এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  বিতর্ক

  • উপনিবেশ, আর্যতত্ত্ব এবং কেশব সেনের ব্রাহ্মসমাজ (৪)

    বিশ্বেন্দু নন্দ
    বিতর্ক | ২২ এপ্রিল ২০২২ | ১৬৬১ বার পঠিত

  • কেশব সেনের ব্রাহ্ম সমাজ (চলছে...)

    ১০০ বছর ধরে চলা সাম্রাজ্যবিরোধী অবিশ্রান্ত গ্রামীণ লড়াই এবং ১৮৫৭য় সেই বিক্ষোভ বিপুলভাবে ফেটে পড়া থেকে সাম্রাজ্যের উদারবাদীরা বুঝতে পারছিলেন, শুধু হাতে গোনা রাজারাজড়াদের বলে আর সাম্রাজ্যধ্বজা টিকিয়ে রাখা যাবে না। ১৮৫৭র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবিরোধী লড়াইতে অগুনতি রাজারাজড়া অংশ নিয়েছেন; ফলে কর্তারা বুঝলেন – শুধু তাদের ওপর আস্থা পেশ করা সাম্রাজ্য রক্ষায় নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। একই সঙ্গে চাকুরি করা, দালালি করা বা সাম্রাজ্যের মান্যতায় নানান উঞ্ছবৃত্তিতে নিযুক্ত ভদ্রবিত্তের মধ্যে প্রশ্নহীন সাম্রাজ্য আনুগত্য থাকলেও, তাদের মানসিকতায় জাতীয়তাবাদের বাড়বাড়ন্তে উদারবাদীরা শঙ্কিত হচ্ছিলেন। কেম্ব্রিজের আধুনিক ইতিহাসের অধ্যাপক জে আর স্টিলি ১৮৮১তে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে আশঙ্কিত হয়ে লিখলেন, “If the feeling of a common nationality began to exist there [in India] only feebly, from that day almost our Empire would cease to exist”। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল পিতৃতন্ত্র এবং কঠোর সাম্রাজ্যিক থাকবন্দি; সাম্রাজ্যের ভিত্তিটাই যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে অনাগত ভবিষ্যতে সাম্রাজ্যজুড়ে আরও বেশি হিংসাশ্রয়ী, আরও গভীর জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটতে পারে এবং এর ফলে সাম্রাজ্যের বিলয়ের আশংকাও উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

    সনিয়া রোজ, ক্যাথেরিন হল সম্পাদিত ‘At Home with the Empire: Metropolitan Culture and the Imperial World’-এ সিটিজেনশিপ এন্ড এম্পায়ার প্রবন্ধে রোজ এবং ম্যাক্লিল্যান্ড বলছেন, উপনিবেশে বিপ্লব প্রচেষ্টা রোখার উদ্যমে ১৮৮০তে ব্রিটেনে সিটিজেনশিপ, নাগরিকত্ব আকছার শব্দ ব্যবহার হচ্ছে সামরিক এবং পিতৃতান্ত্রিক ভাষায় প্রজার জাতীয় এবং সাম্রাজ্য দায়িত্ব বোঝাবার কাজে। ১৮৮০ থেকে লন্ডনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সাম্রাজ্যের ভাষায় প্রজাদের সাম্রাজ্য উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকস্তরের পাঠশালায় সার্বজনীন পড়াশোনা এবং পাঠকক্ষে জাতীয়তাবাদের উন্মেষের পরিকল্পনা ভাবা হল। ১৮৮০র দশকে গ্ল্যাডস্টোনের উদ্যোগে জনপ্রিয় সাম্রাজ্যতত্ত্বের উদারপন্থী ধারাটি বাজারে এলেও ১৮৯০এর আগে জনগণের মানসিকতায় সে তত্ত্ব খুব একটা মান্যতা পায়নি। ডিজরেলির আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদ সাম্রাজ্যের ঘটকদের তীব্রভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে; সাম্রাজ্যের কর্তারা মনে করতে থাকে উপনিবেশের প্রজাদের নানান রাজনৈতিক, জনপ্রিয় এবং শিক্ষা মঞ্চে, তাদের উদ্দেশ্যে আরও পুরুষতান্ত্রিক, রক্ষণশীল মনোভাব প্রকাশ করা দরকার। এই পরিবেশের জলজ্যান্ত প্রভাব দেখতে পাচ্ছি মুলার-মনিয়ের দ্বন্দ্বে। ১৮৮০র দশকে অক্সফোর্ড শিক্ষাঙ্গনে মুলারের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী মনিয়ের উইলিয়ামস প্রাচ্য বিষয়ে উদারপন্থী অবস্থান থেকে সরে গিয়ে মুলারের সেক্রেড বুকসকে আখ্যা দিলেন limp-wristed comparative scholarship হিসেবে এবং ১৮৮৭তে তার কর্মকাণ্ডকে বললেন অপুরুষোচিত শিরদাঁড়াহীন সহনশীলতা ‘আনম্যানলি জেলিফিশ টলারেন্স’।

    সাম্রাজ্য কেন্দ্র মেট্রোপলিটনে রাজনৈতিক পরিবেশের প্রেক্ষিতে কেশবচন্দ্র প্রণীত বিশ্বব্রাহ্মধর্ম ভারত এবং ব্রিটেনের নতুন ধরণের নৈতিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করবে, এই দাবিটি ব্রাহ্মসমাজের সদস্যরা স্রেফ অগ্রাহ্য করলেন এবং কেশবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল – তিনি রানির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে রাজার ঐশ্বরিক অধিকার মান্যতা দিচ্ছেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের কাজকর্মে রানির নিরঙ্কুশ শাসন যুগের সূচনা করছেন – ‘In 1876, with Ananda Mohan Bose taking the lead, the constitutional issue within the Samaj between progressives and Keshub came to a head. Sibnath Sastri, then a Sanskrit teacher at Hare School, as spiritual leader of the progressives also took a leading part in the agitation. Keshub was now being attacked as an advocate of divine right of kings, in which his support of Queen Victoria was linked to his absolutist rule over the Brahmo Samaj’।

    ব্রিটিশ ইউনিটেরিয়ানেরা বরাবরই ব্রাহ্ম সমাজের পাশে ছিল; ১৮৭৭এ দ্য এনকুইরার বলল ব্রাহ্ম সমাজ ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের একমাত্র আশা, ‘the best hope of the future of religion in India’। তবুও সমাজপতিরা কেশবচন্দ্রের প্রতি বিদ্বেষের আঙুল তোলায় তিনি নতুন করে অবস্থান বদল করলেন। ১৮৮০র দশকজুড়ে তাঁর প্রয়াণ পর্যন্ত ক্রমশ কেশবচন্দ্র রাজতন্ত্র নিয়ে অবস্থান আরও কঠোর করবেন। ১৮৮৩এ জানুয়ারিতে কলকাতার অভিজাত বাঙালি এবং ইওরোপিয় ভদ্রমণ্ডলীর উপস্থিতিতে ‘এশিয়াজ ম্যাসেজ টু ইওরোপ’ বক্তৃতায় ব্রিটিশ সরকারের নৃশংসতা বিষয়ে তার বৈদ্যুতিক বক্তব্যে উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলী অবাক হয়ে যান “Whence this plaintive and mournful cry, which so profoundly distresses the patriot’s breast? It seems that a whole continent is writhing beneath the lash of oppression, and sending forth from the depths of its heart a deep wail of woe. It is India that weeps. Nay, not India alone; all Asia cries. Many there are in Europe who hold that Asia is a vile woman, full of impurity and uncleanness. Her scriptures tell lies; her prophets are all impostors; her people are all untruthful and deceitful. Europe has perpetrated frightful havoc among the nations of the East. Europe, why do thy eyes still roll in wild fury and insatiate antagonism, as if bent upon Asia’s total annihilation? Before the formidable artillery of Europe’s aggressive civilization the scriptures and prophets, the language and literature, of the East, nay her customs and manners, her social and domestic institutions, and her very industries have undergone a cruel slaughter. The rivers that flow eastward and the rivers that flow westward are crimson with Asiatic gore”।

    কেশবচন্দ্র ১৮৮০র দশকজুড়ে প্রশাসনে দেশীয়দের আরও বেশি অংশগ্রহণের দাবি – যা তিনি ১৮৭০এও তুলেছিলেন – নতুন করে তুলতে থাকলেও, ব্রিটিশদের থেকে রাজনৈতিক কনসেসন পাওয়ার দাবি থেকে সরে থাকলেন; তিনি মনে করতেন এশিয়া যেকোনো ধর্মনিরপেক্ষ পুনর্মিলন বা রাজনৈতিক চুক্তি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করবে, ‘Any secular reconciliation or political treaty she would altogether repudiate’। এর বদলে তিনি আধ্যাত্মিক জোটের তত্ত্ব তুললেন, যে জোট খ্রিস্টকে সামনে রেখে পতিত মানবতাকে উদ্ধার কল্পে এশিয়া ইওরোপ পরম সৌর্হার্দ্যে হাত মেলাবে; তিনি ভিক্টোরিয়ার দৈবী চরিত্রে নতুন করে আস্থা পেশ করলেন।

    ডেভিড আর্নল্ড বলছেন Orientalist Triptych, প্রাচ্যবাদী তিনছবিতে [প্রাচীন ধ্রুপদী হিন্দু রাজত্বের গৌরবগাথা; সেই গৌরব বর্বর মুসলমান রাজত্বে হাতে ধ্বংস হল; পুরোনো লুণ্ঠিত গৌরবকে ফিরিয়ে আনল ব্রিটিশ প্রজ্ঞা] শুধু যে প্রাচীন ইউনিভার্সালিস্টেরাই আস্থা পেশ করেননি, রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিপিন চন্দ্র পাল এবং ন্যাশনাল পেপারের লেখকেরাও এই ধারণাকে সযত্নে লালিত পালিত করেছেন। অমিয় সেন লিখছেন ১৯১৩য় বিপিন পাল বলছেন জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে শুধু স্বাধীনতার লড়াই জরুরি নয়, ব্রিটিশ সংযোগ রেখে চলাও একইরকমভাবে জরুরি, ‘not only for the furtherance of the case of freedom in India but also for the continuance of the British connection’। কেশবচন্দ্রের যে সব সমসাময়িক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমালোচনা করে প্রশাসনে আরও বেশ ভারতীয়ের অংশগ্রহনের দাবি তুলছেন, তারাও ব্রিটিশ শাসনমুক্তির দাবি করেননি। প্রথম দিকে কংগ্রেসেরও একই অবস্থান ছিল। ফলে মূল শাসকেরা বহু দূরত্বে থাকলেও ব্রিটিশ শাসনে ঔপনিবেশিক ভদ্রবিত্তরা আনুগত্য বিচ্যুত হয়নি। এই পরিবেশেই আর্যতত্ত্বের বিস্তার ঘটে। ডেভিড কফ বলছেন, “the alarming increase of yellow dog racism and cultural imperialism ultimately made a mockery of Brahmo universalism”।

    মুলারের আর্যতত্ত্ব খ্রিস্টিয় মিশনারিরাও অনুসরণ করত। রোমিলা থাপার বলছেন, “Müller’s books were read in India and his views were endorsed in various influential publications, such as John Muir’s Original Sanskrit Texts (1858–1863) and John Wilson’s Indian Caste (1877). Both authors were Christian missionaries and drew attention to the plight of the low castes, oppressed by Brahmins, an oppression which they claimed went back to the Aryan invasions”। আর্যতত্ত্বের মাধ্যমে নিম্নবর্ণের মানুষ বহিরাগত ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে গলা তোলার সুযোগ পেল। জ্যোতিরাও ফুলে লিখলেন, “The invasion of the Aryans was crucial to the creation of segregated groups in the form of castes, where the Aryans were the victorious aliens who kept the indigenous people permanently subordinated”।

    সিপাহি যুদ্ধে ব্রিটিশ নায়ক লর্ড লরেন্সের সঙ্গে কেশবের সম্পর্ক এবং ব্রাহ্মদের ভারতীয় ধর্ম সংস্কারের সংবাদ বরাবরই ব্রিটিশ সরকারি উদ্যমের অঙ্গ হিসেবে প্রচার পেয়েছে। কংগ্রেসে ব্রাহ্মদের অংশগ্রহণ উদারপন্থী এবং যুক্তিবাদী রাজনীতিকদের মধ্যে সেতু হিসেবে দেখা হয়েছে। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ভদ্রবিত্ত পেশাদারেরা ব্রিটিশ প্রভাবে প্রভাবিত হয়েও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গলতিগুলো দেখতে পাচ্ছিল। এই পরিবেশে বিশ্বধর্ম হিসেবে ব্রাহ্মসমাজ খুব একটা গ্রহণ যোগ্যতা পাচ্ছিল না। কোলেট লিখলেন, “It is because we thought so highly of the Brahmo Samaj at one time, and hoped so much from it, that we regret so deeply its fall. At one time its religion was rational, spiritual, and sublime in its simplicity; now it has degenerated into mysticism, absurdity, and ceremonial folly”। কোলেট দুখ করে দ্য ব্রাহ্ম ইয়ারবুকে বলছেন, তিনি দেখছেন কীভাবে কেশব আস্তিকতা থেকে কুসংস্কারে ডুবে যাচ্ছে। ১৮৭৯এ প্রকাশিত কেশবচন্দ্রের নতুন ডিসপেনসেসানে সার্বভৌমের প্রতি আনুগত্যের বাণীটাই জেগে থাকে। কেশবচন্দ্র এবং তার অনুগামীদের ধর্ম আন্দোলন নতুন খাতে বইল কোচবিহারের রাজবাড়িতে তার কন্যা সুনীতি দেবীর বিবাহ আচার সূত্রে। বিবাহে কেশবচন্দ্র যে আচার আচরণ অনুসরণ করলেন, সেটি তার ১৮৬০ এবং ১৮৭০ দশকের আদর্শের বিপরীত। অনেকেই মনে করলেন ব্রাহ্মধর্মের প্রগতিশীলতার মৃত্যু ঘটল। আবার দল ভাঙল; ১৮৭৮এর মে মাসে তৈরি হল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ।

    ইতিমধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং আর্যতত্ত্ব নির্ভর জাতভিত্তিক রাজনীতি কেশবচন্দ্রের অসামান্য মনোহারিণী জনপ্রিয়তায় ভাটার টান লাগতে থাকে। দেবেন্দ্রনাথের উদ্যোগে হিন্দু ব্রাহ্ম জাতীয়তাবাদ প্রচারে নবগোপাল মিত্রের ন্যাশনাল পেপার ১৮৬৫ থেকে কেশবের বিশ্বায়িত ধর্মের বিরুদ্ধে কামান দাগাও ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রবিত্তের মধ্যে কেশব অনুগামিতায় চিড় ধরায়। সে সময় নাকি কেশবচন্দ্রের রানি-আনুগত্যের বিরুদ্ধে বলা হত, “Brahmos welcome the co-existence of Brahmo principles with governance, but oppose all governance in conflict with Brahmo principles”।

    কেশবচন্দ্র ব্যর্থ, ভারতভূমিতে আর্যতত্ত্ব আজও সচল

    ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বর প্রতি কেশবচন্দ্রের প্রশ্নাতীত আনুগত্যকে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সুফল হিসেবে শোকেস করেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অতীন্দ্রিয় রহস্যময়তার প্রতি কেশবচন্দ্রের তীব্র আকর্ষণে মিশনারিরা বিরক্তি প্রকাশ করলেও, তারা মনে করত ভারতবর্ষে খ্রিস্টধর্মপ্রচারের উপযুক্ত হাতিয়ার হতে পারেন একমাত্র কেশবচন্দ্রই। তিনি প্রাচ্যবাদীদের বন্ধু ছিলেন। কিন্তু প্রাচ্যবাদের তাঁকে দেওয়ার মত কিছু ছিল না। তিনি যখন খ্যাতির চরম শিখরে, সে সময় তিনি এক পারিবারিক ঘটনা সমাজ ঘটনায় রূপান্তরিত করবেন। ব্রাহ্ম সমাজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ঘটনাটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ঘটনাটি হল কোচবিহারের রাজবাড়িতে কন্যা সুনীতি দেবীর বিয়ে। তৎকালীন সময়ের ভদ্রবিত্ত অভিজাত পরিবারের হাইপ্রোফাইল বিয়েতে ঘটকালি করে ব্রিটিশ সরকার। তারা এই বিবাহে গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে এটা জেনেই যে এই ঘটনায় সাম্রাজ্যের অন্যতম সঙ্গী কেশবচন্দ্রের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে এবং তার প্রণীত সংস্কার আন্দোলন পথচ্যুত হবে।

    ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঔপনিবেশিক প্রকল্প সফল করতে দেশিয় রাজারা বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা নানাভাবে নানান আঙ্গিকে সাম্রাজ্য সঙ্গী হয়েছে। যদিও ব্রিটিশেরা তাদের রাজত্বের বাইরে থাকা রাজত্বগুলোকে স্বাধীন দেশীয় রাজত্ব হিসেবে অভিহিত করত, কিন্তু রাজাদের স্বাধীনতার মাত্রা আমরা আন্দাজ করতে পারি কোচবিহার রাজত্বকে আধুনিকতায় ভূষিত করতে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিকটু সভ্যতাবিস্তারী উদ্যমে এবং সে সময়ের প্রগতিশীল ইংরেজি শিক্ষিতদের মধ্যে অগ্রগণ্য কেশবচন্দ্র সেনের কন্যা সুনীতি দেবী, কোচবিহারের রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুরের বিবাহে ব্রিটিশ সরকারের অগ্রণী ভূমিকায়।

    বহুকাল ধরেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আদিবাসী কোচবিহার রাজের নানান মন্দ এবং পিছিয়ে পড়া পরম্পরা নিয়ে অসন্তোষ জাহির করছিল। ব্রিটিশ সরকারের প্রাকাশ্য দাবি ছিল কোচবিহার রাজপরিবার সেসব আচার আচরণ ঝেড়ে ফেলে আধুনিক আচার-আচরণ গ্রহণ করুক। তারা কোচবিহারের রাজা এবং রাজত্বকে আধুনিক আদবকায়দায় সজ্জিত করতে, মহলের মহিলাদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এক শিক্ষকের অধীনে প্রথমে বেনারসের ওয়ার্ড ইন্সটিটিউট, পরে পাটনার বাঁকিপুর কলেজে এবং উচ্চতর সভ্যতার শিক্ষা অর্জনে লন্ডনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। রাজপরিবারের সদস্যদের চাপ দিয়ে আধুনিক হয়ে ওঠার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ সভ্যতা প্রসারে আধুনিকতা প্রকল্পের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল কেশব কন্যা সুনীতি দেবীকে কোচবিহার রাজপরিবারে বিয়ে দেওয়া।

    ব্রিটিশ সরকারের বিবাহ ভাবনার প্রথম আঁচ পান কেশবচন্দ্রের ছায়াসঙ্গী প্রতাপচন্দ্র মজুমদার। ১৮৭৭এ প্রতাপচন্দ্র সংবাদ পান ব্রিটিশ সরকার কোচবিহারের রাজার বিবাহের জন্যে তাঁর নেতা প্রগতিশীল ব্রাহ্ম কেশবচন্দ্রের কন্যা সুনীতি দেবীর কথা ভেবে রেখেছে। তারা মনে করছিল কোচবিহারে আধুনিকতা বিস্তারে সুনীতি দেবী বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাই কোচবিহার রাজত্বে দীর্ঘস্থায়ী আধুনিকতা আনার প্রকল্পের ব্রিটিশদের প্রথম চয়েস হল কেশব কন্যা।

    ব্রিটিশ সরকার এবং কেশবচন্দ্রের মধ্যে বিবাহ বিষয়ে চিঠি চালাচালি চলতে থাকে। ১৮৭৮এর ২২ জানুয়ারি ডেপুটি কমিশনার ডাল্টন কেশবচন্দ্রকে জানান রাজা মার্চে ইংলন্ডে পড়াশোনা করতে যাবেন, লেফটনেন্ট গভর্নরের একান্ত ইচ্ছা, রাজা ভারতবর্ষ ছাড়ার আগে বাগদানের শুভ কাজ সেরে ফেলা যাক। সমস্যা হল, তখনও কেশব-কন্যা ১৪ নয়, বরের বয়স ১৫। বিবাহে প্রগতিশীল কেশবচন্দ্রের আপত্তির কথা আন্দাজ করেই ডাল্টন জানালেন, একটা ছোট অনাড়ম্বর গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠান আয়োজন করে নিয়মরক্ষার বিবাহ হবে। এটি বাগদান অনুষ্ঠানমাত্র। ব্রিটিশ সরকার চায় উভয় পক্ষ বিবাহের বয়স হলেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোক। সরকার পক্ষ থেকে কেশবচন্দ্রকে বোঝানো হল এই বিয়ের ফলে প্রথমে কোচবিহারে পরে ভারতবর্ষজুড়ে ব্রাহ্মবাদের আলোক বিস্তার ঘটবে।

    সরকার পক্ষ যাই বোঝাক, কেশবচন্দ্রর অনুগামীরা জানতেন, এই বিবাহে সরকারি চাহিদার আচার আচরণ মান্য করতে প্রকাশ্যে তাদের নেতার মুখ পুড়বে এবং এর ফলে তার বিপুল অনুগামীর কাছে তিনি ছোট হবেন। কেশবচন্দ্রের বিরোধী পক্ষই নয়, কেশব অনুগামীদেরও অভিযোগ তার কন্যার রাজবাড়িতে বিবাহটি কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে লড়াই করে প্রণয়ন করা ১৮৭২এর ব্রাহ্ম বিবাহ আইন উল্লঙ্ঘন করেছে – বিবাহে বর-বউ দু’জনের বয়স আইন অনুমোদিত নয়। ছায়াসঙ্গী প্রতাপচন্দ্র মজুমদার লিখছেন, কেশবচন্দ্র আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতেন, ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি তাঁর ক্ষতি চায় না। কেশবচন্দ্র মুলারকে চিঠি লিখে জানালেন এই বিবাহ ঈশ্বরের প্রত্যাদেশ, তার ব্যক্তিগত সুখ, দুঃখ, ইচ্ছে, অনিচ্ছে এ বাবদে তুচ্ছ; তিনি নিমিত্তমাত্র – অন্ধকারে নিমজ্জিত একটা গোটা রাজ্যে প্রগতিশীল সংস্কার আনয়ন করা তার আশু কর্তব্য, “saw the finger of God in all the arrangements, trials and struggles in connection with the marriage. A whole kingdom was to be reformed, and all my individual interests were absorbed in the vastness of God’s saving economy or in what people would call public good”।

    কেশবচন্দ্রের অন্যান্য অনুগামীর মত ছায়াসঙ্গী প্রতাপচন্দ্র বুঝতে পারছিলেন এই বিবাহে তাঁর নেতার মুখ পুড়বে এবং ব্রাহ্ম আন্দোলন দ্বিধাবিভক্ত হবে। ১৮৮০তে মুলারকে প্রতাপচন্দ্র লিখলেন বিবাহের জন্যে কেশবচন্দ্র যে সব সংস্কার-আচার উদ্ভাবন করছেন, তাতে তিনি যারপরনাই উদ্বিগ্ন। ১৮৮১তে মুলারকে লিখলেন কেশবচন্দ্র ক্রমশ আধ্যাত্মিক পথে চলে যাচ্ছেন, তিনি জনগণের ইচ্ছে-অনিচ্ছে আন্দাজ করতে পারছেন না, “he may completely elude popular understanding, and that is why I am the more anxious to explain him”। ১৮৮৩তে প্রতাপচন্দ্র বলছেন, জনৈক উচ্চপদস্থ আমলা তাকে কেশবচন্দ্রের মৃত্যুর পরে বলেছেন কেশব হাজারো মানুষকে প্রভাবিত করতে পারতেন; কিন্তু প্রকাশ্যে রাজনীতি তুচ্ছ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত থেকে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া ব্রিটিশদের শ্রদ্ধা কুড়িয়েছে।

    শেষ বয়সে জনগণের ওপরে কেশবচন্দ্রের প্রভাব দৃশ্যত কমে গিয়েছিল; কিন্তু তাঁর প্রচারিত আর্যতত্ত্বের রেশ থেকে যায় বুদ্ধিজীবি মহলে। আর্যতত্ত্ব প্রচারে কেশবচন্দ্রের প্রভাব আজও এতটাই গুরুত্বের, যে এখনও প্রায় প্রত্যেকটি জাতীয় দল/গোষ্ঠীকে আর্যতত্ত্ব বিষয়ে নির্ণায়ক অবস্থান নিতে হয়। কেশবচন্দ্র সেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এখানেই। মুলার শেষ বয়সে তার সন্তান আর্যতত্ত্বকে নিয়ে কী করবেন সে বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি, যদিও তিনি আর্যতত্ত্বের দাঁত-নখ উপড়ে দিয়েছেন। আধুনিককালে আর্যতত্ত্বের অন্যতম প্রধান প্রবক্তার দ্বিধা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আর্যতত্ত্বকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার, সাম্রাজ্যের স্বার্থ রক্ষার কাজে সফল হয়েছে। খ্রিস্ট মিশনারি, প্রাচ্যবাদী এবং ব্রিটিশ সরকার যৌথভাবে মুলার এবং কেশবচন্দ্রের এই তত্ত্বকে তাদের স্বার্থে বারংবার ব্যবহার করেছে।

    সিদ্ধান্ত

    আমরা শুরুতেই বলেছি যে কোনও তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা নির্ভর করে সেই তত্ত্বের একজন/দল উদ্ভাবক তত্ত্ব প্রচারক এবং তত্ত্ব গ্রহীতার সমভাবে তত্ত্বকে মেনে নেওয়ার অবস্থান থেকে। আর্য আগ্রাসন তত্ত্ব – যাকে আমরা আর্যতত্ত্ব নাম দিয়েছি – তার সঙ্গে জুড়েছিল মূলত প্রাচ্যবাদীরা, সমাজসংস্কারক ব্রাহ্ম সমাজ, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণে খ্রিস্টিয় মিশনারিরা এবং সর্বোপরি সাম্রাজ্যস্বার্থী ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। প্রাচ্যবাদীরা প্রাথমিকভাবে আর্যতত্ত্বকে রূপদান করেছে। একে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সহায়তায় বিশালাকার করে গড়ে তোলেন প্রাচ্যবাদী শিক্ষক ম্যাক্সমুলার, তিনি আজও বিশ্বজোড়া আর্যতত্ত্বের প্রধান মুখ। আর্যতত্ত্ব গ্রহীতার মধ্যে ছিলেন দেশিয় নানান ধরণের সামাজিক সংস্কারের আন্দোলনে জুড়ে থাকা গোষ্ঠী, যাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্ম সমাজ। আর্যতত্ত্বটি ভারতবর্ষে ছড়ানোর কাজ করেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী এবং অবশ্যই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে খ্রিস্ট মিশনারিরা। ঠিক হোক ভুল হোক, আর্যতত্ত্ব নির্ভর করে মুলার এবং কেশবচন্দ্র যৌথভাবে ইওরোপ এবং এশিয়ার নষ্ট হয়ে যাওয়া ভ্রাতৃত্ববোধ ফিরিয়ে আনার উদ্যম নিয়েছিলেন। এর ফায়দা অধিকাংশ সময় তুলেছে ব্রিটিশ সার্বভৌম ক্ষমতা এবং কখনও কখনও খ্রিস্ট মিশনারিরা। আর্যতত্ত্বের আদৌ কোনও ভিত্তি আছে কিনা এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। কিন্তু একথা স্পষ্ট বলা যায় উনবিংশ শতাব্দে আর্যতত্ত্ব ভারতভূমিতে প্রচারিত হয়েছিল কোনও রকম প্রতিবাদ ছাড়াই।

    যদিও ব্রাহ্ম সমাজের শুরু করেন রামমোহন রায় এবং দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কিন্তু একে আন্দোলনের গণরূপ দেন কেশবচন্দ্র সেন। তার নেতৃত্বে অন্যান্য ব্রাহ্ম নেতৃত্ব আর্যতত্ত্বের অন্যতম উদ্গাতা মুলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে কেশবীয় আর্যতত্ত্বকে ভারতভূমিতে প্রথিত করার উদ্যম নিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে আর্যতত্ত্বর সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রত্যেকটি স্বার্থ গোষ্ঠী তাদের দলের স্বার্থপূরণে আর্যতত্ত্বকে তাদের মত করেই ব্যবহার করেছে।

    দেবেন্দ্রনাথ আত্মজীবনীতে লিখছেন ইয়ং বেঙ্গল কেশবচন্দ্র খ্রিস্টধর্ম বিষয়ে মধ্যপথ অনুসরণ করেছিলেন। ব্রাহ্ম সমাজের কেশবচন্দ্রের অনুসারীরা ব্রাহ্মধর্মকে বিশ্বধর্মে রূপান্তরিত করতে কেশবচন্দ্রের বাগ্মিতাকে হাতিয়ার করে ভারতবর্ষীয় এবং ব্রিটিশ জনগণকে আকৃষ্ট করেন। কেশব যুগে কলকাতার ভদ্রবিত্ত অভিজাত সমাজকে প্রভাবিত করতে স্বয়ং কেশবচন্দ্র তার ব্রান্ডের আর্যতত্ত্বকে হাতিয়ার করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কেশব যখন রাজনীতি শুরু করেন, সে সময় মেকলেবাদের চরম রমরমা, যখন তিনি প্রয়াত হন, তখন মেকলেকে আশীর্বাদধন্যদের তৈরি নব্য জাতীয়তাবাদের উত্থানের সময়। প্রত্যেক প্রবক্তা তাদের স্বার্থপূরণে আর্যতত্ত্বকে ‘বৈজ্ঞানিক’ তত্ত্ব হিসেবে প্রচার দিয়েছেন। এই অবস্থানকে মান্যতা দিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতা। ভারতবর্ষে প্রথম দিকে যারা আর্যতত্ত্বের প্রচলন করলেন তাদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজ অন্যতম প্রধান গোষ্ঠী। বারবার প্রশ্ন উঠেছে কারা আর্য আর কারা নয় বা ইওরোপিয় আর্যরা না কি যারা ভারতে অভিবাসিত হয়েছিল তারা শ্রেষ্ঠ। সমস্যা হল, আর্যতত্ত্বের বৈজ্ঞানিক খোঁজ আজও অধরা।



    শেষ


    তথ্যসূত্র:
    Banerjee, SC (2016) Brahmo Samaj as an Actor in the Dissemination of Aryan Invasion Theory (AIT) in India.
    International Journal of Asian Studies 13:19–59



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • বিতর্ক | ২২ এপ্রিল ২০২২ | ১৬৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন