এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ১৯

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ২২ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯
    ( ১৯ )

    সিঁথির বাড়িতে নিতাইবাবুরা ভালই আছেন। যদিও বরানগরের দিকে রাজনৈতিক গন্ডগোল লেগেই আছে। এখান থেকে আরম্ভ করে বেলঘরিয়া পর্যন্ত নক্শালদের ঘাঁটি। এরা সি পি এম পার্টির চক্ষুশূল। দু দলে মিলে খোলা রাস্তাটা যখন তখন যুদ্ধের ময়দান বানিয়ে ফেলছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে অবশ্য একটা অস্বস্তি আছে ওনাদের। নিতাইবাবুর এখনও দুবছর চাকরি আছে। বাড়িতে এখন স্বামী স্ত্রী দুজনই শুধু থাকেন। শ্রীলেখার বিয়ে হয়ে গেছে, অনিমেষ জামশেদপুরে টিসকোয় চাকরি পেয়েছে। মাসে একবার করে বাড়ি আসে। সবকিছু কেমন বদলে গেল।
    হেদুয়ার ধারের দিনগুলো ভীষণ মনে পড়ে অঞ্জলির। ওখানকার জীবনটা কত সুন্দর, মায়াময় ছিল। দীনবন্ধুও কতদিন দেখা করে না। আসলে কিছুই তো আর এক রকম থাকে না। বছরের পর বছর বেরিয়ে যাচ্ছে হু হু করে। দীনবন্ধুর জীবন তো আর আগের মতো নেই। সে এখন ঘোর সংসারী। বিভূতিবাবুরাই বা কেমন আছে কে জানে। নিরালা প্রহরে এই রকম নানা ভাবনা নদীর শান্ত স্রোতের মতো ভেসে আসে অঞ্জলির মনে।
    একদিন নিতাইবাবুকে বলল, ' একদিন রামদুলালে চল না, মনটা খুব চাইছে ... '
    নিতাইবাবু যেন এক পায়ে খাড়া ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ' অ্যাই ... একেবারে আমার মনের কথা বললে গো ... আমার মনটাও ক'দিন ধরে বড় টানছে ... এই রোববার তা'লে ... '
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... '

    বিভূতিবাবু আর রমাদেবী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন বলা যায়। বিভূতিবাবু প্রবল আবেগে নিতাইবাবুকে জড়িয়ে ধরলেন।
    বলতে লাগলেন, ' নিতাইবাবু ... কি সৌভাগ্য ... কি সৌভাগ্য ... আমাদের ভুলে গেলেন নিতাইবাবু ... '
    এইটুকু বলে তীব্র স্মৃতিকাতরতায় তার গলা বুজে আসল। বাকিটুকু বলতে পারলেন না।
    এহেন অকৃত্রিম আবেগ প্লাবনে দ্রবীভূত হয়ে নিতাইবাবুর চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল।
    তিনি কোনমতে অসংলগ্নভাবে বললেন, ' দত্তবাবু ... অত বড় অমানুষ নই ... বিশ্বাস করুন ... উপায় ছিল না তাই ... '
    আবেগমথিত পরিবেশ স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক মিনিট লাগল।
    রমাদেবী বললেন, ' তারপর বলুন, কেমন লাগছে ওখানে ? '
    অঞ্জলি বলল, ' এরকম জায়গা থেকে গিয়ে অন্য কোথাও কি আর ভাল লাগে ? তবে থাকতে থাকতে মন কিছুটা বসে গেছে ... এই আর কি ... '
    ---- ' তাই তো ... তা ছাড়া উপায়ই বা কি ? ' বললেন রমাদেবী।
    তারপর বললেন, ' একতলায় এখন যারা এসেছে তারাও খুব ভাল। চারজন মেস করে আছে। ডিসট্রিক্টে বাড়ি, কলকাতায় চাকরি করে। আমরা একসঙ্গে শিমূলতলায় বেড়াতে গিয়েছিলাম গত মাসে। খুব ভাল লেগেছিল ... '
    ---- ' তাই নাকি ? বাহ্ ... ইশশ্ আমাদের বললে আমরাও যেতাম ... এর পর কোথাও গেলে আমাদের বলবেন কিন্তু ... ' অঞ্জলি বলল।
    ---- ' অ ... নিশ্চই নিশ্চই ... সে আর বলতে। যোগাযোগটা রেখ ... যোগাযোগটা রেখ ... ' বিভূতিবাবু বললেন।
    ---- ' হ্যাঁ ... নিশ্চয়ই ... আপনারা একদিন আসুন না আমাদের বাড়ি আপনাদের সুবিধেমতো ... ' নিতাইবাবু বললেন।
    বিভূতিবাবু বললেন, ' তা গেলে তো ভালই হয়। ঠিক আছে সময় করে যাব একদিন। দেখি এই রবিবারে যদি ... '
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... কোন অসুবিধে নেই ... তা দেশের অবস্থা কি রকম বুঝছেন ? এভাবে আর কদ্দিন চলবে ? মানে, আমাদের এখানকার কথা বলছি আর কি ... '
    ---- ' দেখুন আমি এসব বুঝি কম। কিন্তু বারবার এরকম জগাখিচুড়ি সরকার হচ্ছে আর ভাঙছে, এর চেয়ে প্রেসিডেন্টস রুল হওয়া ভাল মনে হয় ...'
    ---- ' সেটাই হবে, দেখবেন সেটাই হবে ... বলে রাখলাম ... ' নিতাইবাবু মত প্রকাশ করলেন।
    ---- ' সে যাই হোক ... নীচের ছেলেগুলোর সঙ্গে আলাপ করবেন নাকি ?', নিতাইবাবুর দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন বিভূতিবাবু।
    নিতাইবাবু তেমন আগ্রহ প্রকাশ করলেন না।
    বললেন, ' ন্না ... থাক এখন ... পরে আর একদিন হবে ... আসব তো আবার ... '
    বিভূতিবাবু বললেন, ' বেশ ... '
    নিতাইবাবু বলেন, ' আচ্ছা ... সাগর মন্ডলের কি খবর ? কিছু জানেন নাকি ? '
    ---- ' হ্যাঁ, কে ... সাগর ? ও তো আজকাল এদিকে তেমন আসে না। হাতিবাগানে দোকান দিয়েছে। বিয়ে করেছে শুনেছি ... ওরকম লোক এখন আর নেই ... সব তো দেখেছি নিজের চোখে ... ওঃ '
    অঞ্জলির মনে এখনও জ্বালা আছে। বেঁকা সুরে বলল, ' জানি জানি ... রাত্রির সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।
    বুঝবে বুঝবে ... আসলে যেমনি হাঁড়ি, তেমনি সরা ... রাজযোটক একেবারে ... দীনবন্ধুর মতো ছেলে ছেড়ে ... যত সব নছ্ছাড় ... আমার কি ? '
    বিভূতিবাবু, রমাদেবী অঞ্জলির কথা কিছু ধরতে পারছিলেন না। চুপ করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
    নিতাইবাবু অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলেন, ' আরে ওসব বাদ দাও না ... পুরণো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কি ? ওঃ ... তুমিও যেমন ... '
    অঞ্জলি নিজেকে সামলে নিয়ে চুপ করে গেল।

    চিন্টুর দিদি স্বাতী নিবেদিতা স্কুলে পড়ে। স্কুল থেকে এসে ঘরে ঢুকতেই জুলি কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে স্বাতীর পায়ের কাছে তিড়িং বিড়িং করে লাফাতে লাগল। স্বাতী কোনরকমে
    স্কুলের ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে জুলিকে কোলে তুলে নিয়ে চটকাতে লাগল। জুলি প্রবল উচ্ছ্বাসে
    স্বাতীর জামা খিমচোতে লাগল। ওদের নিজস্ব দস্তুরে স্বাতীর হাতে মুখে দাঁত বসাতে লাগল। ভালবাসা এবং আবেগ উৎসরণের এই উপায়টাই ওদের জানা আছে।
    স্বাতী বলতে লাগল, ' ওরে বাবারে ... ছাড় ছাড় ... কামড়াচ্ছিস কেন ... আমি কি করেছি ... ওঃ '
    দিদির দুর্দশা দেখে চিন্টু খিলখিল করে হাসতে লাগল।
    চিন্টুর মা ঘরে ঢুকে বললেন, ' ওকে নামিয়ে দে ... নামিয়ে দে স্বাতী ... বড্ড বাড়াবাড়ি করছিস ... '
    চিন্টু গিয়ে দিদির কাছ থেকে জুলিকে ছাড়িয়ে নিল। জুলি এবার নতুন উদ্যমে চিন্টুকে সোহাগ আঁচড় কামড় শুরু করল। চিন্টু যেন মনে মনে টার্জান হয়ে গেল। চিন্টু কল্পনা করল সে যেন একটা জঙ্গুলে বাঘের বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একা একা ঘন অরণ্যের মধ্যে। জুলির লোমের মধ্যে নাক ডুবিয়ে শুঁকল দুবার। বাচ্চাটার গায়ে কেমন ধূপের গন্ধ।

    আজ সরস্বতী পুজো। স্বাতী একটা লালপাড়ের বাসন্তী রঙের শাড়ি পরেছে। স্কুলের দিকে যাচ্ছিল চিন্টুকে সঙ্গে নিয়ে। স্বাতীর মা ওকে একা ছাড়তে সাহস পায় না। ওদিকের ছেলেগুলো মোটেই ভাল না। স্বাতী, চিন্টুর মা সবসময়ে উৎকন্ঠার মধ্যে থাকে। তাই চিন্টুকে দিদির সঙ্গে পাঠিয়েছে। যা হোক, একটা একরত্তি ছেলে হলেও সঙ্গে তো একজন যাচ্ছে। মেয়ের জন্য স্বাতীর মায়ের উৎকন্ঠার শেষ নেই। ক'টা শয়তান ছেলের জন্য সবসময়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।

    নিবেদিতা লেনের মুখটায় এসে স্বাতীর বুক ঢিবঢিব করতে থাকে বোরোলীন হাউসের কোণের রকে বসে থাকা ছেলেগুলোকে দেখে।

    কমল সাহার পরিবারে কেউ কোনদিন চাকরি বাকরি করেনি। শুধু ব্যবসাই করেছে। নানা ধরণের ব্যবসাতে তাদের সহজাত পারিবারিক দক্ষতা আছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, তা সে হার্ডওয়্যার হোক বা ভেলিগুড় হোক। কমল সাহার বয়স কম হল না, প্রায় পঞ্চান্ন। এই সব নানারকম কারবারে তার কমদিন তো হল না। সেই কবে থেকে হাত পাকাচ্ছে এই সবে। লেখা পড়ায় ইতি টেনে দিয়েছে সেই ইস্কুলে পড়ার সময়ই। সকাল সকাল বিয়ে থা হওয়ার কারণে তার বড় ছেলের বয়স এখন প্রায় পঁয়ত্রিশ। সেও বাপ কা বেটা। দেরি না করে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে দিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি। বিজনেসে কিন্তু সেও খুব দড়। এ ব্যাপারে তার মাথা খুব পাকা। বাবার ভাগের কারবার বলতে গেলে সেই সামলায় এখন।
    কমলের সঙ্গে সাগরের চেনাশোনা প্রায় তিন যুগের। কমলরা তখন উল্টোডাঙায় থাকত। কমলের বাবার শত্রু ছিল অনেক। সাগরের তখন সবে উত্থান হয়েছে। সে কমলের বাবাকে শত্রুদের হাত থেকে তিনবার বাঁচিয়েছিল। শেষবার তাদের এমন টাইট দিয়েছিল যে তার পর থেকে সেই লোকগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্বভাবতই এর পর কমলদের পরিবার সাগরের ওপর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। কিন্তু সাগর কোনদিন লেনদেনের মানসিকতাকে গুরুত্ব দেয়নি। ওসব নিয়ে তার ভাবার সময় ছিল না তখন। এখন বোধহয় একটু একটু হয়েছে কারণ সে একটা সংসার পেয়েছে। কমলরা অবশ্য এখন উল্টোডাঙায় থাকে না। থাকে বাগবাজারে গীরিশ এভিনিউতে। কমলের বাবা মারা গেছেন অনেকদিন।

    নিবেদিতা লেনের মুখে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল কমল সাহার সঙ্গে।
    কমল বলল, ' মাল তুলতে কোন অসুবিধে হবে না, বাগড়ি মার্কেটে আমার লোক আছে। এক মাসের ক্রেডিটে দিয়ে দেবে। তার মধ্যে সেল হয়ে গেলে ভাল, নইলে আমি কিনে নেব। কোন চিন্তা করবেন না। দারুণ জায়গায় দোকান নিয়েছ। তোমার ভাল হলে, আমার খুব ভাল লাগবে। বাবা তো কিছু করে যেতে পারেনি তোমার জন্য ... আমি যদি পারি ... বাবা সবসময়ে তোমার কথা বলত ... আমরা লেখাপড়া না জানতে পারি কিন্তু বেইমান নই ... তবে তুমি আগের লাইনটা ছেড়ে দিলে আমার খুব খারাপ লাগবে ... আবার ভাবছি, আগের মতো কি আর এখন সম্ভব ... তার ওপর তুমি এখন ফ্যামিলি করেছ ... '
    সাগর চুপচাপ কমলের কথা শুনছিল।
    বলল, ' হমম্ ... সেটাই তো ... দেখা যাক ... '
    কমল বলল, ' আমি কিন্তু আগের সাগর মন্ডলকে আবার দেখতে চাই ... বুঝলে তো ... ওগুলো আমি ভুলিনি ... '
    সাগরের দিক থেকে কোন জবাব এল না। কমল দেখল সাগর স্থির দৃষ্টিতে বোরোলিন হাউসের কোনের রকের দিকে তাকিয়ে আছে।

    স্বাতীর বুক ঢিবঢিব করছে। কোনের রকে ওই ছেলেগুলো বসে আছে। ক্ষুদে চিন্টু হাসতে হাসতে বাঁটুলের একটা গল্প বলতে বলতে দিদির বর্ডিগার্ড হয়ে হাঁটছিল।
    চিন্টু দেখল তার দিদি কোন কথা বলছে না। সে দিদির মুখের দিকে তাকাল। দেখল তার মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গেছে।
    চিন্টু বলল, ' শুনতে পাচ্ছিস না ? '
    সেই সময়ে রক থেকে একজন উঠে এসে বলল, ' শুনবে কি করে বাবু ... ও তো আমার কথা ভাবছে ... এই নাও ... আজ থেকে আর আড়ি নয়, শুধু ভাব .. ', বলে স্বাতীর দিকে একটা চকলেট বাড়িয়ে ধরল।
    স্বাতী ভয়ার্ত কন্ঠে বলল, ' না ... না ... '
    সে ছেলেটা নাছোড়বান্দা। বলল, ' কেন গো ... মা বকবে ? ও চিন্তা কোর না ... আমি মাকে বুঝিয়ে বলব ... নাও নাও ... ', বলে চকলেটটা স্বাতীর হাতে জোর করে গুঁজে দেবার চেষ্টা করতে লাগল।সে স্বাতীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে তার যাওয়ার পথ আটকে।
    চিন্টু খারাপ কিছু আন্দাজ করে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়ে হঠাৎ ভ্যাঁ ... করে কাঁদতে শুরু করল।

    ঠিক এই সময়ে, কমল সাহা, যে সাগর মন্ডলকে দেখতে চাইছিল সেটা তার দেখার সুযোগ হয়ে গেল।

    সাগর খুব শান্ত পায়ে হেঁটে ওই চকলেট দেওয়া ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আচমকা তার মাথার চুলের মুঠি ধরে ঘাড়টা পিছনে হেলিয়ে দিল। চোখটা একেবারে তার চোখের ওপর নিয়ে গিয়ে বলল, ' ক'টা চকলেট আছে তোর কাছে ... আমাকে একটা দিবি না ? দে দে .. দে না ...দে না ... ', বলতে বলতে চুলের মুঠি ধরে বারবার ঝাঁকাতে লাগাল। ব্যাপার দেখে রকে যে আরো তিনটে ছেলে ছিল তারা নিমেষে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল।
    সাগরের হাতে ধরা পড়া ছেলেটা ভাবল, সে নিশ্চিতভাবে শ্যামপুকুর থানার কোন সিভিল ড্রেসের পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। ভয়ে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। সে ফ্যালফ্যাল করে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কাঁদকাঁদ গলায় বলে উঠল, ' ছেড়ে দিন স্যার .. ছেড়ে দিন স্যার ... আর করব না কোনদিন ... ভুল হয়ে গেছে ... মাফ করে দিন স্যার ... দয়া করে থানায় নিয়ে যাবেন না ... '
    সাগর বলল, ' তোকে থানায় নিয়ে গেলে তো তোর কিছু হবে না ... কিন্তু তোর বাবা মা কাঁদবে ... আমি কাউকে থানায় নিয়ে যাই না, যা করার নিজেই করি ... আমাকে চিনিস ? '
    ছেলেটা সাগরকে চেনে না। সে একই রকম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
    ইতিমধ্যে কমল সাহা সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে। নিছক কৌতূহলী আরও দুচারজনও চাক বেঁধেছে।

    কমল ছেলেটাকে বলল, ' এর নাম সাগর মন্ডল ...'
    ছেলেটা তাও ঠিক চিনতে পারল না। কমল সাহার একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ল। ভাবল, আমাদের বয়স তা'লে কম হল না।
    আর কোনদিন স্কুল টাইমে এ তল্লাটে ছায়া পর্যন্ত না দেখাবার প্রতিজ্ঞা করিয়ে সাগর ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, ' তোর বন্ধুদেরও জানিয়ে দিস ... '।
    ' আ..চ্ছা ... ', বলে ছেলেটা রাজবল্লভপাড়ার দিকে প্রাণপণে হাঁটতে আরম্ভ করল।
    সাগর বলল, ' আচ্ছা কমলদা ... ওই কথা রইল। আমি আবার বুধবার আসব ... ইন্সপেকশানও হবে, ব্যবসার কথাও হবে ... '
    ---- ' হুঁ হুঁ ... ঠিক আছে ', কমল সাহা বলল।

    সাগর চিন্টুর দিকে তাকিয়ে বলল, ' বোকা ছেলে ... অত ভয় পেতে আছে ... চল তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিই ... আমার হাত ধর ... '
    কমল দেখল স্বাতী আর চিন্টু সাগরের হাত ধরে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

    এর তিন দিন পর চিন্টুর মেজমামা সুদর্শন দিদির বাড়িতে এসেছে বাগবাজারে। সে আসা মাত্র চিন্টু তাড়াতাড়ি এসে বলল, ' মেজমামা ... মেজমামা ... আমি না ... আর একজনের গায়ে ধূপের গন্ধ পেয়েছি ... '
    ---- ' তাই নাকি ... কি কান্ড ! তা, কে সে .. '
    ---- ' তার নাম সাগর মন্ডল ... '
    সুদর্শন তার দিদির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল।
    চিন্টু আর স্বাতীর মা বলল, ' ওঃ ... সে এক কান্ড ... কি বলব তোমায় ... ভাগ্যিস উনি ছিলেন ... '

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন