শর্ত ১ – এই ছবিটি নিয়ে লিখতে গেলে শ্লেষ এবং ঠাট্টা নয়। এই কারণে যে বাংলা ছবি নিয়ে ঠাট্টা করতে করতে – আমিই করি এবং বেশ করি – শ্লেষটাই একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায় বাংলা ছবি নিয়ে ক্রাইসিসটা বোঝার। এতে একটা ভাবই শুধু ব্যক্ত হয় যে বাংলা ছবিতে ক্রাইসিস আছে, আর একটা ভান তৈরি হয় যে সেই ক্রাইসিসের থেকে আমার দূরত্ব আছে বা আমি সেই ক্রাইসিস থেকে মুক্ত। ‘হেমন্ত’ নিয়ে ঠাট্টা করবো দ্বিতীয় কোনো লেখাতেই। কিন্তু এই লেখায় নয়।
শর্ত ২ – কোনো কলাকুশলীদের হেয় করা নয়; কারণ বিরক্ত হলে হেয় করাটা হয়েই যায়। এই লেখায় অভিনয় ও অন্যান্য ক্রাফট নিয়ে কম লিখবো, ততটাই যতটা আসতে বাধ্য।
অঞ্জন দত্তের ‘হেমন্ত’ এক দিক দিয়ে, বাংলা বা ভারতীয় ছবির নিরিখে, বিরল ছবি – এবং সেটা অঞ্জন দত্তের কিছু অকপটতা থেকেই আসে – ‘হেমন্ত’ ছবির জবাবে ছবি। আমরা ভারতীয় বা বাংলা ছবিতে খুব বেশি ছবির জবাব ছবিতে দেখতে পাইনা, কারণ এখানকার ছবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গা বাঁচিয়ে চলে। অঞ্জনবাবু বিশাল ভরদ্বাজের ‘হায়দার’ দেখে অখুশি হয়েছিলেন, সেটা পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত’ও করেছিলেন, যে লেখার শেষে উনি বলছেন যে “You have set me wondering about my own Hamlet in Bengal”। এভাবে ছবি হওয়াটা সবসময়ে অভিবাদনযোগ্য; একজন পরিচালক যখন অন্য পরিচালকের কাজে অতৃপ্ত হয়ে চিত্রনাট্য লিখতে বসেন সেটা সুস্থ এবং উদ্যমী একটা প্রচেষ্টা বলে আমি মনে করি।
অঞ্জনের সেই লেখাটির বেশিরভাগ পয়েন্টেই আমার মতের অমিল ছিল।‘হায়দার’ আমার পছন্দের ছবি; আর সত্যি বলতে কি ‘হায়দার’ সবাইকে খুশি করতে পারেনি – যারা দ্বিমত পোষণ করেছেন তাদের অনেকের মতামতের প্রতিই আমি শ্রদ্ধাশীল। যেহেতু আমার ওনার সাথে মতে মিলছে না, তাই ওনার জবাবী ছবিটির সাথেও আমার পছন্দের অমিল হবে এটা আগে থেকেই বোঝা যায়। তবে ওনার অপছন্দের কারণের প্রতিও আমার অশ্রদ্ধা নেই। কিন্তু ‘হেমন্ত’-এ যাওয়ার আগে দু’কথা ‘হ্যামলেট’ নিয়ে হোক (‘হায়দার’ প্রসঙ্গ কথায় কথায় আসবে)।
তারকাটা রাজপুত্র
আমার ‘হ্যামলেট’ অবসেশন আছে, যদিও চরিত্রটি আমার সেরকম পছন্দের নয়। গ্লোবালি এবং লোকালি দুটো চরিত্র আছে আর্কেটাইপাল – যাদের আমার বিশেষ পছন্দের না হওয়া সত্ত্বেও যাদের নিয়ে আমার অবসেশন যথেষ্ট। পছন্দের নয়, কারণ চরিত্রগুলি ভদ্রভাষায় বললে ছেলেমানুষ, অভদ্রভাষায় ঢ্যামনা, মাঝামাঝি ভাষায় বালখিল্য। হ্যামলেট ও দেবদাস, এই দুটি চরিত্রের ক্রাইসিসই আমার আদ্যন্ত ছেলেমানুষি মনে হয় – অথচ দুজনের সিচুয়েশনই ভারি ইন্টারেস্টিং। মজার ব্যাপার হল, দুটি চরিত্রই বিশের কোঠায় ছাড়া ভাবা যায়না, অথচ যারা এই চরিত্রে অভিনয় করেন তারা সবাই তিরিশের কোঠায় পৌঁছে করেন। আমার স্বপ্নের হ্যামলেট – সিনেমায় – জেম্স ডিন বা তরুণ ব্র্যান্ডো ছাড়া ভাবতেই পারিনা (এবং দেবদাস অমিতাভ বচ্চন ১৯৭৫-এর আগে)। সেই দিক দিয়ে পরমব্রত ও শাহিদ কাপুর অনেকের চাইতেই বেশি মানানসই কারণ তাদের চেহারায় সেই তারুণ্যের রেশ এখনও আছে (যদিও তারা চরিত্রগুলি পেলেন সেই তিরিশে পৌঁছেই)।
হ্যামলেট চরিত্রটা নিয়ে লিখতে গিয়ে শেক্সপীয়র ঠিক উল্টোটা করলেও আমাকে ‘ব্রেভিটি ...’ ইত্যাদি বলে রাশ টানতে হবেই কারণ প্রচূর কথা বেরোতে পারে। তাই কয়েকটা পয়েন্ট বলেই থামা যাক, আমার মতে হ্যামলেট ও দেবদাস দুজনের ক্রাইসিসের মূলেই আছে একটি ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন – তারা সময়ের আগেই আধুনিক হয়ে গিয়েছিল। দেবদাস শহরে শিক্ষিত হয়ে গ্রামে ফেরে (ফের সব খুইয়ে শহরে ফিরতে হবে বলে), হ্যামলেট বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এলসিনোর ক্যাসেলে ফেরে। কি তফাত হয়? তারা ভাবনায় আধুনিক হয়ে ফের সামন্ততন্ত্রে, একটা সেকেলে, জগদ্দল সিস্টেমে ফেরে যেটা নেহাতই পারিবারীক নয়, এই পরিবার দেশে ক্ষমতায় আছে – সেটা নাটকে বেশ জরুরী।
‘হ্যামলেট’-এর মজাটা হল এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক চিন্তাজগত থেকে এসে ছোকরা এমন পরিস্থিতিতে পড়লো যেখানে সেইসব আধুনিক ইন্টেলেকচুয়াল ভাবনা-টাবনার কোনো মূল্যই নেই; সেক্ষেত্রে তার অবস্থা ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’-র শশীর মতই – এবং তখন তার যে প্রতিক্রিয়ায় বৈকল্য ঘটে - অবাক কান্ড - সেটা হয়ে উঠলো সাংঘাতিক রিগ্রেসিভ। ‘হ্যামলেট’-এ সেটা মিসোজিনি বা নারীবিদ্বেষ – শেক্ষপীর সেই মিসোজিনিকে এমন টানতে টানতে বাড়ান যে সেই বিদ্বেষটাই নাটকের ‘অবজেক্ট’ হয়ে দাঁড়ায়। বস্তুত, এমন মিসোজিনিস্ট টেক্সট খুঁজলে খুব কম মেলে। ছোকরার মেয়েদের নিয়ে সমস্যাটা কি, সেই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য নাট্যকার তার মুখে এমন বাছাই কথা বসিয়েছেন।
হ্যামলেট রাগী, তিক্ত, বিষাদগ্রস্থ, তার শোকযাপন অসমাপ্ত এবং প্রলম্বিত। এখানে তার অবস্থা ‘পুতুলনাচের ...’ শশীর চাইতে খারাপ, কারণ শশীর একটা প্রোজেক্ট ছিল, গাওদিয়া গ্রামের অনাধুনিকতার বিরুদ্ধে একটি জেহাদ আছে তার – কিন্তু হ্যামলেট সেই দিক দিয়েও ঠুঁটো কারণ সে তো আর রাজতন্ত্র, যুদ্ধতন্ত্র, কোর্ট-পলিটিক্সের খোলনলচে পালটে দিতে পারবে না, বিপ্লব এখন’ও সে জানেনা। সে বুঝছে যে এই পচা জগত থেকে তার মুক্তি নেই। আমার পাঠে, তখন সে এই অচেনা জগতটাকেই আত্মস্থ করতে থাকে এবং বাবার রহস্যজনক মৃত্যুর গল্প খাড়া করে একটা প্রতিশোধের ন্যারেটিভ তৈরি করতে থাকে- কারণ জীবন লইয়া কিছু তো করিতে হইবে, তা না হয় প্রতিশোধই হোক। যে প্রতিশোধ নিছক সাইকিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত হলেও তার মধ্যে দেশ উদ্ধার করার অর্থ গুঁজে দেওয়া যায়।
বেচারার মুশকিল হল যে শত্রুকে পরিবারেই চিহ্নিত করতে হয়, নইলে হ্যামলেট ব্রুস ওয়েন থেকে ব্যাটম্যান হয়ে যেত। ব্রুস একদম রিডিকিউলাস উন্মাদনা থেকে সিকিভাগ বেঁচে গেছে কারণ তার বাপ’ও অপঘাতে মরেছে, মা’ও। হ্যামলেটের মুসকিল হল যে মা বহাল তবিয়তে বিদ্যমান, এবং হঠাৎ তার একটি সেক্সুয়াল মাত্রা জুটেছে।
হেমন্ত ভার্সেস হায়দার
অঞ্জন দত্ত ছবিটিকে ফেললেন তার চেনা চৌহদ্দিতে – টালিগঞ্জে। এর ইমপ্লিকেশন জরুরী, পরে বিস্তারিত করবো। কিন্তু প্রথমেই বলে রাখা যে যে পয়েন্টে অঞ্জন তার জায়গায় ঠিক, হ্যামলেট-অবসেসিভ ও দর্শক হিসেবে সেই মূলেই আমার নাপসন্দ – উনি নাটকের প্লটের প্রতি বড্ড অনুগত। উনি স্রেফ প্রেক্ষাপট পালটে, সেই মত মানানসই করে চরিত্রগুলির কিছু বাহ্যিক, কসমেটিক পরিবর্তন করেছেন মাত্র। উনি রিস্ক নেননি। আমার মতে, ‘হ্যামলেট’ অবলম্বন করতে গেলে এই পদ্ধতি খুব একটা বেশি কিছু দেয়না। সেই দিক দিয়ে – হয়তো ওনার বেস্ট প্রোডাকশনেই – উনি বড্ড কনজারভেটিভ।
‘হায়দার’-এর প্রথম রিস্ক ছিল পরিবারটিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেওয়া, হ্যামলেটের পরিবারকে আধুনিক, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত করে দেওয়া। ‘হায়দার’-এর নেক্সট রিস্ক ছিল মূল চরিত্রের ওই মিসোজিনিটি উধাও করা, মনে রাখতে হবে যে এই নারীবিদ্বেষ মানে নেহাতই মায়ের উপর অন্ধ রাগ নয়। এটা বিশাল ভরদ্বাজ কিভাবে করলেন তা নিয়ে পরে বলবো – কারণ সেখানে অঞ্জনের অন্যতম একটি পয়েন্ট আছে।
শেক্সপীয়রে গার্ট্রুড ও ওফেলিয়া অত্যন্ত দূর্বল চরিত্র, তা’ও ওফেলিয়া কিছু ভালো লাইন পেয়ে অমরতা প্রাপ্ত হয়েছে। ‘হায়দার’-এ গাজালা শেক্সপীয়র থেকে অনেক উন্নত হয়ে যায় যখন সে নাটকের শেষে সমস্ত রাশ নিজের হাতে নিয়ে নেয় এবং পুত্রের বালখিল্যতার নাটককে অ্যাবর্ট করে দেয়। এই কান্ডটা ঘটানোর জন্যই অঞ্জনকে বিশালের ছবি তৃপ্ত করেনা – “Why can’t Haider kill and prove the fact that violence is inevitable but not the last word?” – তিনি বলেছিলেন। কিন্তু ‘হায়দার’-এর প্রোজেক্টই তো গল্পটাকে নষ্ট করে দেওয়া এইটা বুঝিয়ে যে নাটকটা আদতে পুরুষদের ছেলেমানুষির গল্প! তাই ক্লডিয়াস/খুররমকে হত্যা করার আর কোনো মূল্যই থাকেনা নাটকে। কাশ্মীরে যারা রাজনীতি করেন তাদের ‘মাদার কাশ্মীর’-এর এই সেক্সুয়ালাইজেশন এবং মায়ের পোশাকের তলে টেরোরিস্ট বম্বারটি ভালো লাগেনি। আসলে কোনোরকম জাতীয়বাদেই মা’য়ের এই চকিত মূর্তি হজম হওয়ার কথা নয়। শেক্সপীয়রে মা যদিও ‘বোন অফ কন্টেনশন’ – কিন্তু লেখক তাকে কোনো এজেন্সি দেননি – কেবল সেক্সুয়ালাইজ করে ছেড়ে দিয়েছেন। যাই হোক, তাও কম নয়, নিরূপা রায়ের যৌনতা থাকলে যেমন গোলমাল হয়, সেটা অন্তত করেছিলেন।
কিন্তু শেক্সপীয়র সেফ খেলেছিলেন। অঞ্জনের গের্ট্রুড তার বদলে বললেন যে তাকে অন্তঃসত্ত্বা করে হেমন্তের পিতা তার ফিগারের বারোটা বাজিয়ে কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়েছিলেন! মাতৃত্বের প্রতি তার চরম বিতৃষ্ণা ছিল। হলটা কি অতএব? ছবিটাই নারীবিদ্বেষী হয়ে গেল – হওয়ার কথা ছিল শুধু হ্যামলেটের। বিশাল যে উন্নতিটা ঘটিয়েছিলেন চরিত্রের – হায়দার ও গাজালার কথোপকথনে কিছু অত্যন্ত বুদ্ধিমান সংলাপ ছিল যা কাশ্মীরের পরিস্থিতির সাথে ইন্টারেস্টিং করেসপন্ডেন্স তৈরি করে, বলা যায় যে গল্পটা কাশ্মীর ছাড়া হবেই না – তার উল্টোদিকে যাত্রা করলেন অঞ্জন, যেখানে চিত্রনাট্যই গের্ট্রুডের প্রতি নৈতিকভাবে জাজমেন্টাল হয়ে গেল না চাইতেই।
কিন্তু ওফেলিয়া? ‘হায়দার’-এ খুব উন্নতি করতে পারেননি বিশাল ও তার চিত্রনাট্যকার বাশরাত পীর। কিন্তু একটি অত্যন্ত ইন্টেলিজেন্ট কান্ড ঘটিয়েছিলেন যা বেশিরভাগ লোকেরই চোখ (আসলে কান) এড়িয়ে যায়। যেখানে সেই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে – কেন হায়দার হ্যামলেট হয়েও সেভাবে মিসোজিনিস্ট নয়।
অঞ্জনের অন্যতম আপত্তি ছিল – “And where the hell is Horatio? ... Horatio sees the Ghost first. Horatio shows Hamlet the Ghost. Horatio is the one who bears witness to the disaster and will tell the story of Hamlet. Hamlet to Horatio before dying; “If thou didst ever hold me in thy heart, absent thee from felicity awhile, and in this harsh world draw they breath in pain to tell my story”
অঞ্জনের ছবিতে তাই হোরেশিও’র উপস্থিতি প্রবল ও জরুরী। যিশু সেনগুপ্তের অভিনয়ের গুণে – আমার মতে সাগ্নিকের সাথেই, শাশ্বত’র পরেই যিশু ছবিতে শ্রেষ্ঠ – সে প্রায় ছবির নৈতিক কেন্দ্র হয়ে যায়। অঞ্জন এখানে শেক্সপীয়রের থেকে চরিত্রটার গুরুত্ব বেশ অনেকটা বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে উনি ‘হায়দার’-এর একটি বড় রিস্ক ও ডিপার্চার বুঝতে পারেননি।
বিশালের সবচেয়ে বড় রিস্ক – ওনার ওফেলিয়ার নাম আরশিয়া। আরশিয়া – কোনো ফোনেটিক রেসোনেন্স পাওয়া যাচ্ছে? অবশ্যই! হোরেশিও! একমাত্র যার সাথে কথোপকথনের সময়ে হ্যামলেট পাগলামির ভানটা করতো না, বরং বলতো যে সে পাগলামিটা ভান করে করছে এবং কেন করছে। আরশিয়া একই শরীরে ওফেলিয়া ও হোরেশিও – সেইজন্যই হায়দার মিসোজিনিস্ট নয়। নাম ছাড়া দ্বিতীয় সূত্র – ঠিক যেমন হোরেশিও প্রয়াত পিতার প্রেতকে হ্যামলেটের আগে দেখেছিল – রুহদারের সাথে মোলাকাত প্রথমে হয় আরশিয়ার। এবং এই নারী হোরেশিও যখন আত্মহত্যা করে তখনই আসলে আমাদের বোঝা উচিত যে এই হ্যামলেটকে নিয়ে বলার মত কোনো গল্প আর ছবিতে অবশিষ্ট থাকবে না।
অঞ্জন হ্যামলেট এবং হোরেশিও-র মধ্যে যে হোমোইরোটিসিজম দেখেছেন তা ওনার ইন্টারপ্রিটেশন হিসেবে ভ্যালিড। কিন্তু বড্ড সহজ। শেক্সপীয়রের নাটকে হোমোইরোটিসিজম আরো আছে, আরো চমকপ্রদ ভাবে। এবং এখানেই বিশাল ও অঞ্জন ধরতেই পারেন না, একটা চরিত্রকে অজরুরী করে তোলেন। একটা সুপ্ত হোমোইরোটিসিজম আছে – হ্যামলেটের তরফে, লেরটেসের প্রতি – লেরটেস, ওফেলিয়ার দাদা, যার সাথে হ্যামলেটের মরণযুদ্ধ হয়। ওফেলিয়ার কবরে ধস্তাধস্তির আগে হ্যামলেট লেরটেসকে দেখিয়ে বলে - That is Laertes, A very noble youth. Mark. তারপর সেই বিখ্যাত ‘চল্লিশ হাজার ভাইয়ের ভালোবাসাও ওফেলিয়ার প্রতি আমার প্রেমকে’ ইত্যাদি বলে, লেরটেসের সাথে মারামারি করে হ্যামলেট হঠাৎ বলে - Hear you, sir! What is the reason that you use me thus? I lov'd you ever. শুধু এখানেই নয়, শেষ অসিযুদ্ধের আগেও একটি লম্বা অ্যাপোলজি দেয় হ্যামলেট, প্রায় বলে ফ্যালে যে তার পাগলামি ভান, ক্ষমা চায় আগের দূর্ব্যবহারের জন্য, বলে দায়ী তার উন্মাদনা, ঢেলে প্রশংসাও করে প্রতিপক্ষের, আর বলে - I'll be your foil, Laertes. In mine ignorance Your skill shall, like a star i' th' darkest night, Stick fiery off indeed. জগত-সংসারের উপর তিক্ত হ্যামলেটের যে লেরটেসের প্রতি বিশেষ সম্ভ্রম আছে তা বোঝা যায়। অসরিকের সাথে কিঞ্চিত ঠাট্টার সুরে হলেও হ্যামলেট লেরটেসকে নিয়ে বলেছিল - I take him to be a soul of great article, and his infusion of such dearth and rareness as, to make true diction of him, his semblable is his mirror, and who else would trace him, his umbrage, nothing more. লেরটেসের সাথে হ্যামলেটের এই যে সম্ভ্রম এবং অনিবার্য ভায়োলেন্সের সম্পর্ক, হ্যামলেটের তার foil হতে চাওয়া – এই ডিটেল বিশালেরও চোখ এড়িয়ে গেছে, অঞ্জনের’ও।
অঞ্জনের সবচেয়ে বড় অর্জন হল ক্লডিয়াস; আমি কে কে মেননকে মনে রেখেও বলছি। শুধু শাশ্বতর অভিনয়ের জন্য নয়, চিত্রনাট্য ঠিক যেভাবে গের্ট্রুডের প্রতি সুবিচার করেনি, সেভাবেই শেক্সপীয়রের প্রায় মাতাল ভাঁড় থেকে অনেক উর্দ্ধে তুলেছে চরিত্রটিকে। কিন্তু এইখানে কিঞ্চিত গোলমাল’ও আছে। শেষে বলছি।
হ্যামলেট – অবলম্বন
হ্যামলেট অবলম্বন করলে নেহাতই প্লটটি অন্য সময়ে, অন্য পরিসরে খাপে খাপ ফিট করে দিলে বেশি কিছু পাওয়া যায় না। যেহেতু নাট্যকার শেক্সপীয়র, তাই প্লটের মধ্যেই জটিল মনস্তত্ত্ব গোঁজা থাকে। কিন্তু সফল অবলম্বন ফিট করানোয় নয়, রিস্ক নিয়ে তফাত তৈরি করার মধ্যে থাকে। শেক্সপীয়র নিজেই একটা বড় ফাঁক রেখে গেছেন। গল্পগুলো ওই যে রোম, ভেনিস, ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ডে ফ্যালা হত, তার নানান কারণ আছে, একটা কারণ এ’ও বটে যে রাজারাজড়ার এরকম কেলেকেচ্ছা গল্প ইংল্যান্ডে ফেললে গর্দান ইত্যাদি যাওয়ার চান্স। তাই ডেনমার্ক বলেও সেই দেশ নিয়ে কিছু না বলাটা ফাঁক রেখে যাওয়া। এইখানেই যিনি অবলম্বন করেছেন তিনি খেলতে পারেন; প্রেক্ষাপট পালটিয়ে, আবার তার মেটাফরিক মূল্য অবিচল রেখেও। বিশালের সবচেয়ে বিতর্কিত রিস্ক কাশ্মীরকে প্রেক্ষাপট করা, যাতে প্রেক্ষাপট এমন জোরালো হয়ে যায় যে প্লটের উপর চেপে বসে, অভিযোগ আসে যে প্লট প্রেক্ষাপটের উপর, একটি ঐতিহাসিক বাস্তবের উপর সুবিচার করছে না। এই সুইসাইডাল রিস্কটি বিশাল নিয়েছিলেন। একটা জ্যান্ত ঘটমান বাস্তব মেটাফরিক হয়ে ওঠে – কিন্তু প্রেক্ষাপট তাও মেটাফরের মূল্য হারায় না – কাশ্মীর প্রতিফলিত হয় গাজালায়, মাতৃপ্রতিম ওপেক সুন্দরীর উপর যুযুধান পুরুষগোষ্ঠীর কর্তৃত্বের লড়াই হয়ে পড়ে গল্পটা, বা কাশ্মীর মেটাফর হয়ে যায় অন্য কোনো আফসপা উপদ্রুত অঞ্চলের।
মুশকিল হল সেই প্রেক্ষাপটটা টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি হলে তার আর কোনো মেটাফরিক মূল্য থাকেনা, টালিগঞ্জ এমনই বদ্ধ, মূল্যহীন একটি পরিসর যে তার কোনো বৃহত্তর অর্থমূল্য নেই। সেই কুয়োয় হেমন্ত মিসফিট ব্যাঙ হয়ে থাকে মাত্র। অতএব ছবিতে হ্যামলেটের ক্রাইসিস নেহাতই অশিক্ষিতদের ফিল্মপাড়ায় একজন শিক্ষিত ফিল্মযুবকের অ্যাঙস্ট হয়ে যায় যার সাথে আইডেন্টিফাই করার জন্য আর বিশেষ কিছু থাকেনা। অর্থাৎ হেমন্তের রাগের সাথে অন্য এক যুবকের – ফিল্ম যে বানাতে চায় না, রাজনীতি করতে চায় ধরা যাক, বা অ্যাকাডেমিক্স করতে চায় – রাগের কোনো সংলাপ ঘটেনা। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে, হেমন্ত যদি মুম্বইয়ের বা হলিউডের প্রেক্ষাপটে হত, গল্পটা দাঁড়াতো না – সেখানকার স্টেট অন্যরকমভাবে রটেন হলেও। এখানে দাঁড়াচ্ছে, কারণ বর্তমান টালিগঞ্জে ভেঙ্কটেশের মোনোপলি, চিট ফান্ডের ফল্গুধারা, কল্পনার দৈন্য ইত্যাদি। কিন্তু 'হেমন্ত' ও হেমন্ত সেই প্রেক্ষিতে আমাদের বিকল্প কিছুর সন্ধান দিচ্ছে কি যার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাদের আবেগ মথিত হবে?
শেক্সপীয়র একটা ফাঁকিবাজি করেছিলেন - Something is rotten in the state of Denmark – (যে সংলাপটি হ্যামলেটের মুখে নয় ইন্সিডেন্টালি) – সেটা বলে কিন্তু একজ্যাক্টলি কেন দেশটি গোল্লায় যাচ্ছে তা আর বলেননি। বড়জোর বুঝি যে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে একটা আক্রমণ আসবে। মৃত রাজার অতৃপ্ত প্রেতটি যে সেই গোল্লায় যাওয়ার ইঙ্গিত বহনকারী, এমনই বলে মধ্যযুগীয় কুসংস্কারাচ্ছন্ন সান্ত্রী। অতএব হ্যামলেট যিনি অবলম্বন করছেন তার অন্যতম কাজ হল সেই রটেননেসটা কি সেটা বলার। কুরুচিকর প্রযোজক দক্ষিনী ছবি রিমেক করছে – এটা ক্রাইসিস? একটা হাউজের মোনোপলি – এটা ক্রাইসিস? তাহলে কিন্তু অবলম্বনটি বাঙ্ময় হয়ে ওঠে না। আর প্রতিবেশী দেশ – এখানে টেরোরিজম, বাংলাদেশ, মাদ্রাসা এনে বিপুল হতাশ করলেন অঞ্জন; প্রায় ইসলামোফোবিক হয়ে গেল এই আপাত-স্মার্ট, দায়সারা রেফারেন্সটি।
যদি ছবিটি টালিগঞ্জের ক্রাইসিস নিয়ে হয়ে থাকে, কিন্তু সেক্ষেত্রে হ্যামলেটের প্রতিও ঈষৎ কপটতা হয়। একটি মূলধারার ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণাকারী একলা যুবকের প্রতি তো আমাদের সহমর্মীতা হওয়ার কথা। কিন্তু হ্যামলেটের প্রতি তো সহমর্মীতা থাকারই কথা না! সে নারীবিদ্বেষী, সে ষড়যন্ত্রকারী, স্কিমার, ম্যানিপুলেটর – সে যে সংস্কৃতির বিরোধীতা করে শেষে আশরীর তাই’ই হয়ে উঠেছিল। হ্যামলেটের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা থাকার কথা না, বরং টেক্সটের তার প্রতি ক্রিটিকাল হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু তার বিদেশে শিক্ষাই যদি তাকে সিনেমাটিক কারেক্টনেসের প্রতিভূ করে দেয় তাহলে এমনটা হবে কি করে? তাহলে তো মৈনাক ভৌমিক’ও কারেক্ট!
শেক্সপীয়রের আমলে স্টেজে যে পরিমাণে লাশ পড়তো – ‘হ্যামলেট’-এ অন্তত নয়টা মনে পড়ছে – তা স্বাভাবিক পরিস্থিতির আধুনিকতায় অসম্ভব প্রায়। কিন্তু একটি ছেলের ব্যক্তিগত মন-চুলকানির ফলে যখন এত লাশ পড়ে তখন তার ওই টিকটিকানিগুলি জাস্টিফায়েড মনে হয় না, এক্সেস থাকে। আমার ‘হেমন্ত’-এ ওই মূল চরিত্রের অবলম্বনে প্রধান আপত্তিটাই হল যে ছবি বা টেক্সট তার প্রতি ক্রিটিকাল থাকতে পারছে না। সে নেহাতই সোশিওপ্যাথ একটি র্যাবেল-রাউজার হয়ে থাকছে। নাটকে যিনি শ্রেষ্ঠতম বুদ্ধিমান তিনি একটা খেলা খেলে দিয়েছেন ন্যূনতম আবেগের, যা সবার হৃদয় ছোঁবে, বুদ্ধিমত্তার অনেক আগে – ওফেলিয়ার মত মিষ্টি মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে, পাগল করে, আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয় সেই ছোকরা জাহান্নমে যাক, এমনই মনে হয় নাটকে। খুব কম পরিচালকই ভাবেন, অঞ্জন’ও ওফেলিয়াকে কোনো মাত্রা দিলেন না, সে নেহাতই প্লটের নাটবল্টু হয়ে রইলো। নাটকে ওফেলিয়ার শেষ যে পাগলামি আছে – যা মূলত চোখে জল আনে – এখানে তা নেই, অতএব প্লটের জটিলতার অধিক কিছু আবেগ তৈরি করেনা।
কেন ক্রিটিকাল হতে পারছে না? কারণ সম্ভাব্য ‘ভালো ছবি করিয়ে’ হিসেবে, স্করসেসের ভক্ত, আল পাচিনোর ভক্ত হিসেবে সে পরিচালক, চিত্রনাট্য, দর্শকদের সিমপ্যাথি কেড়ে নিতে চাইছে। পচা টলিউডে ও মিসআন্ডারস্টুড পরিত্রাতা। এই তাস খেললে আর হ্যামলেটের প্রতি ক্রিটিকাল থাকা যায়না।
প্রশ্ন করা যেতে পারে যে হ্যামলেটের প্রতি ক্রিটিকাল কি হতেই হবে? আমার মতে – হলেই জমে ভালো; আর যেহেতু সে মিসোজিনিস্ট ও দায়িত্বজ্ঞানহীন, তাই হতেই হবে। এমনিতেই চরিত্রটা বুঝতে শেক্সপীয়র আমাদের খুব একটা সাহায্য করেন না। বোধহয় এলিয়ট বলেছিলেন – এবং প্রশংসা করে নয় – যে চরিত্রটা সাহিত্যের মোনালিসা, কিসে যে কামড়াচ্ছে সেটা বোঝা যায় না। কিন্তু এলিয়ট কনজারভেটিভ, নিও-ক্লাসিকাল; পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। ‘হ্যামলেট’ আমাদের কাছে এই জন্যেই প্রিয় যে নাটকটি পারফর্মার-ফ্রেন্ডলি, যেহেতু অনেকটাই ব্যাখ্যা করা নেই তাই প্রতিটি পরিচালক-অভিনেতা জুটিকে হ্যামলেট করার আগে একটা নিজস্ব ‘থিওরি’ তৈরি করে নিতেই হয়। এক্ষেত্রে তাই হ্যামলেটের প্রতি আকর্ষণ ও বিকর্ষণের একটা থিওরি থাকতে হয়।
‘হেমন্ত’-এ পরমব্রত প্রায় তৃপ্ত করে ফেলছিলেন। মাঝে মাঝে তার কিউটনেস বাধ সাধছিলো, কিন্তু আলো ও আলোকচিত্রের সাহায্য নিয়ে তিনি নিজের ওই মিঠেপনার সাথে যুঝছিলেন। মার্কিনি অ্যাক্সেন্টের সিদ্ধান্তটি বেসুর লেগেছে – যদিও তা আউটসাইডার ভাবটি ভালো ফুটিয়েছে – কিন্তু শেষবেশ বাঙালি হ্যামলেটটি সাবলাইম মাত্রা পেলোনা তার কারণ হয়তো পরিচালক-অভিনেতার যুগ্ম থিওরিটি জমলো না।
আমার মতে – আকর্ষণের কারণ হ্যামলেটের ভাষায়। আদ্যন্ত আধুনিক যুবক – তার সংলাপে এমন অবিস্মরণীয় কাব্য, দুনিয়ার প্রতি এমন আপোশহীন তিক্ততা ও শ্লেষ আছে যা অনেকক্ষেত্রে প্লট ছাড়িয়ে বেরিয়ে যায়, এবং ওই আধিক্যই তাকে আর্কেটাইপ করে তোলে। হেমন্তে তা নেই। গুটিকয়েক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ছাড়া সে খালিই মা-বাবা-কাকা নিয়ে তোলপাড় করে। উইটগুলো তেমন জমেনি, কারণ সেখানে ইরর্যাশনাল কম ছিল।
আর বিকর্ষণ? সেটা হল পাগলামি নিয়ে একটা লুকানো তত্ত্ব আস্তিনের নিচে রাখা। হ্যামলেট করলে দর্শকদের আঘাত দিতে হয়। কিন্তু ‘হেমন্ত’ তো প্রতিভাবান সম্ভাব্য চলচ্চিত্রকার হয়ে আগেই সিমপ্যাথি পকেটে রাখতে চায়, সে তো মিসআন্ডারস্টুড হলেও নায়ক থাকতে চায়! সে আর দর্শককে আঘাত করবে কি!
কিন্তু সমব্যাথী করতে চাইলেও হয়না; নষ্ট শিল্পী হিসেবেও নয়। কারণ ক্রাইসিস একটাই – যেটা বাংলা ছবির ক্রাইসিস – হেমন্তের সিনেমা নিয়ে কোনো অন্য ভিশন নেই। টালিগঞ্জের পঙ্কিলতা যে ঠিক কি হতে দিচ্ছেনা, কেন তার সাথে সমব্যাথী হবো – তার কোনো কারণ দেয় না ছবিটি আমাদের কাছে। সে রেনিগেড আর্টিস্ট হতে পারেনা, তার প্রতিভা আমাদের কাছে নেহাতই ইনফরমেশন (এই ছবির ‘মাউসট্র্যাপ’ অত্যন্ত ইনসিপিড)। তাই শেষবেশ ‘প্রেক্ষাপট’ – যা হওয়া উচিত অবলম্বনকারীর তুরুপের তাস – তা’ও কেবল ইনফরমেশন থেকে যায়। আর 'হেমন্ত' হয়ে যায় পারিবারীক স্ক্যান্ডালের গল্প – কেবলই – আর ২০১৬-য় যেমন, তখন'ও, মেটাফরিকাল ভ্যালু না থাকলে গল্পটা আর আকর্ষিত করবে কেন? ‘হেমন্ত’ টালিগঞ্জকে কোনো সাহসী আক্রমণ’ও করতে পারেনা, বরং – ক্লডিয়াস/কল্যাণ নিয়ে যে কথা বলাটা বাকি ছিল – শেষ দৃশ্যে চরিত্রটি টালিগঞ্জের স্থিতাবস্থার একটি অ্যাপোলজিয়া দিয়ে বসে। প্লটসুদ্ধ ছবি চোখে মুখে অন্ধকার দেখে কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেয়ে উবে যায়।
'হায়দার'-এর রিস্কগুলি আখেরে ছবিটিকে উতরেছিল না ডুবিয়েছিল তা নিয়ে তর্ক থাকবে। কিন্তু বিশালের ওই মারাত্মক ডিপার্চারটি অঞ্জনের ভালো লাগেনি – হায়দার খুররমকে হত্যা করতে পারে না। আমি তো আগেই বলেছি 'হায়দার'-এর প্রোজেক্টই ছিল মূল প্লটের নিষ্পত্তিকে বিপর্যস্ত করা, মায়ের ইন্টারভেনশনে। আর একটা পয়েন্ট ভাবুন – সেই ছেলেবেলায় জেনেছি হ্যামলেট procrastinator, সে ভাবে খালি, অ্যাক্ট করতে পারেনা। বিশাল কি করলেন? হ্যামলেটকে সেই সংজ্ঞাতেই ফ্রিজ করে দিলেন। তার অ্যাক্টের আর কোনো মূল্যই থাকলো না। বরং কাকা-ভাইপো একটা ভূতগ্রস্থ পরিবারের অবশিষ্ট হয়ে ঘুরে বেড়াবে উপত্যকাময় যাদের আত্মীয়তার সূত্র হল একজন নারীর প্রতি তাদের প্রেম, যে নারী আর দেশ এখন একাকার হয়ে গেছে রক্তে-মাংসে-বরফে। এই রিস্কগুলো, এই ডিপার্চারগুলো নতুন ইন্টারপ্রিটেশন হয়ে অবলম্বনে মূল্য বাড়ায়। আর অতিরিক্ত আবেগ তৈরি করে। 'হেমন্ত'-এ সেই আবেগ নেই; 'হেমন্ত' বড্ড sane ও যৌক্তিক।
হেমন্ত যে ছবি চায়, সেটা কি ‘হেমন্ত’ নামক ছবিটিই – ফর্মে, মেজাজে, বক্তব্যে, ইচ্ছেয়? তাহলে তো তা প্লটসর্বস্ব, কাব্যহীন একটি সাইকোলজিকাল থ্রিলার, মার্ডার মিস্ট্রির ধাঁচে – নতুন কি? এই ছবিতে কোনো রিস্ক নেই তো! হ্যামলেট-লেরটেস ডুয়েল নেই, গ্রেভডিগার সিন নেই, ওফেলিয়ার শেষ সিন নেই –
হাতে রইলো টালিগঞ্জ। তাতে কারই বা কি এসে যায়, যদি টালিগঞ্জ আগর মিল ভি যায়ে তো কেয়া হ্যায়?