এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • উনপাঁজুরে

    মো. রেজাউল করিম লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২৫ মে ২০২০ | ১৯৩২ বার পঠিত
  • ফুলবানু বাস-টারমিনাল এলাকাতে থাকতেই পছন্দ করে। বাস-টারমিনালে ঢুকতে দশ টাকা দিতে হয় বটে, তবে এখানে আয় ভালো। কল্যাণপুর থেকে শত শত বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু ওখানকার মানুষগুলো দান-খয়রাতে তেমন পটু না। হাতটা বড়িয়ে দিলেই রেগে যায়। গাবতলী বাস-টারমিনালই তার পছন্দ। এখানকার মানুষগুলোর বেশভূষা দেখলেই বোঝা যায় এরা কল্যাণপুরের মানুষগুলোর চেয়ে অর্থবিত্তে কমা। তবুও এরাই বাসে ওঠার আগে না হলেও দু’ টাকা দেয়। জ্ঞান হওয়া অবধি সে এখানেই। একেবারে ছোটোবেলায় মায়ের সাথে থেকে ভিক্ষে করত। পাঁচ-ছয় বছর বয়সে একা-একাই কাজ শুরু করে সে। মায়ের কাছে বাবার কথা কোনোদিন সে শোনেনি। প্রয়োজনও পড়েনি। তার নিজের বয়স নিজেই জানে না সে। তবে আন্দাজ করে বছর পঁচিশ হবে। জানবেই-বা কেমন করে? তার বয়স যখন দশ সে সময়ে এই টারমিনালের সামনেই তার মা বাসের তলায় পড়ে মারা গেল। হিসেবে এখন তার বয়স পঁচিশই হবে। বিয়ে-শাদী হয়নি। তবে দু’বার গর্ভবতী হয়েছিল সে। মাজার রোডের বস্তিতে এক খালার বাসায় দুদিন থেকে গর্ভ পরিষ্কার করে এসেছে। খালার নাম রহিমা বেগম। রহিমা খালা নামেই পরিচিত। সে শুধু একা না, আরও অনেকেই খালার কাছে যায় গর্ভ পরিষ্কার করতে- তাদের মধ্যে বিবাহিত-অবিবাহিত সব ধরনের মানুষই আছে। গর্ভ পরিষ্কার করার পরে দু’দিন খুব বেশি রক্ত ঝরছিল। খালা ঔষধ দিয়েছে। রান্না করে খাইয়েছে। দুদিন সে রহিমা খালার বাসাতেই থেকেছে। সে থাকতেই আরও দুজন মেয়ে একই কাজে রহিমা খালার কাছে এসেছে। রোগী থাকার জন্য খালার একটা পৃথক ঘর রয়েছে। সেবারে সে খালাকে পাঁচশ টাকা দিয়েছে। নিজের টাকাই দিতে হয়েছে। বাস টারমিনালে এদিক-ওদিক কার সাথে থেকেছে, আর কার বীজ গর্ভে নিয়েছে, কে জানে? বোঝা টানতে হলো তাকেই।

    ফুলবানুর গায়ের রঙ শ্যামলা বটে, তবে নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত শরীরের পরতে পরতে ভাঁজ খেলে যাওয়া ডাঙ্গর শরীর, আর মুখের হাসি তার জন্য এমন এক আপদ। যার কারণে মাঝে মাঝে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যেতে ইচ্ছে করে। টারমিনালের মাস্তান, লাইনম্যান, বাসের কন্ডাকটর, হেলপার, এমনকি ড্রাইভার পর্যন্ত জ্বালিয়ে খায়। আয়নাতে নিজেকে দেখেছে সে খুব কমই। তবে লোকে বলে তার চোখে নাকি জাদু আছে। কারোর দিকে তাকালেই নাকি মনে হয় সে মিটিমিটি হাসছে। হাজার জন বলেছে এই এক কথা। বিশ্বাস না করে উপায় কী? তবে ভিক্ষে চাওয়ার সময়ে মুখাবয়বে ফুটিয়ে তুলতে হয় রাজ্যের জ্বালা-যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট। তা না হলে ভিক্ষে পাওয়া যায় না।
    বাসে ওঠার আগে মানুষের মন থাকে দুর্বল- এটা সে বুঝেছে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায়। এ সময়ে পথের আপদ-বিপদের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে মানুষ দু’টাকা, এমনকি পাঁচ টাকাও দেয়। টারমিনালের রেস্তরাঁতেই তিন বেলা খাওয়া-দাওয়া। এর পরে দৈনিকই কিছু টাকা হাতে থেকে যায়। বেঁচে যাওয়া এই টাকা নিয়েই যত সমস্যা। টাকা রাখবে কোথায়?

    একশ টাকা জমা হলেই রহিমা খালার কাছে দিয়ে আসে।
    রহিমা খালা এক বাসাতে থেকে কাজ করার কথা বলল। ফুলবানু অনেক ভেবেচিন্তে রাজি হলো। খুব বড়োলোকের বাসা। থাকা-খাওয়া ওখানেই। মাসে বেতন পাঁচ হাজার টাকা। একসাথে এত টাকা ফুলবানু কল্পনাও করতে পারে না। তবে প্রথম মাসের বেতন থেকে দু’হাজার টাকা খালাকে দিতে হবে। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। সমস্যা বাধল রান্না করা নিয়ে। তার হাতের রান্না ও-বাড়ির কেউ মুখে তুলতে পারে না। পারবেই বা কেমন করে? সে কি বড়োলোকের খাওয়ার মতো রান্না করেছে কোনোদিন? নাকি খেয়েছে কোনোদিন? সমস্যা আরও আছে। এ বাড়িতে রান্না, তরকারি গরম করা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা সবই হয় মেশিনে। ওগুলোতে হাত দিতে বড়ো ভয় করে ফুলবানুর। সে রান্না করেছে ক্বচিৎ-কদাচিৎ। ইটের চুলা বানিয়ে ভাত আর সবজি রান্না করেছে বটে; তবে সেই রান্না কি এ বাড়ির মানুষ মুখে তুলতে পারে? খালাম্মা জানিয়ে দিলেন, এ মাস গেলে বেতন দিয়েই বিদায় করে দিবেন। ও-বাড়িতে একটাই ছেলে। ভার্সিটিতে পড়ে। বড়ো ছেলে বিয়ের পরে বউ নিয়ে এই ঢাকা শহরেই থাকে। বউ এর সাথে মায়ের বনিবনা না হওয়ায় বড়ো ছেলে পৃথক বাসা নিয়েছে। বড়ো ছেলে কেমন কে জানে। ছোটোটা পুঙটার রাজা। ওর নামটা কেমন যেন- রাইসান। প্রথমদিন থেকেই ফুলবানুর দিকে তাকিয়ে সে হাসে। দু’দিন যেতে না যেতেই সবার অলক্ষ্যে ফুলবানুর পশ্চাৎদেশে চিমটি দিল। ফুলবানু বুঝে গেল, এখানেও ছাড় নেই। ফুলবানু ভাবে পুরুষ মানুষগুলো কেমন? অবিবাহিত, বিবাহিত সবাই কি গরিবের মেয়ে দেখলে ঐ এক কথাই ভাবে? গরিব মানুষের কি পছন্দ- অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিছু থাকতে নেই?
    সপ্তাহ না পেরোতেই এক শুক্রবারে সকালে খালাম্মা জানালেন, আজ তাঁরা জুম্মার পরে দাওয়াত খেতে যাবেন। তাকে বাসায় একা থাকতে হবে। নীচে দরোয়ান আছে। আর বাসার বাইরে থেকে তালা দেয়া থাকবে। ভয় নেই। জুম্মার আগ দিয়ে রাইসানের বারবার পায়খানা শুরু হলো। খালাম্মা স্যালাইন বানিয়ে দিতে থাকলেন। ঔষধও দিলেন। রাইসান জানাল পেটের সমস্যা নাকি বাড়ছে। খালুজানের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বড়ো ছেলের বিয়ে। না গেলেই না। দু’জগ স্যালাইন বানিয়ে রেখে তাঁরা দাওয়াত খেতে গেলেন। খালা-খালু চলে যাওয়ার পরেই ফুলবানু বুঝল রাইসানের পেটে কোনো সমস্যা হয়নি। দুপুরে খাওয়ার পরে চৌদ্দতলা অ্যাপার্টমেন্টের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল ফুলবানু। এত উঁচু থেকে ঢাকা শহর দেখতে ভালোই লাগে। দূরে যে রাস্তার ওপরে রাস্তা বানিয়েছে সরকার সেখান দিয়ে ছুটে চলা গাড়িগুলো দেখে। একটার পর একটা যাচ্ছে চকচকে সব গাড়ি। কোথা থেকে ওরা আসছে, আর কোথায়ই বা যাচ্ছে কে জানে। ওরা এত টাকা পায় কোথায়? ফুলবানুর মাথায় আসে না। সেতো ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বস্তিতে একটা ঘরই ভাড়া নিতে পারল না কোনোদিন। এ বাড়িতে তার থাকার মেয়াদ আর মাত্র তিন সপ্তাহ। এখান থেকে চলে যেতে হবে। তবে এই এক সপ্তাহ তার জীবনে ব্যতিক্রমী এক ঘটনা। বড়োলোকেরা যে এত সুন্দর ঘরে থাকে তা তার জানা হলো। ঘরের মধ্যেও ঠান্ডা। গাড়ির মধ্যেও ঠান্ডা। গাড়িতে করে যে বাজারে নিয়ে গেলেন খালাম্মা সেখানেও ঠান্ডা। এ সবকিছুই তার অজানা ছিল। ঠান্ডা ঘরে থেকে আর ভালো খাওয়া-দাওয়া করে তার শরীরের জেল্লা আরও বেড়ে গিয়েছে। সবচেয়ে ভালো লাগে তার বদ্ধ বাথরুমে কল খুলে দিয়ে মাথায় রাশি রাশি পানি দিয়ে গোসল করতে। রাতে শোবার সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো গোসল করে নেয় সে। এই সুখ তো আর পাওয়া যাবে না।

    যে কয়দিন এ বাড়িতে আছে সে কদিন যা পাওয়া যায় তার পুরোটাই নিঙড়ে নিতে চায় সে। হঠাৎই সে দেখল পেছন থেকে রাইসান ছেলেটা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। এ বাড়িতে আসার আগে অনেকের সাথেই রাত কেটেছে তার। কেউ ফকির, কেউ-বা বাসের ড্রাইভার বা কন্ডাকটার। কখনও রাস্তার বস্তিতে কিংবা মাজার রোডের বস্তিতে। ওদের প্রায় সকলেই নেশাখোর। গোসলও বোধ হয় করে মাঝে-মধ্যে। শরীরে বোঁটকা গন্ধ। আর গাঁজাখোরদের সাথে থাকলে তো রাতে ঘুমই আসতে চায় না দুর্গন্ধে। তবুও রাতের ঘুমটুকুর জন্য কারুর না কারুর আশ্রয়ে তাকে থাকতেই হয়। রাস্তায় একা শুয়ে থাকার চেষ্টা করেছে- মনের আকাক্সক্ষা পুরো রাত ঘুমানো। না হয়নি। হয়তো মাঝ রাতে বা শেষ রাতে কেউ না কেউ টানাটানি করে। যেতে না চাইলে ছুরি দেখায়, মেরে ফেলতে চায়- অবশেষে যেতে হয়। মাজারের সামনে ফুটপাতে ঘুমালে অবশ্য এসব যন্ত্রণা নেই। তবে গাবতলী থেকে ওখানে হেঁটে যাওয়া-আসা কিছুটা সমস্যা বৈকি! রাইসান ওকে জড়িয়ে ধরেছে। আহ কী সুগন্ধ ছেলেটার শরীরে! জীবনে সে এমন পুরুষের সঙ্গ কল্পনাও করেনি।
    খালা-খালু আসলেন সন্ধ্যায়। এর মধ্যে বেশ ক’বার তাঁরা ফোন করেছেন, রাইসান বলে দিয়েছে, ‘মা, এখন ভালো মনে হচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক ঘুমাব। ফোন অফ করা থাকবে। ঘুম থেকে উঠে আমিই ফোন করব। তোমরা আর ফোন কোরো না।’ আর ফোন আসেনি। সন্ধ্যা পর্যন্ত রাইসান যেভাবে তাকে চেয়েছে সেভাবেই তাকে খুশি করেছে ফুলবানু। খালা-খালু আসার আগেই রাইসান পাঁচশ টাকা ফুলবানুর হাতে দিতে চেয়েছে। সে নেয়নি। এর পরে আরও বেশ ক’বার গভীর রাতে রাইসান তার কাছে এসেছে। সে আপত্তি করেনি। খালু একদিন রাতে খাবার সময় খালাম্মাকে বললেন, ‘রেখে দাও ওকে। এখন তো ঢাকা শহরে কাজের লোক বড়োই মুশকিল। যুবতী মেয়েরা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে অনেক বেশি টাকা উপার্জন করে। ওখানে কাজের সময়ও আট ঘণ্টা। যে কারণে মেয়েরা বাসাবাড়িতে কাজ করতে চায় না। আস্তে আস্তে রান্না শিখিয়ে নাও।’
    ‘শোনো রাইসানের আব্বা, আমি নারী। নারীকে দেখে পুরুষের চোখ কী বলছে তা আমি বুঝি। কিশোরী বয়েসেই এ শিক্ষা পেয়েছি পুরুষের কাছ থেকেই।’
    ‘কী বলছ তুমি আমাকে? এই বুড়ো বয়সে তুমি আমাকে...?’
    ‘আজ্ঞে না। এ বাড়িতে তোমার জোয়ান একটা ছেলে আছে। আমার যত কষ্টই হোক সংসার চালাতে, কিছুতেই আমি মেয়েটাকে ঘরে রাখব না।’

    মাস শেষে ফুলবানু আবারও রাস্তায় নেমে এল। এই এলাকায় তো বাসও দেখা যায় না। গাবতলী যাবে কিভাবে চিন্তায় পড়ে গেল। অবশেষে মাসের বেতনের টাকা দিয়ে সিএনজি অটো রিকশাতে করে তিনশ টাকা দিয়ে তার পুরনো ডেরা গাবতলী পৌঁছল।
    এক মাসের অভ্যেস মাত্র। খাওয়া নিয়ে নয়, গোসল আর পায়খানা নিয়ে ফুলবানু খুবই অস্বস্তি অনুভব করল গাবতলীতে এসে। বড়োলোকের বাসায় এক মাসের জীবন তার কাছে মনে হতে থাকল স্বপ্ন। তার মতো আরও অনেক তরুণী ভিক্ষে করে বেঁচে আছে। তারা কেউ মানুষের বাসায় কাজে যেতে চায় না। ফুলবানু ব্যতিক্রম। তার কাছে ওটাই ছিল আরামের জীবন। একবার মনে হয়, সে আবারও অন্য বাসায় কাজ খুঁজবে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব বুঝে আসে না। তার সামনে সহজ একটা পথই খোলা আছে- ভিক্ষে করা। কিন্তু ভবিষ্যত কী? জানে না সে। স্থায়ী একটা জীবনের কথা মনোমাঝে আসে। শত চিন্তা করেও দিশা পায় না সে। বিয়ের জন্য কে তার অভিভাবক হবে? বিয়ে করতে টাকা পাবে কোথায়? আর কতই তো দেখল, গরিব-ফকিরের মধ্যে বিয়ে বলে কিছু আছে? ভালো একজন মানুষ কি তরুণী ভিখিরিকে বিয়ে করে? অসম্ভব। তাহলে এই পথে পথে ভিক্ষে করেই তার জীবন কাটবে? শেষ বয়সে কী হবেÑ যখন সে ভিক্ষেও করতে পারবে না। তার মা মরেছে গাড়ির তলে পড়ে। সে যদি বেঁচে থাকেও, তাহলে হ তো অনাহারে, রোগে-শোকেই পথের ধারে পড়ে মরতে হবে। আজ শত কাউয়া তার জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
    সেদিন কেউ তাকিয়েও দেখবে না, তা সে বুঝে। ও-বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে প্রথম রাতে সে মাজারের সামনের ফুটপাতেই আশ্রয় নিল নির্বিবাদে ঘুমোনোর জন্য। শেষরাতের দিকে একদল গাঁজাখোর তাকে জাগিয়ে ছুরি দেখিয়ে বেতন হিসেবে পাওয়া টাকাগুলো কেড়ে নিল। বাকি রাতটুকু কান্নাকাটি করেই কাটাল। পরদিন মন খারাপ থাকায় মানুষের কাছে হাত পেতেছে কম। আয় হয়েছে সামান্যই। টাকা না থাকায় পরদিন টারমিনালের বাথরুমে গোসলও করা হলো না। গোসল করতে ওখানে কুড়ি টাকা দিতে হয়। সকালে পেটে দানাপানি পড়েনি। যে কটা টাকা পেয়েছিল তা দিয়ে দুপুরে টারমিনালের রেস্তরাঁয় ডিমের তরকারি আর ডাল দিয়ে ভাত খেল। মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফুলবানু আবারও খালার কাছে গেল। খালা বলল, ‘আগে কিলিনিক থেইকা পিসাব পরীক্ষা করাইয়া আই। আন্তাজে কিছু করোন যাইত না।’ ফুলবানু গর্ভবতী হয়েছে। গর্ভের সন্তানের বাবা রাইসান। তার মনে হলো, এ সন্তান থাক। তার তো বিয়ে হবে না। এই পৃথিবীতে তার কেউ নেই-ও। একটা সন্তান থাকলে তার একজন আপন মানুষ অন্তত থাকবে। আর কোলে ছোটো বাচ্চা থাকলে মানুষ ভিক্ষেও দেয় বেশি। কিন্তু বাচ্চা পয়দা করার খরচ আছে। খালা নেয় এক হাজার টাকা।
    এত টাকা পাবে কোথায় সে? আর বাচ্চা হওয়ার আগে-পরে অনেকদিন ভিক্ষে করতে পারবে না। তখন থাকবেই-বা কোথায়, আর খাবেই-বা কী? হাজারো চিন্তায় তার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। ‘জোয়ান মেয়ে কাজ করে খেতে পারিস না?’ নিত্যদিনই একথা শুনতে হয়। মানুষের বাসায় কাজ করতে গিয়ে কী হলো সেটা তো আর মানুষকে বলা যাবে না। মন বলে, রাইসানদের বাড়িতে গিয়ে খালাম্মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসে। কিন্তু বড়োলোকের বাড়িতে ঢোকাই যাবে না। আর বাড়িটা এখন সে খুঁজেও পাবে না। দ্বিতীয় দফায় খালার কাছে গেল। খালা এবার সাতশ টাকা হেঁকে বসল। খালার কাছে আগের জমানো এক হাজার টাকা আছে। ওখান থেকে টাকা কেটে নিতে বললে খালা বলল, ‘ঘরে চোর হান্দাইছিল। তোর এক হাজার না-রে মা, আমার যা আছিল তাও নিয়া গ্যাছে। বাঁইচা থাকলে তোর ট্যাহা আইজ হউক, কাইল হউক দিয়া দিমুই।’ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করে ফুলবানু আবারও টারমিনালে গেল। ঢুকতে গেলেই টাকা লাগবে। বাইরে যাদেরকে চেনে তাদের কাছে টাকা ধার চাইল। কয়েকজন ভিখিরি আছে, যারা বেশ কিছু টাকা জমিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ গ্রামের বাড়িতেও টাকা পাঠায়। বিশেষ করে বৃদ্ধ প্রতিবন্ধী ভিখিরিদের রোজগার খুবই ভালো। বুড়োগুলো টাকা ধার দেয় না। টারমিনালের বাইরে বাসের কয়েকজন কন্ডাকটারের কাছে টাকা চাইল। ঐ একই কাহিনী। রাতে থাকতে হবে। দিবে হয়তো একশ টাকা। একশ টাকা দিয়ে তো খালা কোনো কাজ করে দিবে না। আবারও মাজার পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে কালা মিয়ার শরণাপন্ন হলো। কালা মিয়া সারাদিন মাজারে শুয়ে থাকে। জেগে না ঘুমিয়ে থাকে বোঝা যায় না। বয়সও তার বোঝা যায় না। চুল দাড়ি অবশ্য বকপাখির মতো ধবল। লোকটার চোখ নেই। চোখের কোটরে গভীর গর্ত। কে, কখন তাকে খাওয়ায়, পায়খানা-পেসাবই-বা কেমনে করে, আল্লাহ মালুম। এসব দেখার লোকই-বা কে আছে? মাজারে মানুষ আসে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। বাবার কাছে কান্নাকাটি করে। ধর্ম সম্পর্কে ফুলবানুর কোনো জ্ঞানই নেই। কোনোদিন ধর্মকর্ম করেওনি। কেউ তাকে ধর্মের কোনো বিধান শেখায়ওনি। ধর্ম বলতে সে শুধু আল্লাহর নামটুকুই জানে। আর অজান শুনে শুনে আজানের বাণীগুলো মনে গেঁথে গিয়েছে। কালা মিয়া বলে, ডাকাতরা নাকি তাকে ধরে তার চোখ তুলে নিয়েছে। আর তার দেশের বাড়ির অন্য ভিখিরিরা বলে ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তার এই হালৎ হয়েছে।
    কালা মিয়া টাকা দিতে রাজি হলো। কালই টাকা দিবে। শর্ত একটাই বস্তিতে মেয়ে পরিচয়ে তার সাথে থাকতে হবে। ফুলবানু ঝ্যাটকা মেরে উত্তর দিল, ‘আর রাইতে তোমার সেবা করন লাগব, তাইতো?’
    ‘না-রে মা। তুই যা ভাবতাছোস তা না। মেয়ে বাপকে যেটুকু করে সেটুকুই করবি। দিনমান দুইজনে ভিক্ষা করুম। রাইতে দুইডা ভাত রান্না করবি। দুইজনে খাইয়া ঘুমাইব। আমার কি আর সেই বয়স আছে যে তোরে আমার কাছে আইতে হইব? তয় চলাফেরাতে যদি সাহাইয্য করস উপকার তো হইবোই।’
    ‘বস্তির লোক জিগাইব না, মেয়ে কোইত্থেইকা আইল এতলা দিন পর?’
    ‘অন্য বস্তিতে যামুগা। চিন্তা কইরা দেহিস-রে ফুলবানু। দুইজনে এক লগে থাকলে আমাদেরই লাভ। ধর তোর অসুকবিসুক হইল। বা আমারই হইল। তহন একজনের আয় দিয়া দুইজন খাওন যাইব। ঠিক কিনা?’
    ফুলবানু রাজি হয়ে গেল। কালা মিয়া টাকা দিল। এবারও খালার বস্তিতে দুইদিন থাকতে হলো। দুর্বল শরীর নিয়ে দু’দিন পর কালা মিয়ার কাছে আসল। কালা মিয়া মাজারের পেছনেই বস্তিতে ঘর ঠিক করেছে। সেখানেই উঠে গেল ফুলবানু। সন্ধ্যায় বস্তিতে কালা মিয়ার ঘরে গিয়ে ফুলবানু দেখল সেখানে একটা বাচ্চা ছেলে ঘুমাচ্ছে। বয়স হবে নয়-দশ মাস। রাতের খাবারের পর ফুলবানু ঘুমোতে যাবে সে সময়ে বাচ্চাটার ঘুম ভেঙে গেল। কালা মিয়া বলল, ‘ফুলবানু তুই ঘুমা। পোলাডা আমার লগেই থাহে। বাপ-মা নাই। আমি ওর লগে খেলা করুম, তুই ঘুমাইয়া পড়।’
    ‘তো তুমি যখন মাজারে যাও, তহন পোলাডা কার কাছে থাহে? তোমার লগে তো কুনুদিন দেহি নাই।’
    ‘বস্তিতেই রাইখা যাই।’
    ‘তুমি এইডারে পাইলা কই?’
    ‘তুই ঘুমা। এত কথার জবাব দিবার পারুম না।’
    ‘তুমি পোলাডারে চুরি করছ?’
    ‘না।’
    ‘তয়?’
    ‘কিনছি পাঁচ হাজার টিয়া দিয়া।’
    ‘তুমি তো দেহি চোরের বাপ!’
    ‘ফুলবানু, ভালো না লাগলে চইলা যা। বাজে কথা কবি না।’
    সে রাতে ক্লান্ত ফুলবানু গুমিয়ে পড়ল।
    এখানে সব ঘরের ছাদেই চাটাইয়ের দড়মা, তার ওপরটা পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। দশ ঘরের জন্য একটা পায়খানা। সবসময় সেখানে মানুষ সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে। ফুলবানুর নতুন জীবন শুরু হলো। না, সে যেটা সন্দেহ করেছিল সেটা ঠিক না। ভেবেছিল কালা মিয়া রাতের বেলায় বুঝিবা ঠিকই হামলে পড়বে। না, কালা মিয়া ওপথের পথিক না। নতুন জীবনে তার কাজ মোটেও কমল না। পরদিন অন্ধকার থাকতেই ঘুম থেকে উঠে পায়খানা পেসাবের কাজ সেরে ঘরের পাশে দুই হাত চওড়া গলিতে ইট বসানো চুলাতে ভাত আর ডাল রান্না করে দুইজনে খেল। এবারে কালা মিয়াকে নিয়ে মাজারে যেতে হবে। কালা মিয়া জানিয়ে দিল দুপুরে মাজারের পাশের রেস্তরাঁতে খেতে হবে। এশার নামাজের পরে রিকসায় করে বস্তিতে ফিরে আবারও রান্না করে খেতে হবে। কালা মিয়াকেও খাওয়াতে হবে। এই হলো পরিকল্পনা।
    বাচ্চাটার কী হবে কে জানে? সে দায়িত্ব নাকি কালা মিয়ার। অন্ধ কালা মিয়া যে বাচ্চাটকে সামলাতে পারবে না ফুলবানু তা অনুমান করে নিল। পরদিন কালা মিয়া ফুলবানুকে যা করতে বলল, তাতে তার চক্ষু চড়ক গাছে ওঠার উপক্রম। বেশ কিছুদিন যাবৎ কালা মিয়ার পায়ে ব্যান্ডেজ দেখেছে সে। রাতে তেমন খেয়াল করেনি। সকালে দেখল কালা মিয়ার পায়ে কোনো ব্যান্ডেজ নাই। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফুলবানুকে পায়ে তুলা ও গজ বেঁধে দিতে বলল কালা মিয়া। কথামতো ফুলবানু ডান পায়ে তুলা ও গজ বেঁধে সেখানে আয়োডিন ঢেলে দিল। ব্যান্ডেজের ওপরে বেশ খানিকটা জায়গা দেখে মনে হয়, ভেতরে বোধ হয় পচন ধরেছে। এবারে কালা মিয়ার কথামতো ফুলবানু সেখানে আধা কাপ চিনির সরবত মাখিয়ে দিল। কিছুক্ষণ বাদেই মাছির আবির্ভাব হলো। এবারে বাচ্চাটাকে ফুলবানু কৌটার দুধ বানিয়ে খাওয়ালো। বাচ্চাটা ঝামেলা না করেই খেল। বাচ্চাটা কেমন যেন
    নিস্তজ। কালা মিয়ার কথামতো ফুলবানু একটা ঔষধের বোতল থেকে দু’চামচ ঔষধ খাইয়ে দিল বাচ্চাটাকে। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চাটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। ঔষধটা নাকি আবার দুপুরে খাওয়াতে হবে।
    ‘ওষুধ খাওয়াও কিল্লাইগা কালা মিয়া? কী হইছে পোলাডার?
    ‘তুই বুঝবি না। বাচ্চাডা নড়াচড়া করে কম। ফার্মেসি থেইক্যা ভিডামিন দিছে।’
    ভিডামিন খাইয়া তো দেহি আরও নিস্তেজ হইয়া গেল। বাচ্চাডা মইরা গেলে তো ফাঁইসা যাইবা।’
    কালা মিয়া নিষ্পাপ শিশুর মতোই হাসল। বলল, ‘ফাঁইসা গেলে সমস্যা কীরে? জেলে নিলে তো বইয়া বইয়া ভাত পাওন যাইব। হেইডা তো মজাই-রে। আর আমি তো চক্ষে দেহি না। আমার কাছে বস্তি আর জেলখানার পাত্থক্য নাই-রে ফুলবানু।’
    ‘তোমার কাছে না থাকলেও আমার কাছে আছে।’
    ‘তর কাছে কী পাত্থক্য। তুই জুয়ান মাইয়া, জেলের বাইরে এর ওর লগে লটরপটর করতে পারবি, তাই তো?’
    ‘দ্যাহ, আমারে খেপাইয়ো না।’
    ‘আচ্ছা ল’ যাইগা মাজারে। এই বুড়ার ওপরে রাগ দেহাইস না। কিছু এদিক সেদিক না করলে এই দুনিয়াতে আমাগো বাঁচনের পথ নাই-রে ফুলবানু। ল’ যাই।’
    প্রথম দিনই দেখা গেল ফুলবানু একশ টাকা বেশি রোজগার করেছে। কালা মিয়ার রোজগারও কম না।
    চিকিৎসার অভাবে চোখহীন বৃদ্ধ মানুষটার পায়ে পচন ধরেছে, কিছু মানুষের মনে দয়ার উদ্রেক তো হবেই। তারাই টাকা দিয়েছে।
    সপ্তাহ খানেক পরে ফুলবানু দেখল বাচ্চাটা আরও নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের চিন্তা তাকে আচ্ছন্ন করল। এটাও বুঝল, তার জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। গোটা জীবনে চৌদ্দতলা বাড়িতে একটা মাস সময়ই ছিল তার কাছে আরামের। ঐ এক মাস বাদে জ্ঞান হওয়া অবধি যেভাবে নানা ঝক্কি-ঝামেলার মধ্যেই কেটেছে। দিন কেটেছে তার খেয়ে না খেয়ে। আর রাত কেটেছে পুরুষ মানুষগুলোর অত্যাচারে। এই বাচ্চাটার ঝামেলা না থাকলে বুড়া কালা মিয়ার সাথে থাকাটাই তার কাছে নিষ্কণ্টক মনে হচ্ছিল। কালা মিয়ার সাথে কথাও বলেছে সে। কালা মিয়া বাচ্চাটা ছেড়ে দিতে রাজি না। বাচ্চার বিষয়ে কথা বলতে তার মোটেও আগ্রহ নাই। বরং ও-প্রসঙ্গে কথা তুললেই রেগে যায় সে। রাতে ঘুমানোর আগে ফুলবানু প্রতিদিনই বাচ্চাটা নিয়ে চিন্তা করে।
    সেদিন মাঝরাতে দুঃস্বপ্নে ফুলবানুর ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমিয়েছিল যথাসময়েই। সে নিজেকে রাহিমা খালার বাসায় দেখতে পেল। ঔষধ আগেই খাওয়ানো হয়েছে। ব্যথা উঠেছে। আড়াই মাসের গর্ভ। হাতে মেডিকেল গ্লাভস পড়ে যোনীপথ দিয়ে খালা হাত প্রবেশ করিয়েছে। প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। ব্যথায় ফুলবানু কুঁকড়ে যাচ্ছে। খালা যখন বলল, ‘পাইছি এবার আও বাছাধন।’ সে সময়েই বাচ্চা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল, ‘মাআআ... আমারে মাইরা ফালাইয়ো না। তোমার ভিত্রে আমারে থাকবার দাও মা। তোমার মা তো তোমারে মাইরা ফালাইনি। আমারে কেন্ মাইরা ফালাইবা?’ ফুলবানুর ঘুম ভেঙে গেল। ধড়ফড় করে উঠে বসে। ততক্ষণে তার সর্বাঙ্গ ভেজা ঘামে। স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই দু’নয়নে নোনা জলের বান ডাকে। সে রাতে আর ঘুমাতে পারেনি। অবশেষে একটা সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলল ফুলবানু।

    সেদিন দুপুরে খাওয়ার পর ফুলবানু বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে একটা রিকসা ভাড়া করে হাজির হলো শাহ আলী থানায়। খুলে বলল সব কিছুই। ফুলবানু ভেবেছিল বাচ্চাটাকে থানায় দিয়ে চলে আসবে। না, পুলিশ তাকে পিকআপ ভ্যানে উঠিয়ে মাজারে এল। পুলিশ বলল, কালা মিয়াকে দেখিয়ে দিতে হবে। এবারে কালা মিয়া, ফুলবানু দু’জনকেই ভ্যানে উঠতে বলল পুলিশ। ফুলবানু চিৎকার করে উঠল, ‘বাচ্চা তো আমি চুরি কইরা আনি নাই। আমিই তো বাচ্চাডা ফেরত দিলাম। আমি থানায় যামু ক্যান?’
    ‘থানায় যাবি থাকবার লাগি, চল’
    দু’জন নারী পুলিশ তাকে টেনটুনে ভ্যানে উঠিয়ে নিল। এরপরে কালা মিয়াকেও। পিকআপ ভ্যান আবারও থানা অভিমুখে চলল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ২৫ মে ২০২০ | ১৯৩২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উকুন - Kishore Ghosal
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন