ভয়ার্ত না হলে মায়ের খনখনে গলার আওয়াজ কোনোদিন ভাঙেও না ফাঁটেও না। বামহাতের উল্টো পিঠ দিয়ে পাছার ঢাল থেকে ঘষটে লুঙ্গিটা কোমরের খাদ পর্যন্ত উঠিয়ে চেপে ধরে ডান হাত দিয়ে ক্যারমের রেড খাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কানে এলো মায়ের এই চিৎকার- কু...মিকই...ই...ইর... রন... জকও...ওকও...ওন... শি...লাকআ...আ...আ...
চিৎকারে মায়ের গলা একবার উপরে উঠে ফেটে যাচ্ছে তো আরেকবার ধাক্কা খেয়ে একবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না কী বলে না বলে। কিন্তু এর মধ্যেও তার চিৎকার থেকে আমার আর আমার বোন শিলার নামটা যেমন ঠিক অনুমান করতে পারছি তেমনি তার খনখনে গলা ভেঙে যাওয়া থেকে বুঝতে পারছি কিছু একটা বিপদ ঘটেছে। আমি যেহেতু এখানে বস্তির ক্লাবঘরে দোস্তদের সাথে মশকরা মারছি সেহেতু বিপদটা নিশ্চিত শিলার
শিলার এখন শেষ পোয়াতিবেলা। স্বামীর ঘরে দেখাশোনার কেউ নাই বলে বাচ্চা বিয়াতে সে মায়ের কাছে চলে এসেছে। আমি ক্যারমের স্ট্রাইক ফেলে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালাম। এইটারে আমরা বাড়ি বললেও বাড়িওয়ালা এইগুলারে বলে ঘর; আর পত্রিকাওয়ালারা বলে ছাপড়া। নদীর ঢালে বাঁশের মাচান বেঁধে খুপরি খুপরি বস্তি। ঘর বলতে পলিথিনের ছাদের নীচে ঘুমানোর জন্য বাঁশবেতের বেড়াকেই বোঝায়। রান্নাবাড়া করতে হয় বাড়ির সামনে বড়ো রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় আর হাগামুতার জন্য নদীপাড়ে ঝোপঝাড়ের আড়াল
আমরা পাশাপাশি দুটো ঘরের মাঝখানে বেড়া কেটে একটা বাড়ি বানিয়ে থাকি। একপাশে থাকে বাবা-মা আর আরেকপাশে আমি। মাঝে মাঝে শিলার স্বামী এলে আমি বাবা-মায়ের ঘরে চলে আসি আর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় মায়ের একটা শাড়ি কিংবা চাদর টানিয়ে শিলাকে আমার ঘরে তার স্বামীর সাথে থাকতে দেই। এখন অবশ্য শিলার স্বামী আসেনি বলে সে মায়ের পাশেই ঘুমায়; আর বাবা ঘুমায় আমার ঘরে। যদিও মা জানিয়ে রেখেছে বাচ্চা বিয়ানোর পরে শিলাকে আমার ঘরটা কিছুদিন ছেড়ে দিতে হবে কারণ বাচ্চার মুখ দেখতে শিলার স্বামীও কিছুদিন এখানে এসে থাকবে....
দৌড়ে মায়ের ঘরে ঢুকে দেখি বুক চাপড়ে মা চিৎকার দিচ্ছে- কু...মিকই...ই...ইর... শি...লাকআ...আ...আ... মায়ের কথা আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে বাবার দিকে তাকাতে ঘোলা চোখ তুলে কাঁপাকাঁপা হাতে বাবা বাড়ির পেছন দিক দেখাল- শিলারে কুমিরে নিয়া গেছে রে বাপ...
পেছনের জানালায় উঁকি দিয়ে এক ঝটকায় শিলাকে পানির উপরে উঠে আবার আছাড় খেয়ে পানিতে ডুবে যেতে দেখে আমাদের ঘর আর পাশের বাড়ির যে চিপা দিয়ে লোকজন গোসল-টোসল করতে নদীতে নামে সেই দিকে দৌড়ে নদীর পাড়ে যেতে যেতে আরেকবার শিলাকে পরিষ্কার ঝাঁকি মেরে শূন্যে উঠে আছাড় খেয়ে পানিতে ডুবে হাঁচড়পাঁচড় করে বাম থেকে ডানে সরে যেতে দেখলাম। আমি শিলার শরীর অনুমান করে কোমর পানিতে লাফ দিয়ে তার একটা হাত আর গলা নাগালে পেয়ে পাড়ের দিকে হেঁচকা টান দিতেই শিলার শরীরটা কাদার মধ্যে বেশ অনেকটা উঠে এলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে হ্যাঁচকা টানে শিলাকে পাড়ের কাদায় তুলে দেখি তার কোমরের নীচ থেকে গলগল করে রক্ত ঝরছে আর উরুর নীচ থেকে তার দুই পায়ের একটাও শরীরের নেই। এর মধ্যে মা-বাবার সাথে আরো অনেকেই নদীর ঘাটে জড়ো হয়ে গেছে। শিলা কাদায় চিৎ হয়ে টুণ্ডা দুইটা পা ঝাঁকি দিয়ে একটা জন্তুর মতো চিৎকার করছে। এর মধ্যে পাড়ের হাউকাউ করা লোকদের মধ্যে কে যেন চিৎকার করে বলল- ডাক্তার...
আমি তখনও হাঁটু পর্যন্ত কাদা পানির মধ্যে দাঁড়ানো। ডাক্তারের কথা শুনে পা বাড়াতেই আমার পেছন দিকে কী যেন একটা দেখিয়ে বাবা চিৎকার দিয়ে উঠল- রঞ্জন কুমির...
আমি পেছনে ফিরবার আগেই গুঁইসাপ সাইজের একটা কুমির লাফ দিয়ে আমার ডান হাতের কড়ে আঙুলটা এক কামড়ে ছিঁড়ে নিয়ে গেলো। আমিও ঘুরে খপ করে বাম হাতে কুমিরটাকে খাবলে ধরে সোজা বস্তি ছেড়ে ডাক্তারের খোঁজে দৌড় লাগলাম...
আমি কোনোদিন ডাক্তারের কাছে যাইনি। ডাক্তার কোথায় পাওয়া যায় তাও জানি না। বামহাতে কুমিরটাকে খামচে ধরে আমি শহরের মধ্য দিয়ে দৌড়াতে থাকি। দৌড়াতে দৌড়াতে লোকজনের কাছ থেকে শুনলাম ডাক্তাররা হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে থাকে। কিন্তু হাসপাতাল কোথায়?
একজন বলল হাসপাতাল অনেক দূরে। হেঁটে যাওয়া যাবে না। গাড়ি লাগবে। এখানে সবগুলো গাড়ি ভেড়ায়-টানা গাড়ি। কয়েকদিন আগে শহরটাকে ভেড়াইপুর আর ছাগাইপুর নামে দুই ভাগ করা হয়েছে। ভেড়াইপুরে সবগুলা গাড়ি ভেড়ায় টানে আর ছাগাইপুরে গাড়ি টানে বড়ো বড়ো ছাগল। কয়েকদিন আগে শহরে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া ভ্যান রিকশাগুলোর উপর নৌকার ছই জুড়ে দিয়ে ভেড়ার গাড়িগুলা বানানো হয়েছে। প্রতিটা গাড়ি একেকজোড়া ভেড়ায় টানে। সামনের গাড়িটাতে একটা সিট খালি দেখে লাফ দিয়ে উঠতেই হেল্পার ছেলেটা ছইয়ের উপর থাবা দিয়ে চিৎকার দিলো- উস্তাদ গোডাউন ফুল- ইস্টাট দেন...
হেল্পারের চিৎকারের সাথে সাথে সামনে বসা ভেড়ওয়াল ভেড়া দুইটাকে শপাং শপাং করে বেতের বাড়ি দিতেই ভেড়াগুলো লাফ দিয়ে প্রথমে গাড়িটাকে একটু সামনে নিয়ে গেলো। তারপর পাশাপাশি আরেকটা গাড়িতে অন্যদুটো ভেড়া দেখে শিং বাগিয়ে ব্যাক গিয়ার দিয়ে অর্ধবৃত্তাকারে অনেকটা পেছনে এসে আবার এক দৌড়ে সামনে এগিয়ে ঘুটুস করে ঢুঁস লাগাল অন্য গাড়ির ভেড়া দুটোর শিং আর কপালের মাঝখানে। তারপর আবার পিছিয়ে এলো অর্ধ বৃত্তাকারে...
ভেড়ারা এভাবেই মারামারি করে। অর্ধ বৃত্তাকারে পেছনে এসে অর্ধবৃত্ত দৌড়ে গিয়ে ঢুঁস মারে। তাকিয়ে দেখলাম আশপাশে সবগুলো প্যাসেঞ্জার বোঝাই গাড়ির ভেড়ারাই এক জোড়া অন্য জোড়াকে এগিয়ে গিয়ে গুত্তা মেরে আবার পিছিয়ে আসছে। কিন্তু কোনোটাই কোথাও যাচ্ছে না। আমি হেল্পার ছেলেটার পেটে একটা গুঁতা দিলাম- গাড়ি আগায় না ক্যান?
- গাড়ি না আগাইলে ভেড়াগুলা গুতাগুতি করে কেমতে?
- ভেড়ার গুতাগুতি দিয়া আমার কী? আমার জরুরি হাসপাতালে যাওয়া দরকার
আমার রক্তপড়া কড়ে আঙুলের দিকে তাকিয়ে একজন প্যাসেঞ্জার জানাল ভেড়াইপুরে কোনো হাসপাতাল নেই; শহর ভাগাভাগির পর হাসপাতালটা পড়ে গেছে ছাগাইপুরে। কিন্তু ছাগাইপুরে ভেড়ার গাড়ি নিষিদ্ধ তাই আমাকে হেঁটেই যেতে হবে...
প্যাসেঞ্জারের কথা শুনে আমি লাফ দিয়ে নামতেই হেল্পার ছেলেটা আমার কলার ধরে টান দিলো- টেকা কই?
- কিসের টেকা?
- গাড়ি চড়লেন টেকা দিবেন না?
- গাড়ি চড়লাম মানে? গাড়ি তো যেখানে ছিল সেখানেই অতক্ষণ আউগাইল আর পিচ্ছাইল
- তাতে কী? গাড়ি তো চড়লেন
- গাড়ি চড়লাম? গাড়ির জাগায় গাড়ি থাকল; আমি ভাড়া দিমু ক্যান?
- আপনার কাছে ভাড়া চাইছে কেডা?
- ভাড়া না চাইলে আবার টেকা কীসের?
আমার কলার ধরে রেখেই হেল্পার ছেলেটা এবার অন্য প্যাসেঞ্জারদের সাক্ষী মানে- দেখেন তো; বেকুবির একটা সীমা থাকা দরকার না? ভেড়াইপুরে কি আর গাড়ি ভাড়ার যুগ আছে এখন?
তার কথা শেষ হবার আগে আমিও খেঁকিয়ে উঠি- গাড়ি ভাড়ার যুগ না থাকলে তো সকলের মাগনায় গাড়ি চড়ার কথা
হেল্পার ছেলেটা কী একটা বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু এক বয়স্ক প্যাসেঞ্জার তাকে থামিয়ে দেন- থাক। কাইজা করে লাভ নাই। নতুন মানুষ। হয়ত গাড়িতে চড়ার অভ্যাস নাই। আমি বুঝাইয়া কইতাছি
হেল্পার ছেলেটা ভদ্রলোকের সালিশ মেনে নিয়ে কিছু না বললেও আমার কলার ধরে থাকে। ভদ্রলোক হেল্পারের হাত থেকে আমার কলার ছাড়ানোর চেষ্টা না করে আমার কাঁধে হাত রাখেন- শোনেন। এইটা কিন্তু গাড়িভাড়া না। যেহেতু এখন গাড়িগুলা কোথাও চলাচল করে না সেহেতু সরকার গাড়িভাড়া নিষিদ্ধ করেছে।
- তাইলে ও টেকা চায় কীসের?
ভদ্রলোক আমার কাঁধে একটা চাপ দেন- ওইটা হলো জিরানি ট্যাক্স
- জিরানি ট্যাক্স মানে?
এইবার খিটখিট করে উঠে হেল্পার ছেলেটা- রইদের মইদ্যে আমার গাড়ির সিট মাইরা ছইয়ের নীচে আধঘণ্টা জিরাইলেন; ট্যাক্স দিবেন না?
হাতে ধরা কুমিরের লেজ দিয়ে এইবার আমি হেল্পারের নাকে মুখে একটা বাড়ি লাগাই- হারামজাদা। আমি কি জিরানির লাইগা তোর গাড়িতে উঠছিলাম না যাওনের লাইগা উঠছিলাম?
হেল্পার ছেলেটা আমাকে মারতে গিয়েও থেমে যায়। যে হাতে গাড়ির ছই ধরে সে ঝুলে আছে সেটা দিয়ে মারলে তাকে গাড়ি থেকে ছিটকে পড়তে হবে। আর আমার কলারে ধরা হাতে মারতে গেলে আমি ভাড়া না দিয়েই কেটে পড়তে পারি। সে আমার কলারে একটা ঝাঁকি দিয়ে অন্যসব প্যাসেঞ্জারদের সালিশ মানে- দেখেন তো; আবাল মাইনসেরে নিয়া কিরাম ঝামেলা। গাড়িঘোড়ার নিয়ম জানে না; কিন্তু ফটাৎ কইরা লাফ দিয়া উইঠা ক্যাচাল পাড়ে তো পাড়ে এখন আবার আমারে কুমিরের ল্যাঞ্জা দিয়া পিটায়
- তোরে আমি কুমির দিয়া খাওয়ামু হারামজাদা
আমি ওর দিকে তেড়ে গেলে এক প্যাসেঞ্জার থাবা দিয়ে আমার হাত আটকে ফেলে- ওই মিয়া অত প্যাচাল পাড়েন ক্যান? কব্বর ছাড়া অইন্য কুনু জায়গায় কাউরে গাড়ি চইড়া যাইতে শুনছেন?
কুমিরের লেজ দিয়ে ওই লোকটার মুখে একটা বাড়ি মারতে গেলে আগের সেই ভদ্রলোক প্যাসেঞ্জার হাত দিয়ে আমাকে থামিয়ে দেন। তারপর গলা নামিয়ে আগের প্যাসেঞ্জারকে বোঝান- বাদ দেন। কাপড়চোপড় দেইখা বুঝেন না শিক্ষাদীক্ষা নাই; মডার্ন যুগের নিয়ম জানব কইতথন?
কলারে আরেকটা ঝাঁকি দিয়ে এইবার হেল্পার গলা বাড়ায়- শিক্ষাদীক্ষা তো আমারও নাই। আমার বাপে করত বাসগাড়ির হেলপারি আমি করি ভেড়াগাড়ির হেলপারি। তই বইলা কি আমি বাপের মতো কারো কাছে গাড়ি ভাড়া চাই? আমি তো ঠিকই জিরানি ট্যাক্স চাইলাম। শিক্ষাদীক্ষা ছাড়া আমি তো ঠিকই মডান হইতে পারলাম
বয়স্ক তাকে আবারও থামান- বাদ দে বাপ। সবার সবকিছু হয় না। শিক্ষাদীক্ষা না থাকলেও তুমি সমাজের নানান কিসিমের মানুষের সাথে চলাফিরা করো বইলা মডার্ন হইতে পারছ। কিন্তু এরে দেইখা বোঝো না; এর তোমার মতো মর্ডান নলেজ থাকলে মূর্খের মতো অতক্ষণ তর্ক করত না... এবার তিনি আমার দিকে ফিরেন- ভুল দুইজনেরই হইছে। আপনেরও ভুল হইছে জিজ্ঞাসা না করে গাড়িতে উঠা আর ওরও ভুল হইছে জিরানি ট্যাক্সের কথা আপনারে বুঝায়ে না বলা। এখন কী আর করবেন বলেন? ভেড়ার মালিকের ভাড়া দিয়ে যা থাকে তা দিয়েই তো ওদের সংসার চলে। আর ভেড়াগুলার জন্যও ঘাসপাতা কিনতে হয়; বোঝেনই তো রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য বিউটিফিকেশন আইন পাশ হইবার পর চারিদিকে ফুলগাছ চাষের কারণে এখন ঘাসের দাম চালের দাম থেকেও বেশি... তা এক কাজ করেন ওরে যা হোক কিছু একটা দিয়ে দেন... আপনারও হাসপাতালে যাওয়া দরকার... এরকম রক্ত পড়লে আপনি তো দুর্বল হয়ে যাবেন
পকে থেকে কয়েকটা খুচরা টাকা ছেলেটার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে একটানে তার হাত থেকে আমার কলার ছাড়িয়ে দৌড়াতে থাকলাম। পেছন থেকে ছেলেটার গলা শুনলাম- হালা অশিক্ষিত আবাল; দামড়া দামড়া পা রাইখা গাড়ি দিয়া হাসপাতাল যাওনের ফুটানি...
ছাগাইপুরে ছাগলেরা গাড়ি টানে। ছাগলরা ভেড়াদের মতো পেছনে গিয়ে তেড়ে এসে ঢুঁস মারে না। ছাগলরা জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘোড়ার মতো সামনের দুই পা তুলে খুটুস করে অন্যটার মাথায় ঢুঁস মারে। দেখলাম জোড়া ছাগল সামনের ঠ্যাং তুলে পেছনের পায়ে দাঁড়ানোর সাথে সাথে যারা গাড়িতে শক্ত করে ধরে বসেনি তারা ভ্যানের পেছন দিকে হুড়মুড় করে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছে; কাউকে কাউকে অবশ্য হেল্পার ছেলেগুলা ডানায় ধরে আটকে দিচ্ছে আর কেউ কেউ পড়তে পড়তে লটকে যাচ্ছে অন্য কারো লুঙ্গি কিংবা পাঞ্জাবির খুঁট খামচে ধরে। কিন্তু সেখানেও আবার কাপড় ছেঁড়াছিঁড়ি কিংবা মেয়েদের শরীরে জাগায় অজাগায় হাত দেওয়া নিয়ে বিস্তর হাতাহাতি... আমি এখানে আর গাড়িতে উঠার চিন্তাও না করে দৌড়াতে থাকলাম ছাগলদের মাঝখান দিয়ে...
রাস্তার মধ্যে হলুদ দাগ টেনে ভেড়াইপুরের সাথে ছাগাইপুরের সীমানা আলাদা করা হয়েছে। দাগের উপরে পুলিশ হাঁটাহাঁটি করলেও আমাকে দাগ পার হতে দেখে কেউ আটকাল না। তারা শুধু খেয়াল রাখছিল যাতে কোনো ছাগভেড়া যেন দাগ অতিক্রম করতে না পারে। পুলিশদের পেছনে দুই পাশেই একদল করে ছাগল আর ভেড়াও দাগের বিপরীত দিকে শিং বাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে করতে কিংবা অন্যের গুতা খেয়ে কোনো ভেড়ার পাছা দাগ অতিক্রম করার সাথে সাথে ছাগাইপুরের পুলিশের পেছনে থাকা ছাগলগুলা একসাথে এসে ঢুঁস মেরে ভেড়াকে আবার ভেড়াইপুরে পাঠিয়ে দিচ্ছে কিংবা ভেড়াইপুরের শিঙেল ভেড়ারও অন্য ছাগের গুতা খেয়ে পড়া ছাগলটাকে গুতা মেরে পাঠিয়ে দিচ্ছে সীমানার অন্যপাড়ে...
আগে অবশ্য দুই পাড়েই ছাগভেড়া মিলেমিশে ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন পাঁঠা উপাধির মালিকানা নিয়ে ছাগুপাঁঠা আর ভেড়–পাঁঠাদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়ে যায়। ছাগুপাঁঠারা দাবি করে পাঁঠা উপাধিটার মালিক শুধু তারাই; নীচু জাতের ভেড়াদের কোনো অধিকার নাই এই উপাধি ব্যবহার করার। আর ভেড়াদের দাবি হলো- পাঁঠাত্ব একটি সার্বজনীন যোগ্যতা। যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করার পর কাউকে এই উপাধি ব্যবহার করতে বাধা দেয়ার মানে হচ্ছে সুস্পষ্ট বর্ণবৈষম্য। ছাগীভেড়ীদের এই নিয়ে বেশি বিরোধ না থাকলেও তারা যার যার জাতের সাথেই সুর মেলাতে থাকে। শুধু দুই দলের খাসিরা আপ্রাণ চেষ্টা করল দুই ঐক্য ধরে রাখতে। এই নিয়ে তারা রাস্তায় রাস্তায় বহুত খাসিবন্ধন- সার্বজনীন খাসি সম্মেলন করে সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করল যে গায়ের লোম আর শিংয়ের ধরন আলাদা হওয়া সত্ত্বেও তারা যেমন অন্তরে বিশ্ব খাসিভ্রাতৃত্বের আদর্শ লালন করছে; তেমনি অন্যদেরও বৈষম্য ভুলে নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক পাঁঠা সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবেই ভাবা উচিত
এই নিয়ে প্রতিদিন মারামারি গুতাগুতি সভাসমিতি করেও ছাগল কিংবা ভেড়ারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় অবশেষে সরকার শহরের মধ্যে হলুদ দাগ টেনে ছাগাইপুর আর ভেড়াইপুর আলাদা করে সবাইকে যার যার সীমার মধ্যে ভাগ করে দেয়। এখন থেকে যে যার মতো করে নিজের শহরে থাকবে। দুই পক্ষের খাসিরা এই বিভাজন প্রস্তাবের প্রবল বিরোধিতা করলেও শেষমেশ না মেনে তাদেরও কোনো উপায় থাকে না। কারণ ভাগাভাগির পর যখন তাদের মধ্যে কেউ খাসি ঐক্যের বাণী নিয়ে দাগ পার হয়ে অন্যপাড়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করল তখন দেখল ছাগাইপুরের ছাগলেরা এইপাড়ের খাসিকেও এখন ভেড়ার জাত বলে গণ্য করে আর ওইপাড়ের খাসি ছাগলকেও ভেড়ারা ছাগল বলে গালাগাল করে। অবশেষে তারও বাধ্য হলো ঐক্য বাদ দিয়ে অন্য পক্ষকে গালাগালি করতে করতে নিজের জাতের ভেতরেই খাসিবাস্তবতা মেনে নিতে...
লোকজনকে জিজ্ঞেস করে দৌড়াতে দৌড়াতে হাসপাতালের সামনে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস জানলাম ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের তেরো তলায়। তেরো তলায় উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে দেখি সারি সারি টেবিলের ওপাশে কয়েকজন বসে গপ্পগুজব করছে। কিন্তু কোথাও কোনো ইমার্জেন্সি কাজকারবার নেই। একজনকে জিজ্ঞেস করায় বলল- এটা তো ইমার্জেন্সি না। ইমার্জেন্সি নীচ তলায়
- কিন্তু নীচ তলা থেকে তো আমাকে বলল এখানে; তেরো তলায়
একটা মেয়ে আমার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো- যে বলেছে সে একেবারে ভুল বলেনি আবার পুরোপুরি ঠিকও বলেনি। এইটা ইমার্জেন্সি সেকশন না হলেও এটা হলো ইমার্জেন্সি সেকশনের ইনফরমেশন সেন্টার। এখানে আসলেই সবাই জানতে পারে ইমার্জেন্সি সেকশনটা কোথায়
- ইমার্জেন্সিটা নীচতলায় কোথায়? কত নম্বর রুম?
মেয়েটা এবার খামাখাই নিজের ওড়না ঠিক করতে করতে বলল- এভাবে তো নাম্বার বলা সম্ভব না। রুম নাম্বারটা নির্ভর করছে আপনি কোন দিক থেকে রুমগুলো গুনতে শুরু করবেন তার উপর
আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশের ছেলেটা এবার এগিয়ে এলো- এই হাসপাতালের মোট ছয়টা গেট আছে। প্রতিটা গেটের সামনে যে রুমটা পড়ে; সেটা হচ্ছে ওই গেট দিয়ে ঢোকা লোকের জন্য এক নম্বর রুম। এইবার কেউ যদি সেই গেট দিয়ে ঢুকে ডান দিকে যায়- তাহলে তার ডান দিকের দ্বিতীয় রুমের নম্বরটা হবে দুই নম্বর আর বামেরটা হবে তিন নম্বর রুম। এইবার সে যদি বামে যায় তবে শুধু বেজোড় সংখ্যার রুমগুলো পাবে আর ডানে গেলে পাবে জোড় সংখ্যার রুমগুলো। যেমন দুই চার ছয়। আবার এই লোকের জন্য যে রুমটা ছয় নম্বর রুম সেটাই হয়ত অন্য গেট দিয়ে ঢোকা লোকের জন্য হয়ে যাবে ছিয়াশি কিংবা তেত্রিশ নম্বর রুম। মূলত হাসপাতালে যে কোনো মানুষের যে কোনো সময় যে কোনো পথে প্রবেশের অবাধ অধিকার এবং হাসপাতালে ঢুকে যে কোনো দিকে যাবার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েই এই হাসপাতালের কক্ষ নম্বরগুলো বিন্যাস করা হয়েছে। এতে নাগরিকরা বিনা বাধায় নিজের অধিকারবলে যে কোনো দিক থেকে হাসপাতালের কক্ষগুলোকে গুনতে গুনতে নিজের নম্বর অনুযায়ী চলে যেতে পারেন....
আমার হাত থেকে রক্ত গড়াচ্ছে। নদীর পাড়ে ফেলে আসা শিলার চিৎকার এখনও আমার কানে ভাসছে। অত কিছু শোনার আমার সময় নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম- রুমগুলোর উপরে কক্ষ নম্বর লেখা নেই?
- তাতো অবশ্যই আছে। কোন কক্ষের নম্বর কত; তা জানা যেমন মানুষের তথ্য অধিকার তেমনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্র“ত অবাধ তথ্য প্রবাহেরও অন্যতম বাধ্যতামূলক তথ্য সেবা হচ্ছে সবার দর্শনউপযোগী বড়ো বড়ো অক্ষরে বিভিন্ন রংয়ে কক্ষ নম্বরগুলো কক্ষের উপরে টানিয়ে রাখা...
- ইমার্জেন্সি সেকশনের রুম নম্বরটা কত?
বেশ বিনয়ের সাথে ছেলেটা জানাল- সেটাতো এইভাবে বলা যাবে না স্যার। আপনি যদি এক নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে বাম দিকে আসতে থাকেন তাহলে আপনার জন্য রুম নম্বরটা হবে তেতাল্লিশ। আর একই গেট দিয়ে ঢুকে যদি ডান দিকে বৃত্তাকারে ঘুরে ইমার্জেন্সি সেকশনের সামনে যান তাহলে নম্বরটা হবে ছিয়াশি... আবার যদি দুই নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে বামে আসেন তাহলে...
আমি তেরো তলা ভেঙে আবার দৌড় লাগালাম। নেমে ডান দিকে সবগুলো রুমের সাইনবোর্ড দেখতে দেখতে আগাতে লাগলাম। কোথাও সেকশনের কোনো নাম লেখা নেই। প্রতিটা রুমের উপর বারোটা করে রুম নম্বর লেখা। একই রুমের এক রংয়ে রুম নম্বর দশ তো আরেক রংয়ে সেটার পাশে লেখা কক্ষ নম্বর- তিনশো সাত...
রুম নম্বর দিয়ে ইমার্জেন্সি সেকশন বের করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি প্রতিটা রুমেই উঁকি দিয়ে এইটা ইমার্জেন্সি কি না জিজ্ঞেস করতে করতে দৌড়াতে থাকলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা ছাউনির মতো জায়গায় চা খেতে বসা কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করতেই পাশের ছাউনি দেখিয়ে বলল- ওইটা ইমার্জেন্সি...
ছাউনির নীচে একটা টেবিল আর একটা ফাঁকা চেয়ার ছাড়া কোনো মানুষও নেই। ফিরে আবার আগের ছাউনিতে- এখানে কেউ নেই?’ জিজ্ঞেস করতে পেছনের চেয়ারে পা তুলে বসে বিড়িটানা একটা লোক আমার দিকে তাকাল; লোকটার পরনে একটা শার্ট থাকলেও সবগুলো বোতাম খোলা- ইমার্জেন্সিতে আপনার কী দরকার?
- কুমিরে আমার বোনের দুই পা খেয়ে ফেলেছে। আমার একটা আঙুলও গিলে ফেলছে। এই দেখন রক্ত পড়ছে আর কুমিরটাকেও ধরে নিয়ে এসছি
লোকটা উঠে টান দিয়ে আমার হাত থেকে কুমিরটা নিয়ে ইমার্জেন্সি ছাপড়ায় গিয়ে টেবিলের উপর চিৎ করে শুইয়ে একজনের দিকে ইশারা করতেই সে একটা ব্যাগ বাড়িয়ে দিলো।
- এইটারে শক্ত করে ধর
কুমিরটাকে পাশের লোকের জিম্মায় গছিয়ে লোকটা ব্যাগ খুলে একটা চাকু বের করে এক টানে কুমিরের পেট চিরে হাতের দুই আঙুল ঢুকিয়ে সামনে থেকে পেছনে একটু নাড়াচাড়া করল- ঠিকই আঙুলটা এখনও এর পেটের মধ্যে আছে। কুমির চিবিয়ে খায় না তো; গিলে খায় এইজন্য আঙুলটা ঠিকঠাক মতোই আছে। আর ওদের খাবার হজম করতেও অনেক বেশি সময় লাগে তাই আপনার আঙুল এখনও একেবারে টাটকা আছে
চিমটি দিয়ে কুমিরের পেট থেকে আমার কনে আঙুলটা বের করে কুমিরটাকে ময়লা ফেলার বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলে এইবার লোকটা সহকারীর দিকে তাকাল- সুই সুতা দে
সহকারীকে সুই সুতা বের করার নির্দেশ দিয়ে লোকটা আমার আঙুলবিহীন হাতটা টেবিলের উপর টেনে কাটা আঙুলটা জায়গামতো বসিয়ে আমার দিকে তাকাল- ঠিকই। এইটা আপনারই আঙুল। একেবারে খাপে খাপে মিলে যায়... ধরেন... এইটারে এইভাবে চাপ দিয়ে ধরেন। আমি সেলাই করে দেই
আমি বামহাতে কাটা আঙুলটা ডান হাতের আঙুলের জায়গায় চাপ দিয়ে ধরলাম আর সে সহকারীর হাত থেকে সুই সুতা নিয়ে খচখচ করে চারপাশ ঘুরিয়ে আঙুলটা আবার আগের জায়গায় সেলাই করে দাঁত দিয়ে সুতা কেটে আমাকে বলল- আঙুলটা নাড়াচাড়া করে দেখেন তো জোড়া ঠিকমতো হয়েছে কি না
আমি আঙুল নেড়ে দেখি ঠিকই নাড়ানো যায়। কিন্তু মুঠো করতে গিয়ে দেখি বাকি চারটা আঙুল মুঠো করার সময় নীচের দিকে বাঁকলেও এই আঙুলটা বেঁকে উঠছে উপরের দিকে। আমি ডাক্তারে দিকে তাকিয়ে বললাম- আঙুলটাতো উল্টা করে বসিয়ে দিলেন। এইটা নীচের দিকে বাঁকা না হয়ে উপরের দিকে বাঁকা হচ্ছে
ডাক্তার সেলাই করা আঙুলটা ধরে চারপাশ ঘুরিয়ে দেখল- আমি সেলাই করার সময় আপনার ধরার ভুলের কারণে এইটা হয়েছে। আমি আপনার বিপরীত দিকে থাকার কারণে আপনি যে আঙুলটা উল্টা করে ধরে আছেন তা বুঝতে পারিনি। কারণ আমি তো আমার দিক থেকে সোজাই দেখতে পাচ্ছিলাম। এখন আর কিছু করার নেই
আমি আর আঙুলের দিকে তাকালাম না। বললাম- ডাক্তার সাব চলেন
- চলব মানে? কোথায়? আপনার আঙুল তো ঠিক করে দিলাম
- আমি আমার আঙুলের জন্য এখানে আসিনি ডাক্তার সাব। ওই কুমির আমার বোনের দুইটা পা কোমরের নীচ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। আপনি একটু চলেন
ডাক্তার আমার মুখের দিকে হা করে তাকাল- এই কুমির আপনার বোনের দুই পা খেয়ে ফেলছে? আপনার বোন কত বড়ো?
- বোন অনেক বড়ো। বিয়েশাদি হয়ে গেছে। সামনে বাচ্চা হবে
- ফাইজলামি করেন আমার সাথে? এই এক মুইঠ কুমির আপনার বোনের দুই পা গিলে রাখবে কোথায়?
কিন্তু কুমির তো তারেই প্রথমে কামড়াল। তাকে নদী থেকে তুলে যখন দেখলাম তার দুইটা পা কুমির নিয়ে গেছে তখনই না কুমির কামড় দিয়ে আমার আঙুল নিল। আমি সেইটারেই ধরে আপনার এখানে নিয়ে এলাম। আপনিতো ঠিকই ওইটার ভেতরে আমার আঙুল পেলেন
ডাক্তার ডাস্টবিন থেকে ফেলে দেয়া কুমিরটা আবার তুলে চেরা পেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরল- দেখেন তো; এইটার ভেতরে একটা বড়ো মানুষের দুইটা পা ঢোকানো সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?
- তা হয় না কিন্তু
কিন্তু আবার কী? এই কুমির বড়োজোর কনে আঙুলই খেতে পারে। মানুষের পা খাওয়ার মতো হতে হলে এর আরো আট দশ বছর বড়ো হওয়া লাগত
- তাইলে মনে হয় অন্য কুমির। মনে হয় এইটার মা
- তা হতে পারে
- তাহলে চলেন ডাক্তার সাব
- বাসা কোথায়?
- ভেড়াইপুর নদীবস্তী
- কিন্তু আমাদের তো ছাগাইপুর বর্ডারের বাইরে যাবার নিয়ম নেই
- রক্ত পড়তে আমার বোনটা মারা যাবে ডাক্তার সাব। আর মাত্র কয়েকদিন পর ওর বাচ্চা হবে। আপনি আমার বোনটারে বাঁচান
আমি লাফ দিয়ে টেবিল পার হয়ে ডাক্তারের পা জড়িয়ে ধরলাম- আমার পোয়াতি বোনটারে বাঁচান ডাক্তার সাব
ডাক্তারের সহকারী এইবার মুখ খুলল- স্যার। এইটারে কিন্তু রুগি দেখা না বলে জননী সার্ভিস হিসেবে চালিয়ে দিলে আপনি যেতে পারেন। যেহেতু উনার বোন গর্ভবতী; সেহেতু এইটারে আপনি জননী সেবা বলতে পারেন। কারণ সরকার জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার জন্য ভেড়াইপুরে হাসপাতাল হবার আগে পর্যন্ত কিন্তু ডাক্তারদের জননী সেবায় বর্ডার ক্রস করার অনুমতি দিয়েছে...
-ঠিক ঠিক। আমার ব্যাগটা গুছিয়ে দাও তো
সহকারীকে ব্যাগ গোছাতে বলে বুক খোলা শার্টের বোতামগুলো লাগাতে গিয়ে দেখে একটাও লাগে না তার ভুঁড়ির জন্য- অনেক আগের শার্ট তো। তখন অনেক চিকনা চাকনা ছিলাম
আমি বললাম- স্যার আপনার শার্টের বোতাম লাগাতে হবে না। আপনি চলেন
- না না এটা ঠিক না। ডাক্তারদের চলাচলের একটা নীতিমালা আছে
- ওই বোতাম লাগবে না স্যার। তার থেকে আপনি দুই হাত দিয়ে শার্টের দুইপাশ চেপে ধরে রাখেন। আমি আপনার ব্যাগ নিচ্ছি
- এটা একটা ভালো আইডিয়া। তবে পুলিশ জিজ্ঞেস করলে কিন্তু কুমিরে কামড়ানো টামড়ানোর কথা বলা যাবে না। বলবেন আপনার বোনের বাচ্চা হবে তাই আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন; যদিও আমি গাইনির ডাক্তার না... কিন্তু পুলিশ নিশ্চয়ই আমার ইন্টারভিউ নেবে না; কী বলেন
- নিলেও নিতে পারে। তবে উত্তরগুলা একটু কঠিন করে দিলেই হবে যাতে আগামাথা কিছু বুঝতে না পারে। আপনার উত্তর বুঝতে না পারলে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ লোক মনে করে পুলিশ ছেড়ে দেবে
- সে আর এমন কঠিন কী? কিছু জিজ্ঞেস করলে নাড়িভুঁড়ির কয়েকটা ল্যাটিন ঝেড়ে দেবোনে...
ডাক্তারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছাগল ভেড়ার পাশ কাটিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখি শিলাকে নদীঘাট থেকে তুলে এনে মায়ের ঘরে রাখা হয়েছে। শলার শরীর থেকে এখন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানির মতো পাতলা রক্ত পড়ছে; মনে হয় সব রক্ত শেষ। সম্ভবত কেউ তাকে ন্যাড়ানুড়া দিয়ে মুছিয়ে শরীর থেকে কাদা সরিয়ে তার উপর একটা কাঁথা পেঁচিয়ে দিয়েছে। শিলা নড়াচড়া কিছুই করছে না। মা এখনও ভাঙা গলায় চিৎকার করছে; ঘোলা চোখে বাবা তাকিয়ে তাকিয়ে খেয়াল করছে শিলা নড়াচড়া করে কি না। শিলার কোমরের নীচের দিকের কাঁথা অংশ ভিজে থিকথিকে হয়ে আছে। ডাক্তার সেদিকটা একটু তুলে উরু থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া পায়ের অংশ দেখেই বললেন- হাড় কেটে নিয়ে গেছে; অনেক বড়ো কুমির। নদীতে নিশ্চয়ই আরো বড়ো কোনো কুমির আছে
ডাক্তার এইবার পেছন দিকে উঁকি দিয়ে নদীটা দেখে আমার দিকে ফিরল- ব্যাগটা দেন
ব্যাগ খুলে ডাক্তার বড়ো বড়ো দুইটা সিরিঞ্জ বের করল- এনেসথিসিয়া একটায় কাজ হবে না; দুইটা লাগবে। ...একটা লুঙ্গি নিয়ে আসেন....
ডাক্তার আমার একটা লুঙ্গি কাছা মেরে পরে দুইটা সিরিঞ্জে অজ্ঞান করার ইনজেকশন নিয়ে নদীর ধার দিয়ে নেমে গেলো। নদীর ঘাটে শতে শতে মানুষ। ডাক্তার সিরিঞ্জ দুইটাসহ হাপুস হুপুস করে সাঁতরাতে লাগল। কোনো সময় ডুব দেয় আবার কোনো সময় ভেসে উঠে সাঁতরে সাঁতরে আরো দূরে যায়। একটা দীর্ঘ ডুব দিয়ে বেশ দূরে গিয়ে মাথা উঠিয়ে আরেকবার ডুব দিতেই পানির নীচে বেশ হাঁচড়পাচড়ের আলামত পাওয়া গেলো। একটু পরেই মাথা তুলে ভুস করে মুখ থেকে পানি ছেড়ে ডাক্তার সাঁতরে ঘাটে ফিরে এলো- শালার শইলে দুইটাই পুশ করে দিয়েছি। কিন্তু বড়ো জানোয়ার তো; অজ্ঞান হতে একটু সময় লাগবে। খেয়াল রাখবেন কোনদিকে উঠে
আমরা সবাই নদীর পাড় ধরে ভাটির দিকে অজ্ঞান হওয়া কুমিরের ভেসে উঠা খুঁজতে লাগলাম। অনেক পরে দেখলাম কুমিরটা একবার মাথা তোলে তো আরেকবার ডোবায়; আগাতে চায় তো আবার ডুবে যায়; ডাক্তার এবার একটা লম্বা দড়ি চাইল; কে একজন একটা দড়ি এনে দেয়ার পর আবার দড়ি নিয়ে সাঁতরে গিয়ে কুমিরের এক পায়ে দড়ি বেঁধে ফিরে এসে দড়ির মাথাটা সবার দিকে বাড়িয়ে দিলো- টান লাগান
সকলের টানে প্রায় অচেতন কুমিরটা উঠে এলো নদীর পাড়ে
মায়ের কাছ থেকে বটি দাও নিয়ে কোপ দিয়ে বটি দায়ের চোখা মাথা কুমিরের পেটে ঢুকিয়ে ছাল ছিলার মতো করে কুমিরের পেট আলগা করে হাত ঢুকিয়ে কয়েক টুকরা থেঁতলানো মাংস আর চারটা হাড় বের করে নিয়ে এলো ডাক্তার। মাংসগুলো দলা পাকিয়ে কাদায় ফেলে হাড়গুলোকে দুভাগে ভাগ করে দেখাল- এগুলো হাঁটুর নিচের হাড় আর এগুলো হাঁটুর উপরে রানের হাড়; কিন্তু... হাড়গুলোর জোড়া খুলে গেছে আর মাংসও থেঁতলে খুলে গেছে হাড় থেকে। সেলাই দিয়ে এই হাড় পায়ের সাথে লাগানো সম্ভব না
চিৎকার দিয়ে আবার তোতলাতে শুরু করল মা- আমার মেয়েটা তাইলে পঙ্গু হয়ে গেলো রে...
ডাক্তার তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেলল। এখন বোনের জন্য অষুধ টসুধ দিয়ে রক্ত বন্ধ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই তার। আমি তার পথ আগলে ধরলাম- অন্তত হাড়গুলো জোড়া দিয়ে যান স্যার- পরে না হয় দুধ ডিম খাইয়ে তার হাড়ের চারপাশে মাংস বানিয়ে দেবো
কিন্তু ডাক্তার অনড়। কুমিরের দাঁতে কেটে যাওয়া হাড় লাগানোর বিদ্যা তার নাই। সে শুধু চামড়ার সাথে চামড়া সেলাই করতে পারে।
-মেয়েটা কি তবে আর জীবনেও হাঁটতে পারবে না?
বাবার এই প্রশ্ন শুনে ডাক্তার একটু ভাবে- মেয়েটার হাঁটার ব্যবস্থা হয়ত করা যায়
বাবা ডাক্তারের হাত চেপে ধরে- হাঁটতে না পারলে মেয়েটার সংসার টিকবে না ডাক্তার সাব। জেলে পাড়ার কাদাপানির মধ্যে আমার গড়িয়ে পড়া মেয়েটাকে জামাই ঘরে রাখবে না। স্যার আপনি একটা ব্যবস্থা করে দেন
শিলার পা দুইটা যেখানে কুমির কেটে নিয়ে গেছে তা একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে। সেগুলো আর জোড়া দেয়া সম্ভব নয়। তবে চাইলে ডাক্তার কুমিরের শরীর থেকে পা কেটে এনে শিলার পায়ের রানের সাথে জোড়া দিয়ে দিতে পারে
শিলার পায়ের মাংস ছাড়া হাড্ডি দুইটা নিয়ে বাবা হা করে তাকিয়ে থাকে- মেয়েটা হাঁটবে জন্তুর মতো?
বাবা অজ্ঞান কুমিরের কাছে গিয়ে পায়ের দৈর্ঘ্য মাপে। শিলার পা যেখানে ছিল প্রায় দুইহাত সমান সেখানে কুমিরের পায়ের দৈর্ঘ্য মাত্র বিঘত খানেক
ডাক্তার আমার আর বাবার দিকে তাকায়- এইটাই একমাত্র উপায় যা আমি করতে পারি। আর যদিও পায়ের দিক থেকে সে খাটো হয়ে যাবে তবুও এই দুইটা পা দিয়ে সে দিব্যি হাঁটাচলা করতে পারবে আর বাচ্চা বিয়াতেও কোনো অসুবিধা হবে না; তাছাড়া জেলে পাড়ার কাদাপানিতে কুমিরের পা বরং মানুষের পা থেকে হাঁটাচলার জন্য বেশি উপযোগী; এমনকি ওই পা দিয়ে সে সাঁতরাতেও পারবে আগের থেকে ভালো...
ডাক্তার বটি দিয়ে কুমিরের পেছনের পা দুটো কেটে নিয়ে বাড়িতে উঠে আসে। শিলা অজ্ঞান হয়ে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ডাক্তার জানায় শিলাকে অজ্ঞান করার জন্য আর কোনো অসুধ তার নেই; যা ছিল কুমিরকে অজ্ঞান করতেই শেষ হয়ে গেছে। তাই শিলাকে অজ্ঞান না করেই সেলাই দিতে হবে। যদিও সে নিজেই এর মধ্যে অজ্ঞান কিন্তু বলা যায় না সুইয়ের গুঁতায় তার জ্ঞান ফিরে আসতে পারে; সেক্ষেত্রে আমাকে শক্ত হয়ে তাকে চেপে ধরতে হবে
ডাক্তারের মোবাইলে ফোন আসায় কুমিরের ঠ্যাং দুটো আমার হাতে দিয়ে ডাক্তার কাঁধের সাথে ফোন চেপে ধরে হাতড়ে হাতড়ে ব্যাগ থেকে সেলাইর জিনিসপত্র বের করতে থাকে- হ। একটা ঝামেলা হইছিল... ঝামেলা মানে মাইর খাইছিল আরকি... দেখি একটা ঠ্যাং দেন তো
মোবাইলের কথার মাঝখানে আমার কাছ থেকে কুমিরের ডান ঠ্যাংটা নিয়ে সে সুই ঢুকিয়ে মেপে নেয় নির্বাচিত সুই কুমিরের চামড়া ভেদ করতে পারবে কি না। সুই নির্বাচন ঠিকঠাক অনুমান করে সে ফোনে কথা বলতে বলতে সুইয়ে সুতা পরায়। ডাক্তার কুমিরের ডান পা শিলার ডান পায়ে ফিট করে বসিয়ে আমাকে নির্দেশ দেয় শিলাকে জোরে চেপে ধরতে। আমি বাবার হাতে কুমিরের বাম পা দিয়ে শিলার পেটে চাপ দিয়ে ধরতেই এক ধাক্কায় ডাক্তার আমাকে সরিয়ে দেয়Ñ আরে আরে পোয়াতি মেয়ের পেটে চাপ দেয়?
আমাকে ইশারায় শিলার কাঁধে আর উরুতে চেপে ধরার কথা বলে ফোনে অন্যপাশে বোঝায়- না না। একটা অপারেশন করছি; সাথে এসিসস্ট্যান্ট আসে নাই তাই পেশেন্টের ভাইকেই কাজে লাগাচ্ছি বলে একটু বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে আর কি
ডাক্তার সেলাই শুরু করে। শিলার পায়ের কাটা অংশের চামড়ার সাথে কুমিরের পায়ের চামড়া ছোট ছোট সেলাই দিয়ে একটু একটু করে আটকে ফেলতে ফেলতে ফোনে কথা বলতে থাকে- না মাইর বেশি কিছু না। কিন্তু ইন্টারেস্টিং। মাইর খেয়ে আমার কাছে আসলো ট্রিটমেন্টের জন্য। যেহেতু মারামারি কেস; সেহেতু আমি প্রথমে তার মাথা চেক করলাম; দেখি কোনো ফাটাফুটা নেই। তারপর তার হাত পা চেক করেও দেখি কোনো ভাঙাচোরা নেই। কিন্তু তবুও সে সমানে চিল্লাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কোনো দাগ তো দেখি না। তোমাকে মারল কোন জায়গায়? সে চিৎকার করতে করতে বলল- মারেনি দুলাভাই। বিচি ফাটিয়ে দিয়েছে... জিজ্ঞেস করলাম- করলা মারামারি। হাতের কাছে তোমার হাত মাথা থাকতে অত ভেতরে এসে বিচিতে মারল কেমনে?... আমার এই কথায় শালাবাবু কী বলে জানো? বলে- বান্ধবীর স্বামীরা মারলে মাথায় মারে না দুলাভাই; বিচিতেই মারে...
সে যাই হোক। ডাক্তার হিসেবে আমার কিছু করার দরকার.... দেখি ওইটা দেনতো
এর মধ্যে ডাক্তার শিলার ডান পায়ের জায়গায় কুমিরের একটা পা বেশ চমৎকার করে জোড়া লাগিয়ে দিয়েছে। শিলার যেহেতু জ্ঞান ফিরেনি সেহেতু সে কোনো নড়াচড়াও করেনি। কিন্তু ডাক্তার ফোন কানে রেখেই আমাকে ইশারায় জোরে চেপে ধরতে বলে অন্য পা সেলাই শুরু করল- কিন্তু শালাবাবুর ঝোলা খুলে তো দেখি বিচির গলে একেবারে পানি। ওইগুলা মেরামত করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু পোলায় এখনও বিয়েশাদি করেনি; বীচিবিহীন থাকলে কেমন লাগে? শেষে উপায়ন্তর না দেখে শালাবাবুর বিচির ঝোলায় দুইটা গোল আলু ঢুকিয়ে সেলাই করে দিলাম। এতে তার বাকি কাজ চলে যাবে; তবে বাচ্চাকাচ্চাগুলা আলুগাছ হয় কি না সেটা একটা ভাবার বিষয়...
আমি তাকে চেপে ধরা সত্ত্বেও ধাম করে নতুন জোড়া লাগানো ডান পা দিয়ে শিলা ডাক্তারের নাকে মুখে একটা লাথি ঝাড়ল। ডাক্তার কোনোমতে সামলে নিয়ে ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে কটমট করে তাকাল- জোর নাই মিয়া?
- জোর আছে তো। কিন্তু আমার কনে আঙুলটা উল্টো করে সেট করায় হাতে জুত পাই না
- ধরেন। চেপে ধরেন
শিলা এবার চিল্লাতে শুরু করল। আমি শরীরের সমস্ত ভার দিয়ে শিলাকে চেপে ধরলাম। চিল্লানি বন্ধ করার জন্য বাবা তার একটা গামছা গোল করে শিলার মুখের মধ্যে চেপে ধরলেন। আরো কে একজন এসে শিলার হাত ধরল। ডাক্তার ঘেঁচাঘেঁচ সেলাই চালাতে থাকল শিলার চিৎকারের মধ্য দিয়ে...
শিলা খাটো হয়ে গেলো। উপরে মানুষ নীচে কুমিরের পা নিয়ে গড়াতে গড়াতে হাঁটাচলা করতে লাগল শিলা। গর্ভের কারণে তার নীচটা এমনিতেই ছিল ভারী; তার উপর পা খাটো হয়ে যাওয়ায় বাচ্চা জন্মানোর আগের কিছুদিন তাকে একটা ডিমেল হাঁসের মতো দেখাচ্ছিল। গড়াতে গড়াতেই সে বেশ নাদুসনুদুস একটা ছেলে বাচ্চার জন্মও দিয়ে ফেলল। ছেলে হবার সংবাদ পেয়ে বৌবাচ্চাকে দেখতে এসে শিলার স্বামী নিজের ছেলের পা দুটো ভালো করে পরীক্ষা করে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল- নাহ। আমার বংশের কোনো ক্ষতি হয় নাই....
শিলার ছেলেটা এখন গুটিগুটি হাঁটে। কুমিল কুমিল বলে মায়ের উপর ঝাঁপাতেও বেশ মজা পায়। অভাবের সংসারে বিয়াইত্যা মেয়ে আর কয়দিন টানা যায়। মায়ের পাঠানো সংবাদ পেয়ে শিলার স্বামী এসে বেশ কিছুদিন থাকল। নিজের ছেলের সাথে খেলা করে তাকে বাবা ডাক মুখস্থ করিয়ে বলল- আমার ছেলেকে আমি নিয়ে গেলাম...
শিলাকে রেখে নিজের ছেলেকে নিয়ে শিলার স্বামী চলে গেলো। যাবার কিছুদিন পর আবার বুক চাপড়ে হাউমাউ করে উঠল মা। শিলা আবার গর্ভবতী...
শিলা কিছু বলে না। শুধু গড়িয়ে গড়িয়ে হাঁটে। তাকে দেখতে এখন আবার ডিমেল হাঁসের মতোই মনে হয়। বস্তির বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলে- এই মেয়ে কুমির হবার পর নদীতে সময় কাটায় বেশি। হলেও হতে পারে এর পেটের বাচ্চা মানুষের না...
শিলা কোনো কথা বলে না। মা চৈহৈ করেন। শিলার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে শিলার স্বামীকে সংবাদ দিয়ে বাবা ফিরে এসে শিলার দিকে ঘোলা চোখ তুলে তাকালেন- তোর স্বামী কইল তোর পেটের বাচ্চা তার না...
বুক চাপড়ে উঠলেন মা। শিলা কিছুই বলল না। হাঁসের মতো হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলো নদীর দিকে। তারপর সন্ধ্যা কিংবা রাত কিংবা পরেরদিন সকালেও আর ফিরল না। বিকেল বেলা বস্তির ক্লাব ঘরে ক্যারম খেলতে খেলতে আমি সবাইকে জানালাম- গতকাল রাতে শিলার কুমির স্বামী এসে শিলারে নিয়ে গেছে তার জলের সংসারে....
চিত্রঃ মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়