দ্বিতীয় পর্ব—বিশ্বজয়ের আগে ভারতভ্রমণ (পূর্বপ্রকাশিত অংশের পর)।
নীলাঞ্জন হাজরা— বেশ। এবার একটু ফিরে যাই পিছনে। দুটো প্রশ্ন। এক, তুমি পাকাপাকি ভাবে এই ওয়ার্ল্ড ট্যুরের পরিকল্পনাটা কখন শুরু করলে? দুই, সেই শুনে তোমার বাড়ির, পরিবার কী বলল? কারণ, যেটা আমার বারবার মনে হয়, এ তো একেবারে সেই চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের মতো। সেই কবে ১৯৭০-এর মাঝামাঝি। তখন আজকের টেকনলজি বা কমিউনিকেশন কল্পনাও করা যেত না। তারও পরে তুমি একটা প্রত্যন্ত জেলার ছোট্ট মফস্সলের ছেলে, যার সঙ্গে বাইরের দুনিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তার মাথায় চেপেছে এই ভূত। তাতে তোমার বাবা, তোমার মা, তাঁরা কী ভাবলেন?
জয়ন্ত মণ্ডল — ওয়ার্ল্ড ট্যুরের প্ল্যান আমি শুরু করি ১৯৭৩ সালের ওই ট্যুরের সময় থেকেই। তখনই ঠিক করেছিলাম, আমাকে যেতেই হবে। আর শোনো, বাড়িতে তো গোড়াতে কেউ জানতেই পারেনি যে আমি ভিতরে ভিতরে এইসব তোড়জোড় করছি। বাড়িতে জানতে পারল যখন টিউব ইনভেস্টমেন্ট, যাদের হারকিউলিস ব্র্যান্ডের সাইকেল, সেই কোম্পানি মাদ্রাজ থেকে আমাকে একটা নতুন সাইকেল পাঠাল। তোমাকে তো আগেই বলেছি, আমি এনসিসি-তে খুব ভালো ছিলাম। এনসিসির ফণী মুখার্জি আমার হয়ে তিন-চারটে সাইকেল কোম্পানিতে চিঠি লিখেছিলেন। তা ওরা একটা সাইকেল স্পনসর করতে রাজি হয়েছিল।
নী.হা. — বিশেষ ধরনের সাইকেল?
জ.ম. — না-না। এমনি একটা বড়ো সাইকেল। তবে ঘুরতে ঘুরতে যখন চেন্নাইতে গেলাম ওরা তাতে গিয়ার লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই সাইকেল এল আমরা বার হওয়ার মাসখানেক আগে। যাতে সাইকেলটায় সড়গড় হয়ে যাই। সেই দেখে বাবা বললেন, এই সাইকেল কোথা থেকে এল? বললাম, এই একটু ঘুরতে যাব। কোথায় ঘুরতে যাবে? সেই শুরু হল বাবার সঙ্গে কোল্ডওয়ার! প্রথমে তো বললেন, ঘর থেকে তাড়িয়ে দেব। ত্যাজ্যপুত্র করে দেব। তাতেও যখন দেখলেন আমি অনড়, তখন চেষ্টা করলেন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল! তোমার কি আমার প্রতি, তোমার মায়ের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই? এইভাবে আমাদের বৃদ্ধ বয়সে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছ? কোথায় খাবে? কোথায় থাকবে? কী করবে? আমি বললাম, চিন্তা করো না, আমি যাব আর আসব! শোনো, তখনও কিন্তু দুনিয়া ঘুরব মানে আমি ভেবে রেখেছি, পুরো ভারত আর শ্রীলঙ্কা, নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর খুব বেশি হলে আফগানিস্তান! কিন্তু সেবার শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোনো দেশ আমায় ভিসা দেয়নি!
নী.হা. — পরেও আর এই দেশগুলোতে সাইকেলে যাওয়া হয়নি?
জ.ম. — অফকোর্স। সব জায়গায় গিয়েছি। পাকিস্তান তিন-তিনবার আমায় ভিসা রিফিউজ করেছিল। পরে যখন (দক্ষিণ-মধ্য আফ্রিকার দেশ) জাম্বিয়াতে ভারতের অ্যামবাসাডর নটবর সিংয়ের সঙ্গে দেখা হয়, শুনলাম তিনি কিছুদিন পরেই পাকিস্তানের হাইকমিশনার হয়ে চলে যাচ্ছেন। ওনাকে বললাম, কিছুতেই আমায় ভিসা দিচ্ছে না। উনি বললেন, আমি যাচ্ছি, গিয়ে ব্যবস্থা করছি। পাকিস্তান নিয়ে অনেক গল্প আছে, পরে বলব তোমায়।
নী.হা. — তোমার মা কী বললেন?
জ.ম. — খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। শেষের দিকটায় নীরবে কাঁদতেন। কিন্তু আমি বললাম, এই তো যাব আর আসব। সেই যাওয়া আর শেষ হয়নি—সতেরো বছর!
নী.হা. — আমি বুঝতে চাইছি তোমার টানটা কোথায় ছিল?
জ.ম. — টানটা ছিল রোড, রাস্তা। রাস্তায় আমার নেশা হয়ে গিয়েছিল। অ্যাডিকশন। সেই নেশাই আমায় টেনে নিয়ে যেত, আমি চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। সেদিন তোমায় বলছিলাম, স্ট্যামিনা অনেক লোকের থাকে, কিন্তু যেটা থাকে না সেটা হল ডিটারমিনেশন। সেই ডিটারমিনেশনটাই আমার ভিতরটা তোলপাড় করত—ফিরে যাব? হতেই পারে না। লোকে ছ্যা ছ্যা করবে। টিটকিরি দেবে—হয়ে গেল? ওয়ার্ল্ড ট্যুর হয়ে গেল? আর যেটা আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চালিয়ে নিয়ে গেছে, সেটা একটা খুব সহজ ব্যাপার—আমি মানুষ দেখছিলাম। নতুন নতুন মানুষ। সারাক্ষণ নতুন অভিজ্ঞতা। সারাক্ষণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতাম, এমনিই গল্প করতাম। তারপর তারা যা বলত সেটাকে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতাম। যেগুলো মনে হত জরুরি, লিখে রাখতাম। বাকিটা ফেলে দিতাম। কতরকমের মানুষ!
একটা ছোট্ট মজার ঘটনা বলি। এই দ্বিতীয়বার আমি আর মনমোহন (চক্রবর্তী) বস্তারে জগদলপুরের কাছে একটা গ্রামে পৌঁছেছি অনেক রাতে। দেখি একটাই মাত্র বাড়ি। দূরে আরও কয়েকটা বাড়ি ছিল। তো ডাকাডাকি করতে একটা বারো-তেরো বছরের ছেলে বেরিয়ে এল। বললাম, বাড়িতে আর কে আছেন? বলল, মা আর দাদাজি। যাই হোক তাকেই পরিচয় দিয়ে বললাম, খুব ক্লান্ত রাতটা যদি একটু বারান্দাটায় শোয়া যায়। তো সে খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, হাঁ-হাঁ, আইয়ে আইয়ে। ঘরের ভিতর থেকে দেখি সেই দাদু জিজ্ঞেস করছে, কী ব্যাপার? বাচ্চাটা বলল। তখন, দাদু বাচ্চাটাকে বলছে, দেখে নাও, বাঙ্গালি তো নেহি! বাঙ্গালি হলে বাড়ির বিছানা-পত্তরও সব চুরি করে নিয়ে যাবে! আমরা আর পরিচয় দিইনি যে আমরাও বাঙালি!
তা পরে জিজ্ঞেস করলাম, কেন, বাঙালিদের বিষয়ে এরকম বলছেন কেন? বলল, আরে আমি একবার কলকাতায় গেছিলাম। একটা ট্রামে চড়েছি। নামার সময় দেখি আমার ব্যাগটাই নেই! এরকম কেউ করে? এ তো চোরি! কলকাত্তায় সব চোরি করে! সব চোর হ্যায়!!
আমার খুব মজা লেগেছিল। বললাম, এটা কবে? বললেন, যাদা দিন পহেলে নেহি, বস্ পচ্চিস-ছাব্বিস সাল হোগা!!
মোক্ষম দাওয়াই একটাই—যোগ-ব্যায়াম
নী.হা. — এই যে তোমরা বেরোলে, ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে, সঙ্গে কী নিয়েছিলে?
জ.ম. — কী আর! এক সেট এক্সট্রা জামা-প্যান্ট। বেশি নেওয়া যাবে না, ভার বাড়বে। কম্বল, পরে একটা স্লিপিংব্যাগ নিতাম। জলের বোতল। একটা লগবুক আর কলম। আরও পরে একটা টেন্ট নিতাম। আর থাকত সাইকেল খারাপ হলে সারিয়ে নেওয়ার যন্ত্রপাতি। বিশেষ করে টায়ার পাংচার হয়ে গেলে যাতে নিজেরাই সারিয়ে নিতে পারি তার সব কিছু। কতবার যে টায়ার পাংচার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
নী.হা. — আর ওষুধ-পত্র?
জ.ম. — শোনো, ওষুধযেখুববেশিরাখতামকোনওসময়েইতানয়। মনে আছে ভারতে যখন ঘুরছিলাম তখন এন্টারোকুইনাল খুব কাজে দিয়েছিল আমাশার জন্য। কিন্তু আমার মনে পড়ে না আমার তেমন শরীর খারাপ কখনও হয়েছে, একেবারে সেই ১৯৮৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে গিয়ে একবার হয়েছিল। অ্যামেরিকা পৌঁছেছিলাম ১৯৮২ সালের ১৬ জুন। তারপর পাঁচ দফায় আমি পুরো দেশটা ঘুরেছি। তো যাই হোক, আর শরীর খারাপ যেটা হয়েছিল সেটা একেবারে গোড়ায়—প্রথম কিছুদিনের পর থেকে সাইকেলের স্যাডলে বসতেই পারতাম না, সারা পিছনটা ফোসকায় ভরে গিয়েছিল। সে ভীষণ কষ্টকর। ডাক্তার দেখাতে হয়েছিল। তিন-চার মাস পরে ওটা চলে গেল। কিন্তু আর তেমন শরীর খারাপ হয়নি। তার একটা কারণ, আমি যোগ-ব্যায়াম করতাম। রোজ।
নী.হা. — আচ্ছা! এইটা আমি বরাবরই ভেবেছি যে এই সতেরো বছর ধরে সাইকেলে ঘোরা, তোমার শরীর এই ধকলটা সইতে পারল কী করে? তোমার তো ছোট্টখাট্ট চেহারা।
জ.ম. — একদম যোগাসন। নইলে যেখানে সেখানে জল খাচ্ছি, আধসিদ্ধ মাংস খাচ্ছি, বাঁচতে পারতাম নাকি! নানারকমের আসন—উড্ডীয়ন, নৌলি, প্রত্যেকদিন বমন-ধৌতি। প্রত্যেকদিন সকালবেলায় উঠেই দু-লিটার জল খেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সব বমি করে বার করে দেওয়া। জীবনে কখনও অম্বল হয়নি আমার। আর মাসে একবার এমনি ধৌতি করতাম। কুসুম-গরম জল নুন আর কাগজি লেবু দিয়ে খেয়ে তিনটে আসন করতে হয়—বিরপিতকরণী মুদ্রা, সর্বাঙ্গাসন আর-একটা আসন করতাম, বুঝলে, নামটা এক্ষুনি মনে পড়ছে না, তাতে মলদ্বার দিয়ে পেটের সব কিছু ধুয়ে বেরিয়ে যায়। শেষে শুধু পরিষ্কার জল বার হবে, তখন বুঝতে হবে ধৌতি ঠিক ঠিক হয়েছে। তো এ সব আসন আমি একেবারে নিয়ম করে করেছি সারাজীবন—কঠোর ডিসিপ্লিন।
নী.হা. — ওরেব্বাবা এ তো ফেলুদার মতন। কিন্তু তুমি যেসবের কথা বললে তা তো সাধারণ যোগাসন নয়, তার মানে তো তুমি রীতিমতো যোগ-ব্যায়ামে এক্সপার্ট, এটা জানতামই না।
জ.ম. — হ্যাঁ, বলতে পার। কিছু কিছু দেশে তো টেলিভিশনেও আমি যোগের ডেমনস্ট্রেশন দিয়েছি—সিরিয়াতে, প্যারিসে, নাইজেরিয়াতে…
নী.হা. — বুঝলাম। এ তো গেল শরীরের কথা, আর টাকা-পয়সা?
জ.ম. — একদম ছিল না। বাবা আবার বলে দিয়েছিলেন, ভুল করেও কোনোদিন এমন চিঠি দেবে না যে পয়সার দরকার পড়েছে, পয়সা পাঠাও। সেটা সারাজীবনে কখনও করিনি। যেদিন বেরোলাম, ১৯৭৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর, সি-অফ্ করতে এসেছিলেন এনসিসি-র অফিসাররা, রামানন্দ কলেজের কিছু ছাত্র আর (বিষ্ণুপুরে তখন কংগ্রেসের বড়ো নেতা, বিত্তবান পরিবারের) রামবিলাস চক্রবর্তী। রামবিলাসবাবু আমাদের ৫১ টাকা দিয়েছিলেন!
কোথাও সাপের কামড় থেকে রক্ষা, কোথাও মাঝরাত্তিরে পুলিশের লাথি
নী.হা. — আচ্ছা। তা এই যে তোমরা সারা ভারত ঘুরলে, তার অভিজ্ঞতা কীরকম হয়েছিল?
জ.ম. — হ্যাঁ, প্রায় ১৫ মাস ধরে ঘুরেছিলাম। নানারকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল। একবার তো সাপের কামড় খেতে-খেতে বেঁচে গিয়েছিলাম।
নী.হা. — কী করে?
জ.ম. — সেবার কর্ণাটকের মণিপাল থেকে একটা জায়গাতে যাচ্ছি শিমোগা বলে। রাত্রিবেলা সাইকেল চালাচ্ছি একটা রাস্তা ধরে, হাইওয়ে না। গাড়ি-টাড়ি কিচ্ছু নেই। অনেক রাত তখন। চালাতে চালাতে একটা খালের মধ্যে পড়ে গেলাম। কেন জান? টায়ার্ড হয়ে সাইকেল চালাতে চালাতেই ঘুমিয়ে পড়েছি। মনমোহেন দেখছে সাইকেলটা রাস্তা থেকে বেঁকে খালের দিকে চলে যাচ্ছে, তো চেঁচাল, তুই কী করছিস, কোথায় যাচ্ছিস? কিন্তু ততক্ষণে আমি পড়ে গেছি। তো, ও বলল, তোকে বললাম, রাত হয়ে গেছে কোথাও একটা শুয়ে পড়ি। তুই বললি, না, পৌঁছতেই হবে। এমনি করে হয় না। শেষে খুঁজতে খুঁজতে একটা বড়ো কালভার্ট পেলাম। তার দু-দিকটা উঁচু করে বাঁধানো। তার একদিকটাতে আমি শুয়ে পড়লাম, আর একদিকে ও। হঠাৎ কেন জানি না ঘুমটা ভেঙে গেল। পা-টা ঝুলেছিল। দেখি একেবারে পায়ের কাছে একটা ভাইপার। আমি তো লাফ কেটে উঠলাম। তবে পায়ে জুতো-মোজা ছিল, ফুলপ্যান্ট, তাই কিছু হয়নি।
নী.হা. — রাত্রে এরকম রাস্তার পাশে আর কখনও শুয়েছ?
জ.ম. — বহুবার। বহু… বার। শোনো এই ট্যুরে প্রায়ই মাটি হত আমার বিছানা, আকাশ ছাদ! তবে কোনো না কোনো শেল্টার পাওয়ার চেষ্টা করতাম। না পেলে, মাটিতেই। অনেক পরে একটা তাঁবু কিনেছিলাম। জঙ্গল-টঙ্গল হলে একটু দেখে নিতে হত। ওই সাপের ভয়টা ছিল। আর কিছুর ভয় না।
নী.হা. — তোমার দুশ্চিন্তা হত না? টাকা নেই পয়সা নেই। কোথায় থাকবে? কী খাবে? বিপদ হলে কী করবে?
জ.ম. — একটা কথা ঠিক, এই সতেরো বছর ধরেই একটা চিন্তা থেকে গিয়েছিল, দুটো চিন্তা, বরাবর—আজ রাতে কোথায় শোব? কালকে কোথায় খাব? এটা কখনও যায়নি। কিন্তু কয়েক জায়গাতেই শুধু না খেয়ে থাকতে হয়েছে, আদার ওয়াইজ, সব জায়গাতেই খাবার পেয়েছি। জান নীলাঞ্জন, আমি দেখেছি সাধারণভাবে মানুষ খুব ভালো। সারা দুনিয়ায়। আমি উপলব্ধি করেছি, এত পারস্পরিক হানাহানি, বিদ্বেষ, এসব সত্ত্বেও, মানুষ কিন্তু মানুষই। তাদের ধর্ম আলাদা হতে পারে, নানারকমের খাবার খেতে পারে, ভাষা আলাদা হতে পারে, বিভিন্ন সংস্কৃতি, কিন্তু এসবের ভিতরে ভিতরে সবাই মানুষ। জানো, প্রথম বেশ কয়েক বছর আমি রাত্রে থাকার জন্য আমার সামান্য টাকা থেকে একটা পয়সাও খরচ করিনি। হোটেল-মোটেল, কখ্খনও না। কখনো-কখনো ইউথ হস্টেলে যেতাম। ওরা বলত, খাবার-দাবার হয়ে গেলে রান্নাঘর, ডাইনিংরুম পরিষ্কার করে দেবে, কী হস্টেল ঝাড়ু দিয়ে দেবে, ফ্রি-তে থাকতে দেব।
নী.হা. — আচ্ছা, কখনও মনখারাপ করত না?
জ.ম. — প্রথমের দিকে কখনো-কখনো করত। একবার মনে আছে, আমি আর মনমোহন দিল্লিতে দরিয়াগঞ্জ থানায় গিয়ে পৌঁছেছি রাত্রে। তো কোনো একজন অফিসার বলল, ঠিক আছে দেখ বাইরে সব চারপাই পাতা আছে শুয়ে পড়ো গিয়ে খালি দেখে দুটোয়। তো শুয়েছি, রাত্রি দুটো নাগাদ, একজন এসে আমায় পা দিয়ে ঠেলছে, অ্যায় উঠ্ ইঁহাসে। কওন হ্যায় তু। ভাগ। বলে আমায় লাথি মেরে তুলে দিল। সেবার নিজেকে সামলাতে পারিনি আর। একেবারে ভীষণ কেঁদেছিলাম। সে একেবারে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কান্না। মনে হল, এক্ষুনি মায়ের কাছে ছুটে চলে যাই। আরও কয়েক জায়গায় হয়েছে। কিন্তু, আমি বলছি তোমায়, তার উলটোটাও হয়েছে অধিকাংশ জায়গায়—আমাকে একেবারে পরিবারের একজন করে নিয়েছে।
দারুণ