গুরুচণ্ডালি ব্যক্তিগত কুৎসা ও ক্লেদ বন্ধ করতে চায়না। সুতরাং, তাদের কাছে আমার কোনো প্রত্যাশা আর নেই।
কয়েকজন আমাকে জানিয়েছে তারা এই কারণে গুরুচণ্ডালিতে লেখা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি লেখা বন্ধ করবোনা। আমি আইনজীবী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি।
________________________________
এখানে দুদিন আগে নিউ ইয়র্কে একটা বাড়ি দিনের আলোতে ভেঙে পড়ে গেলো। এরকম বাড়ি আমেরিকায় হাজার হাজার আছে। যে কোনো সময়ে ভেঙে পড়তে পারে। কিন্তু কেউ এই আমেরিকার কথা জানেনা।
আমি যখন "আমেরিকা স্বপ্নপুরী না হত্যাপুরী?" বইতে আমেরিকার আসল চেহারার কথা লিখেছিলাম, আমেরিকার প্রধান তিন বাণিজ্য (১) যুদ্ধ, (২) ড্রাগস্ এবং (৩) সেক্স ইন্ডাস্ট্রির কথা লিখেছিলাম, পুলিশ ব্রুটালিটি এবং বন্দুক বীভৎসতার কথা লিখেছিলাম, কেউ তেমন পাত্তা দেয়নি।
এখন গণ সাইকোলজি হলো, ট্র্যাজেডির বাজার খুব খারাপ। এখন দরাজ আর ধৃষ্টনাথদের ভাঁড়ামির যুগ। বাজার শুধু অশ্লীল হাসির। এখন আর আছে দুঃখ আছে মৃত্যু গান কেউ গায়না। কারণ, মিডিয়া বলে দিয়েছে, দুঃখ নেই, মৃত্যু নেই। সুতরাং, হাসির বই -- যেমন, পরীক্ষা পাশের বই -- এসব ছাড়া বিক্রিও নেই। অথবা শারদীয় উল্লাস।
আমেরিকা সম্পর্কে কারুর কোনো ধারণাই নেই। কিন্তু সবাই সবজান্তা। মিডিয়া এবং হলিউড বলিউড টলিউড ঢালিউড আমেরিকাকে স্বপ্নপুরী বলে আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। যেখানে সবকিছুই স্বপ্নের মতো। চতুর্দিকে ডলারের গাছে ডলার ঝুলে আছে। ছেঁড়ো আর খাও।
কিন্তু আসলে এদেশের চেহারা ভয়ঙ্কর। কেউ জানেনা।
এমনকি, যে বামপন্থীরা দিবারাত্র আমেরিকার সিস্টেমকে গালাগালি দিয়ে ভাত খেয়েছেন, তাঁরাও আমার বইটা কোল্ড স্টোরেজে পাঠিয়ে দিলেন। কারণ, আমি তাঁদের পার্টির লোক নই, হার্ডকোর কমিউনিস্ট নই, এবং সুতরাং আমার বিশ্লেষণ তাঁদের লাইনে নয়। এবং তাঁদের কথা হলো, হয় তাঁদের লাইনে কথা বলতে হবে, আর নয়তো তুমি শ্রেণীশত্রু।
আগে হলে অন্য "ব্যবস্থা" করতো। এখন বই হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়।
যাই হোক, সর্বক্ষেত্রে আমেরিকার মডেল শুধু যে নিজের দেশের গরিব মানুষের সর্বনাশ করছে তাই নয়, মোদী-জাতীয় লোকেদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সর্বনাশ করছে। তাদের ডেকে এনে রেড কার্পেট সংবর্ধনা দিচ্ছে। কারণ তারা কর্পোরেট আমেরিকার বন্ধু।
একদিকে যুদ্ধব্যবসার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ত্রাসের রাজত্ব চালাচ্ছে, শিশুদের হত্যা করছে, তাদের গ্লোবালাইজেশন নামক আগ্রাসী অর্থনীতি বিশ্বের সমস্ত দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিরোধিতা করলে ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা হবে।
এদিকে আমেরিকায় নিজের দেশে বাড়িঘর ধ্বসে পড়ছে, ব্রিজ ধ্বসে পড়ছে, পাবলিক স্কুল কলেজের জন্যে টাকা নেই, জেলে পচছে লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ। স্বাস্থ্য ও খাদ্যসঙ্কটে মরে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। কোভিডে আজ পর্যন্ত এগারো লক্ষ মানুষ এই "শ্রেষ্ঠ" দেশে টিকিট কেটে ভ্যানিশ।
কেউ জানেনা। বললেও বিশ্বাস করেনা।
বিঃ দ্রঃ -- না আমি আমেরিকা ছেড়ে দেশে ফিরে যাবোনা। প্রায় চল্লিশ বছর এদেশে আছি। আইনসম্মতভাবে। যে দেশে থাকি সেদেশের সিস্টেমের সমালোচনা করা দেশদ্রোহিতা নয়। একে বলে গণতন্ত্র। দেশপ্রেম এটাই।