এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শাহবাগ শাপলা মুখোমুখি! 

    কিংবদন্তি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ৪২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এখন হোক, পরে হোক, আজকে হোক, কালকে হোক এইটা হওয়ারই ছিল। শাহবাগকে সামনে আনা হবেই, হতই। এ থেকে মুক্তির কোন রাস্তা রাখাই হয় নাই। মুক্তির পথ দুই তরফ থেকেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যৌক্তিক কারণেই রাখা হয়েছে। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত। এক যুগ পরে তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক দুই ভাবেই মুখোমুখি শাহবাগ আর শাপলা। 

    বাংলাদেশের বাম রাজনীতির খোঁজ যারা রাখেন তারা জানেন শতধা বিভক্ত এই বাম দল গুলো আজ পর্যন্ত সোজা একটা পথে এক সাথে হেঁটে যেতে পারেনি। বাম রাজনীতির মূল পুঁজি হচ্ছে মানুষ, গণ মানুষের সাথে সম্পর্ক। এখানে এর কোন বালাই নাই। ঢাকা কেন্দ্রিক রাজনীতি। বলা চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা এক সময়ের আজিজ কেন্দ্রিক রাজনীতি করে দেশের কী উদ্ধার করা যাবে আমি জানি। তারাও জানে কি না সন্দেহ। সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলেন, শুদ্ধ তাদের ভাষা। শক্ত শক্ত শব্দ ব্যবহার করেন। পলিতারিয়েত, ফ্যাসিজম ইত্যাদি বেশি বেশি ব্যবহার করা ছাড়া আর কী করেন আমি জানি। 

    এরা এক সময়, শাহবাগ আন্দোলনের সময় এক হয়েছিল মানুষের সাথে। এরপরে আবার কই জানি হারিয়ে গেছে। নেতারা প্রবীণ হইছে, তরুণরা আগের পথেই হাঁটছে। যে আন্দোলন পুরো জাতিকে পথ দেখাল সেই আন্দোলন পথ দেখাতে ব্যর্থ হল বিএনপিকে আর এই বামদের। 

    আজকে কেন এই প্রসঙ্গ আসল তা আগে বলে না নিলে আলোচনার সুর বুঝা যাবে না। তাই আগে সেই গল্প বলি। 

    দেশ জুড়ে হুট করেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় দেশ জুড়েই নানা প্রতিবাদ হচ্ছে। সেই সূত্রেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানেই শাহবাগ! নারীদের একটা মিছিল বের হয়, যার সামনের কাতারে থাকেন গণজাগরণ মঞ্চের সামনের সারির নেত্রী লাকি আক্তার। এখন যাদের কাছে শাহবাগ একটা পরাজয়ের স্মৃতি তাদের কাছে লাকি আক্তারকে পছন্দ না হওয়াটা কী খুব অস্বাভাবিক? লাকি আক্তার ছিল অনেকটা পোস্টার গার্ল শাহবাগ আন্দোলনের। সে এখন আবার মিছিল করছে? এই জামাত শাসিত দেশে? জামাতের ছায়া দল, যেটা ছাত্রদের নতুন দল সেখান থেকে তীব্র প্রতিবাদ আসল। নতুন করে শাহবাগ হতে দেওয়া হবে না। শাহবাগে সমস্যা কী? শাহবাগ রাজাকারদের কবর নিশ্চিত করেছিল। এর চেয়ে বড় সমস্যা আর কী? 

    এই যে লাকি আক্তারকে দেখেই পুচ্ছে আগুন লেগে যাচ্ছে অনেকের এইটা দিয়ে অনেক কিছু প্রমাণ হয়। যে লাকি আক্তার জুলাই আন্দোলনের পুরো সময় অন্ধের মত সমর্থন দিয়ে গেল আন্দোলনকে সেই লাকি আক্তারকে এখন গেরেফতারের জন্য হুঙ্কার দেওয়া হচ্ছে, মামলা সম্ভবত হয়ে গেছে এতক্ষণে। কেন? নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেন একজন সাধারণ নাগিরিক প্রতিবাদ করতে পারবে না? কেন একজন জুলাই আন্দোলনের সমর্থক হয়েও এখন মামলা খেতে হচ্ছে লাকি আক্তারকে? এই প্রশ্ন গুলো খুব কঠিন না। লাকি আক্তাররা যে রাজনীতির ধারক বাহক তারা যদি এরপরেও না বুঝে তাহলে আর কবে বুঝবে? তোর সাথে ঘর করব না করব মাইর দেখে বুঝস না? না, বুঝে না! 

    এই দ্বন্দ্বটা আসারই কথা ছিল। যদি এই দেশে এই সময় জামাত বিরোধী কোন কর্মকাণ্ড চালাতে হয় তাহলে হুশ করে চালাতে হবে। এই সত্য দ্রুত বুঝে নিতে হবে। বিএনপির মত বড় দল এইটা এখন বলছে, কিন্তু যেহেতু তাদের নেতা এক সময় বলেছে বিএনপি জামাত হচ্ছে 'মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম' তাই তারা এখন যতই প্রতিবাদ প্রতিরোধ দেখাক আমরা জানি সত্য কী! (একটা লাভ হইছে এতে এই সুযোগে আমরা একটু আধটু কথা বলতে পারছি, এই যা!)  এ ছাড়া আর কোন বাপের ব্যাডা জামাত সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলছে? ছাত্রদের ইফতার পার্টিতে জামাতের আমির নাহিদের গলা জড়িয়ে ধরছে, গালে চুমু খাচ্ছে! এদের বিরুদ্ধে কে কী বলবে? 

    হাসনাত, সার্জিসরা সরাসরি হুমকি দিচ্ছে কোনমতেই আরেকটা শাহবাগ হতে দেওয়া হবে না। শাহবাগ হতে দেওয়া যাবে না! শাহবাগে কী সমস্যা? শাহবাগ আন্দোলন আওয়ামীলীগকে পরবর্তীতে স্বেচ্ছাচারিতা চালাতে সাহায্য করছে। এইটা তো সত্য। কিন্তু শুধু এইটাই সত্য না। পুরো আন্দোলনকে আওয়ামীলীগ ক্যাশ করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আর কেউ কেন করল না? তারা কোথায় বসে ডিম দিচ্ছিল? ৫ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন শুরু হয়। আমরা মাঠের কর্মীরা, আমি নিজে দৈনিকই আশা করতাম এবার বিএনপি মানুষের পালস বুঝবে, এবার জামাতকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। যে কোনদিন আসবে, হয়ত আজকেই আসবে!
     
    আওয়ামীলীগ ২০০৯ সালের নির্বাচনের ইশতিহারে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। তারা কথা মত বিচার শুরুও করেছিল। তাই আওয়ামীলীগের দিক থেকে আওয়ামীলীগ সঠিক পথেই ছিল। আইন সংশোধন নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে আওয়ামীলীগকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিকে। আওয়ামীলীগ কীভাবে ঢুকল? কীভাবে পথ করে নিলো? ঠিক কোনদিন মনে নাই, আমার কাছে একটা পেপার কাটিং দেখছি, ৩ মার্চ ২০১৩, ইত্তেফাকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম লিখেছেন গণজাগরণ নয়, জামাতকে বেছে নিলো বিএনপি! ঠিক তাই! আমরা, আমি যখন অপেক্ষায় রয়েছিলাম জামাতকে ছেড়ে বের হয়ে আসবে বিএনপি, মানুষের ভাষা বুঝবে, গণ মানুষের চাওয়াকে বিচার করে জামাতকে ত্যাগ করবে তখন তারা তা না করে জামাতের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা করে আরও বড় কিছুর! 

    বিএনপি করে এমন বন্ধুদের দেখতাম শাহবাগে আসত, তামশা দেখত। আমাদের পাশে বসত, স্লোগান দিত। কিন্তু দলের অবস্থান তখনও পরিষ্কার না হওয়ায় ওরা চুপ করেই থাকত। সেই তরুণদেরকেও বিএনপি তখন হতাশ করে। দলের ঘোষণা আসার পরেই তাদের বক্তব্যও পরিবর্তন হয়ে গেল। সব নাস্তিকেরা বসে গাঞ্জা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে, সবাই বিরিয়ানির লোভে বসে থাকে রাতদিন! এক ঝটকায় খেলা পরিবর্তন হয়ে গেল। যে ইস্যু বাংলাদেশের কোনদিন কোন ইস্যুই ছিল না। বহু আগে আহমেদ শরীফরা, আরজ আলীরা নানা ধর্ম বিরোধী কথা বর্তা লিখে গেলেও কেউ তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করতে যায়নি। হুমায়ুন আজাদ, তসলিমা নাসরিনরা আক্রমণের শিকার হয়েছে কিন্তু তা ছিল ওই ব্যক্তি কেন্দ্রিক আক্রোশ। সেই দেশে নাস্তিক ইস্যুকে জাতীয় ইস্যু তৈরি করে দিল বিএনপি এবং জামাত। এই জের এখন পর্যন্ত টানছে দেশ। উগ্র মৌলবাদকে হাতে ধরে পথ দেখাল বিএনপি। একদিকে জামাতের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিলো বিএনপি অন্যদিকে কোনদিন যাকে কেউ কোন শক্তি বলেই ধরেনি তেমন একটা সংগঠন হুট করেই আলোচনায় এসে গেল। হেফাজতে ইসলাম! ইসলাম হেফাজত করছে এরা কারা? এদেরকে বিএনপি হাতে ধরে নাট্যমঞ্চে নিয়ে আসল। পরে শোনা গেছে রীতিমত ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা করে ফেলেছিল তারা। খালেদা জিয়া তারিখ দিয়ে সরকার পতনের ঘোষণা দিয়ে ছিল। কেমনে? এখানেই আসে শাপলার গল্প! শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে আসে হেফাজত। এসে বসে যায়, কেউ উঠবে না। তাদের ১৩ দফা দাবি না মানলে তারা এখানেই বসে থাকবে। কুৎসিত সেই ১৩ দফার সব মনে নাই আজকে। মনে আছে শুধু মেয়েদের পড়াশোনা ক্লাস ৪/৫ বেশি করা যাবে না! 

    শাপলা চত্বর আওয়ামীলীগ, বিশেষ করে যার কথা বলতে হয় তিনি হচ্ছেন সৈয়দ আশরাফের একক সাহসিকতায়, বিচক্ষণতায় শেষ হয়। আজকে, জামাতের এই ছায়া সরকার ঘোষণা দিয়েছে শাপলা চত্বর গণহত্যার(!) বিচার করবে! শাপলারা এখন ক্ষমতায়, শাহবাগের বিচার করবে না? তখন থেকেই শাপলা আর শাহবাগ মুখোমুখি, তাই না? আমার নিজেরই অভিজ্ঞতা আছে যেদিন শাপলা ঘোষণা দিল ওরা শাহবাগ দখল করতে আসবে সেদিনের। শেষ পর্যন্ত মৎস্য ভবন দিয়ে চলে যায় ওরা। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম শাহবাগে। পরে যখন শাহবাগ থেকে সরে আসি তখন দেখছি আশেপাশে সব জায়গায় গিজগিজ করছে হেফাজতের লোকজন। আজিমপুরের দিকে গিয়েছিলাম, সেখানেও ওরাই। সবাই মিলে একবারে শাহবাগ আসলে একটা ম্যসাকার হয়ে যেত সেদিন। 

    তো এই দ্বন্দ্ব তো নতুন না। তখন থেকেই চালু। আজকে যখন ওরা ক্ষমতায় তখন এই প্রশ্ন আজ হোক কাল হোক উঠবেই, এইটা আমি নিশ্চিত ছিলাম। নির্লজ্জতা হচ্ছে দেশে আইন কানুনের ঘড়িতে বারটা বেজে তেরোটার কাটায় ঢং ঢং করছে, সেই দিকে নজর না দিয়ে, সেই ইস্যুকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এতদিন পরে আবার শাপলা শাহবাগকে সামনে আনা হল! লাকি আক্তার মিছিলে গেছে কাজেই এই মিছিলের জাত গেছে! টিপিক্যাল শাপলা চরিত্র! আমরা বসে ছিলাম রাজাকারের বিচারের দাবিতে, নাস্তিক বলে ট্যাগ দিয়ে দিল! বিচার? বিচারের আলাপই নাই! আরে নাস্তিক না আস্তিক তা তো এখানে বিচার্য না, রাজাকারদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে, এইটা না আলাপ! না, তোরা নাস্তিক, কেস ডিসমিস! এখানেও একই অবস্থা, নারীর নিরাপত্তা বলতে দেশে কিছু নাই। পারতপক্ষে কোন নারী রাতে ঘর ছেড়ে বের হয় না ঢাকায়। সেখানে নারীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে লাকি আক্তার কেন মিছিল করল এইটাই মুখ্য হয়ে উঠল! এবং শুধু তাই না, এইটা নিয়ে এখন গুরুগম্ভীর আলাপ করছে, লম্বা রচনা লিখছে মহান বাম নেতারা এবং আমদের অতি প্রিয় মাহফুজ আলম! নিজের পোস্টে তিনি নবীর প্রতি প্রেমে শাপলায় গিয়েছিলেন বলে লিখেছেন! ও আর কেমনে কবে যে ওর মাথায় কী আছে? কী কি দিয়া বুঝাইলে বুঝবে মানুষ এই ছেলের মাথায় চরম মৌলবাদের বিষে পূর্ণ? 

    মাহফুজ আলমের এই পোস্ট সামনে পাঠ্য বইয়ে ঢুকে যেতে পারে! এইটা যে হিট হবে তা আমি একবার পড়েই বুঝে গেছি। বাপরে! কী দুর্দান্ত সব কথা! তিনি লিখেছেন শাপলা আর শাহবাগ এক হয়ে যেতে হবে, এখন আর শাহবাগী ট্যাগ দেওয়া যাবে না! কত উচ্চমানের কথা না? আচ্ছা, এইটা কই বসে বলছেন? জামাতের আমিরের সাথে চুমাচুমির সময়? তিনি বলেছেন জামাত শিবির ট্যাগ দেওয়া যাবে না। জামাতের নতুন প্রজন্মের কেউ পাকিস্তান পন্থি না। অ্যাঁ! 

    পাকিস্তান পন্থি এইটার নানা অর্থ আছে। আক্ষরিক অর্থেই পাকিস্তান পন্থি হওয়ার দরকার নাই। পাকিস্তান পন্থিদের মত আচারন করলেই চলে, তেমন চিন্তা চেতনা নিয়ে ঘুরলেই চলে। এইটা বুঝার জ্ঞান তার আছে আমি জানি, তিনি শুধুই বিভ্রান্তি তৈরি করে চলছেনম আর কিছু না। 

    তিনি তার পোস্টে আরও লিখেছেন, "আমরা অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে উপনীত হয়েছি। এখানে জামায়াতকে বা শিবিরের কর্মীদের ‘রাজাকার’, ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলে বধযোগ্য করার যে বয়ান সেটার বিরোধী আমরা। তেমনি, শাহবাগের ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান। এ ইসলামফোবিয়ার শিকার আমি নিজে হয়েছি। পাঞ্জাবি টুপি পরলেই জঙ্গীবাদী বলা থেকে শুরু করে মাদ্রাসাছাত্রদের ও আলেমদের ইমানবিকীকরণের জন্য শাহবাগ দায়ী। শাহবাগের সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ঊন-মানুষে পরিণত করেছিল। কিন্তু, অভ্যুত্থানউত্তর সময়ে একটি সংলাপমুখর সময় এসে উপস্থিত হয়েছে। শাপলা-শাহবাগের বাইনারির বাইরে এসে শাহবাগের প্রাণভোমরা-মুজিববাদ, ভারতপন্থা ও শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে পুরাতন শাপলা ও শাহবাগের কর্মীদের ‘কমরেডস’ হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। আসলে শাপলা-শাহবাগের কর্মীরা কমরেডস হয়েছিল বলেই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছিল।" 

    দেখছেন? পাঠ্যবইয়ে জায়গা পাবে না এই লেখা? যদি পাঠ্যবই কোনদিন ছাত্রদের হাতে দিতে পারে সরকার তাহলে এইটা জায়গা পেতেই পারে! শুধু মাথায় যে প্রশ্ন গুলো ঘুরঘুর করছে তার উত্তর গুলো পাওয়া হবে না এই যা! দেশে ব্যাঙের ছাতার মত মাদ্রাসা হইল, ৫০০ মসজিদ বানাল হল আবার দাঁড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গি বলা হত? শায়েখ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই, হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান দাঁড়ি টুপি পরে বোম মারবে তারপরেও যদি কেউ দাঁড়ি টুপিকে ট্যাগ করে তাহলে দোষ কার? না কি নিজামি, গোলাম আজমের মত এদেরকেও নিরাপরাধী মনে করে মাহফুজ আলম? হতেই পারে, অসম্ভব কিছু না। 

    জঙ্গিরা ইসলামিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিল, ইসলামি লেবাসেই চলাফেরা করত। এইটা অস্বীকার করার সুযোগ কই? এইটাকে ইসলামোফোবিয়া বলে পার পাওয়া যাবে? অতি সরলীকরণ করে যেভাবে বলা হয়েছে তেমন কী আসলেই বাংলাদেশে ছিল? মাদ্রাসা আর মসজিদের ভিড়ে পথ পাওয়া মুশকিল যেখানে সেখানে কেউ এসে বলল এইদেশে ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার, এইটা বিশ্বাস করতে হবে?
    মাহফুজের প্রতিটা লাইন নিয়ে কেউ নিশ্চয়ই লিখবে। আমার আর রুচি হচ্ছে না। শুধু একটু বলি, তিনি যে আশাবাদ নিয়ে বসে আছেন তা কোনদিনই হবে না। প্রকৃত শাহবাগ কোনদিনই শাপলার সাথে মিলেমিশে যাবে না। দুইটার ধারাই আলদা। নারীর অধিকার যেখানে গৌণ সেখানে শাহবাগ একাত্মা কীভাবে প্রকাশ করবে?  

    বামেরা আরও কিছু হেদাগুতা খাবে সামনে। তারপরে হুশ ফিরবে হয়ত। কিংবা এভাবেই জীবন চলে যাবে তাদের। আমার ধারণা খুব দ্রুত শাহবাগ শাপলা নিয়ে আরও কিছু চমকপ্রদ কাণ্ড ঘটবে। আপাতত তা দেখার জন্যই বসে আছি।   

    অনেকেই এই সুযোগে বলা শুরু করছে শাহবাগ মবোক্রেসি শুরু করেছে। সম্ভবত মাহফুজ আলমও লিখেছে এইটা। এইটা কীভাবে সম্ভব? শাহবাগের নামে ম্যালা দোষ দেওয়া গেলেও এই দোষ দেওয়ার উপায় আছে? শান্তিপূর্ণ ভাবে বসে থেকে আইনটা সংশোধন করতে বলা হইছে। বলা হইছে আইনে সমস্যা আছে, আপিলের সুযোগ থাকা উচিত রাষ্ট্রপক্ষের। এই, আর কিছু না। রাজাকারের ফাঁসি চাইসহ আরও যত স্লোগান ছিল তা স্লোগানই ছিল, এরচেয়ে বেশি কিছু ছিল না। শাহবাগ মোড় থেকে বিএসএমএমইউ বেশি দূর না, সেখানেই শুয়ে ছিল গোলাম আজম, কেউ একবারের জন্য গোলাম আজমকে গিয়ে মারতে যায় নাই। আজকে আজম খান লিখেছেন,  "কোন শাহবাগী আন্দোলন চলাকালে কারো গায়ে ফুলের টোকাও দেয় নাই। শাহবাগ থেকে ১০০ মিটার দূরে ছিল গোলাম আযম, নিজামিরা। শাহবাগ থেকে কেউ মব নিয়ে যাওয়া দুরে থাক, তাদের দিকে উঁকিও দেয় নাই কেউ। শাহবাগীরা কখনো কারো বাড়িতে মব নিয়ে লুটপাট, ডাকাতিও করে নাই। শাহবাগীদের হোটেল ইন্টারকন্টিন্টালে ইফতারিও করতে দেখা যায় নাই। অত টাকা তাদের কোনকালে ছিল না। তাদের দৌড় ঐ ছবির হাটের তখনকার ৫টার আলুর চপ-পেঁয়াজুতে সীমাবদ্ধ ছিল।
    শাহবাগ আন্দোলনের আগেপরে সব সময়েই আজিজের ১২০ টাকার টিশার্ট ছিল গায়ে। শাহবাগীদের ৯৯ ভাগ আগেও কামলা দিয়ে খাইছে, এখনো তাই। হুট করে আলাদিনের চেরাগ জোটে নাই।
    এসব ফারাক যে মানুষ করতে পারতেছে না তা না। যারা মেলানোর ঠিকই মিলিয়ে নিচ্ছে।" 
     
    বেশ সময় নিয়ে, গুছিয়ে শাহবাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। শাহবাগি গালি তৈরি করা হয়েছে, একটা সময় জামাত শিবিরেরা বলত, হুট করেই মহান জেন জি এই সুরে কথা বলা শুরু করল। যার জন্ম ২০০৫/৬ সালে সে ১৩ সালে কী বুঝে? তারাই ২৪ এ এসে সরকার ফেল দিচ্ছে, শাহবাগিদের দেখলেই ধোলাই দেওয়া হবে, জবাই করা হবে বলে হুঙ্কার দিচ্ছে! কিছুই বলার নাই এদেরকে। কোনদিন হুশ হবে এইটাই আশা। ইমরান এইচ সরকারের লেখা কিছু অংশ দিয়ে শেষ করি, - 
     
    "​​ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম শাহবাগ। বিদ্যমান রাজনীতির দুই মেরুতে ছিল আওয়ামীলীগ আর বিএনপি। একদল ক্ষমতায় এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে। আরেকদল জোটে নিয়েছিল যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে। ক্ষমতায় তখন আওয়ামীলীগ তবু এই অভূতপূর্ব গণআন্দোলন হয়েছিল। অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন। সরাসরি সরকার বিরোধী না হয়েও এত বিপুল স্কেলে কোনো আন্দোলন এই ভূখণ্ডে কখনোই হয়নি। সরকারবিরোধীতা না, ক্ষমতা থেকে কাউকে নামানো বা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও না, কেবল সুতীব্র দেশপ্রেম জ্বালানি হয়ে যে এত বড় গণবিস্ফোরণের জন্ম দিতে পারে, শাহবাগ তার অনন্য উদাহরণ। শাহবাগ টানা সতেরোদিন লাখো মানুষের অবস্থান ধরে রেখেছিল, এখন তো সরকার, পুলিশ, মব সবই আপনাদের, পারবেন সাতদিন কোনো ইস্যুতে এই অবস্থান ধরে রাখতে?
    পারবেন না। তাই শাহবাগকে আপনারা ভয় পাচ্ছেন। তবে আপনারা শাহবাগকে যতোটা ভয় পাচ্ছেন ততোটা ভয় পাওয়া ঠিক হচ্ছে না। আপনাদের উচিত আরো বেশি ভয় পাওয়া। শাহবাগ আপনাদের ভাবনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সরকারবিরোধীতা না করেও যে শাহবাগ জনস্রোত তৈরি করতে পারে, ক্ষমতার বিরোধিতায় নামলে সেই শাহবাগ জোয়ার তৈরি করবে।
    অনুমান করছি শাহবাগের ডাক আপনারা শোনা শুরু করেছেন, ঠিকই শুনছেন। আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। জয় বাংলা।" 

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ মার্চ ২০২৫ | ৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন