এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  স্মৃতিচারণ

  • হারিয়ে গেল সুখের ট্রামযাত্রা

    শুকদেব চট্টোপাধ্যায়
    স্মৃতিচারণ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৮৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (৪ জন)

  • শহরের বিকাশের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ব্যবসা বাণিজ্য। চিৎপুর, শোভাবাজার, আহিরিটোলার মত শহরের বেশ কিছু জায়গায় ব্যবসার আড়ৎ গড়ে উঠেছে। রেল পরিষেবা চালু হওয়ার পর শিয়ালদহ স্টেশনে বাইরে থেকে আসছে প্রচুর মালপত্র। স্টেশনে আসা মালপত্র শহরের নানা প্রান্তে পৌঁছানর ব্যবস্থা করাটা হয়ে উঠল নগরকর্তাদের প্রধান সমস্যা। সমস্যার কথা জানানর পর ভারত সরকারের কাছ থেকে ট্রাম চালাবার পরামর্শ আসে। কোলকাতার Justice for the Peace পরিকল্পনা তৈরি করার জন্য একটি কমিটি তৈরি করলেন। কমিটি, গ্রামের থেকে আসা পণ্য বিভিন্ন গুদামে পৌঁছে দেওয়ার উপযোগী করে একটি রুট ঠিক করল। পরিকল্পনা মঞ্জুর হল। দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে শেয়ালদা থেকে বৈঠকখানা রোড, বৌবাজার স্ট্রিট, ডালহৌসি স্কোয়ার হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতা হল। আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন পাতা হয়েছিল কারণ, ওইখানে ছিল তখনকার ইষ্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ের হাওড়ার টিকিটঘর। শিয়ালদহ এবং হাওড়ার মধ্যে পণ্য পরিবহণের সুবিধার কথা চিন্তা করেই ওই স্থান নির্বাচন করা হয়। ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কোলকাতায় চলল প্রথম ট্রাম।

    সেদিন শিয়ালদহ স্টেশন থেকে দুটি ‘ট্রাম ট্রেন’ রওনা হয়। প্রথম ট্রেনে ছিল একটি প্রথম শ্রেণীর এবং দুটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়ি। দ্বিতীয়টিতে ছিল একটি প্রথম এবং একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়ি। ট্রেন বলা হলেও গাড়িগুলি কিন্তু একটি অপরটির সাথে জোড়া ছিল না। একটি গাড়ির পিছনে আর একটি গাড়ি দাঁড়িয়েছিল। প্রতিটি গাড়ি টানার জন্য সামনে ছিল দুটি করে বলিষ্ঠ ঘোড়া। ৯.১৫তে শিয়ালদহে ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ের ট্রেনটি ঢোকা মাত্র যাত্রীরা ছুট লাগাল প্রথম ট্রামে সওয়ারি হওয়ার জন্য। পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যে ট্রামের পত্তন হলেও মানুষের ভিড়ে পণ্য ওঠার আর কোন জায়গা রইল না। প্রথম শ্রেণী অবশ্য ফাঁকা ছিল, কিন্তু সেখানে দামী মানুষদের মাঝে পণ্য রাখার প্রশ্নই ওঠে না। ট্রামের বড় কর্তা মিঃ সি এফ অ্যাব্রো এবং ইঞ্জিনিয়ার মিঃ ক্লার্ক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তদারকি করছেন। ৯.৩০ মিনিটে গাড়ি ছাড়ার সংকেত দেওয়া হল। প্রথম শ্রেণী সংকেতের সাথে সাথেই স্টেশন থেকে রওনা হল। যাত্রী মাত্র পাঁচ জন, তিনজন সাহেব আর দুজন স্থানীয়। গোল বাঁধল দ্বিতীয় শ্রেণী দুটি ছাড়ার সময়। ট্রামে বসার আসন ছিল ৪৫টি। ভিড়ের ঠেলায় মুহূর্তে বসার আসন ভরে গিয়ে ছাতে পর্যন্ত লোক উঠে গেছে। তাগড়া ওয়েলার ঘোড়াগুলো সাধ্যমত চেষ্টা করেও গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। তারপর বিস্তর ঠেলাঠেলি এবং বেশ কয়েক ঘা চাবুক মারার পর গাড়ি ধীরে ধীরে রওনা হল। শয়ে শয়ে মানুষ সেদিন কলকাতার রাস্তায় ভিড় করে এই নতুন গাড়ি চলা দেখেছিল।

    প্রথম পর্যায়ের এই ট্রাম পরিষেবার পরমায়ু খুব কম ছিল। লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে ৯মাস পরে ১৮৭৩ এর ২০ নভেম্বর ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতায় ট্রাম চালাবার মূল উদ্দেশ্য ছিল পণ্য পরিবহণ। কিন্তু লোকের ভিড়ে তা বাস্তবায়িত হল না। সামান্য যাত্রী ভাড়ায় বিপুল খরচ সামলান সম্ভব ছিল না। কিছুদিন চলল দোষারোপের পালা। কেউ দুষলেন জাস্টিস অফ পিসদের, জাস্টিসরা দুষলেন সরকারকে। মিউনিসিপ্যালিটির মাথা হগ সাহেব জাস্টিসদের পাশে দাঁড়ালেন। সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করলেন। সরকার সে আবেদনে কর্ণপাত করেনি। অগত্যা ট্রামের লাইন, গাড়ি এবং যাবতীয় কিছু বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ম্যাকলিস্টার নামে এক সাহেব কেনা দামে সব কিছু কিনতে সম্মত হলেন। বাংলা সরকারের আপত্তিতে তাঁকে বিক্রি করা গেল না। অবশেষে বিক্রি করা হল Dillwyn এবং Alfred Parish ও Robinson Souttar নামে তিনজন ইংরাজের কাছে।

    ১৮৭৮ সালে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কলকাতা শহরে নিয়মিতভাবে ট্রাম চালাবার প্রস্তাব সরকারের কাছে আসে। তার মধ্য থেকে মেসার্স প্যারিস অ্যান্ড সাউদারের প্রস্তাব গৃহীত হয়। অনুমতি পাওয়ার পর তাঁরা প্রস্তাব রূপায়ণের জন্য ‘ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি’ গঠন করেন। ১৮৭৯ সালের ২ অক্টোবর কলকাতা কর্পোরেশনের সাথে ট্রাম কোম্পানির একটি চুক্তি হয়। কলকাতা কর্পোরেশন এই চুক্তি অনুসারে ট্রাম কোম্পানিকে শহরের বেশ কিছু রাস্তায় ট্রামলাইন পাতার অধিকার দেয়। ঠিক হল, কোম্পানি কর্পোরেশনকে একটি লাইনের জন্য বছরে ২ হাজার টাকা এবং জোড়া লাইনের জন্য ৩ হাজার টাকা দেবে। ১৯০১ সালে এই ভাড়া বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩ ও ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া ট্রামের ভাড়া ঠিক করার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির হাতে থাকবে।

    শিয়ালদহ- বৌবাজার লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ট্রাম চলে ১৮৮০ সালের ২৯ অক্টোবর। শিয়ালদহ-বৌবাজার—ডালহৌসি-হেয়ার স্ট্রিট লাইনে ট্রাম চলাচল শুরু হয় ১৮৮০ সালের ১৯ নভেম্বর। চিৎপুর রোডে ট্রাম চলে ১৮৮১ সালের মার্চে, চৌরঙ্গি রোডে ওই বছরের নভেম্বরে, ধর্মতলা স্ট্রিটে ১৮৮২ সালের মার্চে, স্ট্র্যান্ড রোডে ১৮৮২ সালের জুনে, শ্যামবাজারে ১৮৮২ সালের নভেম্বরে, খিদিরপুরে ১৮৮৩ সালের ডিসেম্বরে এবং ওয়েলেসলি স্ট্রিটে ১৮৮৪ সালের এপ্রিল মাসে। ১৯০৪ সাল থেকে কয়েক বছরের মধ্যে টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, হ্যারিসন রোড এবং সার্কুলার রোডে ট্রাম লাইন পাতা হল। চিৎপুর রোডে প্রথমে সক স্ট্রিট(বর্তমানে দুর্গা চরণ ব্যানার্জী স্ট্রিট) পর্যন্ত লাইন পাতা হয়েছিল, পরে তা বাগবাজার পর্যন্ত বাড়ান হয়।

    প্রথম দিকে ট্রাম লাইন ছিল ৩ ফুট ৩/৮ ইঞ্চি চওড়া। ১৯০২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ ফুট ৮-১/২ ইঞ্চি। সেকালে ড্রাইভার আর কন্ডাক্টর মাথায় লাল পাগড়ি পরত। ট্রামগাড়ি ছিল ধূসর রঙের, ইংরাজিতে বলা হত CTC Grey। ১৮৯৬ সালে কলকাতায় ট্রামের ৬টি ডিপো ছিল—শ্যামপুকুর, চিৎপুর, শিয়ালদহ, কলিঙ্গা(ওয়েলেসলি স্কোয়ার), ভবানীপুর এবং খিদিরপুর। ট্রাম গাড়িতে দুদিকে পাঁচটি করে মোট দশটি খোলা দরজা থাকত। লোকে দুদিক দিয়েই ওঠানামা করত। তখন ট্রামের কোন রুটে কত ভাড়া তা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হত। ট্রাম রাস্তায় এক মাইল বাদে বাদে থাকত একটি করে স্টেশন। এখানে যেমন যাত্রীরা নামাওঠা করত তেমনই প্রয়োজনে ঘোড়া বদল করা হত। রাস্তার ধারে ঘোড়ার জল খাওয়ার জন্য বড় বড় জলাধার ছিল। ট্রামে ঘোড়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও অনেক কাল রাস্তার ধারের সেই জলাধারগুলি স্মরণ করাত ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতাকে।

    দ্বিতীয় দফায় ট্রাম চলাচল শুরু হওয়ার পর লাইন নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। শহরের বেশ কিছু জায়গায় ট্রাম লাইন রাস্তার থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে ছিল। পথচারী এবং যানবাহনের পক্ষে তা বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটছিল। আলাপ আলোচনায় সমস্যা না মেটায় ১৮৮৫ সালে ব্যাপারটা আদালত অব্দি গড়াল। আদালতের দীর্ঘসূত্রতা তখনো ছিল। চার বছর পর আদালত কোম্পানিকে লাইনগুলি ঠিক করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ১৮৯০ সালে, অর্থাৎ লাইন বসার ১০ বছর পরে ত্রুটি মেরামত করা হয়।

    ঘোড়ার লালন পালন ছিল সেই সময় ট্রাম পরিষেবার সব থেকে বড় সমস্যা। ঘোড়াগুলো সব আনা হত শীতের দেশ থেকে। একে আমাদের দেশের গরম তাদের কাছে কষ্টকর ছিল, তার ওপর টানতে হত মানুষ বোঝাই ভারি গাড়ি। পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে ১৮৮১ সালের গরমকালে অনেকগুলো ঘোড়া মারা যায়। শুরু হল বিকল্পের সন্ধান। ১৮৭৯ সালের ২৪ জুলাই P.W. Fleury & Co. বিজলি বাতির প্রথম প্রদর্শন করে কলকাতা শহরে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ১৮৮১ সালে Mackinnon & Mackenzie Cotton Mill এর মত অল্প কিছু জায়গায় বিজলি বাতির আলো ঝলমল করছে। তবে সেই সময় তা একেবারেই বিরল দৃশ্য। কলকাতার রাস্তায় কিন্তু তখনো গ্যাসের বাতি জ্বলছে। বিদ্যুতের ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হতে তখনো দুই দশক দেরি আছে। তাই ঘোড়ার বিকল্প হিসাবে, রেলের মত ট্রামের জন্য তৈরি হল বাষ্পীয় ইঞ্জিন। ১৮৮২ সালে ট্রাম কোম্পানিকে পরীক্ষামূলকভাবে একমাসের জন্য চৌরঙ্গির রাস্তায় বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে ট্রাম চালাবার অনুমতি দেওয়া হল। একমাস শেষ হওয়ার পর জনগণের ইচ্ছায় আরো এগার মাস ঐ লাইনে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের সাহায্যে ট্রাম চলে। বাষ্পীয় ইঞ্জিন আসায় ট্রামের গতি বেড়েছিল এবং হয়ত সেই কারণেই বেড়েছিল দুর্ঘটনা। কিছুটা দুর্ঘটনা এবং কিছুটা প্রশাসনিক সমস্যার কারণে স্টিম ইঞ্জিনের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হলেও, প্রতি বছর দুর্গা পুজোর সময় তীর্থ যাত্রীদের কালিঘাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাষ্পীয় ইঞ্জিন চালাবার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হত। খিদিরপুর লাইনেও কিছু সময় ট্রামে বাষ্পীয় ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছিল। বাষ্পীয় ইঞ্জিন বাতিল হওয়ার পর থেকে বিদ্যুতায়ন পর্যন্ত এক দশক, শত সমস্যা সত্ত্বেও, ঘোড়াই সচল রেখেছিল কলকাতার ট্রাম। ১৮৯০-৯১ সালে ট্রাম কোম্পানিতে ২২৫০ জন কর্মচারী ছিল আর ঘোড়া ছিল ১০০০টি।

    সময়ের সাথে সাথে কলকাতা শহরে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়তে থাকে। কিলবার্ন কোম্পানি ১৮৯৬ সালে বিদ্যুতের সাহায্যে ট্রাম চালাবার অভিপ্রায়ে সরকারের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। ট্রাম কোম্পানির সাথে কিলবার্নের এই মর্মে আলাপ আলোচনা এবং সমঝোতা হয়। ১৮৯৭ সালে কর্পোরেশন বিদ্যুতের সাহায্যে ট্রাম চালান সংক্রান্ত নতুন কিছু শর্তাবলী যুক্ত চুক্তিপত্র ট্রাম কোম্পানিকে দিলে কোম্পানি তা মানতে অস্বীকার করে। পরবর্তীকালে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে খসড়ায় কিছু পরিবর্তন করা হয় এবং ১৮৯৯ সালে চুক্তিটি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ট্রাম কোম্পানিকে ৯ ডিসেম্বর ১৯০২ এর মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম পরিষেবা শুরু করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে পরিকাঠামোগত সমস্ত পরিবর্তন। লাইন পাতা, নতুন কামরা বানান, বিদেশ থেকে ইঞ্জিন আনা, বিদ্যুতের খুঁটি পোতা, বিদ্যুতের তার লাগান, ড্রাইভারদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে বিপুল শ্রম এবং অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। তবু নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই শহরে এসে গেল বিদ্যুৎ চালিত ট্রাম। ট্রামে বিদ্যুতের সংযোগ হওয়ার পর কলকাতার পরিবহণ অনেকটাই আধুনিক রূপ পেয়েছিল।

    ১৯০২ সালের ২৭ মার্চ প্রথম বিদ্যুতের ট্রাম চলল খিদিরপুর লাইনে। এরপর একে একে চালু হল চৌরঙ্গি কালীঘাট, ওয়েলিংটন স্ট্রিট- বৌবাজার- ডালহৌসি স্কোয়ার এবং ধর্মতলা লাইনে। ১৯০২ সালের মধ্যেই পুরনো সব কটি রুটেই বৈদুতিক ট্রাম এসে গেল। যাতায়াতের সময় কমে গেল, কোম্পানির আয় বেড়ে গেল। যাত্রীরাও খুশি, কোম্পানিও খুশি। মুনাফায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ট্রাম কোম্পানি কয়েক বছরের মধ্যে শহরে পেতে ফেলল আরো কটি নতুন লাইন। ১৯০৩ সালে খোলা হয় টালিগঞ্জ, বেলগাছিয়া, হ্যারিসন রোড, ১৯০৪ সালে বাগবাজার এবং ১৯০৮ সালে চালু হয় লোয়ার সার্কুলার রোড, আলিপুর এবং বেহালা লাইন। ১৯০৫ সালের জুলাই মাসে শিয়ালদহ থেকে হ্যারিসন রোড, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত ট্রাম চলাচল শুরু হয়। ১৯১০ সালে শিয়ালদহ থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত লাইন পাতা হয় এবং ১৯৪১ সালে তা শ্যামবাজার অব্দি সম্প্রসারিত করা হয়। ১৯২৫ সালে পার্ক সার্কাস এবং ১৯২৮ সালে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এ ট্রাম চলাচল শুরু হয়। পার্ক সার্কাস-বালিগঞ্জ লাইন চালু হয় ১৯৪৩ সালে। ১৯১৪ সালে কলকাতা এবং শহরতলি মিলিয়ে ৩১ মাইল ট্রামলাইন ছিল। ২৪৫টি করে প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা ছিল। কেবল কলকাতা শহরেই নয়, মিউনিসিপ্যালিটির অনুমতিক্রমে ১৯০৭ সালে হাওড়াতেও ট্রাম পরিষেবা শুরু হয়।

    গাড়ি রাখার জন্য কালীঘাট, শিয়ালদহ, শ্যামবাজার এবং খিদিরপুরে তৈরি হল ডিপো। মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তৈরি হল কারখানা। ট্রামগাড়ির চেহারাও পালটে গেল। তখন গাড়ির সামনে এবং পিছনে দুদিকেই দরজা থাকত। মুনাফার সন্ধান পেয়ে ট্রাম কোম্পানি যাত্রীদের সুখ সুবিধার দিকে নজর দিতে শুরু করল। ফার্স্ট ক্লাসে পাখা লাগান হল, বসার জায়গায় লাগান হল গদি। ট্রামের ভাড়া সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই ছিল। তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে নানা রকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা ছিল। দুপুর বেলা, ফাঁকা সময়ে ভাড়া কম লাগত। ছিল ‘ট্রান্সফার টিকিট’ এর ব্যবস্থা। এক জায়গা থেকে ট্রান্সফার টিকিট কিনলে অন্য রুটের ট্রামে চাপলেও আর নতুন করে টিকিট কিনতে হত না। ছিল ‘অল ডে টিকিট’ আর ‘মান্থলি টিকিট’। নামেতেই বোঝা যাচ্ছে, প্রথমটি ছিল সারাদিন ঘোরার জন্য আর দ্বিতীয়টি সারা মাসের জন্য। ট্রামের টিকিট এমনিতেই সস্তা ছিল, ওই টিকিটে আরো ছাড় দেওয়া হত। ‘অল ডে টিকিট’ এর দাম ছিল ৬ আনা। এই সুবিধেগুলি অনেকদিন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। কেবল আদিপর্বেই নয়, আজও ট্রামই কোলকাতা শহরের সব থেকে সস্তার পরিবহণ। অল্প খরচে সুখকর পরিষেবা দিয়ে ট্রাম হয়ে উঠেছিল শহরের মানুষের অত্যন্ত প্রিয় যান। দুঃখের কথা, গতির দৌড়ে পিছিয় পড়ে এখন অন্তিম প্রহর গুনছে। পুজোর আগেই হয়ে যাবে বিসর্জন। তবে একেবারে অন্তর্জলী যাত্রা নয় ১৫১ বছরের পুরনো এই যানটিকে রাখা হবে স্মারক হিসাবে। এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত চলবে হেরিটেজ ট্রাম। নতুন প্রজন্মের জন্য চলমান ইতিহাস।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • স্মৃতিচারণ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:০৪538035
  • ভালো লাগলো লেখা। সবচেয়ে ভালো লাগল সব শেষের কথাটি - এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত চলবে হেরিটেজ ট্রাম। নতুন প্রজন্মের জন্য চলমান ইতিহাস।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৩538039
  • এ বড দু:খের সংবাদ । আমার কলকাতার সঙ্গে ট্রাম জডিয়ে থাকবে চিরকাল । মনে  আছে ঘোড়াদের জল খাওয়ার জায়গা - বড সড বাথটাবের মতন। লোহার। ময়দানের পাশ দিয়ে ট্রাম যাত্রা অন্য আমেজ এনে দিত - বিশেষ করে লেডিস গলফ ক্লাব ছাড়িয়ে খিদিরপুরের পথটা। ফার্স্ট ক্লাসে চড়ার পয়সা জুটত না কখনো সেটা সম্ভব হলে মনে হতো রাজাসনে বসে আছি। জারমানি এসে মানথলি টিকেটকে চেনা মনে হয়। 
    বেয়াডা প্রশ্ন - ইউরোপে নানান শহরে ট্রাম আবার দেখা দিয়েছে এমনকি লন্ডনের উপকণ্ঠে। হামবুর্গ বাদে প্রায় সকল মাঝারি শহরে ট্রাম চলে। লিসবনের ট্রাম কমপানি ব্রিটিশ স্থাপনা করেছিল। এখনও তো দিব্যি চলে সরু রাস্তা দিয়ে।  আর ওই ট্রামের লাইন উঁচু বলে অসুবিধে?আমস্টারডামের পুরো ট্রাম লাইন রাস্তার চেয়ে উঁচু। 
     
    ময়দানের পাশ দিয়ে অন্তত ঐতিহ্য বজায় রেখে চলুক। 
  • Sumantune | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:০৪538046
  • খুব ভাল লাগলো 
  • সুপ্রতিম দত্ত | 2409:40e0:2f:b4a5:984f:bbff:fe34:***:*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৩৯538063
  • খুব ভাল লাগল।
     
    সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন এসে পুরনোকে সরিয়ে দেয়। 
    পুরনো হলে কালের নিয়মেই হারিয়ে যেতে হয়, হারিয়ে যায়।
    আমার ছোটবেলাটা সম্পূর্ণ ট্রাম নির্ভর ছিল। একটি ট্রামডিপোর পাশেই কাটিয়েছি জীবনের প্রথম বিশের উনিশটা বছরই। আমার বাবা বাসে চড়তেন না, চড়াতেনও না, আপিসে যাওয়া আসা করতেন ট্রামে। ট্রামে করে যাওয়া চলে না এমন জায়গায় আমাদের নিয়ে যেতে হলে ট্যাক্সি করতেন। স্কুলজীবনের মাঝামাঝি থেকে ট্রামহীন এলাকার স্কুলে যাতায়াতে বাসে চড়েছি।  আমার বাবার কাছে ঐ এলাকা ছিল অগম্য (না কি দুর্গম)।

    নস্টালজিক হতেই পারি, তবু ……
    পুরনোকে আঁকড়ে রাখা যায় না, 
    যুগ পরিবর্তনকে মেনে নিতেই হয়।

     
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৩538081
  • "তাই ঘোড়ার বিকল্প হিসাবে, রেলের মত ট্রামের জন্য তৈরি হল বাষ্পীয় ইঞ্জিন।"
    বিষয়টা জানা ছিল না। 
     
    ট্রাম সচক্ষে দেখিনি। কিন্তু এর কথা ছোট থেকে পড়া হয়েছে গল্পে উপন্যাস, দেখা হয়েছে  সিনেমায়। আর ট্রাম বরাবরই আমার কাছে এক আশ্চর্য যান মনে হয়েছে কেন জানি না। এর সাথে কোথায় যেন জড়িয়ে আছে রোমাঞ্চের গন্ধ। 
     
    শেষ লাইনে চলমান ইতিহাস পঠনের যে আয়োজন,তা মুগ্ধ করল। আসলে কিছু শহরের অবধারিত অংশ হয়ে উঠে এর উপর চড়ে বেড়ানো উপাদানসমূহ। পুরনো, যুগের অনুপযোগী হলেও সেই উপাদানগুলোকে মুছে দেয়া যায় না পুরোপুরি, তাহলে শহরটির ঐতিহ্য-অক্সিজেনে ঘাটতি পড়ে। 
     
     
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:75b0:69fa:a1d3:***:*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:০৯538082
  • ট্রাম স্বচক্ষে না দেখে কিছু মিস করেননি। মান্ধাতার আমলের একটা জিনিস, সামনে থেকে দেখলে রোমান্টিকতার এক মাইলের মধ্যেও আসবে না :-)
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৪538085
  • না না, ট্রাম চমৎকার জিনিস। আমরা এককালে গল্ফ ক্লাব রোডে একটা বাসায় থাকতাম, কখনো সময় কাটানোর ইচ্ছে ও অবসর হলে ট্রামে চেপে বসে ঘন্টা খানেক ধরে নিরিবিলিতে কলকাতা দেখতে দেখতে গল্প করতে করতে বাদাম ভাজা খেতে খেতে ময়দান চলে যেতাম, আবার ফিরতি ট্রামে ফিরে আসতাম।

    কিন্তু কলকাতা শহরে বেশি লোকের অত অবসর সময় নেই, অথবা আরো ঘটনাবহুল গন্তব্য আছে, তাই কী আর করা। ছোটখাটো দূরত্বের জন্যও ট্রাম ভালো।
    কিন্তু যেকোন কিছুকেই তো বাণিজ্যিক লাভক্ষতির নিরিখে মাপা হয়, তাই এ হওয়ারই ছিল।
    একেক সময় দেখতাম কোথায় একটা ট্রাম লাইনের তার কেটে গেছে, আর একের পর এক সার বেঁধে ট্রাম দাঁড়িয়ে, ট্রাফিকের হেস্তনেস্ত।

    কলকাতার ট্রাম জিনিসটাকে নিরিবিলি সময়বিলাসের জিনিস হিসেবে প্রোমোট করে রেখে দিতে পারলে ভালোই হত।

    এর বাইরে এই নিয়ে সাম্প্রতিক হাহাকারের তেমন মানে দেখি না। এ তো হঠাৎ করে হয়নি, ধারাবাহিক ব্যাপার। সেই কোন কালে হাওড়ার ট্রাম বন্ধ হল, যদ্দুর মনে পড়ে আমি তখন কলকাতাতে আসিওনি, কাগজে পড়েছিলাম। তারপরও নানা জায়গা থেকে।

    যারা হইহই করছেন তাঁদের মধ্যে ক'জন ব্যক্তিগত যানবাহনের বদলে ট্রামের ওপর ভরসা করেন সেটাও দেখার। অনেক লোক ট্রাম চড়েন - এমন হলে তো রেভিনিউ সংক্রান্ত কারনেও ট্রাম উঠে যাওয়ার কথা না।
     
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৪৯538086
  • আসলে কলকাতার কয়েকটা মধ্যযুগীয় বাবু দরকার। আমার যদি অনেক টাকা থাকতো, মানে ফিলদি রিচ যাকে বলে, প্রাইভেট জেট আর প্রমোদ তরণী লেভেলের, তাহলে আমি ট্রাম কোম্পানীর জমিগুলি কিনে নিয়ে নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের মত একটা জিনিস বানিয়ে দিতাম।
    আগেও একটা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম, ময়দান ধর্মতলা চৌরঙ্গী ভবানীপুর সব কিনে নিয়ে তাতে জঙ্গল বানিয়ে দু'চার পিস কেঁদো বাঘ ছেড়ে দেওয়ার, তবে সেটা বাড়াবাড়ি।

    কিন্তু শ দেড়শো কোটি খরচ করে একটা পার্ক বানানো তেমন তেমন বড়লোকের কাছে তো কিছুই হওয়ার কথা না।
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৫৭538087
  • তবে এসপ্লানেড থেকে ময়দান হেরিটেজ ট্রাম তো চলবে দেখছি। আশা করি উদ্যোগটা সফল হবে, লোকজন চাপবে, খামোখা পানের পিক ফেলবে না ও সিট খুলে নিয়ে যাবে না ইত্যাদি।

    পাটুলির ওদিকে একটা পার্ক আছে, বেণুবন বিহার যদ্দুর মনে পড়ে নাম - ওখানে একটা ট্রামকার রাখা ছিল - তার মধ্যে ক্যাফে। আশা করি এখনও আছে।

    ওর পাশে অবশ্য পরে একটা উৎকট বহুতল গাড়ির শোরুম তৈরি হয়েছে, ধুলো ধোঁয়াতে কী অনস্থা কে জানে। আগে বেশ মনোরম ছিল পরিবেশ, গাছপালা ঘেরা, পাশে ঝিল।
  • dc | 2a02:26f7:d6c0:680d:0:d7e0:8cd2:***:*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০০538088
  • হ্যাঁ সেন্ট্রাল পার্কের মতো একটা জিনিস বানাতে পারলে বেশ হয়। 
     
    এই প্রসঙ্গে মনে হলো, চেন্নাইএর মধ্যিখানে কোয়েমবেডু নামে একটা বিরাট বড়ো বাস স্ট্যান্ড আছে, প্রায় শিয়ালদা স্টেশান সাইজের। সেই বাস স্ট্যান্ডটা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তার বদলে চেন্নাইএর পেরিফেরিতে তিন জায়গায় তিনটে নতুন বাস টার্মিনাদ খোলা হচ্ছে। আর কোয়েমবেডুতে পুরো জায়গাটায় একটা পার্ক তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে, ব্যাঙ্গালোরের কাবন পার্কের আদলে। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০৬538089
  • স্যরি, বেণুবন ছায়া। বেণুবন বিহার তো বুদ্ধ মন্দির।
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০৮538090
  • বাহ বাহ, এ তো চমৎকার ব্যাপার।
  • | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:২১538091
  • কিন্তু  পার্কস্ট্রীট থেকে  প্ল্যানেটোরিয়াম পর্যন্ত একটা ছোটমত জঙ্গল আছে তো। কৃত্রিম জঙ্গল কিন্তু খাসা জায়গা। 
     
    আজকে আবার ফেবুতে দেখলাম ট্রাম আর সিটিসি বাসকে আলাদা করা হচ্ছে। ট্রাম যে কটা চলিছে সে কটা চলিবে আপাতত। খবরের লিঙ্ক পেলে দেব। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৪২538092
  • হ্যাঁ, ওদিকটা বেশ সুন্দর, ময়দানের চারদিকেও বেশ গাছপালা, সবুজ আছে। পার্ক স্ট্রিট থেকে প্ল্যানেটোরিয়াম, একটু গুগল আর্থ দিয়ে ঘুরে আসি।
    আমি এমনিতে তৎকালীন বইমেলা ছাড়া আর গোটা দুই বার ভিক্টোরিয়া ছাড়া আর রবীন্দ্র সদন নন্দন চত্বর ছাড়িয়ে ময়দানের দিকে যাইনি, তবে পার্কস্ট্রিট মিডলটন রো ইত্যাদি অঞ্চলে নিত্যি যাতায়ত ছিল, পাশের সবুজ খুবই সুন্দর। আর সপ্তাহান্তে শিবপুর যেতাম, বেশ কিছুটা খোলামেলা জায়গা দিয়ে বাস যেত ব্রিজে ওঠার আগে।
  • অয়নেশ | 2402:3a80:1963:d0af:278:5634:1232:***:*** | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:৫৬538094
  • র২হ 
    ট্রাম নিয়ে হাহাকার যেটা বললেন সেটা অতটা গুরুত্বহীনও নয় বলেই মনে করি। নস্টালজিয়া এইসব বাদ রেখেই বলছি। কেন গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে ট্রাম প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ সেটা পৃথিবীব্যাপী ডিসকোর্সে প্রতিষ্ঠিত। সেটা নিয়ে নতুন করে বলার নেই। আর চাইছিও না।
    কিন্তু কজন চড়ে সেটা বুঝতে গেলে নিয়মিত না হোক, অল্প হলেও ট্রামে চড়ার একটা অভ্যেস থাকতে হয়। আমি একটা রুটের উদাহরণ দিচ্ছি। বালিগঞ্জ - টালিগঞ্জ। অত্যন্ত অনিয়মিত পরিষেবা এবং সেপারেট লাইনওয়ে না থাকা সত্ত্বেও যথেষ্ট লোক এখনো হয়। পর্যাপ্ত নয় তাই নির্ভর করা যায় না, তবুও বহু মানুষ প্রেফার করেন ট্রাম। কারণ খুব সিম্পল। বাসে ন্যূনতম ভাড়া বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে রাসবিহারী অবধি ১০টাকা, সেখানে ট্রামে ৬ টাকা। যারা ওঠেন তাঁদের বড় অংশ চারু মার্কেট, কালীঘাট, লেকমার্কেটের দোকানদার, সবজিবিক্রেতা, মলের কর্মচারী, গৃহপরিচারক  ইত্যাদি। এঁদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এঁদের অনেকের হাতেই মালপত্র থাকে যার জন্য বাসে আলাদা ভাড়া গুনতে হয়। এঁরা অধিকাংশই বালিগঞ্জ থেকে সাউথ সেকশনের ট্রেন ধরেন। কোনোদিন রাত বাড়লেই রাস্তায় হন্যে হয়ে গণ পরিবহণের জন্য অপেক্ষারত মানুষের সংখ্যাটা বিশাল। তাছাড়া ছেলেবেলায় দেখেছি যখন রাসবিহারী এভিনিউ সেপারেট বুলেভার্ড ছিল তখন ট্রামের কী গতি ছিল। আসল কথা স্টেট প্রায়োরিটি কোনটা?  গরিব মানুষ ক্রমশ প্রায়োরিটি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তা নিয়ে কথা বললে তাকে খিল্লি করাটাও এখন দুর্দান্ত ইন-ফ্যাশন। সে নাকি গরিবের সরকারের সুভাষ চক্কোত্তির আমল থেকেই ভ্যানিশ শুরু হলো। এখন তো শুধু শেষ পেরেক। এখন আবার রাত ৯টা বাজলেই বাস মেলাও ভার। ময়দানে ট্রামের হেরিটেজ টুর থাকবে। কে জানে তার পাশে একদিন বাস-ও সেরকমই চলবে। (শর্ট ডিসট্যান্স বন্দে ভারতকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য লোকাল ইএমইউ সার্ভিসের যা অবস্থা তাও হেরিটেজ হয়ে যেতে পারে কিছু বছরের মধ্যে।) প্রায়োরিটি যখন ব্যক্তিগত যান আর কর্পোরেট পরিবহন ব্যবস্থা, তখন ব্যক্তিগত স্তরে এক্ষেত্রে কিছু করার যদি নাও বা থাকে, অন্ততঃ মানুষ হৈহৈ করলেও সেটা অকারণ হৈহৈ নয় বলেই মনে করি। এই আমাকেই অন্য ব্যবস্থা খুঁজতে হবে। আমার মতো অনেককেই। কালও ট্রামের জন্যই দাঁড়িয়েছিলাম।এমনিতেই অদ্ভুত নিয়মে এখন ট্রামলাইন তো রাস্তার মাঝখানে। গাড়ি পেরিয়ে যাওয়াই দায়। সে সব ব্যস্ত গাড়ির সময় কোথায় যে ট্রামযাত্রীকে পার হওয়ার সময় দেবে। দেখছিলাম রাস্তার যানজটে যানজটে  ৩০-৪০ বর্গফুট জায়গা দখল করে আলো হয়ে আছে একটি কি দুটি মাত্র মানুষ নিয়ে সেই সব ব্যক্তিগত গাড়ি আর ২০০ বর্গফুটে ১০০ মানুষ নিয়ে ট্রাম হয়ে যায় যানজটের কারণ, পরিবহন দপ্তরের বোঝা। এই আর কি। 
    যাই হোক আপনি বললেন বলেই এত কথা বলে ফেললাম।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:১০538096
  • শহরে অনেককটা খুব ভালো ভালো রুট আছে যেখানে জায়গাও আছে সেপারেট লাইন করে ট্রাম চালানোর। দিব্যি বন্দোবস্ত হতে পারে সস্তায় পুষ্টিকর। সল্টলেক, বাগজলা খালের ধার, নিউটাউন ইত্যাদি জায়গা ট্রাম চালানোর জন্য ব্যাপক। একটু আধুনিক ট্রাম সাথে আলাদা লাইন। 
     
    আর জঙ্গলের কথা হচ্ছিল যখন, পাটুলি থেকে আধঘন্টা মতো দূরত্বে একটা দারুণ অভয়ারণ্য আছে। চিন্তামনি কর অভয়ারণ্য। অভয়ারণ্য না বলে পাখিরালয়ও বলা যায়। নামে কি বা এসে যায়, ভেতরে বেশ ঘন জঙ্গল, একটা দারুণ ফিল আসে, সাথে ভোর ভোর যেতে পারলে ক্যামেরা বা দূরবীন হাতে, খুব সুন্দর সুন্দর পাখি দেখা যায়। আর ডাক তো শোনা যায়ই। একটু বেলায় জঙ্গলের কাছেই ভাস্কর চিন্তামনি করের গ্যালারি আর ওয়ার্কশপও ঘুরে দেখা যায়। 
  • r2h | 192.139.***.*** | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:২৩538097
  • অয়নেশ, আচ্ছা... বুঝলাম। আমিও বছর কুড়ি আগের অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেক লোম ট্রামের ওপর ভরসা করতেন, গড়িয়াহাট রাসবিহারী অঞ্চলে কবে ট্রাম বন্ধ হলো? ১৯৯৯ নাগাদ ওদিকে চলা ফেরা করার জন্য ট্রাম খুব ভালো উপায় ছিল। আমি ভাবছিলাম এখন হয়তো অন্য গাড়ি ঘোড়ার চাপে ট্রাম একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। 
    গত বছর দশেকে যখন কলকাতা গেছি ট্রাম চোখে পড়েনি - হয়তো যেদিকে ট্রাম চলে সেসব দিকে যাইনি, নিজের সীমাবদ্ধ দেখাটুকু নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। 
    ছোটবেলার কলকাতার স্মৃতি মনে পড়ে - পূরবী সিনেমার উল্টোদিকে একটা হোটেলে থাকা হত, তার নাম হোটেলিয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট্স, মালিক বোধহয় ত্রিপুরার ছিলেন, ত্রিপুরার লোকেরা খুব থাকতেন ওখানে। একটা পুরনো আমলের বাড়িকে হোটেল বানানো হয়েছিল। সেখানে রাতে টানা বারান্দায় বসে বসে ট্রাম দেখা একটা বড় মজা ছিল, বেশি রাতের দিকে শেষ ট্রাম কখন যাবে আর ভোরে প্রথম ট্রাম কখন আসবে এইসব। বহিরাগত হিসেবে কলকাতার সঙ্গে ট্রামের ছবি আমার কাছে মিলে মিশে যায়।
    তবে ওসব তো স্মৃতিচারণের কথা। দূষণ, অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক ছোট দূরত্ব, সেসবের দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এতে দ্বিমত নেই।

    অকারন হইহই একটা কারনেই বলা - যে এই লাগামছাড়া উশৃঙ্খল অটোমোবাইলের ভিড়, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন উঠে যাওয়া - এগুলি অনেক দিন ধরেই হচ্ছে, ব্যাপক হারে ধারাবহিক সচেতনতা দরকার - এইসব।

    যদি টিকে যায় ও নতুন করে ভাবা যায় তাহলে অবশ্যই, খুবই ভালো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন