এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হেদুয়ার ধারে (দ্বিতীয় খন্ড) - ৮

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ৩০ অক্টোবর ২০২৪ | ৮৬ বার পঠিত
  • ( ৮ )

    জোড়াসাঁকো থানার ওসির টেবিলের উল্টোদিকে সাগর আর পারস বসে আছে। পারস অনেক ভাবনা চিন্তা করে সাগরের সঙ্গে থানায় যাওয়াই ঠিক করল শেষ পর্যন্ত।
    ওসি সমরেন্দ্র কুন্ডুর বয়স পঞ্চাশ বাহান্ন বছর হবে। কর্ত্তব্য পালন করার থেকে দায়িত্ব এড়াতেই বেশি ভালবাসেন। আগে মুচিপাড়া থানায় ছিলেন। তখন ও সি হননি। সাগরকে অন্তত পনের বছর ধরে চেনেন। তিনি সাগরকে দেখে একটু ধাক্কা খেলেন তাতে সন্দেহ নেই। সেটা প্রকাশ করলেন না অবশ্য। এইসব পুরণো পুলিশকর্মীরা এখনও সাগরের নামে বেশ নাড়া খায়। অনেক স্মৃতি জমা হয়ে আছে তো।
    ---- ' ওঃ ... কি জ্বালা... কি চাকরিতে যে ঢুকেছি ... লাইফটাই কয়লা হয়ে গেল ... হ্যাঁ বলুন ... ' চেয়ারে ধপ করে বসে পারসের দিকে তাকিয়ে বললেন।
    পারসের কাছ থেকে সব শুনলেন। হুমকি চিঠিটা দেখলেন, তারপর বললেন, ' ওঃ ... কি জ্বালা ... এখন এই হয়েছে এক, যাকে বলে গোদের ওপর বিষফোড়া ... '
    তারপর সাগরের দিকে তাকিয়ে প্রথম প্রশ্নটি করলেন, ' আপনি এলেন যে ... এ কেউ হয় ? '
    ---- ' এই এলাম ... যাতে কথাগুলো একটু শোনেন ... নইলে তো ... হ্যাঃ হ্যাঃ .... আপনাদের তো আমি চিনি ... পুরণো পাপী ... আর মুখ খোলাবেন না ... '
    ---- ' আরে কি জ্বালা ... এসব কি বলছেন ... কথা না শোনার কি আছে ! কি চাইছেন বলুন না ... একটা জি ডি করে নিচ্ছি। এফ আই আর লজ করতে গেলে তো ওদের আইডেন্টিটি জানা চাই। এখানে আপনাদের, মানে ... এদের সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। নিজের সিকিউরিটি নিজের কাছে। ডায়েরি করা রইল। থানায় খবর দিলেই আমরা যেতে বাধ্য। এর বেশি আর কি করতে পারি আপনিই বলুন না ... '
    তারপর সমরেন্দ্রবাবু নীচু গলায় বললেন, ' আর তাছাড়া আপনি তো আছেনই। এখনকার এইসব
    ক্যাপ্টেনদের টাইট দিতে আপনি একাই যথেষ্ট ... '
    সাগর মাথা নীচু করে কি একটা ভাবতে ভাবতে বলল, ' হমম্ ... তাই তো ... '
    বলে কি যেন ভাবতে লাগল সাগর।
    ---- ' এটা নিয়ে আপনার এত চিন্তা কিসের ? এসব কেস তো অনেক ডিল করেছেন ... অ্যাজ এ পুলিশ অফিসার আমার অবশ্য এগুলো বলা শোভা পায় না ... যাক, দেখুন কি হয় ... ' সমরেন্দ্রবাবু চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে এক গ্লাস জল খেলেন।
    ----' চিন্তাটা অন্য ধরণের। এটা আগে নিশ্চিত হওয়ার দরকার এরা কিরকম ... ভাল না খারাপ ...এদের রাস্তাটা ভুল না ঠিক....' সাগর বলে।
    ---- ' মানে, এটা এখনও ধরতে পারিনি আমরা ...তাই তো ? '
    ---- ' হুঁ হুঁ ... ঠিক আছে, উঠি এখন ... ডাকলে যেন দেখা পাই ... '
    ---- ' হ্যাঁ ... শিওর শিওর ...আমি আছি, এই থানার জুরিসডিকশানে পড়লে ... ডোন্ট ওয়ারি ... '
    সাগর পারসের কাঁধে হাত দিয়ে বলল, ' চল ... '
    সমরেন্দ্রবাবু উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ' কি জ্বালা ... '

    আজ বিশে জুলাই। বেলা এগারোটা বাজে। চারপাশে, বিশেষ করে স্কুল কলেজে প্রবল উত্তেজনা। একটা স্বপ্নের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষ চাঁদে পা রেখেছে। আমেরিকা থেকে অ্যাপোলো ইলেভেন নামে রকেট টাইপের কি একটা ছেড়েছিল। সেটায় চেপে তিনজন নাকি চাঁদে গিয়ে নেমেছে। প্রথম যে নেমেছে তার নাম এতক্ষণে সবাই জেনে গেছে ... নীল আর্মস্ট্রং। তার পরেই আর একজন চাঁদে পা রেখেছে। তার নামও সবাই জেনে ফেলেছে এতক্ষণে। এডুইন অলড্রিন। চাঁদমামার বুকে গিয়েও যে হাঁটাচলা করা যায় নিয্যস মানিকতলা বাজারে গিয়ে ঘোরাফেরা করার মতো, এহেন কান্ড যে বেঁচে থাকতে থাকতে দেখে যেতে পারা যাবে এমনটা বোধহয় কেউই ভাবেনি এই হেদো চত্বরে। এই চমকপ্রদ ব্যাপারে অভিভূত হয়ে বনবিহারীবাবু বললেন, ' ব্যাটাদের এলেম আছে বটে ... বললে হবে ? আমাদের এই গুয়োর ব্যাটারা এসব পারবে ... ভিরমি খাবে একেবারে হ্যাঃ ... '
    স্কুলের হেডমাস্টারমশাই ফাউন্টেন পেনটা বুক পকেটে গুঁজতে গুঁজতে উত্তেজিতভাবে তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দোতলার বারান্দায় মাস্টারদের জটলায় যোগ দিলেন।
    ---- ' চিন্তা করা যায় না, চিন্তা করা যায় না ... হোয়াট এ গ্রেট অ্যাচিভমেন্ট অফ ম্যানকাইন্ড ... কাল সারা রাত ধরে কমেন্ট্রি শুনেছি ... কি বলব মশাই ... ওঃ চিন্তা করা যায় না ... '
    নীচু ক্লাসে ইতিহাস আর বাংলা ব্যাকরণ পড়ান নীশিথবাবু। হেডস্যার জ্যোতির্বিকাশবাবুকে তৈলমর্দন করে চলার একটা প্রবণতা আছে তার।
    তিনি এই সুযোগটা ফস্কালেন না।
    বললেন, ' ওঃ ... কি বলব স্যার ... গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে ... আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন তো স্যার ... ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি ... '
    সলিলবাবু এবং হরপ্রসাদবাবু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
    জ্যোতির্বিকাশবাবুর এসব একদম পছন্দ নয়। তিনি খোলামেলা প্রকৃতির মানুষ। একদিকে চাঁদে মানুষের পদক্ষেপ সংক্রান্ত বিপুল কীর্তির কথা নিয়ে ঝুমঝুমি বাজাচ্ছে, এদিকে নিম্নস্তরের গ্রুপবাজির ধুনো জ্বালিয়ে রেখেছে সারাক্ষণ।
    তিনি পরিস্থিতি আন্দাজ করে বললেন, ' সে যাক ... ওসব কথা আবার পরে হবে'খন ... এখন ক্লাসে যান। বড্ড গোলমাল হচ্ছে ... '
    হেডস্যার ব্যক্তিত্ববান মানুষ। তাই নীল আর্মস্ট্রংদের চন্দ্রাভিযানের কিস্যা আপাতত মুলতুবি রেখে সকলেই ওখান থেকে সরে গিয়ে যে যার ক্লাসে ঢুকে গেলেন।

    বিকেলবেলায় আকাশ কালো করে এল। শনশন করে ভিজে হাওয়া বইতে লাগল। বিদ্যুচ্চমকসহ চাপা মেঘডম্বরুর পরে বৃষ্টির স্নিগ্ধ ধারাপাত শুরু হল। একটু পরেই আচমকা চরাচর ভাসানো বন্য জলধারার ঝাপট নেমে এসে সব কিছু এলোমেলো করে দিতে লাগল।
    রাত্রি একছুটে কলেজ স্ট্রিটে দাশগুপ্তর বইয়ের দোকানে এসে ঢুকল মাথা বাঁচাবার জন্য। বিরাট দোকান। ভেতরে অনেকটা জায়গা। তার সঙ্গে আরও দু তিনজন ওখানে ঢুকে পড়ল।
    রাত্রি দোকানের ভিতর একপাশে দাঁড়িয়ে একজনকে বলল, ' দাদা একটু সরে দাঁড়ান না ... '
    বলে পাশের ভদ্রলোকের দিকে তাকাল।
    ---- ' আরে ... অমলদা না ! '
    অমল দেখল কাছ ঘেঁসে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে। অমল রাত্রির এত কাছাকাছি কখনও দাঁড়ায়নি।
    ---- ' আরে রাত্রি ! কি খবর ... কেমন আছ ? অনেকদিন পর ... '
    ---- ' ভাল ভাল। তুমি কেমন আছ ? তৃণার খবর কি ? '
    ---- ' ওই ... সব ঠিকই আছে। আমার ছেলে পাঁচ বছরে পড়বে ... খুব দুরন্ত ... '
    ---- ' তাই নাকি ? খুব দেখতে ইচ্ছে করে ... আগে কত যেতাম রামধন মিত্র লেনের বাড়িতে। সঞ্চারীর সঙ্গেও অনেকদিন ধরে কোন যোগাযোগ নেই। দিনগুলো কি তাড়াতাড়ি বদলে গেল, না ? সেই তোমার গিটার শোনা ... ওঃ কি সুন্দর ... এখনও বাজাও ? '
    ---- ' চলে এস না একদিন। আবার বাজাব। ওটা তো ঘুমিয়ে আছে কতদিন ধরে। দেখ গিয়ে জাগাতে পার কিনা ... '
    ---- ' ওমা ... সেকি কথা ! ঘুমিয়ে কেন ? তৃণা কি করছে ? '
    ---- ' এ পৃথিবীতে সব কিছু সবার জন্য নয় ... বুঝলে ? '
    সত্যি কথা বলতে কি, রাত্রি ঠিক বুঝল না। কি বলা উচিত ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল।
    অমল একটু ইতস্তত করার পর ঝট করে বলল, ' চল না ... কফি হাউসে গিয়ে একটু বসি ... '
    রাত্রি শান্তকন্ঠে বলল, ' দাঁড়াও বৃষ্টিটা ধরুক... '

    ( চলবে )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন