মানব সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে মানুষ তাঁর অনুভূতির প্রকাশ করত-মূলত নির্বাক অভিব্যক্তি ও আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে!
কোনও ঘটনার বিবরণও নির্বাক মাধ্যমেই উপস্থাপিত করত; সাথীদের বোঝাত নদীর জলে গাছের ভেলায় ভেসে যাওয়ার সময়, হঠাৎ ঝড়ে, কেমন করে ভেলা উল্টে পড়েছিল! সাঁতার কেটে, উতল হাওয়া আর দুরন্ত স্রোতে, কেমন করে ফিরে আসতে পেরেছিল! অথবা কেমন করে ওরা বন্যপ্রাণী শিকার করেছিল!
অভিব্যক্তি আর দেহের অঙ্গ-ভঙ্গিমায় সবার কাছে পৌঁছে যেত-সে সব গল্প, ঘটনা আর তার ছন্দায়িত বিবরণ!
শুরু হল অভিনয় শিল্পকলা! মানুষের গল্প বলা আর যোগাযোগের প্রথম মাধ্যম!
সভ্যতা এগিয়ে চলল! ভাষা এল! বিবর্তিত হল শিল্প মাধ্যম!
কবিতা-গল্প-নাটক-চিত্রকলা-সঙ্গীত-নৃত্য-বাদ্য-চলচিত্র! সুর-তাল-লয়-ছন্দ-রূপ-রস! আবেগ-অভিঘাত-মূর্ছনা! প্লট-কন্টেট-থিম!
মোদ্দা কথা- মানুষ নিজের কথা বলতে চায়! মনের কথা! অনুভূতির কথা!
কিন্তু মজার কথা হল- মানুষ সবটা বলতে পারে না! কিছু কথা বলা হয়ে ওঠে না- বুঝে নিতে হয়!
‘না বলা বাণী’র মাঝে শুধু কিছু অনুভূতির প্রকাশ-ক্রমাগত আবেগের অনুপম বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে পড়ে চোখের ভাষায়, মুখের অবয়বে, আকারে ইঙ্গিতে, চালচলনে, দেহ ভঙ্গিমায়; আর এইসব মনোভাবের (অ্যাটিটিউড) অন্তর্নিহিত ছন্দোবদ্ধ প্রকাশই হল নির্বাক অভিনয়ের (বা প্যানটোমাইমে’র) রূপ রস আর ছন্দ!
মার্সেল মার্সো’র মতে- ‘প্যানটোমাইম ইজ দ্যা আর্ট অফ এক্সপ্রেসিং ফিলিং বাই অ্যাটিটিউড অ্যান্ড নট মিনজ অফ এক্সপ্রেসিং ওয়ার্ডজ থ্রু জেসচারজ।’
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভূতি ভালোবাসা’কে শুধুমাত্র চোখের ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব! ‘পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’এর অভিব্যক্তি আমাদের কল্পলোকে অনুরণন তোলে! শব্দ তখন হারিয়ে যায়! শিহরিত অনুভূতির রঙিন আবিলতা আমাদের আবিষ্ট করে! আমরা আনন্দিত হই!
আসলে মানুষের অনুভূতির প্রকাশ হয় মূলত তার ভাবে, ইঙ্গিতে, চলনে, অভিব্যক্তিতে! যে কোনও ঘটনার প্রাথমিক প্রভাব পড়ে তার শরীরে! কথা আসে তারপরে!
দৈনন্দিন জীবন যাপনেও আমরা প্রতিনিয়ত এ ভাবেই একে অন্যের সাথে ভাবের বিনিময় করি! গড়ে ওঠে সম্পর্ক!
নাট্যশাস্ত্র’ গ্রন্থে ভরত বলছেন -
অভিপূর্বস্থ নীঞ ধাতুরাভি মুখ্যর্থ নির্ণয়ে।
যস্মাৎ প্রয়োগং নয়তি তস্মাদভিনয়ঃ স্মৃতঃ।।
বিভাবয়তি যস্মাচ্চ নানার্থন্ হি প্রয়োগতঃ।
শাখাঙ্গো প্রাঙ্গসংযুক্ত স্তস্মাদ ভিনয়ঃ স্মৃতঃ।।
(৮ম অধ্যায়/ ৬ ও ৭)
আমি আমার সামান্য জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে যদ্দুর বুঝি মূকাভিনয় বিষয়টা সাধারণ অভিনয়ের থেকে অনেক বেশি কঠিন। এমনকি নির্বাক চলচ্চিত্রের তুলনাতেও এই মাধ্যমটি কঠিনতর। সত্যি বলতে কি কোনোরকমের সাহায্যকারী বস্তু বা বাক্য এই পদ্ধতিতে নেই। কিন্তু এটাও সত্যি সঠিকভাবে উপস্থাপনা করতে পারলে দর্শক মনে অসম্ভব একটা প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম এই ধরনের অভিনয়। স্বপন বাবুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এই বিষয়টাকে এমন সহজ সরল ভাবে তুলে ধরার জন্যে।..
দারুন। anek পড়াশুনার jজন্য এই প্রতিবেদন সৌন্দর্য লাভ korte পেড়েছে . অনেক শুভেচ্ছা রইলো
'নির্বাক অভিনয়ের রূপ..' লেখাটি অবশ্যই সুখপাঠ্য; কিন্তু, যেটা আরও বলার- এ আলেখ্যর প্রাজ্ঞলতা। একটি অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় অভিনয় মাধ্যম সম্বন্ধে একজন লে-ম্যানকেও ছিপছিপে এই রচনাটি মাইম সম্বন্ধে আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম। স্বপন যে বিষয়টি তত্ত্বগত ও প্রয়োগগত ভাবে গুলে খেয়েছে সেটা কঠিন বিষয়কে সহজ করে বলার ভাষা ও প্রকাশভঙ্গিমাতেই ব্যক্ত। শুভেচ্ছা রইল।
্
This is an excellent article on pantomime ! Beautifully presented and very lucidl explained . The depth of the content clearly shows that the author himself was an eminent artist in this very difficult genre of performing art .
In my opinion , this article will remain as a treasure on pantomime .
With best wishes ,
lucidlly
বেশ ভালো লেখা। আরো কিছু লেখা দরকার।বাংলার প্রান্তিক বহুরূপীদের নিিয়ে।
লেখাটা পড়ে অনেক গুলো না জানা technical term জানা হল । আরেকটু বিসদ হলে ভালো হতো । শ্রুতি নাটক এবং নাটক এই দুটি ভিন্ন ধরণের নাটকের মধ্যে কোনটির জন্য কোন বিষয়ের ওপর concentrate করতে হবে এই নিয়ে একটু আলোচনা হলে ভালো হয় ।