এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ৩৬ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৩০ বার পঠিত
  • ( ৩৬ )

    মণিলাল চ্যাটার্জির বড়মামার কথাই ঠিক হল। ইন্দিরা গান্ধী ধৈর্য ধরে পাকিস্তানি সেনা সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চালাবার পরও ওদের হুঁশ না ফেরায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে নামিয়ে দিলেন। ডিসেম্বর মাস, কী শীত পড়েছে ! তিন তারিখে যুদ্ধ লাগল, ষোল তারিখে ফিনিশ। এই নিয়ে তিন তিনবার গোবেড়েন খেল পাকিস্তান। এর আগেরবার খেয়েছিল পঁয়ষট্টি সালে, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর আমলে।

    মণিলালের বড়মামা অবশ্য বললেন, ' জহরলালের মেয়ে বলে কথা, রক্তের ধারা যাবে কোথায় ... '।
    কেউ অবশ্য তাকে আর বাষট্টি সালে চীন যুদ্ধে নেহেরুর মুখে চুনকালি লেপে যাওয়ার কথাটা মনে করিয়ে দিল না। কে অত তক্কাতক্কির মধ্যে যাবে। সবাই ভাবল, কি লাভ 'ফালতু' বকবক করে। বড়মামারা থাকবেন বড়মামাদের মতোই।

    ভারত তো পিছনে আছেই, কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা কিছু কম লড়েনি এবং কম মরেনি। শোনা যাচ্ছে ওদের মধ্যে নাকি পাকিস্তানের ধামাধরা লোকজনও ছিল। 'তাদের নাম রাজাকার না কি যেন। বোঝ কারবার ! ভূত থাকবেই শর্ষের মধ্যে ... হ্যাঃ ... ' বিনয় বলল

    মুজিবর রহমানের রহমানের নাম নিয়ে অলি গলি, চায়ের দোকান, পাড়ার রক থেকে এলিটিস্টদের ড্রয়িং রুম থেকে মধ্যবিত্তের বেডরুম পর্যন্ত মহা শোরগোল। মহাবীরের মর্যাদা পাচ্ছে রীতিমতো। 'শোন একটি মুজিবরের থেকে ... ' এখনও শোনা যাচ্ছে এদিকে ওদিকে।

    বিভূতিবাবুর বাড়ির একতলার ঘরের ওরা তাস খেলার আগে পরে চা খেতে খেতে রাজা উজির মারে ... '
    ---- ' সে যাই হোক ... বাঙালীরা একটা আলাদা দেশ তো পেল। ভারত যুদ্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু ওরা একটা পুরোপুরি বাঙালী স্টেট তো পেল। আমাদের মতো পাঁচমিশেলি দেশ না। নামটাও ভাল দিয়েছে ... বাংলাদেশ। বেশ একটা বাঙালী বাঙালী গন্ধ আছে ... যাই বল ... মুজিবর কিন্তু বাঘের বাচ্চা ... ' অতীশ বলল।
    দুর্বার বিস্কুটে একটা কামড় মেরে বলল, ' তা ঠিক তা ঠিক ... একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত নাকি ওদের ন্যাশনাল অ্যানথেম হবে ... বেশ ইউনিক ব্যাপার, না ? '

    দোতলার ঘরে বসে অখিল বলল, ' এখন তো সব ঠান্ডা হইসে। ইন্ডিয়া খুব লড়সে আমাদের জন্য, এটা অস্বীকার করা উচিত হইব না ... দেখ এখন কি করবা ... '
    চন্ডীদাস বলল, ' হ ... এখন তো মনে হয় কোন সমস্যা হইব না। কালই চইলা যাব, ঠিক করসি ... '
    তারপর কি ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ' কিন্তু আমাদের কপাল কি আর ফিরব ... বিশ্বাস হয় না ... দেখি গিয়া কি হয় ... কেমন আসে সব কে জানে ... '
    ---- ' কেন আবার কি ? '
    ---- ' না কিসু না, এমনিই কইলাম ... আসলে দ্যাশে মৌলবি মুরুব্বির তো অভাব নাই ... তারা সবসময়ই সুযোগ খোঁজে, এই হইল কথা ... ' চন্ডীদাস চাপা সন্দেহ প্রকাশ করে।
    ---- ' না না .... এখন ওসব সিন্তা কইর না, স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে নতুন জীবন আরম্ভ কর ... ট্রাই টু বি পজিটিভ ... বোঝলা কিনা ... ' অখিল বলে।
    ---- ' হ ... তা ঠিক, তা ঠিক ... '

    সত্যপ্রকাশবাবু আবার ট্রেকিং-এ চললেন। এবার গাড়োয়াল রেঞ্জ। তিনি এক্সপ্লোরার্স ক্লাবের সদস্য প্রথম থেকেই। মিহির সেনের খুব ঘনিষ্ঠ।

    সত্যপ্রকাশবাবু বিডন স্ট্রিটে মিনার্ভা থিয়েটারের কাছাকাছি থাকেন। হেদুয়ায় প্রায়ই আসেন বিকেলের দিকে চক্কর মারতে। আজ দেখা হয়ে গেল বিভূতিবাবুর সঙ্গে। বিভূতিবাবুর সঙ্গে তার অনেক দিনের পরিচিতি, যদিও সত্যপ্রকাশ বিভূতিবাবুর থেকে দশ বারো বছরের ছোট।
    সত্যপ্রকাশবাবু বলেন, ' আরে বিভূতিদা যে ... '
    ---- ' হ্যাঁ বল... কি খবর ? এবার কোথায় ? '
    ---- ' গাড়োয়ালে একটা পিকে ... '
    ---- ' অ, তা বেশ ... ভাল আছ। শরীর স্বাস্থ্যও ঠিক আছে ঈশ্বরের কৃপায় ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... তা বলতে পারেন ... পাহাড়ে আনন্দই আলাদা, এটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। যদিও রিস্ক আছে প্রচুর ... বিশেষ খরচ ফ্রস্ট বাইট। গতবারের অন্নপূর্ণা এক্সপিডিশানে সমর রায়চৌধুরীর ফ্রস্টবাইটে একটা পা গেল ডিকমপোসড হয়ে ... খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার ... '
    ---- ' হুঁ জানি ... খুবই কঠিন কাজ। যাক তোমরা করছ একটা কিছু। আমাদের তো আর কিছু হল না এ জীবনে ... তোমরা কত ওপরে ওঠ। ওপর থেকে তলাটা অনেকটা দেখা যায় ... তলায় থেকে চারপাশটা আর কতটুকু দেখা যায় ...'

    সত্যপ্রকাশ চুপ করে রইলেন। তিনি একজন দক্ষ অভিযাত্রী। তিনি অভিযানের সাদামাটা খুঁটিনাটি বোঝেন। মাউন্টেনিয়ারিং তার কাছে একটা স্পোর্টস। এসব দার্শনিক চর্চা তার ঠিক আসে না।

    বিভূতিবাবু এবার অন্য প্রসঙ্গে গেলেন। বললেন, ' পূর্ব পাকিস্তান তো একটা আলাদা দেশ হল ... শুধু বাঙালীদের দেশ। ভারত এই নিয়ে তিন টুকরো হল ... '
    সত্যপ্রকাশবাবু নিরুত্তপ্ত স্বরে বললেন, ' হ্যাঁ ... তা বটে ... '। আর কিছু বললেন না, মনে হয় বলার প্রয়োজন বোধ করলেন না।
    দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন হেদুয়ায় ছেলেদের সাঁতার কাটা দেখতে দেখতে। হয়ত বলার মতো তেমন কথা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। এরকম তো কতই হয়, বলার মতো কিছু কথা খুঁজে পাওয়া যায় না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
    একটু পরে সত্যপ্রকাশ হঠাৎ বলে উঠলেন, ' বিভূতিদা, সাগর মন্ডলের কোন খবর জানেন নাকি ? এখন কোথায় সে ... '
    ---- ' অ্যাঁ, কে ... সাগর ? '
    ---- ' হ্যাঁ ... আজকাল তেমন নাম শোনা যায় না। যে যাই বলুক আমি কিন্তু ওর একজন অ্যাডমায়ারার। এমন একটা লোকের খুব দরকার আছে আমাদের। ও হারিয়ে গেলে আমি খুব শকড হব ... খুব মিস করি ওকে ... ', সত্যপ্রকাশ হেদোর জলের দিকে তাকিয়ে আনমনে কি ভাবতে লাগলেন।
    ---- ' হ্যাঁ, তাই তো... তাই তো, আমিও তাই ভাবি। সে তো বিয়ে থা করে সংসার করছে। ব্যবসাও করছে বলে শুনেছি। হাতিবাগানে দোকান ... ওই ইয়ের ... '
    ---- ' হুঁ ... বুঝেছি। কিন্তু সেই সাগরকে কি আর পাব ... '
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... কেন পাবে না। বল তো আমি যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারি ... কিছু কাজ আছে নাকি ? মানে... বিপদে না পড়লে তো কেউ ওকে স্মরণ করেনি কখনও... ' বিভূতিবাবু উৎসাহ প্রকাশ করেন।
    ---- ' হ্যাঁ দরকার একটা ছিল ... '
    ---- ' কিরকম কিরকম ... মানে, আমায় বলল যাবে ? '
    ---- ' ওকে এক্সপ্লোরার্স ক্লাবে জয়েন করতে বলতাম ... নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ... '
    ---- ' ও আচ্ছা আচ্ছা ... কিন্তু ও তো কখনও পাহাড়ে ওঠেনি ... ট্রেনিং নেই কোন ... '
    ---- ' আরে দূর ... ওর আবার পাহাড়ে ওঠার ট্রেনিং লাগে নাকি ? ও নিজেই তো একটা পাহাড়।
    আমরাই ওর উচ্চতা মাপবার চেষ্টা করব ... '
    ---- ' তা ঠিক ... তুমি দেখছি ভালমতোই চেন ওকে
    ... হক কথা বললে যাহোক ... '
    ---- ' হ্যাঁ, চিনি অনেকদিন ধরেই। কিন্তু ওর মূল্য বুঝিনি, মানে মাথা ঘামাইনি। এখন এই পরিস্থিতিতে ওর প্রকৃত মূল্যটা উপলব্ধি করতে পারছি। দেশে প্রকৃত মানুষের সংখ্যা কমে গেছে ভীষণ ...'
    ---- ' হমম্ ...
    ---- ' পাহাড়ে পর্বতে আরোহণ করি ঠিকই কিন্তু তলায় কতখানি দেখতে পাই জানি না ... দেখার তেমন চোখ কি আমার আছে ? '
    বিভূতিবাবু এসব জটিল হেঁয়ালির অর্থ বুঝলেন না। এসব তার ধাতে নেই।
    তিনি বললেন, ' হ্যাঁ ... তা বটে। আমি কি তা'লে সাগরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করব ? '
    ---- ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... করুন করুন। আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। ও যদি রাজি হয়, মিহির সেনের কাছে নিয়ে যাব ওকে ... যেটুকু পারি ... দেখি মিস্টার সেন সাগরকে সমুদ্র, পর্বত না দুর্গম অরণ্যে পাঠান ... আমি অপেক্ষা করব ...'
    ---- ' কার জন্য ? '
    ---- ' সাগরের জন্য ... '

    আজ রবিবার। পাঁচ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সুমনা আর প্রতিবিম্ব শ্যামবাজারের মোড়ের কাছে ধীরপায়ে হাঁটছিল। প্রতিবিম্ব একটা কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে। বহুজাতিক না হলেও বড় কোম্পানি। ভবিষ্যতে অবশ্য গবেষণাধর্মী কোন সরকারি বা বেসরকারি কোম্পানিতে ঢোকার পরিকল্পনা আছে। গবেষণাধর্মী কাজেই সে থাকতে চায়। এখন সন্ধেবেলা। বেশ শীত পড়েছে। বছর ফুরিয়ে আসছে। চারদিকে, বিশেষ করে ধর্মতলার দিকে বেশ একটা প্রাণবন্ত উৎসবের মেজাজ থাকে। বেশ তরতাজা একটা রঙীন পরিমন্ডল।
    সুমনা বলল, ' চল ... গোলবাড়িতে ঢুকি। কতদিন খাইনি ওখানে ... '
    ---- ' আমিও তাই ... অনেক দিন পর ... ' প্রতিবিম্ব বলে।
    ছেলেকে নিয়ে ওরা গোলবাড়ির দিকে এগোল।

    ঘুপচি দোকানে শীতের সন্ধ্যায় বেশ আবেশণ মাখানো কষা মাংসের গন্ধ ম ম করছে। কালচে থকথকে গ্রেভি আর তাওয়ায় সেঁকা হাতরুটি। পাশে একটা স্যালাডের প্লেট। পাশের দোকান থেকে কিনে ছেলের হাতে একটা ক্যাডবেরি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
    বাবা মা খেতে লাগল। ছেলে চুপচাপ বসে ক্যাডবেরি খাচ্ছে টুকটুক করে। বছর ফুরিয়ে এল। আর ক'টা দিন বাকি। ঠিক পাশের টেবিলে বসে দুই মধ্যবয়স্ক লোক খাচ্ছে। একজন বলল, ' সামনের মাসে পাকিস্তানে যাব ... ওখানকার জমিগুলা সব বিক্রি করে দেব ভাবছি ... '
    আর একজন বলল, ' এখন আবার পাকিস্তান বলছ কেন ? নতুন দেশ হয়ে গেছে জান না নাকি ? বাংলাদেশ ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... ওই ওই ... এখনও ঠিক অভ্যাস হয়নি। আমরা তো আর কলকাতার লোক না। টাকির লোক এমনই বলে। আমাদের ইছামতি পেরোলেই ওপারে সাতক্ষীরে, খুলনা ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... তা ঠিক। ওব্যেস পাল্টাতে সময় লাগবে। চট করে কেমন সব বদলে গেল ... না ? ওই ভিসাতেই চলবে ... না নতুন করে দরখাস্ত করতে হবে ? '
    ---- ' ঠিক জানি না। খোঁজখবর করতে হবে। আমার বাবা তো আমাদের নিয়ে সেই আটচল্লিশে চলে এসেছিল। আমার তখন চোদ্দ বছর বয়েস। কাকারা ওখানেই থেকে গেল ... '
    ---- ' তারাই তা'লে জমিজমা সামলাচ্ছে অ্যাদ্দিন ধরে ...' মুখে রুটি মাংস পুরে জিজ্ঞাসা করল একজন।
    প্রথমজন ঘাড় নেড়ে বলল, ' হ্যাঁ ... সেটা স্বীকার করতে বাধা নেই। ভাগ্যিস ওরা মাটি কামড়ে পড়ে ছিল ... নইলে তো এতদিনে শুধু আঙুল চুষতে হত... হ্যাঃ হ্যাঃ ... সব জানা আছে ... '
    প্রতিবিম্ব নীচু স্বরে বলল, ' শুনছ তো ? '
    ---- ' কি ? '
    ---- ' ওই যে পাশে ... বেশ জোরেই তো বলছে ... কেমন একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না ...
    ---- ' কিসের গন্ধ ? '
    ---- ' এই ধর সাম্প্রদায়িকতার। আমেরিকাতেও আছে রেসিজম... '
    ---- ' দূর ... আমি ওসব কূটকচালি বুঝিনা ... '
    পাঁচবছরের ছেলে বলল, ' মা বাইরে চল না ... ভা..ল লা..গছে না ... '
    স্বল্প পরিসর ভোজনালয়ে, তা সে যতই বিখ্যাত হোক, একজন শিশুর ধৈর্যচ্যূতি ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না।
    সুমনা বলল, ' একটু চুপ করে বস বাবা ... খাওয়া হয়ে গেলেই বেরিয়ে যাব ... এই তো আর একটুখানি ... '
    ছেলে বলল, ' ট্রাম গাড়ি করে যাব তো মা ? '
    সুমনা বলল, ' হ্যাঁ বাবা ... ট্রামগাড়িতেই যাব ... '

    খাওয়া সেরে মৌরি চিবোতে চিবোতে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটে এসে দাঁড়াল সুমনারা। গ্যালিফ স্ট্রিট বা বেলগাছিয়া ডিপো থেকে একটা না একটা ট্রাম এসে যাবে।
    এই সময়ে ওদিক থেকে দুজন, একজন পুরুষ একজন মহিলা রাস্তা পার হয়ে এদিকে এসে দাঁড়াল সুমনাদের বাঁ পাশে ফুট ছয়েক দূরে ... '
    মহিলার দিকে আগে চোখ পড়ল প্রতিবিম্বর।
    ---- ' আরে ... রাত্রি ম্যাডাম আপনি ? '
    পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল সাগর একটা ফুলহাতা সোয়েটার পরে। রাত্রির গায়ে একটা রঙীন চাদর।
    সুমনার চোখ পড়ল এবার। সে ছেলের হাত ধরে এদিকে সরে এল সে তাড়াতাড়ি। সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল, ' স্যার আপনারা এখানে ? '
    সাগর বলল, ' আরে, তোমরা যে ... কি খবর ... কবে ফিরলে বিদেশ থেকে ?
    ---- ' তা প্রায় দেড় মাস হবে ... '
    ---- ' ও আচ্ছা ... এখন কি দেশেই থাকবে ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... সেরকমই তো ইচ্ছে ... এখন দেখা যাক এখানে সুবিধে করতে পারি কিনা ... '
    ---- ' হমম্ ... সেটাই তো ... দেখ ... '
    রাত্রি বাচ্চাটার গাল টিপে বলল, ' কি সোনা কেমন আছ ? '
    সোনা আদরে গলে গিয়ে হাসিতে মুখ ভরিয়ে শরীর পিছনে বেঁকিয়ে বলল, ' ভা...ল '
    সুমনা বলল, ' আমরা ছুটির দিনে একটু বেরিয়েছি ... কোথায় আর যাব, ট্রামে উঠে পড়লাম, শ্যামবাজারে এসে নামলাম। ওদিকে ধর্মতলা আর এদিকে শ্যামবাজার ... এই তো আমাদের যাবার জায়গা। আপনারাও কি তাই ... ঘুরতে ?
    সাগর বলল, ' না, আমরা ঠিক বেড়াতে বেরোইনি ... একটু কাজে এসেছিলাম ... ডাক্তার দেখাতে ... '
    প্রতিবিম্ব উদ্বিগ্ন মুখে বলল, ' কেন, কি হয়েছে স্যার ? '
    ---- ' না এখনও হয়নি। হবে ... '
    ---- ' কি স্যার ? '
    সাগর রাত্রির দিকে দেখিয়ে বলল, ' সেটা ইনি ভাল বলতে পারবেন ... স্ত্রীরাইতো স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ হয় ... কি ? '
    প্রতিবিম্ব একটু চিন্তায় পড়ে গেল। তবে সুমনা অতি দ্রুত তাকে উদ্ধার করল।
    সে বলে উঠল, ' সত্যি ? কনগ্র্যাচুলেশান ম্যাডাম ... কনগ্র্যাচুলেশান স্যার ... সুখবরটা নিশ্চয়ই সামনের বছরের মাঝামাঝি পাব ... '
    প্রতিবিম্ব আনাড়ির মতো জিজ্ঞাসা করল, ' কিসের সুখবর বল তো ... '
    অনেক বছর আগেকার হেদুয়ার দুপুরে সেই দিনগুলোর মতো সুমনার কথায় সেই পুরণো ঝংকার উঠল, ' তোমার মাথা আর আমার মুন্ডু ... হাঁদা গঙ্গারাম ... '
    বেলগাছিয়া থেকে এক নম্বর ট্রাম এসে দাঁড়াল ঘ্যাঁসস্ করে। প্রায় ফাঁকা।
    সুমনা বলল, ' চলুন স্যার ওদিকেই যাবেন তো ... এক গাড়িতেই উঠি ... '
    রাত্রি বলল, ' হ্যাঁ, সেই ভাল ... নিখিল স্যার তো তাই চেয়েছিলেন ... চল চল ...'
    সঙ্গের শিশুটি বলল, ' কি মজা ... হাঃ হাঃ ... '

    হিম আরও ঘন হচ্ছে। বাতাসে কুয়াশা জমছে ধীরে ধীরে ক্রমশ।

    ( পরের পর্বে শেষ )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন