প্রথমেই বলে রাখি ব্যক্তিনামে লিখলেও এই মতটি একটি সমষ্টির মতামত। আমরা কয়েকজন বন্ধু/কমরেড মিলে গত চার-পাঁচ বছর একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছি যাকে এখনই কোনও গ্রুপ বলা না-গেলেও কতকগুলি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে আমরা চলি। একটি ছাত্র-ছাত্রী সংগঠনের কিছু সদস্যও এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সঙ্গে আছেন।
পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন প্রায় ঘাড়ের উপর এসে পড়া এবং আগামী নির্বাচনে তিনটি প্রধান শক্তির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও দ্বৈরথের মাঝে নানা সংগঠন/ব্যক্তি/ফোরামের বিভিন্ন উদ্যোগ ও যৌথ কর্মসূচি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিকভাবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের অবস্থানই আমি এখানে বলার চেষ্টা করব। বস্তুত গত তিনমাস যাবৎ এই মতের ভিত্তিতেই মূলত গ্রাম/মফস্বলে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রচার কর্মসূচি আমরা নিয়ে চলেছি।
কিছু কথা আগেই বলে নেওয়া ভালো। আমরা মনে করি প্রত্যক্ষভাবে ভোটে দাঁড়ানোই নির্বাচনে অংশগ্রহণের একমাত্র পথ নয়। ফ্যাসিবাদী বিজেপি/আর-এস-এর বিরুদ্ধে আমাদের এই ধারাবাহিক প্রচার নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই, হতে পারে তা নিচু স্তরের অংশগ্রহণ। দেখা গেছে সাধারণ মানুষ ভোটের সময়ে রাজনৈতিক চর্চা অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি করেন, কাজেই নির্বাচনের মত একটি ‘এখনো গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে থাকা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে থাকাকে আমাদের খুব সমীচীন মনে হয়নি।
উল্টোদিকে এর বিপরীত অবস্থান হতে পারত, নির্বাচনকে বয়কট করার ডাক, প্রচারের মধ্য দিয়ে অনেকেই তা জনগণের কাছে নিয়ে যান। আমরা স্পষ্টতই মনে করছি এই ধরনের কোন পরিস্থিতি সারা দেশ জুড়ে উপস্থিত নেই। বয়কট একটি সক্রিয় গণ-রাজনৈতিক কার্যক্রম। অনেকটা বড় আন্দোলনের কোন একটি স্তরে এই আহ্বান দেওয়া যেতে পারে। এখনই সেই ধরনের অবস্থান পরিস্থিতির যথার্থ মূল্যায়ন নয়।
আমরা মনে করি সারা ভারত জুড়ে সরকারি বামদলগুলির বাইরে যাঁরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়ছেন, যেসব ব্যক্তিরা প্রতিদিন শাসকের দিকে আঙুল ওঠাচ্ছেন, জেল খাটছেন, খুন হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই কোন কোন ধরনের নিরীক্ষার মধ্যে আছেন, একে-অপরের রাজনৈতিক ভ্রান্তি দেখিয়ে দেবার, নিজেদের সঠিক প্রমাণের যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এই পরিসরে চলতে থাকে (গত ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা) আমরা একেবারেই সেই প্রক্রিয়ায় ঢুকতে এখন বা ভবিষ্যতেও চাই না, বরং মনে করি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও তাকে কেন্দ্র করে বিস্তারিত গণতান্ত্রিক আলোচনাই আমাদের সঠিক পথে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করবে।
কাকে মানুষ ভোট দেবেন, কাকে দেবেন না বা সামগ্রিক ভাবে ভোট নামক এই অদ্ভুত প্রহসনটি পক্ষে আমরা কোনও প্রচার করছি না।
কারও কাছে নজরটান সমেত বাক্যবন্ধটি অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হলে আমরা তা খোলসা করতে দায়বদ্ধ। তার আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে প্রচারটা আমরা করছি তার অংশ-বিশেষ এই লেখায় তুলে ধরা উচিৎ বলেই মনে করছি।
“বিশ্বজোড়া কোভিড পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেকেরই চাকরি নেই। যারা ছোটখাটো ব্যবসা করতাম তাদের হালও খুব খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ কলকারখানাগুলি। কোভিডের ‘আনলক’ চালু হলেও আমাদের অনেকেরই সেখানে পুরানো কাজ জোটেনি, বা জুটলেও কাজ করতে হচ্ছে অনেক কম মাইনেতে। বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা, পেঁয়াজ সত্তর ছাড়িয়েছে। অন্যান্য যে জিনিসগুলো খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে লাগে তাও দিন দিন আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কেন্দ্রে দীর্ঘ ১০ বছরের কংগ্রেসি অপশাসন, দুর্নীতি, বেকারত্বের বিরুদ্ধে রাগ ক্ষোভ নিয়ে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মানুষ বিজেপিকে জিতিয়ে এনেছিলেন। সেইসময় প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছিল লম্বা চওড়া বুলি। দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস, প্রত্যেকের ব্যাঙ্কে নগদ ১৫ লাখ টাকা ঢুকিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই যে গুজরাট গণহত্যার নায়ক গদিতে চেপে বসলেন, তারপর সারা দেশের ঠিক কী কী উন্নতি হয়েছে আমরা সকলেই দেখেছি।
শ্রম আইনগুলিকে পাল্টে মোদী সরকার অবাধ ছাঁটাইয়ের অধিকার তুলে দিয়েছে মালিকদের হাতে। কাজের সময় আট ঘণ্টার বদলে ১২ ঘণ্টা করতে চলেছে। সরকারি দপ্তরেও তিন মাসের নোটিসে কর্মীদের ছাঁটাই করা যাবে। মালিকদের স্বার্থে যারা এত দ্রুত এই আইনগুলি পাস করিয়ে দিল, সেই বিজেপি সরকারই কিন্তু এতগুলি বছরে কোটি কোটি অসংগঠিত শ্রমিকের নুন্যতম মজুরিটুকুও নিশ্চিত কর়েনি। নিশ্চিত করেনি দেশের সমস্ত মানুষের দু’বেলা অন্ন, কিংবা রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ এনে শিক্ষাক্ষেত্রে মালিকদের অবাধ মুনাফা লুটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে মোদী সরকার। ফলে লেখাপড়া শেখার চড়া দাম মেটাতে না পেরে শিক্ষার আঙিনা থেকে ক্রমে আরও দূরে সরে যাচ্ছে গরিব, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা। গায়ের জোরে পাস করানো কৃষি আইনের মধ্য দিয়ে গোটা কৃষি ব্যবস্থাটাই কর্পোরেটের হাতে তুলে দেবার চেষ্টা চলছে। ছোট বা ভূমিহীন কৃষক তো বটেই বড় কৃষকরাও পড়ে যাচ্ছেন সঙ্কটে।
সারা দেশ জুড়ে তাই নিয়ে চলছে আন্দোলন। উল্টোদিকে সম্পদের পাহাড়ে চড়ে বসছে পুঁজিপতিরা। লকডাউনের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে আম্বানি পরিবারের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭ হাজার ৬০০ কোটি আমেরিকান ডলার, যা এশিয়ার দ্বিতীয় ধনী পরিবার হংকংয়ের কোওকদের মোট সম্পত্তির দ্বিগুণেরও বেশি। পিছিয়ে নেই আদানি বা টাটারাও। অক্সফ্যাম-এর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ পরিবারের কাছে কুক্ষিগত দেশের মোট সম্পদের অর্ধেকেরও কিছু বেশি! উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক গবেষণায় ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি দেখিয়েছেন, ভারতে অর্থনৈতিক বৈষম্য এখন ৯৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি!
এই অবধি পড়ে কেউ বলতে পারেন কাউকে ভোট না দেবার কথা বলেও, তোমরা ক্রমাগত বিজেপির বিরোধিতা করে চলেছ, বাকি দলগুলি কি ধোয়া তুলসী পাতা? প্রথমেই বলি নির্দিষ্ট কোনও দলের বিরুদ্ধে প্রচারের বর্শামুখ করার উদ্দ্যেশ্য আমাদের নেই। আমরা মনে করি ক্ষমতায় ডান/বাম বা রাম, লাল-নীল-গেরুয়া যে রঙের সরকারই থাকুক না কেন তারা কেউই শ্রমিক-কৃষক সহ মেহনতি আম জনতার জন্য নয়। আপনার দাবি দাওয়া নিয়ে ছোট হোক বা বড়, আপনাকেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আপনাকেই সংগঠিত হতে হবে। তা যে কোনভাবেই হোক না কেন।
আমরা এরাজ্যে ৩৪ বছরের সিপিআই(এম)-এর শাসন দেখেছি, আমরা গত ৯ বছরে মমতা ব্যানার্জীর শাসনও দেখলাম। ব্যক্তিগত দুর্নীতি, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, নির্বিচারে পরিবেশ ধ্বংস, বড়লোক-পুঁজিপতিদের পক্ষে মেহনতি/সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এগুলো দুটি সরকারেরই কম-বেশি বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু এই মুহূর্তে সারা দেশ জুড়ে বিজেপি শাসনে তার সাথে যুক্ত হয়েছে আরো কতকগুলি ক্ষতিকারক বৈশিষ্ট্য, সারাক্ষণ ধরেই মূল অর্থনৈতিক বৈষম্যগুলো থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য চলছে শোষিত মানুষের মধ্যে একধরনের বিভেদ তৈরি করা। ক্রমাগত চলছে কে হিন্দু-কে মুসলমান তা নিয়ে সুচতুর উস্কানি। অনর্থক মন্দির/মসজিদ বিতর্ক তৈরি করে করে দুটো পক্ষে লড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সৃষ্টি করা হচ্ছে মুসলিম বিদ্বেষ। জ্ঞান, বিজ্ঞানের বদলে চর্চা চলছে অবৈজ্ঞানিক পুরাণ গল্পকথা-র। পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনের মধ্য দিয়ে ‘গণতান্ত্রিক’ যে ছিঁটেফোঁটা সুযোগ সুবিধা কিছু মানুষ পেতেন তাও ক্রমাগত করায়ত্ত করা চলছে। এর বিরুদ্ধে কেউ ন্যূনতম প্রতিবাদ করলে, আওয়াজ তুললেই, তাকে দেগে দেওয়া হচ্ছে দেশদ্রোহী বলে। জেলে পচিয়ে মারা হচ্ছে ফাদার স্ট্যান স্বামী, লেখক ভারভারা রাও, জি এন সাইবাবা-এর মত মানুষের পক্ষে কথা বলা ব্যক্তিদের। সারা দেশকে পরিণত করা হয়েছে একটি কারাগারে। এই কারণেই ক্ষমতায় থাকা বিজেপি, বলা ভালো তাকে চালনা করা আর-এস-এস, ঠিক আর পাঁচটা রাজনৈতিক দলের মত নয়। তার ফ্যাসিবাদী ভূমিকা আমাদের আলাদা করেই ভাবতে বাধ্য করছে।
তাই সাথী, সারা দেশজুড়ে ছাত্রছাত্রী-যুব, শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনতার উপর নেমে আসা প্রত্যেক দিনকার এই আঘাতের বিরুদ্ধে পক্ষ নিন। ভোটে আপনি যাকেই জিতিয়ে আনুন না কেন, নিত্যদিনকার যে মৌলিক সমস্যাগুলোর আপনারা শিকার হন তার বিরুদ্ধে নিজের নিজের ক্ষেত্রে সংগঠিত হওয়া ছাড়া, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া, সার্বিকভাবে যে ব্যবস্থাটা চলছে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ছাড়া সম্ভবত আমাদের আর কোনও উপায় নেই। একটু ভেবে দেখবেন।”
এক) আমরা মনে করছি না, বাকি সব দলগুলির মত বিজেপিও একটি সাধারণ রাজনৈতিক দল। একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠনের ভয়ংকরতার সাথে পুঁজিবাদি, বড় জমিদারদের পক্ষ নেওয়া বাকি পাঁচটা দলের পার্থক্য ছিল, আছে থাকবে। ইতিহাস অন্তত আমাদের সেই শিক্ষাই দিচ্ছে।
দুই) নির্বাচনকে প্রচারের হাতিয়ার করার অর্থেই আমাদের এই নিচুস্তরে অংশগ্রহণ। আজকের দিনের সংসদীয় নির্বাচন নামক আপাদমস্তক শাসকের স্বার্থে ব্যবহৃত, চূড়ান্ত অ-গণতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থার প্রতি মোহ তৈরি করার ইচ্ছা আমাদের নেই (কেউ বলতে পারেন, যদি মনে করেই থাক ভোট-দানের একটি গুরুত্ব এখনও সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে, তাহলে সেকথাই বলা যায় তো, এর উত্তর আমরা আগেই দিয়েছি, ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত কেন প্রচার করছি না, একই সাথে ব্যবস্থাটির প্রতি মোহ তৈরির বিরুদ্ধে যাবতীয় প্রচেষ্টা আমাদের নিতে হবে—এই অর্থেই)।
তিন) তারপরেও সাধারণ মানুষের অমোঘ প্রশ্ন “সবই তো বুঝলাম, কিন্তু ভোট কাকে দেব?” – এই প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদেরও হতে হচ্ছে, সেখানেই বারবারই যে কোনও প্রশ্নে লড়াই আন্দোলন গড়ে তোলার কথাতেই আমরা জোর দিয়েছি।
ভোটে অংশগ্রহণকারী সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরাসরি ভোটে অংশগ্রহণ করছেন না, এমন একটি উদ্যোগ গত ৪ (জানুয়ারি) তারিখে ভারতসভা হলে তৈরি হয়। যাদের কেন্দ্রীয় শ্লোগান “No vote to BJP”। উদ্যোক্তাদের একটি অংশ আমাদেরও এই তৈরি হতে যাওয়া ফোরামে অংশ নিতে ডাকেন। আমরা সেদিনের সভাতে উপস্থিতও ছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু স্লোগানটি ভোটদান-কে কেন্দ্র করেই এবং ভোট বিজেপির বিরুদ্ধে দেবার আহ্বান সেকারণেই আমাদের পক্ষে এই মঞ্চটি-তে যোগদান করা খুব সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমরা একেবারেই মনে করছি না, বিজেপিকে ভোট না দেবার আহ্বান করা মাত্রই তারা ‘অ-ফ্যাসিবাদ-বিরোধী’ হয়ে যান, বা এক্ষেত্রে তাঁদের সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলির সাথে এক ব্র্যাকেটে রাখা যায়। যাঁরা এই উদ্যোগে আছেন অথবা যাঁরা ভোট বয়কটের কথাও বলছেন, তাঁরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে পরীক্ষা-মূলকতার মধ্যেই আছেন, এই উদ্যোগগুলির ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা আমাদেরই দায়িত্ব, আমাদেরকেই তা এগিয়ে দেবে।
কিন্তু এত বছরের সমষ্টি অথবা ব্যক্তি অভিজ্ঞতা আমাদের কিছু জিনিস শেখায়। সেই কারণেই যাঁরা লড়াই আন্দোলনের পাশাপাশিও আশু কাজ হিসাবে বিজেপি-কে ভোট না দেবার কথা বলছেন, তাঁদের আরেকবার ভাবতে একটি এই মুহূর্তের কাল্পনিক পরিস্থিতির কথা, ধরুন যদি রাজ্যের ক্ষমতা ২০২১-এ বিজেপি দখল করেই, সে সময়ে আমরা যারা এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী অবস্থানে থাকবই তাঁদের কোথায় থাকতে হবে। নিশ্চয়ই লড়াই আন্দোলনের ময়দানেই। এর জন্যই তো প্রস্তুত হওয়া উচিৎ। ‘তবু বিজেপিকে ভোটে আটকানো যেতে পারে’—বাড়তি প্রচারের মধ্য-দিয়ে, এই অনুভব কি পরিস্থিতিটি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে হতাশার জন্ম দেবে না? আজ যাঁরা প্রাণপাত করে উদ্যোগটিকে সফল করার প্রচেষ্টা নিচ্ছেন, উদ্যোগটির প্রাথমিক হার তো অনেকটাই পিছিয়ে দেবে তাঁদের।
অথবা ধরুন যদি তৃণমূল ক্ষমতায় থেকেও যায় তাহলেও তা শ্রমিক-কৃষক সহ মেহনতি আম জনতাকে প্রতিদিন শোষণ করার হাতিয়ার হিসাবেই ব্যবহৃত হবে। একই কথা ‘বাম’ বলে পরিচিত সিপিআইএম-এর জন্যও সত্যি।
আর, রাজ্যের ক্ষমতায় বিজেপি না থেকেও কীভাবে উপর থেকে একটি ফ্যাসিস্ট কার্যক্রম সারা দেশজুড়েই চালাচ্ছে, তাও আমাদের কারো অজনা নয়। ফলত ভোটদানের মধ্য দিয়ে এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বিপরীতে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দাঁড়াতে বলাই কি উচিৎ নয়? যেভাবেই হোক না কেন, পরিবর্তনকামী একটি শক্তির পক্ষে একমাত্র লড়াই সংগ্রামটিই বাস্তব।
এমনও নয় দীর্ঘ ঐক্যবদ্ধ কোনও লড়াই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কোনও একটি পর্যায়ে উদ্যোক্তারা এই ডাক দিচ্ছেন, ফলত না চাইতেও তারা বর্তমান তৃণমূল শাসকের অথবা পূর্ববর্তী সিপিএম শাসকের শোষণ নিয়ে খানিক চুপ করে যেতে বাধ্য হবেন ভোটদান কেন্দ্রিক প্রচারের উপর গুরুত্ব রাখার স্বার্থেই। ‘ঐক্যবদ্ধতা’র স্বার্থেই। আসলে যারা প্রবল শক্তিধর যে কোনও শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার ভাবনা রাখেন, তাঁদের সম্ভবত ঐক্যও করতে হবে সংগ্রামের উপর দাঁড়িয়েই।
“আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী যার জয়ের সম্ভাবনা বেশি তাকে ভোট দিন”—এই স্লোগানের কার্যকারিতা নিয়েও আমাদের সন্দেহ আছে, সাধারণ মানুষ সেফোলজিস্ট নন জ্যোতিষও নন। তাহলে তাঁরা কীভাবে জানবেন কে জিতবে? গত লোক সভা নির্বাচনে ভাবা গিয়েছিল কংগ্রেস ফিরছে, কিন্তু বিজেপি আরও শক্তি নিয়েই ফিরেছে। ২০০৬ সালে ভাবা গিয়েছিল সিপিএম হারছে কিন্তু বুদ্ধদেববাবু ২৩৫ টা আসন নিয়ে বাংলার ‘মসনদে’ ফিরেছিলেন। বরং গণতান্ত্রিক ব্যক্তিবর্গের একটি সমষ্টিগত উদ্যোগ যদি ‘একের বিরুদ্ধে একের স্লোগান’-এ তাঁরা সংসদীয় দলগুলিকে বাধ্য করতে পারতেন, মনে হয় তা তুলনায় কার্যকরী হত। যাঁরা রাজি হতেন না, ‘প্রমাণ’ হয়ে যেত তাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ‘লড়াই’-এ যথেষ্ট আন্তরিক নন।
আসল কথা সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলির কেউ যদি ফ্যাসিবাদ বিরোধিতায় আন্তরিক হতেন, তাহলে তাঁদের অসংখ্য নেতা কর্মী আজ জেলে থাকতেন। কিন্তু তাঁরা পুঁজিবাদের দালালি, মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজ অন্যস্তরে, ভিন্ন স্থান-কালে করেই চলেছেন। কৃষক আন্দোলনেও সেই চেষ্টা আমরা দেখছি।
অনেকেই অনুযোগ করেছেন আমাদের স্লোগানটা ভারী শক্ত, সাধারণ মানুষ ভোট বোঝে। হতে পারে। শুধু ফ্রান্সের ছাত্র আন্দোলনের একটি স্লোগান মনে করিয়ে দিতে চাই “বাস্তববাদী হও, অসম্ভবের দাবি করো…”
লেখাটি ভাবাচ্ছে। ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন হোক। কৃষিনীতির এবং নতুন শ্রম আইন দুটোর বিরুদ্ধেই আন্দোলন হোক, একসাথে।
ভাবনা টা ভালো, কিন্তু ভোট প্রক্রিয়া তে যাকে ভালো মনে হলো ফাসসিস্ট কে বাদ দিয়ে, জিতিয়ে দিলাম, তিনি পরে গিয়ে বিজেপি হবেন না, এটা কে বলল তাই পক্ষ হতে হবে।
এই মুহূর্তে বোধ হয় একটাই কাজ করার ।..তা হলো এই অসভ্য ।..বর্বর ।..পার্টি টাকে দেশ ছাড়া করা !!এরা সমস্ত সমাজ জীবনে ধংস এনে দিচ্ছে ।..মানুষেমানুষে বিভেদ ।..হিংসা ।..খুনো খুনি ।...নারী বলাৎকার এবং আরো নানা অপকর্ম করে চলছে !!এদের পালের গোদা সাধু বাবা নরেন্দ্র মোদী ((( এক জন প্রাত স্মরণীয় ব্যক্তির নামে এই খুনি টার নাম হওয়া বড়োই দুর্ভাগ্যের বিষয় )) নিজেই মুসলমান দের রক্তে হাত লাল করে মন্ত্রী হলেন !!!কি লজ্জ্যার ???আমাদের দেশের মানুষ এইরকম একটা নিকৃষ্ট জন্তু কে দিল্লির মসনদে বসালো ???এর সাথে আরেকটা খুনি ওই পেট মোটা হত্যাকারী ।...যে জেল ফেরত একজন আসামি ।..সেহলো আমাদের গৃহ মন্ত্রী ??আমরা , যারা এদের ভোট দিয়ে জেতালাম ।..তারা কি একবার চিন্তা করেছি বা করবো ।..যে কাদের আনলাম আমরা ???তাই ।..একান্তই যদি কেউ নিরপেক্ষ এবং নিরাপদ দূরত্ত্বে অবস্থান না করেন (( আমাদের বেশির ভাগ সহ নাগরিক এখন এই পর্যায়ে পড়েন ।..""আমার কি আসে যায় ।..মমতা আসুক আর মোদী আসুক ।...বা মোদির থেকে দিদি বেটার ।..বা এই সালা মোছল মান গুলো কে দেশ থেকে তাড়াতে হবে ।।.সি এ এ হোক ।..বা আমরা হিন্দু ।।.অন্য ধর্মের এতো দাপাদাপি সহ্য করবো না ।..."""ইত্যাদি )) ।...প্রত্যেক টা বাড়ি তে ।।.অলিতে ।..গলিতে ।..মনে ।..দেহে আমাদের এই ভ্যাকসিন টা দেয়া দরকার যে আমরা মানুষ আগে।.. এরপর হিন্দু ।...মুসলমান ।..তারপর দেশ প্রেমী !!!জাতের নাম বজ্জাতি ।...ধর্মের নাম করে মানুষ কে ভাগাভাগি করে আম্বানি ।..আদানি... টাটা আর ১৫ - ২০ টা শুওরের বাচ্চা দের দেশ লুট করতে দেয়া আর চলবে না!! আর যারা রাজনীতি বিমুখ স্নো পাউডার মাখা বুদ্ধি জীবি ।..তারা গদী মিডিয়া তে সময় কাটান ।...আপত্তি নেই !!আমরা যারা এই ফ্যাসিবাদী কুকুর গুলো কে ঘৃণা করি ।।.তাঁরা কিন্তু দলে ভারী আছি !!জয় হোক !!!!
বি জে পি কে নির্বাচনে রুখে দেওয়া আন্দোলনের বিকল্প নয় । কিন্তু শাসকদের সবচেয়ে ভয়ংকর দলকে কে আটকানো এই সময়ের প্রধান কাজ ।
আমি " বি যে পি কে ভোট নয় " এর পক্ষে ।।
ভাল বলেছেন; বিকল্প নয় , কিন্তু এই সময়ের তাগিদ এবং প্রধান কাজ।
একটু ব্রীদিং স্পেস পাওয়া যাবে, সেটাও দরকার। যেমন ছত্তিশগড়ে হয়েছে। কিন্তু বর্তমান কংরেস সরকারের কৃষক ও শ্রমবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মঞ্চে আন্দোলন অব্যাহত।
পক্ষে।
সত্যি, এই বাম মাকরা গুলোর বুদ্ধি কতো আবাল মার্কা ই না হতে পারে !!!
এতো বুদ্ধি রাখিস কোথায় ??!