এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে ( দ্বিতীয় খন্ড ) - ১২ 

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৬৯ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫
    ( ১২ )

    দেখতে দেখতে শীতের বেলা এসে গেল। দুপুরবেলার রোদ মধুর খেজুর রসের মতো লাগে।
    সুভাষ অতীশরা কিন্তু শিমূলতলায় যাবার ব্যাপারটা ভোলেনি। একতলার ঘরে আবার মিটিং বসল। রওয়ানা দেবার দিন ঠিক হয়েছে দোসরা জানুয়ারি। টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। অখিলরা কেউ যাবে না। বিভূতিবাবুদের পরিবারের শুধু বিভূতিবাবু সস্ত্রীক যাবেন। হ্যাঁ, আর যাবে মধুমিতা। রমাদেবীর বোনের মেয়ে। বেড়াতে খুব ভালবাসে। কুড়ি একুশ বছর বয়স। মাসখানেক আগে একবার এসেছিল মাসির কাছে। শিমূলতলায় যাবার কথা শুনে ওদের সঙ্গে যাবার জন্য নেচে উঠল। ওর মা বাবা আপত্তি করেননি। অতগুলো ব্যাচেলর ছেলে যাবে শুনে প্রথমটা একটু খুঁতখুঁত করছিলেন। রমাদেবী বোনকে বললেন, ' আরে ... ওসব নিয়ে চিন্তা করিস না। ওরা ওরকম টাইপের ছেলেই না। তাছাড়া আমরা তো আছি ... ওরা সব মিতার থেকে অনেক বড়। ওসব ভাবিস না ... '

    বাড়ির নাম বিনোদ কানন। বাড়ির ডাঁয়ে বাঁয়ে আর পিছে বিস্তর জমি। গাছপালা আগাছায় ভরা। গেটের ভিতরে সামনেও জায়গা আছে, অল্প।
    একতলা আদ্যিকালের বাড়ি। চারখানা বিশাল আকারের ঘর। আদ্যিকালের কোঠা, খাটা পায়খানা, আদ্যিকালের ব্যবস্থা। দেহাতি মুলূক, হাওয়ায় মিঠে রোদ মেশানো শীতের দেহাতি কামড়।

    অতীশ বলল, ' ওঃ ... কি দারুন লাগছে। মনে হচ্ছে গান ধরি ... '
    বিনয় বলল, ' ধর না, ধর না ... ও আকাশ সোনা সোনা ... হাঃ হাঃ ... '
    দুর্বার বলল, ' আ হা হা হা .... শান্তি শান্তি ... ওসব গান এখানে চলবে না ... মাটির গান চাই ... '
    সুভাষ বলল, ' আমি আর বাড়ি ফিরব না ... এখানেই থাকব ... পিছনের জঙ্গলে বসে ধ্যান করব ... ব্যোম ব্যোম ভোলে বোম ... '
    মধুমিতা ওদের রকম সকম দেখে খিলখিল করে হাসতে লাগল।
    বিভূতিবাবু বললেন, ' ওই দিকে দেখ পাহাড়ের সারি। কেমন যেন নীল নীল কুয়াশা ... '

    নরম রোদে দাঁড়িয়ে ইঁদারা থেকে তোলা জলে চান করে যে এভাবে শরীর জুড়িয়ে যায় তা কে জানত। কত পাখি ডাকছে চারপাশে। রোদ ঝরে পড়ছে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ার কণা মেখে। বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে একটা গরুর গাড়ি গেল।
    বাড়ির পিছন দিকের একটা ঘরে একজন বুড়ো মালি থাকে পরিবার নিয়ে। ওর নাম ঝগড়ু।

    এখানে এখনও বিজলি আসেনি। রাতে হারিকেন জ্বলে। ঝগড়ুর বৌ হারিকেন রেখে যায়। অন্ধকারে ঝিঁঝি ডাকছে। ওই হারিকেনের আলোতেই সুভাষরা ব্রিজ খেলতে বসল। চার খেলুড়ের ছায়া নড়তে লাগল ঘরের মধ্যে। রুহিতনের বিবি ফেলল সুভাষ।
    এখানে ভোরের আলো ফোটে মোরগের ডাকে। ঝগড়ুর পোষা মুরগীগুলো এদিকের উঠোনে এসে টুকটুক করে ঘুরে ফিরে কি খায় খুঁটেখুঁটে। মাথায় কানে পুরণো মামলার জড়ানো দুজন লোক জোরে জোরে কথা বলতে বলতে সামনের রাস্তা দিয়ে গেল, বোধহয় স্টেশনের দিকে।
    জানলা দিয়ে এক পশলা আবছা আলো ছড়িয়ে এল ঘরে। মধুমিতা বাইরে এসে দাঁড়াল বাড়ির সামনের জায়গাটায়। কি নির্জন পরিপার্শ্ব। মোরগটা পাঁচিলের ওপর দাঁড়িয়ে আর একবার আওয়াজ ছড়িয়ে দিল... কঁকর কঁ ... কঁকর কঁ ...।
    শিশিরে ভেজা রাস্তার ধুলো। মধুমিতা অনেক দূরের পাহাড় আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
    কে একজন বলল, ' বেশ ঠান্ডা কিন্তু এখানে ...শীতের কামড় আছে ... একটা চাদর গায়ে দিতে পারতেন। ঠান্ডা লেগে গেলে মুশ্কিল ... '
    মধুমিতা পাশে তাকিয়ে দেখল দুর্বার দাঁড়িয়ে আছে।
    মধুমিতা হাসিমুখে বলল, ' না ... ঠিক আছে। আমার অত ঠান্ডা লাগে না। কি দারুণ লাগছে, না ? '
    ---- ' হ্যাঁ ... খুব ভাল লাগছে ... '
    ---- ' আর কেউ ওঠেনি ? '
    ---- ' নাঃ ... ওরা একটু ঘুমোতে ভালবাসে। এত জলদি ওঠার পাত্র নয়। মাসীমা মেসোমশাই ঘুমোচ্ছেন ? ' দুর্বার গায়ের চাদরটা খুলে আবার জড়াল গায়ে।
    ---- ' হ্যাঁ ... আমি একাই বেরিয়ে এলাম। এখানে আকাশ কত পরিষ্কার, না ? ' মধুমিতা ভোরের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
    ---- ' হুঁ ... তা তো বটেই ...একদমই কলকাতার মতো নয় ... এখানে হলদি ঝর্ণা বলে একটা জায়গা আছে। যাব একদিন ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... লাট্টু পাহাড় না কি একটা আছে ... '
    মধুমিতা বলে।
    ---- ' হ্যাঁ ... এখানকার মালি সব বলতে পারবে ... '
    ---- ' ঠিক আছে ... তাড়াহুড়োর কি আছে ... আছি তো ক'দিন ... '
    ---- ' নাঃ ... তাড়াহুড়োর কিছু নেই ... আছি তো ক'দিন ... ' দুর্বার সায় দেয়।

    বিকেলবেলা সবাই মিলে হাঁটতে হাঁটতে বাজারের দিকে যেতে লাগল। দেহাতি বাজার। শীতের ছোট্ট বেলা। এক্ষুণি আলো ফুরিয়ে আসবে। তবে এখনও আকাশ থেকে একটা নরম উজল রশ্মি নেমে এসে ছড়িয়ে আছে গাছের আগায়। ঠান্ডা বাড়ছে ক্রমশঃ।
    বিভূতিবাবু বললেন, ' এখানে ঠান্ডা বেশ কড়া কিন্তু ... তুমি মাফলারটা গলায় পেঁচিয়ে নাও ... '
    রমাদেবী বললেন, ' হ্যাঁ ... নিচ্ছি। মিতা ... মিতার মাফলার আছে তো ? '
    ---- ' হ্যাঁ মাসি ... মাফলার নিয়েছি। চাদরও আছে। টর্চও আছে। একটু পরেই তো অন্ধকার ঘুটঘুট করবে ... '
    ---- ' মাসি লাট্টু পাহাড়ে কবে যাবে ? '
    ---- ' কি জানি, তোর মেসোকে জিজ্ঞাসা কর ... '
    পিছন থেকে দুর্বার বলল, ' এত তাড়াহুড়োর কি আছে ... এখনও তো হাতে সময় আছে ... '
    ওদের পাশে একটা ভাঙাচোরা সাইকেল এসে থামল প্রায় নিঃশব্দে।
    ঝগড়ু একগাল হেসে বলল, ' রাত্রে কি খাবেন ... ভাত না চাপাটি ? মুরগী কষা আর বেগুন ভাজা আর গোবির সব্জী বানাব। কাঁচা টমাটর আর পেঁয়াজ আছে। শশাও আছে ... '
    বিভূতিবাবু বললেন, ' তা'লে চাপাটিই হোক না ...এগুলো ভাতের আইটেম নয়। তাছাড়া শীতকালে ভাত ভাল লাগে না রাত্রে ... '
    সুভাষ বলল, ' ঠিক আছে ... তাই হোক ... তাই হোক ... '
    অতীশ বলল, ' হ্যাঁ হ্যাঁ ... চাপাটিই বেটার ... '
    দুর্বার বলল, ' কিন্তু একজন চুপচাপ আছে যে ... তারও তো গণতান্ত্রিক অধিকার আছে ... '
    মধুমিতা বলল, ' আমি আবার কি বলব ... কি আশ্চর্য ... বলার কি আছে ! '
    ঝগড়ু সাইকেল চালিয়ে চলে গেল। হিম জমছে বাতাসে।

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন