অসুস্থ শরীরে, ভোর হওয়ার আগেই এই লেখা লিখছি। কারণ কিছু জরুরী কাজ এই সময়েও ফেলে রাখা যায় না।
আমি শুধু নই আমার রাজ্য অসুস্থ, আমার দেশ অসুস্থ, আমার পৃথিবী অসুস্থ। সে আর সূর্যস্নাত ভোর দেখবে কিনা সন্দেহ।
কারা এই অসুস্থতার ভাইরাস ছড়াচ্ছে ? কারা অন্ধকারকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য বলছে ভোরের দরকার নেই, রাত্রিই ভালো ? কাদের জগদ্দল উপস্থিতি বেঁচে থাকার বিশ্বাসটুকুও কেড়ে নিচ্ছে আমাদের ?
আমরা জানি তাদের নাম । আপাতত তাদের এই নামেই ডাকা যাক--- তেনো (তিনিই সব), ছেনো (সব ছিন্নভিন্ন,বিভাজিত করে দেয় যে ) আর নেনো ( লিঙ্গসর্বস্ব খ্যাপাটে এক দেশনায়ক যে দেশটির প্রভাব বিশ্বে সর্বাধিক)।
আমাদের রাজ্যে তেনো আর ছেনোর বাইনারির বাইরে বেরোতেই হবে। এরা দুজনে মিলে সব ন্যারেটিভ তৈ রি করবেন, আমাদের তুর্কীনাচন নাচাবেন – এটা যে কত অসহনীয় হয়ে উঠছে তা শিক্ষক দুর্নীতি আর সূতি সামশেরগঞ্জের ঘটনায় প্রকাশিত। এসব নিয়ে বেশি বলতে চাই না। বলার যেটা কী করণীয়।
করণীয় একটাই, তৃতীয় বিকল্প তৈরি করা। রাজনৈতিক বিকল্প। বিকল্প রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনের মাধ্যমে।
কীরকম হবে সেই মঞ্চের গঠন ? তেনো আর ছেনোদের বাইরে যে দলগুলি আছে তাদের মঞ্চ ? একবারেই নয় । কোনো পুরোনো দলকে মানুষ গ্রহণ করছে না তাদের পুরোনো রাজনৈতিক ব্যাগেজের জন্য, এটা বাস্তবতা।
কিন্তু সেই সব দলের সাধারণ সদস্য সমর্থকরা? যাঁরা রাজনৈতিক আদর্শবোধকে আজও মানেন, যাঁরা ধান্দাবাজ নন, যাঁরা দু পয়সা কামানোর জন্য, ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য কোনো দল করেন নি তাঁরা কোথায় যাবেন ? হতাশায় নিমজ্জিত হওয়াই কী তাঁদের ভবিতব্য ? একেবারেই নয়। তাঁদের জন্যই হোক এই মঞ্চ।
কীরকম হবে এই মঞ্চের গঠন। আনুভুমিক। দুএকজন সমন্বয়কারী থাকলেই হবে। শুধু অভয়া কাণ্ডে যে সীমাবদ্ধতা ছিল সেটা থাকলে চলবে না। গ্রমাঞ্চলেও ছড়িয়ে দিতে হবে এই মঞ্চকে। আর সবার ওপর থাকতে হবে কয়েকটা আদর্শে অকুন্ঠ আস্থা--- গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়, পরিবেশ চেতনা, নারীর অধিকার চেতনা। এর সঙ্গে থাকতে হবে অন্যের কথা শোনার ধৈর্য ও সহনশীলতা।
কী বললেন, আপনারা লেনিনীয় পার্টি সংগঠন করেন ? হ্যাঁ , সেটা আপনার পার্টিতে অনুশীলন করুন। এখানে সেটা চলবে না। একসময় ভারতের কম্যুনিস্ট পার্টির বহু সদস্য কংগ্রেসের মধ্যে কাজ করেছিলেন। কংগ্রেসের ঢিলেঢালা সাংগঠনিক রীতিনীতি মেনেই। কোনো ক্ষতি হয় নি তাতে। কেরলের গোটা কম্যুনিস্ট পার্টিটাই সেভাবে গড়ে উঠেছিল। আর এখানে কিচ্ছু দখল করার থাকবে না। ড্যুয়াল মেম্বার হয়ে কাজ করুন। কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু যেখানে আপনি কম্যুনিস্ট সেখানে আপনি কম্যুনিস্ট। এখানে আপনি শুধু একজন কমন এজেন্ডার শরিক , সংবেদনশীল, সহমর্মী মানুষ।
আর রাজনীতি করতেই হবে। ভোটে লড়তে হবে প্রয়োজনে। ক্ষমতা দখল নিজেরা না করলে হবে না। এখন তেনো, ছেনো, নেনোরা এতই অসংবেদনশীল যে কোনো প্রেসার গ্রুপ ট্রুপের কথা শোনে না।
সেটা সম্ভব ? কেন সম্ভব নয় ? দিল্লীতে আপের উথ্বান দেখেন নি ? লাটিন আমেরিকার দেশে দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে যে দু আড়াই বছর আগে তৈরি দল বা মঞ্চ ক্ষমতায় চলে এসেছে।
বাম কংগ্রেস বলবে আপনারা তো আমাদের ভোট কেটে নেবেন। আপনাদের সহজ অংকটা বলি যে পার্সেন্টেজের ভোট আপনারা পাচ্ছেন সেটা আপনাদের কমিটেড ভোট। এরা আপনাদেরকেই ভোট দেবে যে কোনো পরিস্থিতিতে এটা ধরেই নিলাম। এবার আপনাদের ভোট যদি কয়েক পার্সেন্ট বাড়ে, রামের কিছু ভোট যদি বামে ফেরেও ( সে সম্ভাবনাও যদিও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না ) সেটা তো আপনাদের জেতার মত হবে না ,লাভ হবে তেনোদের, তাদের জয়ের ব্যবধান বাড়বে। তার চেয়ে নতুন বিকল্প মানুষের কাছে যাক।
এলাকায় এলাকায় মঞ্চ তৈরি করুন।অবশ্যই আগে পারলে গ্রামে। বিকল্প মঞ্চ। রাজনৈতিক মঞ্চ। নতুন রাজনীতির মঞ্চ। বাম, কংগ্রেস ,নকশাল তো বটেই , তেনো ছেনোর সমর্থক সাধারণ অচোর, অসাম্প্রদায়িক ( এই দুটোই মাপকাঠি থাক) ভোটাররাও আসতে পারে। তর্ক বিতর্ক হোক। স্বপ্ন থাকুক। দুঃস্বপ্নের ভার আর বইতে পারছি না। শয়নে জাগরণে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।