রাজ্যে সম্ভবত আগামী এপ্রিল মাস থেকে সাত দফায় নির্বাচন হতে চলেছে। এই মরসুমে বিভিন্ন সংসদীয় রাজনৈতিক দলের ছোটো-বড়ো নেতারা পরিযায়ী পাখির মতো এ দল থেকে সে দলে যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে। বেশি ভাঙন ধরছে তৃণমূলে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে। অডিও-ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় সারাদিন চলছে মুখরোচক আলোচনা। টিআরপি চড়চড় করে বাড়ছে। এতে একদিকে বিজেপি যেমন বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছে, অন্যদিকে বামফ্রন্ট (মূলত সিপিএম) এবং কংগ্রেস যারপরনাই উৎফুল্ল। কারণ তারা মনে করছে তাদের দগদগে ক্ষতে শীতল প্রলেপ পড়ছে।
বামফ্রন্টের অপশাসনের বিরুদ্ধে 'সত্যিকারের লড়াই' দেওয়ার আওয়াজ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল তৈরি হওয়াতে এ রাজ্যে কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়ে। বামফ্রন্ট আমলে যে সমস্ত কংগ্রেস নেতাকে তরমুজ বলা হত তারাই আবার তৃণমূল এসে ভীষণ সিপিএম-বিরোধী হয়ে যায়। ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের শেষ প্রায় ২০ বছর সিপিএম, নামে কমিউনিস্ট পার্টি হওয়া সত্ত্বেও, যেভাবে আর পাঁচটা বুর্জোয়া আধিপত্যকামী রাজনৈতিক দলের মতো নাগরিকের ব্যক্তিগত জীবনের পরিসরে আধিপত্য কায়েম করতে শুরু করেছিল তাতে মানুষ ভীত কিন্তু মনে মনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় সেই সময়ে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলন, যা মূলত প্রাথমিক পর্যায়ে গড়ে উঠেছিল তৃতীয় ধারার অসংসদীয় রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি ও বিভিন্ন গণবিজ্ঞান সংগঠনের কর্মীদের উদ্যোগে, তা পরবর্তীকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ক্যারিশমার মাধ্যমে হাইজ্যাক করে নেন। রাজ্যের মানুষের কাছে মুক্তির দূত হয়ে ওঠেন। যার ফসল তুলেছিল তৃণমূল, ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে। তৃণমূল একাই ১৮৪ (কংগ্রেস তৃণমূল জোট-২২৭) আসন পেয়ে সরকার গঠন করেছিল। সরকার গঠন হওয়ার পর রাজত্ব চালানোর জন্য প্রয়োজন আরও নেতা, আরও কর্মী। শুরু হল দল ভাঙানো। কংগ্রেস থেকে তৃণমূল আবার কিছু তৃণমূল থেকে কংগ্রেস এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস রাজ্যে ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকল। তবে তার চেয়েও করুণ অবস্থা হল বামফ্রন্টের। বেশ কিছু বিধায়ক ৩৪ বছর ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করার পর ক্ষমতার বাইরে থাকতে না পেরে তৃণমূলে যোগ দেন।
মনে রাখা দরকার ১৯৭২-৭৭ সিদ্ধার্থশংকর রায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে কংগ্রেসের অত্যাচার এবং জরুরি অবস্থার সাঁড়াশি চাপে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্টকে ক্ষমতায় এনেছিল। দলের কলেবর বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষমতায় আসার পর কিন্তু সিপিএমে ঢালাও সদস্যপদ দেওয়া শুরু হয়। যা আগে ছিল বহু মূল্যবান তা হয়ে গেল সহজলভ্য। তখন কংগ্রেস থেকে বহু মানুষ সিপিএমে যোগদান করে দলের কলেবর বৃদ্ধি করলে সিপিএমের ব্যাখ্যায় তা ছিল মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি।
২০১৬-র নির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট জোট গঠন করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে, তাতেও তৃণমূল ২১১ টি আসন পায়। কংগ্রেস ৪৪ এবং বামফ্রন্ট ২৬ টি আসন পায় এবং এই প্রথম বিজেপি রাজ্যে খাতা খোলে ৩ টি আসন পেয়ে। বিজেপির ভোট ২০১১-তে ৪.০৬% শতাংশ থেকে ২০১৬-তে ১০.১৬% হয় অর্থাৎ ৬.০১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তৃণমূলের ভোট বেড়েছিল ৫.৯৮ শতাংশ, কংগ্রেসের বেড়েছিল ৩.১৬ শতাংশ আর বামফ্রন্টের ভোট কমেছিল ১০.১৬ শতাংশ।
ওদিকে কেন্দ্রেও ধাপে ধাপে শক্তি বাড়িয়েছে আরএসএস-এর শাখা সংগঠন বিজেপি। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে নির্বাচন লড়ার জন্যে যখন জনতা পার্টি তৈরি হয় তখন আরএসএস-এর শাখা সংগঠন জনসংঘ জনতা পার্টিতে যুক্ত হয়। বামফ্রন্ট স্বৈরাচারী ইন্দিরা গান্ধীকে পরাস্ত করার জন্য জনতা পার্টিকে সমর্থন করেছিল। ব্রিগেডে জ্যোতি বসুর একপাশে বাজপেয়ী আর একপাশে আদবানির হাত ঊর্ধ্বে তুলে ধরার ছবি সেই সময়ের পশ্চিমবঙ্গের সব মানুষের স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল।
সিপিএমের হয়ত মনে হয়েছিল দেশের তখনকার পরিস্থিতিতে সেটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে তৎকালীন এই জোট আরএসএস-কে সংসদীয় রাজনীতিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত জমি তৈরি করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সিপিএমের প্রথম জেনারেল সেক্রেটারি কমরেড পি সুন্দরাইয়া এই ইস্যুতে দ্বিমত পোষণ করে ১৯৭৫ সালে সম্পাদকের পদ থেকে এবং পলিটব্যুরো থেকে ইস্তফা দেন। তাঁর ইস্তফাপত্রের প্রথম অনুচ্ছেদ ছিল নিম্নরূপ।
"My resignation is due to the fact that the CC majority has decided for joint actions with pro-imperialist Jana Sangh with para military fascist (Storm-trooper like RSS) as its core in the name of fighting emergency which I consider very harmful for our party, both among democratic masses in our country and abroad. We will be getting isolated from the anti-imperialist and socialist forces."
দেশের প্রথম অকংগ্রেসি সরকারে মন্ত্রী হন অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আদবানি। ১৯৮০-তে জনসংঘ জনতা পার্টি থেকে বেরিয়ে আসে এবং আরএসএস নতুন রাজনৈতিক শাখা সংগঠন বিজেপি তৈরি করে। এই সময় থেকেই আরএসএস বিজেপির মাধ্যমে হিন্দুত্বের জিগির তুলে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত এনডিএ-র শরিক হিসেবে বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করে। এই পর্যায়ে তৃণমূলও এনডিএ-র শরিক ছিল। এরপর ২০০৪ থেকে ২০১৪ প্রথম ও দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে কংগ্রেসের দুর্নীতি ও জনবিরোধী অবস্থানের ফলে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নেমে যাওয়ার সুযোগ অত্যন্ত সফলভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় আরএসএস-বিজেপি। ২০১৪-তে মোদীর নেতৃত্বে আবার বিজেপি ২৮২ আসন দখল করে ক্ষমতায় ফেরে। কংগ্রেস মাত্র ৪৪ টি আসন পায়। এরপর ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপি ৩০৩ আসন পায় এবং কংগ্রেসের আসন বেড়ে হয় ৫২। অন্যদিকে বামফ্রন্ট সর্বাধিক ৫৯ টি আসন দখল করে ২০০৪-এ প্রথম ইউপিএ সরকারের শরিক হিসেবে। তারপর ২০০৯-এ দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারে বামফ্রন্টের আসন কমে হয় ২৪, ২০১৪-তে ১২ এবং ২০১৯-এ আসন সংখ্যা হয় ৬। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের ভোট ৭ শতাংশে নেমে যায় এবং বিজেপি ১৮ টি আসন দখল করে। বিশ্লেষকরা বলেন বামের ভোট রামে যাওয়াতেই এই পরিণতি।
এখন প্রশ্ন ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর কানপুরে প্রথম সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জন্ম (রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়। সিপিএম গত বছর শতবর্ষ উদযাপন করেছে, যদিও সিপিআই ১৯২৫ সালের সম্মেলনকেই মান্যতা দেয়) হওয়ার পর থেকে তেভাগা, তেলেঙ্গানা, নকশালবাড়ির মতো ঐতিহ্যশালী কৃষক আন্দোলন, গণনাট্য আন্দোলন ও দেশ জুড়ে সাড়া জাগানো শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস।
উলটোদিকে ওই একই বছর (২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫) আরএসএস-এর জন্ম হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিসেবে। যাদের পরাধীন ভারতে ঘোষিত শত্রু ব্রিটিশ নয়, প্রথম এবং একমাত্র শত্রু মুসলমান। যারা প্রথম থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করে ব্রিটিশ-এর গোলামি করে গেছে। আজ ৯৫ বছর পর এইরকম কলঙ্কজনক বিশ্বাসঘাতকতা ও সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস বহনকারী আরএসএস বিজেপির এই উত্থান। উলটো দিকে গণআন্দোলনের উজ্জ্বল ঐতিহ্য বহনকারী কমিউনিস্ট পার্টির প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণ কী?
অনেক কারণের মধ্যে দুটি উল্লেখযোগ্য কারণ—প্রথমত, ১৯৬৪ থেকে কমিউনিস্ট পার্টি ভাঙতে ভাঙতে শতধাবিভক্ত হয়েছে। উলটোদিকে আরএসএস-এর সদস্য সংগঠনের সংখ্যা শতাধিক। দ্বিতীয়ত, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের সঠিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির ব্যর্থতা। কমিউনিস্ট পার্টি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক শ্রেণি বিন্যাসকেই বিবেচনার মধ্যে এনেছে এবং অন্যান্য সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের ক্ষেত্রে তাদের ব্যাখ্যা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক শ্রেণি বৈষম্যের সমাধান হয়ে গেলে অন্যান্য শ্রেণি বৈষম্যের সমাধান আপনা থেকেই (Spontaneously) হয়ে যাবে। তাই তারা কখনও তাদের কর্মসূচিতে জাতপাত, ধর্মীয় শ্রেণিবৈষম্যকে সম্বোধন করেনি। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা তাদের কর্মসূচিতে প্রাধান্য পায়নি। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া শুরু থেকে নেতৃত্বের স্থান দখল করেছেন উঁচু জাতের হিন্দু পুরুষেরা। সমাজের পিতৃতান্ত্রিকতা ভেঙে বেরোনোরও সচেতন প্রচেষ্টা ছিল না। এই ফাঁক দিয়ে সমাজে বিদ্যমান জাতপাত, ধর্মীয় বৈষম্যকে ব্যবহার করে মনুবাদী সংস্কৃতির বাহক ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দল আরএসএস ৬০ বছর ধরে নিবেদিত ভাবে গ্রামেগঞ্জে নিজেদের জমি তৈরি করে গেছে। এই সময়কালে কমিউনিস্ট পার্টি আরএসএসকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি।
১৯৮৬ সালে প্রথম সারা দেশ জুড়ে আরএসএস-এর বড় কর্মসূচি ছিল রামশিলা পুজো - যার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী, বিতর্কিত বাবরি মসজিদের দরজা হিন্দুদের জন্য খুলে দিয়ে। সারা দেশ জুড়ে মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে উসকে দিয়ে রামশিলা পুজো এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রীরাম নামাঙ্কিত ইট তৈরি করে অযোধ্যায় পাঠানোর এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যেও ভবিষ্যতের বিপদের আন্দাজ করতে ব্যর্থ হয় সমস্ত সংসদীয় ও অসংসদীয় কমিউনিস্ট পার্টি, আর কংগ্রেস ভোটব্যাংক অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যর্থ চেষ্টায় নরম হিন্দুত্বের লাইন নেয়। সেই সময়ে গণবিজ্ঞান সমন্বয় কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ তাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে আরএসএস-এর উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রচার করে। কিন্তু সেই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সমাজজীবনে কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। সারা দেশ জুড়ে এর বিরুদ্ধে কোনো গণআন্দোলন গড়ে না ওঠায় আরএসএস রামমন্দির তৈরিকে পাখির চোখ করে জনমত সংগঠিত করতে থাকে। ১৯৯০ সালে আদবানি গুজরাতের সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত রথযাত্রার কর্মসূচি নেন। সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু পুলিশ পাহারা দিয়ে বিনা বাধায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে যেতে দেন। কিন্তু বিহারে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে লালুপ্রসাদ রথ আটকে আদবানিকে গ্রেফতার করেন। এরপর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ইতিহাসে কালো দিন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাবরি মসজিদকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তখনও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিবাদ কর্মসূচি ছাড়া কোনো ধারাবাহিক গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
২০১৯-এ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বার বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর একেবারে ফ্যাসিস্ট কায়দায় একের পর এক জনবিরোধী পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। ৩৭০ ধারা ও ৩৫ (ক) অনুচ্ছেদ বাতিল, সিএএ, নয়া শিক্ষানীতি, কর্পোরেট স্বার্থবাহী শ্রম আইন ও কৃষি আইন পাস, মানুষের হয়ে কথা বলা প্রতিবাদী মানুষদের ইউএপিএ আইনে গ্রেফতারের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। এই পর্যায়ে সিএএ-র বিরোধিতায় সারা দেশ জুড়ে তীব্র গণআন্দোলন এবং বর্তমান কৃষক আন্দোলন মানুষকে নতুন করে আশা জোগাচ্ছে। এখন বিজেপির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলের দিকে সারা দেশও তাকিয়ে আছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের ফল আগামী দিনে দেশের রাজনীতির দিক নির্দেশ করবে বলেই অনেকে মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র তিনমাস আগে গত ৪ জানুয়ারি কলকাতায় ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ নামে একটি মঞ্চ তৈরি হল। ঠিক হয় ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগান সহ জেলায় জেলায় কর্মসূচি গৃহীত হবে। সভায় উপস্থিত বক্তাদের বেশিরভাগের বক্তব্যে ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপিকে রুখতে ব্যাপক গণআন্দোলনই একমাত্র পথ’ বলে প্রকাশ পায়। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন ‘নো ভোট টু বিজেপি’র পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ যদি প্রশ্ন করে ‘কাকে ভোট দেব?’ তাহলে আমাদের উত্তর কী হবে। উদ্যোক্তাদের তরফে বলা হয় ‘আমরা এখনও সেকথা বলার মতো জায়গায় নেই। আন্দোলন চলতে চলতে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাস্ত করতে গণআন্দোলনই একমাত্র পথ—একথা ঠিক। কিন্তু ৯৫ বছর ধরে চাষ করে যে ফসল আজ তারা তুলছে এবং যখন দেশের সংসদীয় বামপন্থী দলগুলোর এরকম দুর্বল অবস্থা, তখন কিছু প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রতিবাদী মানুষ একজোট হয়ে মাত্র তিনমাসের প্রচার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আরএসএস–বিজেপির অগ্রগতির রথ আটকে দেবেন, এমন চিন্তা অবাস্তব বলেই মনে হয়। নির্বাচন যেখানে দরজায় কড়া নাড়ছে, সেখানে আশু কর্তব্য হওয়া উচিত সেই পথের খোঁজ করা কীভাবে আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করা যায়। কারণ এই নির্বাচনের ফলের উপর আগামীদিনে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা অনেকটা নির্ভর করছে। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলো যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা, বাম-কংগ্রেস জোট, তৃণমূল এবং বিজেপি। এর মধ্যে বিজেপি-বিরোধী মুসলিম ভোট ভাঙানোর জন্য মিম (MIM)-কে ময়দানে নামানো হয়েছে। এইরকম লড়াইয়ে বিজেপি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলেই মনে হয়। লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বিজেপি-বিরোধী ভোট একজায়গায় করার জন্য কিছুদিন ধরে বলছেন আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে প্রথম এবং একমাত্র শত্রু বলে মনে করে লড়াই করার কথা। সিপিএম দীপঙ্কর বাবুর কথায় বিরক্ত। তাদের বিবেচনায় নির্বাচনে প্রধান শত্রু বিজেপি এবং তৃণমূল দুজনেই। তৃণমূলকে হারিয়েই বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে। অর্থাৎ, ধরে নেওয়া যেতে পারে, তাঁরা মনে করছেন, বাম-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা কি তাই বলছে?
এই অবস্থায় আরএসএস-বিজেপি বিরোধী প্রচার আন্দোলন চালানোর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চের তরফে আশু এবং অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। দাবি তোলা উচিত আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে ১:১ লড়াই করার জন্য অন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অর্থাৎ তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলোর মহাজোট তৈরি করতে হবে। বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এই মর্মে একটি দাবিপত্র তৈরি করে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পেশ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য দাবিপত্র প্রদানের কথা ব্যাপক ভাবে প্রচার করতে হবে। প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। বামফ্রন্ট, মূলত সিপিএমকে বুঝতে হবে মহাজোট জিতলে জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে নিলেও তাদের শক্তি আর কমবে না, বরং বাড়বে। আমাদেরও উচিত বিজেপির মতো রাজ্যের আগামী নির্বাচনকে পাখির চোখ করা। সঙ্গে চলুক সিএএ বিরোধিতায়, দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে, শ্রম আইন এবং নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া।
লেখা টা পড়ে সুখ আছে।তবে সব কিছু মনে হয় গুলিয়ে গেলো।
মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী করার মানে বিজেপি ও আরএসএস কে গেঁড়ে বসার বন্দোবস্ত করে দেওয়া। আমার আশ্চর্য লাগে সিপিএমের জমানায় যদি ব্যক্তিপরিসরে নাক গলানো হয়ে থাকে এখন তা হলে কি হচ্ছে? সিপিএমের জমানায় লেখক কখনো ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে চেপেছেন? ৪৫ টাকায় পিঁয়াজ কিনেছেন? হ্যাঁ বাড়ি করতে গিয়ে কার থেকে কিনতে হবে বালি-ইট সেটা বলে দেওয়া হয়েছে লোকাল কমিটির তরফে। চন্দন বসুর ব্যবসা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু নেতা মন্ত্রী কবি সাহিত্যিক অভিনেতা খেলোয়াড় সবাই এরকম চুরিরভাগ নিতে হামলে পড়েনি। কারণ সিপিএম এত চুরি করেনি যার ভাগ নেওয়ার জন্য দলে দলে সুশীল সমাজ লাইন লাগিয়ে বিভীষণ বিভূষণ গলায় ঝোলাবে। কিন্তু সিপিএমের জমানায় অন্তত একটা হলদিয়া পেট্রোকেম হয়েছে যেখানে চাকরি পাওয়ার আশা করেছে লোকে, তার উৎপাদিত এইচডিপিই, এলডিপিই এক্সট্রুডারে চাপিয়ে প্লাস্টিকের মগটা, ব্যগটা বানিয়ে ফেরি করার সাহস দেখিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেনি চপ আর পকোড়া বেচতে। সিপিএমের জমানায় চাকরির বিজ্ঞাপনে দেখতে হয়নি লেখা আছে ' bengali not eligible'। আমি নিজে সিপিএমের জমানায় ডিপ্লোমা পড়েছি ৬ মাসে ১৮০ টাকা ফি ছিল। আর স্কুলে ছিল ৬ মাসে ৩৭ টাকা। এখন শুনি ৫০০০ - ১০০০০ টাকা ফি লাগে পাস কোর্সে পড়তে। এইত গতকাল উত্তরপাড়ার একটা স্কুলে ছাত্রদের আন্দোলনেরফলে ফি ৯০০ টাকা থেকে ৬৪০ টাকা হয়েছে। আন্দোলনটা কিন্তু এসএফআই করেছে। সিপিএমের জমানায় কাটোয়া বর্ধমান বারুইপুর মশাগ্রাম মেচেদা কল্যানী শান্তিপুর লোকালে গুটখাখোরদের, হিন্দিওলা দের বাঁদরামো সহ্য করে বাঙালীকে কোণঠাসা হতে হয়নি। কলকাতার রাস্তায় শুধু হিন্দি বিলবোর্ড - দেখেছেন লেখক? সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা বাংলা সাইনবোর্ডের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। এখন বাংলায় কথা বললে উত্তর আসে বাংলা উংলা নেহি আতা। সিপিএম করেছে এটা? একটাই মেট্রো লাইন আপনাদের কলকাতায় এখনো অবদি পুরো চলছে। ১৯৮৭ তে তৈরি। একই সঙ্গে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্ল্যান হয়। সেটা এখনো তৈরি হয়নি পুরোটা। ট্যানারি সরিয়ে, বইমেলা সরিয়ে আপনাদের কলকাতাকে 'দূষণ'মুক্ত করা - সেও সিপিএমের জমানাতেই হয়েছে। সত্যি বই যা দূষণ করে - গঙ্গাসাগর মেলার ন্যাঙটো সাধুরা হাগছে মুতছে ময়দানে, ফুটপাত থেকে তুলে রেপ করছে - একটুও দূষণ হয়না। তাই বইমেলা ঠেলতে ঠেলতে এবার একদম বন্ধ! সিপিএম করল? করল তো ফারাক্কা থেকে বক্রেশ্বর। দশবছরে নাকি রাস্তা চকচক করছে, বড়লোকের গাড়ি ৩০০ কিমি বেগে ছুটছে। অন্নদাশংকর মনে পড়ে? থাক! সুকান্ত অন্নদাশংকররা তো কবেই সিলেবাসের বাইরে চলে গেছেন। অথচ দিল্লি রোড, যশোররোড, ই এম বাইপাস সর্বত্র রাস্তারদুপাশথেকে গাছ নুয়ে পড়ত, ছায়া দিত মাত্র ১০-১২ বছর আগেও। এখন সব ধাঁ! খাঁ খাঁ কংক্রিট আর তাতে ছলকানো রোদ। উন্নয়ন! বিকাশ! কত কি যে দাঁড়িয়ে থাকে রাস্তায় রাস্তায়। বাজারী মিডিয়া বলত সিপিএম আর আমরা হাসতাম, বলতাম পাগল না সিপিএম, এখন দেখছি মিডিয়ার বাজারী নাচ। বাজারে দাম বাড়ে, মানুষ খুন হয়, লুঠ হয় - এদের কাছে খবর হয় না। শুধু ফুল আর ফুলের বহুবচন।
লেখক ঠিক বলেছেন সিপিএম বিরোধীদের মেরেছে, ফসল জ্বালিয়েছে, পুকুরে ফলিডল দিয়ে মাছ মেরেছে, ভোটে রিগিং ছাপ্পা করেছে। ভিখারী পাসোয়ান, চম্পলা সর্দার, অনিতা দেওয়ান - অত্যাচারিতের নামের লিস্ট শেষ হবে না। গণহত্যার লিস্ট ওশেয় হবে না নানুর, বাসন্তী, হরিহরপাড়া, দিনহাটা, ছোট আঙারিয়া, সিঙ্গুরনন্দীগ্রাম, নেতাই বা আগেকার সাঁইবাড়ি, বিজনসেতু মরিচঝাঁপি- খুব খারাপ করেছে, তবে বিজনসেতুটা ঠিক আছে। ভোট যেমন হত তেমনি হোক, ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে - তারজন্য যা করার করতেই হবে - বেশী আসন বিরোধীরা পেলে তাদের হাত ধরেই তৃণমূল আরএসএস বিজেপি আম্বানি আদানি রামদেব এসে গেঁড়ে বসবে। যেমন এখন এসে বসছে। বরং চেষ্টা করতে হবে বিরোধীদের পতাকার রঙ ও যেন লাল হয়, তারাও যেন খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলে, ধর্ম নিয়ে বাওয়াল না করে।
সঠিক অবস্থান! আমরা ছবছর ধরে এহেন কথা বলে গালিগালাজ খাচ্ছিলাম! এখন প্রচুর কণ্ঠ বাডছে, এটা আশার আলো!
অতি বামদের বস্তাপচা লেখা ।কুজাত আর অতি বামেদের নক্কারজনাক ভূমিকা সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে ভোলার নয় ।এরাই ট্রেন উডিয়ে লোক মেরে ছিল ।এদের সহযোগী পূর্ণেন্দু আর দোলা বা শাওলী সব দিদির লোক হয়ে পয়সা খেয়ে এখন মৌরসীপাট্টা বজায় রাখার নাকি কান্না কাঁদছেন
কেজানে,
একদম ঠিক বলেছেন।
শুধু বিহারে সিপিএম দীপঙ্কর বাবুদের হাত ধরল ক্যান? ৪টে সিট পাওয়ার জন্যে? একটু বুঝিয়ে দেন।
আর মহারাষ্ট্রে বাবরি মসজিদ ভাঙা শিবসেনার সরকার হলেও আপত্তি নেই?
অংক কী কঠিন দাদা!
আরে আপনি সেই লোক জ্বানেশ্বরী মাওবাদীদের কাণ্ড নয় বলে বলেছিলেন ।ক্ষমা খাওয়ার সৎ সাহস আছে?
শিবসেনার হাত কংগ্রেস ধরেছে আপনার কি ?
এলসির পয়সা বন্দো হতেই কমরেডদের ন্যাংটোনাচ শুরু হয়েছিল। একন পুটকি বসিয়ে রাম্নাম করে আবার কটা পয়সা তুলতে চাইচে এর মদ্যে নো ভোট ফোট বলে বাদ সাধা কেন বাপু?
পফুল্ল সেন স্টিফেন হাউজ কিনেচে টাইপ কুতসার জন্যে নামি বেনামি কেউ ক্ষমা চেয়েচে নাকি? ( এরা আবার আনকাল ক্ষমা খায় দেকচি)
তা সিপিএমের পিছেনে আসা কেন ?তারা ৭% নিয়েও শ্রমজীবি ক্যান্টিন চালাচ্ছে । নিজেদের মতো করে মুলো আর রামের বিরুদ্ধে লড়াছে। অন্য দলের সাথে যাওয়ার কি দরকার ?
ভুলভাল,
কদিন আগেও বলেছি, আবারও বলেছি।
ট্রেন ওড়ানো নিইয়ে তখন বলেছিলাম (সেই সময়ের লেখা খুলে দেখুন) বৈজয়ন্তের সঙ্গে-- জ্ঞানেশরী এক্সপ্রেসের কান্ডটি মাওবাদীদের নয় বলে মনে হচ্ছে কারণ তারা করলে করেছি বোলে বড় গলায় ক্রেডিট নেয় যেমন রাজধানীর ক্ষেত্রে নিয়েছিল। তার মানে এটা নয় যে ওই কান্ডকে সমর্থন করতে হবে। ঘটনাচক্রে ওই ট্রেনে আমার ছোট ভায়রা (প্রাক্তন সাবমেরিন কমান্ডার, ছোট শালী এবং তার মেয়েরা) ছিল। পড়ে দেখা যায় যে ওটা মাওবাদীদেরই একটা ফ্রিঞ্জ গ্রুপ করেছে।
তখন ওইপাতাতেই বৈজয়ন্তের কাছে আমি ভুল স্বীকার করি। ভুল কমেন্ট করার জন্যে ক্ষমা চাওয়ার সৎসাহস বরাবরই ছিল, এখনো আছে।
তা আপনি একটু সৎসাহস দেখান না ?
বাবরি মসজিদ ভাঙার স্বঘোষিত হিরো মুম্বাই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্যে শ্রীকৃষ্ণ কমিশনে অভিযুক্ত 'হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানে' র শ্লোগান দেয়া দলের মুখ্যমন্ত্রীকে কোন মার্ক্সবাদী যুক্তিতে সমর্থন করেন? এখানে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের কথায় বিছুটি লাগছে? বিহারে ওর সঙ্গে জোট করে চারটে সিট পেতে সংকোচ হয়নি। আমার কি? এই পাতায় আপনিও লিখছেন আমিও লিখছি এটাই যথেষ্ট।
সবাই নিজের দোষে যাবে। কং গিয়েছে, সিপিএম গিয়েছে, মমতাও যাবে, আগামীতে বিজেপিও যাবে।বাকি সব মায়া।
কিন্তু প্রিয় কম,
যদি থাকে দম,
চালিয়ে যানঃ
আজকে রাম, কালকে বাম,
যাবে ছালা, যাবে আম।।
মিথ্যাচার চালিয়ে যান। সিপিএম মাঠে নামে লড়ছে লড়বে ।বিহার নিয়ে লাফাচ্ছেন আর রাজস্থান বা হান্নান মোল্লা নিয়ে চুপ কেন? বিদেশ বসে দেশপ্রেম দেখানো অতিবামেরা লড়ছে লড়বে
কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্য খুব পরিস্কার, প্রেস কনফারেন্স, ওয়েবনিয়ার ও জনসভা সব জায়গাতেই উনি একটাই কথা জোর দিয়ে বলছেন যে বিজেপিকে আটকাতে হলে লালপতাকার শক্তি বাড়াতে হবে। সিপিএম-আরএসপি-সিপিআই-এসইউসিআই-মালে-রেডস্টার-নিউডেমোক্র্যাসি-এফবি ইত্যাদি লালপতাকার কোনো গোষ্ঠীভেদ উনি করেননি। এমনকি কমরেড বিনোদ মিশ্রর স্মরণসভা বা সংকল্পসভায় উনি একটাই কমিউনিস্ট পার্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন।
তৃণমূলকে ভোটে জিতিয়ে লালপতাকার শক্তি বাড়া সম্ভব নয়- এটা নিয়ে বিতর্কের কোনো সামান্যতম জায়গা নেই। তৃণমূলকে জেতানোর ব্যবস্থা করার জন্য কমরেড ভট্টাচার্যের বক্তব্যের অপব্যবহার হচ্ছে।
যদিও একটা অন্য অঙ্ক এই 'নো ভোট ফর বিজেপি" প্রচারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্যকে অপব্যবহার করে বাংলা গোদীয়াগুলো যেভাবে বামপন্থীদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেছে, এখানেও একই ভাবে "সিপিএম বনাম বাকি সবাই" এরকম একটা খেলা তৈরি করা হচ্ছে এবং এখানেও কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বক্তব্যকে অপব্যবহার করেই জিনিসটা ঘটানো হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে দুটি প্রকল্পই আরএসএস ও বিজেপি কে সুবিধে করে দিচ্ছে। তাহলে এটা সিদ্ধান্ত নিলে ভুল হবে না যে এইএমআইএম এর মত এই নো ভোট ফর বিজেপি ও আসলে বিজেপির তৈরি করা খেলা।
বৃহৎ বাম ঐক্যের জন্য ভোট ফর বিজেপি ক্যাম্পেন চালু করা জরুরি। আশা করি পলিটব্যুরো শীঘ্রই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।
কোনটা মিথ্যাচার?
শিবসেনা লালৃর ছেলে দীপঙ্কর ? মিথ্যাচার? হান্নান মোল্লার পজিটিভ কাজের জন্য বাকিগুলো মিথ্যে? নতুন শব্দকোষ।
তিন তিনটে শ্রম বিরোধী আইন পাস হয়েছে অথচ কথিত শ্রমিকশ্রেণীর পার্টি তার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পথে নামাচ্ছে না এটা মিথ্যে? ঋত্বিক ছায়া বেরা খগেন মুর্মু আরও বিধায়ক তিনো ও বিজেপি গেছে এটা মিথ্যে?
বিদেশে বসে দেশপ্রেম? অতিবাম?
এটা মাইরি মিথ্যাচার।
আমি ছত্তিশগড়ে ও হরিয়ানায়। আর অতিবামবিরোধী উপন্যাস লিখে অনীক ও এবং জলার্ক পত্রিকায় কী পরিমাণ গাল খেয়েছে জানলে আপনিও ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করবেন, মাইরি বলছি।
ধ্যেৎ, ঋত্বিক নয়, ঋতব্রত। টাইপো।
নেতৃস্থানীয় এবং সাংসদ কমরেডের নাম ভুল লেখার জন্যে ক্ষমা চেয়ে সৎসাহস দেখালাম।
কিস্সু হবেনা দাদা ।..সরি ...কামরাদে !! যেদিন থেকে ওই গণতন্ত্র নামক চোরা বালি তে পা দিয়াছি ।..অন্তিম সেদিন থেকে শুরু হয়েছে ! অনেক দিন আগেই কেউ বা করা বলে বলে গলায় রক্ত বের করছিলো """সময় নেই , চলে এসো ""কান দেয় নি কেউ ।..কান দিই নি আমিও !!!রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি কামরাদে ।..ওরা লড়ছে জঙ্গলে ।..জেল এ ।..গ্রাম গঞ্জে ।..লুকিয়ে ।..এগিয়ে ।..কখনো পিছিয়ে ।..ধ্বনি আসছে না কানে ??? শোনো ।..শুনুন ।..শুনি চলুন !! সময় নেই আর !!!
এ অধম এ বিষয়ে টইপত্তরে এট্টা লিখেছে। এট্টু দেখবেন। https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=20216
আমার মতামত মোটামুটি এই। রাজ্য ইলেকশনে -----
-- সিপিএম, কংগ্রেসের হাত ধরবে তার আর কারো হাতে আগ্রহ নাই।
-- কংগ্রেস ভোটের আগে সিপিএম এর হাত, ভোটের পরে তৃণমূল এর হাত ধরতেই পারে। কিন্তু তৃণমূল একাই জেতার সম্ভাবনা ভালো।
-- তৃণমূল এর কারো সাহায্য দরকার নাই, তারা এমনি ই মোটামুটি ভালো ফল করবে বলে মনে করছে। আর যদি মেজরিটি না পায়, পরিস্থিতি / ডিল অনুযায়ী, হয় কংগ্রেস নয় বিজেপির সমর্থন নিয়ে সরকার চালাতেই পারে। তাদের নীতির বালাই কোনদিন ই ছিল না, আপাতত তারাই রাজ্যে প্র্যাগমাটিক প্রশাসক পার্টি।
-- অন্যান্য যারা সেকুলার , বিজেপি বিরোধী আছেন, তারা তৃণমূল বা সিপিএম-্কংগ্রেস কে বেছে নিতে পারেন বা নিজেরা ভোটে দাঁরাতে পারেন। সাধারণ নীতি সম্ভব না, যেখানে যা মনে হবে করবেন। তবে তৃণমূল নিজে থেকে এগিয়ে এসে তাঁদ্দের নেবেন এরকম কোন সম্ভাবনা দেখছি না।
-- বিজেপিকে ভোট দেবে,, দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক অধিকারহীন বাঙালি বা মুসলমানহীন বাংলার স্বপ্ন দেখা লোকেরা। তারা জিতবে না। দুপয়সা করে খাবার সুযোগ সন্ধান, অন্ধ মুসলমান বিরোধীতা আর গন্ডমুর্খামি ছাড়া বিজেপি কে ভোট দেবার আর কোন কারণ অবশিষ্ট নেই। তো সেটা র স্বপ্নতে যাঁরা মশগুল তাঁরা যা খুশি করুন।তাঁদের উদ্যোগ সম্পূর্ণ ব্যার্থ হলেই খুশি হব।
শুধু ব্রিটিশদের দালালি করে আর মুসলমান দের চরম শত্রু ভেবে ৯৫ বছরে ফসল তুলতে পারলো যে দলটা তার প্রধান মূলধন তো উগ্ৰ জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় জিগীর। ভারতবর্ষ তো বহু আগে থেকেই এই দোষে কলঙ্কিত।অত্যন্ত আধুনিক সমাজ ব্যবস্থাতেও স্বৈরাচারী শক্তির অভ্যুদয়ে এইসব কারণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অনিবার্যভাবে সামিল থাকে। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং কুসংস্কার প্রায় মহামারীর মত আজও দিগন্তপ্রসারী! ব্রিটিশ কোনদিনও চায়নি ভারত এর থেকে মুক্তি পাক। বিগত ৭০ বছরের ইতিহাস তো তথৈবচ! আর ভারতবর্ষের বামপন্থী চিন্তাভাবনা আজো তো মনে হয় আঞ্চলিক পর্যায়ে! যাইহোক শিয়রে সংক্রান্তি। এসময়ের মধ্যে কি মহাজোটের যানজট নিরসন হবে! জলে কুমির আছে নিশ্চিত! তাই জলে না নেমে ডাাঙাতে কামড়়া়কামড়িি করলেও সেে উঠে আসবে। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক!
"বামফ্রন্ট, মূলত সিপিএমকে বুঝতে হবে মহাজোট জিতলে জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে নিলেও তাদের শক্তি আর কমবে না, বরং বাড়বে।"
লেখক কি মঙ্গল গ্রহে থাকেন? সিপিএমের পার্টি অফিসে আগুন লাগিয়ে, কর্মীদের ঠেঙিয়ে BJP/RSS কে জায়গা করে দিয়েছে তিনোরা গত প্রায় এক দশক ধরে। এখন নিজেদের বিপদ দেখে এই সব ন্যাকা ন্যাকা কথাবার্তা লেখা হচ্ছে। পব-তে বামেদের উত্থান মানে তিনোদের নিশ্চিত পতন। তাই তিনোরা ক্ষমতায় এলেই আবার RSS -এর হয়ে বামেদের আটকানোর সব চেষ্টা চালিয়ে যাবে। "কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলেই কিষেণজী" হচ্ছে তিনোদের বেঁচে থাকার প্রাথমিক শর্ত।
উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়। যখন কংগ্রেসের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আদ্যন্ত সৎ নেতা চাচার ভোট কেটে তিনোরা দিলীপ ঘোষকে জেতানোর ব্যবস্থা করে দেয়, তখনই বোঝা গিয়েছিল যে তারা হায়্নাদের আসার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে।
এইসব লেখকেরা তখন কোথায় ছিলেন?
এই নিবন্ধের লেখক প্রদীপ বসু কি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ?