এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স অথবা মৃত্যু! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬৯২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • গত বছরের শেষের দিকে মহান ছাত্র সমন্বয়কদের একটা স্লোগান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু! দেশকে ভারতের হাতে তুলে দিবে না, কারো হাতের পুতুল হয়ে থাকবে না ইত্যাদি ইত্যাদি ব্লা ব্লা ব্লা। সেই তেজস্বী ভাব আর নাই। একেকজন উপদেষ্টাদের সাথে যে ছাত্র সহকারী দেওয়া হয়েছিল তারা কেউ কেউ দুই চারশ কোটি কামাই করে ফেলছে এর মধ্যে, একজন সুইজারল্যান্ডে বাড়ি কিনছে এমন খবরও প্রকাশ পেয়েছে! আরেক সমন্বয়ক বুক পর্যন্ত দাঁড়ি নিয়ে, জোব্বা পরে, কপালে নামাজ পড়তে পড়তে দাগ ফালায় দিয়ে মাত্র চারশ কোটি মারছে, শুধু মাত্র পাঠ্য বইয়ের বাণিজ্য করে। স্কুলের ছাত্ররা এই এপ্রিল মাসেও সব বই হাতে পায় নাই এমনে এমনেই না। এই রকম মহান লোকেরা কাগজ, কালি আরও কত কত জায়গায় বাণিজ্য করে এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এমন অবস্থায় গতকাল এক সরকারি চিঠি অনলাইনে ছড়িয়ে গেছে। যেখান দেখা যাচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার ছয়জন প্রেস সচিবের জন্য আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স কেনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রতিটা সেট কিনার জন্য দুই লক্ষ সাতান্ন হাজার চারশত টাকা দিতে বলা হয়েছে। এই জন্যই আজকের লেখার এই শিরোনাম দিলাম, আইফোন সিক্সটিন প্রো ম্যাক্স অথবা মৃত্যু! 
     

    কে যে কোন দিক থেকে কেমনে খাচ্ছে লুটেপুটে তা ধরতে পারাও মুশকিল। তিনজন ছাত্রকে রেলওয়েতে বিশেষ বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। কেন আমাকে প্রশ্ন করে লাভ নাই। এইটা কারা কেন করছে তারাই জানে, দুনিয়ার আর কেউ সম্ভবত জানে না। তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রেলের কালোবাজারি সহ রেলের কাজের উন্নতির জন্য কাজ করার জন্য। এই কাজের জন্য তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা, যে কোনদিন যে কোন লাইনে ভিআইপি টিকেট মাগনা দেওয়া হবে তাদেরকে। তারা যখন তখন যে কোনদিকে যাবে। এই সহজ সরল ব্যবস্থা থেকেও তারা টাকা কামাই করে ফেলছে! কেমনে? নিজেদের নাম বিক্রি করছে। নিজেদের নামের সিট বিক্রি করেছে তারা। এইটা করতে গিয়ে যা করছে তা রীতিমত ফাইজলামি। তারা একই সময় ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছে, সিলেট যাচ্ছে, চট্টগ্রাম যাচ্ছে! কেমনে সম্ভব? সকালে সে পঞ্চগড়, দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রউনা হচ্ছে তাহলে কোন ভূতে? এই করে এই কয় মাসে দুই লাখ টাকার টিকেট বিক্রি করেছে। মানে বলদেরা কেমনে টাকা মারতে হবে তাও জানে না। তাই এই সব খুচরা কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে। যদিও এইটা ধরা পড়ার আগে তারা প্রতি স্টেশনে দোকান বরাদ্দ চেয়েছে। মানে হচ্ছে বড় দানের দিকে আগানোর চেষ্টা শুরু হচ্ছে। 
     

    বিএনপি একটা দল যারা এমনই দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে এই চরম দুর্নীতিবাজ ছাত্রদের সাথেও পেরে উঠছে না। সকাল বিকাল ধমক দেয় ছাত্ররা। ৫ আগস্ট পরবর্তী চাঁদাবাজি এমন পর্যায়ে করেছে যে এখন মানুষ তাদেরকে সহ্য করতে পারে না। আমি আমার এলাকায় যা দেখছি তার কথা বলতে পারি। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাহিরে থাকায় পাতি নেতারা ঝরে পড়ে গেছিল। আমি এক সময় রাজপথ কাঁপানো ছাত্র নেতাকে দেখছি আমাদের নিউ মার্কেট মোড়ে অটো লাইন ধরানোর কাজ করত। জ্যাম বেঁধে গেলে লাঠি দিয়া অটো, রিকশাকে সামনে আগানোর কাজ করত। ওই করে কয় টাকা কামাই করত জানি না। কিন্তু দিনের পর দিন এই করতে দেখছি। যার কথা বলছি সে আমাদের স্কুলেই পড়ত। পড়াশোনা কেন বাদ দিল, কেন রাজনীতির নেশায় পেয়েছিল ওকে কে জানে। কিংবা সবাই জানে মনে হয়। প্রবল প্রতাপ দেখানোর লোভ, সেই ২০০২/০৩- ২০০৫/০৬ সালে বিশ একুশ বছরের একটা ছেলের যদি শহর কাঁপানোর ক্ষমতা থাকে, টাকা থাকে তাহলে পড়াশোনাকে বাহুল্য মনে হবে না? ওর তাই হয়েছিল। ওকে সহ আরও কয়েকজনকে দেখতাম এই অটো সামলানোর কাজ করত। এবার আসুন ৫ আগস্টের পরের পর্বে। আবার ওদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাপড় চোপর চিকচিক করছে! দুইজন দোকান দিয়ে বসেছে, আরেকজন আল্লাই জানে কী করছে এই মুহূর্তে। যা বুঝলাম কামাই করে নিয়েছে এরা প্রত্যেকেই। 
     

    এমন হাজার হাজার কেস। কেস লিখে মনে পড়ল, এখন হচ্ছে মামলার দিন। মামলার ওপর নাম হচ্ছে বাণিজ্য। মামলা দেওয়া হচ্ছে, ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। থানা থেকেই জানাচ্ছে রেট কত, রেট অনুযায়ী টাকা দিচ্ছে। হাবিজাবি একটা মামলায় ধরা দেখায় দিচ্ছে, সপ্তাহখানিক জেল খেটে বের হয়ে যাচ্ছে! কই জুলাই আগস্টের নিহতের রক্তের মূল্য? কই মাতৃভূমি অথবা মৃত্যুর শপথ? আমার পরিচিত একজনের কাছে পাঁচ লাখ চেয়েছিল। পরে শুনলাম হুদা কথা, রেট এত না, দশ বিশ হাজারেই ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। 

    আমরা দিন দিনই পথ হারাচ্ছি। এই সরকারের ওপরের মানুষের প্রবল আগ্রহ ছিল, আশা ছিল। সব লেজেগোবরে করে বাচ্চাদের মত কার সাথে ইনুস সাহেব ছবি তুলছে, কে শুভেচ্ছা জানিয়েছে এগুলা নিয়ে ব্যস্ত। জাতিসংঘের মহাসচিব আসল। এমন আলোড়ন তুলল সবাই মিলে যে এমন ঘটনা আর ঘটে নাই এই ভূখণ্ডে। নানা ভালো ভালো কথা বলে মহাসচিব চেয়ে বসলেন রোহিঙ্গাদের জন্য করিডোর! যেন ওই পাশে আবার হত্যাকাণ্ড শুরু হলে রোহিঙ্গারা যেন সহজে বাংলাদেশে আসতে পারে! রোহিঙ্গাদের কিসের নিয়ে যাওয়ার আয়োজন হবে তা না করে উল্টো আসার পথ সুগমের জন্য আহবান। তখন তিনি বলে গেলেও কেউ অত পাত্তা দেয় নাই কেউ। কিন্তু এখন এইটাই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। লীগ আমলে যে কয়জনকে ফেরত নেওয়ার আলাপ শুরু হয়েছিল, কিছুদিন সেই তালিকা থেকে বাছাই করে মায়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার কথা জানায়। এইটাকেও ঢাকঢোল পিটিয়ে দ্বিতীয় নোবেল আসল বলে ঘোষণা দিয়ে দিল ইনুসপ্রেমিরা। কিন্তু সত্য হচ্ছে গত কয়েকদিনে আরও লাখের ওপরে রোহিঙ্গা ঢুকেছে বাংলাদেশে। করিডোর ইতোমধ্যে দিয়েই দেওয়া হয়েছে কি না কে জানে। এই করিডোর ধরে আরও কী কী আসবে? 
     

    এর মধ্যে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে ইরেশ যাকেরের নামে হত্যা মামলা! এই লোক আলী যাকেরের ছেলে, অভিনয় করে, লীগ সরকারের স্নেহধন্য পুত্র! আলী যাকের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিংবদন্তি অভিনেতা তিনি। এশিয়াটিক এড ফার্ম তাদেরই প্রতিষ্ঠান। এই ইরেশ যাকের জুলাই আন্দোলনে রাস্তায় ছিলেন ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে। এখন হত্যা মামলা খেয়ে হুশ ফিরেছে কি না কে জানে। দেশের তারকা মহল তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। মজাটা হচ্ছে এরা তার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি যে জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন, রাস্তায় ছিলেন এইটাকে জোর গলায় বলছেন। মানে আন্দোলনে থেকেও কেন মামলা খাবে? যারা আন্দোলনে থাকে নাই তাদেরকে মামলা দিন, আমরা যারা ছিলাম আন্দোলনে আমাদের কেন দিবেন? হত্যা মামলা ভুয়া এইটার যুক্তি হচ্ছে আমি আন্দোলনে ছিলাম? অনেকেই আশ্চর্য হচ্ছে ইরেস যাকেরকে মামলা খেতে দেখে। এদের কাছে ৭৬ বছর বয়স্ক শাহরিয়ার কবির লাঠি ভর দিয়ে হত্যা করে আসছে এইটা বিশ্বাস করতে সমস্যা হয় না, সমস্যা হচ্ছে ইরেশ যাকের কখন তাদের পাস থেকে গিয়ে হত্যা করে আসছে এইটা বুঝতে! বিচিত্র ছাগলে ভরপুর এই দেশ। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে আছেন জাফর ইকবালের মত লোক, তারা আশ্চর্য হন লাল প্রোফাইলধারি কেউ মামলা খেলে!  অসুস্থ শাহরিয়ার কবিরকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তুরিন আফরোজের মত আইনজীবীকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে আর আমি আশ্চর্য হব আশফাক নিপুণের মত কট্টর বিএনপিপন্থি পরিচালকের আশ্চর্য হওয়া দেখে? 
     

    সমস্ত সূচকে আমাদের পতন শুরু হয়েছে। আর আমাদের আমির ডক্টর ইনুস পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত আছেন। রেহমান সোবহান প্রথম আলোয় বেশ বড় একটা আলোচনা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন ৭৫ পরবর্তী সময়েও ভারত বিরোধিতা থেকে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা দেখা গেছে। কিন্তু এখন তো পাকিস্তানের সেই দিন নাই। পাকিস্তান নিজেই আছে লাইফ সাপোর্টে। অন্যদিকে ভারত বর্তমানে একটা বড় অর্থনৈতিক শক্তি। কিন্তু এই কথা আমাদের ছাগলদের কে বুঝাবে? ছাগলেরা তাই কাশ্মীরে রক্ত ঝরায় খুশি হয়। পাকিস্তানের সাথে মিলে ভারত জয়ের স্বপ্নে বিভোর! এই দেশে বরাবরই জঙ্গিরা হিরোর মর্যাদা পেয়ে এসেছে। লাদেনের পোস্টার নিয়ে এই দেশে এক সময় মিছিল হয়েছে। তো তাদের কাছে ধর্মের নামে এমন হত্যাকাণ্ড তো ফুর্তির খবর। এদেরই অনেকে হোলি আর্টিজানের ঘটনার সময় আলহামদুলিল্লাহ পড়েছ। এখন দুই ভাঙা অর্থনীতির দেশ মিলে ভারত জয় করার জন্য রউনা হল বলে! কয়েক বছর আগেও পাকিস্তানের নেতারা তাদের টেলিভিশনে বলত আমাদের ইউরোপ আমেরিকা বানায় দিতে হবে না, তোমরা আমাদের বাংলাদেশ বানায় দাও, তাহলেই চলবে। সেই ভাঙা অর্থনীতির দেশটাই এখন বলে আমাদের সহায়! এই হইল অবস্থা। যে হারে বিদ্যুৎ নাই হচ্ছে, যে হারে উৎপাদন বন্ধ থাকছে, যতগুলা ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে তাতে পাকিস্তানকে টপকে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় যেতে আমাদের বেশিদিন লাগার কথা না। বিশ্ব ব্যাংক এর মধ্যেই প্রবিদ্ধি নামবে ৩.৩ বলেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরাই এখন প্রথম! হাতে হারিকেন অথবা মৃত্যু! 

    কবি দাউদ হায়দার গত ২৫ তারিখ মারা গেছেন। দেশের প্রথম নির্বাসিত কবি। এইটা নিয়েও রাজনীতি শুরু। কেন নির্বাসিত তা না জেনেই যেহেতু বঙ্গবন্ধু আমলে এই কাজ হয়েছে তাই বঙ্গবন্ধুকে গালি দেওয়ার আরেকটা উপকরণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে দাউদ হায়দার! কেন কবিকে নির্বাসিত হয়ে ছিল? নিশ্চয়ই সরকারের বিপক্ষে কিছু লিখেছিল! এইটা হচ্ছে সরল চিন্তা। এই দেশে শুধু সরকারের বিরুদ্ধে লিখেই দেশ ছাড়তে হয় না। ধর্ম হচ্ছে বড় নিয়ামক এখানে। তার তুলনায় সরকার তো দুধ ভাত। কবির 'কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়' নামে একটা কবিতা প্রকাশ পায় ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। এই কবিতার বেশ কিছু লাইন ধার্মিকদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে। অনুভূতিতে আঘাত লাগায় আমরা সেরা। তার মধ্যে লাইন গুলো হজম করে এমন পাকস্থলী এখনও মনে হয় এই দেশে কম। সাহস করে এখানে কিছু লাইন দিচ্ছি - 

    "জন্ম আমার কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নার কালো বন্যায়
    ভেসে এসেছি তোমাদের এই তিলোত্তমা শহরে
    কল্পিত ঈশ্বর আমার দোসর; পায়ে তার ঘুঙুর; হৃদয়ে মহৎ পূজো
    চুনকামে মুখবয়ব চিত্রিত; আমি তার সঙ্গি,
    যেতে চাই মহীরুহ ছায়াতলে, সহি নদীজলে; ভোরের পানে।
    ঈশ্বর একান্ত সঙ্গি; জেনেছি ধূপ নেবানের ঘরে। তার পায়ের ঘুঙুর সে
    আমাকে পরিয়ে পালালো, আমি হয়ে উঠলাম আমি।
    ভেতরেও সে বাহিরেও সে; আমার আমি হয়ে বলেছি আমি,
    মরণের নক্ষত্র দোদুল্যমান কালো ঘণ্টার রাজধানীতে বর্শার মতো দিন।
    রাত্রির অলীক নটী, অন্ধ দগ্ধে নাচায় ভাই; আমার বিশ্বাস ছিল
    প্রতিধ্বনি নেই, তিমিরে আমার যাত্রা; দেখা হয় আলখেল্লায়
    সজ্জিত মিথ্যুক বুদ্ধ; বসে আছে বোধিদ্রুমের ছায়াতলে;
    যিশু আরেক ভণ্ড; মোহাম্মদ তুখোড় বদমাস; চোখে মুখে রাজনীতি,
    আমি প্রত্যেকের কাছে পাঠ নিতে চাইলুম; তোমাদের চৈতন্যে যে লীলাখেলা
    তার কিছু চাই এ বেলা। দেখলো ঈশ্বর দেখলো আদম।
    আদমের সন্তান আমি; আমার পাশে আমি?
    আমি আমার জন্ম জানি না। কীভাবে জন্ম? আঁতুড় ঘরে কথিত
    জননী ছাড়া আরে কে ছিল? আমায় বলেনি কেউ।
    আমার মা শিখালো এই তোর পিতা, আমি তোর মাতা।
    আমি তাই শিখেছি। যদি বলতো, মা তোর দাসী, পিতা তোর দাস;
    আমি তাই মেনে নিতুম। কিংবা অন্য কিছু বললেও অস্বীকারের
    উপায় ছিল না।
    আমি আজ মধ্য যৌবনে পিতা মাতার ফারাক বুঝেছি। বুঝেছি সবই মিথ্যা
    বুঝেছি কেউ কারও নয়; কেউ নয় বলেই তো বলি
    একদিন সবকিছুই যাবে চলে।" 

    এই কবিতা প্রকাশের পরে অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়। শেষ পর্যন্ত কবি দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করে পার পাওয়া যায়? শেষ পর্যন্ত তার জীবন বাঁচাতেই তাকে গেরেফতার করা হয়। পরে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে বিশেষ বিমানে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষ বিমানে নির্বাসনে যাওয়া কবিও সম্ভবত তিনি একজনই। এরপরে জিয়া সরকার তার পাসপোর্ট বায়জাপ্ত করে। ভারতও তাকে রাখতে রাজি ছিলেন না। নোবেল জয়ই গ্রুন্টাস গ্রাস ভারত ঘুরতে এসে কবির এই বিপদ জেনে সাহায্য করেন, জার্মানিতে পাড়ি জমান কবি। এরপর থেকে সেখানেই থাকেন তিনি। আর ফিরতে পারেন নাই দেশে! বললাম না, ধর্মের কাছে সরকার, রাজনীতি সবাই নতজানু এই দেশে! 
     
    রেহমান সোবহানের লেখায় একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল। সেই আলাপ করেই আজকে শেষ করি। তিনি লীগের নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে বলেছেন বিএনপি এইটা হতে দিবে না। কেন? বিএনপি লীগকে ভালো করেই চিনে। নিষিদ্ধ লীগ মাঠে থাকবে আর তারা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবে, এইটা তাদের জন্য ভয়ংকর হবে। বিএনপি চাবে লীগ নির্বাচনে আসুক, নির্বাচনে হারিয়ে পূর্ণ শক্তিতে ক্ষমতায় বসতে। একমাত্র এই তরিকায় যদি ক্ষমতায় বসে বিএনপি তাহলেই তাদের ক্ষমতায় বসা সার্থক হবে। না হলে লাভ হবে না। কথাটা আমার যুক্তিপূর্ণ মনে হয়েছে।  সম্ভবত লীগ নিজেও এইটা জানে তাই এখন চুপ করে নির্বাচনে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। যে হারে এদের দুর্নীতির খবর এখনই সয়লাব, যে হারে জনপ্রিয়তার পারদ নামছে এদের। লীগ বসে থাকলেই একদিন নির্বাচনে যেতে পারবে। এই দেশে সব সম্ভব। নব্বইয়ের এরশাদকে আন্দোলন করে নামানো হয়। এরপরের নির্বাচনেই এরশাদের দল জাতীয় পার্টি ৩৫টা সিট জিতে, এরশাদ নিজে জিতে পাঁচটা আসনে! তখন তিনি জেলে ছিলেন, জেল থেকেই পাঁচটায় দাঁড়িয়ে পাঁচটায় জিতেন তিনি। অসম্ভব বলে আসলেই কিছু আছে এই দেশে? 

    দাউদ হায়দারের ২০০৫ সালে মাতৃভূমি নিয়ে লেখা একটা কবিটা দিয়ে বিদায় নেই - 

    "দীর্ঘশ্বাস-ছাড়া তোমাকে আর কী দিতে পারি, দেশ?
    অনিঃশেষ
    ব্যথাবেদনায় কাতর হয়েছি আমি। আত্নঘাতী ভালোবাসা
    হত্যা করেছে সমস্তা আকাঙ্ক্ষা ও আশা
    যে-প্রেমে উদ্বুদ্ধ ছিলাম একদা, আজো আছি, কিন্তু দেশ
    পরতে-পরতে তোমার মৃত্যুতে ছাড়ছি দীর্ঘনিশ্বেস
    -তোমার মৃত্যুতে" 

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • MP | 2401:4900:3148:fa86:ae1b:98fe:a8b9:***:*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪৬542733
  • @ কিংবদন্তী , ভারত ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি থেকে একতরফা বেরিয়ে আসার ফলে বাংলাদেশেরও কি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির সম্ভাবনা নেই ? ভারতের সঙ্গে তো বাংলাদেশের অনেক দীর্ঘমেয়াদী সব জলচুক্তি আছে l ২০২৬ সালে গঙ্গা চুক্তিরও নতুন করে রিনিউ হবার কথা l কাজেই এখন বাংলাদেশের তো সেদিক দিয়েও বেশ সমস্যা হয়ে গেলো ! আচ্ছা শেখ হাসিনা বা লীগ কি চাপ সৃষ্টি করতে পারে এই জল নিয়ে ?
  • . | 194.56.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:২৩542737
  • দাউদ হায়দারের সঙ্গে বছর ছয়েক আগেই তো বের্লিনে চমৎকার আড্ডা খাওয়া দাওয়া ওয়াইন এবং হাল্কা তর্ক বিতর্ক হয়েছিল। দুদিন/সন্ধ্যা মনে হচ্ছে।
    প্রোস্টেট ক্যানসারে তখনই রেডিওথেরাপি চলছিলো। আর্থিক অবস্থা বড়ই করুণ এবং পুরোপুরিই সোশাল সাপোর্টে ছিলেন।
    আমার শৈশবের কবি দাউদ হায়দার এবং এই বের্লিনের দাউদ হায়দারকে মেলানো অসম্ভব।
    সত্তরের দশকে বাংলাদেশ তৈরি হবার পরেই উনি ভারতে এসে আত্মগোপন করেছিলেন। আনন্দ পাবলিশার্সে সম্ভবতঃ চাকরি করেছেন, একাধিক কবিতার বই সেখান থেকেই পাবলিশড হয়েছে। তারপরে গুয়েন্টার গ্রাসের কোলকতা সফরকালে তাঁর গাইড হিসেবে কাজ করে নিষিদ্ধ পল্লীগুলোর সফর করান, আসল কোলকাতাকে চেনানোর জন্য। সেসময়ে গুয়েন্টার গ্রাসের সেই বিখ্যাত লেখা, মা কালীর জিভ দেখানো নিয়ে বড়ই সাড়া ফেলেছিলো ইন্টেলেকচুয়াল সমাজে। সে সবই সত্তরের দশক বা আশির দশকের গোড়ার খবর। দাউদ এই যোগাযোগের ফলে, গ্রাসের সাহায্যে জারমানির পশ্চিম বের্লিনে চলে গেলেন। সেখানে রেডিওতে (ডয়েচে ভেল্লে) বাংলায় কিছু অনুষ্ঠান হতো, সেই বিভাগে চাকরির ব্যবস্থাও হলো। মুশকিল হচ্ছে যে জার্মান ভাষাটা কিছুতেই শিখলেন না, বা শিখতে পারেন নি বা চান নি। ফলে সারাটা জীবন অ্যাসাইলাম সীকার স্টেটাসেই কাটাতে হয়েছে, স্টেটলেস হিসেবে। নইলে জারমানির নাগরিকত্ব নেওয়া শক্ত মোটেই ছিলো না।
    বিয়ে থা করেন নি সম্ভবত। করলেও, ভাষাটা শিখতেই হতো। সারাটা জীবন চুটিয়ে উপভোগ করেছেন জীবনকে। তসলিমা নাসরিনকে হেট করতেন। নারীকে ভোগ্য হিসেবেই জ্ঞান করতেন, তা সে যতই মীটু মুভমেন্ট নিয়ে টুকটাক বলুন না কেন। ঐ যে বললাম, দেখা না হলেই ভালো ছিলো।
  • PRABIRJIT SARKAR | ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৩৩542749
  • শুনছি ইউনুস যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে ফ্রন্ট খুলবে পাকিস্তানকে সাপোর্ট দিতে?
     
    এখানকার খবরে বেরিয়েছে দুই বাংলা মনিপুর ইত্যাদি নিয়ে একটি দেশ গড়ার পরিকল্পনা আছে। তার রূপরেখার ডায়েরি ভারতীয় গোয়েনদার হাতে এসেছে। সেটা যুদ্ধের সুযোগে চেষ্টা করবে নাকি?
  • PRABIRJIT SARKAR | ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৩542750
  • বাংলাদেশ বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভারত সব চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে জানাই কথা। ট্রানজিট বানিজ্য তো বন্ধ করেছে। পদ্মার উপর যে সেতু সেটা ব্যবহার বন্ধ বলে জানি। ট্রেন বাস দুদেশের মধ্যে আর কি চলছে? 
  • MP | 157.4.***.*** | ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৩৫542754
  • @প্রবীরজিৎ , সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল হতেই পাঞ্জাব হরিয়ানার চাপান উতোর শুরু জল নিয়ে l পাঞ্জাবের শিখ মুখ্যমন্ত্রীর উপরে পাকিস্তানকে বেশী জল দেবার অভিযোগ হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর l কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় দেখাই যাক ! 
  • কিংবদন্তি | ০২ মে ২০২৫ ০২:০৯731017
  • MP, না। আমা ধারণা তেমন কিছু হওয়ার সম্ভবনা আছে। ভারতকে দিয়ে পানি ইস্যু করে চাপ দিবে ইনুসকে? এইটা হবে না। লীগ এই কাজ করে নিজের সর্বনাশ করবে না। কারণ এর ফলে জনগণের কাছে ফেরার রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। 
     
    @PRABIRJIT SARKAR  ইনুস এখন নানান কথাবার্তা বলছে। যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলছে, সেভেন সিস্টার্স দখলের কথা বলছে, আরও কত কী! এতদিন এইগুলাকে প্রলাপ বকছে বলে মনে হলেও এখন আর বলার সুযোগ নাই। যে করিডোর দিতে চাচ্ছে মানবতার নামে তা দিয়ে দিলে সর্বনাশের ষোল কলা পূর্ণ হবে। যে কল্পিত রাষ্ট্রের কথা শোনা যাচ্ছে, যা শেখ হাসিনা অনেক আগেই বলে ছিলেন, এখন ধীরে ধীরে সব কিছু সেইদিকেই নির্দেশ করছে। সেক্ষেত্রে ভারতের জন্যও দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে বা দাঁড়িয়েছে ইনুসের এই পদক্ষেপ। খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে তা শুধু মাত্র বাংলাদেশ আর মায়ানমারের কিছু ভূমি নিয়ে প্রতিষ্ঠা হবে না, ভারতের ভূমিও সেই দেশে থাকবে। 
    ভারত চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতেই পারে। কিন্তু চাপে ফেলবে কাকে? বদ্ধ উন্মাদ এরা সবাই। নিজের ভালো না বুঝলে তাকে চাপ দিয়ে কাজ করাতে পারবেন? এর ভিতরেই ভারতের পণ্য অন্য দেশ থেকে বেশি দামে কিনেছে! ভারত থেকে কিনবে না শুধ মাত্র এই অজুহাতে! পাকিস্তান নিজেই চিনি আমদানি করে চলে, তাদের কাছে গেছে চিনি কিনতে! পাকিস্তানের অর্থনীতি দাঁড় করানোর মটো নিয়ে বসেছে যেন! 
    পদ্মা সেতু ব্যবহার করা বন্ধ কাদের জন্য? আমাদের জন্য তো সব ঠিক আছে। আর ভারতের জন্য যেটা সেটা চালুই হয়নি। রেললাইন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সোজা ক্রস করে ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুরের দিকে পণ্য নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন সেই পথ বন্ধ। ভারত ঘুরেই মাল নিবে, নিজস্ব রেল পথ আরও উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছে এমন কোথায় জানি পড়লাম। 
  • কিংবদন্তি | ০২ মে ২০২৫ ০২:১৫731018
  • ., দাউদ হায়দারের দেশ ত্যাগ নিয়ে আরেকটা কথা বলা দরকার ছিল আমার। দাউদ হায়দার নিজে মাফ চেয়েও পার পাননি। সে তার কোন কাব্যগ্রন্থে এই কবিটা রাখবে না এইটাও বলেছে। কিন্তু মৌলবাদীরা কোনমতেই শান্ত হয়নি। এইটাই সন্দেহজনক একটা কাজ। আব্দুল গাফফার চৌধুরী তার ইতিহাসের রক্ত পলাশঃ পনেরই আগস্ট পঁচাত্তর বইয়ে লিখেছেন এইটাও ছিল মুজিব হত্যার পিছনের নীল নকশার অংশ। হুট করেই মৌলবাদী শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ফাঁসি চাচ্ছে কবির এইটা স্বাভাবিক ঘটনা না। তার মতে এইটাই উগ্রবাদীদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল। দেশকে অস্থিতিশীল করার একটা পদক্ষেপ। আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে একই খেলা ২০২৪ সালেও দেখলাম আমরা। যে মৌলবাদের উত্থান দেখেছি আমরা তা অবিশ্বাস্য। আর এখন বুঝি এগুলা সবই একটা সূত্রে গাঁথা। 
  • . | ০২ মে ২০২৫ ০৪:১৯731019
  • কিংবদন্তি,
    হ‍্যাঁ ঠিকই ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা পাননি, উনি নিজেই বললেন।
    সেই দুটো সন্ধের কথা মনে পড়ছে। বের্লিনের জুলগিশের গার্টেন রেল স্টেশনের বাইরে ফুটের ওপর সস্তার একটা রেস্টুরেন্টে জড়ো হলাম আমরা চারজন। সস্তার এই দোকানে ভাত পাওয়া যায়, মাছ ভাজা পাওয়া যায়। এই দিনটা ছিল বের্লিনের পাঁচিল ভাঙার বিশ (নাকি উনিশ) তম জয়ন্তীর কদিন আগে। খাওয়া দাওয়া হলে পরে দোকানের বাইরে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম আমরা কফি নিয়ে। উনি যথারীতি ফ্লার্ট নাম্বার ওয়ান, আমার মতো বুড়ির ও নিস্তার নেই। সমস্ত অ‍্যাটেনশন মেয়ে দেখলেই সেদিকে ঘুরে যাবে। কয়েকজন সিগান (বেদেনি) আমাদের বিরক্ত করতে লাগল। সন্ধে বাড়ছিল, তাই আমরা মাথা ভাঙা গির্জায় ( দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বোমা পড়া) পাশ দিয়ে হেঁটে একটা চমৎকার রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম। বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছিল আগেই। দাউদ হায়দারের হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিল যদিও তিনি লাঠি নিয়েই হাঁটছিলেন। চমৎকার সেই রেস্টুরেন্টের বার তখনও ফাঁকা, অদ্ভুত সুন্দর বসবার জায়গাগুলো। পরপর দু বোতল রেড ওয়াইনের অর্ডার দিলাম। সঙ্গে টুকটাক, ডিনার যেহেতু সস্তার দোকানে করা হয়েই গেছল। অল্প বয়সী মেয়েটি আমাদের সার্ভ করছিল, তাকেও কথার ফাঁদে ফেলে বারবার টেনে আনার চেষ্টা। একসময়ে মেয়েটিকে অনুসরণ করে কাউন্টারে গিয়ে কিছুক্ষণ কথাটথা বললেন। আমাদের মধ‍্যে তৃতীয় জন আমার ঘরের লোক, সে চুপচাপ সব দেখছে। চতুর্থ জন ওখানকারই বাসিন্দা বাংলাদেশ থেকে জোর করে নির্বাসিত। সে ই  আমাদের সঙ্গে দাউদ হায়দারের পরিচয় করিয়েছে। সেই চতুর্থ ব‍্যক্তি বলছে — কোনও মেয়েকেই উনি ছাড়েন না। 
    অবশ‍্য প্রত‍্যাখ‍্যাত হলে সেই মেয়েকে নিয়ে যে কুৎসিত কবিতা লিখতেও পেছপা হন না, তা অচিরেই জানা গেল। পকেট থেকেই অল্প পরে একটা ভাঁজ করা কাগজ বের করে ফেললেন কবি। দ্বিতীয় বোতল তখনও চলছে বাদামভাজা সহযোগে। নাম না উল্লেখ করলেও যে কেউ বলে দিতে পারে কার সম্বন্ধে এই কবিতা। একজন নির্বাসিত মানুষ যে আরেকজন নির্বাসিতার প্রতি এত কুৎসিত কথা লিখেছে তা কবি যখন নিজেই পড়ে শোনাচ্ছিলেন অবিশ্বাস্য লাগছিল ঘটনাটা।
    এরপরে শুরু হলো লন্ডনে কবে কোন মেমসায়েবের সঙ্গে শর্তে জেতার মতো করে শুতে পেরেছেন সেই বিজয়ের কাহিনি।
    হ‍্যাঁ প্রচণ্ড অর্থাভাব ছিল নিজেই বলছিলেন। কেউ দামি স্মার্টফোন নাকি উপহার দিয়েছিল, উনি পেমেন্টের রসিদ চেয়ে রেখেছিলেন। পরদিন দোকানে গিয়ে রসিদ দেখিয়ে ফোন ফেরৎ দিয়ে টাকাটা রেখে দেন নিজের কাছে। এতে ওঁর দেড় দুমাসের খাবার খরচ চলে যাবে বলে। তারপরে খুব সস্তায় প্রায় ফেলে দেওয়া একটা ফোন কিনতে চাচ্ছিলেন ঐ দোকানেই, তখন গুদাম থেকে একটা অতি পুরোনো ফোন ওঁকে এমনিতেই দিয়ে দেয়। ঐ ফোনে শুধু ফোন করা যায় আর কোনও কিছুই নেই।
    আসলে আজকাল আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। এত বার বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে যে, ভয় করে, মনে হয় যার প্রতি যেমন ভালো ধারনা আছে তেমনই থাকুক দূর থেকে, কাছে গেলেই চুরমার হয়ে যাবে সব।
  • . | ০২ মে ২০২৫ ০৪:৫৯731020
  • ঠিক অপ্রাসঙ্গিক নয়, গুয়েন্টার গ্রাস কে নিয়ে আহাউহু শেষ হয়েছে ২০০৬ সালে। ১৯৯৯ এ সে সাহিত্যের জন‍্য নোবেল পেলেও, ২০০৬ এ তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায় যে লোকটা Waffen-SS এর সদস্য ছিল। নাৎসী । সে নিজে অবশ্য এ জিনিস বরাবর লুকিয়ে রেখেছিল ।  কিন্তু জানাজানি হবার পরে তার সত‍্যতাও প্রমাণিত হয়। 
    যাইহোক আমরা মাতামাতি করতে পারি বেশি, সত‍্যটুকু হজম করতে পারি না সবসময়।
  • asim nondon | ০৭ মে ২০২৫ ১২:৪২731148
  • ইনুস সাব সারাবিশ্বে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছেন। মৃদুভাষণে পর্দার আড়ালে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। 
     
    যে ছাত্র-নেতারা ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ফ্রন্টলাইনার হয়েছেন, তারা কেউই স্বচ্ছতা দেখাতে পারেনি। মুখে বলছেন, ২য় স্বাধীনতা, অথচ সকল স্তরেই এক রকমের চাপা অস্থির আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। ক্ষমতার বিরুদ্ধে কথা বললেই মব সৃষ্টি করে যে কোনো কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে এই তথাকথিত ছাত্রপ্রতিনিধি'রা। মৌলবাদ'কে উল্লেখযোগ্য রকম স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে। হয়তো এজন্যই একে ২য় স্বাধীনতা বলা হচ্ছে। 
  • . | ০৭ মে ২০২৫ ১৩:০৮731150
  • "মৌলবাদ'কে উল্লেখযোগ্য রকম স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে। হয়তো এজন্যই একে ২য় স্বাধীনতা বলা হচ্ছে।"

    এইটে যথার্থ বলেছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন