গরু
'গরু একটি গৃহপালিত পশু। তাহার চারটি পা, একটি লেজ, দুইটি শিং ও পিঠের ওপর একটি কুঁজ থাকে' – সারাদিন যার কোনও কাজ নেই সে সঙ্গে সঙ্গে হাজির। বলল, কেন, নাক, চোখ, মুখ এই সব থাকে না? তারপর মোলার টীথ, ইনসিসর টীথ এরা কেমন বিশেষ রকম – আমি বললাম, শোনো, এটা বাংলা রচনা, ক্লাস থ্রি-র। বাংলা মাধ্যমের বাচ্চারা এই রকম শক্ত শক্ত ইংরিজি শব্দ শোনেনি। আর শুনে থাকলেও, খাতায় তা লিখলে, বেঁড়ে পাকা বলে মাস্টারমশায়েরা নম্বর কেটে নেবেন।
খুড়ো বলল, আরও আছে। এইযে পিঠে কুঁজের কথা বললি, মানে মেয়ে গরুদের আরকি, পিঠে তো কুঁজ থাকেই না বলতে গেলে। ষাঁড় বা বলদ হলে অবশ্য – আমি বললাম খুড়ো, এই লিখেই ছেলেরা চিরকাল নম্বর পেয়ে এসেছে। এখন দুম করে কুঁজটা বাদ দিলে – বুঝতেই পারছ, ইস্কুলে পাঠানো হয় নম্বর পাওয়ার জন্যে, জ্ঞান অর্জনের জন্য নয়। তাছাড়া, গরু বলতে তো এন্টায়ার স্পিসিসটা বোঝানো হচ্ছে, খালি মেয়ে গরু বা গাভী তো নয়। এর পরেরটা শুনলেই বুঝবে।
হ্যাঁ, 'গরু অতি উপকারি প্রাণী। ইহার দ্বারা চাষবাস, গাড়ি টানা ইত্যাদি নানা কাজ হয়। গরুর দুধও খুবই উপকারী পানীয়। তা ছাড়া ইহার দুধ হইতে ছানা, দই, রাবড়ি ও নানা প্রকার মিষ্টান্ন প্রস্তুত হয়।' খুড়ো, তোমার উল্লসিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এর পর প্রসন্ন গোয়ালিনীর কোনও প্রসঙ্গ এই রচনায় আসবেনা। কান্তখুড়ো ব্যাজার মুখ করে বলল, - 'ও'।
আচ্ছা খুড়ো, গরুর দুধ খুব উপকারী বলা হচ্ছে কিন্তু গরুর মাংসও খুব পুষ্টিকর এটা বলা হয় না কেন? আচ্ছা এমন তো বলা যেত, কোনও কোনও ধর্মের লোক – ঠিক আছে ধর্ম শব্দটা ডাইসি – কোনও কোনও সম্প্রদায়ের লোক এই মাংস খান, আবার অন্য সম্প্রদায়ের লোক ভুলেও স্পর্শ করেননা, এমন তো বলা যেত।
খুড়ো বলল, আমার সামনে ভুলেও এই প্রসঙ্গের অবতারণা করবি না। প্রসন্নর গরুগুলোকে কেউ খেয়ে ফেলছে ভাবলেই আমার কেমন – আমি বললাম, আচ্ছা মিস্টার চক্কোত্তি, গরু কারা খায় বলতো? খুড়ো বলল, মুসলমানরা। আমি বললাম, শুধু মুসলমানরা খায়? খৃষ্টানরা খায়না? নাগারা খায়না? চিনেরা খায়না? খুড়ো বলল, হুম্। আমি বললাম, হিন্দুরা খায়না? খুড়ো বলল, সে তো এখন নব্য শিক্ষিত যুবক যুবতীদের ধম্মো কম্মো না মানাটা একটা ফ্যাশান হয়েছে, আমি ইন জেনারাল হিন্দুদের কথা বলছি ।
আমি বললাম, তাই? হায়দ্রাবাদে ষোলই এপ্রিল (২০১২) একটা ছোটখাট দাঙ্গা হয়েছে জান? কাদের মধ্যে বলত? পারলেনাতো, ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটির দলিত ছাত্ররা বীফ্ বিরিয়ানি উৎসব করছিল, কেননা এটা নাকি তাদের ঐতিহ্য বা পরম্পরা। এবার অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ছেলেরা এসে ইঁট পাটকেল নিয়ে হামলা চালায়। তাই নিয়ে ছোটখাট দাঙ্গা, একজন ছুরিকাহত। তা খুড়ো দুদলই তো হিন্দু। তাই না?
কমলাকান্ত চক্রবর্তী বলিলেন, তবে তুই গরুখোরদের দলে? আমি বললাম, সব্বোনাশ, কক্ষনো না। রেড মীট মানেই টক্সিক, আর বিগার দি অ্যানিম্যাল, বিগার দি অ্যামাউন্ট অফ টক্সিসিটি। হাতি খেলে আরও টক্সিক।
যাকগে খুড়ো, আমাদের রচনাটাই ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছিল। - গরু আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় খুবই প্রভাবশালী প্রাণী। এই জীবটিকে নিয়ে নানা রকম প্রবাদ-প্রবচনও তৈরী হয়েছিল, যেমন, বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ানো। কিন্তু ইদানীং কালে বাঘ এবং গরুকে এক ঘাটে কিছুতেই হাজির করানো যাইতেছে না, গরু দেখিলেই বাঘ আতঙ্কে – কমলাকান্ত বলল, অ্যাই, অ্যাই, ছোঁড়ার মাথাটা এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেল বোধ হয়। কি বলছিস তুই, গরু দেখিলেই বাঘ আতঙ্কে, না ব্যাপারটা উল্টো হবে?
আমি বললাম, খুড়ো, যতই ছোঁড়া বল, বুড়ো বয়সে গরুর রচনা কি এমনি লিখতে বসেছি? তবে শোন, সালটা বোধকরি দু হাজার তিন কিংবা চার হবে। ইন্সপেক্শনে ভূবনেশ্বর গেছি। ট্রেনটা পৌঁছল রাত সাড়ে তিনটেয়। সকাল ন'টায় বেরোতে হবে, ঘুমোলে আর উঠতে পারবনা। কী করি এখন? কাগজও তো সাতটার আগে দেবেনা, অগত্যা টেলিভিশনটা খুলে বসলাম, জান খুড়ো, টি ভি আমি সচরাচর দেখি না। মাঝে মধ্যে খবর আর খেলার অংশবিশেষ ছাড়া। তা এ সময়ে খেলাও কিছু নেই, আর খবর তো বাসি। তাই অ্যানিম্যাল প্ল্যানেট খুলে বসলাম। ওখানে একই প্রোগ্রাম দিনে রাতে বেশ কবার রিপীট করে। সেখানে দেখি এক সিংহ পরিবার একদল মোষকে তাড়া করেছে। তারা প্রাণভয়ে ছুটছে, পেছনে ছুটছে সিংহী্রা। তারাই শিকারটা ধরে। নবাবজাদা সিংহ মশাই পরে এসে গিন্নীদের তাড়িয়ে নিজের উদরপূর্তি করেন। গিন্নীরা আর বাচ্চারা পায় এঁটোকাঁটা যত।
খুনোখুনি দেখতে ইচ্ছে করেনা খুড়ো, কিন্তু কি আর করা, বিবেকানন্দ বলেছিলেন, 'দা স্কীম অফ দা ইউনিভার্স ইজ ডেভিলিশ'।
এখানে কেউ না কেউ কাউকে না কাউকে খেয়ে বেঁচে থাকে। কিচ্ছু করার নেই। বাঁচতে গেলে কাউকে খেতেই হবে।
তা সিংহীরা তাড়া করে একটা তাগড়া মত মোষকে তো ধরে ফেলল। তবে সেও বিনা যুদ্ধে মেদিনী ছাড়বার পাত্র নয়। একটা সিংহী ঘাড় কামড়ে ধরেছে। একটা কোমর, একটা সামনের পা আর একটা পেছনের পা ধরেছে, ব্যাটা চার চারটে হিংস্র ঘাতকের সঙ্গে তাও লড়ে যাচ্ছে। একবার তো ওকে মাটিতে পেড়েও ফেলল। আমি ভাবলাম সব শেষ। ওমা, ব্যাটা চারটেকে নিয়েই উঠে দাঁড়াল।
খুড়ো বলল, তারপর? আমি বললাম, যারা পালিয়ে গেছিল আর দূরে দাঁড়িয়েছিল, তাদের একজন ঘুরে দাঁড়াল। ভাবটা এই রকম, ওরে, ও তো একলা লড়ে যাচ্ছে, আমরা কি কাপুরুষ হয়েই থাকব? আর একজন গুটিগুটি এসে তার পাশে দাঁড়াল। আর একটা এল, আরো একটা, এই করে দশ বারোটা সারিবদ্ধ। হাল ছেড়োনা বন্ধু, শুধু শৃঙ্গ বাগাও জোরে। এবার তারা এগোতে লাগল। প্রথমে ধীরে, তারপর জোরে, তারপর আরও জোরে, মাথা নীচু করে, শিং বাগিয়ে। ওদের পেছনে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো আরো কয়েক লাইন বিশ, ত্রিশ, পঞ্চাশ –
খুড়ো, সিংহীরা শিকার ছেড়ে পিছিয়ে দাঁড়াল, তারপর পালাতে লাগল প্রাণভয়ে। পশুরাজ সিংহ পালালো আরও জোরে, গিন্নীদের পেছনে ফেলে। বাস্তিল দূর্গের পতন দেখছি খুড়ো, কিংবা বলশেভিক রিভোলিউশন। আমার চোখের পলকগুলো ভিজে ভিজে ঠেকছিল খুড়ো, আত্মহারা হয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম, - মার শালাকে, মার মার – একটা বেল বয় ঘাবড়ে গিয়ে দরজা ঠেলে বলল, আপড়ঁ কিছি কহিলে আইগাঁ?
মিস্টার চক্রবর্তী বললেন, উই ওয়্যার ডিস্কাসিং দি অ্যাফেয়ার্স অফ কাউস, নট বাফালোস। একে মোষ, তাও আবার বুনো। শুধু তাই নয়, তারা আবার আফ্রিকান। ওরা একটু ভায়োলেন্ট টাইপ হতেই পারে, মহিষাসুরের কথা শুনিসনি? ওটা তো ষন্ডাসুর হতে পারত। আমি বললাম দেখ খুড়ো, মোষগুলো কালো বলে চিরকাল শিডিউল কাস্ট। ষাঁড় ব্যাটাচ্ছেলে শিবের বাহন বলে চিরকাল ফোকটে খাবার দাবার পায় আর রাস্তায় ট্র্যাফিক আটকে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু মোষকে দেখতে খারাপ বলে যমরাজের সঙ্গে ট্যাগ করে দিয়ে,- নাঃ ডিস্ক্রিমিনেশন সেই আদ্যিকাল থেকেই চলছে।
- তাই বলে গরু – আমি বললাম, তুমি জিম করবেট ওমনিবাস পড়েছ? সেখানে একটা গল্পে আছে, ওই কালাঢুঙ্গির কাছে কিংবা রামনগরে, এক রাখাল গরু চলাচ্ছিল। হঠাৎ যমদূতের মত একটা বাঘ এসে তাকে ধরল। আসলে দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকতে থাকতে রাখালের সঙ্গে গরুমোষদের একটা আত্মিক বন্ধন তৈরী হয়। মালিকের বিপদ দেখে দশ-বারোটা গরুমোষ একত্রে তেড়ে এসে বাঘটাকে ঢুঁসিয়ে দিল। বাঘ তখন রাখালকে ছেড়ে চম্পট।
কান্তখুড়ো বলল, আরে ঐ দল তো মিশ্র, মানে, গরুর সঙ্গে মোষও ছিল। তাই অত সাহস। বাট উই ওয়্যার টকিং অ্যাবাউট কাউস ওনলি। গরু নিয়ে কথা হোক। ঐ যে ঘাটে গরু দেখে বাঘ আতঙ্কে না কি বললি, কথা ঘোরাস না।
তাহলে খুড়ো, রচনাটা শেষই করি। গরু নিয়ে রচনা, শুধু গরু, নো মোষ, ঠিক আছে? 'পূর্বেই বলা হইয়াছে যে, গরু মানুষের বিভিন্ন কার্যে ব্যবহৃত হয়। এখন দেশীয় গরুর শারীরিক এবং দুগ্ধোৎপাদন ক্ষমতাবৃদ্ধি ইত্যাদির উন্নতিকল্পে বিদেশি হলস্টীন, জার্সি, ইত্যাদি প্রজাতি আমদানী করা হইতেছে'।
খুড়ো বাধা দিয়ে বলল, ক্লাস থ্রি-র বাচ্চাদের রচনা এই রকম? আমি বললাম, আঃ বাচ্চা চিরকাল বাচ্চা থাকবে নাকি? রচনা তো সেই কখন আরম্ভ হয়েছে। বাচ্চা এখন মাধ্যমিক দিল বলে ।
হ্যাঁ যা বলছিলাম – দেশীয় গরুর উন্নতিসাধন কল্পে নানা বিদেশি প্রজাতি আমদানী হইতেছে কিন্তু তাহার কি সত্যই কোনও প্রয়োজন ছিল? আমাদের দেশেই খুবই উন্নত মানের বিভিন্ন প্রজাতির গরু পাওয়া যায়। তাহারা আকারেও বিশাল এবং অধিক দুধ উৎপাদনেও সক্ষম। ইহাদের মধ্যে আছে, গুজারাট, গির, ব্রাহ্মণ, চান্নি, গিট্টা, হরিয়ানা, পাটনাই, দক্ষিণ ভারতের কাঙ্গায়ম, নেলোর, ওঙ্গোলে ইত্যাদি। কিন্তু যতই তাহারা আকারে বিশাল হউক, তাহাদের শিং এর গঠন এমনই, যে আক্রান্ত হইলে তাহা আত্মরক্ষার্থে বিশেষ উপযোগী নয়। দক্ষিণ ভারতের গরুদের শিং বিশাল, কিন্তু তাহা পিছন দিকে বাঁকানো, প্রয়োজনের সময় কোনও কাজেই লাগিবে না।
কমলাকান্ত বলল, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এ লেখার বিশেষ কোনও উদ্দেশ্য আছে, তা ধানাই পানাই না গেয়ে ঝেড়ে কাশ না বাবা – আমি বললাম, খুড়ো, আমাদের বাংলার গরুগুলো আকারে ছোট, কেমন মায়া মাখানো চোখদুটো, গ্রামবাংলার গরীব ঘরে প্রায় বাড়ির সদস্যের মত। সে দুধ হয়তো কম দেয়, কিন্তু এই শ্যামলী- ধবলী গাই গুলোর শিং দেখেছো? কেমন সামনের দিকে বাঁকানো না? প্রয়োজনে কাজে আসতে পারে, কী বল? খুড়ো বলল, তার মানে?
আমি বললাম, আমরা কিন্তু গরুর কথা বলছি, শুধু গরু, নো মোষ। গত আটাশে এপ্রিল দু হাজার বারো, শনিবার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া কাগজের একেবারে প্রথম পাতায় একটা ছবি আছে। একটা গরু, দেশি গরু, আমাদের বাংলার গরুদের মতই দেখতে, কালচে রঙের। জায়গাটা দক্ষিণে, কোয়েম্বাতুরের কাছে, ওয়ালপারাই নামে পাহাড়ের কোলে একটা গ্রাম। সকালে গ্রামবাসীদের ঘুম ভাঙে একটা জান্তব গোঙানীর শব্দে। লোকে ভেবেছে কোনও লেপার্ড জাতীয় জন্তু বোধহয় গর্তে পড়ে টড়ে গেছে। তারা এসে দেখে ঐ গরুটার গোয়ালের এক কোনে একটা বিশাল বড় ডোরাকাটা বাঘ।
বাঘটা কাতরাচ্ছিল, তার চলাফেরার ক্ষমতা নেই। সে গরুটাকে অ্যাট্যাক করার সঙ্গে সঙ্গেই গায়ে যত জোর ছিল সব একত্র করে গরুটা তাকে গুঁতিয়ে দেয়। তার কোমর এবং পেছনের পা মারাত্মক জখম। গরুটার কিন্তু সামান্য কটা মামুলি আঁচড় ছাড়া গায়ে কোনও ক্ষত নেই। ভেতরের পাতায় বাঘটারও ছবি ছিল খুড়ো। বাচ্চা টাচ্চা নয়, পূর্ণ বয়স্ক ইয়াব্বড় কেঁদো বাঘ। খুড়ো, এক ঘাটে জল খাওয়া নিয়ে কী যেন বলছিলে?
হ্যাঁ ভাল কথা, যখন মিডিয়ার লোক ওখানে যায়, গরুটা বসে বসে বিন্দাস জাবর কাটছিল। কয়েক ফুট দূরে আস্ত বাঘের অবস্থানে তার কোনও হেলদোল নেই। গুন গুন করে নাকি গানও গাইছিল, বাংলা গান। তামিল ফোটোগ্রাফাররা ঠিক মানেটা বোঝেনি। খুড়ো বলল, বাংলা গান? কী গান? আমি বললাম, 'আর দেবো না আর দেবো না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ গো...হেই সামালো হেই সামালো...'
সিংহমশাই
সিংহমশাই সিংহমশাই হিংসা ভুলে যাও
রাজহংস খেতে দেব মাংস যদি চাও
বাচ্চাদের অনুস্বরের ব্যবহার শেখাতে গিয়ে একটা সাংঘাতিক অপরাধ করে ফেলছি আমরা নিজেদের অজান্তে। এই প্রশ্নটা আমার মাথায় ঢুকেছিল কিন্তু সেই শিশু বয়সেই, যখন এই ছড়া প্রথম শিখি। রাজহংস কি প্রাণী নয়? তবে হিংসা ভুলতে গেলে তাকে খেতে দেয়া হবে কেন? আসলে ছোট শিকার জুগিয়ে বড় শিকার প্রাণে বাঁচতে চায়। কিন্তু এটা পড়েই মনটা খচ্ খচ্ করত। অত সুন্দর একটা পাখিকে সিংহ খেয়ে ফেলবে? ওদিকে স্বর্গে মাদুগ্গার সঙ্গে সরস্বতীর তুমুল কাজিয়া বেধে গেছে। তোমার বাহন আমার বাহনকে খাবে কেন, অ্যাঁ?
আচ্ছা সিংহ মাংস খায় কেন? আর ফর দ্যাট ম্যাটার, বেড়াল, বাঘ, হায়না, হাঙর, কাক, চিল, এমনকি যাকে ভুল করে নিরামিষাশী 'ব্রাহ্মণ' বলা হয়, সেই চড়াই পাখিও মাংস খায় কেন? কারণটা খুব সোজা। জীবিত অবস্থায় কিছুদিন কাটাতে গেলে প্রত্যেক প্রাণীর প্রয়োজন প্রোটিনের। আর পৃথিবীর সমগ্র উদ্ভিদ ও শস্যভান্ডারের ক্ষমতা নেই এত প্রোটিন যোগানোর।
এই ডায়াবোলিক সিস্টেমটা ইনট্রোডিউস করল কে? ভগবান? বিবেকানন্দ কি সাধে বলেছিলেন, 'দ স্কীম অফ দি ইউনিভার্স ইজ ডেভিলিশ। আই কুড হ্যাভ প্ল্যান্ড আ বেটার ওয়ার্ল্ড'।
এ বিশ্বের পরিকল্পনাটাই নারকীয়। আমাকে সুযোগ দিলে অনেক উন্নতমানের জগতের নক্সা বানাতে পারতাম। আমার তো মনে হয় বিবেকানন্দ ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছিলেন। না, উনিও পারতেননা, আপাত সুন্দর মহাজগৎ আসলে বড় কুৎসিত। আবার ঠিক উল্টোটাও যদি বলা হয়, সেটাও ঠিক।
পৃথিবীতে প্রথম দিকে একদম প্রথম 'জন্তু' বা অ্যানিম্যাল যাকে বলা হয়, সেটি সমুদ্রের তলায় থাকত আজ থেকে ৫৮৫ মিলিয়ন, বা আটান্ন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ বছর আগে। তার নাম দেয়া হয়েছে 'বাইলেটারিয়ান'।
সেটি মাত্র এক সেন্টিমিটার লম্বা জোঁক টাইপের জীব। সেও নাকি 'অরগ্যানিক' ম্যাটার খেত। খেতেই হবে। প্রোটিন ছাড়া কোনও প্রাণী বাঁচবেনা। শরীরের সেল বৃদ্ধি এবং টিস্যু মেরামত করতে প্রোটিন লাগবেই।
এবার মজাটা এখানেই। কিছু প্রাণী তৃণভোজী, তারা উদ্ভিজ্য প্রোটিন খায়। আবার মাংসাশীরা তাদের খায়। মাংসাশীরা পিয়োর মাংসাশীকে সাধারণতঃ খাবেনা, বড়জোর ওমনিভোর বা সর্বভুককে খাবে। যেমন আফ্রিকাতে সিংহ, বাগে পেলে চিতা, গুলবাঘ বা হায়েনাকে মারবে কিন্তু খাবেনা। তারা বেবুন পেলে খেয়ে নেবে, কেননা বেবুন আমিষ নিরামিষ দুইই খায়। গুলবাঘ বা লেপার্ডের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য কুকুর, মানে গৃহপালিত কুকুর, যে মাংস খেলেও ভাত ডালও খায়।
প্রাণ সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বর নামক ভদ্রলোকের কোনও হাত নেই, তা মোটামুটি জানা গেছে। আজকের যে কটি প্রাণী মানুষের সর্বগ্রাসী লালসার হাত এড়িয়ে বেঁচে আছে, তারা নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এই জায়গায় এসেছে। জিরাফের গলা এক দিনে অত লম্বা হয়নি। জেব্রার গায়ের ডোরাও একদিনে হয়নি। এই ক'দিন আগেও আফ্রিকায় 'কোয়াগ্গা' বলে ওদের মাসতুতো ভাই ছিল, যাদের অর্ধেকটা শরীর ডোরাকাটা, পুরোটা নয়। মানুষ তাদের সাবাড় করার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছে। সিংহ এককালে গুলবাঘের মত ছোপ ছোপ শরীর আর প্রায় ওই রকম আকারেরই ছিল, দাড়িগোঁফ রাখার ফ্যাশন পরে শিখেছে।
কিন্তু ঈশ্বরবাবু না করলেও এই নিয়মটা করল কে, যে মাংসাশী প্রাণী অপর মাংসাশী প্রাণীকে খাবেনা? একটা সিংহ তো অনায়াসেই একটা চিতাকে মেরে (ধরতে পারলে, বা যখন বাই চান্স পারে) খেয়ে ফেলতে পারে, খায়না কেন? ভালই প্রোটিন পাওয়া যেত তো। আসলে মাংসাশী প্রাণীরা নিজেদের মধ্যে খাওয়াখাওয়ি করলে ফুড চেন টা নষ্ট হতনা? আবার তৃণভোজীরা গাছপালা না খেয়ে নিলে পুরো পৃথিবী ঢেকে গিয়ে কেলোর কীর্তি হতনা? সব কিছু খাওয়ার লোক আছে। বিষ্ঠা খাবার জন্য ডাং বীট্ল আছে, মৃতদেহ খাবার জন্য ম্যাগট আছে, মানে শ্যাল শকুনে যদি না খায় আরকি। কী জানি, যদিও ঈশ্বর বলে কেউ নেই, তবু মনে হয়, কী সুন্দর করে কে যেন এই আপাত আগ্রাসী কিন্তু আখেরে স্থিতিস্থাপক নিয়ম কানুন বানিয়ে রেখেছে। ঈশ্বরের সঙ্গে দেখা হলে, দাবাং সিনেমার সলমন খানের মত বলতাম, 'পান্ডেজী, আপ ভি গজব করতে হো'।
আচ্ছা, ধরা যাক, মানে তর্কের খাতিরে ধরা যাক, ঈশ্বরই এই সব সৃষ্টির পেছনে। ভদ্রলোকের একটা বিরাট ভুল হয়েছিল, মানুষ বানিয়েছিলেন।
তখন ইস্কুলে পড়ি। ক্লাস ফাইভ সিক্সে হবে। তখন থেকেই আমার কাগজ পড়ার খুব ঝোঁক। আমার বয়সী অন্য ছেলেরা কাগজ হাতে নিলে অরণ্যদেবের ফালিটা পর্যন্ত তার দৌড়। আমি কিন্তু বুঝি বা না বুঝি, অনেক কিছু পড়তাম। সে সময়ে পষ্টো মনে আছে পড়েছিলাম, বেনারসে এক গরু নাকি ধরে ধরে মুরগির বাচ্চা খেয়ে নিচ্ছে। কী করে খাচ্ছে? মুরগির বাচ্চা তো বাঁই বাঁই করে ছুটতে পারে। আসলে এটাও একটা 'গজব', যে, প্রাণীরা শুধুমাত্র অনুভুতির ফলে শত্রুমিত্র আলাদা করে চিনতে পারে। যে মুরগির বাচ্চা জীবনে চিল দেখেনি, সে-ও একটু নীচু দিয়ে চিলের উড়ান দেখলেই ধাঁ করে মায়ের পেটের তলায় ঢুকে যায়। কিন্তু গরু? ফুঃ, ওতো ঘাসফুস খায়, তাই অকুতোভয়ে তার মুখের সামনেই ঘোরাফেরা, আর তাতেই বেনারসী গরুর শিকার ধরার সুবিধে। বছর দশেক আগে একবার অফিস থেকে ফেরার সময়ে আমাদের পাড়ায় একমাত্র রকের আড্ডায় শুনলাম, আবার নাকি কাগজে বেরিয়েছে, গরু কোথায় মুরগির বাচ্চা খেয়েছে। কেন খেয়েছে?
একটা দলের সঙ্গে একবার গুজারাট ভ্রমণে গেছিলাম ঐ রকম সময়েই। দ্বারকায় পৌঁছে যে হোটেলটায় উঠলাম, সেটা রাস্তার ওপর হলেও সামনে অনেকটা জায়গা ছাড়া, সেখানে বেঁটে বেঁটে লোহার খুঁটি আর লোহার শেকল দিয়ে ঘেরা। বেশ কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার রাখা আছে , আমরা কজন খাওয়া দাওয়ার পর বসে আড্ডা মারছি।
আমাদের ম্যানেজার ছেলেটির নাম, তোতা। সারাদিন খাটাখাটনির পর তার খুব একটা খাবার ইচ্ছে না থাকলেও দলের পাচক তাকে একগাদা খাবার দিয়ে গেছে, দশ বারোটা রুটি, এক জামবাটি ভর্তি ডাল আর গোটা ছয়েক মাছ। তোতা বলল, কিরে, মাছ সস্তা হয়ে গেল নাকি গুজারাটে? যদিও কোলকাতার তুলনায় সস্তাই, তবু ঠাকুর বলল, সবারই তো খাওয়া হয়ে গেছে, এগুলো খাবে কে? তোতা সামান্য কিছু খেয়ে বাকিটা একটা চেয়ারের ওপর রেখে আমাদের সঙ্গ গল্পে মশগুল।
কিছু দূরে একটা গরু ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আস্তে আস্তে সে এবার ঘনিয়ে এল। একজন হ্যাট হ্যাট করে তাড়াচ্ছিল, তোতা বলল, থাক না, ও যদি খায় খাক না, আমি তো আর খাব না। গরুটা একটা একটা করে দশটা রুটি খেল। তারপর ডালটা এমন সন্তর্পনে খেল, যে বাটিটা একটুও নড়লনা। তারপর আমরা চোখ ছানাবড়া করে দেখলাম, একটা একটা করে পেঁয়াজ রসুন দিয়ে রান্না করা এই বড় বড় ছ'খানা মাছের পিস কপাকপ খেয়ে হেলতে দুলতে চলে গেল।
আগে কোথাও একটা বললাম না, যে সব প্রাণীর প্রোটিন লাগে, তো গরুর প্রোটিন কোত্থেকে আসে? ঘাস থেকে? ঘাসে প্রোটিন নেই তা নয়, তবে তাই দিয়ে অতবড় গতরটা মেনটেন করা যায়না। তবে? আসলে গরুর পেটটা ডাব্ল পেট। তার প্রথমটাকে বলে ফোরস্টমাক বা আগের পেট। এই ফোরস্টমাকের সবচেয়ে বড় অংশটার নাম 'রুমেন', যার মধ্যে এই ঘাসফুস গুলোর পাচন হয়। এখানে একগাদা ব্যাক্টিরিয়া আর প্রোটোজোয়া জন্মে, এই খাবারকে ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড আর গ্লুকোজ বানায়। আর এই ব্যাক্টিরিয়া আর প্রোটজোয়ারাই হচ্ছে গরুর মাছ-মাংস। এগুলোই প্রোটিন, যেটা গরু সবশেষে হজম করে। এবার গরুকে স্বাভাবিক ঘাস খাওয়ার জায়গায় না রেখে বেনারস বা দ্বারকার রাস্তায় চরতে দিলে তাকে তো মাছ বা মুরগি খেতেই হবে।
বিবর্তন এই ভাবেই হয়। মানুষ যদি গরুকে তৃণভুমির আওতার বাইরে জোর করে রেখে দেয় আর খড় ভুষি খাইয়ে গোমাতার 'সেওয়া' করলাম ভেবে পরম তৃপ্তি পায়, অচিরেই আমরা গন্ডায় গন্ডায় মাংসাশী গরু দেখতে পাব। ওদিকে থাইল্যান্ডের টাইগার টেম্পলের নিরামিষাশী বাঘদের যদি চার দিকে ছড়িয়ে দেয়া যায় এবং তারা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে, তবে কিছুদিন পরই মাংসাশী গরুরা তৃণভোজী বাঘ ধরে খেতে আরম্ভ করবে, এমনটা ভাবাই যায়।
এই দ্রুত বংশ বৃদ্ধির ব্যাপারটাও মজার। বাঘের গর্ভসঞ্চার হয় তিন বছরে একবার। বড় মাংসাশী, যারা টপ অফ দা ফুড চেন-এ বসে আছে, তাদের বাচ্চাকাচ্চা কমই হয়। যাও বা হয়, তাদের মা যতই রক্ষা করার চেষ্টা করুক, বাপেই বেশ কিছু বাচ্চাকে পরলোকের টিকিট কেটে দেয়। কন্ডর বা বড় ঈগলেরও দুটো ডিমের মধ্যে একটা ফোটে, তাও আবার এক বছর অন্তর। ঈশ্বরের কোনও হাত নেই (আক্ষরিক অর্থেও) কিন্তু এদের সংখ্যা বেড়ে গেলে আবার তৃণভোজী কমে যাবে, তখন গাছপালা সামলাবে কে? এদিকে তৃণভোজীর সংখ্যা হুড়মুড়িয়ে বাড়ে, কেননা মাংসাশীকে খাদ্য যুগিয়েও গাছপালা কন্ট্রোলে রাখার জন্য লোক দরকার তো।
অবশ্য সংসার চান্দ্ বা ওই ধরণের কিছু ব্যক্তি দায়িত্ব নিয়ে বাঘের বংশ নির্মূল করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। 'কম্যুনিস্ট' চিন দেশ শুধুমাত্র নিপীড়িত 'মানুষ'-এর সেবায় নিয়োজিত, সেখানে বাঘের শরীরের নখ থেকে অন্ডকোষ পর্যন্ত সব কিছু চড়া দামে কেনার লোক আছে। আরে বাবা, গরু বা হরিণের সংখ্যা কমানোর জন্য বাঘের কি দরকার? মানুষইতো কিছুদিনের মধ্যে খেয়ে শেষ করে দেবে সব তৃণভোজী প্রাণীকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, যদি – যদি ঈশ্বর বলে কেউ থেকে থাকে, এবং সে লোকটা মানুষ বানিয়ে থাকে, তবে এতবড় ভুল সে করবে কেন? পঁয়ষট্টি মিলিয়ন বছর আগে অতিকায় টিকিটিকি বা গিরিগিটি, অর্থাৎ ডাইনোসররা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত। সব ডেঞ্জারাস ডেঞ্জারাস ক্যারাকটার। ঈশ্বর নাকি ভাবলেন, নাঃ এ চলবেনা, এগুলো বড্ড বড় করে ফেলেছি। তাছাড়া দেখতেও মোটে ভালনা। সব তিনি সাবড়ে দিলেন রাতারাতি। কিভাবে, তার নানা থিওরী আছে। সব কটারই বাঘা বাঘা যুক্তি। তবে যেটা পাব্লিক বেশি খেয়েছে, তা হল, পেল্লায় গ্রহাণু বা উল্কাপিন্ড আছড়ে পড়েছিল, সেই ইমপ্যাক্টে ধুলোর আস্তর গিয়ে আকাশ বাতাস ঢেকে দিয়েছিল, সূর্যের আলো ঢুকতে পারেনি দীর্ঘদিন। তাছাড়া বন্যা ফন্যা নানা কেলো হয়ে ব্যাটারা সামারিলি স্বর্গে।
ডারউইন সাহেব বলেছেন যোগ্যই টিকে থাকবে, সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট। এই যেমন ডোডো পক্ষী, অ্যাত্তোবড় চেহারা, তায় আবার উড়তে পারেনা। মরিশাসে মানুষ নামল, নিজেরা মুগুর দিয়ে মেরে কিছু খেল, তাদের পোষা কুত্তারা বাকিদের সাবড়ে দিল, তারা পালাতে শেখেনি, সব শেষ। সারভাইভ করেনি, ফিট নয়। সেই যে অক পাখি, ব্যাটাবেটিদের সতীপনার চূড়ান্ত। তেনারা বৈধব্য পালন করতেন। বর বা বৌ মরলে আর বিয়ে করব না। এবার জাহাজের নাবিকরা জাস্ট ফাজলামি করেই কয়েকটা কে গুলি করতে লাগল। যাদের বৌ বা বর মরল, তারা চির বৈধব্য পালন করতে লাগল। নো ছ্যানাপোনা, নট কিচ্ছু। তেনারা শেষ হয়ে গেলেন চিরতরে। সেই যে প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, পায়রাদের মধ্যে সবচেয়ে রংবাহারী। এক এক দল যখন উড়ত, ঝাঁকটা এক মাইল চওড়া আর তিন মাইল লম্বা হত। সংখ্যায় তারা ছিল প্রায় পঞ্চাশ কোটি । উড়ন্ত পাখিগুলোকে আমেরিকার মোটা মোটা ইয়াঙ্কিগুলো ছর্রা বন্দুক দিয়ে পুটুস পুটুস মারত। ভাবত, অত বড় ঝাঁকের মধ্যে দশ বারোটা মারলে আর কি হবে। মজা হচ্ছে, সবাই তাই ভাবত আর তাই সবাই দশ বারোটা করে মারত। অত খেতেও পারতনা, মাঠে ময়দানে পড়ে থাকত। সব শেষ হয়ে গেল মাত্র কয়েক বছরে। সেই যে ইলিশ, আগে গঙ্গায় পদ্মায় ঝাঁকে ঝাঁকে – নাঃ এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছি, অন্য কথায় আসি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঈশ্বরের সৃষ্টির কথা কি ঠিক? তাই যদি হবে, তবে তিনি মানুষ কেন বানাবেন? সে তো আর কাউকে থাকতে দেবে না পৃথিবীতে ঠিক করেছে। ঈশ্বর কি তাই চেয়েছিলেন? আর ওদিকে ডারউইন কি ঠিক তাহলে? সারভাইভাল অফ দা ফিটেস্ট। মানুষ ফিটেস্ট দেখাই যাচ্ছে। কিন্তু বাকি সব প্রাণ শেষ করে দিলে সে নিজে কি সারভাইভ করবে?
“শুনরে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই” – তাহার উপরে, নীচে, ডাইনে, বাঁয়ে, কোত্থাও কেউ নাই। সে নিজেও নাই। এমন দিন আসছে।
(চলবে)