বাংলার নির্বাচন শেষ হয়েছে। ভোট বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের গণনাকে ভুল প্রমাণ করে আবার ক্ষমতায় এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিবিরোধী মানুষের কাছে গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এইবারের বিধানসভার ফল নিশ্চিত উৎসাহব্যঞ্জক। যদিও বাংলার বিধানসভায় এই মুহূর্তে একজনও বাম বিধায়ক না থাকার বিষয়টি হয়তো বা কাঁটার মতো লাগছে, তবে সেটা অন্য বিতর্কের বিষয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ওই রকম ধাক্কা খাওয়ার পর, এবারের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে এরকম অভূতপুর্ব সাফল্য পেলেন তা নিয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে এই আলোচনা। অনেকেই বলছেন এই জয় ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর ছাড়া সম্ভব হতো না। তাই, প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সংস্থা আইপ্যাক কীভাবে এই বাংলার নির্বাচনে কাজ করেছে, সেটা নিয়ে কথা বলা জরুরি। আজ যখন দেশের প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে এই ধরনের সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলির হয়ে কাজ করছে, তখন এই নিয়ে কথা বলা আরো প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। শোনা যাচ্ছে যে আগামী ২০২৪ সালে যে সাধারণ নির্বাচন হবে সেখানেও প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সংস্থা কাজ করবে। সেই নির্বাচনের জন্য তাঁদের লক্ষ্য কীভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোদি এবং বিজেপির বিরুদ্ধে অন্যতম গ্রহণযোগ্য মুখ হিসেবে তুলে ধরা যায়। কিন্তু তার আগে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন আছে সেখানেই বা কীভাবে এই সংস্থা কাজ করবে তাও দেখব আমরা। এইসব মিলিয়ে জানা প্রয়োজন কীভাবে এই ধরনের সংস্থা কাজ করে।
প্রথমত, প্রশান্ত কিশোরের একটু পরিচয় জেনে নেওয়া জরুরি। মাত্র ৪৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি কী জাদুবলে দেশের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নয়নের মণি হয়ে উঠলেন সেটা না জানলে বোঝা যাবে না, কেন প্রায় সমস্ত দল তাঁর শরণাপন্ন হয়। ২০১১ সালে তিনি প্রথম এই কাজটি শুরু করেন। ২০১২ সালে গুজরাট বিধানসভায় তৃতীয়বারের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে মুখ্যমন্ত্রী বানান তিনি। কিন্তু তাঁর আসল উত্থান ঘটে ২০১৩ সালে। তিনি একটি সংস্থা তৈরি করেন যে সংস্থা নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য পিছন থেকে কাজ করা শুরু করে। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার কলঙ্ক গায়ে মাখা একজন মানুষকে কী করে দেশের সামনে তুলে ধরতে হবে, যাতে মানুষ সমস্ত কিছু ভুলে নরেন্দ্র মোদিকে উন্নয়নের কান্ডারি, বিকাশপুরুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করবে তার সমস্ত পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই সংস্থার পক্ষ থেকে। কীভাবে গুজরাট মডেলের একটা বেলুন দেখানো হবে, কীভাবে গণমাধ্যমে তা নিয়ে কথা বলা হবে, কীভাবে ‘চায়ে পে চর্চা’ করা হবে সেই সমস্ত কিছুর নীল নকসা সাজিয়ে দেয় প্রশান্ত কিশোরের ওই সংস্থা। কীভাবে নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে বড় করে দেখানো হবে, কীভাবে তা গণমাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে, তার জন্য কী কী করতে হবে সব কিছু একেবারে হিসেব করে নিখুঁত পরিকল্পনা করা হয়েছিল। । পরবর্তীকালে বিশিষ্ট সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘নরেন্দ্র মোদি, দি ম্যান, দি টাইমস’ বইটিতে প্রশান্ত কিশোরের ভুমিকার কথা আলাদা করে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব বাড়ে এবং তিনি তখন তাঁর সংস্থার নাম পরিবর্তন করে আইপ্যাক রাখেন।
তারপর বিহার নির্বাচনে বিজেপিকে হারানো, পাঞ্জাব নির্বাচনে কংগ্রেসকে জেতানো, এইরকম বিভিন্ন নির্বাচনে আইপ্যাকের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। একমাত্র ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজয় ছাড়া, তাঁর ঝুলিতে সাফল্যই সাফল্য। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল আশানুরূপ ফল না করার পরে, প্রশান্ত কিশোরকে আনা হয়। অনেকেই তখন ভুরু কুঁচকেছিলেন। প্রশান্ত কিশোর অবাঙালি রাজ্যে সাফল্য পেতে পারেন, কিন্তু বাংলায় সাফল্য পাওয়া মুশকিল বলেই মনে হচ্ছিল। অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছিলেন যে আইপ্যাকের সাহায্য নিতে গিয়ে তৃণমূল এই ভোট হারবে। বিজেপি যেভাবে কোনও সেইরকম শক্তিশালী সংগঠন ছাড়াই, লোকসভায় ১৮টি আসন পেয়েছে, এবার তাঁদের বাংলা দখল শুধু সময়ের অপেক্ষা। কেউ কেউ আশঙ্কা করেছিলেন যে প্রশান্ত কিশোরকে অমিত শাহ নিজে পাঠাননি তো? অমিত শাহ তো চাণক্য, আর যেহেতু বিজেপির সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের কাজ করার ইতিহাস আছে, সুতরাং এটা হতেই পারে, সামনে উনি তৃণমূলের হয়ে কাজ করবেন, আসলে পিছন থেকে বিজেপিরই সুবিধা করে দেবেন। অনেকেই বলেছিলেন সিপিএমের যে বুথভিত্তিক সংগঠন ছিল, এটা তারই একটা আধুনিক রূপ, নতুনত্ব কিছু নেই।
একদিকে তখন তৃণমূলের সংগঠনে ভাঙন শুরু হয়েছে, অন্যদিকে বিজেপি বাংলা দখলের জন্য স্লোগান দিয়েছে- ’১৯ এ হাফ ২১ এ সাফ’। এই সময়ে কাজ শুরু করল আইপ্যাক। প্রথমে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বেশ কিছু বৈঠক করার পরে, ২৯শে জুলাই ২০১৯ সালে প্রথম এলো একটি প্রোগ্রাম যার নাম দেওয়া হল- ‘দিদিকে বলো’, যেখানে বহু মানুষের অংশগ্রহণের টার্গেট রাখা হল। একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বর দেওয়া হলো, বলা হল মানুষের যা কিছু অভিযোগ যেন দিদিকে জানানো হয়। যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলায় দিদি হিসেবেই পরিচিত, তাই ‘দিদিকে বলো’র ব্যানার, পোস্টার, হোর্ডিং-এ সারা বাংলা ছেয়ে গেল। অভুতপূর্ব সাফল্য এল প্রথমেই। দেখা গেল, বিভিন্ন অভিযোগের ফোন আসছে, কেউ সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না, কোনও অঞ্চলে আঞ্চলিক নেতার দাদাগিরির সমস্যা। এরকম আরো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ফোন আসতে থাকলো। ১৩ আগস্ট অর্থাৎ ১৫ দিনের মধ্যে ৫ লক্ষ ফোন এসেছে। যাঁরা এই ফোন ধরতেন, তাঁরা সবাই আইপ্যাকের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের তখন একটাই কাজ, যাঁরা ফোন করছেন তাঁদের সমস্ত তথ্য লিখে রাখা, যেমন- কোন অঞ্চল, কী ধরনের সমস্যার জন্য ফোন করেছেন, ইত্যাদি। এই সকল তথ্য ধরে ধরে বিশ্লেষণ করলে এটা কি বোঝা খুব কঠিন, কে তৃণমূলের সমর্থক, কে বিরোধী পক্ষের বা কে সাধারণ নাগরিক, কিন্তু ভোট দেন? এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলো। যাঁরাই ফোন করছেন, তাঁদের সবার ফোন নম্বর পেয়ে যাচ্ছে আইপ্যাক। এই সময়ে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হলো যে এটা ‘চায়ে পে চর্চা’র অনুকরণে তৈরি একটি প্রকল্প, এতে খুব কিছু নতুনত্ব নেই। সিপিএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা ‘দিদিকে বলছি’ বলে একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামও শুরু করা হল। খুব কিছু ফল দিলো না। এখন প্রশ্ন হলো এই ফোন নম্বর কেন প্রয়োজন? যদি খেয়াল করা যায় এই সময়েই বা তার কিছুদিন আগে থেকেই প্রধান বিরোধী দল বিজেপি একটা মিসড কল মেম্বারশিপের প্রচার শুরু করে। বর্তমানে, আমাদের দেশে, প্রচুর মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন, তাঁদের যদি কাছে যদি নির্দিষ্ট কিছু প্রচার পৌঁছে দিতে হয়, তাহলে হোয়াটসঅ্যাপ একটি অন্যতম মাধ্যম। দু-পক্ষই তাই ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে আগ্রহী। এদিকে, বহু মানুষ যে ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ করে তার প্রতিকারও পেয়েছেন এরকম একটা প্রচার হতে থাকলো। একজন অভিযোগকারীর কাছে যদি সরকারের তরফ থেকে কোনও ফোন আসে, তাহলেই যে অনেকটা কাজ হয় সেটা আইপ্যাক জানে, তাই তারা তৃণমূল এবং সরকারকে দিয়ে এই অভিযোগের বেশ কিছুটা নিরসন করার চেষ্টাও করতে লাগল। এরপর আইপ্যাক তাদের কাছে আসা তথ্যের সংশ্লেষণ করতে শুরু করল। তারপর এলো তাদের দ্বিতীয় প্রজেক্ট- ‘বাংলার গর্ব মমতা’। এটাতেও আবার অনেকে সন্দিহান হলেন, বললেন, বাংলার গর্ব বাংলার মণীষীরা, কী করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই স্থানে বসানো যায়। আসলে আইপ্যাক ততদিনে বাংলার নাড়ি কিছুটা হলেও বুঝতে শুরু করেছে। গ্রামেগঞ্জে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যা জনপ্রিয়তা আছে তাতে বাংলার গর্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারলে সেই জনপ্রিয়তা বাড়ে বই কমে না। কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও এতে নির্বাচনে আখেরে তৃণমূলের লাভই হবে। তারপর করোনার প্রথম সংক্রমণ এবং আম্ফানে বাংলা বিপর্যস্ত হল। তার সঙ্গে এলো স্বাস্থ্য নিয়ে হাহাকার। এবার সরকারের এবং প্রশান্ত কিশোরের পক্ষ থেকে নিয়ে আসা হলো তৃতীয় চমক- ‘দুয়ারে সরকার’ এবং ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প। তাতেও অনেকে বললেন এই সব নির্বাচনী গিমিক। এসব করে কিছু হবে না। তারপর নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পরেপরেই এলো তূণের শেষ তীর – ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। সারা বাংলা একদিন সকালে উঠে ঘুম ভেঙে দেখলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি এবং বাংলার বৈশিষ্ট্য সহ হোর্ডিং, ব্যানার, ফ্লেক্স। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং সামাজিক মাধ্যমে চলতে থাকলো তার প্রচার। বিভিন্ন ছোট ছোট বিজ্ঞাপনী জিংগল যা পৌঁছে যেতে লাগলো সেই প্রথম থেকে সংগৃহীত ফোন নাম্বার গুলোতে। সরকারের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশিত হলো, সরকার পাঁচ বছরে কী করেছে তাও ছড়িয়ে দেওয়া হলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে। উল্টোদিকের প্রচারও যে হয়নি তা নয়, কিন্তু কোথাও যেন এই প্রচার বাকি সমস্ত বিরোধী প্রচারকে পিছনে ফেলে দিল। তারপর বাকিটা ইতিহাস।
আজকের সময়টা তথ্যের সময়, যাঁর কাছে যত তথ্য, তিনি তত বেশি শক্তিশালী। যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্প। তারপর সেই তথ্য সংশ্লেষণ করে, অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে, সমস্যা চিহ্নিত করে, আবার সেই মানুষটির কাছে পৌঁছনোর প্রক্রিয়াটিই এই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা করেছেন এই নির্বাচনের শেষ অবধি। এর পাশাপাশি, নির্বাচনী প্রচারে, কোন নেতা কীভাবে কোন জায়গায় কতটুকু বলবেন, কোন সাংবাদিক সম্মেলনে কোন কথা বলা হবে সেই সমস্ত কিছু আগে থেকে ঠিক করা ছিল, সৌজন্য আইপ্যাক। কোন জায়গায় কে প্রার্থী হবেন থেকে শুরু করে কাকে দলে রাখা উচিত হবে না, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাকে দলে কতটুকু স্থান দেওয়া হবে, সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে এই সংস্থা। আরো অনেক বিষয় হয়তো কাজ করেছে। ‘বিজেপিকে ভোট নয়’ যাঁরা প্রচার করেছিলেন তাঁদের হয়তো অবদান আছে কিন্তু দিনের শেষে আইপ্যাকের ভূমিকা বড় নির্ধারক হয়ে দাঁড়াল। আজকের সময়ে রাজনীতি হয়তো এইভাবেই চলবে যদি না বড় কোনও আন্দোলন তৈরি হয়। সব খেলার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। ফাস্ট বোলিং ফেস করতে গিয়ে আপনি হেলমেট না পরে নামতেই পারেন, কিন্তু টিকে থাকবেন কিনা সেটা আপনাকেই বুঝতে হবে। প্রশান্ত কিশোর জেতার আগেই বলেছিলেন, যে তিনি যদি তৃণমূলকে না জেতাতে পারেন এবং বিজেপি যদি ১০০ আসন পায় তিনি এই কাজটি আর করবেন না। আবার, জেতার পরেও তিনি বলেছেন যে আর তিনি করবেন না। যদিও ইদানীং শোনা যাচ্ছে তিনি সামনের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানোর উদ্দেশ্যে আবার তাঁর কাজ শুরু করতে চলেছেন শীঘ্রই।
এরপরেও আরও কিছু কথা থেকে যায়। আমাদের মতো দেশে যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় সেখানে এই ধরনের সংস্থা কাজ করলে কি কোথাও সেই গণতান্ত্রিকতা ক্ষুণ্ণ হয়? প্রথমত এই ধরনের সংস্থা একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এবং তাঁদের কাছাকাছি থাকা কিছু মানুষ ছাড়া দলের অন্যান্য সদস্যের মতামতকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় না। তা সে নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই হোক বা কীভাবে প্রচার করা হবে এই সব যে কোনো বিষয়ে একমাত্র দলের নেতৃস্থানীয় মানুষ ছাড়া কারো কথার কোনও গুরুত্ব থাকে না এই ধরনের সংস্থার কাছে। যদি কোনও দল সরকারে আছে এবং সেই দলকেই পরের নির্বাচনে জিতে ফিরে আসার লড়াই করতে হচ্ছে, সেই সব ক্ষেত্রে সরকারি উচ্চপদস্থ আমলাদের সঙ্গেও কথা বলে এই প্রশান্ত কিশোরের মতো সংস্থা। আরও যদি খেয়াল করা যায় এই ধরনের সংস্থা খুব বেশি আদর্শগত প্রশ্ন নিয়ে নাড়াচাড়া করে না, এবং মূলত একজন নেতা বা নেত্রীকে ধরে তার প্রচারের কর্মসূচি সাজানো হয়। ২০১৪ র আগে যেভাবে নরেন্দ্র মোদি এবং গুজরাট মডেলকে তুলে ধরা হয়েছিল ঠিক সেই ভাবে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ এবং তাঁর দশ বছরের সরকারের সাফল্যকে তুলে ধরা হয়েছিল। আগামীতে কীভাবে প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর সংস্থা কাজ করবে তা দেখার আগ্রহ নিশ্চিত অনেকের থাকবে, কিন্তু বিরোধী দলের রাজনৈতিক আদর্শকে কোনও রকম বিরোধিতা না করে, শুধু নিজের প্রচার করে হয়তো নির্বাচনে জেতা যাচ্ছে কিন্তু এই ভাবে কি ভারতের মতো দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল অন্য দিকে চালিত হয় না? যেখানে সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই, বরং শুধুমাত্র নির্বাচনে জেতার জন্য কিছু প্রচারাভিযান এবং কিছু স্ট্র্যাটেজি আছে সেখানে কি এই ধরনের সংস্থাকে সর্বতোভাবে সমর্থন করা যায়? কী হবে, তা ভবিষ্যৎ বলবে, কিন্তু রাজনীতির একজন ছাত্র হিসেবে এটুকু বলা যায় যে এঁদের কাজ থেকেও অনেক কিছুই শেখার আছে। তথ্য দিয়ে মানুষের মনকে বুঝে তাকে প্রয়োগে নিয়ে যাওয়াই আজকের রাজনীতির একটা মূল চরিত্র, প্রশান্ত কিশোর সেই চেহারাকে সম্পূর্ণ আয়ত্তে এনেছেন। বিজেপির মত একটি এতো বড় রাজনৈতিক শক্তিকে নির্বাচনে পরাজিত যিনি করতে পেরেছেন, তিনি যে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের শিক্ষক সেটা মেনে নিয়ে তাঁর থেকেও আমাদের শেখা উচিত নয় কি?