দিত। তার আলোয় গেটের মাথায় চার কোণে চার আবছা প্রহরী দাঁড়িয়ে থাকত। গেটের গায়ে খোদাই করা ছিল ‘এক টাকা’। বাবা বলত, একমণ চালের দাম যখন একটাকা ছিল, সেই ইংরেজ আমলে ও’ গেট তৈরি হয়েছে। আমি বয়সে দশ বছরের বড় মেজদাদাকে একবার বলতে গিয়েছিলাম এসব কথা। মেজদাদা গম্ভীর হয়ে বলেছিল,
- ঠিক বলেছিস, রাত বাড়লেই ঐ সিংহ জ্যান্ত হয়ে যায়। আর চারজন ইংরেজ সৈন্যও নেমে আসে। তারা পুরো আড়বালিয়ায় টহল দেয়। ঐজন্য কলকাতা থেকে কোনো ছোটো ছেলেমেয়ে গ্রামের বাড়ি এলে রাতে একা পথে বেরোতে নেই। সকালেও কোনো বাচ্ছা যদি একা বেরোয়, ওরা চিনে রাখে। সুবিধেমতো ধরে নিয়ে যায়। অনেক ওপরে তো, বহুদূরে দেখতে পায়।
- ধরে কোথায় নিয়ে যায়?
- ও মা, চোখ বুজে থাকিস নাকি? উল্টো দিকে এক রাত্তিরের বাড়ি দেখিসনি? ইট বার করা অত বড় দালানকোঠা। ছাদ ঢালাইয়ের সময়ে সূর্য উঠে গেল। তাই আর হল না। সেই থেকে ওখানে অন্ধকারে তেনারা সভা করেন। নাম করতে নেই। ও’বাড়ির অত্তো থাম, বারান্দার অলিগলি, কত সুড়ঙ্গ আছে জানিস? হুঁঃ, বলে ধরে কোথায় নিয়ে যায়। কেউ জানে না, ও’সব সুড়ঙ্গের ওপারে কি আছে।
- পু, মানে পুলিশ নেই? থানা কি অনেক দূরে?
- পুলিশ (মেজদাদার বড় চোখ রসগোল্লার মতো আরও বড় হল)? সিংহের সঙ্গে পুলিশ? অদৃশ্য হয়ে ঘাড় মটকালে পুলিশের ক্ষমতা আছে কিছু করার?
অকাট্য যুক্তি। তাছাড়া মেজদাদা ভালো গান করে, পুজোয় বেরনো নতুন গান, আধুনিক, সিনেমার, সব গানের কথাগুলো জানতে পেরে যায়। বললেই খাতার পাতায় পুরো গানটা মন থেকে লিখে দেয়। কোনো কিছু দেখে লিখতে হয় না। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়মহলে ওর কত সুনাম। তাছাড়া এখানে থাকে। ও কি আর না জেনে বলছে?
সকালে অবিশ্যি ওসব কথা সবসময়ে মনে থাকে না। কেউ যখন দেখেনি, আমি অনেকবার বটতলার পুকুর পেরিয়ে একা একা ঘুরেছি। আমায় সিংহরা চেনে। তাই দূর থেকে ঐ গেটের আভাস পেলেই চোখ একেবারে টাইট বন্ধ, আর বাবার হাত যত জোরে ধরা যায়, চেপে ধরতাম। জানি সিংহ এলেও বাবা লড়াই করবে, আমায় কিছুতেই ছাড়বে না। তবু আমার তো হাত আলগা করলে চলবে না। কেউ বুঝতে পারত না, আমি চোখ বুজে বাবার হাত ধরে পাড়ি দিই সাত সমুদ্র তেরো নদীর পথ।
অন্ধকারে হাত ধরে থাকার এই অভ্যেস অবচেতনে থেকে গেছে – এটা জানলাম অনেক পরে। একবার কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে মহাকাল পর্বতের অমরকণ্টকে ফিল্ড সার্ভেতে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যেবেলা ছেলেমেয়েদের হোটেলে রেখে আমি আর সহকর্মী বল্লরীদি গিয়েছিলাম, স্থানীয় মন্দিরের সেলস কাউন্টারে – যদি স্থানমাহাত্ম্য নিয়ে পুরাণের গল্পের বই পাওয়া যায় – সেই খোঁজ করতে। হেঁটে ফিরতে হবে, হঠাৎ লোডশেডিং। পুরো পাহাড়, বিশ্ব-চরাচর যেন এক অখণ্ড অন্ধকারের অস্তিত্ব। আমার চেতনা দুলে গেল। বেশ কয়েক মূহুর্ত পর যেন কোন প্রান্ত থেকে বল্লরীদির গলা ভেসে এল। শারদা, হাতটা ছাড়ো এবার, আমি ব্যাগ থেকে টর্চ বের করবো। তখনও মোবাইল ফোনের যুগ আসেনি। তাই টর্চই ভরসা। আজও ডিপার্টমেন্টে ঐ কথা নিয়ে হাসাহাসি হয়। যাই হোক, আজ অর্ধ-শতক পার করে যখন পিছন ফিরে তাকাই, সেই হ্যাজাকের আলো, ভিয়েন, তারাভরা আকাশ, ঝুপসি গাছ, বিয়েবাড়ির ভোজ সব পেরিয়ে বাবার ছোঁয়াটাই বেশি ঘিরে ধরে।