তৃতীয় পর্ব—বিশ্বভ্রমণের জোগাড়যন্ত্র
নীলাঞ্জন হাজরা — তা হলে তোমরা মোটামুটি ভারত ভ্রমণ সাঙ্গ করে আবার বিষ্ণুপুর ফিরে গেলে। এবার বলো দুনিয়া ঘোরার প্রস্তুতি ঠিক কী ভাবে শুরু হল। কী-কী করতে হয়েছিল তোমাদের?
জয়ন্ত মণ্ডল — না। আমরা গেলাম মুম্বই। আর সেইখানে গিয়েই আমি আটকে গেলাম, বুঝলে। আমাদের কাছে তখন কিচ্ছু নেই। পয়সা-কড়ি নেই। বাইরে যে যাব, কোনও ফ্রি টিকিট নেই। ফরেন এক্সচেঞ্জ নেই। কিচ্ছু নেই। তোমাকে যে বলছিলাম না ডিটারমিনেশনের কথা, এই অংশটা শুনলে তুমি বুঝবে সেটা কী কঠিন। আর জানো, প্রায় পুরোটাই করতে হয়েছিল আমাকে একা। মনমোহন, যে আমার সঙ্গে আফ্রিকার কিছুটা ঘুরেছিল, প্রায় কিছুই সাহায্য করতে পারেনি। কারণ মুম্বই পৌঁছনোর পরেই ও কলকাতা চলে গিয়েছিল। সে সাংঘাতিক কঠিন লড়াই। একেবারে জুতোর শুকতলা সত্যি সত্যিই খয়ে গিয়েছিল ওই ফ্রি টিকিট আর ফরেন এক্সচেঞ্জের টাকা জোগাড় করতে। কিন্তু পেরেছিলাম।
নী.হা. — কী করে পারলে? মুম্বই একটা অত বিশাল শহর। চেনা নেই, জানা নেই।…
জ.ম. — আমার যখন বই হবে, বুঝলে, এই ভারত থেকে বাইরে বেরনোর লড়াইটাই বোধ হয় তার অর্ধেক জায়গা নিয়ে নেবে। কার কার সঙ্গে দেখা না করেছি, মুম্বই আর দিল্লিতে সেই ক’টা মাস! হৃষিকেশ মুখার্জি, বাসু চ্যাটার্জি, বাসু ভট্টাচার্য, শশী কাপুর, সায়রা বানু, জয়া চক্রবর্তী, মানে হেমা মালিনীর মা, বলিউডের আরও অনেকে, রতন টাটা, আইডিবিআই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, সেনাবাহিনীর তিনটে উইংয়ের চিফ, আরও কত কত জন। প্রায় সকলেই সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু সাংঘাতিক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। বহু লোক ওখানেই হাল ছেড়ে দিত। কিন্তু আমি ছাড়িনি। ডিটারমিনেশন — যাবই, যে করে হোক।
নী.হা. — কী রকম বলো।
জ.ম. — শোনো তা হলে। কিছু কিছু বলি। প্রথমেই বলব চিনুর কথা। একদিন কোলাবার কাছে ঘুরছি। ধান্দাটা হল, ওখানে যে আর্মি ব্যারাক আছে তার লঙ্গরে যদি ফ্রিতে খাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। তো আমি আর মনমোহন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি, হঠাৎ দেখি একজন বলছেন — কী দাদা? ভালো আছেন? আজকে তো দেখলাম কাগজে আপনাদের ছবি! আসলে তার আগের দিন, এনসিসি থেকে আমাদের একটা প্রেস কনফারেন্সের ব্যবস্থা করেছিল। অনেক কাগজেই সেটা বেরিয়েছিল। সেইটা ইনি দেখেছিলেন। চিন্ময় রায়। ডাক নাম চিনু। তো আমার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গেল। তুই-তোকারির সম্পর্ক। এখন ক্যালিফোর্নিয়াতে থাকে। আইআইটি-র ছেলে ছিল। আর চিনুর বাবা ছিলেন ওয়েস্টার্ন নেভাল কমাণ্ডে সিভিলিয়ান কর্মী, বড়োবাবু। তো এই চিনু আমায় একবার বলল, ইন্দিরা ডক থেকে অনেক জাহাজ ছাড়ে। কোনও একজন ক্যাপ্টেনকে বললেই তো হয়, কোনও একটা কাজ দিয়ে তোকে জাহাজে নিয়ে নেবে। তা সেই শুনে চলে গেলাম। দারোয়ান ডকে ঢুকতেই দিল না। তা আমি রোজ যেতে লাগলাম। শেষে গার্ড ভদ্রলোক বললেন, আপকো কেয়া চাহিয়ে কেয়া? বললাম কী চাই। সে বলল, তোমার মাথা খারাপ! এ ভাবে আবার হয় নাকি!
এদিকে, আমার পয়সা ফুরিয়ে এসেছে। খাবার জুটছে না। তো চিনুর বাড়িতেই খাওয়া শুরু করলাম। দারুণ পরিবার। এক বোন ছিল রুমি। আর এক ভাই ছিল। সবাইকার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। সন্ধ্যেয় ওদের বাড়ি চলে যেতাম। আড্ডা দিতে দিতে যখন নটা-সাড়ে নটা, মাসিমা বলতেন, বাবা, খেয়ে যাও। আর আমি বলতাম, না-না-না-না, আমার পেট একেবারে ভর্তি। আসলে কিন্তু আমার পেট একেবারে খালি। তো উনি বারবার সাধতেন। আর চিনু বলত, চুপচাপ খেয়ে নে। তারপর আমি খেতাম। এই ছিল রুটিন। রোজ এটা হতো। আর মাঝে মাঝে রুমি আমাকে রাগাত— বলত, মা, আমি জানি ও অনেক খেয়ে এসেছে, ওকে কেন জোর করছ? মাসিমা বলতেন, তুই চুপ করতো। এই চলত রোজ, বুঝলে। সেই খাওয়া খেয়ে, দশ পয়সার টিকিট কেটে বাসে কোলাবাতে এনসিসি-র অফিসে এসে রাত কাটাতাম। দোতলায় একটা হল ঘরের মতো ছিল, সেখানে একটা চারপাই দিয়ে দিয়েছিল, সেটাতে শুতাম। সারা দিন টইটই করে ঘুরতাম, যদি দুটো ফ্রি-টিকিট জাহাজে ম্যানেজ করতে পারি। আর কিছু টাকা তুলতে পারি। কারণ তখন, আমার কাছে একটাও টাকা নেই। চিনুর কাছে ধার করে চলছে। সে-টাকা সে কোনও দিন ফেরতও নেয়নি। তখন বাটলিবয় বলে একটা কোম্পানিতে চাকরি করত আইআইটি থেকে সবে বেরিয়ে।
অনেক ঘুরে ফিরে, আমি ঠিক করলাম কিনিয়া যাব। জেনেছিলাম কিনিয়া যেতে ভারতীয়দের ভিসা লাগে না, কিন্তু কিনিয়ায় পৌঁছনোর সময় সঙ্গে হয় ৫০০ কিনিয়ান শিলিং বা ২০০ মার্কিন ডলার থাকতে হবে। আমার কাছে তখন এক পয়সা নেই। তো তার আগে আমি সেই প্রণব বাবুর সাহায্য নিয়ে ফিনান্স মিনিস্ট্রি থেকে একটা চিঠি করিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে ১০০ ডলার তোলার অনুমতি জোগাড় করেছিলাম। মনে রাখবে, তখনকার দিনে আজকের মতো কথায় কথায় ফরেন এক্সচেঞ্জ পাওয়া যেত না। সাংঘাতিক কড়াকড়ি ছিল। এমনকী ভারতীয় নাগরিকদের বিদেশী টাকা সঙ্গে রাখাও কঠোর ভাবে বেআইনি ছিল। যাই হোক, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সে ডলার রাখার অনুমতিটা দিল্লিতে জোগাড় করেছিলাম, আর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আমাকে বলেছিল যে আমি মুম্বই থেকেও ভারতীয় টাকা দিয়ে ওই একশো ডলার নিতে পারি। কিন্তু অনুমতি থাকলে কী হবে, আমার তো টাকা নেই।
এর মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়াতে গেছি, শিপিং কর্পোরেশনে গেছি, যদি ফ্রি টিকিট পাওয়া যায়। কিচ্ছু হয়নি। এই সময় একদিন চিনুর বোন বলল, আমাদের একটা পার্টি আছে, আমার সঙ্গে চলো, আমি তোমায় একজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। সেইখানে একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো, কর্নেল সরোজিনী দাশগুপ্ত। তিনি এনসিসি-র উইমেন্স উইংয়ের প্রধান ছিলেন। থাকতেন সিমলার কাছে। তিনি আমায় একটা চিঠি লিখে দিলেন এইচ সি সারিন বলে একজনকে দেওয়ার জন্য। সারিন ছিলেন ডিফেন্স সেক্রেটারি। আসিএস অফিসার, বুঝেছো তো, ব্রিটিশ আমলে পাশ করা, আইএএস নন। দিল্লিতে। চলে গেলাম। দেখা করলাম। তো উনি সব শুনেটুনে কাউকে একটা ফোন করলেন, ভাই ম্যায় এক মুন্ডে কো ভেজ রাহা হুঁ। আভি যায়েগা বম্বে। উসে দো টিকট দিলা দো। তারপরে আমাকে বললেন, যাও শিপিং কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল এস এম নন্দার কাছে। আমি বলে দিলাম। তোমার টিকিট হয়ে যাবে। আমি ভাবলাম, মাই গড! এই ফোনটা অ্যাডমিরাল নন্দাকে করল! মুম্বই ফিরলাম। দেখা করলাম। এমভি হর্ষবর্ধন বলে একটা জাহাজে ফ্রি খাবার সহ দুটো টিকিট হয়ে গেল। মুম্বাই থেকে মোম্বাসা!
নী.হা. — উফ্! আমার আবার চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে… সেই মোম্বাসা…
জ.ম. — শোনো না। এখনও কিছুই হয়নি। অত সহজে কিছু হয়নি। তো যিনি টিকিট দিলেন, সেই অফিসার বলে দিলেন, এখন তো জাহাজ চলে গেছে। ফিরে এসে আবার যাবে। এক-দেড় মাস পরে একটা ডেট বললেন। আমি ভাবলাম, যাক টিকিট হয়ে গেল। তারপর সেই তারিখের কাছাকাছি জাহাজের খবর নিতে গিয়ে শুনলাম, মুম্বই থেকে মোম্বাসা রুট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন? না, লোকসান হচ্ছিল। এবার থেকে হর্ষবর্ধন চেন্নাই থেকে পোর্ট ব্লেয়ার যাবে! ব্যাস্! আমি আবার আটকে গেলাম।
এরপর একদিন সন্ধ্যে বেলার দিকে কুপরেজ বলে একটা মাঠ আছে মুম্বইতে তার কাছাকাছি ঘুরছি, তো রাস্তায় এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা হল। ঠিক কেন হলো আজ আর মনে নেই, বোধহয় উনি আমায় কোনও একটা রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন। যাই হোক, আমার ইংরেজি অ্যাকসেন্ট শুনেই উনি বুঝলেন আমি বাঙালি। বললেন, বাঙালি? বললাম, হ্যাঁ। বললেন কোথায় বাড়ি? বললাম বিষ্ণুপুর। তো কথায় কথায় সংক্ষেপে আমার সব কথা ওনাকে বললাম। কিন্তু আমি তখনও জিজ্ঞেস করিনি উনি কে? শেষে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নামটা কী? বললেন, মিহির সেন! আমি তো হতোবাক, বললাম, সাঁতারু মিহির সেন? বললেন, হ্যাঁ। তাপর বললেন, শোনো, আমি তোমায় তুমিই বলছি, এক কাজ কর, আমার বন্ধু বিডি গুপ্ত হল আইডিবিআই নামে যে ব্যাঙ্ক আছে তার চেয়ারম্যান। তুমি তার কাছে চলে যাও। আমি বলে দেব ফোন করে। ও তোমায় সাহায্য করবে। আর তুমি মিনিস্ট্রি অফ এজুকেশন-এর জয়েন্ট সেক্রেটারি মিস্টার অনিল বোরিয়ার কাছে চলে যাও। ওদের এ সব কারণে দেওয়ার মতো অনেক টাকা আছে। ওঁকেও আমি বলে দেব। তো সেই মিস্টার গুপ্তর কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন তাঁর বন্ধু বিদেশ মন্ত্রকের সেক্রেটারি ডিকে সান্যালের কাছে যেতে।
আবার দিল্লি যেতে হবে। তখনকার দিনে একটা ট্রেন ছিল যাতে ৫৩ টাকার টিকিটে মুম্বই থেকে দিল্লি যাওয়া যেত। রিজার্ভেশনের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু টাকা তো নেই। ফের চিনুর কাছে ধার নিলাম। গিয়েই সেই মিস্টার সান্যালের অফিসে চলে গেলাম। ওঁর সেক্রেটারি বললেন, সাহেব আপনার চিঠি পেয়েছেন, কিন্তু উনি আজই রিটায়ার করছেন!
নী.হা. — কী কাণ্ড!
জ.ম.— কিন্তু সেক্রেটারি বললেন, তবে কাল আপনি ওঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করতে পারেন, বলে একটা ঠিকানা দিয়ে দিলেন। মন একদম ভেঙে গেল, কারণ শুনেছিলাম সরকারি চাকরি থেকে একবার রিটায়ার করলে আর কোনও গুরুত্ব থাকে না। তবু গেলাম। আমাকে অনেক খাওয়ালেন। তারপর আমাকে পাঠালেন শ্যামসুন্দর নাগের সঙ্গে। তিনি হলেন জয়েন্ট সেক্রেটারি, আফ্রিকা। মানে, ভারতের সঙ্গে সমস্ত আফ্রিকার দেশের সম্পর্কের দায়িত্বে তখন উনি। বললেন, উনি তোমার আফ্রিকা যাওয়ার ভিসার বন্দোবস্ত করে দেবেন। আমি বলে দেব। তারপর বললেন, কিন্তু তুমি যাবে কী করে? আমি তো সেই জাহাজের ব্যাপারটা বললাম। তো উনি বললেন, আমি বলে দিচ্ছি, তুমি সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি বাদল রায়ের কাছে একবার গিয়ে দেখ। গেলাম। বাদল রায় আমাকে পাঠালেন সেকশন অফিসারের কাছে, মিস্টার একাম্ব্রম। তিনি সব শুনেটুনে বললেন, শোনো তুমি মুম্বই ফিরে যাও। শিপিং কর্পোরেশনে গিয়ে বলো, ওরা যেন আমাদের একটা চিঠি দিয়ে বলে যে ওরা তোমায় দুটো টিকিট দিয়েছিল, কিন্তু ওই রুটে জাহাজের সার্ভিস অনির্দিষ্ট কালের মতো সাসপেন্ডেড হয়ে গেছে। আমরা তার পরিবর্তে তোমায় প্লেনে দুটো টিকিট দেব। আমি আবার মুম্বই গেলাম। শিপিং কর্পোরেশন বলল, আমরা কেন সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রককে চিঠি দিতে যাব?
বোঝো নীলাঞ্জন, আমার হয়রানিটা। কিন্তু আমি ছাড়িনি। ওই বুলডগ টেনাসিটি যদি না থাকত আমার, আমার কিন্তু ওয়ার্ল্ড ট্যুর হতো না। আমি আবার দিল্লিতে গিয়ে মিস্টার সান্যালের সঙ্গে দেখা করলাম। উনি আবার ফোনটোন করলেন কাকে জানি না। যাই হোক, এইবার সত্যিই আমাদের টিকিট হয়ে গেল। মুম্বই থেকে নাইরোবি, কিনিয়ার রাজধানী। তা আমি তো মিস্টার সান্যালের কাছে গেলাম ওনাকে ধন্যবাদ দিতে। ছোটো করে বলি, উনি সেই দিনই আরও দুটো সেক্টরের ফ্রি টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন — লন্ডন থেকে আমেরিকা। আমেরিকা থেকে টোকিও।
এর পরে দেখা করলাম মিস্টার নাগের সঙ্গে। তিনি আমার সামনেই ফোন করে করে আফ্রিকার একটার পর একটা দেশের হাইকমিশনারকে বলে দিলেন। এবারে গেলাম কিনিয়ার হাইকমিশনারের কাছে। তিনি আমায় লিখেদিলেন — যে টাকা রাখা বাধ্যতামূলক কিনিয়ায় ঢুকতে হলে সেটা আমাদের রাখতে হবে না।
পড়ছি।
বাপরে, মাঝে মাঝে তো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
এইটা গুরুতে পড়া আমার অন্যতম সেরা, ইফ নট দি সেরা, লেখা।
এইটা গুরুতে পড়া আমার অন্যতম সেরা, ইফ নট দি সেরা, লেখা।
আচ্ছা এই যে উনি বলছেন 'আমার যখন বই হবে' -- এই বইটা কি বেরোচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে? মানে কাজ চলছে টলছে এমন? এঁর বই সংগ্রহ করতে খুবই উৎসুক।
অসাধারণ লাগছে,আরও পড়তে চাই,বাঁকুড়ার মানুষ হিসেবে গর্ব হচ্ছে,,,বিমল মুখার্জির দু চাকার দুনিয়া বইটির কথা মনে পড়ছে।
অসাধারণ