নান্দীমুখ
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের (১৮.০৫.২০২০) খবর “Migrant worker’s health deteriorates on way home, his friend sticks with him till end”। অমৃত কুমার এবং মোহম্মদ সাইয়ুব একসাথে গুজরাট থেকে উত্তর প্রদেশের বস্তি জেলায় তাদের গ্রামে ফিরছিল। পথে অমৃত কুমার অসুস্থ বোধ করে, জ্বরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে। মোহম্মদ সাইয়ুব ওকে ছেড়ে যায়নি। কোন পার্সোনাল/সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানেনি। সবাই ছেড়ে চলে গেলেও শেষ অবধি মোহম্মদ সাইয়ুব বন্ধুর সাথে ছিল, হাসপাতালে মৃত্যু পর্যন্ত। করোনা অতিমারি বন্ধুত্বের এক নতুন চিত্রনাট্য রচনা করলো কি? জীবনের ভালোবাসার স্রোতধারা যখন একের পরে এক রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন লেখার নান্দীমুখে হাজির থাকে মোহম্মদ সাইয়ুব এবং অমৃত কুমাররা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (১৮.০৫.২০২০) একই দিনে আরেকটি খবর করেছে “’Silent protest is so pwerful’: Belgian medics turn their backs on PM during visit to hospital”। ব্রাসেলসের সেন্ট পিটারস হাসপাতালের চিকিংসক-চিকিৎসাকর্মী এবং সংশ্লিষ্ট সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সরকারের তরফে স্বাস্থ্যের জন্য বাজেট বরাদ্দ কমানো, ডাক্তারদের মাইনে কমিয়ে দেওয়া এবং কম মাইনেতে নিম্নমানের নতুন স্টাফ নিয়োগ করার ফলে ৯,০০০-এর ওপরে কোভিড-১৯-এ মৃত্যু ঘটেছে বেলজিয়ামে। তাই পৃষ্ঠ ও পশ্চাদ্দেশ দেখিয়ে নীরব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ডাক্তারেরা। সে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।
ইকোনমিক টাইমস-এর খবর (১৪.০৫.২০২০) জানাচ্ছে – “Fresh support of only Rs 12-13 lakh crore in PM Modi’s economic stimulus: Report”।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এর একটি লেখায় অবশেষে স্বীকার করে নেওয়া হল – “Covid-19 has taken more American lives in 1 month than the Vietnam War claimed over 8 years.” (Failing the Test – The Tragic Data Gap Undermining the U.S. Pandemic Response – 14.05.2020) ঐ লেখায় বলা হয়েছে “With more than 80,000 dead and no end in sight, our national efforts seem feebler and more halting”। কাদের চেয়ে দুর্বলতর আমেরিকার জাতীয় প্রচেষ্টা? তুলনায় আনা হয়েছে ১৯শ শতাব্দীর ক্রিমিয়ার যুদ্ধে ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গল এবং উইলিয়াম ফারের প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে।
এই মুহূর্তে করোনা অতিমারির দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খবর আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থা Moderna, যারা প্রথম mRNA Vaccine (mRNA-1273) দিয়ে মানুষের ওপরে পরীক্ষা শুরু করেছিল সেই ভ্যাক্সিন নিয়ে ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু করেবে সম্ভবত জুলাই মাসে। কোম্পানি তাদের বুলেটিনে (১৮.০৫.২০২০) জানিয়েছে – Moderna Announces Positive Interim Phase 1 Data for its mRNA Vaccine (mRNA-1273) Against Novel Coronavirus। দুটি ডোজে পরীক্ষা হবে ২৫ ও ১০০ মাইক্রোগ্রাম। কোম্পানির তরফে জানানো হয়েছে – mRNA-1273 was generally safe and well tolerated mRNA-1273 provided full protection against viral replication in the lungs in a mouse challenge model।
আরেকটি প্রায় সমধিক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার পত্রিকায় (১৮.০৫.২০২০) “Cross-neutralization of SARS-CoV-2 by a human monoclonal SARS-CoV antibody” শিরোনামে। এ গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে – “The SARS-CoV-2 spike (S) glycoprotein promotes entry into host cells and is the main target of neutralizing antibodies ... multiple monoclonal antibodies targeting SARS-CoV-2 S identified from memory B cells of an individual who was infected with SARS-CoV in 2003. One antibody, named S309, potently neutralizes SARS-CoV-2 and SARS-CoV pseudoviruses as well as authentic SARS-CoV-2 by engaging the S receptor-binding domain.” মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি যদি করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় তাহলে সেটাও হবে যুগান্তকারী ঘটনা।
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এ প্রকাশিত (১৮.০৫.২০২০) গবেষণাপত্র “Seroprevalence of SARS-CoV-2–Specific Antibodies Among Adults in Los Angeles County, California, on April 10-11, 2020”-তে দেখানো হয়েছে – After adjusting for test sensitivity and specificity, the unweighted andweighted prevalence of SARSCoV-2 antibodies was 4.34%(bootstrap CI, 2.76%-6.07%) and 4.65% (bootstrap CI, 2.52%-7.07%), respectively.” মোদ্দা কথা হল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনের বেশ কিছু রোগীর ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হবার জন্য পুনরায় সংক্রমণের যে চিত্র দেখা গিয়েছিল এ গবেষণাপত্র দেখাচ্ছে যে অন্তত ক্যালিফর্নিয়ার সীমায়ত ভৌগলিক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে।
করোনা ভাইরাসের বায়োলজি এবং ক্রমবিকশিত বৈশিষ্ট্য
চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুখ্যাত ঐতিহাসিক চার্লস রোজেনবার্গ তাঁর ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধ “What is an epidemic? AIDS in historical perspective”-এ বলেছিলেন – “Epidemics start at a moment in time, proceed on a stage limited in space and duration, follow a plot line of increasing revelatory tension, move to a crisis of individual and collective character, then drift toward closure.” এরকম একটি মারণান্তক নাটক আমরা ২০২০-র পৃথিবী জুড়ে দেখছি।
ভারত সহ সমগ্র পৃথিবী জুড়ে করোনার মৃত্যুমিছিল চলছে। এটা বন্যা, ঝড় বা আগুন লাগার মতো কোন দুর্বিপাক নয় যে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাবে। বরঞ্চ উল্টোটা – যে যত দূরত্ব রক্ষা করবে তার নিরাপদ থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। আক্ষরিক অর্থেই সোশ্যাল/পার্সোনাল ডিস্ট্যান্সিং! নেচার পত্রিকায় (৭ মে, ২০২০) প্রকাশিত “Profile of a killer virus” গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে – যদি একজন প্রতিবেশির কাশি থেকে ১০টি ভাইরাস পার্টিকল বেরোয় তাহলে আমার গলায় ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা আছে। আবার যদি প্রতিবেশি আরও কাছে চলে আসে বা কম দূরত্বে থাকে তাহলে তার কাশিতে বেরনো ১০০টি ভাইরাস পার্টিকল সরাসরি গলা থেকে ফুসুফুসে চলে যাবে। অর্থাৎ, সোশ্যাল/পার্সোনাল ডিস্ট্যান্সিং-এর বাস্তব ভিত্তি আরেকটু বেশি পরিষ্কার হল। কিন্তু এরপরেই সমস্যার শুরু। কিভাবে গলা বা শ্বাসনালী থেকে কিংবা সরাসরি আক্রান্তের ফুসফুসে এ ভাইরাস পৌঁছয় শুধু সেটুকু নিয়ে ২০০ বছরে প্রাচীন, ঋদ্ধ নেচার পত্রিকা মন্তব্য করছে – it might work its way down to the lungs and debilitate that organ. How it gets down there, whether it moves cell by cell or somehow gets washed down, is not known”। JAMA-তে প্রকাশিত (১২.০৫.২০২০) “Detection of SARS-CoV-2 in Different Types of Clinical Specimens”-এ বলা হচ্ছে – whether the virus can be detected in specimens from other sites, and therefore potentially transmitted in other ways than by respiratory droplets, is unknown. এই হচ্ছে আপাতত করোনাভাইরাস নিয়ে সাম্প্রতিকতম জ্ঞান।
করোনা ভাইরাস আসলে একটি জেনেটিক “ইন্সট্রাকশন”-কে (যে “ইন্সট্রাকশন” ভাইরাসের নিজের লক্ষ লক্ষ কপি তৈরি করতে পারে) ঘিরে থাকা তৈলাক্ত পর্দা। একটি আরএনএ থ্রেডে মাত্র ৩০,০০০ “letters” (a, c, g and u) দিয়ে তৈরি হয় “ইন্সট্রাকশন”, যেখানে মানুষের জেনোমের ক্ষেত্রে ৩০০ কোটি লেটার থাকে। একটি আক্রান্ত কোষ এই “ইন্সট্রাকশন” পড়ে ফেলে এবং সে নির্দেশ অনুযায়ী অনেক রকমের ভাইরাস প্রোটিন তৈরি হয়। শুরু হয় করোনার খেলা – কোষের ইমিউনিটির প্রতিক্রিয়াকে অবদমন করা থেকে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তৈরি করা।
ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য হল এর শরীরের ওপরে এক বিশেষ চরিত্রের “স্পাইক প্রোটিন” থাকে। এই প্রোটিনের সাহায্যে মানুষের কোষের রিসেপ্টরের ওপরে ভালোভাবে গেঁথে গুছিয়ে বসতে পারে। এবং ভাইরাসটি এর নিজের ইচ্ছেমতো কোষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে যে যে উপসর্গ মানুষের শরীরে দেখা যায় (জ্বর, শুকনো কাশি, গলা এবং শরীরে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) সেগুলো তৈরি হয়। সেলুলার অ্যন্ড মলিক্যুলার ইমিউনোলজি জার্নালে প্রকাশিত (৩১.০৩.২০২০) “COVID-19: a new challenge for human beings” গবেষণাপত্র অনুযায়ী করোনাভাইরাস -৮০* সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কয়েকবছর স্টোর করে রাখা যায়। নিষ্ক্রিয় হয় ৩০ মিনিট ধরে ৫৬* সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে। নেচার মেডিসিন পত্রিকায় (১৫.০৪.২০২০) প্রকাশিত “Temporal dynamics in viral shedding and transmissibility of COVID-19” গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে একজন রোগীর শরীরে সবচেয়ে বেশি “viral load” দেখা গেছে যখন উপসর্গ শুরু হয়। এ পর্যবেক্ষণ থেকে এদের অভিমত –infectiousness peaked on or before symptom onset। এও আরেক বিপত্তির কথা। উপসর্গ শুরু হবার আগে আক্রান্ত মানুষটি আরও অনেক মানুষকে সংক্রামিত করে ফেললো। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে ভাইরাসটি বিভিন ধরনের সারফেসে বা উপরিতলে কতদিন অবধি সক্রিয় থাকতে পারে। তাহলে সে অনুযায়ী সতর্কতা নেওয়া সম্ভব। নীচের ছবিটি এটা বুঝতে সাহায্য করবে।
চিনে প্রথম আক্রান্তের শরীরে যে জেনোম পাওয়া গিয়েছিল পরবর্তী আক্রান্তের শরীরে ১৮৬তম স্থানে u letter-এর পরিবর্তে c হয়ে যায়। এভাবে মিউটেশন ঘটে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় গিয়ে এ মিউটেশন নতুন নতুন করে হয়, এমনকি একজন মানুষের শরীরে প্রবেশের পরেও মিউটেশন ঘটতে থাকে। শ্বাসনালী থেকে ফুসফুসে পৌঁছনোর পথেও মিউটেশন ঘটে। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর (৬.০৫২০২০) “New Coronavirus Spread Swiftly Around World From Late 2019, Study Finds” প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন – “almost 200 recurrent genetic mutations of the new coronavirus - SARS-CoV-2 - which the UCL researchers said showed how it is adapting to its human hosts as it spreads”। ট্রাম্প কথিত হাস্যকর চিনা-ভাইরাস কল্পকাহিনীর সারবত্তা বিনাশ করার পথে এটি সাম্প্রতিক্তম সংযোজন – প্রথম গবেষণাপত্র বেরিয়েছিল নেচার পত্রিকায় প্রায় দু’মাস আগে “The proximal origin of SARS-CoV-2” শিরোনামে (১৭.০৩.২০২০)। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা এটাও লক্ষ্য করেছেন তাঁরা যে করোনা ভাইরাস জেনোম নিয়ে কাজ করেছেন সেখানে প্রায় ২০০টি জেনেটিক পরিবর্তন বা মিউটেশন দেখা গেছে।
একইসাথে রোগের উপসর্গও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক মান্য সংস্থা CDC এবং WHO জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্টকে অধিক গুরত্ব দিয়ে দেখছিল। পরে CDC একে সংশোধন করে আরও কয়েকটি উপসর্গকে যুক্ত করে – (১) কাঁপুনি দিয়ে ঠাণ্ডা লাগা, (২) মাঝেমাঝেই কাঁপুনি এবং শীত করা, (৩) মাথাব্যথা, (৪) ঘ্রাণের অনুভূতি হারিয়ে ফেলা, (৫) মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, (৬) গলা ব্যথা এবং গলা খুসখুস বা বসে যাওয়া। কিন্তু গত সপ্তাহ দুয়েক বা তার কিছু বেশি সময় ধরে এমন কিছু নতুন উপসর্গ বিজ্ঞানীরা দেখছেন যা চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্ট্রোক বাড়িয়ে দিচ্ছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (২৮.০৪,২০২০) প্রকাশিত হয়েছে “Large-Vessel Stroke as a Presenting Feature of Covid-19 in the Young” শীর্ষক গবেষণাপত্র। এতে বলা হচ্ছে যে অতিমারির সময়ে হাসপাতালে যাবার অনীহা এদের মৃত্যুকে ত্বরাণ্বিত করেছে। নিউ ইংল্যান্ডেই (৮.০৫.২০২০) আরেকটি চিঠি প্রকাশিত হয়েছে - Collateral Effect of Covid-19 on Stroke Evaluation in the United States। সেজন্য রক্ত তঞ্চন আটকানোর ওষুধ বা ব্লাড থিনার এখন চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠছে। জার্নাল অব আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি-র প্রাক-প্রকাশ একটি গবেষণাপত্রের শিরোনাম “Association of Treatment Dose Anticoagulation with In-Hospital Survival Among Hospitalized Patients with COVID-19”। অ্যানালস অব ইন্টার্নাল মেডিসিন-এ (৬.0৫.২০২০) প্রকাশিত গবেষণাপত্র “Autopsy Findings and Venous Thromboembolism in Patients With COVID-19: A Prospective Cohort Study” থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে – “The high incidence of thromboembolic events suggests an important role of COVID-19–induced coagulopathy.”
এছাড়াও ডায়ারিয়াও আরেকটি উপসর্গ হিসেবে দেখা দিচ্ছে, এমনকি কিছু কিছু মানসিক উপসর্গও। ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত (১৮.০৫.২০২০) একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে – “we should prepare to treat large numbers of patients with COVID-19 who go on to develop delirium, post-traumatic stress disorder, anxiety, and depression is an important message for the psychiatric community.
চিকিৎসাবিজ্ঞানকে ধন্দে ফেলার মতো আরেকটি উপসর্গ হল রক্তের এ ভাইরাস হিমোগ্লোবিনেকে ভেঙ্গে দেয়, হিমোগ্লোবিন আরেকটি রাসায়নিক পদার্থ পরফাইরিন হয়ে রক্তে ভেসে বেড়ায়, রক্ত আর অক্সিজেন বহন করতে পারেনা – অথচ রোগী কোন শ্বাসকষ্টের উপসর্গের কথা বলেনা। এ এক অদ্ভুত অবস্থা! এখানে ভেন্টিলেটরেও ভালো কাজ হয়না। আরও চিন্তার খবর হল আমেরিকার Centers for Disease Control and Prevention ১৪ মে, ২০২০-তে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রকাশিত “Health Advisory”-তে জানাচ্ছে – Multisystem Inflammatory Syndrome in Children (MIS-C) Associated with Coronavirus Disease 2019 (COVID-19)। এই নতুন উপসর্গ ইতালিতে পাওয়া কাওয়াসাকি-ধরনের রোগের মতো। ইংল্যান্ডেও এরকম বেশকিছু সংখ্যক রোগী দেখা গেছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ (১৫.০৫.২০২০) প্রকাশিত একটি বৃহৎ গবেষণাপত্রে “Severe Covid-19”-এ বলা হয়েছে – “A hallmark of the Covid-19 pandemic is the sudden appearance of an unprecedented number of critically ill patients in a small geographic area.” উপসর্গের বিস্তার একটি গ্রাফের সাহায্যে বোঝানো হয়েছে। এ লেখাতেই মন্তব্য করা হয়েছে – Little is known about the pathogenesis and treatment of the new disease.
এছাড়া রয়েছে দুটি মারাত্মক পরিণতি – (১) cytokine storm – যখন শরীরে সমগ্র ইমিউন সিস্টেম ঝড়ের মতো আচরণ করে এবং শরীর একে সামলাতে পারেনা, এবং (২) fulminant myocarditis – আমাদের হার্ট আর স্বাভাবিক আচরণ করতে পারেনা এবং ফেইল করে, যাকে চিকিৎসায় সামলানো প্রায় দুঃসাধ্য। মোট কথা হল মাত্র ৫ মাসের মধ্যে একের পরে এক নিত্যনতুন উপসর্গ এবং প্যাথোফিজিওলজির পরিবর্তন আমাদের হদিশে আসছে। আমরা আরেকবার বুঝতে পারছি যে ভাইরাসটি সম্বন্ধে আমরা এখনো খুব সামান্য জানি – আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের ধারণা সত্ত্বেও।
একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র – “An outbreak of severe Kawasaki-like disease at the Italian epicentre of the SARS-CoV-2 epidemic: an observational staudy” (Lancet – ১৩.০৫.২০২০) দেখাচ্ছে যে মারাত্মক “কাওয়াসাকি ডিজিজ” ভারতে শিশুদের ক্ষেত্রে ১,০০,০০০ শিশুর মধ্যে ১টি ঘটে থাকে সে অসুখের প্রায় “30-fold increased incidence of Kawaski-like disease” ঘটেছে ইতালিতে।
worldometer-এর নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী (১৭.০৫.২০২০ অবধি) পৃথিবীতে মোট আক্রান্ত – ৪,৭.৪৫,৩৩৩; মৃত – ৩১৩,৭৪৩। এর মধ্যে কেবলমাত্র আমেরিকায় মৃত – ৯০,১১৩ (ভিয়েতনাম যুদ্ধে সরকারিভাবে মৃতের চেয়ে বেশি), আক্রান্ত ১,৫০৭,৭৯৮। ইংল্যান্ডে মৃত – ৩৪,৪৬৬, আক্রান্ত – ২৪০,১৬১। ভারতে মৃত – ২,৮৯৭, আক্রান্ত – ৯১,৩১৪। এবং অদূর ভবিষ্যতে এ মৃত্যুমিছিল জীবনের অভিমুখে হাঁটতে শুরু করবে এমন কোন লক্ষণ আমাদের দৃষ্টিপথে নেই। শুধু এটুকুই নয়। আরও কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা মাথায় রাখবো – (১) মানুষের মাঝে এক এক অদ্ভুত অবদমিত আতঙ্ক (suppressed panic), অনুমিত মৃত্যুভয় (anticipatory dread) এবং অনিশ্চয়তার বাস্তবতা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। আমাদের দেশের মোট শ্রমিকের ৪০% অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের ক্ষেত্রে এ এক দুর্বিষহ অশরীরী বোঝা। করোনা ভাইরাসের আক্রমণ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে এক অনিচ্ছাকৃত কাঠামোগত হিংসার মুখে যাকে ইংরেজিতে বলে structural violence. (২) একইসাথে আমরা যেমন করোনাকে “তাড়ানো”-র জন্য এবং আমাদের জাতীয় সংহতির নিদর্শন রাখার জন্য রাষ্ট্রের নির্দেশে কাঁসর-ঘন্টা, ড্রামসেট ইত্যাদি বাজিয়েছি, তেমনি ঠিক রাত ৯টায় ৯-১০ মিনিটের ভারতকে আঁধার করেছি – শুধু জ্বলেছে দিয়া, মোবাইল টর্চ। ঐতিহাসিক হবসবম একে বলতেন “inventing tradition” – নতুন ধরনের জাতীয়তাবাদের পুনরুজ্জীবনের জন্য। (৩) এর বিপরীতে আমাদের সামাজিক বোধে এবং চিন্তায় সহাবস্থান করছে একধরনের “numbing of our collective sensitivity” – আমাদের বিবশ হয়ে যাওয়া সংবেদনশীলতা, যা নিরন্ন, ভুখা, সহায়হীন, স্থানান্তরী, সম্পদ সৃষ্টিকারী অসংগঠিত শ্রমিকদের হীনতম অপমানেও, না-খেয়ে মরে যাওয়াতেও তেমন কিছু অনুভব করেনা। আমাদের বিবশ হয়ে যাওয়া সংবেদনশীলতা আটকে থাকে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়।
বর্তমান পৃথিবীর এরকম ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ, সমাজতত্ত্বের বিচারে, ভীষণভাবে দৃশ্যমান এবং বোধ্য (visible and discernible)। এর সাথে মাথায় রাখতে হবে মাত্র ৫ মাসের মধ্যে পৃথিবীর ২৩০টি দেশে ছড়িয়েছে এবং একদিকে, পৃথিবী জুড়ে এত সংখ্যক মানুষের মৃত্যু আর, অন্যদিকে, এ ভাইরাসের চরিত্রের বেশিরভাগ অংশই বিজ্ঞানীদের এবং চিকিৎসকদের কাছে অজানা হবার জন্য নিত্যনতুন উপসর্গ নিয়ে ভাইরাস সংক্রমণ। যদিও এ ভাইরাসের যে পরিমাণ সংক্রমণ ক্ষমতা মৃত্যুহার ততটা নয়, কিন্তু পরিস্থিতি সাপেক্ষে মৃত্যুহারও অনেক সময়েই যথেষ্ট বেশি। ৮০-৮১% আক্রান্ত সাধারণভাবে সেরে যায়, ১৪%-এর ক্ষেত্রে উপসর্গ তীব্রতর হয় ও হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, এবং ৫%-এর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে এবং এদের ৪৯% বা তার বেশি ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে।
উপসর্গ দেখার পরে কেবল আমরা শরীরের ভেতরে ঢুকে ভাইরাসের কার্যকলাপের খানিকটা অনুমান ও ব্যাখ্যা করতে পারছি। সর্বোপরি, এর কোন চিকিৎসা নেই। যদিও এ বছরে আমেরিকার ভোটের বাজারে ট্রাম্প স্বভাবসিদ্ধভাবে ধূর্ত অথচ অর্ধশিক্ষিত ব্যবসায়ীর মতো হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং অ্যজিথ্রোমাইসিনকে “game changers” বা খেলা ঘুরিয়ে দেবার মতো ওষুধ বলে হুল্লোড়ের জন্ম দিয়েছিলেন। যদিও সমস্ত নির্ভরযোগ্য জার্নালের ট্রায়াল রিপোর্ট একে হার্টের পক্ষে ক্ষতিকারক এবং ব্যবহার না করার পক্ষে একবাক্যে রায় দেবার পরে আর কোন উচ্চবাচ্য করেন নি। ভারতেও হুল্লোড় স্তিমিত হয়েছে। আরেকটি নতুন ওষুধ – রেমডেসিভির যা একটি কৃত্রিম নিউক্লিওসাইড এবং করোনাভাইরাসের পলিমারেজ চেইন তৈরিকে আটকে দিয়ে কাজ করে – নিয়ে ভারি শোরগোল পড়েছে। কিন্তু এটা যত না ওষুধ হিসেবে কার্যকরী তার চেয়ে কার্যকরী ট্রাম্পের America First নীতির পতাকাবাহক হিসেবে। এখনও কোন বড়ো double-blind, placebo-controlled , randomized controlled trial প্রশ্নাতীতভাবে এর ঔকর্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। তবে ওষুধটি নিয়ে চাউড় হবার পরে এর “আবিষ্কারক” Gilead Sciences-এর শেয়ারের দাম ৮.১% বেড়ে গেছে এপ্রিলের মাঝামাঝি।
worldometer-এর তথ্য বলছে (১৭.০৫.২০২০) প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় করোনা সংক্রমণ বোঝার জন্য টেস্টের সংখ্যা ১৮টি দেশে পরপর এরকম –
আমেরিকাঃ. ৩৬,১৩৬;
ইংল্যান্ডঃ ৩৬,৬৯৬;
স্পেনঃ ৬৪,৯৭৭;
ইতালিঃ ৪৮,৬৯৮;
জার্মানিঃ ৩৭,৫৮৫;
ফ্রান্সঃ ২১,২১৮;
ডেনমার্কঃ ৭৬,৭৮৫;
ইরানঃ ৮,১৯৮;
নিউজিল্যান্ডঃ ৪৭৩৫৯;
অস্ট্রেলিয়াঃ ৪০,৯২৮;
ভিয়েতনামঃ ২,৮২৮;
থাইল্যান্ডঃ ৪,০৯৯;
সিঙ্গাপুরঃ ৪২,১৩৩;
দক্ষিণ কোরিয়াঃ ১৪,৫৮৪;
ইজরায়েলঃ ৫৭,৭৩৩;
পাকিস্তানঃ ১,৬৯৫, শ্রী লঙ্কাঃ ২,০১৬; ভারতঃ ১৬১৬; এবং বাংলাদেশঃ ১,০৬৫। এ পরিসংখ্যান থেকে পরিষ্কার হবে কতসংখ্যক মানুষের টেস্ট করা হয়েছে প্রতি ১০ লক্ষে, আর কি বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মতো জনঘনত্বের দেশে “সুপ্ত সংক্রামক” হিসেবে লুকিয়ে থাকবে। পরিণতিতে, লকডাউন পরবর্তী সময়ে আমাদের হয়তো সবচেয়ে খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এখানে গল্পকথার কোন স্থান নেই, কঠোর পরিসংখ্যান যা দেখাচ্ছে আমরা সেটুকুই বিচার করবো। স্বাভাবিক অবস্থায় বকরোনার কোন ওষুধ নেই। শুধুমাত্র টেস্ট, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং আইসোলেশন বা আলাদা করে রাখা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। এজন্যই টেস্টের এত গুরুত্ব।
নেচার বায়োমেডিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রকাশিত একটি নজর করার মতো প্রতিবেদন হল “Sustained suppression” (১৩.০৫.২০২০)। এ প্রতিবেদনে পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে – “Further COVID-19 outbreaks are unavoidable ... The only plausible way to achieve herd immunity is through mass vaccination.” তাহলে আমাদের করণীয় কি? এ লেখায় দিকনির্দেশ করা হয়েছে – “Continued physical distancing outside the home, mass testing, isolation of cases, the tacing of contacts who may have been exposed and their quarantining for two weeks.”
এখন বিশেষ করে যে বিষয়টি চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে তা হল উপসর্গহীন pre-symptomatic এবং asymptomatic আক্রান্তের সংখ্যা এবং বিশিষ্টতা। এদের রোগের উপসর্গ নেই, অথচ ক্রমাগত ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাচ্ছে সবার মাঝে – যারাই এর সংস্পর্শে আসবে সবার মাঝে। দু-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নালের গবেষণাপত্র থেকে এ বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যায়। নেচার মেডিসিন (১৫.০৪.২০২০)-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র “Temporal dynamics in viral shedding and transmissibility of COVID-19” থেকে জানা যায় ৪৪% পর্যন্ত বা তার বেশি প্রি-সিম্পটোম্যাটিক বাহক হতে পারে। নেচার-এ প্রকাশিত (২০.০৩.২০২০) আরেকটি গবেষণাপত্র “Covert coronavirus infections could be seeding new outbreaks”-র হিসেবে সুপ্ত সংক্রামকের সংখ্যা ৬০% অবধি হওয়া সম্ভব।
আরও সাম্প্রতিক সময়ে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল-এ প্রকাশিত (২৭.০৪২০২০) “Asymptomatic Transmission, the Achilles’ Heel of Current Strategies to Control Covid-19” সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “Quantitative SARS-CoV-2 viral loads were similarly high in the four symptom groups (residents with typical symptoms, those with atypical symptoms, those who were presymptomatic, and those who remained asymptomatic). It is notable that 17 of 24 specimens (71%) from presymptomatic persons had viable virus by culture 1 to 6 days before the development of symptoms. Finally, the mortality from Covid-19 in this facility was high; of 57 residents who tested positive, 15 (26%) died.” অস্যার্থ, বিভিন্ন গ্রুপের এবং চরিত্রের যে প্রাক-উপসর্গ বা উপসর্গহীন রোগীদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের সংখ্যা ৭১% পর্যন্ত হতে পারে এবং যে বিশেষ পরিবেশে এদের হিসেবনিকেশ করা হয়েছে সে পরিবেশে টেস্ট পজিটিভ আক্রান্তদের মৃত্যুহার ২৬%-এর মতো বিপজ্জনক স্তরে থাকতে পারে।
মোদ্দা কথা হল, যদি টেস্ট কম হয় তাহলে সংক্রমিত এবং সংক্রামকেরা সামাজিকভাবে সুপ্ত থাকবে এবং লকডাউন উঠে গেলে সংক্রমণের চেহারা কি হবে (যেহেতু নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া বা ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো testing, contact tracing, isolation and treatment যথেষ্ট পরিমাণে করা যায়নি বিভিন্ন কারণে) তা অনুমানের বাইরে।
সংক্ষেপে আমাদের ভালো করে বুঝে নেওয়া দরকার কিভাবে সংক্রমণ ছড়ায়? ভাইরাসের প্রজনন সংখ্যা (রিপ্রোডাকশন নাম্বার) দিয়ে এর গতিপ্রকৃতি এবং সংক্রামিত করার ক্ষমতা মাপা হয়। একে বলা হয় R0 – যা দিয়ে বোঝা যায় একজন সংক্রমিত মানুষ ক’জনের মাঝে এই ভাইরাসকে পৌঁছে দিতে পারে। সংক্রমণের সময় সাধারণভাবে এ সংখ্যা ২-২.৫ বা ৩। চিনের য়ুহানে একসময়ে এটা ৪ অব্দি পৌঁছেছিল। এখন এ সংখ্যা ০.৩২-এ এসে পৌঁছেছে। এপিডেমিওলোজির ভাষায় সংখ্যাটি ১-এর নীচে গেলে সংক্রমণমুক্ত বলা যেতে পারে। এখানে আরো পরিষ্কার করে বলা দরকার – এপিডেমিওলোজির ভাষায় সংখ্যাটি ১-এর নীচে গেলে সংক্রমণমুক্ত বলা যেতে পারে না। আমাদের বুঝতে হবে সংখ্যাটি ১ এর নিচে গেলে সংক্রমণ হয়ে মহামারীর আকার ধারণ করার ক্ষমতা আর থাকে না। ১ এর নিচে গেলে নতুন সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়, নতুন ক্লাস্টার হবার সম্ভাবনা কমে যায়। একে সঠিক অর্থে সংক্রমণ মুক্ত বলা যায় না। Effective Reproduction Number 0.30 মানে আগে যদি R = 2 হয়ে থাকে যেখানে একজন মানুষ দুজনকে সংক্রমণ করছিলো (R = 2 ), এখন উল্টোটা, তিনজন সংক্রমিত ও আক্রান্ত লোক লাগবে একজনকে রোগ ধরাতে গেলে, অর্থাৎ, খুব বড় ক্লাস্টার ছাড়া আর রোগ টিকবে না। সংক্রমণমুক্ত ঠিক নয়। ক্লাস্টারগুলো খুলে গেলে আবার সংক্রমণ বা ছোট বড় মহামারী হতে পারে, যেমনটা চিনে কিংবা সিঙ্গাপুরে হচ্ছে।
ঠিক এখানেই বিপদ কম পরিমাণে টেস্ট বা কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং হলে আমরা কার্যত “আগ্নেয়গিরি শিখরে পিকনিক” করছি। ভারতের জনঘনত্ব এবং জনতার আর্থ-সামাজিক বিপুল বৈষম্য বেশি পরিমাণ টেস্ট বা কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং-এর ক্ষেত্রে বাস্তবিক অসুবিধের কোন সন্দেহ নেই।
রোগের “শ্রেণীবিভাজন” – রোগের “শ্রেণীবৈষম্য”
স্যার মাইকেল মার্মট তাঁর The Health Gap পুস্তকের শুরু করেছেন এই বাক্যটি দিয়ে – Why treat people and send them back to the conditions that made them sick? পরে এর ব্যাখ্যা করেছেন যে আমরা ডাক্তার হিসেবে আর্ত রোগির চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত। কিন্তু যদি মানুষের স্বাস্থ্য এবং behaviour মানুষ যে সামাজিক পরিবেশে থাকে তার সাথে যুক্ত হয় তাহলে, তিনি নিজেকে প্রশ্ন করছেন – “whose job it should be to improve social conditions. Shouldn’t the doctor, or at least this doctor, be involoved?” বড়ো কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিলেন বিশ্ববন্দিত চিকিৎসক তথা এপিডেমিওলজিস্ট স্যার মার্মট। “চোপ! অতিমারি চলছে” বলে আমরা আপাতত প্রশ্নগুলোকে চুপ করিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারি। কিন্তু প্রশ্নগুলো থেকেই গেলো।
WHO-এর হিসেব অনুযায়ী ২০১৮ সালে ৯০ লক্ষ থেকে ১.১ কোটি মানুষ টিবি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বছরে ১২ লক্ষ অর্থাৎ মাসে ১ লক্ষ মানুষ মারা যায় এই রোগে। এর সাথে যোগ করতে হবে এইচআইভি-আক্রান্ত রোগীদের টিবিতে মারা যাবার সংখ্যা ২,৫১,০০০।
২০১৮-তে ২ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ৪,০৫,০০০ জন মারা যায়। অথচ আমরা জানি ম্যালেরিয়া নির্মূল প্রোগ্রাম বিপুল উদ্যমে শুরু হয়ে দানবীয় বহুজাতিক কোম্পানির ডিডিটি বিক্রী হয়েছে কয়েক হাজার বা লক্ষ কোটি টাকার। ডিডিটি-র ব্যাপক ব্যবহার প্রকৃতি-জীব জগৎ-মানুষের ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে, বসন্ত ঋতুকে স্তব্ধ করে দিয়েছে (র্যাচেল কারসনের সাড়া জাগানো পুস্তক Silent Spring দ্রষ্টব্য)। ৫ বছরের কম বয়সের শিশুরা ম্যালেরিয়ায় সবচেয়ে আক্রান্ত হয় এবং ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ৬৭% শিশু মৃত্যু। এর মধ্যে সাদা মানুষদের বোঝা কালো ও হতদরিদ্র আফ্রিকা অঞ্চলে পৃথিবীর মোট ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ৯৩% ঘটে, মৃত্যু ঘটে ৯৪% আক্রান্তের।
৫ বছরের কমবয়সী ৫,২৫,০০০ শিশু প্রতিবছর ডায়ারিয়ার মতো রোগে মারা যায়। প্রায় ২০০ বছর হয়ে গেল শুধুমাত্র পরিশুদ্ধ পানীয় জলের পরিচ্ছন্ন সরবরাহ করে ডায়ারিয়ার মতো অসুখ প্রথম বিশ্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। কেবলমাত্র নিরাপদ ও সংক্রমণ-মুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং স্যানিটেশন ও হাইজিনের ব্যবস্থা করে এ রোগ ঠেকানো সম্ভব। সমগ্র বিশ্বে শিশুদের ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হবার সংখ্যা ১৭০ কোটি।
কিন্তু এ রোগগুলো ক্রনিক এবং দারিদ্র্যের অসুখ। ক্যান্সারের মতো “disease of modernity” নয় (সিদ্ধার্থ মুখার্জির Emperor of All Maladies দ্রষ্টব্য) কিংবা হার্টের বা স্থুলতার মতো হাই-টেক, আকাশছোঁয়া মুনাফা দেবার মতো রোগতো একেবারেই নয়। এজন্য এ অসুখগুলো সাধারণভাবে invisible and indiscernible – দৃশ্যমানতা এবং বোধগম্যতার বাইরে। এদের চিকিৎসার ভাষায় একটা নামই হয়ে গেছে “tropical neglected diseases”।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং এ রোগগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে। প্রথমত, রোগের ছড়িয়ে পড়ার দ্রুততা, সংক্রমণের ক্ষমতা এবং ব্যাপ্তি। ৫ মাসের মধ্যে ২০০-র বেশি দেশে এরা ছড়ায়নি। দ্বিতীয়ত, উপরের সবকটা রোগেরই চিকিৎসা আছে, করোনার চিকিৎসা নেই। রাষ্ট্রিক অবহেলা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙ্গেচুড়ে দিয়ে কর্পোরেট পুঁজি নিয়ন্ত্রিত রোগ-কেন্দ্রিক (ভার্টিকাল প্রোগ্রাম) পাঁচতারা হাসপাতাল যেখানে উচ্চমূল্যে হাই-টেক স্বাস্থ্য পরিষেবা (স্বাস্থ্য নয়) বিক্রী করার সমস্ত ব্যবস্থা করার ফলে এ রোগগুলো লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণ নিয়ে নেয় প্রতিবছর। তৃতীয়ত, ইংরেজিতে বললে এই ভাইরাসের আক্রমণ বিশ্বজুড়ে যে violence of uncertainty – অনিশ্চয়তা এবং উদ্বেগজনিত যে স্ট্রেস তৈরি করেছে তা একেবারে অভাবিতপূর্ব, অভূতপূর্ব। এ রোগ একইসাথে অবদমিত আতঙ্ক (suppressed panic) এবং প্রবল মৃত্যুভয়ের আশঙ্কা (anticipatory dread) তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে আরও কয়েকটি কথা বলে নেওয়া যায়। এই ভাইরাসের সংক্রমণ পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক মানচিত্রে সম্ভবত কিছু সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনতে চলেছে।
প্রথম, সোভিয়েত শক্তির পতনের পরে একমেরু বিশ্বের অধীশ্বর হবার যে দর্প এবং ঔদ্ধত্য আমেরিকা এতদিন দেখিয়েছে সেখানে বোধহয় একটু চিড় ধরেছে। এমনকি ইয়ুভাল হারারির মতো রাষ্ট্রপন্থী লেখক তথা ইতিহাসকারও তাঁর টাইম পত্রিকায় প্রকাশিত (১৫.০৩.২০২০) প্রবন্ধের শিরোনাম লিখছেন – In the Battle Against Coronavirus, Humanity Lacks Leadership. এর কদিন বাদেই (২০.০৩.২০২০) ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকায় আরেকটি বহু আলোচিত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল – The World After Coronavirus. এখানে তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানালেন – In previous global crises – such as the 2008 financial crisis and the 2014 Ebola epidemic – the US assumed the role of global leader. But the current US administration has abdicated the job of leader. সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবও একই কথা বলেছেন – বর্তমান সংকটের সময়ে বিশ্বনেতৃত্বের শূণ্যতা, অভাব।
দ্বিতীয়, বিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রের মধ্যে এমন নিবিড় ও নির্লজ্জ সখ্য (যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ছাড়া) যেখানে আন্তর্জাতিক স্তরে বিজ্ঞানীরা বরণ করে নিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাদের এমনটা খুব সুলভ ঘটনা ছিলনা। অতি ধুরন্ধর ব্যবসায়ী এবং রাজনীতির পাকা খেলোয়ার ট্রাম্পের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে হৈচৈ বাঁধানো “game changer” বলে এবং পত্রপাঠ FDA এবং NIH (National Institute of Health)-এর মতো মান্য, স্বশাসিত সংস্থার পত্রপাঠ একে অনুমোদন দিয়ে ট্রায়াল শুরু করে দেওয়ার চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কি আছে? স্বাস্থ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, শ্রেণীবৈষম্য, মেডিক্যাল-ইন্ডাস্ট্রিয়াল-স্টেট-পলিটিক্স কমপ্লেক্স – সবকিছু একসাথে জুড়ে গেল।
১৭ জানুয়ারি, ১৯৬১ সালে আমেরিকার ভূতপূর্ব প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশবাসীকে সতর্ক করেছিলেন “military-industrial complex”-এর ব্যাপারে। মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রির জোট এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে এরা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করবে। ২৩ অক্টোবর, ১৯৮০-তে তৎকালীন নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের সম্পাদক আর্নল্ড রেলম্যান ঐ পত্রিকায় একটি বিশেষ নিবন্ধ লিখলেন “The New Medical-Industrial Complex” শিরোনামে। এখন আমরা নতুন করে দেখছি state-medicine-politics-industrial complex। আমরা রেলম্যানের প্রবন্ধ লেখার বছরটি খেয়াল করবো। ১৯৭৮-এ আলমা-আটায় গৃহীত comprehensive primary health care-এর ধারণা ১৯৭৯ সালে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে selective primary health care দিয়ে। জোরদার হয়ে উঠছে “New Medical-Industrial Complex”-এর সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী উপস্থিতি। আর এখনতো আরও একধাপ এগিয়ে state-medicine-politics-industrial complex-এর যুগ শুরু হল।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণ চিকিৎসার অভিমুখকে আবার অনিবার্যভাবে ওষুধ, ভ্যাক্সিন এবং হাই-টেক চিকিৎসা (ভেন্টিলেটর, ECMO, মনোক্লোনাল অ্যন্টিবডি, ইন্টারফেরন ইত্যাদি) অর্থাৎ রোগ-কেন্দ্রিক ভার্টিকাল প্রোগ্রামের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তে selective primary care-কে চালকের আসনে বসানোর বাস্তব বৌদ্ধিক ও ব্যবহারিক জমি তৈরি করছে। এই অর্থে করোনা ভাইরাস বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক জলবিভাজিকা হয়ে উঠবে হয়তো।
সায়ান্স-এর সম্পাদকীয়তে (৮.০৫.২০২০) এরকম এক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে শুধুমাত্র কিছু ব্যবহারিক ওষুধ তৈরির পরিবর্তে আমাদের গবেষণার অভিমুখ হওয়া উচিৎ - asking “why” questions (for example, basic research into the pathophysiology of the disease) and not simply from “shovel ready” drug development projects. আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যবেক্ষণ হল – COVID-19 presents the world with a brutal choice between economic and public health. পৃথিবীর আগামী যাত্রাপথে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেবলমাত্র একটি অধরা আশা হয়ে পড়ে থাকবে হয়তো আমাদের সবার কাছে।
তৃতীয়, চিন যাতে কোনভাবেই বিশ্বের সামরিক এবং রাজনৈতিক কর্তৃত্বে ভাগ বসাতে না পারে সেজন্যও করোনা ভাইরাস একটি হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
এবং, চতুর্থ, এই ভাইরাসের উৎস যে কর্পোরেট পুঁজির মুনাফা এবং প্রকৃতির উপরে প্রভুত্বের উদগ্র লালসা যেখানে মানুষ থেকে জীবজগৎ, বনাঞ্চল থেকে প্রতিটি প্রাকৃতিক সম্ভার কেবলমাত্র পণ্য হিসেবে গণ্য হয় – এ সত্যকে আড়াল করার হাতিয়ারও বর্তমান সময়ের এই ভাইরাস। ২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১-এর অতিমারির পরে ২০০৯ সালে Predict Project বলে একটি প্রোজেক্ট তৈরি করা হয় প্রাণী জগৎ থেকে কি পরিমাণ নতুন ভাইরাস মানুষের দেহে এবং বসবাসের অঞ্চলে প্রবেশ করছে সেটা দেখার জন্য। মানুষ-প্রকৃতি-জীব জগৎ এই স্বাভাবিক ভারসাম্য অপূরণীয়ভাবে ভেঙ্গে যাবার ফলাফল হচ্ছে এই ভাইরাসদের মনুষ্য জগতে প্রবেশ। কিন্তু লস এঞ্জেলস টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী (২.০৪.২০২০) এই প্রোজেক্ট ট্রাম্প প্রশাসন বন্ধ করে দেয় – Trump administration ended pandemic early-warning programs to detect coronaviruses। য়ুহানে করোনার ভয়াবহতা শুরু হবার মুখে “the Trump administration ended a $200-million pandemic early-warning program aimed at training scientists in China and other countries to detect and respond to such a threat.” বন্ধ করে দেবার আগে USAID-এর সাহায্যপুষ্ট এই প্রোগ্রাম ১,২০০ বিভিন্ন ভাইরাসকে চিহ্নিত করে যার মধ্যে ১৬০টি নোভেল করোনাভাইরাস ছিল। য়ুহান সহ পৃথিবীর ৬০টি ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞানী এবং টেকনিশিয়ানদের ট্রেইনিং দেওয়াও শুরু করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন “শিব ঠাকুরের আপন দেশে / আইন কানুন সর্বনেশে”-র মতো কলমের এক আঁচড়ে এরকম একটি মূল্যবান প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিল। বিজ্ঞানের ক্ষতি হল, ক্ষতি হল মানুষের।
২০১৪ সালে কয়েকজন গবেষক EcoHealth জার্নালে (২৩.০৫.২০১৪) এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন “Anthropogenic Land Use Change and Infectious Diseases: A Review of the Evidence” শিরোনামে। এখানে দেখানো হয়েছে – “Land use change has the potential to impact disease dynamics directly and indirectly by changing the abundance, demography, behavior, movement, immune response, and contact between host species and vectors, as well as altering host community composition.” জমির ব্যবহারে পরিবর্তন (ল্যান্ড ইউজ চেঞ্জ) কারা করলো? কি উদ্দেশ্যে? যে উদ্দেশ্যে (খনিজ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সম্পদের জন্য) ব্রাজিলের রেন ফরেস্টের ২৫% পুড়িয়ে দেওয়া হয় সে উদ্দেশ্যে। প্রকৃতির উপরে প্রভুত্ব এবং পুঁজির প্রয়োজনে যথেচ্ছ ব্যবহারের বিষময় ফল আমরা ভোগ করছি। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে প্রকাশিত (২.০৪.২০২০) “Escaping Pandora’s Box — Another Novel Coronavirus” প্রবন্ধে স্পষ্ট করে জানানো হচ্ছে – We have reached this point because of continuing increases in the human population, crowding, human movement, environmental alteration, and ecosystemic complexity related to human activities and creations.
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশযুদ্ধেরও আগের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার মুখে ১৯১৭ সালে এক নতুন ধরনের দেশ তৈরি হল – রাজনৈতিক চরিত্রে, অর্থনৈতিক পরিচালনায়, সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গীতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জগতে, নারীর মানুষ হিসেবে উন্মেষে, এবং, সর্বোপরি, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জনস্বাস্থ্য-গণবন্টন ব্যবস্থায়। বিশ্বে এই নতুন জায়মান দেশের পরিচিতি ছিল সোভিয়েত সমাজতন্ত্র হিসেবে। কিন্তু আমাদের আলোচনায় শুধু এটুকু বুঝতে চাইবো – Another World is Possible. হ্যাঁ, অন্য এক পৃথিবীর স্বপ্নসম্ভব জীবনের মহাকাব্য রচনা হচ্ছিল মানুষের স্বপ্নে, বুদ্ধিজৈবিক সৃষ্টিতে। এসব ইতিহাস আমরা সবাই জানি – কেউ মানি, কেউ মানিনা। এরপরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে হিটলারের চূড়ান্ত পরাজয় নিশ্চিত হবার পরে আমেরিকা-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-জাপানের অর্থনৈতিক মডেলের বাইরে, সাংস্কৃতিক চেতনার বাইরে যে আরেকভাবে পৃথিবীকে দেখা যায়, পৃথিবীতে বিচরণ করা সম্ভব সেটা মূর্ত হয়ে উঠলো। ১৯৪৯-এ আরেকটি বিশাল দেশ চিন একই ধরনের রাজনৈতিক পরিচালনা, একই ধরনের মতাদর্শগত বিশ্বাস নিয়ে মুক্ত হল। আরেকবার এক গভীর প্রত্যয় সমাজের উচ্চকোটি বুদ্ধিজীবী সমাজ থেকে মধ্যবিত্ত, গ্রামের চাষাভুসো মানুষ থেকে কারখানার মজুর সবার মাঝে উপ্ত হল, সামাজিক বাস্তব হল – Another World is Possible. অর্থাৎ, বিশ্ব তখন আজকের মতো একমেরু নয়। সেদিন পৃথিবীতে ছিল দ্বিমেরু বিশ্বের শক্তিময় উপস্থিতি। আর এর ফলে বিশ্বের দুর্বল দেশগুলোর দর কষাকষি করার ক্ষমতা বেশি ছিল।
স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন দেখা গেল - এক বড়ো সংখ্যক দেশে নীতি হিসেবে গৃহীত হল কমিউনিটি-কেন্দ্রিক বা horizontal programs। এর বিপরীতে ইন্সিউরেন্স কোম্পানি এবং কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে প্রয়োজন রোগ-কেন্দ্রিক বা vertical programs। করোনা অতিমারি আজ একমেরু বিশ্বে দানবীয় ফার্মা কোম্পানি এবং নিওলিবারাল পুঁজির বাহক রাষ্ট্রগুলোর সামনে নতুন করে রোগ-কেন্দ্রিক বা vertical programs-কে একমাত্র স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং প্রোগ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং বাস্তবায়িত করার সুবর্ণ মুহূর্ত তৈরি করেছে। মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য চুলোয় যাক। চাই আইসিইউ আর ভেন্টিলেটর। পরবর্তীতে এই হাই-টেক চিকিৎসার ধরন আরও বেশি জনগ্রাহ্যতা অর্জন করার সম্ভাবনা রইলো। স্বাস্থ্য-র সংজ্ঞা রূপান্তরিত হয়ে যাচ্ছে (আরও বেশি করে যাবে) বহুমুল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাতে। সাধারণ মানুষের কাছে দুটোই একরম মনে হবে – ম্যাকডোনাল্ড বা কেএফসি-র মতো।
রবীন্দ্রনাথের বলা (যদিও একুশ শতকের পৃথিবীতে তার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক এবং মতদ্বৈধ প্রত্যাশিত) গ্রামসভার কথা, গ্রামের সমূহকে ব্যবহার করে গ্রামে পুকুর খোঁড়া, গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা, গ্রামের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রামে নেওয়া (প্রসঙ্গত সমধর্মী ধারণা গান্ধীজিরও ছিলো) এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মানুষের বোধে জারিত হতে শুরু করেছিলো। অন্য একটা প্রসঙ্গও যারা ভাবনাচিন্তা করে তাদের চিন্তায় এল – জনস্বাস্থ্যের (পাবলিক হেলথ) এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের (ক্লিনিক্যাল হেলথ) মধ্যেকার সম্পর্ক কি হবে? কিভাবেই বা এ’দুয়ের মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক ও টানাপোড়েন মেটানো হবে? স্থানীয় উদ্যোগকে কিভাবে সংগঠিত করা হবে? রাষ্ট্রের পরিকল্পনার সাথে একে সম্পর্কযুক্ত করা হবে কি পদ্ধতিতে? আমরা চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মী এবং চিকিৎসাপ্রার্থী সাধারণ মানুষ যদি রাষ্ট্রের শেখানো, কর্পোরেটদের বোঝানো আর পুঁজি-অনুগামী মিডিয়া উৎপাদিত তথ্যকেই (জ্ঞানও কি?) একমাত্র ও অভ্রান্ত বলে ধরে না নিই তাহলে আমাদের বড়ো প্রিয়, আমাদের একান্ত আশ্রয় এই পৃথিবীতে অন্য কি কি সম্ভাবনা খুলেছিল সেগুলো আমাদের আরেকবার বুঝে নেওয়া দরকার – Overton window-র বাইরে এসে।
এ ব্যাপারে উন্নত পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যগর্বী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড সবচেয়ে বেশি সমাজবদ্ধতা দেখিয়েছিল। আমেরিকান পরিভাষায় “সমাজতান্ত্রিক” কাঠামো চালু করেছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে এড্যুইন চ্যাডুইক, জন স্নো এবং সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের সক্রিয় অংশগ্রহণে ভিক্টোরীয় ইংল্যান্ডে পরিচ্ছন্ন পানীয় জলের সরবরাহ কলেরা প্রতিরোধ এবং সাধারণ জলবাহিত অসুখের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। এরপরের ইতিহাস এখন আমাদের বর্তমান আলোচনার জন্য খুব প্রয়োজনীয় নয়। শুধু এটুকু উল্লেখ করি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেই ইংল্যান্ডে National Health Service (NHS) তৈরি হল। উল্লেখ করার মতো হল ১৯৪৮-এর জুন মাসে প্রতিটি বাড়িতে একটি লিফলেট বিলি করা হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল – It will provide you with all medical, dental and nursing care. Everyone- rich and poor, man, woman or child – can use it or any part of it. There are no charges, except for a few special items. There are no insurance qualifications. But it is not a “charity”. You are all paying for it, mainly as tax payers, will relieve your money worries in time of illness.
এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি মডার্না এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাক্সিনের ফেজ-১ ট্রায়ালের যে রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে তাতে বলা হচ্ছে – “At this time, neutralizing antibody data are available only for the first four participants in each of the 25 μg and 100 μg dose level cohorts. Consistent with the binding antibody data, mRNA-1273 vaccination elicited neutralizing antibodies in all eight of these participants, as measured by plaque reduction neutralization (PRNT) assays against live SARS-CoV-2. The levels of neutralizing antibodies at day 43 were at or above levels generally seen in convalescent sera. mRNA-1273 was generally safe and well tolerated”।
প্রসঙ্গত, এখানে আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা দরকার। ট্রাম্প প্রশাসনের “করোনা ভাইরাস টাস্ক ফোর্স”-এর সদস্য এবং সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ৪০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার অ্যান্টনি ফচি (Anthony Fauci) ১২.০৫.২০২০ তারিখে Senate Health, Education, Labor, and Penson Committee-র সামনে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন – “"We will be producing vaccine at risk, which means we'll be [investing] considerable resources in developing doses even before we know any given candidate or candidates work”। একইসাথে যোগ করেছেন – “I must warn that there's also the possibility of negative consequences that certain vaccines can actually enhance the negative effect of the infection, ... The big unknown is efficacy. Will it be present or absent and how durable will it be?” স্বয়ং প্রশাসনিক কর্তা এবং ডাক্তার ফচিই যখন একথা বলেন এরপরে আমাদের আর কি বলার থাকতে পারে ভ্যাক্সিন নিয়ে শুধু ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া?
মডার্না-র সাফল্যকে একমাত্র বলে যেন এখুনি আমরা উদ্বাহু না হই। দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকা (১৮.০৫.২০২০) জানাচ্ছে “Doubts over Oxford vaccine as it fails to stop coronavirus in animal trials”। পরে আরও ব্যাখ্যা করে বলেছে – “A trial of the vaccine in rhesus macaque monkeys did not stop the animals from catching the virus and has raised questions about the vaccine's likely human efficacy and ongoing development. The vaccine, known as ChAdOx1 nCoV-19, is undergoing human trials in Britain.”
আরও কিছু প্রসঙ্গ
আমেরিকায় জাতিবৈরিতা, বিশেষ করে এশিয়ান এবং আফ্রো-আমেরিকানদের ক্ষেত্রে, বেড়ে চলেছে। নেচার পত্রিকায় (৭.০৪.২০২০) সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে – Stop the coronavirus stigma now। বলা হচ্ছে - It’s clear that since the outbreak was first reported, people of Asian descent around the world have been subjected to racist attacks, with untold human costs — for example, on their health and livelihoods.
সায়ান্স-এর মতো জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে “An Unequal Blow” শিরোনামে প্রবন্ধ (১৫.০৫.২০২০)। সেখানে মন্তব্য করা হচ্ছে – The coronavirus pandemic reveals the dangers caused centuries of discrimination and neglect। বলা হচ্ছে – Such oppression and its biological effects was not a natural thing. It was something that could have been changed.
একইসাথে স্বাস্থ্যের এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ সুবিধের ক্ষেত্রে আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ এবং অন্যান্য দেশের মানুষের মধ্যে প্রকট হচ্ছে বৈষম্য। এরকম সংকটের সময়ে নজরে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাধারণ মানুষের তরফে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রনেতাদের ওপরে ট্রাস্ট বা বিশ্বাস। এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তি হয় সরকারের তরফে স্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করা।
ভিয়েতনাম, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মতো দেশে এটা বিশেষভাবে কাজ করেছে। আমাদের এখানে কর্মহীন, ভিটেছাড়া, স্থানান্তরী (migratory-র বাংলা “পরিযায়ী” শব্দটিতে আমি অস্বস্তি বোধ করি। মানুষ আর পাখীকে এক করে দেখতে চাইছিনা।) অসংগঠিত শ্রমিকদের কয়েক’শ মাইল অবধি খিধে-মোচড়ানো পেটে শিশুকে কাঁধে নিয়ে অন্তহীন হেঁটে চলা। আশ্রয় দেবার জন্য সরকার বা রাষ্ট্র নেই। অত্যন্ত নিদারুণভাবে ট্রেনে কাটা পরে ১৬ জন বা তার বেশি শ্রমিক মারা যাবার পরে এ নিরাপত্তাহীনতা আরো বেশি করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। দেখিয়ে দিল রাষ্ট্রের তরফে এদের জন্য চরম ঔদাসিন্য এবং এ “অব”-মানুষগুলোর রাষ্ট্রের প্রতি ট্রাস্ট না থাকা। এমনকি সুপ্রিম কোর্টের সদ্য অবসর নেওয়া বিচারপতি বিচারক দীপক গুপ্ত এই মানুষগুলোর ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ঔদাসিন্যের যে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তা খুব শ্লাঘার বিষয় নয়।
কি হয়নি এই স্থানান্তরী অসংগঠিত শ্রমিক এবং এদের পরিবারের ওপরে? কয়েক’শ মাইল রাস্তা হেঁটেছে, কোন খাদ্যের কিংবা যানবাহনের ব্যবস্থা সরকারের তরফে করা হয়নি (অসরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন সময়ে তাদের সাধ্যমতো খাদ্যের জোগান দিয়েছে), পুলিশের লাঠিচার্জ হয়েছে, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে স্রেফ মরে গেছে, স্যানিটাইজার দিয়ে রাষ্ট্রের তরফে “পরিশুদ্ধ” করে নেওয়া হয়েছে, খোলা আকাশের নীচে রোদে পুড়েছে, বৃষ্টিতে ভিজেছে। আর কত মনোরম সংবর্ধনা ভাবা সম্ভব সাধারণ মেধা নিয়ে জন্মানো একজন মানুষের পক্ষে?
আমেরিকাতেও ভিন্নভাবে, অন্য চরিত্রের, কিন্তু সমধর্মী সমস্যা আছে। আমেরিকার তথ্য হাতে আছে বলে সহজে কথা বলা যায়। পরপর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার শিরোনাম উল্লেখ করি। টাইম পত্রিকায় (৭.০৫.২০২০) একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম – “No Income. Major Medical Bills. What Life Is Like for Millions of Americans Facing Financial Ruin Because of the Pandemic”। সায়ান্স ডেইলি-র শিরোনাম – “COVID-19 has unmasked significant health disparities in the U.S.” (৫.০৫.২০২০)। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর (২৯.০৪.২০২০) এর একটি প্রতিবেদন – ‘A Terrible Price’: Deadly Racial Disparities of Covid-19। একই সংবাদপত্রের ৭.০৫.২০২০ তারিখের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম – “For Latinos and Covid-19, Doctors are Seeing an ‘Alarming’ Disparity”। ওয়াশিংটন পোস্টেও সমধর্মী লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। নিউজ উইক-এ (৭.০৪.২০২০) প্রকাশিত প্রবন্ধ – “Coronavirus Disease Discriminates. Our Health Care Doesn’t Have To”। আমাদের এখানে এভাবে স্বাস্থ্য ও সামাজিক অসাম্য নিয়ে এ পরিমাণ লেখা এখনো চোখে পড়েনা।
এবার মান্য মেডিক্যাল জার্নালগুলোতে প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় এবং গবেষণাপত্রগুলো নজর করি। ল্যান্সেট-এ (১৮.০৪.২০২০) প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনের শিরোনাম – “COVID-19 exacerbating inequalities in the US”। লেখাটিতে মন্তব্য করা হয়েছে – “the pre-existing racial and health inequalities already present in US society are being exacerbated by the pandemic.” অর্থাৎ, আমেরিকার সমাজে আগে থেকেই স্বাস্থ্য এবং জাতের (race) ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তাকে আরো প্রকট করে তুলেছে। এমনকি এ মন্তব্যও করা হয়েছে যে অতিমারি অতিক্রম করলে – “what is needed afterward is a renewed focus to ensure that health is not a byproduct of privilege.” অর্থাৎ, স্বাস্থ্য রাষ্ট্রের দেওয়া কোন প্রিভিলেজ বা সুযোগ নয়। এর পরের বাক্যটিই সঙ্গতভাবে হবার কথা ছিল – স্বাস্থ্য আমার অধিকার! ঠিক একই কথা প্রযোজ্য মানুষ হিসেবে সম্মান, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বাসস্থান হারানো স্থানান্তরী অসংগঠিত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। এদেরকে আমরা দয়া করছিনা। ট্যাক্সদাতা নাগরিক হিসবে সুষম সংস্থান পাওয়া এদের অধিকার। JAMA (Journal of American Medical Association)-র শিরোনাম (১৫.০৪.২০২০) – “COVID-19 and African Americans”। এখানে বলা হচ্ছে – “Low socioeconomic status alone is a risk factor for total mortality independent of any other risk factors.”
নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে (৬.০৫.২০২০) প্রকাশিত “Racial Health Disparities and Covid-19 — Caution and Context” প্রবন্ধে এ সমস্যাকে আরও গভীরভাবে সামাজিক প্রেক্ষিত থেকে দেখা হয়েছে। প্রবন্ধের বক্তব্য – “Racial disparities have become central in the national conversation about Covid-19.” বলা হয়েছে কোভিড-১৯-জনিত যে বৈষম্য এখন প্রকট হচ্ছে তাকে বাস্তব জগতে আর্থ-সামাজিক এবং কাজের সুযোগের বৈষম্যের ফলে তৈরি হওয়া সম্পদহীনতার প্রেক্ষিতে দেখতে হবে। সর্বোপরি, “unemployment, food insecurity and unstable or substandard housing conditions may further perpetuate disparities in health outcomes for people infected by the coronavirus, most specifically among low-income communities of color.” আমদের এখানকার মতোই ওখানেও খাদ্যের অনিশ্চয়তা, বাসস্থানের নিম্নমান এবং মজুরির বৈষম্য বিষময় ফল দিচ্ছে। করোনার অভিঘাতে নগ্ন হয়ে যাচ্ছে আপাত জৌলুষ।
একটি আন্তরিক সতর্কবাণী শোনা গেছে ল্যান্সেট পত্রিকায় (২.০৪.২০২০) – “As the global economy plunges deeper into an economic crisis and government bailout programmes continue to prioritise industry, scarce resources and funding allocation decisions must aim to reduce inequities rather than exacerbate them.” (Why inequality spread COVID-19)
আরও সাম্প্রতিক সময়ে (১৩.০৫.২০২০) নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের আরেকটি প্রবন্ধে (“Inequity in Crisis Standards of Care”) পরিষ্কারভাবে বলা হচ্ছে, যে সমস্ত তথ্য উঠে আসছে তাতে কালো আমেরিকানরা বিষম অনুপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোভিড প্যানডেমিকে। জানানো হচ্ছে – due to the legacy of structural racism and inequality that has resulted in unequal access to affordable health care, safe and stable housing, and quality schools and employment”।
এতো গেল আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের চিত্র। আমাদের এখানে? এখনো অবধি স্থানান্তরী শ্রমিকদের ফেরা এখনো সম্পূর্ণ হলো না। এদের হাতে কোন টাকা নেই। ফলে বাজারে কিছু কেনার ক্ষমতাও নেই। পরিণতিতে রাষ্ট্রের দান, সরকারের অনুগ্রহ এবং স্থানীয় নেতাদের বদান্যতার উপরেই এদের নির্ভর করে থাকতে হবে – যদিও নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এদের হাতে অন্তত ১০০০ টাকা নগদে দেবার কথা একাধিকবার বলেছেন। এর একটা সম্ভাব্য কারণ গণতন্ত্র কেবল সংখ্যার বিচার করে – ভোটের সংখ্যা। ভোটের বাজারে এদের কদর নেই, কে কোথায় কখন থাকে তার ঠিক ঠিকানা নেই। ফলে রাষ্ট্রের দায় কম।
আরেকটা বিষয় হল করোনার এই পরম আতঙ্কের বাজারে আমাদের ভারত রাষ্ট্র ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে – (১) এতদিন ধরে পড়ে থাকা ২০১৯-এর কৃষি সংস্কার আইন পাশ করিয়ে নিয়েছে, (২) কৃষকরা কেউ হাতে নগদ টাকা পাবেনা, কিন্তু ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারবে (ফলে আরও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে বাঁধা পড়বে), এবং (৩) সামরিক ক্ষেত্রে কোন্রকম অনুমোদন ছাড়াই FDI (Foreign Direct Investment বা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ৪৯% থেকে ৭৪% হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা-কে (১৩.০৫.২০২০) দেওয়া নিতি আয়োগের (NIITI Ayog) ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার এক ইন্টারভিউয়ে বলেছেন – “You will see a spate a reforms now, as you have seen in case of labour reforms in the states. (The PM) is bent upon turning this crisis into an opportunity, and I think this is what will happen.”
৫ মাস ধরে বিদ্যমান এই সংকটের সময়েও ফোর্বস-এর পত্রিকায় (২৫.0৪.২০২০) সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে – Billionaire Bounceback: 10 Tycoons Gained $126 Billion Over The Past Month। এই কুবেরদের মধ্যে অ্যামজনের জেফ বেজোস থেকে আমাদের মুকেশ আম্বানি এরকম ১০ জন আছেন। “জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”-র মতো ব্যাপার আর কি!
বুঝ জন যে জানো সন্ধান!
তারপর?
হয়তো কতকগুলো চিরস্থায়ী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে সামাজিক জগতে, চিকিৎসার দুনিয়ায় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিদ্যমান অবস্থায়।
এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে “অপর”-এর নির্মাণ। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় (২৩ এপ্রিল, ২০২০) তুরস্কের নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ওরহান পামুক একটি বিশেষ প্রবন্ধ লিখেছিলেন – “What the Great Pandemic Novels Teach Us”। শিক্ষাগুলোর মধ্যে একটি ছিল যেকোন সংকটের সময়েই মানুষ, বিশেষ করে রাষ্ট্র, একটি অপর বা other খোঁজে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের অন্য একটি প্রবন্ধে (“History in a Crisis — Lessons for Covid-19” – ৩০.0৪.২০২০) মন্তব্য করা হয়েছে – One dramatic aspect of epidemic response is the desire to assign responsibility. From Jews in medieval Europe to meat mongers in Chinese markets, someone is always blamed. This discourse of blame exploits existing social divisions of religion, race, ethnicity, class, or gender identity। আমাদের এখানে এই “অপর” কখনো “চিনা ভাইরাস”, কখনো তবলিঘি জমায়েত (যদিও মহারাষ্ট্রে কোন জমায়েত ছাড়াই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে এখনো পর্যন্ত), আবার কখনো সমাজের “আপদ” স্থানান্তরী অসংগঠিত শ্রমিকেরা। একটি “অপর” পেলে রাষ্ট্র তার নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং জনগ্রাহ্য করে তুলতে পারে। এরকম এক আগামী অভিনব নজরদারি ব্যবস্থাকে ইয়ুভাল হারারি বলেছেন “Under the Skin Surveillance”।
আন্তর্জাতিক জগতে এই “অপর” আপাতত চিন। সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার (১৮.০৫.২০২০) একটি গুরত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম “Trump is threatening the glonal financial system as he looks to punish China”। নিজের অপদার্থতা ঢাকার অধিক ভালো কী উপায় থাকতে পারে? সংবাদে বলা হচ্ছে – “As the Trump administration seeks to hold China for the spread of the coronavirus and deflect attention from its shortcomings, it is widening its search for sanctions and adding financial dimensions to the retribution it is pursuing.”
বেঁচে থাকা এবং অস্তিত্ব নির্বাহের ক্ষেত্রে পার্সোনাল/সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং হয়তো এরপরে জীবনের স্বাভাবিকতায় পরিণত হবে। আমরা গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে ভার্চ্যুয়াল জগতে নিবিষ্ট এবং সন্তরণরত একক ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছি। সে অবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। সমাজবদ্ধ জীবনও হয়তো আর আগের মতো থাকবেনা, ভেঙ্গে যাবে।
রোগী দেখার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন প্রাধান্যকারী জায়গায় যাবার সম্ভাবনা আছে। রোগীকে স্পর্শ করে স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেখা হয়তো কম প্রাধান্য পাবে। গার্ডিয়ান পত্রিকায় (১৩.০৫.২০২০) নাওমি ক্লাইনের প্রতিবেদনের শিরোনাম – How big tech plans to profit from the pandemic। গুগল-এর সিইও Eric Schmidt খুব খোলাখুলি বলেছেন – “The first priorities we are trying to do are focussed on telehealth, remote learning, and broadband”।
একইসাথে করোনাকে কেন্দ্র করে রোগ-কেন্দ্রিক ভার্টিকাল প্রোগ্রাম সামনের সারিতে থাকবে, একেবারে পেছনে চলে যাবে হয়তো সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণা। হাই-টেক মেডিসিন কর্পোরেট পুঁজির নতুন এক লীলাক্ষেত্রের জন্ম দেবে।
বর্তমান সংকটে নেতৃত্ব দেবার ভূমিকায় কোন দেশ ছিলনা। ফলে আশ্চর্য হবোনা যদি এক-মেরু বিশ্ব ভেঙ্গে গিয়ে একাধিক মেরু তৈরি হয়। তাহলে দুর্বল দেশগুলোর দর কষাকষি করার ক্ষমতা বাড়বে। এতে বিশ্ববাসীর উপকার হবার সম্ভাবনা আছে।
এগুলো কতকগুলো যৌক্তিক অনুমান। তার আগে মানুষকে বাঁচতে হবে। অঙ্গুলিমেয় কিছু বিলিয়নেয়ারের মুনাফার উদগ্র লালসা এবং প্রভুত্বের ধর্ষকাম মানসিকতা মানুষ এবং জীবজগৎ ও প্রকৃতির মধ্যেকার ভারসাম্য চিরদিনের জন্য বিলীন করে দিয়েছে। আরও অনেক বিপজ্জনক ভাইরাস ও অণুজীবের আক্রমণের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে। জানিনা নতুন শিশুরা কিভাবে আত্মরক্ষা করবে।
তবে ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে যাচ্ছে একথা বলার জন্য পণ্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত মনে পড়বে কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের কথা। সে উপন্যাসের মূল চরিত্র ডঃ রু (Rieux) ফ্রান্সের কাল্পনিক ওরান শহরের মহামারি প্লেগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বলছেন – “I have no idea what’s awaiting me, or what will happen when this all ends ... For the moment I know this: there are sick people and they need curing.”
মানুষ যত্ন চায়, মমতা চায়, সহমর্মিতা চায়। তাই “what will happen” জানা না থাকলেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এমনকি ভারত সরকারের করোনা অতিমারির জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের মাত্র ০.৭৫% (১৫,০০০ কোটি টাকা) স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও।
এখানেই চিকিৎসকের দায়িত্ব, দায়িত্ব সংবেদী সমাজের, দায়িত্ব মানুষ-মুখী রাষ্ট্রের।
(ভাইরাসের রিপ্রোডাকশন নম্বর সংক্রান্ত ধারণার স্পষ্টতার জন্য আমি অনুজপ্রতিম চিকিৎসক ডঃ অরিন্দম বসুর কাছে ঋণী)
আমি Dr Jayanta Bhattachaya র একজন গুণমুগ্ধ পাঠক। ওনার করোনাসংক্রান্ত লেখা গুলি পড়ে অনেক কিছু শিখেছি। একটা বিষয় ডা: ভট্টাচার্যের কাছেএকটু জানতে চাই।
করোনা মোকাবিলায় তো সংগঠিত স্বাস্হ্য ব্যবস্থা সম্পন্ন বা UHC আছে এমনদেশগুলি গর্ব করার মতো আলাদা কিছু করতে পারে নি। গ্রেট ব্রিটেন বা সুইডেনএর মতো দেশের ফলও বেশ খারাপ।
তাহলে অতিমারী পরবর্তী সময়ে আমাদের “সবার জন্য স্বাস্থ্যের” দাবী কি দুর্বল হয়েযাচ্ছে?
একেবারে গোড়ার প্রশ্ন রেখেছেন ডঃ কাঞ্চন মুখার্জি।
এই অতিমারি চরিত্রের দিক থেকে ভীষণভাবে ভিন্ন - আমাদের এতদিনের চেনা কোন ছবির সাথে মিলছে না। এজন্য এত গাণিতিক মডেল, এত এপিডেমিওলজিকাল হিসেব নিকেশ আমাদের সামনে। ভিন্নমুখী নানা বিশ্লেষণে শিক্ষিত অথচ অ-বিশেষজ্ঞ মানুষও দিশেহারা হচ্ছেন কমবেশি।
এবার প্রশ্নে আসি। এবারের অতিমারিতে একটি মাত্র দেশ ভিয়েতনাম যার চিনের সাথে ১১০০ মাইলের বর্ডার থাকা সত্ত্বেও একটিও মৃত্যু হয়নি করোনা। ওখানে হেলথ ফর অল কমবেশি চালু আছে। আরেকটি দেশ নিউজিল্যান্ড যেখানে ইংল্যান্ডের এনএইচএসের মতো ব্যবস্থা না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য নাগরিককে পয়সা দিতে হয়না। ২০০৮-এ আস্থানা সম্মেলন হয় যেখানে আলমা-আটার সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণাকে লঘু করে ইন্সিউরেন্সকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আরেকদিকে ১৯৭৮-৭৯ থেকে শুরু হয় সিলেক্টিভ প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণা। উদগাতা ফোর্ড ফাউন্ডেশন, কেনেথ অ্যারো (সবচেয়ে কমবয়সে ইকোনমিক্সে নোবেলজয়ী) এবং নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন।
এত কথা বলছি কেন? কারণ ৭০০ কোটির বেশি মানুষের কাছে সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা না পৌঁছুলে মানুষ অর্ধমৃত কম পয়সার শ্রমিক হিসেবে বাঁচবে। স্বাস্থ্য এবং বহুমূল্য, পাঁচতারা হাসপাতালের হাই-টেক স্বাস্থ্য পরিষেবা একই অর্থ বহন করবে।
আমার আশঙ্কা করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে হাই-টেক মেডিসিন এবং কর্পোরেট পুঁজি প্রাথমিক জায়গায় আসবে। আপাতত এই সংকটের সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের কথা কেউ ভাববেও না, implementation তো অনেক পরের কথা।
আন্তর্জাতিক মন্দা থেকে বেরনোর রাস্তা করে দেবে মেডিসিন।
আপাতত আলমা-আটা, সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা আপাতত হেরে যাবে। আমরাও যারা মানুষের সার্বজনীন স্বাস্থ্যের জন্য নিজেদের নিবেদন করার জন্য প্রস্তুত করেছি তাদেরো আপাতত হেরে যাওয়াকে মেনে নিতে হবে - সমস্ত যন্ত্রণা বুকে চেপে।
কিন্তু মানুষের জীবনের নিয়মে, যেটুকু বুঝি, কর্পোরেট রাজ একমাত্র হতে পারেনা। বুনিয়াদি স্বাস্থ্যে ফিরে আসতে হবে।
একেবারে গোড়ার প্রশ্ন রেখেছেন ডঃ কাঞ্চন মুখার্জি।
এই অতিমারি চরিত্রের দিক থেকে ভীষণভাবে ভিন্ন - আমাদের এতদিনের চেনা কোন ছবির সাথে মিলছে না। এজন্য এত গাণিতিক মডেল, এত এপিডেমিওলজিকাল হিসেব নিকেশ আমাদের সামনে। ভিন্নমুখী নানা বিশ্লেষণে শিক্ষিত অথচ অ-বিশেষজ্ঞ মানুষও দিশেহারা হচ্ছেন কমবেশি।
এবার প্রশ্নে আসি। এবারের অতিমারিতে একটি মাত্র দেশ ভিয়েতনাম যার চিনের সাথে ১১০০ মাইলের বর্ডার থাকা সত্ত্বেও একটিও মৃত্যু হয়নি করোনা। ওখানে হেলথ ফর অল কমবেশি চালু আছে। আরেকটি দেশ নিউজিল্যান্ড যেখানে ইংল্যান্ডের এনএইচএসের মতো ব্যবস্থা না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য নাগরিককে পয়সা দিতে হয়না। ২০০৮-এ আস্থানা সম্মেলন হয় যেখানে আলমা-আটার সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণাকে লঘু করে ইন্সিউরেন্সকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আরেকদিকে ১৯৭৮-৭৯ থেকে শুরু হয় সিলেক্টিভ প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণা। উদগাতা ফোর্ড ফাউন্ডেশন, কেনেথ অ্যারো (সবচেয়ে কমবয়সে ইকোনমিক্সে নোবেলজয়ী) এবং নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন।
এত কথা বলছি কেন? কারণ ৭০০ কোটির বেশি মানুষের কাছে সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা না পৌঁছুলে মানুষ অর্ধমৃত কম পয়সার শ্রমিক হিসেবে বাঁচবে। স্বাস্থ্য এবং বহুমূল্য, পাঁচতারা হাসপাতালের হাই-টেক স্বাস্থ্য পরিষেবা একই অর্থ বহন করবে।
আমার আশঙ্কা করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে হাই-টেক মেডিসিন এবং কর্পোরেট পুঁজি প্রাথমিক জায়গায় আসবে। আপাতত এই সংকটের সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের কথা কেউ ভাববেও না, implementation তো অনেক পরের কথা।
আন্তর্জাতিক মন্দা থেকে বেরনোর রাস্তা করে দেবে মেডিসিন।
আপাতত আলমা-আটা, সংহত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা আপাতত হেরে যাবে। আমরাও যারা মানুষের সার্বজনীন স্বাস্থ্যের জন্য নিজেদের নিবেদন করার জন্য প্রস্তুত করেছি তাদেরো আপাতত হেরে যাওয়াকে মেনে নিতে হবে - সমস্ত যন্ত্রণা বুকে চেপে।
কিন্তু মানুষের জীবনের নিয়মে, যেটুকু বুঝি, কর্পোরেট রাজ একমাত্র হতে পারেনা। বুনিয়াদি স্বাস্থ্যে ফিরে আসতে হবে।