এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ২৩

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮৭ বার পঠিত
  • ( ২৩ )

    সুমনা পটলের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল পরদিন বেলা বারোটা নাগাদ।
    পটল ঘাড় নীচু করে টায়ারে স্পোক ফিট করছিল। ঘাড় না তুলেই বলল, ' হ্যাঁ ... বলুন ... '
    ---- ' সাগরবাবুর সঙ্গে একটু দরকার ছিল ...'
    এবারও পটল ঘাড় না তুলেই বলল, ' বিকেলে আসবে ... '
    ---- ' কখন ? '
    ---- ' এই ধরুন ... পাঁচটা নাগাদ ... '
    ---- ' ঠিক আছে ... '
    বলে, সুমনা বাঁদিকে পা বাড়াল।
    এবার পটল উঠে দাঁড়াল।
    অভ্যস্ত ভঙ্গীতে বলল, ' ট্যারা কেস নাকি ? কিছু বলতে হবে ? '
    ---- ' ন.... ন্না ... স্যারের সঙ্গেই কথা হবে ... '
    পটল বলল, ' আরে না না ... এখানে কোন স্যার ট্যার আসেন না দিদি ... আপনার বোধহয় ভুল হচ্ছে ... '
    সুমনা মৃদু হেসে পটলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ' উনিই আমার স্যার ... '
    পটল এরকম একটা অদ্ভূত কথা এই প্রথম শুনল।
    সে সুমনার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগল। দাদাকে স্যার বলছে ...। ভোরবেলায় ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া আলোর মতো একটা আলো ফুটে উঠতে লাগল পটলের মুখে।
    সে প্রবল উৎসাহে বলল, ' আসুন না ... আসুন না অসুবিধে হবে না ... '

    সাগর সুমনাদের বাড়িতে যেতে রাজি হল পরের দিন দুপুরে। শর্মিষ্ঠাও আসবে ওই সময়ে। সুমনা সাগরের সাহায্য নেবার ব্যাপারটা অলোকেন্দুবাবুকে জানিয়েছে।
    অলোকেন্দুবাবু বললেন, ' হমম্ ... নহবতে একজন সানাই বাজায় আর অন্য কেউ পোঁ ধরে জানিস তো ? আমি নয় এখানে পোঁ ধরার কাজটা করব আর সানাইটা বাজাবে সাগর মন্ডল ... এছাড়া উপায় কি ... যস্মিন দেশে যদাচার। কি বুঝলি ? '
    সুমনা বলল, ' হুঁ ... '

    সব শুনে সাগর বলল, ' হুঁ ... বুঝলাম ... কিন্তু জায়গাটা আমার এলাকার বাইরে ... '
    শুনে শর্মিষ্ঠা বিমর্ষ মুখে বলল, ' ও আচ্ছা ... তা'লে
    কি ... কিছু করা যাবে না ? খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি স্যার ... '
    ---- ' না ম্যাডাম, আমি তা বলছি না। করা যাবে না এমন কিছু ব্যাপার নয়। বলছি যে, এলাকাটা দূরে। কিন্তু কি আর করা যাবে ... কিছু অসুবিধে তো থাকবেই ... '
    সাগর কিছু একটা ভাবতে লাগল। তারপর বলল, ' ওনার অফিসটা কোথায় জানেন ? খোঁজখবর নেওয়া, কথাবার্তা বলার পক্ষে অফিসের আশপাশই তো ভাল। তা, বিয়ের কথাই হোক, বিচ্ছেদের কথাই হোক ... '
    শর্মিষ্ঠা বলল, ' হ্যাঁ, তা জানি। গার্ডেন রিচে অফিস। সুর আয়রন অ্যান্ড মেটাল। ও মেটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ... বিশ্বজিত রায়।
    ---- ' ওয়ার্কশপ না অফিস ? '
    ---- ' ওয়ার্কশপ কম্পাউন্ডের মধ্যেই অফিস। '
    ---- ' আচ্ছা ঠিক আছে ... দেখা যাক কিভাবে ব্যাপারটা সামলানো যায় ... আমি মোটেই সেপারেশানের পক্ষপাতি নই। ঠিক আছে এক সপ্তা বাদে পটলের দোকানেই যোগাযোগ করবেন। আমি কোন অ্যাকশান ট্যাকশান চাই না ... কিন্তু লাইন অফ অ্যাকশানটা ভেবে দেখতে হবে। এ তো মারামারি কাটাকাটির ব্যাপার নয়। আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা হবে ... '
    শর্মিষ্ঠা বলল, ' একটা কথা ছিল স্যার। আপনি আমাকেও সুমনার মতোই তুমি বলবেন ... এটা আমার রিকোয়েস্ট... '
    ---- ' ঠিক আছে রে বাবা, তাই বলব। আসি এখন ... অলোকেন্দু স্যার তো এখন বাড়ি নেই... পরে দেখা করে নেব ... '

    একটু আগে নতুন শুকতারা দিয়ে গেল। চিন্টু বইটা খুলে নাকে চেপে বড় করে একটা শ্বাস নিল, তারপর বাঁটুল দি গ্রেট খুলে বসল। ভর দুপুরবেলা। আড়াইটে বাজে। চিন্টুর মা একটু গড়িয়ে নিচ্ছে দৈনিক অভ্যাসবশত। চিন্টুর দিদি স্বাতী স্কুলে গেছে।
    চিন্টু বারান্দায় চেয়ারে গিয়ে বসে শুকতারা পড়তে লাগল। রাস্তা দিয়ে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে একটা দমকলের গাড়ি গেল গ্যালিফ স্ট্রিটের দিকে। কোথায় আগুন লেগেছে কে জানে। জুলি লাফিয়ে চিন্টুর কোলে গিয়ে উঠল। ওর মায়ের স্টাইলে কোলের মধ্যে চোখ বুজে গুটিসুটি মেরে বসল।
    বাঁটুলের পাতাটা পড়া হয়ে গেল। চিন্টুর মেজমামা আসবে বলেছে সন্ধেবেলায়। চিন্টু অনেকদিন মামার বাড়ি যায়নি। সে ঠিক করেছে মেজমামা এলে মামারবাড়ি যাবার জন্য বায়না করবে। মামার বাড়ি গিয়ে হেদুয়ায় সাঁতার দেখবে বিকেলবেলায়। চিন্টু মাথা নীচু করে জুলির মাথায় একটা চুমু খেল। জুলি তার  মায়ের স্টাইলে চোখ বুজে ধ্যানস্থ হয়ে বসে রইল কোন প্রতিক্রিয়া ছাড়া।

    চিন্টুর হঠাৎ চোখে পড়ল রাস্তা দিয়ে কমল কাকু, মানে কমল সাহা যাচ্ছে বাগবাজার স্ট্রিটের দিকে। হাতে একটা থলে রয়েছে। বোধহয় শ্যামবাজার বাজারের দিকে যাচ্ছে কমল কাকু। কমল কাকু, ওই যে সেদিন যে কাকু দুষ্টু ছেলেটাকে বকে দিল তার বন্ধু। সাগর, না কি যেন নাম ...।
    বাগবাজারে দুর্গাপুজোর মাঠে একটা মেলা বসেছে। দিদির সঙ্গে বিকেলবেলা মেলা দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিল চিন্টু। কিন্তু মা দিদিকে স্কুলে ছাড়া আর কোথাও একা যেতে দেয় না। মা সবসময়ে দিদির সঙ্গে যায়। দিদি কাল বলল, ' সেই পাজিগুলোকে আর দেখা যায় না ... '।
    সেই কাকুটা যে কোথায় গেল। কাকুটার খুব গায়ের জোর, ঠিক টার্জানের মতো। তাদের বাড়িতে একদিন আসলে বেশ হত। মার আর কোন ভয় থাকত না দিদিকে নিয়ে। উনি তো কমল কাকুর বন্ধু। চিন্টু ঠিক করল কমল কাকুর সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবে সাগর কাকু আবার কবে আসবে।
    বিকেল সাড়ে চারটে বেজে গেল। চিন্টুর দিদি স্কুল ছুটির পর বাড়ি এল। জুলি এক লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে স্বাতীর কাছে ছুটে গেল। স্বাতী ওকে কোলে তুলে নিয়ে নাকে নাক ঘষতে লাগল। একটু পরে নামিয়ে দিল। জুলি লাফিয়ে খাটের ওপর গিয়ে উঠল। চিন্টু দেখল দিদির মুখটা কেমন গম্ভীর। স্কুলে যাবার সময় বেশ হাসিখুশি ছিল। চিন্টুর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তাহলে কি আবার সেই পাজি ছেলেগুলো ফিরে এসেছে বোরোলীন হাউসের কোণের রকে ? দিদি গম্ভীর মুখে বিছানায় বসে কি ভাবছে। মা রান্নাঘরে কি একটা করছে।
    মা এসে নিশ্চয়ই দিদিকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে, তখন জানা যাবে। চিন্টু ভাবল, এও হতে পারে কোন পরীক্ষার খাতা বেরিয়েছে। তাতে হয়ত ও ভাল নম্বর পায়নি। এরকম অনেকবার হয়েছে। চিন্টুর কোন কিছুই জিজ্ঞাসা করার সাহস হল না।
    সে বলল, ' আজ পুজোর মাঠে মেলা দেখতে যাবি ? '
    দিদি চমকে উঠে বলে উঠল, ' না না ... '
    চিন্টুর মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল।
    ঠিক এই সময়ে নীচের দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ হল। চিন্টু ভাবল মেজমামা এসেছে নিশ্চয়ই। সে বারান্দায় গিয়ে নীচের দিকে গলা বাড়িয়ে বলল, ' কে ... মেজমামা ? '
    নীচে যে দাঁড়িয়ে আছে সে ওপরের দিকে মুখ করে বলল, ' না খোকন ... আমি ... '
    চিন্টু নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওখানে ওপর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কমলকাকুর সেই টার্জানের মতো বন্ধুটা।
    চিন্টুর সঙ্গে জুলিও লাফাতে লাফাতে নীচে নামতে লাগল বোধহয় সাগরকে অভ্যর্থনা করার জন্য।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 2607:fb90:bd31:3c0e:e96c:9193:29f2:***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০০:১৭539909
  • কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে। ব্যাপারটা ভিজুয়ালাইজ করা অসম্ভব -- "চিন্টু মাথা নীচু করে চিন্টুর মাথায় একটা চুমু খেল। চিন্টু তার মায়ের স্টাইলে চোখ বুজে ধ্যানস্থ হয়ে বসে রইল কোন প্রতিক্রিয়া ছাড়া।"
  • Anjan Banerjee | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:০৬540021
  • গন্ডগোল ...গন্ডগোল । মাথা ঠিক কাজ করছে না বুঝতে পারছি । ভেরি ভেরি দুঃখিত।  ঠিক করে দিচ্ছি । 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন