এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ২৭

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১২ বার পঠিত
  • ( ২৭ )

    কমল সাহা আর সাগর কথা বলতে বলতে গীরিশ এভিনিউয়ের মুখ পর্যন্ত এল।
    কমল বলল, ' তাহলে ওই কথাই রইল। সামনের সোমবার একটু কষ্ট করে আর একবার এস। তোমাকে নিয়ে বেরব বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ। মহাজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। পাঁচশ টাকার মতো অ্যাডভান্স করে রেখ। মাল তুলতে অসুবিধে হবে না। বাকিটা পরে আস্তে আস্তে তোমার সুবিধে মতো দেবে। অসুবিধে হবে না। আমার সঙ্গে ভাল খাতির আছে ... '
    ---- ' ঠিক আছে, দেখ যদি হয় ... ব্যবসাটা দাঁড় করানোর দরকার ... '
    ---- ' দাঁড়িয়ে যাবে ... দাঁড়িয়ে যাবে ... আমি তোমার কারবার দাঁড় করিয়ে দেব ... '
    ---- হমম্ ... দেখ ... কি আর বলব ... '
    ----' কিছু বলতে হবে না, শুধু আমাকে মনে রাখলেই হবে। এইটুকুই... ব্যাস ... ' কমল বলল।
    ---- ' এটা কি আর বলার দরকার আছে। দরকার হলেই আমাকে ডেক ... আমার কাছ থেকে রিটার্ন পায় না এমন কেউ নেই ... ', সাগর কথা দিল।
    ---- ' সে কি আর আমি জানি না। আজও তোমাকে দরকার আছে এ সমাজে ... সে আমি যে পার্টিই করি। সে যাক, একটা অন্য কথা ছিল ... এটা তোমাকে না বলে পারছি না ... '
    ---- ' হ্যাঁ, বুঝতে পেরেছি ... '
    ---- ' কি ? '
    ---- ' শ্যামপুকুর থানায় একটা ছেলে ... ওদিকে বেশ থমথমে ভাব দেখলাম ... ' সাগর বলল।
    ---- ' হ্যাঁ ... ওটা তো চলছেই। টিট ফর ট্যাট, মানে অ্যাকশান রিঅ্যাকশান চলছে আর কি ... কার কি লাভ হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আমি পার্টি পলিটিক্স নিয়ে এখন কথা বলতে চাইছি না। আমি একটা অন্য কথা বলছি। এটা অবশ্য আমার মাথা ঘামাবার ব্যাপার না ... '
    সাগর আর ধৈর্য রাখতে পারল না। বলল, ' আরে অত ধানাই পানাই করছ কেন ? বলেই ফেল না, প্রবলেমটা কি ? '
    ---- ' না তা না ... ব্যাপারটা হচ্ছে, ওই যে ছোঁড়াটাকে তুমি সেদিন দম দিলে না ... ওই ওখানটায় ... ওই নিবেদিতার মেয়েটার পেছনে পড়ছিল বলে ... সঙ্গে ওর ভাই ছিল ... '
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি ... তারপর বল না ... '
    ---- ' এই ক'দিন আগে বোসপাড়া দিয়ে কাঁটাপুকুর
    লেনের দিকে যাচ্ছিলাম ডানদিকে ঘুরে রামকান্ত বোস স্ট্রিটে যাব বলে। ওখানে একটা মহাজন আছে। পুরণো কারবারি ... আমার অনেক দিনের চেনা লোক ... আগে পাইকারি বাজারে ধনে জিরে ... '
    ---- ' বুঝেছি ... বুঝেছি ... আসল কথায় এস না ...'
    ---- ' বোসপাড়া লেনের মুখে দেখি ওই মেয়েটা ওই ছোঁড়াটার সঙ্গে এক পাশে দাঁড়িয়ে ইয়ে মানে ... হাবভাব বেশ মাখমাখ মনে হল ... কি বলব ... '
    শুনে সাগর তো আকাশ থেকে পড়ল।
    ---- ' তাই নাকি ! বল কি ... খুব আশ্চর্যের ব্যাপার তো ... '
    ---- ' সেটাই তো হল কথা ... বুঝি না এই এখনকার ছেলেমেয়েগুলোর কাজ কারবার ... সবসময়ে যেন ফুটছে... '
    সাগর বলল, ' দেখি ব্যাপারটা ... খোঁজ নিতে হচ্ছে তো ... না না এসব ঠিক না ... ছেলেগুলো মোটেই সুবিধের না। নিশ্চয়ই কোন বদ মতলব আছে। আমারও তো একটা ডিউটি আছে ... '
    ---- ' অবশ্যই। সেই জন্যই আমি ভাবলাম তোমাকে ব্যাপারটা জানিয়ে দেওয়া উচিত ' কমল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।

    দূর থেকে সাগর দেখতে পেল স্বাতী আর চিন্টু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে এক নাগাড়ে নানারকম গাড়ি যাচ্ছে। বারান্দার তলায় ফুটপাথ দিয়ে লোকজন যাচ্ছে। চিন্টু কি একটা বই পড়ছে। আর স্বাতী বারান্দার রেলিংয়ে হাত রেখে এদিক ওদিক দেখছে। চোখে সন্ধানী দৃষ্টি।
    সাগর বারান্দার তলায় গিয়ে পৌঁছল, তারপর হাসিমুখে ওপর দিকে তাকাল।
    চিন্টু চেঁচিয়ে উঠল, ' কাকু ... ওই তো কাকু এসেছে ... দাঁড়াও দাঁড়াও ... ' বলে ওখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নীচে নেমে এসে দরজা খুলল। রাত প্রায় আটটা বাজে।
    চিন্টুর বাবা এখনও অফিস থেকে ফেরেননি।

    চিন্টুর মা অপর্ণা বললেন, ' খুব খুশি হলাম। আমার ছেলে তো আপনার নামে পাগল ... আপনাকে টার্জান ভাবে ... বসুন বসুন ... '
    সাগর বসল। স্বাতী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা খাতার পাতা ওল্টাতে লাগল।
    ---- ' এখানে কমলদার কাছে একটা কাজ ছিল। ভাবলাম একটু ঘুরে যাই ... ' সাগর বলল।
    ---- ' খুব ভাল করেছেন। এদের ভাল মন্দ আপনি দেখছেন এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে ... আজকালকার দিনে কে আর কার পাশে দাঁড়াচ্ছে বলুন ... '
    ---- ' হমম্ তা ঠিক ... তবে এতে সৌভাগ্য টৌভাগ্যের ব্যাপার কিছু নেই। এটা যে কোন মানুষেরই কর্তব্য ... স্বাতী বস বস ... ' সাগর বলল।
    স্বাতী খাতাটা পাশে রেখে খাটের একপাশে বসল। মুখে কেমন একটা কাঁচুমাচু ভাব, অস্বস্তির চিহ্ন স্পষ্ট। সাগরের নজর এড়াল না।
    অপর্ণাদেবী বললেন, ' কর্তব্য ... সেটা আর কে বুঝছে ... বুঝলে তো আর চিন্তা ছিল না ... '
    ---- ' তবে দিদিভাই ... কথা হল যে আপনাদের ছেলেমেয়ের, বিশেষ করে মেয়ের খোঁজখবর কিন্তু আপনাদেরই রাখতে হবে। আমি তো এখানে থাকি না ... কাজেই সেটা সম্ভব নয় ... '
    ---- ' হ্যাঁ, সে তো বটেই ... সে তো বটেই ... আপনি কি করে ... ' স্বাতীর মা একমত হলেন।
    ---- ' না মানে ... কোনরকম অসুবিধেয় পড়লে আমি তো আছিই। কিন্তু ছেলেমেয়ে বড় হলে সকলেই আশা করে তারা নিজের ভাল নিজে বুঝবে ... ভুল কিছুতে জড়িয়ে নিজের মা বাবাকে বিপদে ফেলবে না ... '
    অপর্ণাদেবী স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দিলেন, ' তাই তো ... তাই তো ... ছেলেমেয়ের বুঝদার হওয়ার দরকার ... বয়স তো হচ্ছে ... '
    স্বাতীর মুখে গাঢ় অস্বস্তি খেলা করতে লাগল। এই সময়ে জুলি হঠাৎ লাফ দিয়ে সাগরের কোলে উঠে গুটিসুটি মেরে বসল।
    অপর্ণা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন, ' অ্যাই ... নাব নাব ... উঃ ... লোকজন আসার উপায় নেই বাড়িতে ... '
    সাগর জুলির গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, ' ঠিক আছে, থাক না ... কোন ব্যাপার না ... '
    জুলি নির্বিকার ভাবে চোখ বুজে ধ্যানস্থ হল।
    ---- ' ওরা কিন্তু মানুষ চেনে। যাকে তাকে পছন্দ করে না। ওরা ঠিক গন্ধ পায় ... '
    চিন্টু বলে উঠল, ' ধূপের গন্ধ ... '
    সাগর বলল, ' তাই হবে ... '
    তারপর স্বাতীর মুখে চোখের সার্চলাইট ফেলে বলল, ' হ্যাঁ গন্ধ গন্ধ ... আমিও কিভাবে জানি না ঠিক গন্ধ পেয়ে যাই। গন্ধ পেয়ে ঠিক জায়গায় হাজির হয়ে যাই ...তাই চিন্তা ভাবনা করে কাজ ক'র ... '
    অপর্ণাদেবীর এ কথাগুলো ধরতে পারার কথা নয়, তিনি ধরতে পারলেনও না। তিনি সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
    শুধু স্বাতী ঘোর বিড়ম্বিত মুখে মাথা নীচু করে আবার খাতার পাতা ওল্টাতে লাগল।
    সাগর আবার বলল, ' আমি খবর পেলে তোমার তো কিছু হবে না, দফা রফা হবে একটা ছেলের ... '
    এই সময়ে স্বাতী স্থান কাল পাত্র ভুলে চেঁচিয়ে উঠল, ' না .. আ - আ - আ ..... '
    চমকে উঠলেন অপর্ণাদেবী।
    সাগর বলল, ' আমি এবার উঠি ... বাকি অঙ্কটা আপনি মেলান... '
    রাত্রি তাকে সত্যিই কথা বলতে শিখিয়েছে। তবে ওদের বাড়ি থেকে রাস্তায় বেরিয়ে সাগরের কিন্তু খুব মন খারাপ হয়ে গেল।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন