অনলাইন শৈশব
আমাদের পরিবারে তিনটি বাচ্চা, তারা একই স্কুলে পড়ে। কোভিড লকডাউন শুরু হওয়ার পর ওদের খুব একটা ক্লাস মিস হয়নি। এপ্রিলের প্রথম থেকেই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, এবং সেটা স্কুলের রুটিন ফলো ক’রে। ফলে আমাদের বাড়িতে এখন একটি ডেক্সটপ, একটি ল্যাপটপ এবং একটি মোবাইল ফোন সকাল থেকে চালু হয়ে যায়। চলে বিকেল চারটে অবধি। আমার স্ত্রী একটি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে অঙ্কের শিক্ষিকা। স্কুলটি দরিদ্র এবং অরফ্যান ও ডেস্টিটিউড বালিকাদের স্কুল। বেশ কিছুদিন ধরে সরকার থেকে নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে যাতে অনলাইন ক্লাস শুরু করা যায়। কিন্তু এইসব বালিকাদের ক-জন অভিভাবকইবা মেয়েকে স্মার্টফোন কিনে দিতে পারে? বাড়িতে একটা বাটন ফোন। সেটি নিয়ে পরিবারের কর্তা লকডাউনের বাজারে দিনমজুরির খোঁজে বেরোয়। ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় মোবাইল ছাড়া কাজ জোটে না। মেয়েরা স্কুলে যায় মিড-ডে-মিলের আকর্ষণে, লকডাউনে বন্ধ স্কুলে তাও বন্ধ। পশ্চিমবঙ্গ বোর্ডের কর্তারা ভেবে ভেবে মাথার চুল সাদা করে ফেলল কী করে এদের অনলাইন পাঠ দেওয়া যায়। কখনও দূরদর্শন, কখনও ইউটিউব, কখনও হোয়াটস অ্যাপ, গুগল মিট, স্কাইপে। কিন্তু তাদের বাড়িতে যে এমনকি একটি ডেক্সটপও নেই যাতে তারা গুগল ক্লাসরুম বা ইউটিউব বা হোয়াটসঅ্যাপে অন্তত কাজ চালাতে পারে। ফলে অনলাইন ক্লাস করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। যারা সমাজের প্রিভিলেজড ক্লাস, সিবিএসই, বা আইসিএসই, বা আইজিসিএসই জাতীয় বোর্ডের প্রাইভেট স্কুলের ছাত্রছাত্রী, তাদের পক্ষে এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার অনায়াসসাধ্য। কিন্তু একটি রাজ্য স্কুল বোর্ডের দশ-বারো কোটি ছাত্রছাত্রীর কাছে সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধরাছোঁয়ার বাইরে। কখনো-কখনো, কোনো কোনো ছাত্রী, আমার স্ত্রীর কাছে ফোন করে জানতে চায় কোনো অঙ্কের জটিল ফর্মুলা। ওইটুকু পর্যন্ত। সমস্যা হচ্ছে যে এই পরিস্থিতিতে ধরে নেওয়া যায় সোশ্যাল ডিসট্যান্স মেন্টেন করার কারণে স্কুল বন্ধ থাকবে আরও বেশ কিছুদিন। এবং যা পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা হল অনলাইন ক্লাস চলবে এবং সেটা উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আর তার বাইরে পড়ে থাকবে কোটি কোটি রাজ্য স্কুল বোর্ডের ছাত্রছাত্রী যাদের কেউ কেউ হয়তো মাসের পর মাস স্কুল না করতে পেয়ে অবসাদে ভুগছে। কেননা ক্লাস আসলে শুধু জ্ঞানার্জনের জন্য নয়, সেটি আসলে মানসিক প্রস্তুতি, ইনভলভমেন্ট, প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা, হোমটাস্কের এনগেজমেন্ট আরও বহুবিধ। কোনো ধরনের এনগেজমেন্ট, ইনভলভমেন্ট ছাড়া শূন্য পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মনোরোগ আক্রান্ত হয় অপ্রাপ্তবয়স্করা। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য এদেশে সবচাইতে উপেক্ষিত।
এই যে দুটো শ্রেণির সৃষ্টি হল, সামান্য কিছু অনলাইনে শিক্ষা নিতে পারছে, আর বহুগুণ বেশি পারছে না, তা নিয়ে যতই তাত্ত্বিক আলোচনা হোক না কেন, যাদের অনলাইন ক্লাস চলছে তাদের ক্লাস বন্ধ করে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা বা প্রস্তাবনা কারও নেই। পাশাপাশি যাদের অনলাইন ক্লাস করার ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেই, শিক্ষণকেন্দ্রে এবং শিখনকেন্দ্রে অর্থাৎ যেখান থেকে শিক্ষক পাঠ দেবেন এবং যেখানে ছাত্র বা ছাত্রী পাঠ নেবেন এই দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলবে এবং প্রতিদিন কিছু স্বঘোষিত শিক্ষাবিদ স্বকপোলকল্পিত কিছু উদ্ভট প্রস্তাব দিয়েই যাবেন। আমি নিজেও একবার প্রস্তাব রেখেছিলাম যে পুরোনো স্মার্টফোন সারিয়ে ব্যবহার করা। কিন্তু সেটা দিয়ে ছোটো একটি পরিসরে কাজ চলতে পারে, সারা পশ্চিমবঙ্গ অথবা সারা ভারতবর্ষে কোটি কোটি ছাত্রছাত্রীর হাতে সারানো স্মার্টফোন তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মান্থলি যে পৌনঃপুনিক খরচা, তাই-বা জোগাবে কে? যারা স্কুলের সামান্য মাইনে দিতে ধুঁকতে থাকে, তাদের পক্ষে জিও বা এয়ারটেল জাতীয় সার্ভিস প্রোভাইডার প্রোভাইড করা কল্পনার অতীত। নতুন স্মার্টফোন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া একটি হাস্যকর প্রস্তাব। পিএম কেয়ার ফান্ড অর্ধেক খালি হয়ে যাবে। অতএব অন্য কোনো পদ্ধতি, অন্য কোনো কার্যকরী বিকল্প প্রয়োজন।
স্কুল বন্ধ থাকার দরুন যে সাইকলজিক্যাল ইমপ্যাক্ট এই লকডাউন পিরিয়ডে শিশুমনের উপর পড়ছে তার হিসেব অর্থমূল্যে হয় না। স্কুল ছিল পড়াশোনার চেয়েও বেশি, প্রতিদিনের এনগেজমেন্ট। একটি শিশুর, কিশোর-কিশোরীর, টিনএজারদের, কর্মহীন জেলবন্দি অর্থাৎ ঘরবন্দি হয়ে থাকা ছাড়া উপায়ান্তর নেই। আজ যা, কালও তা, তারপর দিনও তা। কোভিডের হাত থেকে কবে মুক্তি, তা কেউ জানে না। যতদিনে সেই মুক্তি এসে দরজায় কড়া নাড়বে, ততদিনে শারিরীক ও মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যাবে সমাজ, যার কোনো কিওর নেই। এবং কবে এই অবস্থার অবসান হবে তাও কেউ জানে না। যারা পড়াশোনা করতে পারছে না, যারা খেলাধুলা করতে পারছে না, ছোটাছুটি করতে পারছে না, তারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছে। এরপর কোবিড সারভাইভার হিসেবে শারীরিক ভাবে অক্ষম, মানসিক ভাবে অক্ষম, এক নতুন প্রজন্ম তৈরি হবে, যারা শুধু বলতে পারবে আমরা কোভিড-এর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছি। অতএব আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে। এই প্রজন্মকে রক্ষা করতেই হবে। যারা স্বেচ্ছায় নয়, টক্সিক প্যারেন্টদের আকাশচুম্বী অপত্য স্নেহে ঘরবন্দি হয়ে মানসিক ভাবে বিকল হয়ে পড়ছে। তাদের শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করতেই হবে। যে শিশুদের, টিনএজারদের এতদিন মাস বছর কাটত দৈনিক স্ক্রিনটাইমের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করে, তাদের শেখানো হত সোশ্যাল ইন্টার-অ্যাকশানের অতীব প্রয়োজনীয়তা, আজ তাদেরই হাতে স্মার্টফোন ধরিয়ে দিয়ে বাবা-মা কে বাধ্যতামূলক অফিস অ্যাটেন্ড করতে যেতে হচ্ছে এবং তারা ক্লাসটাইমের ভিতরে বাইরে কী ভাবে সেই ডিভাইসের ব্যবহার করছে কে আর জানতে পারে। সোশ্যাল ইন্টার-অ্যাকশানের বদলে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনটেন করা শেখানো হচ্ছে। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশে স্কুল লকডাউন তুলে দিয়ে এমনকি প্রাইমারি প্রি-প্রাইমারি স্কুলও চালু করে দিয়েছে বা দিচ্ছে। আমাদের দেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সবচাইতে বেশি তুচ্ছতাচ্ছিল্যের বিষয়।
বিকল্প শিক্ষার পরিকাঠামো
এই প্রসঙ্গে আমি উত্থাপন করতে চাই আমাদের হাতে যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার আছে, আমাদের অবিমৃশ্যকারীতায় যে ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে, তাকে আর-একবার দাঁড় করানোর প্রস্তাব। যত দূর শুনেছি রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের দু-বছরের সিনিয়ার ছিলেন এ কে সাঙ্গল। পরবর্তী কালে ড রায় আইএএস হন, আর ড সাঙ্গল ইসরো ডেকুর দ্বিতীয় প্রধান। দিল্লিতে এক সাক্ষাতে দুজনের মধ্যে ইসরোর এডুস্যাট প্রজেক্ট নিয়ে কথা হয়। পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসার পর (সে সময়ে ড রায় পঞ্চায়েত দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি), তাঁর অনুরোধে শ্রী দিলীপ ঘোষ (আইএএস) ও দিলীপ পাল আমেদাবাদে যান সিস্টেমটি দেখে আসতে। তাঁরা পজিটিভ নোট দিলে কথা শুরু হয় রূপকলা কেন্দ্রের সঙ্গে, যার অধিকর্তা তখন আইএএস অনিতা অগ্নিহোত্রী। ইসরো এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে মউ সাইন হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে সই করেন এম এন রায় ও অনিতা অগ্নিহোত্রী। ইসরোর পক্ষে ডিরেক্টার মি ভাটিয়া। আজ থেকে পনেরো বছর আগের, পনেরো কোটি টাকার প্রজেক্ট। ইসরো আর্থস্টেশন থেকে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথ ফ্রি দিয়েছিল। এমওপিআর এবং ডিএফআইডি প্রজেক্টের টাকায় পশ্চিমবঙ্গেও রমরমিয়ে শুরু হয়েছিল এডুস্যাট গ্রামস্যাট প্রজেক্ট। একটা সময়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সারা ভারতের এডুস্যাট নেটওয়ার্কের বেস্ট ইউটিলাইজেশন স্টেট। যেখানে রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে, প্রতিটি ব্লক প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারে, ব্রডকাস্টিং মোডে শিক্ষাদান সম্পূর্ণ হতে পারে। প্রতিটি জেলা পরিষদে টু ওয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর ব্যবস্থা রয়েছে, ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশনের জন্য। কিন্তু এত কিছুর পরেও প্রথমাবধি এত বড়ো সিস্টেমটার ইউটিলাইজেশন বলতে সরকারি আধিকারিকদের একপাক্ষিক বা উভপাক্ষিক কথোপকথন।
এডুস্যাট ভারতের প্রথম থিম্যাটিক উপগ্রহ যার টেকনিকাল নাম ছিল জিস্যাট-৩। ওয়ান-ওয়ে টিভি সম্প্রচার, ভিডিও কনফারেন্সিং, কম্পিউটার কনফারেন্সিং, ওয়েবভিত্তিক নির্দেশনা, টেলিমেডিসিন ইত্যাদির মতো বিস্তৃত ইন্টারেক্টিভ শিক্ষামূলক পদ্ধতিগুলি যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে ছড়িয়ে দেওয়া যায় সেই উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত। এডুস্যাট এর বহুবিধ উদ্দেশ্য ছিল। পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিক্ষার পরিপূরক হয়ে ওঠা, কার্যকর শিক্ষকদের দিয়ে কোয়ালিটি প্রশিক্ষণ প্রদান, নতুন প্রযুক্তিগুলিতে অ্যাক্সেস সরবরাহ করা এবং ফলস্বরূপ ভারতের প্রতিটি কোণে স্যাটেলাইট বেসড শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এডুস্যাট স্কুল, কলেজ এবং উচ্চস্তরের শিক্ষার সঙ্গে সংযোগ সরবরাহ করত এবং উন্নয়ন যোগাযোগ সহ আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরি করত।
সমস্যা হল পশ্চিমবঙ্গের সবকটি ব্লক এবং ব্লক প্রাইমারি হেল্প সেন্টারে, উপরন্তু ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে এই যে ব্রডকাস্ট মোড সিস্টেম চালু রয়েছে আজও (পশ্চিমবঙ্গেই এডুস্যাট প্রজেক্টে কে-ইউ ব্যান্ড চালু হয়), তা ক্রমশ আপগ্রেডেশনের অভাবে, ব্যাবহারিক প্রয়োজনীয়তার অভাবে, ব্যবহার না হওয়ার সুবাদে, ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘটনাক্রম আরও জটিল হয়ে যায়, যখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দপ্তরের এই মাধ্যমটি ব্যবহার করার কথা থাকলেও সরকারি সদিচ্ছার অভাবে, প্রয়োজনীয়তার অভাবে, ব্যবহার না হয় পড়ে থাকছে দীর্ঘদিন। বিভিন্ন দপ্তর দুবার-চারবার প্রোগ্রাম করলেও সিস্টেমটিকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করার কথা কখনও ভাবেনি। অনিতা অগ্নিহোত্রী থেকে মানবেন্দ্রনাথ রায়, দিলীপ ঘোষ, দিলীপ পালেরা অবসর নেওয়ার পর, দু-একজন সরকারি আধিকারিক নিজ উৎসাহে মাঝে মাঝে সিস্টেমটি ব্যবহার করে থাকেন। যেটুকু ব্যবহার তা পঞ্চায়েত দপ্তর বা স্বাস্থ্য দপ্তর তাদের নিজেদের কমিউনিকেশনের স্বার্থে ব্যবহার করেছে।
আজ এতদিন পর এই সিস্টেমের সম্বন্ধে এত বিস্তারিত বলার কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনলাইনে স্কুল-কলেজ ছাত্রছাত্রীদের, যাদের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার অ্যাক্সেস নেই, তাদের টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হলে এই সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমত, বহু বাড়িতেই, এমনকি দরিদ্র বাড়িতেও, একটি ছোটো ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট টিভি অন্তত পাওয়া যায়। যে বাড়িতে তাও নেই, সেখানে একটি মাঝারি মানের স্মার্টফোনের দামের অর্ধেক বা তিনভাগের একভাগ দামে সম্পূর্ণ সেট হয়ে যায়। এই যে চিরন্তন হাহাকার শোনা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছোয় না, পৌঁছোলেও তা ভিডিও দর্শনের উপযোগী ব্যান্ডউইথ পায় না, সেক্ষেত্রে ব্রডকাস্ট মোডের এই সুবিধা কেন গ্রহণ করা হবে না বোঝা দায়। ইসরোর এই এডুকেশন নেটওয়ার্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য একটা সময় ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। বার দুয়েক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করতে হয়েছে টেলি এডুকেশন ইউজার মিটে, সেখানে সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এই অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। আমেদাবাদে গিয়ে শুনেছিলাম, তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই দামোদর ভাই মোদী মাঝে মাঝে ক্যাবিনেট বৈঠক বসাতেন বাইস্যাগ স্টুডিওতে এবং সেখান থেকে ক্যাবিনেট মিটিং টেলিকাস্ট করা হত সারা গুজরাটে। এতে সরকারি গুরুত্বের যে সিলমোহর সিস্টেমের উপর পড়ত তার ফলে যখনই সরকারি আদেশনামা জারি করা হত কেবল অপারেটরদের কাছে যে প্রত্যেক কেবল অপারেটরকে একটি করে চ্যানেল ফ্রি রাখতে হবে এই টেলিএডুকেশন-এর জন্য, তারা সেটা করতে বাধ্য ছিল। মধ্যপ্রদেশে ঝাবুয়া উপজাতির মধ্যে অথবা উড়িষ্যার কেবিকে ডিস্ট্রিক্টের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শুধুমাত্র একটি ইলেকট্রিক সাপ্লাই-এর লাইন থাকলেই এই পদ্ধতি কার্যকর হওয়া সম্ভব। সন্ধেবেলা কাজ সেরে মানুষগুলি ব্লক অফিসে এসে বসত, যেখানে তারা বিভিন্ন শিক্ষামূলক অথবা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে সক্ষম হত। আজ যখন পশ্চিমবঙ্গের জগৎবিখ্যাত, দেশবিখ্যাত, শিক্ষাবিদরা মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলছে কীভাবে অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতি দরিদ্র জনগণের সন্তানদের জন্য চালু করা যায়, যখন শহরের বাইরে গেলে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ক্রমশ কমে আসে, সেখানে এই পদ্ধতিতে স্যাটেলাইট টেলিকাস্টের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও ক্লাস অ্যাটেন্ড করা সম্ভব।
পশ্চিমবঙ্গে এই সিস্টেমে দুটি মোড। একটি ব্রডকাস্ট মোড আর অন্যটি টু ওয়ে কমিউনিকেশনের জন্য ভি-স্যাট মোড। সারা পশ্চিমবঙ্গে সবকটি জিলা পরিষদে টু ওয়ে কমিউনিকেশন চলে। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, তারা তাদের প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে একটি করে সিস্টেম বসিয়েছিল। কিন্তু সমস্যা হল প্রথমদিকে এই সিস্টেমের গ্লামার অনেক বেশি হলেও, ইদানীং ইন্টারনেট বেসড বহু অ্যাপ বাজারে চলে আসায় এবং সেগুলি আধিকারিকদের মোহমুগ্ধ করায়, এই কমিউনিকেশনের গুরুত্ব কমেছে। আপগ্রেড হচ্ছে না বলে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে।
পশ্চিমবঙ্গে অনলাইন শিক্ষার হাল-হকিকত
২০০৫ সালে চালু হওয়া এই সিস্টেমটি আপগ্রেডেশনের অভাবে জীর্ণদশায় পৌঁছে গেছে। এই যাওয়ার পিছনে কিছু রাজনীতিগত কারণও রয়েছে। যখন থেকে বিজেপি সরকার মোদী সরকার কেন্দ্রের শাসনভার দখল করল, তখন থেকে সমস্ত কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলার এক অদ্ভুত প্রবণতা তাদের গ্রাস করেছে। এটা পূর্বপরিকল্পিত না সাম্প্রতিককালের উদ্ভাবন তা বোঝা মুশকিল। প্রথম টার্মে মমতা ব্যানার্জি বামফ্রন্টের দুর্গ ধূলিস্যাৎ করে দেওয়ায় তিনি কেন্দ্রীয় শাসক দলের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা পশ্চিমবঙ্গের উপর বর্ষিত হতে থাকে। এমনকি ব্রডকাস্ট মোডের একটি নতুন সিস্টেমের পাইলট প্রজেক্ট পশ্চিমবঙ্গেই চালু করা হয়। কিন্তু একদিকে এই পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা সিস্টেম আর অন্যদিকে রাজনীতির জগতে ঘনায়মান কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিরোধে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ তার কৌলীন্য হারাতে থাকে। একটা সময় ছিল যখন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এমনকি ইসরোর বৈজ্ঞানিকরাও আমাদের রাজ্যের এই হাইব্রিড মোডের সিস্টেম দেখতে আসতেন। একদিকে ব্রডকাস্ট টেলিভিশন মোডের কেন্দ্রগুলি, যাকে আমরা বলি ওয়ান ওয়ে কমিউনিকেশন। অন্যদিকে ভিডিও কনফারেন্সিং মোড, যা টু ওয়ে কমিউনিকেশন, যার বিস্তার জেলা পরিষদগুলিতে ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে। আস্তে আস্তে ইসরো যোগাযোগ এবং সাপোর্ট দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাইস্যাগে ফিড পাঠালে তারাই পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা চ্যানেল ডেডিকেট করে দিত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা রাজ্যের সাবজেক্ট হওয়ায় সরকারের পক্ষে এতে রাজি হওয়া অসম্ভব। টু ওয়ে কমিউনিকেশনের সুলভ এবং কার্যকরী সফ্টওয়্যার বেরিয়ে গেছে যে সারা ভারতেই ইসরোর টু ওয়ে কমিউনিকেশন ফ্লপ করে গেছে।
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মোদী ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের একতরফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন যার ডেটা আটটি সার্ক দেশকে তাদের উন্নয়নের জন্য ভাগ করা হবে। এই দেশগুলি, ভারত ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং আফগানিস্তান। প্রাকৃতিক সম্পদ, টেলি-মেডিসিন, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি সংযোগ এবং জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে এই সুবিধা হবে। জিএসএটি-৯৯ উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের পর এই বিভাগগুলিতে দূরশিক্ষার সুবিধা বহুগুণ বর্ধিত হয়েছে। আমেদাবাদের ভাস্করাচার্য ইনস্টিটিউট ফর স্পেস অ্যাপ্লিকেশন অ্যান্ড জিও-ইনফরম্যাটিক্স (বাইস্যাগ)-এর ডিরেক্টর শ্রী টি পি সিং-এর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমার প্রশ্ন ছিল টিভিতে ক্লাস করালে ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন করবে কী করে? টি পি সিং বলেছিলেন, যাদের ফোন আছে, বাটন ফোন, তারা ফোন ইন করবে । আমি বললাম, যাদের তাও নেই তারা কী করবে? উনি বলেছিলেন, সত্যি কথা বলুন তো… ক্লাসে কটা স্টুডেন্ট প্রশ্ন করে? কয়েকজন স্টুডেন্ট প্রশ্ন করতে পারবে না বলে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী বঞ্চিত হবে?
আমাদের পাশের রাজ্য আসামের অবস্থা একবার খুঁটিয়ে দেখা যাক। মাল্টিমিডিয়া সহযোগে শিশুদের পড়ালে তারা অধিক সময় ধরে একটি অধিবেশনে শিখেছে এমন তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও, ইন্টার্যাক্টিভ হলে পড়াশোনা আরও কার্যকর হয়, অর্থাৎ যখন কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষকের সঙ্গে ভ্রমণে যেতে শুরু করে, ধারণাটি অন্বেষণ করে, আত্মতত্ত্ব এবং প্রশ্ন উত্থাপন করে। এজন্য ব্রডকাস্ট স্টুডিও সেশনগুলি লাইভ এবং ইন্টার্যাক্টিভ, মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য রিয়েল-টাইম লার্নিং অ্যানালিটিকাগুলির সঙ্গে সংহত করার জন্য টেলি-এডুকেশন প্রকল্প খুব সাবধানতার সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের ১ অগাস্ট, গুয়াহাটির সম্প্রচার স্টুডিও থেকে যে টেলি-এডুকেশন সেশনগুলি চালু করা হয়েছিল, আজ কোভিড লকডাউনে তই ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। অসম রাষ্ট্রীয় মধ্যম শিক্ষা অভিযান (আরএমএসএ) এর অর্থায়নে কর্মসূচিটি আসামের ২৫ টি জেলা জুড়ে প্রথম ধাপের ২৫০ টি সরকারি বিদ্যালয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে, শিগগির আরও দ্বিতীয় ১০ টি স্কুল টেলি-এডুকেশন-আসাম নেটওয়ার্কে আনা হবে। এই প্রোগ্রামে, শিক্ষার্থীরা স্টুডিও শিক্ষক এবং ই-কন্টেন্টটি দেখতে এবং শুনতে, শিক্ষকের সঙ্গে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে এবং স্টুডিও শিক্ষকের দ্বারা প্রতিটি সেশনে উত্থাপিত দৈনিক মূল্যায়ন প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে। আমাদের রাজ্য এরকমই একটি সিস্টেম ফেলে ফেলে নষ্ট করছে। অবশ্য যে-কোনো সিস্টেমের খুঁত বার করতে বাঙালির দক্ষতা এবং পাণ্ডিত্য অতুলনীয়। রাজ্য এখন দু-ভাগে ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একভাগে রাজ্য বোর্ডের ছেলেমেয়েরা, যাদের অনলাইন ক্লাস করার সংগতি নেই। এদের মধ্যে কেউ কেউ অবশ্য প্রাইভেটে অনলাইন ক্লাস করে নিজেদের জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ করে নিচ্ছে। বাকিরা যে তিমিরে সেই তিমিরে। রাজ্য জুড়ে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র সিস্টেম ব্যবহার না করে, আর রিসিভিং ডিভাইস না থাকার দরুণ, চার মাস পড়াশোনার সংশ্রব থেকেই বঞ্চিত। এরপর হঠাৎ একদিন তাদের ঘাড় ধরে পড়ানো শুরু করে দেওয়া হবে। এই আমাদের শিক্ষাবিধি।
আর সমাজের উচ্চবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির ছেলেমেয়েরা, যাদের আইপ্যাড বা ল্যাপটপের বাড়বাড়ন্ত, তারা অনলাইনে, গুগল ক্লাসরুমে, বা গুগল মিটে বা আরও একশোরকম অ্যাপস-এর মাধ্যমে প্রতিদিন ক্লাস করে। তারা প্রাইভেটেও অনলাইন ক্লাস নেয়, তারা খান অ্যাকাডেমিতে পাঠ নেয়, কিন্তু তাদের পিতৃমাতৃকুল সুখী নয়। তাদের চাহিদা মিটতেই চায় না। তারা ব্যক্তিগত গাড়ি বা ওলা উবেরে চড়ে এসে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভের কারণ অনলাইনে ক্লাস করানো হলে স্বাভাবিক অফলাইন স্কুলের সমান টিউশন ফিজ নেওয়া হবে কেন? যেসব স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাসমাইনে স্কুল কর্তৃপক্ষ এইসব ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফিজ থেকে দিয়ে থাকেন, গার্জেন-বিক্ষোভে তাঁদের স্যালারি বন্ধ হবার উপক্রম। মাশরুমের মতো গজিয়ে ওঠা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইংলিশ মিডিয়াম যাঁদের জলবিছুটি, তাঁরা শ্লেষাত্মক মন্তব্য করছেন, বোঝো কেমন মজা! অথচ যাদের সংগতি আছে ভরপুর, তাঁরা টিউশন ফিজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছেন। এঁরাই বাড়ির কাজের মহিলাকে কোভিড অজুহাতে কর্মচ্যুত করে মাসমাইনে বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ওপর জীবননির্বাহ করা মানুষগুলি কীভাবে বেঁচে থাকবে তা ভাববার অবকাশ নেই কারও। অথচ এইসব শিক্ষক-শিক্ষিকারাই পরম যত্নে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ তৈরি করেন। অথচ এদের জন্য কারও মাথাব্যাথা নেই। এও আমাদের রাজ্যেরই অন্য এক শিক্ষাবিধি।
যে কথা বলার জন্য এসব প্রসঙ্গের অবতারণা তাই দিয়েই শেষ করি। গার্জেনরা যদি দাবি করেন অন্তত রাজ্য বোর্ডের ছাত্রছাত্রীদের জন্য জেলার ডিএম যদি সেই জেলার কেবল অপারেটারদের বলে দেন, তাহলে খুব সহজে টিভির মধ্য দিয়ে অনলাইন কোর্স চালু করে দেওয়া যায়। ইসরো ব্যান্ডউইডথ ফ্রি দিয়ে রেখেছে। ধীরে ধীরে পুরো ব্যাপারটা সিস্টেমেটিক করে ফেলা যায়। স্কুল যখন বন্ধই করে রাখা হচ্ছে, তখন বিকল্প পদ্ধতি ভাবা হবে না কেন?
কতগুস্মার্টফোনলো দরকারি পয়েন্ট ও তথ্য সমৃদ্ধ লেখা। যারা স্মার্টফোন জোগাড় করতে পেরেছে, তারা ফিমাসে পৌনঃপুনিক খরচ করে নেট জোগান রাখতে পারছে না। এডুস্যাট প্রোজেক্টকে পক্ষাঘাত গ্রস্ত করে রাখা হয়েছে। রাজ্যে যে বৈষম্যের ভাগ হয়েছে - সেটাও নানামাত্রিক।"যাদের অনলাইন ক্লাস করার সংগতি নেই " আর বেসরকারি স্কিলের ছাত্রদের সংগতি আছে। এই বিভাজনের মাঝেও সরকারি স্কুলে একদল পড়ুরার স্মার্টফোন আছে, একদলের নেই।কিছু কিছু শিক্ষক ব্যক্তি উদ্যোগে নানা অ্যাসাইমেন্ট আপলোড করা, নোটস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতেও অংশগ্রহণ মিনিমাম। বিভাজন মারাত্মক। আর শেষে নির্মম ছবি আঁকলেন - উবেরে এসে সেই সব অভিবাবক ফীস দেবেন না বলে চেঁচান, তারাই পরিচারিকাকে তাড়ান, ঘরে বসে চারবেলা চর্বচোষ্য খান। লকডাউন বৈষম্যের ছাল চামড়া তুলে দিয়েছে।
এখুনি হওয়া উচিত
জরুরি লেখা। কিন্তু কিছু জিনিস ভালো লাগলো না। সে সব নিয়ে আপাতত বলছি না। দুটো বিষয়ের ওপর নজর দিতে চাই।
১. গার্জিয়ানদের দাবী করার কথা এসেছে। সরকারি ইস্কুলের গার্জিয়ান কারা? তারা এতো মুখর কোনো অংশ নয়।
২. একই ধরনের পয়েন্ট সরকারি ইস্কুলের অধিকাংশ গার্জিয়ানের ন্যূনতম ক্ষমতা নেই এই বিষয়গুলোতে বাচ্চাদের সাহায্য করবেন। অন্যান্য রাজ্যের কথা বলেছেন। একদম প্রাইমারি লেভেলের বাচ্চারা নিজেরা কীভাবে এইটা একা একা সামলাবে জানা নেই।
সরকারি-বেসরকারি সব ইস্কুল মিলিয়ে গোটা যে শিক্ষাব্যবস্থা তার মধ্যে দুটি অংশের কোনো কন্ঠস্বর শোনা যায় না প্রায়। ১. সরকারি ইস্কুলের গার্জিয়ান আর ২. বেসরকারি ইস্কুলের শিক্ষক।
সরকারি ইস্কুলে যদি সমাজের মুখর অংশ মানে ভোকাল অংশ না ঢোকে খুব বেশিদিন এইসব কোনো কিছুই টেকার কথা নয়।
গত বছর থেকে এখনও অবধি পড়া সবচাইতে কার্যকরী লেখা। সমস্যাটা অনেকেই ঠিকঠাক ধরতে পেরেছেন, বুনিয়াদি স্তরে সেটাকে সামলানোর চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু আপনার মতো করে এত স্পষ্ট দিশা দেখানোর বক্তব্য সচরাচর পাই না। ভালো লাগলো। তবে এই প্রস্তাব বাস্তবে রূপায়িত হলে আরো ভালো লাগতো। সেই আশা করাও বোধহয় বৃথা।
নামটা মনে আসছে না, কিন্তু আমাদের ছোটবেলায় ৮০ র দশকে টিভিতে নিয়মিত ক্লাস হত দুপুর বেলা। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার তো এখনো এটা ক্লাস রুটিন মাফিক চালু করতে পারে টিভিতে। এছাড়া ইউটিউব তো আছেই।
জরুরি লেখা
জরুরি লেখা
এডস্যাটের ফিডব্যাক মেকানিজম ফ্লপ | কোনো ইভ্যালুয়েশন মেকানিজম নেই | টিভি দেখেক্লাস করার পক্ষে আছি মন্দের ভালো , সেখানেও মাল্টিপল ক্লাসরুম প্যারালালি চালানো চাপের ব্যাপার তবু মন্দের ভালো | আদত সমস্যা হলো ফিডব্যাক ইভ্যালুয়েশনে | সেই পারস্যোনাল ডিভাইস ডিপেন্ডেন্সি ছাড়া গতি নেই | এডস্যাট চলুক সঙ্গে ফ্রি তে স্মার্টফোন দিক সরকার | নইলে সম্ভব না |
আম্বানি তো শুনছিলাম গুগলের সাথে হাত মিলিয়ে নাকি সস্তায় পুষ্টিকর android ফোন নিয়ে আসছে। হয়তো 3000 টাকার মতো দাম হবেে। ওটা বেরোলে সবাাইকে স্মার্টফোন দেেওয়ার একটি প্রয়াস হয়তো করা সম্ভবপর হবে। ডেটা এয়ারটেল, ভি, জিও এদের প্রকল্পের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পাারে। সর্বশিক্ষা v2
তবে বলবো এই ফোনে ফেসবুক জাতীয় app , unsafe site এসব গুলো ip থেকে ব্যান রাখতে হবে। নইলে বাচ্চা দের হাতে মোবাইল পরে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে এই বাচ্চা রা বাড়ির প্রথম স্মার্টফোন ইউসার হবে, বাবা মায়েরা তাদের সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ নাও হতে পারে।