মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হল বঙ্গবন্ধু সহ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া চারশজনকে মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না যেহেতু তাঁরা কেউ সরাসরি সম্মুখ সমরে লড়াই করে নাই! এই যুক্তি দিয়ে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী বলা হবে এখন থেকে, মুক্তিযোদ্ধা না। বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযোদ্ধা বললেই কী আর না বললেই কী? একই কথা খাটে তাজউদ্দীন আহমেদসহ বাকি শীর্ষ নেতাদের ক্ষেত্রে। প্রশ্নটা হচ্ছে এদের চেষ্টার! কী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে যদি কোন ভাবে ছোট করা যায় এঁদেরকে। কোনভাবে যদি আরেকটু নামানো যায় তাঁদের অবস্থান থেকে। এরা যে সূত্র দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বাপ মাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাতিল করছে সেই সূত্রে তো মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গণি ওসমানীকেও মুক্তিযোদ্ধা বলা যাবে না! তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করেছেন? এখন দেখেন তো শুনতে কেমন লাগে যে যাকে সেনাপতি বানানো হল যুদ্ধের তিনিই যোদ্ধা না! দারুণ না? ... ...
"ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম শাহবাগ। বিদ্যমান রাজনীতির দুই মেরুতে ছিল আওয়ামীলীগ আর বিএনপি। একদল ক্ষমতায় এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ম্যান্ডেট নিয়ে। আরেকদল জোটে নিয়েছিল যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে। ক্ষমতায় তখন আওয়ামীলীগ তবু এই অভূতপূর্ব গণআন্দোলন হয়েছিল। অভূতপূর্ব ও নজিরবিহীন। সরাসরি সরকার বিরোধী না হয়েও এত বিপুল স্কেলে কোনো আন্দোলন এই ভূখণ্ডে কখনোই হয়নি। সরকারবিরোধীতা না, ক্ষমতা থেকে কাউকে নামানো বা ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও না, কেবল সুতীব্র দেশপ্রেম জ্বালানি হয়ে যে এত বড় গণবিস্ফোরণের জন্ম দিতে পারে, শাহবাগ তার অনন্য উদাহরণ। শাহবাগ টানা সতেরোদিন লাখো মানুষের অবস্থান ধরে রেখেছিল, এখন তো সরকার, পুলিশ, মব সবই আপনাদের, পারবেন সাতদিন কোনো ইস্যুতে এই অবস্থান ধরে রাখতে? পারবেন না। তাই শাহবাগকে আপনারা ভয় পাচ্ছেন। তবে আপনারা শাহবাগকে যতোটা ভয় পাচ্ছেন ততোটা ভয় পাওয়া ঠিক হচ্ছে না। আপনাদের উচিত আরো বেশি ভয় পাওয়া। শাহবাগ আপনাদের ভাবনার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সরকারবিরোধীতা না করেও যে শাহবাগ জনস্রোত তৈরি করতে পারে, ক্ষমতার বিরোধিতায় নামলে সেই শাহবাগ জোয়ার তৈরি করবে। অনুমান করছি শাহবাগের ডাক আপনারা শোনা শুরু করেছেন, ঠিকই শুনছেন। আপনাদের সাথে আবার দেখা হবে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। জয় বাংলা।" - ইমরান এইচ সরকার। ... ...
কয়েকদিন ধরে বেশ কয়েকটা কুৎসিত ঘটনা ঘটে গেল। এইটা আকাশ থেকে হুট করে আসে নাই। একটু পিছন ফিরে দেখেন, এই কয় মাসে কী পরিমাণ নারীদেরকে হেনস্তা করা হয়েছে। আমি নিজেই লেখছি কতবার যে সারা দেশে নারীর জন্য রেড এলার্ট জারি হয়েছে। পোশাক নিয়ে কথা বলছে, কেউ কেন সিগারেট খাচ্ছে বলে অপমান করছে, কেউ হেনস্তা হচ্ছে বোরকা পরে নাই কেন দেখে, কেউ জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচছে কারণ ওই সময়ে তিনি কেন সেখান গেছেন! সমতা বজায় রেখে, কোন বৈষম্য না রেখে সকল ধর্মের, সকল বয়সই নারীকেই হেনস্তা করে যাচ্ছে একটা বিশাল সংখ্যার মানুষ। এগুলা যখন হচ্ছিল, এগুলা যখন বাড়ছিল তখন প্রশাসন, সরকার মহাশয় চুপচাপ দেখেছে, কোথাও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টা শাহবাগে যাকে আটক করে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে তৌহিদি জনতা তাকে ছাড়িয়ে এনেছে, ফুলের মালা গলায় দিয়ে বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছে, বুকে তুলে দিয়েছে কোরান শরীফ! ধর্ষক ছাড়া পায়, ফুলের মালা গলায় দিয়ে ইভ টিজার মুক্তি পায় যে সমাজে সে সমাজে ধর্ষণ বেড়ে গেলে যে আশ্চর্য হবে তাকে দেখে আশ্চর্য হওয়া জায়েজ আছে না? কঠিন আইন করেই লাভ কী যদি আপনি বদমায়েশ গুলোকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার ব্যবস্থা করে দেন! ... ...
২০১৬ সালে ৫ বছরের বাচ্চা একটা মেয়েকে ধর্ষণ করে এক নরপশু। যখন শিশুটিকে পাওয়া যায় তখন তার অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক, গায়ে ছিল সিগারেটের ছ্যাকার চিহ্ন, প্রজনন অঙ্গ ক্ষতবিক্ষত। ধর্ষক ধরা পড়ে, শাস্তি হয় যাবজ্জীবন জেলের। সেই ধর্ষক জামিনে মুক্তি পেয়ে ধর্ষিতার বাবার সামনে দিয়েই গাড়ি করে বাড়ি ফিরেছে। একই গ্রামে বাড়ি, তাই চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছি এমন কুৎসিত প্রাণীটাকে, আসেপাশেই থাকছে এখন। শিশুটি শারীরিক ভাবে এখনও সুস্থ না, সারাদিন বাড়িতেই থাকে, ঘর থেকে বের হয় না। ধর্ষিতা সেই শিশুর বাবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করছে 'বিচার তো পাইছিলাম, তাইলে এমন হইল ক্যানে? জনক জানে না এই প্রশ্ন করা বারণ! ... ...
অবিশ্বাস্য রকমের অরাজকতা চলছে দেশে। বেশ কিছু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেছে কিন্তু বিচারের কোন খবর নাই। ডাকাতি হচ্ছে নিয়ম করে। এই লেখা যখন লিখছি তখন ফেসবুকে একটা খবর দেখলাম ঢাকার ধানমন্ডিতে ডাকাতি চলছে! মসজিদ থেকে মাইক দিয়ে বলা হচ্ছে কেউ যেন ঘর থেকে বের না হয়, ডাকাতরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরাফেরা করছে! প্রতি রিফ্রেশে একটা না একটা দুর্ঘটনার খবর দেখা যায়! ধানমন্ডির খবর দেখে লিখতে লিখতে দেখে ঠাকুরগাঁও সদরে অশেষ সরকার নামে একজনের বাড়িতে আগুন দিয়েছে! গতকাল ঈশ্বর ডাক্তার নামের একজনের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে! এখন দেখলাম রাত তিনটায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে! কবি ইমতিয়াজ মাহমুদ দেখলাম লিখেছে এত রাতে যে সংবাদিকেরা এই সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে যাবেন তারা যেন মোবাইল মানিব্যাগ ঘড়ি সাবধানে রাখেন! এত রাইতে ঢাকা শহরে যা খুশি তাই হতে পারে! প্রসঙ্গত বলে রাখি, অনেকেই এই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাচ্ছিল দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতির জন্য। হয়ত সেই ব্যাপারেই কিছু বলবেন। তবে আমার কাছে অবাক লাগছে মানুষ এইটা এই উপদেষ্টার দায় দেখছে দেখে! এর দায় সরকারকে দিচ্ছে না! এইটা যে এই উপদেষ্টার সমস্যা না, সরকারটাই যে একটা অথর্ব তা কেন বুঝছে না মানুষ? সরকারকে কেন আমি দায়ী বলছি? বলছি কারণ ঢাকা সহ সারাদেশে হুট করেই আইন শৃঙ্খলার অবনতি এমনে এমনেই হয়নি। যতগুলো শীর্ষ সন্ত্রাসিকে সরকার মুক্তি দিয়েছে তার প্রভাব পড়বে না? সুব্রত বাইন, পিচ্চি হান্নান সহ আরও যতগুলো টপ টেরর জেলে বন্দি ছিল তাদের মুক্তি দিয়ে এখন কইতেছেন এমন কেন হচ্ছে! যত জঙ্গি মুক্তি পেয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মুক্তি পেয়েছে তার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার? কে তাদের মুক্তি দিয়েছে? আইন মন্ত্রণালয়ের দায় নাই? ইউনুস সাহেবের দায় নাই? সেনাবাহিনী এখনও আগের মতই রাস্তায় আছে, তারপরেও কেন এমন হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? ... ...
আমাদের যেদিন থেকে ধর্মানুভুতি খুব স্পর্শকাতর হল সেদিন থেকেই সর্বনাশের শুরু। সত্য হচ্ছে ধর্মীয় অনুভূতিতে কখন যে কার কীভাবে আঘাত লাগবে তা কেউই জানে না। আল্লা ছাড়া আর কেউ জানে না যে কখন কিসে কার ধর্মানুভুতিতে আঘাত লেগে যাবে! এই যে আল্লা লিখছি আল্লাহ্ লেখি নাই, এইটার জন্যও একজন আমাকে ফেসবুকে চার্জ করে বসেছিল, কেন এমন লিখলাম! মোট কথা বাঁচার উপায় নাই। আপনি গল্প লিখবেন, সিনেমা বানাবেন একজন ভণ্ডকে নিয়ে, যে নামাজ পড়ে ঘুষ খায়, মাগিবাজি করে, পারবেন না! নামাজ পড়ে কেউ ঘুষ খাচ্ছে? হতেই পারে না। অথচ টিকিত কালোবাজারির প্রধানকে ধরা হল যখন তখন দেখা গেল তার কপালে কালো দাগ, নামাজ পড়তে পড়তে দাগ করে ফেলেছে কপালে! প্রশ্ন পত্র ফাঁসের জন্য ধরা হল, কী সুন্দর নুরানি চেহারা, সুন্দর দাঁড়ি টুপি পরা আল্লার বান্দা! কিন্তু আপনি এগুলা লিখতে পারবেন না, সাহিত্যে আনতে পারবেন না, সিনেমা বানাইতে পারবেন না, গল্প লিখতে পারবেন না। লিখলে, বানালে ঠিক কারো না কারো অনুভূতিতে আঘাত লেগে যাবে, তারপরের দায়িত্ব পরাক্রমশালী শেখ হাসিনা সরকারও নিতে পারেনি আর এই নড়বড়ে ধ্বজভঙ্গ সরকার নিবে এমন আশা আর কইরেন না! ... ...
"জাতিসংঘের রিপোর্ট যত পড়ছি, তত চমক লাগছে। এমনই মহা শক্তিধর এক বিশ্বসংস্থা- যাদের দেখা করার অনুরোধে পাত্তা দেয়নি জামায়াত ও ছাত্রশিবির। সেনাবাহিনী, ডিজিএফআইয়ের সঙ্গেও তারা কথা বলার সুযোগ পায়নি। এমনকি লিখিত প্রতিবেদন চেয়েও পায়নি। আর কারাগারে আটক সাবেক আইজিপির সঙ্গে কথা বলার সুযোগ চাইলে অন্তর্বর্তী সরকার বলে দিয়েছে- 'হবে না'। শেষপর্যন্ত তারা বিভিন্ন বাহিনীর এমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা কেউ ওই সময়ে বাহিনীর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে ছিলেন না। একমাত্র সে সময়ের বিজিবি চিফ কথা বলে কিছুটা মান বাঁচিয়েছেন। এসব আবার রিপোর্টে উল্লেখও করা হয়েছে!!" ... ...
'স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো চারকোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য পারেনি ভাঙতে' ... ...
খুব বিখ্যাত একটা উক্তি আছে বঙ্গবন্ধুর, - "মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতার বাবার নামের পাশে আমার নাম দিও। আর ঠিকানা লিখো ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বাড়ি" সেই ৩২ নাম্বার নাই হয়ে গেল! কেউ নাই করে দিতে পারল? রাষ্ট্র প্রশাসন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল? শুধু ৩২ নাম্বার? এক যোগে দেশের সমস্ত জায়গায় যেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম ছিল তাতে আঘাত করা হয়েছে। নতুন করে মুরাল ভাঙা হল, যেখানে নাম ছিল সেখানা ভাঙা হল। একজন একটা হিসাব দিল চারশোর উপরে নানা স্থাপনায় আক্রমণ হয়েছে আজকে। সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয়েছে আজকে! আওয়ামীলীগের নেতাদের বাড়ি যে কয়টা আস্ত ছিল সব গুলোর উপরে আবার এই রাতে হামলে পড়েছে ওরা। দেশের নানা জায়গায় তাণ্ডব এখনও চলমান, কালকে হয়ত জানা যাবে কোথায় কোথায় কী ঘটিয়েছে এই পঙ্গপালেরা। প্রশ্ন হচ্ছে রাগটা কই? শেখ হাসিনার সাথে রাগ? শান্তির পায়রার ব্যক্তিগত রোষানলে পড়ল মুজিব? মহান সেনাবাহিনী কই? আজকে সবাই চুপ! নারায়ে তাকবীর আল্লাহ আকবর বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল এই ছাগলেরা, পুরো পৃথিবী এই দৃশ্য দেখল না? এখন কে ক্ষমতায়? প্রশাসন কার কাছে? শান্তির দূত এইটা হতে দিল? ... ...
ফলাফল চোখের সামনে। যে শাহবাগ উত্তাল হত তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি বলে সেখানেই স্লোগান উঠল তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার! এই কষ্টের কোন মাপজোক আছে? এমন ভয়ংকর একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেল চোখের সামনে অথচ কেউ কিছুই বুঝল না! মেটিকুলাস ডিজাইন বলে আর যাই বলি না কেন, এমন একটা প্রজন্ম তৈরির সমস্ত দায় আওয়ামীলীগের, এতে কোন সন্দেহ নাই। আমরা, আমি জেন জি নিয়ে মশকরা করছি, এরা কিছুই শোনে না, পড়ে না, জানে না, জানতে চায়ও না এগুলা বলে গেছি সব সময়। অথচ বিরোধী শক্তি তা বলে বসে থাকেনি, ওরা যেভাবে শুনতে চায়, যেভাবে জানতে চায় সেভাবেই শুনিয়েছে, জানিয়েছে! আমি জানি খুব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লিখছি আমি। সমাজ বিজ্ঞানীরা, নৃ তাত্ত্বিকেরা এই সব নিয়ে ভালো বলতে পারবে যে কেন একটা প্রজন্ম সম্পূর্ণ ভুল দিকে চলে গেল! ... ...