এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ১১

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | ৮৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯
    ( ১১ )

    পারস সেদিনের মতো আবার একটা চিরকুট বার করে সাগরের হাতে দিল।
    লেখা রয়েছে ---- ' পুলিসের কাছে যাওয়ার সাস্তি বাপ বেটা দুজনেই পাবি সাবদান হয়ে জা তিস হাজার টাকা নিয়ে ধর্মতলায় মেটো গলিতে দাড়াবি রফিকের চা দুকানের পাসে লাল জামা পরা লোক জাবে বুধবার বিকাল পাচটায় আবার তানায় গেলে লাস পড়বে সাবদান '
    সাগর অনেকক্ষণ ধরে কাগজটায় চোখ বুলোল।
    বলল, ' হমম্ ... বোধহয় মেট্রো গলিতে যেতে বলছে। এটা নকশালদের কারবার মনে হচ্ছে না। ওরা এরকম টাকা তোলে না ভয় দেখিয়ে। শুনেছি ওরা সব শিক্ষিত। এটা কোন ধান্দাবাজ দুনম্বরীর লপচপানি। মওকা নিচ্ছে আর কি ... '
    পারস বিধ্বস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ' এখন তা'লে ... কি ... মানে ... '
    ---- ' ঠিক আছে ... চিন্তা কোর না ... দেখছি ... '
    ---- ' হুঁ ... আচ্ছা। কি করব তালে ? '
    ---- ' কি আবার করবে ... টাকা চাইছে, টাকা দিতে যাবে। তাছাড়া উপায় কি ? '
    ---- ' টাকা দিতে যাব ! '
    ---- ' আর কি করার আছে ? তবে আমার মনে হয়
    এরা এত কাঁচা কাজ করবে না। কেউ টাকা নিতে এসে হাতেনাতে ধরা দেবে এরা এতটা বুদ্ধু হবে বলে মনে হয় না। লাল জামা আগে থেকে বলে দিচ্ছে ... উঁহু ... কি জানি ...। আর যদি কেউ এসে যায় তা'লে তো আর চিন্তা নেই... '
    ---- ' মানে ? '
    ---- ' মানে, আশা করি আমি সামলে নিতে পারব। যদি সত্যি কেউ আসে। যাক, বুধবার চারটের মধ্যে চলে এস। একসঙ্গে বেরব ... '
    পারস কৃতজ্ঞচিত্তে ঘাড় নাড়ল।

    সাগর পারসকে নিয়ে বুধবার মেট্রো গলির মুখে দাঁড়িয়ে রইল। ঠিক পাঁচটার সময়ে সাগর বলল, ' আমি ওখানে যাচ্ছি। তুমি দাঁড়াও ... পাঁচমিনিট পরে এস। '
    ---- ' ঠিক আছে ... '
    সাগর রফিকের চায়ের দোকানে গিয়ে বলল, ' একটা চা ... কম চিনি ... '
    দোকানে বেশ ভিড়। মিনিট তিনেক অপেক্ষা করতে হল চায়ের গ্লাস হাতে পেতে। তার পাশে দাঁড়িয়েই একজন বলল, ' কি হল, আমারটা হল ? '
    দোকানদার বলল, ' এই যে ... ধরুন ... '
    পাশের লোকটা সাগরকে বলল, ' দাদা দেখি ... একটু সাইড দিন তো ... চা পেয়ে গেছেন তো ... ওদিকে সরে দাঁড়ান না ... '
    সাগর একটা ছোট চুমুক দিয়েছিল গ্লাসে। ঠোঁটে
    একটু ছ্যাঁকা লেগে গেল। সে বাঁদিকে ঘাড় ঘোরাল। দেখল একজন লাল জামা পরা স্বাস্থ্যবান লোক দাঁড়িয়ে আছে। সাঁইত্রিশ আটত্রিশ বছর বয়স হবে। এটাও চোখে পড়ল গলির ওদিকে দোকানের উল্টোদিকে পারস এসে দাঁড়িয়েছে এবং দিশাহারা দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। সাগর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। তার থেকে প্রায় কুড়ি বাইশ ফুট দূরে দাঁড়ানো পারসের চোখাচোখি হল। সাগর ঘাড় নাড়িয়ে ইঙ্গিতে লাল জামার দিকে দেখাল। পারস বোকার মতো হাসল।
    লালজামা লোকটা দোকানের একপাশে দাঁড়িয়ে নির্বিকারভাবে চা খেতে লাগল। তাকে একবারও পারসের দিকে তাকাতে দেখা গেল না। চা খাওয়া হয়ে গেলে পাশে রাখা গামলায় গ্লাস নামিয়ে রেখে পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেট কিনে দড়ির আগুনে ধরিয়ে নিল। তারপর ধীরে সুস্থে চৌরঙ্গী রোডের দিকে হাঁটতে লাগল। সাগরও চায়ের গ্লাস নামিয়ে রেখেছে। সে কিন্তু পারসের কাছে গেল না। এদিকেই দাঁড়িয়ে রইল। কিন্তু লালজামা লোকটাকে আর ফিরে আসতে দেখা গেল না। সাগর ইঙ্গিতে পারসকে ওখানেই দাঁড়াতে বলল।
    আরও প্রায় দশ মিনিট ওরা দুজন ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সাগর রাস্তার ওপারে গিয়ে পারসের কাছে গিয়ে বলল, ' নাও ... চল। বেকার সময় নষ্ট হল। তোমাদের চেনা জানা কেউ মশ্করা করেছে বলে মনে হয় ... '
    পারস একটু ধাতস্থ হয়েছে এতক্ষণে। সে বলল, ' কিন্তু ... কিন্তু ... '
    ---- ' কিন্তু কি ... লালজামা ? '
    ---- ' হ্যাঁ ... লিখেছিল ... '
    ---- ' ওটা কাকতালীয় ব্যাপার। এ ভদ্রলোক লাল জামা পরেছে কিছু না জেনেই। চিন্তা করে দেখ তোমাদের ফ্যামিলির মধ্যে এরকম মশ্করা করার কেউ আছে কিনা ... '
    ---- ' হুঁ ... ভেবে দেখব ... '

    সাগর পারশকে রামমন্দিরে ছেড়ে দিয়ে শ্যামবাজারে গিয়ে নামল। শ্যামবাজার ট্রামডিপোর কাছে হঠাৎ মোনা মজুমদারের সঙ্গে দেখা।
    ---- ' আরে ... সাগর, কি খবর ? অনেকদিন পর ... ' মনোরঞ্জনবাবু বললেন। চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে। একটু রোগাও হয়ে গেছেন। তাকে দেখে বিষ্টুপুরের সেই স্বরূপ খাঁড়া অপারেশনের কথা মনে ঝিলিক দিয়ে উঠল।
    ---- ' আর কি করা যাবে .... আপনি তো হাওয়া হয়ে গেলেন। যাক, কেমন আছেন ? '
    ---- ' এ.. ই আছি আর কি ... শরীর তেমন ভাল নেই। সুগার, প্রেসার ... আরও সব আছে ... পয়সাকড়ির সমস্যাও আছে ... ' মোনাবাবু নিজের মাথার চুলে হাত বুলিয়ে অগোছাল চুলটা ঠিক করলেন।
    ---- ' পলিটিক্স ছেড়ে দিয়েছেন, নাকি করছেন ? তেমন খবর তো পাইনা ... '
    ---- ' পলিটিক্স ছেড়ে যাব কোথায় ? আর কোথায় যাবার জায়গা আছে ... কলেজ লাইফ থেকে এই করছি। পড়াশোনাও তেমন হল না। পার্টির থ্রু দিয়েই যা কিছু ... চলে যাচ্ছে আর কি ... আর বেশি কিছু আশা করি না ... আর তো ক'টা দিন ...' ---- ' ওখানেই আছেন ? '
    ---- ' হ্যাঁ ... আর কোথায় যাব ? পৈতৃক বাড়ি ... '
    ---- ' না না ... সে কথা বলছি না। বলছি, ওই পার্টিতেই আছেন ? '
    ---- ' হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি ওসব দুনম্বরীর মধ্যে নেই। আমি কোন মাইগ্রেটিং বার্ড হতে চাই না। আমার একটা নীতি আছে। তাতে ফায়দা থাক বা না থাক। হ্যাঁ বল... তুমি কেমন আছ ? '
    ---- ' আমি একইরকম আছি। নতুন ব্যাপার হল, বিয়ে করেছি কিছুদিন আগে ... '
    শুনে মোনাবাবু বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।
    বললেন, ' অ ... তা ভাল। বড্ড দেরি হয়ে গেল। পরে গিয়ে আবার ... '
    ---- ' হুঁ ... তা ঠিক। সবার তো আর সময়ে সব কিছু হয় না ... যে যেমন ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে ... '
    ---- ' হ্যাঁ, সে তো ঠিকই... সে তো ঠিকই ... এই আমাকেই দেখ না ... তবে অসময়ের ফসলও তো ফসল। কোন কিছুই ফেলনা নয় ... জীবন আর ক'দিনের ! চাকা যতদিন গড়ায়, ততদিনই চলে এ গাড়ি ... '
    সাগর এসব দার্শনিক ধরণের কথা মোনাবাবুর মুখে কখনও শোনেনি। বেশ অবাক লাগছে। কার কিভাবে পরিবর্তন আসে আন্দাজ করা শক্ত।
    সাগর বলল, ' এখন যে এই চরমপন্থি পার্টি এসেছে, এদের কিভাবে দেখছেন আপনারা ? '
    ---- ' দেখ ... ওসব নিয়ে আমি খুব একটা মাথা ঘামাই না ... ওগুলো যারা দেখবার তারা দেখছে ... ওসব নীতি, তত্ত্বকথা কাঁটাছেঁড়া করার বিস্তর লোক আছে পার্টিতে ... তারা বুঝবে ... আমার দ্বারা ওসব হবে না। আমি থার্ড বেঞ্চে বসা ছেলে ছিলাম তাই থাকব ... ব্যস। ওসব নক্শাল টক্শাল যারা সামলাবার তারা সামলাবে। আচ্ছা ... সাগর, চলি এখন। পারলে বাড়িতে এস একদিন। অনেক গল্প করা যাবে। রাত্রে এলে আটটার পরে এস ... '
    বলে মোনা মজুমদার আর দাঁড়ালেন না। হনহন করে হাঁটতে আরম্ভ করলেন পাঁচমাথার দিকে। মনে হয় বাগবাজারে পার্টি অফিসে যাচ্ছেন।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন