এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • ধানাই পানাই ৩

    রূপঙ্কর সরকার লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৪ জুন ২০১২ | ৮০৭ বার পঠিত
  • | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০

    অপহরণ ও কাকতালীয়


    কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে অপহরণের কোনও আপাত সম্পর্ক নেই, তবে এই কাহিনিতে আছে। আসলে পুরো ধানাই পানাই জুড়েই কাকতালীয় ঘটনার ছড়াছড়ি। সব এখানে লেখা সম্ভব নয়, তবু কিছু তুলে দিলাম।


    আমার এক বন্ধু, তার নাম বাবলু, ভাল নাম বি- আচ্ছা থাক। বাবলুই চলুক। আমি নিজের বাড়িতে ফোটো ল্যাব বানানোর আগে ওর বাড়িতে ছবি প্রিন্ট করতে যেতাম। ডার্ক রুমটা ছিল ছাদের ওপর। ছবি ছাপার সঙ্গে সঙ্গে গপ্পো গুজবও চলত সমানে। ওর আসল নামটা যেমন উল্লেখ করলাম না, বাড়িটা কোথায় ছিল, সে প্রসঙ্গও এড়িয়ে যাচ্ছি সঙ্গত কারণেই।


    একদিন বাবলু খুব উত্তেজিত, বলল, আমাদের পাড়ায় একটা সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটে গেছে। বললাম, কিরকম? ও বলল প্রকাশকে (নাম বদল) ফিরে পাওয়া গেছে। আমি বললাম, যাচ্চলে, হারানোর গপ্পোটাই তো শুনিনি, আগে হারানো, তার পর তো ফিরে পাওয়া। বাবলু বলল, সেটা বলিনি? বললাম, না তো –


    ও বলল, শোনো তাহলে। আজ থেকে বছর তিনেক আগে, প্রকাশ হঠাৎ একদিন হারিয়ে গেল। সিম্পলি ভ্যানিশ হয়ে গেল, নো পাত্তা, নট কিচ্ছু। কাজে বেরিয়েছিল, আর ফেরেনি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, অফিস গেছিল? –অফিস ঠিক নয়, আবার অফিসও বটে। - কিরকম? – ও ছিল মেডিক্যাল সেলসম্যান, অবশ্য নিজেকে ওরা মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভ বলে।(যেমন আজকাল ডিশ-মিস্তিরীদের এঞ্জিনীয়র, কেরানিদের এক্সিকিউটিভ এই সব বলে। বাঙালি চিরকাল পদের কাঙাল। তা না হলে ভারতের সর্বত্র অটোরিক্সো কে ‘রিক্সা’ বলে, কিন্তু এখানে ‘অটো’ না বললে মার খেতে হবে।)


    যাকগে, আসল কথায় আসি, বাবলু বলল, প্রকাশ সেদিন অফিসেই গেছিল হিসেব জমা দিতে। অফিসটা ছিল গ্রেট ইস্টার্নের পাশে, ক্রুকেড লেন বা ওয়াটারলু স্ট্রীট জাতীয় কোনও রাস্তায়। অফিস থেকে ওকে বেরোতেও দেখেছে লোকজন, বড় রাস্তায় আসা ইস্তক সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে, তারপর হাওয়া।


    আমি বললাম, বড় রাস্তায় অফিস টাইমে অত লোকের মধ্যে হাওয়া হয়ে গেল? মানে? মানেটা খুবই সরল। ওকে ‘লিফট’ দেওয়া হয়েছিল। -তার মানে?-ও যখন বাস স্টপেজে- আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম, স্টপেজ নয়, স্টপ।–আচ্ছা। তাই হল, কথার মাঝে ডিসটার্ব করবেনা একদম। হ্যাঁ, ও যখন বাস স্টপে বাস ধরবে বলে দঁড়িয়ে ছিল- আমি বললাম, বাস স্টপে তো জেনারালি লোকে বাস ধরবে বলেই দাঁড়ায়, ট্রাম স্টপে দাঁড়ায় ট্রাম ধরবে বলে আর ট্যাক্সি ধরতে হলে – বাবলু ঘুরে এমন ভাবে তাকাল, যে মদনভস্ম-র চেয়েও সাংঘাতিক কিছু একটা ঘটে যেতে পারত, আমি খুব কাঁচুমাচু মুখ করতে বলল, যাকগে, ঐ ট্যাক্সির কথা তুললে বলে বেঁচে গেলে।-হ্যাঁ ট্যাক্সি, – সেই ট্যাক্সিই কাল হল। - কিরকম কিরকম?


    বাবলু বলল, বাস স্টপে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল। এ ব্যাপারটা অবশ্য জানা গেছে প্রকাশ ফিরে আসার পর। যাকগে, একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল, তার থেকে মুখ বাড়িয়ে কয়েকজন গ্রাম্য চেহারার লোক ওকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা দাদা, কালীঘাটে মায়ের মন্দিরটা কোনদিকে পড়বে? আমি বললাম, আরে এ কথাটা ওর মনে এলনা, যে কোলকাতায় এমন ট্যাক্সিওয়ালা আছে, যে কালীঘাটের মন্দির চেনেনা? আমার একবার- বাবলু বলল, তাহলে তুমিই তোমার গল্পটা বল, আমারটা এখন থাক। আমি বললাম, সরি সরি, প্লীজ কনটিনিউ –


    প্রকাশ বলল, এই তো, যে রাস্তায় যাচ্ছেন, সোজা চলে যান তিন চার কিলোমিটার, মাঝে মাঝে রাস্তায় কাউকে জিজ্ঞেস করে নেবেন- একটা লোক বলল, আপনার বাড়ি কোন দিকে ? প্রকাশ বলল, ঐ দিকেই, আর একটু যেতে হয়। লোকটা বলল, তাহলে তো ভালই হল, আপনি তো মন্দির অবধি আমাদের সঙ্গেই যেতে পারেন। আপনারও খানিকটা এগিয়ে থাকা হল, আমাদেরও আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয়না-। আমি বললাম, আশ্চর্য আমারও ঠিক এমনি – বাবলু বলল, বল তাহলে, তোমার গল্পটাই শুনি। আমি বললাম আচ্ছা, ফাইনাল সরি। আর ইন্টারাপ্ট করবনা।


    প্রকাশ তো লিফটের লোভে ট্যাক্সি চেপে বসল, কলকাতায় যান বাহনের যা সমস্যা, একটু আরাম পেলে কে বা ছাড়ে। তারপর ওর আর কিছু মনে নেই। বাড়ির লোকে প্রথমে আত্মীয় বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ করল, তারপর থানা পুলিশ, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন, সব কিছু হল, প্রকাশ আর ফিরলনা। কেউ যে ওকে ধরে নিয়ে যেতে পারে, এমন কথা কারোর মাথাতেও আসেনি। তেত্রিশ বছর বয়েস, বিয়ের কথাবার্তা চলছে, এত বড় ছেলেও কিডন্যাপ হবে কে জানত।


    বছর তিনেক পরের কথা। প্রকাশের মামা ছিলেন অনেক বড় নামজাদা ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি। প্রকাশ কাজ করত ছোটখাট কোম্পানীতে। তা মামাবাবু যাচ্ছেন কনফারেন্সে বোম্বে। ( এখন অবশ্য মুম্বাই বলে)। সে সময়ে গীতাঞ্জলি মীতাঞ্জলি ছিলনা সম্ভবতঃ। মামা যাচ্ছেন বোম্বে মেল ভায়া-এলাহাবাদ চেপে।


    এলাহাবাদে ট্রেনটা বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। মামা নামলেন চা খেতে। সারাটা রাস্তা মামা কিন্তু প্যান্ট্রি-র চা-ই খেয়েছেন, ওই এলাহাবাদে এসে কী যেন মনে হল, মামা নামলেন প্ল্যাটফর্মে। সেখানে চায়ের ভাঁড় হাতে পায়চারি করতে করতে হঠাৎ মামার চোখটা আটকে গেল এক জায়গায়।


    প্ল্যাটফর্মে খানিক দূরে একটা ভিখিরি ভিক্ষে করছে। সেটা এমন কিছু আশ্চর্য ঘটনা নয়, প্রধানতঃ তীর্থ কেন্দ্রিক শহর গুলোয় ভিখিরিদের ছড়াছড়ি। তবে এই ভিখিরিকে দেখেতো ঠিক জম্মো-ভিখিরি বলে মনে হচ্ছেনা! অযত্ন ও অপরিচর্যায় মাটি জমা চামড়ার তলা থেকে ফর্সা টকটকে রঙ উঁকি মারছে! সেলসের লোকেরা মানুষ চরিয়ে খেতে খেতে মানব-চরিত হাতের তালুর মত বোঝে। মামা বুঝলেন, এই ভিখিরিটা খুব বেশীদিন এই প্রোফেশনে নেই।


    ভিখিরিটাকে ডেকে যে একটু আলাপ করবেন মামা, সে উপায়ও নেই, সারা মুখ ঢাকা দাড়িগোঁফের জঙ্গলে, তার ওপর তার জিভের সঙ্গে একটা অতিকায় সেফটিপিনের মত জিনিষ আটকানো, যার ফলে সে আদৌ কথা বলতে পারে কিনা বোঝবার যো নেই। পিনটার সামনের দিকটায় একটা মস্ত বড় পেতলের ‘ওঁ’ লাগানো, লোকটা মুখে ‘অ্যাল,অ্যাল’ শব্দ করে ভিক্ষে চাইছে।


    লোকটা মামার কাছাকাছি এসে অ্যালঅ্যাল করতে লাগল বারবার, একটু যেন বেশীই আওয়াজ, মামা দেখলেন, আওয়াজ করছে বটে কিন্তু ভিক্ষে নেবার জন্য হাত পাতছেনা। তবে আওয়াজ করছে কেন? কিছু কি বলতে চায়? সেলসের লোকেরা আম জনতার থেকে একটু বেশী ইন্টেলিজেন্ট হয়। মামা পেরিফেরাল ভিশন দিয়ে দেখলেন, দুটো কালো মুষকো মত লোক একটু দূর থেকে ওর ওপর নজর রাখছে।


    মামা সোজা জি আর পি থানায় গেলেন। সে সময়ে ল্যামিনেটেড আই ডি কার্ডের চল ছিলনা, পিচবোর্ডের ওপর রেক্সিন জাতীয় মোড়কে ভাঁজ করা ছোট্ট বইয়ের মত থাকত সেগুলো(আমারও ছিল লাল রঙের)। মামা ওষুধ কোম্পানীর কার্ডটার এক তৃতীয়াংশ পকেট থেকে সামান্য তুলে বললেন, গাঙ্গুলী ফ্রম সিবিআই । শশব্যস্ত জি আর পি কর্তা স্যালুট মারতেই বললেন, ঐ দাড়িওয়ালা বোবা সেজে থাকা ভিখিরিটা খুব বড় ফেরারী ক্রিমিনাল। ওকে ধরুন আর সঙ্গের ওই চেলা দুটোকেও। আমি সিটি পুলিশ নিয়ে এক্ষুনি আসছি।


    সিটি পুলিশকে মামা অবশ্য সঠীক পরিচয়ই দিলেন। তাদের নিয়ে এসে শুনলেন, উওহ দো আদমী হমারে কবজেসে ধোঁখা দেকে নিকল গয়ে সার, ভাগ গয়ে সালে লোগ। মগর উওহ অসলী ক্রিমিনালকো হম কসকে পকড়া। মামা জানতেন এমনটা হবে। নেটওয়র্ক ছাড়া এত বড় অপারেশন চলেনা। যাকগে, ভাগ্নেটাকে পাওয়া গেছে ঈশ্বরের অসীম কৃপায়। থানা-কোর্ট-কাগজ-পত্র সামলে, দাড়ি কামিয়ে, লাইফবয় দিয়ে গুনে গুনে আঠারো বার চান করিয়ে নতুন জামা পরাতেই প্রকাশ জড়িয়ে জড়িয়ে বলল, মামু, ভাল কিছু খাওয়াও। ওরা বাজারে যে সব্জির খোসা, পাতা, এইসব পড়ে থাকে, তাই ফুটিয়ে দুর্গন্ধওয়ালা চালের সঙ্গে সেদ্ধ করে একবেলা খেতে দিত, আর কারনে অকারনে বেদম মারত। মামা বললেন, আহারে, রোজ স্টেশনে ভিক্ষা করতিস? প্রকাশ বলল, নাতো, এক এক দিন এক এক জায়গায়। ভাগ্যিস আজ –


    আমি বললাম, জানো বাবলু, কতগুলো কাকতালীয় ব্যাপার ঘটে গেল? এক নম্বর, মামার কনফারেন্স ওই সময়ে পড়া, এবং বোম্বেতে পড়া। দুই,-মামা বোম্বে মেল ভায়া নাগপুর না চেপে ভায়া এলাহাবাদ চাপলেন। যাঁরা মাঝ রাস্তায় নামবেননা, এমন যাত্রী কিন্তু বিহারী দৈনিক পাষন্ডদের অত্যাচারের ভয়ে সচরাচর এই রুটে যাননা। তৃতীয়তঃ স্টেশনে চা খেতে নামা, তুমি ভাব একবার! লাস্ট বাট নট দ লীস্ট, প্রকাশকে ঐ দিনই স্টেশনে আনল ব্যাটারা। যাকগে এখন বেচারার কী অবস্থা? জিভের মধ্যে ‘ওঁ’ লাগানো এখনো? বাবলু বলল না না, ওটাতো রোজই ডেরায় গিয়ে খুলে দিত, তা না হলে খাবে কি করে? খুব জ্বলতো অবশ্য। ডাক্তার দেখানো হয়েছে, তিনি বলেছেন, চিন্তা নেই, বছর খানেকের মধ্যে ফুটোটা বুজে যাবে।


    একটা ছবি ওয়েটিং এজেন্টে ফেলে সবে ঘষতে আরম্ভ করেছি, বাবলু বলল, চুপ মেরে গেলে যে ? আমার গপ্পের সময়, আমারও, আমারও বলে খুব তো ডিস্টার্ব করছিলে। এবার তোমারটা বল শুনি? আমি বললাম, নাঃ সেটা এরকম লোমহর্ষক নয়, গল্পের শেষে খুবই অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স। ও শুনে কাজ নেই। বাবলু বলল, না শুনে ছাড়বই না। আমি বললাম, ছাড়বে যখন না-ই তখন শোন, গোড়াটা একদম এক, তবে তারপরই অন্যরম।


    তখন একেবারে কাঁচা বয়েস, হয় সবে হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছি কিংবা কলেজে ফার্স্ট ইয়ার। পূজোর সময়, আমার মামাবাড়ি তখন চলে গেছে লেক রোডে। বিখ্যাত ক্রিকেটার রাজু মুখার্জীদের পাশের বাড়ি। আমি মামাবাড়িতেই বেশী থাকতাম ছোটবেলায়, তাই ছুটি ছাঁটা, পূজো পাব্বনে, একবার যাওয়া চাইই। আমরা তখন থাকি কেয়াতলায়। সন্ধেবেলা, খুব জোর সাতটা-সাড়ে সাতটা বাজে। আমি সোজা যাচ্ছি কেয়াতলা হয়ে, লেক গার্লস স্কুল পেরিয়ে, বিবেকানন্দ পার্কের পেছন দিয়ে, একেবারে সো-জা।


    ঘটনাটা ঘটল আমার জন্মস্থানের ঠিক সামনে। আজকাল এসব কেউ মানেনা বাবলু, কিন্তু তুমি ডার্করুমের অন্ধকারে দেখতে পাবেনা, আমার হাতের লোমগুলো কিরকম খাড়া হয়ে উঠছে। ঠিক ওই জায়গায় আমি জন্মেছিলাম। আমেরিকান মিলিটারিদের একটা হাসপাতাল ছিল ওখানে। স্বাধীনতার পরেও কয়েক বছর চালু ছিল। নাম ছিল, লেক হসপিটাল।


    ওখানে তখন ফুটপাথ খুব চওড়া এবং অ্যাবসলিউটলি ক্লাটার ফ্রী। পরিষ্কার সাফ সুতরো। আমি আপন মনে যাচ্ছি মামাবাড়ির দিকে, রাস্তায় টিমটিমে আলো। বাই দ ওয়ে, তখন পূজো ফূজো খুব কম হত কোলকাতায়। সেই গোলপার্কের দিকে কেয়াতলার পূজো, আর হুই ও মাথায় লেক রোডের মোড়ে সমাজসেবী। আর কোনও পুজো ছিলনা ইন বিটুইন। লোকই বা কটা ছিল কোলকাতায়, পুরো রাস্তাটাই ওই সবে সন্ধেতেও ছিল জনমানবশূন্য।


    পুজো ছিলনা বললে ভুল হবে, ইনকামট্যাক্স কোয়ার্টার গুলোর পেছনে একটা ছোট্ট পুজো হত। বাইরের থেকে দেখে বোঝবার যো নেই। আলো ফালোর বালাই নেই, কম পয়সার ঘুমন্ত ঢাকি সকাল বিকেল দুবেলা একটু নমো নমো করে বাজিয়ে ক্ষান্ত। অন্য সময়ে কেউ জানবেনা ওখানে একটা পুজো হচ্ছে। এখন হয়না সে পুজো। বহুকালই হয়না, ভাগ্যিস হত তখন।


    বাবলু বলল ভেরী ইন্টারেস্টিং, তাতড়াতাড়ি আসল কথায় এস।– হ্যাঁ আসি। আমি চলছি ফুটপাথ ধরে। তখন রাস্তায় গাড়ি চলত সারাদিনে একটা দুটো, তবু লোকে ফুটপাথ ধরেই হাঁটতো। বাবলু বলল, এবার মারব মাইরি। আমি বললাম, এই তো, এসে গেছি। হ্যাঁ, হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখি পাশে একটা ট্যাক্সি। তখন তো ল্যান্ডমাস্টার আর অ্যাম্বাসাডার ছাড়া গাড়ি নেই, এত কম আওয়াজে চুপিসাড়ে এল কি করে তাই নিয়েই প্রথম খটকাটা লেগেছিল।


    ট্যাক্সিতে ড্রাইভার ছাড়া প্রকাশের ঘটনার মতই ক’জন গ্রাম্য চেহারার লোক। এর পর থেকে হুবহু এক গল্প। ড্রাইভার আর পেছনের জানলার লোকটা প্রায় একসঙ্গে জিজ্ঞেস করল, দাদা, চারুচন্দ্র কলেজটা কোনদিকে? দ্বিতীয় খটকা ‘দাদা’ শুনে। বন্ধুদের বোনরা ছাড়া কেউ দাদা ডাকতনা ঐ সময়ে, ওদের ভাইরাও নাম ধরে ডাকত। একমাত্র গ্যাস দেওয়ার উদ্দেশ্য ছাড়া তখন ওই বয়সের ছেলেকে কেউ দাদা ডাকতনা। আমায় গ্যাস দেবে কেন? খটকা নম্বর তিন – সে কালে ট্যাক্সি ড্রাইভার মানেই শিখ। বাঙালি ড্রাইভার থাকলেও বিরল। ড্রাইভারের মুখে বাংলা, খটকা তো লাগবেই।


    জন্মস্থানের মাহাত্ম্য আর উপস্থিত বুদ্ধি আমাকে চলা না থামিয়ে ফুটপাথের ধার থেকে ভেতর দিকে টেনে আনছিল ধীরে ধীরে। ওরাও ফার্স্ট গীয়ারে গাড়ি বাড়াচ্ছিল আস্তে আস্তে। আমাকে আবার বলল, দাদা, চারুচন্দ্র কলেজটা? আমি আরো ভেতরের দিকে আসতে আসতে বললাম, সো-জা চলে যান এই রাস্তায়, লেক মার্কেটের সামান্য আগে পড়বে।


    পেছনের লোকটা বলল, আপনি তো ওই দিকেই যাচ্ছেন, উঠে বসুন না, আমি যত বলি ডাইনে বাঁয়ে না তাকিয়ে সোজা যাবেন, আমার সঙ্গে যাবার দরকার কী? ওরা তত বলতে থাকে উঠে আসুননা, আসুননা, গাড়িটাও গুড়গুড় করে পাশেপাশে চলছেতো চলছেই। শেষে ড্রাইভার বলল, হ্যাঁ তাই করুন, আমি তো লেক মার্কেট চিনিই না। প্রকাশের সঙ্গে একটু তফাৎ শুরু হল এই খান থেকে। আমি তখন সরতে সরতে একেবারে কোয়ার্টারের পাঁচিল ঘেঁষা। ড্রাইভারের চোখে চোখ রেখে বললাম, শুওরের বাচ্চা, কোলকাতায় ট্যাক্সি চালাচ্ছ লেক মার্কেট চেননা? তা বড় রাস্তা ছেড়ে এই ভেতরের রাস্তা চিনলে কী করে –


    পাঁচিল টপকানোর জন্য তৈরীই ছিলাম, টপকানোর লাফটা দিতে দিতে দেখলাম দু দিকের দরজা খুলে চারজন দৌড়ে আসছে। একটা রাম চিৎকার দিলাম, অ্যাই ধনা, অ্যাই তপনা, দুটো বাঁশ নিয়ে শীগগির আয় তো – কোয়ার্টারের আড়ালে পুজো প্যান্ডাল ওদের চোখে পড়ার কথা নয়। ধনারা বাঁশ নিয়ে আসার আগেই তীব্র বেগে ট্যাক্সিটা মিলিয়ে গেল লেক মার্কেটের দিকেই।


    বাবলু, কাকতালীয় এখানেও। জন্মস্থানের কাছে আমাকে ধরেছিল ব্যাটারা। সামান্য তফাতে ধনাদের পুজোটা না থাকলে? ওই পুরো রাস্তাটা কিন্তু একেবারে খাঁ খাঁ। কোলকাতা অনেক বদলে গেছে। ও রাস্তা এখন গমগম করে। কিন্তু যখনই ওদিকে যাই, জন্মস্থানের সামনে এক মিনিট দাঁড়িয়ে যাই এখনও। বলি, থ্যাঙ্ক ইউ।



    আরও কাক, আরও তাল


    ধানাই পানাই জুড়েই আছে কাকতালীয় ব্যাপার স্যাপারের বর্ণনা। এই নিয়ে ছোটখাট একটা থিসিস-ই লিখে ফেলেছি আমি, কিন্তু সে সব এমন ভাবে ছড়ানো, যে এখানে অধিকাংশই বর্জন করতে হবে। একটা ব্যাপারে মন্তব্য করছি, কেউ যদি রেগে যান, তাঁর নিজেরই শরীর খারাপ করবে।


    মন্তব্যটা হল, আমি প্রচুর লোকের সঙ্গে ( ইনক্লুডিং স্ত্রীলোক ) মেলামেশা করেছি সারা জীবন। সাধারণতঃ লোক যত লোকের সঙ্গে ইহজীবনে পরিচিত হয়, আমার পরিচিতি তার বহুগুণ বেশী। আমি নানা মানুষ দেখে দেখে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, যে, ইরেস্পেকটিভ অফ শিক্ষিত- অশিক্ষিত, বেশীর ভাগ মানুষের চিন্তাধারা খুব সরু খাতে বয়।


    বেশীর ভাগ লোকের তর্কই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান বা ‘সিপিয়েম-তিনোমূল’ জাতীয়। যেমন ধরা যাক ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, না নেই। যারা ‘আছে’ বলেন আর যারা ‘নেই’ বলেন উভয়েই এত কনফিডেন্টলি এঁড়ে তক্কো করেন, যে এসব ব্যাপারে ডিসকোর্স আমি করাই ছেড়ে দিয়েছি। তার মানে এই নয়, যে আমি বিরাট পন্ডিত। বরঞ্চ উল্টোটাই। তবু আমার শিক্ষা(?), ভাব এবং অনুভূতির সারাৎসার হল, এ সি ব্ল্যাকের বিজ্ঞাপন (দ্যাট লেডি, আই মাস্ট অ্যাডমিট, ইজ ভেরী সেক্সি) – “কুছ ভি হো সকতা হ্যায়”। প্লীজ কীপ ইয়োর মাইন্ড ওপেন।


    আমি জীবনে হাতে গোনা যে কয়জন মানুষকে শ্রদ্ধা করি বা করতাম, তার মধ্যে জয়দেবদা একজন। প্রচুর আলোচনা হত আমাদের মধ্যে, বকতে বকতে মুখে ফেনা উঠে যেত। দেখে খুব দুঃখ লাগে, যে আমেরিকা মুক্ত বাজার থেকে ভ্যালেন্টাইন ডে পর্যন্ত (মাত্র ক’দিন পরেই দোল ছিল) সব চাপিয়ে দিয়েছে এদেশের অমেরুদন্ডীদের ঘাড়ে। হ্যালুইনের কুমড়ো ঢুকল বলে। তারা যদি দেখত, রাত দশটার সময়ে (সে সময়ে গভীর রাত) দুটো পুরুষ মানুষ, ভিক্টোরিয়ার উল্টোদিকে, ময়দানে লম্বা ঘাসের মধ্যে ঘন্টা দেড়েক অবস্থান করছে প্রায় রোজ, তবে ‘আইডিয়াল গে কাপল’ বলে একটা অস্কার জাতীয় পুরস্কার তুলে দিত হাতে। তাদের হোরাশিও জানতেও পারতনা, যে দেয়ার আর মোর থিংস ইন হেভেন অ্যান্ড আর্থ, লাইক, টু এল্ডারলি পিপল(মেন) ডিসকাসিং হেগেলের ডায়ালেক্টিক্স উইথ জেনারাস সাপ্লাই অফ বাদামভাজা, আন্ডার দ টল গ্রাস, অপোজিট দি ওল্ড কুইনস মেমোরিয়াল।


    ময়দানের পুলিশগুলোও চিনে গেছিল, প্রথম প্রথম কয়েকদিন আশে পাশে ছোঁক ছোঁক করার সময়ে আলোচনার বিষয় এবং বহর শুনে দৌড়ে পালিয়েছিল। তারপর থেকে আমাদের দেখেই সটকান দিত। ব্যাপারটা এমন যায়গায় দাঁড়িয়েছিল, যে নিরিবিলি খোঁজা যুবক-যুবতীরা অনুমতি চাইত কাছাকাছি বসার। তারা জানত, ধারে কাছে পুলিশ, তোলাবাজ, কেউ আসবেনা।


    রাত সাড়ে দশটা। মোতিলাল নেহরু রোডের বাসা বাড়িটার দরজায় ইয়াব্বড় টিপ পরা দশাসই চেহারার বৌদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। সাড়ে ছ’ফুটের লম্বা খাঁচাখানা আমার ছোটখাট শরীরের পেছনে লুকোতে লুকোতে জয়দেবদা বলছেন, এই রূপঙ্করটাই এত বকবক করছিল যে -। বৌদি বলেন থাক, আর সাফাই গাইতে হবেনা। আমি মানে মানে কেটে পড়ার জন্য পেছন ফিরতেই – অ্যাই, যাচ্ছ কোথায়? ঢোকো ভেতরে। কিছু মুখে না দিয়ে এক পাও বাড়াবেনা।


    জয়দেবদাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত, আচ্ছা, আপনি কী বলেন, ভগবানের অস্তিত্ব আছে, না নেই? জয়দেবদা একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে বলতেন, আপাততঃ আমি মানুষ নিয়ে কাজ করছি, মানুষ নিয়ে ভাবছি। ও ব্যাপারটা নিয়ে ভাববার সময় করে উঠতে পারিনি। যদি কোনওদিন পারি, জানাব।


    এ লেখাটার নাম ‘ধানাই পানাই’ কেন, এটা এবার আশা করি বোঝা যাবে। এতক্ষন জয়দেবতার আখ্যান বলার পর সোজা চলে যাব অন্য দিকে। তবে লিঙ্ক একটা আছে। এই ‘কাকতালীয়’ ব্যাপারটার প্রথম আলোচনা শুরু করেছিলাম জয়দেবদার সঙ্গে। সে প্রসঙ্গ অবশ্য পরে আসবে।


    ভারতে একজন বিখ্যাত ‘কলমনিষ্ঠ’ আছেন, তাঁর নাম খুশওয়ন্ত সিং ( বাংলা কাগজ টাগজে অবশ্য ‘খুশবন্ত সিংহ’ লেখে)। তাঁর নাম শোনেননি এমন লোক বিদগ্ধ মহলে খুঁজলে পাওয়া হয়ত যাবে, তবে খুবই কম। এখানে একটা কথা পরিষ্কার করে দিই, ভদ্রলোক আগাগোড়া নাস্তিক। শিখদের নিয়ে প্রচুর লিখেছেন উনি। তবে সুরটা ছিল শিখ কমিউনিটির, শিখ ধর্মের খুব একটা নয়। খানিকটা বৈপরীত্য তো আছেই। উনি ধর্মের বাধা নিষেধ, যেমন মদ্য-মাংস ভক্ষণ ইত্যাদি থোড়াই কেয়ার করেন, কিন্তু পাগড়ি, বালা ইত্যাদি ধারণ করেন ( শিখদের পাঁচ ‘ক’ অবশ্য ধার্য – কচ্ছা, কড়, কিরপান, কংগা, কেশ) আমাদের শিপিয়েম এর (যারা সাপোসড টু বি রেজিস্টার্ড নাস্তিক) হরকিষেন সিং সুরজিৎ আজীবন বালা-পাগড়ি নিয়ে ঘুরেছেন।(পাগড়িটা সাদা, কিন্তু তাতে কী? তাহলেতো ‘ব্রাহ্মণ’ সুভাষ চক্রবর্তীকে লাল পৈতে পরার অনুমতি দেওয়া উচিত ছিল।)


    ঐ ‘নাস্তিক’ খুশওয়ন্ত কাকতালীয় নিয়ে কী বলছেন শোনা যাক। ওঁর ভাষাতেই বলি –


    - বেশ ক’বছর আগের কথা। আমি বোম্বে গেছিলাম। ওখানে আমার ঠাঁই হয়েছিল হোটেল ‘প্রেসিডেন্ট’-এ। ওরা আমাকে একদম ওপরতলায় এমন একটা ঘর দিয়েছিল, যার জানলা দিয়ে নৌকো, জাহাজ টাহাজ সমেত সমুদ্রের পুরো তটভূমিটা দেখা যেত।


    একদিন, হোটেলের বুকশপে যাব বলে- ( সব জিনিষের বাংলা করতে নেই। ‘বইয়ের দোকান’ একদম চলতনা, ‘পুস্তক বিপনি’ লিখলে মার খেতে হতে পারে)। যাই হোক, বুকশপে যাব বলে লিফটের দিকে যাচ্ছি, দেখি দুজন বয়স্কা ইউরোপীয়ান মহিলা কি যেন খুঁজছেন।


    তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, এক্সকিউস মি, ছাদে যাবার সিঁড়িটা কোনদিকে বলতে পারেন? আমাদের খুব সমুদ্র দেখার ইচ্ছে, কিন্তু আমাদের ঘরের জানলা দিয়ে শুধু কয়েক সারি ফ্ল্যাটবাড়ি দেখা যায়।


    আমি বললাম, ছাদে যাবার সিঁড়ি কোনদিকে তাতো জানিনা, তবে আমার ঘরের জানলা দিয়ে দেখতে পারেন। আসুন, আসুন,-


    তাঁরা দু চোখ ভরে দৃশ্যটা উপভোগ করার পর একটু বাক্যালাপ শুরু করি –


    - আপনারা কোন দেশের ?


    - ইংল্যান্ড।


    - ইংল্যান্ডের কোন জায়গা ?


    - হার্টফর্ডশা’র


    - হার্টফর্ডশা’রের কোথায় ?


    - ওয়েলউইন গার্ডেন সিটি বলে একটা নতুন শহর। আপনি কি নাম শুনেছেন ?


    - বোঝো কান্ড। আমি বিলেতে যখন ল’ পড়তে গেছিলাম, ওখানেই তো তিন বছর ছিলাম।


    - আচ্ছা, আপনি কি ডেলকট টেনিস ক্লাবের মেম্বার ছিলেন?


    - ছিলাম তো। গ্রীষ্মকালের সন্ধেগুলো তো ওখানেই টেনিস খেলে কাটাতাম।


    - আচ্ছা আপনার নাম মিস্টার সিং নয়তো?


    - হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কি করে জানলেন?


    - আরে আমি তো অনেকগুলো সন্ধে আপনার সঙ্গে টেনিস খেলে কাটিয়েছি।


    আমি এই ঘটনা জীবনে ভুলবনা। এই মহিলার একই হোটেলে ওঠা, ঠিক যখন আমি বেরোলাম, তখনই করিডরে দেখা হওয়া, শুধু কাকতালীয় হতে পারেনা। মন থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা যে, এমন কোনও অদৃশ্য হাত নেই, যে মনে পড়িয়ে দেয়, যা দেখছ, তার বাইরেও কিছু আছে। ( The telegraph, Sat. 05.03.2011., page 14)


    অবশ্য খুশওয়ন্ত সিং-ই শেষ কথা নয়, ল’ অফ প্রোবাবিলিটির কথা উঠবে এবার। কত লক্ষ বার, বা কত মিলিয়ন বার (আমরা এখন আধা আমেরিকান)এর মধ্যে একবার তো এরকম হতেই পারে। তা অবশ্য পারে।


    >>পরের পর্ব>>


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    | | | | | | | | | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০
  • ধারাবাহিক | ০৪ জুন ২০১২ | ৮০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nina | ***:*** | ০৮ জুন ২০১২ ০৪:৪৩89927
  • রূপঙ্করবাবু
    খাসা লাগছে---সব কিছুই বেশ--কুছ ভি হো সকতা হ্যায়--হিসেবে দেখলে দেখার পরিধিটা কত্ত বড় হয়ে যায়----
    তাই না?
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ০১:২৪89930
  • আমি থামিনি তো, এটা যেহেতু পর্ব -৩, তার মানে আগে দুটো আছে। পরেও বেশ কটা থাকবে। প্রতি সোম/মঙ্গল বার বুবুভা-তেপাওয়া যাবে। তবে সবই এক বিষয়ে নয়। এটার নাম 'ধানাই পানাই' - এটি আক্ষরিক অর্থেই তাই।
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ০৩:১৯89928
  • নিনা - দাড়িওয়ালা বুড়োটা লিখেছিলেন - "চারিদিকে দেখ চাহি হৃদয় প্রসারি -" তখন শুধু দুঃখ নয়, আনন্দ, বিষাদ, বিষ্ময়, সব তুচ্ছ লাগবে। পসিবিলিটিস আর আনলিমিটেড। ধানাই পানাই ধৈর্য ধরে পড়লে আরও অনেক এমন আছে।
  • kumu | ***:*** | ০৯ জুন ২০১২ ১২:৫৯89929
  • ভাল্লাগলো খুব,খুব।আরো হোক,থামলেন কেন?
  • ranjan roy | ***:*** | ১০ জুন ২০১২ ০৭:৩৩89931
  • রূপংকরদা,
    সংগে আছি।
  • রূপঙ্কর সরকার | ***:*** | ১১ জুন ২০১২ ০৪:২৯89932
  • রঞ্জনবাবু, ধন্যবাদ। আপনারা পড়লে আমার আনন্দ।
  • বাঁশিওয়ালা | ***:*** | ২৮ আগস্ট ২০১৪ ০১:২৩89933
  • এই সিরিজটা আর এগুবে না?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন