এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ৩০

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২৮ বার পঠিত
  • ( ৩০ )

    দুর্বার ঠিক করেছে কাল শনিবার অফিস করে বর্ধমানের মেমারিতে দেশের বাড়িতে যাবে। সোমবার বিকেলে ফিরবে। সোমবার একটা ছুটি নেবে।
    ওরা চারজন অনেক দিন ধরে একসঙ্গে থাকার সুবাদে পারস্পরিক সম্বোধনটা 'তুমি' থেকে 'তুই' তে পৌঁছেছে। অবশ্য সুভাষ এদের মধ্যে সামান্য বড় বলে বাকি তিনজন তাকে 'তুমি' বলে।
    সুভাষ বলল, ' ঠিক আছে, বিকেলে তখন তো আমরা কেউ থাকব না। তোর কাছে একটা চাবি রেখে দিস।
    ---- ' হুঁ হুঁ ... '
    ---- ' আমিও অবশ্য সোমবার হাফ ডে নিতে পারি। বউবাজারে একটা কাজ আছে ... '
    ---- ' হুঁ হুঁ ... '

    দুর্বার শনিবার মেমারি গেল। এ মাসে এই একবারই। আর হয়ে উঠবে না। রবিবারটা বেশ ভাল কাটল সকাল থেকে গ্রামে এর ওর বাড়ি ঘুরে ঘুরে। ওদের নিজস্ব একটা পুকুর আছে বাড়ির পাশেই। সেখানে দুপুরবেলা আরো দুজনের সঙ্গে মাছ ধরতে বসল। ছিপ ফেলে ফাতনার দিকে চেয়ে বসে আছে। পুকুরটায় কই, ট্যাংরা আর খলসে আছে অনেক। দেখা যাক দু চারটে যদি ওঠে। উত্তরমুখো হয়ে বসেছে তিনজনে। শুনশান পুকুর পাড়। পিঠের দিকে গোটা চারেক ঝাঁকড়া কুলগাছ। কটা পাতিলেবু গাছ আর একটা করমচা গাছ রয়েছে। অর্ধেকের বেশি করমচা পেকে লাল হয়ে আছে। আর শেষদিকে দাঁড়িয়ে আছে দুটো বেঁটে মতো বুড়ো খরখরে খেজুর গাছ।
    হাওয়া খেলছে মাঝে মাঝে। জলের ওপর সিরসিরে কাঁপন বয়ে গেল। অনিমা বৌদি কুলগাছতলায় এসেছিল বোধহয় দুচারটে পাকা টোপা কুল তুলতে কাল দুপুরে অম্বল রাঁধবে বলে। তার চোখে পড়ল দুর্বার পুকুরে ছিপ ফেলে বসে আছে।
    সে বলে উঠল, ' কি গো ঠাকুরপো কখন এলে ?
    আজকাল তো একেবারে ভুলেই গেছ আমাদের ....'
    দুর্বার চট করে ঘাড় ঘুরিয়ে একবার অনিমাকে দেখে নিয়ে বলল, ' আসি তো মাসে দুবার ... এ মাসেই যা একবার হল ... '
    ---- ' তা নতুন জা কবে পাব ? কিছু ভাবনা চিন্তা করছ ? '
    দুর্বার ফাতনা থেকে চোখ না সরিয়েই বলল, ' হলে তো দেখতেই পাবে ... তাড়াহুড়ো কিসের ? '
    ---- ' না তাড়াহুড়োর কিছু নেই। অন্য কোথাও ছিপ
    ফেলা আছে কিনা সেটাই হল কথা ... সোয়াদি মাছ উঠলে ভাল ... '
    দুর্বার কোন উত্তর দিল না। ছিপের ফাতনা নড়ছে।
    দুর্বার টান মারল। বাঃ ... একটা বড় ট্যাংরা মাছ উঠেছে।
    দুর্বার ভাবল, অনিমার কথা বার্তায় যেন কোন ছিরি ছাঁদ নেই। অন্য কোথাও ছিপ ফেলা আছে কিনা ... সোয়াদি মাছ উঠলে ভাল ... আবার কি কথা ... গেঁয়ো অশিক্ষিত একেবারে। এইসব ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না, জানেও না। এইরকম একটা কপালে জুটলেই হয়েছে আর কি ...
    অনিমার কুল পাড়া হয়ে গেছে। সে যাবার সময় বলল, ' যদি সময় করে উঠতে পার, আমাদের বাড়িতে একবার যেও ওবেলা ... মধুমিতাও আসবে বিকেলে ... চললাম ... '
    অনিমা বৌদি চলে গেল ওপাশের নারকেল গাছ দুটোর পাশ দিয়ে।
    মধুমিতা অনিমা বৌদির কোন এক দূর সম্পর্কের বোন হয়। তার গলায় ঝোলানোর উদ্দেশ্য টের পাওয়া যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। মধুমিতা নামটা বার কয়েক শুনেছে এর আগে। কোন প্রতিক্রিয়া হবার কথা নয়, হয়ওনি। কিন্তু এখন ওই নামটা শুনেই অদ্ভুতভাবে বুকের রক্ত দুলে উঠল এক পলকের জন্য।
    দুর্বার আবার বঁড়শিতে চার গাঁথছে। জামবাটিতে রাখা ট্যাংরা মাছটা এখনও ছটফট করছে। দেখে দুর্বারেরও কেমন মন খারাপ হয়ে গেল, যা আগে কখনও হয়নি। সে কাঁটা বাঁচিয়ে মাছটাকে মুঠোয় তুলে ছুঁড়ে দিল পুকুরের জলে। সহসাথী বাকি দুজন অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। একজন বলল, ' এঃহে ... এ কি করলে ... ধরা মাছ কেউ ছাড়ে নাকি ! ভুল হয়ে গেছে তোমার ... ছিপে খানিকক্ষণ খেলতে হত ... '
    আর একজন বলল, ' আরে ধ্যাৎ ... এইটুকু মাছ আবার কেউ খেলায় নাকি ! '
    ---- ' সেটা অবশ্য ঠিক ... ' প্রথম জন স্বীকার করে নিল।

    কলকাতার টানে দুর্বার সোমবার সকাল সকালই বেরিয়ে পড়ল। বলল, ' একদম মনে ছিল না ... একটা জরুরী কাজ আছে ওখানে ... এক্ষুণি বেরোতে হবে ... '

    বিকেল পাঁচটা নাগাদ রামদুলাল সরকার স্ট্রিটের আস্তানায় পৌঁছল সে। ঘরে এখন কেউ নেই। ডুপ্লিকেট একটা চাবি দুর্বারের কাছে ছিল। সে দরজা খুলে তালায় চাবি লাগাল। ঠিক সেই সময় পিছন থেকে কার গলায় রিনরিন করে বেজে উঠল, ' বাড়ি গেছিলেন বুঝি ... '
    দুর্বার পিছন ফিরল সঙ্গে সঙ্গে। এমনিতে সে কিছুটা বিহ্বল অবস্থায় ছিল, এখন কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে গেল। এ তো আর মেমারির অনিমা বৌদির দূর সম্পর্কের বোন মধুমিতা নয়, যার ব্যাপারে দুর্বারের কোন তাপ উত্তাপ থাকবে না। এ হল অন্য মধুমিতা। নিজেকে তো আর নিজে ফাঁকি দেওয়া যায় না। নিজের থেকে নিজের পালানোর কোন জায়গা নেই। এটা অস্বীকার করে তো লাভ নেই যে সব কিছু জানা বোঝার পরও একটা অবুঝ ধূসর মধুমিতা ছায়া দুলে যাচ্ছে মনের উঠোনে।
    ঘুরে মধুমিতার মুখোমুখি হওয়ার পর কিন্তু দুর্বার মোটেই নেতিয়ে গেল না। ঋজু সপ্রতিভতা ধরে রাখল।
    বলল, ' হ্যাঁ ... মাসে দুবার করে যাই। এবার অবশ্য একবারই হল। তুমি কোথা থেকে ? আজ কলেজে ... মানে ইউনিভার্সিটি যাওনি ? '
    ---- ' হ্যাঁ গিয়েছিলাম তো ? কিন্তু কি সব পলিটিকাল ঝামেলা হচ্ছে, ক্লাস হল না। কি এক খেলা শুরু হয়েছে রোজ রোজ ... ভাল লাগে না ... মেন্টাল স্ট্রেস হয় না, বলুন ... '
    এই সময়ে বাড়ি ঢোকার মুখটা থেকে কে যেন বলে উঠল, ' শুধু নিজের মেন্টাল স্ট্রেস বুঝলেই হবে বোনটি, অন্যেরটাও তো বুঝতে হবে ... একদম ঠিক কথাই বলেছ। রোজ রোজ খেলা ভাল লাগে না। খেলা এক সময়ে শেষ করতে হয় ... '
    দুর্বার অবাক চোখে সুভাষের দিকে তাকিয়ে রইল। সুভাষের 'বোনটি' সম্বোধন যে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত তা না বোঝার মতো বুদ্ধিভ্রষ্ট দুর্বার এখনও হয়নি। দুর্বারের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এতে সে একটু নিরাশ হলেও প্রচ্ছন্ন সমর্থনও আছে।
    সে বলল, ' আরে সুভাষদা তুমি এ সময়ে হঠাৎ ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... আগেই তো বলেছিলাম কাজটা হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। আর তোদের দুজনকে একসঙ্গে পেয়ে যাব এতটা ভাবিনি ... তবে ঘটনাক্রমে পেয়ে গেলাম। ভালই হল ... পাওয়াটা তো দরকার ছিল ... কোন কোন খেলা জমে ওঠার আগেই শেষ করে দিতে হয় ...
    তাই না ? '
    মধুমিতার দিকে তাকিয়ে বলল সুভাষ।
    মধুমিতার কিন্তু কোন হেলদোল হল না। সে বলল, ' আপনি বেশ ভাল কথা বলতে পারেন তো ... আমাদের ক্লাসেও এরকম একটা ছেলে আছে ... দারুণ কথা বলে, কিন্তু কি যে বলে কিছুই বোঝা যায় না ... হাঃ হাঃ ... '
    সুভাষ ভাবল, একেবারে ঝানু মাল। তাকে কি চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে মেয়েটা ? ডোজ বাড়াতে হবে তা'লে। কে বলবে এ মেয়ের দুদিন বাদে বিয়ের ঠিক হয়ে আছে।
    দিল্লী আগ্রা বৃন্দাবন ভ্রমণ তেমন জমবে না মনে হচ্ছে।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন