এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক

  • আমার ধর্ম অধর্মবোধ—মুক্ত কর প্রাণ ১

    রুখসানা কাজল
    ধারাবাহিক | ০২ আগস্ট ২০২২ | ২১৯৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • এক


    ক্লাস সেভেনে উঠেছি। সনাতনধর্মের মেয়েরা তাদের ধর্মশিক্ষা বিষয়ে অত্যন্ত কম নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। পেলেস থেকে অনেক নীচে নেমে গেছে দীপালি। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল আলোচনাসভায় অভিভাবকদের নালিশে পণ্ডিতস্যার খুব লজ্জা পেয়েছেন। স্যার দীপালিদের ধর্মশিক্ষার ক্লাস নিতেন, আবার আমাদের ইতিহাসের ক্লাসও করাতেন। ধর্মশিক্ষার পিরিয়ডে আমরা যে যার ধর্ম অনুসারে আলাদা ক্লাসে চলে যেতাম। তবে জানতাম, আমাদের মত কঠিন কঠিন আরবি শব্দ ওদের শিখতে হয় না।

    রাগ সামলাতে না পেরে পণ্ডিতস্যার ইতিহাসের ক্লাসে গায়ত্রী, দীপালি, বুলু, সুনন্দাদের যাচ্ছেতাই বলে বকা দিলেন।
    আমাদের খুব কৌতূহল হল, কী আছে হিন্দুধর্ম শিক্ষা বইতে, যে পঞ্চাশের উপরে নম্বরই ওঠেনি কারও! দীপালি তো কেঁদে ফেলেছিল রেজাল্ট ঘোষণার দিন।

    পাতার পর পাতা উলটে বইটি আর কিছুতেই ছাড়তে ইচ্ছে করছিল না। মাঝে শুক্রবার ফেলে দীপালির বইটি ধার করে বাসায় নিয়ে এলাম। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ক্ষীণ করে হলেও আমাদের নিয়ে আব্বু মা কিছুক্ষণ গল্প করে। আমি দীপালির বইটি বের করে দেখাই। কী সুন্দর সুন্দর গল্প। আর ছবি? তুলনাই হয় না সেগুলোর সৌন্দর্যের সঙ্গে গল্পের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে। ছোট্ট কৃষ্ণ দই চুরি করে খাচ্ছে, যশোদা মাঈ-এর মাথায় হাত, গাছের ডালে বাঁশি বাজাচ্ছে প্রেমিক কৃষ্ণ আর নীলাঞ্জনা জলে কৃষ্ণের বান্ধবীরা সোহাগী বকা দিয়েও বাঁশি অনিন্দিতসুরে জলকেলি করছে, বহু ফণাযুক্ত কালীয় নাগের মাথার উপর কৃষ্ণ নাচছে ধুমধুমাধুম, বিশাল বটবৃক্ষের নীচ দিয়ে গড়িয়ে চলে যাচ্ছে এক সাপ – যে কিনা আসলে নিয়তি, বিষ্ণুদেব শুয়ে আছেন বহুমাথা বিশিষ্ঠ সাপের ভেলায়, নরকের আগুনে কইমাছের মত ভাজা ভাজা করা হচ্ছে পাপীদের – এরকম কত শত গল্প, ছবি। পরীক্ষায় ওদের প্রশ্ন থাকে, কৃষ্ণ কে? নিয়তি মানে কী? গায়ত্রী মন্ত্র মুখস্থ লেখ – ইত্যাদি।

    শনিবার ক্লাসে ঢুকেই দীপালিকে বললাম, তোরা কী রে! কী করে এত কম নম্বর তুলিস? আমাদের বই দেখবি? দ্যাখ — নিম্নের বাংলা শব্দগুলি আরবিতে লেখ। আত্তাহিয়াতু আরবিতে মুখস্থ লেখ। আর দ্যাখ, কোথাও কোনো ছবি নেই। নিরাকার। নামাজ পড়ার নিয়মগুলোও আরবি। নিজের বা পরের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে হলেও আরবিতে চাইতে হয়। পারতিস তোরা?

    গায়ত্রী দীপালি এখন পশ্চিম বাংলার কোথাও আছে। ওর দু’ভাই ওকালতি আর পলিটিক্স নিয়ে বাংলাদেশেই থাকে। বুলু, টুলু, অঞ্জলিরাও নব্বই সালের দিকে চলে গেছে। খুব কম বেড়াতে আসে। বাংলাদেশে এ এক পরিচিত দৃশ্য। সবাই জানে, প্রতিটি হিন্দু পরিবারেরই একটি খুঁটি আছে ভারতে। রাতে গল্প করছে, চা খাচ্ছে যে বন্ধুদের সঙ্গে, তারা সকালে জানতে পারে বন্ধুটি পরিবারসহ চলে গেছে ইন্ডিয়া। ওদের বাড়িটি গোপনে বিক্রি করে গেছে কোনো মুসলমান পরিবারের কাছে।

    কিন্তু কবে থেকে এ দৃশ্যের আরম্ভায়ন?
    ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববাংলার হিন্দু সমাজ একটি বোধে উপনীত হয় যে, যে কোনো সময় বৃটিশ সরকার বাংলাকে আবার বিভক্ত করে দিতে পারে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষিত হিন্দুদের অনেকেই পশ্চিমবাংলামুখী হয়ে পড়েছিল। তাছাড়া সে সময় শিক্ষাব্যবস্থায় পূর্ববাংলা স্বয়ংসম্পূর্ণ না থাকায়, অনেক শিক্ষানুরাগী মুসলিম পরিবারও রাজধানী কলকাতাতে চলে যেত। বলতে দ্বিধা নেই, সে সময় পূর্ববাংলা ছিল অবহেলিত এক জলজভূমি। জমিদারদের সবাই ভোগে, আরামে, কলকাতায় থাকত। আর নায়েবদের কাজ ছিল – যেভাবে হোক তাদেরকে টাকার যোগান দিয়ে যাওয়া। সাধারণ চাষাভুষো প্রজাদের এক টুকরো নেংটি আর তিন সানকি পান্তা পেলেই চলে যেত। লক্ষ্যণীয় যে এই প্রজাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান। শিক্ষাদীক্ষা-শিল্প-সংস্কৃতিতে অনগ্রসর এক বৃহৎ জনসমাজ। শোনা যায়, বৃটিশ আমলে কোনো ইংরেজকে বাংলা প্রদেশের প্রাদেশিক গভর্নরের দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি নাকি এর চেয়ে শিয়ালদহে ফেরি করা পছন্দ করতেন। আর পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানীরা মনে করত, পূর্ব পাকিস্তান হচ্ছে মনুষ্যসদৃশ পোকামাকড়ের এক দেশ।

    কিন্তু সময় চেতনা বহন করে। মুসলমানদের মধ্যেও নবজাগরণের সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষাদীক্ষায় মুসলমান সমাজেও পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে যায়। বিপুল সংখ্যার মুসলিম শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং পূর্ববাংলার উন্নয়নের দাবী জানায়। এ পর্যন্ত ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ চিত্রটি ঠিকঠাক আছে। ১৯০৫ সালের পরেও সাধারণ হিন্দু-মুসলিম তাদের ছোটখাটো বৈপরীত্য নিয়েও পূর্ববাংলায় একই সমাজভুক্ত থেকে নিত্যকার জীবন কাটিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তারপর? ভারতবর্ষের রাজনীতিতে জোরশোরে ঢুকে পড়ে ধর্ম। বণিকের রাজদণ্ড পরিণত হয় ধর্মীয় মানদণ্ডে। ঘৃণার সঙ্গে জোট বাঁধে হিংসা। শুরু হয় বীভৎস দাঙ্গা। যারা এতদিন বিপদে-আপদে সুহৃদ, প্রতিবেশী ছিল, তারাই হয়ে গেল লুটেরা দাঙ্গাবাজ। কেউ কেউ ধর্ষক এবং খুনিও। চিরকালের জন্য সম্প্রীতির উঠান ভাগ হয়ে গেল। হিন্দুর জন্যে ভারত আর মুসলিমের জন্যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হল – এক গলা হিন্দু-মুসলিমের রক্তে রাঙা মঞ্চে দাঁড়িয়ে । শুরু হল দেশত্যাগের মিছিল। পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থী হয়ে চলে গেল অধিকাংশ হিন্দু। ভারত থেকে মোহাজের হয়ে এল লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু বিহারি ও বাঙালি মুসলিম। তাদের অন্তর জুড়ে ঘৃণার দাউ দাউ আগুন। এবারে যে পাকিস্তান হয়েছিল ধর্মকে কেন্দ্র করে, প্রায় পঁচিশ বছর পর ভাষা, সংস্কৃতি আর জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তান স্বাধীন হয়ে গেল। সৃষ্টি হল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। বাঙালির দেশ, বাঙালির শাসন। সংবিধানে আলো ছড়াল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্র। কিন্তু মাত্র কয়েক বছর। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুসহ চার নেতার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল অন্য অধ্যায়। একাত্তরে শরণার্থী হয়ে যারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, তার মধ্যে হিন্দু বাঙালির সংখ্যা ছিল বেশি। এদের সংখ্যাগুরু অংশ আর বাংলাদেশে ফিরে আসেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি ধর্মাশ্রয়ী হয়ে পড়ে। মেজর জিয়া ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে রাজনৈতিক দল গঠন করে, সে দলে দেশী-বিদেশি আওয়ামী লিগ বিরোধীদের সঙ্গে বাংলাদেশ-বিরোধী মানসিকতার বাঙালিরা যোগ দেয়। মূলত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মচাষের বড় মহাজন। জিয়া ১৯৭৭ সালে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামকে মুক্ত রাজনীতিতে সিদ্ধ করে পাকিস্তানে পালিয়ে থাকা জামায়াত ইসলামের নেতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রুকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করে। দেশ ঘুরে যায় মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। কিছু কিছু অঞ্চলে শুরু হয় হিন্দুদের উপর আক্রমণ। ধর্মপালনে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় হিন্দুসমাজকে। নেতাদের খোলসও পাল্টে যেতে থাকে। প্রগতিশীল সমাজের চোখ ঢেকে ঠুঁটো করার চেষ্টা চলে। এদিকে গরীবিয়ানা ঘুচাতে শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বাঙালি তরুণ, উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মুসলিম বাঙালি – যারা মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেছিল শ্রমিক-চাকুরে হিসেবে – তাদের মানসিকতায় আরবি ছাপ পড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে পেট্রোডলারের সঙ্গে হিজাব বোর্কাও চলে আসে। ধর্ম এক যাদুময় আফিম। একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানী মনোভাবাপন্নরা – যারা পালিয়ে গেছিল বিভিন্ন দেশে – তারা সক্রিয় তো ছিলই, এবার অ্যাকশনে নেমে আসে। ফলে ৭৫ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ধর্মগাছের শিকড় অনেকটা পোক্ত হয়ে গেল। আর বাংলাদেশের সংবিধানে শেষ পেরেক পুঁতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করে ফেলল প্রেসিডেন্ট এরশাদ। এদেশের হাওয়ায় যে ধর্ম-ধর্ম কটুগন্ধে ভাসছে তা বুঝা গেল, ধর্মনিরপেক্ষ দল হয়েও আজ পর্যন্ত সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে, সাহস বা উদ্যোগ প্রকাশ করেনি বারবার ক্ষমতায় আসীন আওয়ামী লীগ সরকার। একটি মুসলিম ধর্ম-রাষ্ট্রে হিন্দুরা কেন, কীভাবে নিরাপদে থাকার সাহস রাখতে পারে?




    (ক্রমশঃ)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০২ আগস্ট ২০২২ | ২১৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Biplab Banerjee | ০২ আগস্ট ২০২২ ০৯:৩৭510678
  • একটু সংশোধন: দেশ ভাগের সময় ভারত হিন্দুদের দেশ হিসেবে নয়, হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে সমস ইচ্ছুকদের জন্যই ছিল।
  • Santosh Banerjee | 2401:4900:3149:c1e:0:65:9143:***:*** | ০২ আগস্ট ২০২২ ১১:৪৭510683
  • এ তো গেল ইতিহাসের স্বচ্ছ বর্ণন! খল নায়ক টি কে বা কারা??? সেই প্রসঙ্গে কিছু জানার আগ্রহ রইলো!! ইতিহাস কে যেভাবে মস্তক মুণ্ডন করছে কিছু শক্তি , তাদের নেংটা করার জন্য দরকার !!
  • Sumit Roy | ০২ আগস্ট ২০২২ ১৩:১৮510691
  • সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের ব্যাপারটা প্রতীকী মাত্র। দেশের আসল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিকে এটি রিপ্রেজেন্ট করেনা। ইউনাইটেড কিংডম আর ইউনাইটেড স্টেটসের মধ্যে পার্থক্যটাই ধরুন। প্রথমটিতে রাষ্ট্রধর্ম আছে, কিন্তু সার্বিকভাবে দেশটির রিলিজিয়সিটি, সাম্প্রদায়িকতা অনেক কম, কিন্তু ইউনাইটেড স্টেটসে রাষ্ট্রধর্ম থাকলেও তাতে ধার্মিকতা, গোড়ামু তুলনামূলকভাবে বেশি। আর বাংলাদেশের মত যে দেশ স্বাধীনতার পরও আজ পর্যন্ত ঠিকভাবে দেশের নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি, দেশটা কি সমাজতান্ত্রিক বন্টন ব্যবস্থার দিকে যাবে নাকি ধনতান্ত্রিক বিশ্ববাজার নির্ভর পুঁজির কোলে গিয়ে উঠবে, শহরের সাথে গ্রামের সম্পর্ক কী হবে, পুঁজিপতি শ্রেণীর সাথে শ্রমিকের সম্পর্ক কী হবে, সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাথে সংখ্যালঘু শ্রেণীর সম্পর্ক কিরূপ হবে তার একটা কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি, নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রধর্মের থাকা না থাকা আরও বেশি প্রতীকী। তাই আওয়ামী লীগ আমলে দেশের ধর্মীয় অবস্থা কিরকম, হিন্দুরা তাতে কিরকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তার রিপ্রেজেন্টেটিভ এই সরকারের শাসনামলে রাষ্ট্রধর্মের অবস্থা কী তা দেখানো যায়না। তাছাড়া রাষ্ট্রধর্ম আনা আর তা না সরানোর মধ্যে পার্থক্য আছে, বর্তমানে রাষ্ট্রধর্ম আর সংবিধান থেকে বিসমিল্লাহ সরানো ব্লাসফেমির শামিল, আর যে সরকারের সরকার প্রতিষ্ঠাতেই কোন সাংবিধানিক অধিকার নেই, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে সে যে ধর্মান্ধ তৌহিদী জনতাকে উষ্কে দিয়ে গদি হারাতে চাইবে না তা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। এই আওয়ামী শাসনামলে হিন্দুদের অবস্থা কী, তারা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিএনপি-এরশাদের আমলের মত অত সহজ-সরল না, বেশ কিছু জটিলতা আছে এখানে। আমি কয়েকটা বিষয়কে এখানে পয়েন্ট আউট করতে চাই মাত্র যেগুলো সরকারের সাথে সম্পর্কিত (পয়েন্টগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত) -

    ১। বাংলাদেশের প্রান্তিক এলাকায় অবস্থানরত হিন্দুদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে তিনটা কারণে- ১/ হিন্দুরা সংখ্যালঘু, মুসলিমরা সংখ্যাগুরু, ২/ মুসলিমদের সংস্কৃতি চর্চায় জাতিবাদি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ চর্চার পরিমাণ বাড়ছে, ৩/ প্রান্তিক অঞ্চলে আইন শাসন কাঠামো অনুপস্থিত। কোন প্রান্তিক এলাকা থেকে কোন একজন হিন্দু ফ্যামিলিকে ঢাকার ধানমন্ডি ৮ নাম্বার এলিট এলাকায় নিয়ে এলে কিন্তু তাদের জীবন অন্তত প্রান্তিক এলাকার মত অন্তত "হিন্দু" হিসাবে অনিরাপদ না, স্বাভাবিক ধানমন্ডি নিবাসীরা যেরকম ইন জেনারেল ঢাকাবাসী হওয়ার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে চলে সেভাবেই চলবে, কারণ একজন হিন্দু যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরেও সখ্যালঘু, ধানমন্ডিতেও সংখ্যালঘু। কিন্তু ধানমন্ডিতে তার উপর সাম্প্রদায়িক হামলা হওয়ার সম্ভাবনা প্রান্তিক এলাকার চেয়ে কয়েকশ গুণ কম কারণ, ঢাকা, বিশেষত, ধানমন্ডি গুলশান বনানী এলাকা হলো state within a state. উইলিয়াম গিবসন ফিউচার নিয়ে যেমন বলেছিলেন, Future is already here, its just not very evenly distributed. সেরকমই বলা যায় আমাদের দেশেও স্টেট সিস্টেম- নাগরিক অধিকার, পাবলিক সার্ভিস থাকলেও সেগুলো not evenly distributed, সব জায়গায় সমানভাবে রাষ্ট্র বিস্তৃত নেই, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নেই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নেই, রাষ্ট্র শুধু ধানমন্ডি গুলশান বনানীতে গিয়ে জমা হয়েছে। এখন ধানমন্ডি গুলশান বনানীতে হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েও নিরাপদ কারণ এখানে রাষ্ট্রীয় আইন কানুন স্বল্পক্ষেত্রে হলেও ক্রিয়াশীল, এছাড়া সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে এখানকার মানুষ এক্কেবারে সরাসরি অসাম্প্রদায়িক না হলেও শিক্ষা দীক্ষার বিকাশ আর স্বাভাবিক নাগরিক সমাজে বসবাসের কারণে এরা সিভিক সেন্সিবিলিটি নিয়ে চলে, নাগরিক পরিবেশে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করতে হয় সেইটা তারা জানে। হিন্দুদেরকে এরা যদি অপছন্দও করে তাদের ওপর হামলা বা আক্রমণের কোন চেষ্টা এরা করবে না, সেটা যতই ইন্টারনেটের উষ্কানি আসুক। এখন ইন্টেরেস্টিংলি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকারের একমাত্র জিম্মাদার "বর্তমান সরকার দল" আর সরকারের অভ্যন্তরের শহুরে এলিটরা যখন প্রান্তিক হিন্দুদের ওপরে নির্যাতনের ইস্যুটাকে অ্যাড্রেস করে তখন তারা প্রান্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা বা আইন কানুনের দুর্বলতার কথা আলোচনাতেই আনে না, সাম্প্রদায়িকতার কথাটা মৌখিকভাবে বলে ঠিকই কিন্তু সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ কিভাবে কমানো যায় সেটাকে পয়েন্ট আউট করে না। কার্যক্ষেত্রে তাদের প্রাইমারি ফোকাস থাকে "সংখ্যাগুরু" ফ্যাক্টরটা। মুসলিমরা সংখ্যাগুরু, এই সংখ্যাগুরুত্বের বলেই তারা অত্যাচার চালায়। তাই তাদের মতে এই হিন্দুদের ওপর আক্রমণের একমাত্র সমাধান হলো সংখ্যাগুরুত্বের ক্ষমতা কমানো। আর তাদের মতে সেটা করতে হবে ইলেকশন ঠেকিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার মাধ্যমে, "মুসলিমরা ইলেকশনে জিতলে ছাল চামড়া তুলে ফেলবে" এই জুজু প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজে পলিটিকাল প্যারালাইসিস ছড়ানোর মাধ্যমে, এছাড়া মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন যে ফ্যাকশন আছে তাদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রমোশনের মাধ্যমে। এখন মজার বিষয় হচ্ছে এই উপরে বর্ণিত তিনটি পয়েন্টের মধ্যে শুধুমাত্র একটা পয়েন্ট- "সংখ্যাগুরুত্ব"কে বর্তমান সরকার দল ও তার অধীনস্ত বুদ্ধিজীবীরা অ্যাড্রেস করে থাকে কারণ এটা আসলে তাদের ফ্যাসিস্টিক লুটপাটের যে পলিটিকাল প্যারালাইসিস মডেল আছে সেটার সাথে কমপ্যাটিবল। এবং এটাকে একমাত্র "ন্যাশনাল সমস্যা" হিসেবে দেখানো হয় যে, সারা রাষ্ট্র জুড়েই মুসলিমরা সংখ্যাগুরু, হিন্দুরা লঘু। বাকি যে দুটো পয়েন্ট আছে- ১। প্রান্তিক পর্যায়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা- এটার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অনেকখানি বিকেন্দ্রীকরণ করা লাগবে, ২। বিজ্ঞানমুখী সহনশীল সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার চর্চা -এগুলোর জন্য সম্পূর্ণ শিক্ষা, জীবন অর্থনীতি আর সাংস্কৃতিক ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা লাগবে - যেটা ক্ষমতায় আসীন শক্তির জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এই দুটো "ন্যাশনাল" প্রবলেম না, এরা প্রান্তিকতার সাথে জড়িত সমস্যা। শহরের কেন্দ্রের এলিটেরা যেসকল সুবিধা ভোগ করে থাকে সেগুলাকে দেশের প্রান্তে কিভাবে নেয়া যায় সেটার সাথে জড়িত সমস্যা। এবং এত বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় থেকেও তারা এই দুই পয়েন্টে কোন এফেক্টিভ পলিসি চেঞ্জ আনতে পারেনি। তাদের সকল ফোকাস সংখ্যাগুরুত্বের সমস্যার দিকেই। এমন কি, সংখ্যাগুরুর দ্বারা সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচারের প্রবলেম কিন্তু ডেমোক্রেসির অত্যন্ত আদিকালের প্রবলেম। এবং এই প্রবলেমকে ডিল করার জন্য ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন উপায়ও আবিষ্কার করা হয়েছে। যেমন আমেরিকাতে বিল অফ রাইটস আছে যেখানে নাগরিক অধিকার সমূহ বর্ণিত আছে এবং এই রাইটস লঙ্ঘন করে কংগ্রেস যদি শুধু সংখ্যাগুরুত্বে জোরে আইন পাশ করতে যায় তবে সুপ্রিম কোর্ট জুডিশিয়াল রিভিউ এর মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া সংবিধানের নবম সংশোধনীর মাধ্যমে তারা এটাও বলছে যে লিখিত বিল অফ রাইটসের বাইরেও মানুষের অনেক প্রাকৃতিক অধিকার রয়েছে এবং সেগুলোও আইনের মাধ্যমে এনফোর্সেবল, অর্থাৎ শুধু কাগজের টুকরোর ওপরে তাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার সীমাবদ্ধ নয়। এবং এই সুপ্রিম কোর্টকে আবার প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে আবার প্রেসিডেন্টকে নির্ভরশীল রাখা হইছে নিয়মতান্ত্রিক ভোট আর লেজিস্লেটিভ বডির উপর। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বীকৃত আছে, শিক্ষা আর সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারও ক্ষেত্রবিশেষে জড়িত। প্রতিটা স্তরে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতার মেকানিজম আছে। যদিও বর্তমান সময়ে এই মেকানিজমগুলো প্রশ্নের মুখে পড়ছে কিন্তু তারপরও আমেরিকার মত মাল্টি-এথনিক মেল্টিং পট যে এতদূর পর্যন্ত আসতে পেরেছে রাষ্ট্র হিসাবে সেটা এই মেকানিজমগুলার মাধ্যমেই। এখন আমেরিকা যেখানে সংখ্যাগুরুর অত্যাচারের সমস্যাটাকে তারা মাল্টিপল পয়েন্ট থেকে সাংবিধানিক, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক উপায়ে তারা ফাইট করছে সেখানে- আমাদের ক্ষেত্রে দালাল ইন্টেলেকচুয়ালরা প্রথমে ইলেকশন সিস্টেমকে গণতন্ত্রের একমাত্র এলিমেন্ট হিসাবে দেখাবে, অন্য উপায়গুলা নিয়ে ইন্টেনশনালি চুপ করে থাকবে। এরপর বলা হবে যে ফেয়ার ইলেকশন দিলে সংখ্যাগুরুরা এসে সংখ্যালঘুদের সবাইকে মেরে ফেলবে। অতএব, কেয়ামতের আগ পর্যন্ত ভোটের দরকার নেই। মানে উত্তর আগে থেকে তৈরি করা ছিলই, উত্তরটাকে হালাল করার জন্য শুধুমাত্র এই সংখ্যাগুরুর মাধ্যমে সংখ্যালঘুর উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। কিন্তু শেষ বিচারে এই ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকার কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলাকে আরো অনিরাপদ করে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে প্রান্তিক অঞ্চলে আরো বড় ধরণের নৈরাজ্য তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। এই ধরণের সমাধানের জন্যই বলা হয়ে থাকে যে- This sort of solutions are bigger problems than the actual problem..

    ২। হিন্দু কমিউনিটির মূল্য আওয়ামীলীগের কাছে ততক্ষণই আছে যতক্ষণ ইলেকশন প্রসেস বলবৎ আছে। ভোট থাকলেই না ভোট ব্যাংকের হিসাব। এখন আওয়ামীলীগ মসনদ ধরে রাখতে স্বাভাবিকভাবেই মেজরিটি অ্যাপিজমেন্টের খেলা খেলবে, এই খেলায় হিন্দু নাস্তিক প্রগতিশীলরা আওয়ামীলীগের পাশে থাকলেও চলে, না থাকলেও চলে। ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা সংখ্যালঘুই হয়, মানে রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা খুব কম মানুষের হাতেই জমা থাকে। এই ব্যবস্থায় স্বচ্ছ ও নিয়মিত ইলেকশন হচ্ছে এই ক্ষমতাবান সংখ্যালঘুকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল রাখার মেকানিজম। অর্থাৎ মূলত পলিটিকাল পাওয়ার প্র‍্যাক্টিসের ক্ষেত্রে এখানে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর ইস্যুটা সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর কথা আসছে। এই হিসেবে একজন এমপি বা মন্ত্রী মুসলমান হলেও পাওয়ার এলিট হিসাবে সংখ্যালঘু আর একজন সাধারণ ভোটার হিন্দু হলেও বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু ভোটার জনগণের অংশ। আর সামাজিক ক্ষেত্রে মানুষের মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ, সমকামী-বিষমকামী - এসব নানা রকমের পরিচয় থাকে, এবং সেই পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুও হয়ে থাকে। এখন এইসব পরিচয়ের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সংবিধান, দায়িত্বশীল আইন বিভাগ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, জবাবদিহিতাপূর্ণ নির্বাহী বিভাগ, শুভবোধ সম্পন্ন শিক্ষিত ও সেন্সিটিভ সিভিল সোসাইটি- এসবের কাজ হচ্ছে মেজরিটারিয়ানিজম মানে সংখ্যাগুরুর হাতে সংখ্যালঘুর অত্যাচারকে ঠেকানো। এইসব এলিমেন্ট ফাংশন করলেই যথার্থভাবে সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুর হাত থেকে নিরাপদ হতে পারবে। এখন ইন্টেরেস্টিং হচ্ছে, বাংলাদেশে "বিকল্প নাই" আইডিওলজির মাধ্যমে পলিটিকাল পাওয়ারের সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর সম্পর্ককে সামাজিক সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর সম্পর্কের সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতা দখলকারী দল এটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে যে তারা যদি ইলেকশন উঠিয়ে দিয়ে সংখ্যালঘু পরিচালিত নির্বাহী বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে সংখ্যাগুরু জনগণের কাছ থেকে দায়মুক্ত করে দেয় তাহলে সামাজিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সংখ্যালঘু- হিন্দু সেক্যুলার সমকামীরা, সংখ্যাগুরু- মুসলমান বিষমকামীদের থেকে নিরাপদ থাকবে। তাদের মূল মেসেজ হচ্ছে সংখ্যাগুরু দেশে একটাই- মুসলমান, কাজেই সংখ্যালঘুর গ্রুপও একটাই - হিন্দু, বৌদ্ধ আর সরকারের এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ। পাওয়ার এলিট সংখ্যালঘুরা তাই এই ফ্লড লজিকের উপর ভিত্তি করেই সোশ্যাল সংখ্যালঘুদের সাথে সলিডারিটি খোঁজে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সমাজে প্রভাব আর চাপ বিস্তারের জন্য সোশ্যাল সংখ্যাগুরু মুসলমানদের যে সোশ্যাল ডি ফ্যাক্টো ক্ষমতা আছে পাওয়ার এলিটরা এটাকে বেশি শ্রদ্ধা করে। অর্থাৎ পাওয়ার এলিট সংখ্যালঘুদের প্রকৃত আস্থা আর ভালোবাসা বরাদ্দ থাকে সোশ্যাল মেজরিটির জন্যই, কারণ পাওয়ার এলিটদের ভালোবাসা পাওয়ারেই থাকে। মাইনোরিটিরা শুধু মাত্র সোশ্যাল মেজরিটিকে পলিটিকাল পাওয়ার মুক্ত করে রাখার একটা ছুতো মাত্র। ঐদিকে দায়বদ্ধতাহীন নির্বাহী বিভাগ একটা সময় আইন আর বিচার বিভাগকেও কলুষিত করে ফেলে, সংবিধানকেও স্বেচ্ছাচারিতার অস্ত্রে পরিণত করে। ফলে যে পাওয়ার ব্যালেন্সের ইকোসিস্টেমের ওপর সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নির্ভর করতো সেটাও ওই সংখ্যাগুরুকে পলিটিকালি দমানোর প্রজেক্টের মাধ্যমে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সামাজিক সংখ্যালঘু- হিন্দু বৌদ্ধদের জীবন আরো অনিরাপদ হয়ে উঠতে থাকে।

    ৩। সামনের পরশু যদি বাংলাদেশের ইনস্টিটিউশনাল অবস্থা যেমন আছে ঠিক তেমন রেখেই একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয় আওয়ামীলীগ খুব সম্ভবত ৩০ টা সিটও পাবে না। বিএনপি আর অন্যান্যরা ক্ষমতায় আসবে। এবং আসার পর কি করবে জানি না তবে ওইদিন অনেকগুলা হিন্দু আর অন্যান্য মার্জিনালাইজড বাড়িতে আক্রমণ করবে। দিস ইজ ফ্যাক্ট। এখানে রাখঢাক করার কিছু নেই। এটা হবেই। এই কাজটা অবশ্য দেশের সিরিয়াস ধার্মিকদের পরিবর্তে বিভিন্ন লোকাল সুবিধাবাদী লোকেরাই করবে, কিন্তু সিরিয়াস ধার্মিকেরা সারা বছর ধরে হিন্দু আর অন্যান্য মার্জিনালাইজড মানুষের বিরুদ্ধে যে ঘৃণার বার্তা স্পিউ করছে সেটা এখানে একটা ফ্যাক্টর প্লে করবে। এর একটা সমাধান হলো টিপিকাল বর্তমান সরকার দলীয় সমাধান, মানে দলটি ভোটবিহীনভাবে যেমনে ক্ষমতা ধরে রেখেছে সেভাবেই ধরে রাখবে, দেশের জঙ্গিমনস্ক জনগণদের থেকে হিন্দু আর অন্যান্য মাইনরিটিদের রক্ষা করবে। আওয়ামীলীগাররা এটা প্রচার করে এবং অনেক হিন্দু সেক্যুলার আর মাইনরিটি এটা এন্ডোর্স করে। কিন্তু এই সমাধানের কয়েকটা সমস্যা আছে। প্রথম কথা হচ্ছে এই রক্ষাকর্তা ত্রাণকর্তার ভূমিকা প্লে করার জন্য আওয়ামীলীগের বেনিফিট কোথায়? পরিষ্কারভাবে দেশের নির্বাহী ক্ষমতা উপভোগটাই এখানে বেনেফিট। মানে আওয়ামীলীগ দেশের 'সংখ্যাগুরু জঙ্গিদের' (তাদের দাবি অনুসারে) থেকে মাইনরিটিদের সুরক্ষা দেবে তার বিনিময়ে তারা দেশের নির্বাহী বিভাগ একচ্ছত্রভাবে ভোগ করে লুটপাট করবে। এখন এই একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতাভোগ আর লুটপাট চালাতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দেশে বিদ্যমান বিচার বিভাগ আইন বিভাগ এসবকে কলূষিত করা লাগবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে একটা ভাঙা বিচার ব্যবস্থার দেশে, যেখানে সার্বিকভাবে সকল দুর্বলই অনিরাপদ সেখানে সংখ্যালঘুরাই বা কতটা নিরাপদ হতে পারে? দ্বিতীয় আরেকটা প্রশ্ন আসে যে, এই অ্যারেঞ্জমেন্ট কতদিন চলবে? বাস্তবতা হচ্ছে সমাজে ওয়াইডস্প্রেড সেক্যুলারাইজেশন আর টোলারেন্সের বিকাশের জন্য অর্থনীতির বিকাশ, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, শিক্ষা আর বিজ্ঞান চর্চার বিকাশ প্রয়োজন। এবং সারা বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও পলিটিকাল ইনস্টিটিউশনের বিকাশ ছাড়া এগুলো হয়েছে বলে প্রমাণ নেই। এখন বর্তমান সরকার ক্রমাগত ক্ষমতায় থাকার ফলে যদি এই ইনস্টিটিউশনগুলোর ধ্বংসকে মেনেই নিতে হয় তাহলে এটাও মেনে নিতে হবে যে নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমরা সেক্যুলার টোলারেন্ট হয়ে উঠবে এটাও সম্ভব না। বরং আরো বেশি ইনটলারেন্ট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। এই দুটো ফ্যাক্ট থেকে বুঝতে পারি যে বর্তমান সরকারের দেয়া সমাধান যেটা মূলত বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ভালনারেবিলিটি অ্যাড্রেস করার কথা সেটা করবে না, এরা সর্বোচ্চ ক্ষমতাটা দখল করে ম্যাক্রোভায়োলেন্সটা ঠেকিয়ে রাখবে বিভিন্ন মাইক্রোভায়োলেন্স পয়দা করে আর ভবিষ্যতের আরো বড় ধরণের ম্যাক্রোভায়োলেন্সের ক্ষেত্র তৈরি করবে। এই ভবিষ্যতের ম্যাক্রোভায়োলেন্সের সম্ভাবনা বর্তমান সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখার পক্ষে আরো বেশি যুক্তি তৈরি করবে। মানে অনেকটা সেল্ফ-পারপেচুয়েটিং মেশিনের মত। পুরো সিস্টেম কলাপ্স করার আগ পর্যন্ত এটা চলবে।

    ৪। গ্রাম ইউনিয়ন উপজেলা পর্যায়ের তৌহিদী জনতার সমবেত আক্রমণ-লুটপাটকে প্রাইমারিলি "সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ" এর চেয়ে বাংলাদেশের মফস্বল গ্রাম পর্যায়ের মানুষগুলার অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক আর রাজনৈতিক ভাবে "গ্যারাইম্যা bestial existence" এর একটা সিম্পটম হিসেবে দেখা যায়। বর্তমান বাংলাদেশের গ্রাম ইউনিয়ন উপজেলাগুলা মফস্বলগুলাকে স্টাডি করলে মনে হবে, এগুলো অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ফলা ভূমি, যার কোন নিজস্ব ইকোনমিক স্ট্রাকচার নেই। বিদেশ থেকে প্রবাসীরা টাকা পাঠায় বা শহরের গার্মেন্টস বা অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রি থেকে টাকা পাঠায় যা দিয়ে গ্রামের ঘর সংসার চলে। জনগণ ও তাদের কল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধতাহীন সরকারগুলার সীমাহীন লুটতরাজ আর অবহেলার কারণে গ্রামের কৃষি ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শুধু গালগল্প হিসেবেই থেকে গেছে, বাস্তবে এগুলোর কিছু ম্যাটেরিয়ালাইজ হয়নি, জিডিপিতে কৃষির মোট কন্ট্রিবিউশন আর বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রে বরাদ্দই যার তার প্রমাণ। কৃষি মানেই এখন বাংলাদেশে লস প্রজেক্ট। অল্প কিছু মানুষ এই লাইনে এগোতে পেরেছে, অধিকাংশই এটা ছেড়ে অন্য লাইন ধরছে, আর যাদের অন্য কিছু করার সুযোগ নেই তারাই কৃষিতে লেগে আছে। গ্রামের ইকোনমিক ইকোসিস্টেম বা খেত খামারির উপর এক্সক্লুসিভলি নির্ভর করা লোকেদের জীবন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় টাইপ। এখন এরকম অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ফলা নিথর অঞ্চলের সমাজ সাংগঠনিক অবস্থা যেমন হবার কথা তাই হচ্ছে। এন্ডোজেনাস ইনকাম সোর্স কম বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনেকে অন্যের জমি ভোগ দখল করার মধ্যে এরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় খুঁজে পায়। এই জমি দখলের রাজনীতিকে আর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আর জবাবদিহিতাবিহীন কেন্দ্রীয় সরকারের টাট্টু বাহিনী মিলে পেরিফেরিতে এক ধরণের জঙ্গলের নৈরাজ্যের অবস্থা তৈরি করছে। সাম্প্রদায়িক হামলার কেসগুলার পাশাপাশি নিত্যদিনের গ্রামের সংবাদগুলা যেমন খেতের আইল নিয়ে মারামারি, পুকুরের মাছ ভাগাভাগি নিয়ে কোপাকুপি এসবেও তাই পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি এই ইকোনমিক প্যারালাইসিসের কারণে গ্রাম উপজেলার এক বিশাল অংশের ছেলেপুলেদের চিন্তা থাকে বিদেশে গিয়ে শ্রমিক হবে বা শহরে গিয়ে কোন এক ধান্দাবাজি করবে, এজন্য পড়াশোনার প্রতি মনোযোগও কম এদের। মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে মেয়েদেরকে ঢাকায় পড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাই আগে জেলা পর্যায়ের সরকারি স্কুলগুলার যে মান ছিলো তা এখন তলানিতে গিয়ে ঠেখেছে, আর তাতে ঢাকায় ছেলেমেয়েদের পাঠানোর পরিমাণও বাড়ছে। টিকটক, পাবজি কালচার প্লাস বিভিন্ন রকমের মাদকের অনুপ্রবেশে কিশোর তরুণ সমাজও সাংস্কৃতিকভাবে শেষ। আর এই সব এফেক্ট কম্পাউন্ড করতেছে দেশের সার্বিক আইনহীনতা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গ্রামগুলা এখন সামাজিক সাংস্কৃতিক শিক্ষাগত সব দিক থেকেই waste land এ পরিণত হয়েছে। খাওয়া দাওয়া বর্জ্য ত্যাগ আর সেক্সের মতন নিতান্ত জৈবিক ক্রিয়া আর ফেসবুক টিকটক - এগুলাই গ্রামীন এক্সিস্টেনশিয়াল ভ্যাকুয়াম পূরণ করে। আর এই সমাজ সংগঠনবিহীন, নিষ্ফলা, নিথর, বিষাক্ত লাইফ স্টাইলে একটা সুপারফিশিয়াল ওরিয়েন্টেশনের ভাব তৈরি করতে ধর্মের একটা ক্রুড ফর্মকে এরা আপন করে নিয়েছে। এই ধর্মের নামে হাঙ্গামা মারামারি করতে পারলে তাদের মধ্যে একটা কমিউনাল বোধ তৈরি হয়, একটা সোশ্যাল বিলংগিংনেসের ভাব আসে। তাদের এই সাম্প্রদায়িকতা বা কমিউনিয়ালিজমই তাদের সম্প্রদায়বোধ বা কমিউনিটির বোধ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠছে। কালেক্টিভ ভায়োলেন্স এইখানে একটা এক্সিস্টেনশিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করে রেখেছে, দলগত সাম্প্রদায়িক হামলা এই ব্যাকগ্রাউন্ডের একটা প্রকাশিত রূপ। ইসলামিস্ট সাম্প্রদায়িক মানুষ নড়াইলেও যেমন আছে ঢাকার ধানমন্ডি গুলশানেও আছে। কিন্তু এই কালেক্টিভ সাম্প্রদায়িক হামলা তো গুলশানে বা ধানমন্ডিতে নেই। একইভাবে আবার পেরিফেরিতে সাম্প্রদায়িক হামলাও যেমন আছে পদ্মা সেতুর নাট বল্টু খোলা লোকের বাড়িতে আক্রমণের ঘটনাও এই দেশে আছে। সমাজের জেনারেল সামাজিক নৈরাজ্য প্রসূত বিস্টিয়ালাইজেশনকে বাদ দিয়ে শুধু মাত্র সাম্প্রদায়িক ফ্রেমওয়ার্ক থেকে পুরো ক্রাইসিসের রূপটা বোঝা যায় না।

    পোস্টটি নিয়ে দুটো কথা বলতে চাই। আমি ২০০০ সালের পর হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, সংস্কৃত শিক্ষা পেয়েছিলাম স্কুলে। টিচাররা সংস্কৃত জানত না, বইতে একটা বাংলা অক্ষরও ছিলনা, শিখতে খুব কষ্ট হয়েছে। আর ধর্ম শিক্ষা বইতে আমরা কেবল কাহিনী পাইনি। প্রথম অধ্যায়ে জেনারেল প্রকৃতির কাহিনী দিয়ে ঈশ্বরকে সম্পর্কিত করা হত। দ্বিতীয় অধ্যায়ে থাকত উপনিষদ, গীতা, চণ্ডী ইত্যাদি থেকে নেয়া বিভিন্ন সংস্কৃত শ্লোক, অর্থ সহ সব মুখস্ত করতে হতো। তৃতীয় অধ্যায় থেকে প্রচুর ধর্মদর্শনের আলোচনা ছিল। দর্শন বলতে ছিল বেদান্ত দর্শনই, সাংখ্য টাংখ্য যা ছিল সব বেদান্তের আন্ডারে ফেলেই দেয়া হতো, পুরুষের মত সাংখ্যের কনসেপ্টকে বৈদান্তিক পরমাত্মার সাথে মিলিয়ে গেলানো হয়েছে, সেই সাথে থাকত গীতার বৈষ্ণব দর্শন। এরপর নিত্যকর্ম, যোগাভ্যাস নিয়ে থাকত, নিয়ম কানুন শিক্ষা আরকি। তারপর পৌরাণিক কাহিনী থাকত, অনেক থাকত। এরপর থাকত আদর্শ জীবনচরিত, মানে বামা ক্ষেপা, রামকৃষ্ণদের জীবন। বাংলাদেশে অনেক সেক্টের হিন্দু আছে, কিন্তু বইটাতে মূলত বৈষ্ণব-বৈদান্তিক জ্ঞান ছড়ানো হয়েছে, আর তা দিয়ে শাক্ত সহ বিভিন্ন সেক্টের বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে বৈষ্ণব-বৈদান্তিক মতে দীক্ষিত করার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে যাই হোক, মেইন পয়েন্ট হলো কেবল কাহিনী পাইনি, আর দর্শন টর্শন টিচাররা না নিজেরা বুঝত না আমাদের বোঝাতে পারত, মন্ত্রগুলো তো মুখস্তই করতে হতো, তাই ধর্মশিক্ষাটা কোন কালেই আনন্দদায়ক ছিলনা।

    আর হিন্দুরা ভারতে খুটি গেড়ে রাখে একথাটা রাজশাহী, খুলনার বিভাগের মত ভারতের বর্ডারের সাথে লাগোয়া বিভাগে থাকা হিন্দুদের ক্ষেত্রে সত্য হতে পারে, অন্যান্য অঞ্চলের হিন্দুদের অবস্থা বোধ হয় এরকম নয়। আমি নিজেকে হিন্দু না ভাবলেও আমার পরিবার ভাবে। তাদের কিন্তু কোন খুটি নেই ভারতে। আত্মীয় স্বজন আছে, কিন্তু কোন খুটি-টুটি নেই, আত্মীয়দের সাথে তেমন ভাল সম্পর্কও নেই বলতে গেলে।
  • সেকুলার ঢ্যামনা | 156.146.***.*** | ০৩ আগস্ট ২০২২ ২২:০৫510721
  • মুসলিমরা ভারত এবং হিন্দুদের উপর তাদের কয়েকশো বছরের আগ্রাসন, genocide, নির্বিচার নারীধর্ষণ, জোর করে ধর্মান্তকরণ, হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস.... এই সবের জন্য এখনও পর্যন্ত কি ক্ষমা চেয়েছে?
    আর ইংরেজরা তো চলে গেছে, মুসলিমরা এখনও আমাদের দেশে কি করছে?
  • Ranjan Roy | ০৪ আগস্ট ২০২২ ১৯:৩৭510744
  • তিলকের মতে হিন্দুরাও বাইরে থেকে এসেছে, তো?
    ইংরেজরা এখান থেকে লুঠ করে ওদের দেশে পাঠিয়েছে। মুসলিম শাসকরা এদেশের লোক হয়ে গেছে। রবি ঠাকুর কি অজ্ঞান বা মূর্খ ছিলেন?
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০২২ ২৩:১৫510752
  • স্কুলে ধর্মশিক্ষা? সাধারণ সরকারী স্কুল? নাকি প্রাইভেট স্কুল?
    (ক্ষমা করবেন, অবাক লাগছে একটু। ভারতে স্কুলজীবন কেটেছে সাধারণ সরকারী স্কুলে, ধর্মশিক্ষা বলে কিছুই ছিল না সেই স্কুলে। ভাষা, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান --এইসব বিষয় পড়তে হত। আর ছিল কর্মশিক্ষা(সেলাই টেলাই ইত্যাদি ) ও শারীরশিক্ষা( দৌড়্ঝাঁপ, ব্যায়াম ইত্যাদি )
  • &/ | 151.14.***.*** | ০৪ আগস্ট ২০২২ ২৩:২১510754
  • ভারতে সাধারণ স্কুলে ধর্মশিক্ষা ব্যাপারটা নেই বলেই মনে হয়। বাংলাদেশে কি এটা একেবারে শুরু থেকেই আছে? ১৯৭১ এ স্বাধীন দেশ গঠনের পর থেকেই?
  • হীরেন সিংহরায় | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০৮:২৬510767
  • ইংল্যান্ডে আমার ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়া শুরু করলে  R  E ( Religious Education) নামক একটি বিষয়ের খোঁজ পাই। খুব সহজ ভাবে সকল ধর্মের পরিচিতি দেওয়া হয় । অবশ্য পাঠ্য বিষয়, অপশনাল নয়! দেশের স্কুলে আমাদের এমন কিছু পড়ানো হয় নি। 
     
     
  • Amit | 121.2.***.*** | ০৫ আগস্ট ২০২২ ০৯:৩০510769
  • অরিজিনাল অধিবাসী কেও কোথাও নেই। সবাই কাউকে না কাউকে মেরে জমি দখল করে দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। সে আর্য্যরাই হোক কি মুসলিম বা ব্রিটিশ। এক সেই ​​​​​​​আফ্রিকা ​​​​​​​থেকে  বেরিয়ে ​​​​​​​আদিম ​​​​​​​মানুষ ​​​​​​​পুরো ​​​​​​​দুনিয়ায় ​​​​​​​ছড়িয়ে ​​​​​​​গেছে - কোথাও ​​​​​​​অন্য মানুষদের ​​​​​​​মেরে ​​​​​​​বা ​​​​​​​অন্য ​​​​​​​প্রাণীদের মেরে সাবাড় করে। কে অজ্জিনাল অধিবাসী খুঁজতে গেলে তো পেছোতে পেছোতে বিগ ব্যঙ্গ অবধি যেতে হয়।  ​​
     
    তবে মুসলিম দের এদেশ দখল করতে এসে এই দেশের অধিবাসী হয়ে যাওয়া আর ব্রিটিশদের এখান থেকে লুঠপাট করে ওদের দেশে পাঠানো র তুলনা টা আমার কাছে সেরকম রেলেভেন্ট মনে হয় না। দুটোর সময়কাল ই পুরো আলাদা। ক্যাপাবিলিটি ও পুরো আলাদা। 
     
    ইব্রাহিম লোদী হোক কি বাবর - সেই সময় - মানে ১১-১৩ শতকে যুদ্ধ করে সাম্রাজ্য বিস্তার করাটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। এদের কারোরই নাভাল ফোর্স কিস্সু ছিল না বা এক দেশের র মেটেরিয়াল অন্য দেশে নিয়ে অন্য জিনিস লার্জ স্কেলে বানানোর ক্ষমতা ছিলোনা। এতে এঁদের কে ছোট বড়ো করার কোনো ব্যাপারই নেই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেনেসাঁস আসতে আরো কয়েকশো বছর। আরব বা এক্স-সোভিয়েত দুনিয়ার নোমাডিক লাইফ এর মারামারি কাটাকাটি থেকে ইন্ডিয়ার এগ্রি বেসড / কটেজ ইন্ডাস্ট্রি বেসড শান্তিপূর্ণ দেশে এসে থাকতে পারাটাই তাদের কাছে একটা স্বাভাবিক চয়েস ছিল। লুটপাট করে সম্পদ বাইরে পাঠানোর বা জমানোর মতো সেরকম নিজের দেশ লোদী বা বাবর এর ছিল কি ? বরং তুলনা করতে গেলে ইরানের নাদির শাহ কিছু কম লুটপাট করেছে বলে তো মনে হয়না যেহেতু তার টার্গেট ছিল লুটপাট করে সোনাদানা নিয়ে নিজের দেশ ইরানে ফেরত যাওয়া-এখানে থাকা নয়। 
     
    সেখানে স্প্যানিশ বা ব্রিটিশরা যখন কলোনাইজেশন সুরু করলো তখন রেনেসাঁস অলমোস্ট দরজায় টোকা মারছে। ম্যানুফ্যাকচারিং এ রেভোলুশন আসতে চলেছে। সেখানেই ব্রিটিশরা কেল্লা ফতে করল বাকিদের টপকে।ইন্ডিয়া থেকে তুলো লোহা কয়লা অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা গম , আফ্রিকা থেকে কপার জিঙ্ক রুপো , আম্রিগা থেকে কফি ভুট্টা সোনা যাবতীয় জিনিস আমদানি করে করে একটা বিশাল গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এম্পায়ার দাঁড় করতে পারলো যেটার বেনিফিট আজকেও ওরা পাচ্ছে। 
     
    এইভাবে যে একটা গ্লোবাল ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এম্পায়ার খাড়া করা যায় , স্লেভ বা প্রিসন ইকোনমি র ওপর দাঁড়িয়ে -এই কনসেপ্ট টাই পুরোপুরি পোস্ট রেনেসাঁস আর তার মধ্যেও ফ্রেঞ্চ বা স্প্যানিশ বা জার্মান বা আরব দের থেকে ব্রিটিশরা অনেক বেশি সাকসেসফুল। যখন থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলুশন টা শুরু হলো তখন থেকেই বাকি দুনিয়ার ওপর কলোনিস্ট দের দখল জাকিয়ে বসলো। টার্কি অটোমান বা রাশিয়া বা অল্প স্বল্প কয়েকটা পকেট ছেড়ে দিলে তাদেরকে থামানোর মত বিশেষ কেও ছিলোনা। যে মোগল এম্পায়ার এতো গর্বের ছিল , ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলুশন এর সামনে জাস্ট তাসের ঘরের মতো ধসে গেলো। 
     
    ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এ একমাত্র অটোমান এম্পায়ার কিছুটা পাল্লা টানতে পেরেছিলো কিছুদিন কারণ তারাও ইন্ডাস্ট্রিয়াললি ভালো মতো ডেভেলপড ছিল।কিন্তু তাও দেখা যায় অটোমান এম্পায়ার যে কব্জা হাঙ্গারি বা বাল্টিক দেশগুলো তে দুর্বল হতে শুরু করেছিল ১৮থ শতক থেকেই। যেটুকু টিকে ছিল জোড়াতালি দিয়ে, ১স্ট ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর পর সব শেষ। 
     
    এবার যদি প্রশ্ন ওঠে - ১১-১২ শতকে মুসলিম দের বদলে ইউরোপিয়ান বা চীন বা জাপানিরা ভারত অকুপাই করলে তারাও মুসলিম শাসক দের মত অধিবাসী বনে যেত কি না নাকি লুটপাট করে সব স্বদেশে পাঠাতো ? 
     
    অথবা আরব দুনিয়ায় যদি আগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেনেসাঁস টা আসতো এবং ব্রিটিশ বা স্প্যানিশ মডেলে তারা একটা গ্লোবাল ইম্পোর্ট-এক্সপোর্ট বেসড জায়ান্ট ইকোনমি দাঁড় করতে পারতো, সেক্ষেত্রে তারাও অধিবাসী হয়ে যেত নাকি ব্রিটিশ দের মতোই লুট করে নিজের দেশে পাঠাতো ? মনে হয়না এসব প্রোবাবিলিটির কোনো ডেফিনিট উত্তর কোথাও পাওয়া যায়। 
     
    তাই এই তুলনা টাই ওভার হাইপড লাগে। কারণ আপেল ভিস আপেল নাহলে তুলনা করে লাভই  নেই। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৫:৫৩510783
  • অমিত
     
    আপনি অসাধারন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা দেখেছেন
    - উপনিবেশ আর শিল্প বিপ্লবের যুগলবন্দী ব্রিটিশ করলো সার্থক ভাবে! আজ পর্তুগাল ইউরোপের দরিদ্রতম দেশ  আর স্পেনের অবস্থা এতোটাই খারাপ কেন ? অত বড়  উপনিবেশের ফায়দা তুলতে পারে নি। স্পেন মানুষ রপ্তানী করেছে । বদলে পেয়েছে কি? দারুন বলেছেন। 
     
    এটাও ঠিক মুঘলরা ডাংগার মানুষ - নৌবহর কখনো গড়েন নি। 
  • যোষিতা | ০৫ আগস্ট ২০২২ ১৬:১৪510784
  • ইস্কুলে ধর্মশিক্ষা দেওয়াটা সমর্থন করি না।
  • hirak sengupta | ০৬ আগস্ট ২০২২ ২২:৩৭510821
  • খুবই ভালো লাগলো।এত চমৎকার লিখেছেন। জয় হোক।
    হীরক সেনগুপ্ত 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:84e3:80b8:659f:***:*** | ০৯ আগস্ট ২০২২ ২৩:০৯510898
  • সুমিতের পোস্টগুলো ভাল লাগল 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন