এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সম্পত্তি

    মো. রেজাউল করিম লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৫ জুন ২০২০ | ১৬৭৮ বার পঠিত
  • হেমন্তের সকালে ফুলেশ্বরী গ্রামের এ বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া একটু দেরিতেই হয়। মৌসুমী বন্যার জন্য এবারে ধান বুনতে দেরি হয়েছে, তাই মাঠে এখনও ধান কাটা শুরু হয়নি। সূর্যের দেখা মেলে বেশ দেরিতেই। বউ-ঝিও ঘর থেকে একটু দেরিতেই বের হয় সকালে। রান্নাঘর বলতে যা বোঝায় তা এ বাড়িতে নেই। উঠোনে কাদা দিয়ে কোমর সমান উঁচু দুইপাশি দেয়াল করে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা, মাথার ওপরে খড়ের সামান্য ছাউনি; বরষার দিনে কাজে দেয়। পাশাপাশি দুটো চুলো- এক চুলা বড়ো ছেলে হাশেমের ঘরের, আর এক চুলা ছোটো ছেলে কাশেমের। দুই চুলোতেই ভাত ফুটছে, পাতিল থেকে ভাপ উঠছে, পাতিলের ভাপ মরিচিকার মতো কুন্ডলী পাকিয়ে শুন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। কুয়াশাতে লাকড়িগুলো কিছুটা নিস্তেজ হয়ে পরেছে। চুলার পাশে বসে দুই বউ তরকারি কুটছে, মাঝেমাঝে ফুকনি দিয়ে চুলায় বাতাস দিচ্ছে আর লাকড়িগুলো একটু নাড়িয়ে দিচ্ছে। বাচ্চাকাচ্চা তখনও ঘর থেকে বের হয়নি। মা রোশনি বেগম ঘরের রোয়াকে বসে আছে চুলোর দিকে চেয়ে, কী ভাবছে কে জানে। রোশনি বেগমের স্বামী গত হয়েছে বছর দুয়েক। এখন বড়ো ছেলের চুলাতেই তার খাওয়াদাওয়া।
    বড়ো ছেলে হাশেম বড়ো একটা বটির পাটে বসে গরুর জন্য বিচালি কাটছে। কাশেমের গরু-ছাগল নেই, কিছু হাঁস-মুরগি আছে। ঠান্ডার দিনে একটু বেলা হলে ওগুলোকে বের করবে। মুরগি প্রাণিটি বেশ নাজুক, ঠান্ডার একেবারে সহ্য করতে পারে না। বয়সী মুরগিগুলোকে শীত আসার আগেই বেচে দেবে। গেল বছর ঠান্ডায় বেশ কটা মুরগি টপাটপ মরেছে।
    রোশনি বেগম কাল রাতের কথা মনে করে কিছুটা ভয়েই আছে। দুই ভায়ের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ আবার শুরু হয় কিনা ভেবেই বোধ হয় ভীতিগ্রস্ত। বড়ো ছেলে হাশেম পৃথক হতে চায়- মা’কে চাপ দিচ্ছে সম্পত্তি ভাগ করে দেয়ার জন্য। বাবার জমি, বাড়ি সবই গেছে পদ্মার পেটে। এ ভিটেটুকুনের জমি রোশনি বেগম তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে- মাত্র আট শতাংশ জায়গা। এর দুই পাশে দুই ভায়ের চালা ঘর। আর এক পাশে হাশেমের গরুর গোয়াল। উঠোনের সামনের সামান্য জায়গাতে রোশনি বেগম পালং শাক লাগিয়েছে। অল্প একটু জায়গাতে মাচা করে টমেটো গাছও লাগিয়েছে। ছোটো ছেলে কাশেমকে বললে সেই বুধবারের হাট থেকে পালং শাকের বীজ আর টমেটোর চারা এনে দিয়েছিল। টমেটো গাছগুলো সারা দিনমান রোদ পেয়ে লকলকিয়ে এতটাই বেড়ে উঠেছে যে, ওদেরকে সোজা করে রাখতে প্রতিটি গাছের গোড়াতেই বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে।

    রোশনি বেগম যা ভাবছিল তাই হলো। কাশেম গলা থেকে মাফলারটা খুলে রোয়াকের আড়ার ওপরে রেখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কথা যখন ওটেছে, বিষয়টা চূড়ান্ত কইরি ফেলতি হবি মা, তুমার কতা তুমি কইয়ে দ্যাও। ঝামেলার কাম ঝুলা রাইখি লাভ কী হবি?’

    রোশনি বেগম মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। কাশেমের আয়-রোজগার কম, যে কারণে বড়ো ছেলের সাথে তাকে খেতে হয়। এই কারণে বড়ো ছেলে ৮ শতাংশ জমির মধ্যে ৫ শতাংশ চেয়েছে। ছোটো ছেলে কাশেম বলে দিয়েছে, জান্ যাবে, তাও বড়ো ভাইকে এক শতাংশ জমি বেশি নিতে দিবে না। মেয়েটা শ্বশুড় বাড়িতে আছে, তারও তো মায়ের জমিতে হক আছে। বড়ো ছেলে কাশেম তাকে ভাগ দিতে নারাজ; তার কথা, ওতো আছেই এক জায়গায়- এই সামান্য জমির ভাগ ওকে দিলে থাকে কী? মা হয়ে রোশনী বেগমের মন এতে সায় দেয় না। আবার মুখ ফুটে বড়ো ছেলের সাথে এ নিয়ে বিবাদও করতে পারে না। স্বামীর মৃত্যুর পরে বড়ো ছেলের উপার্জনেই তার খাওয়া-পরা। পেটে ধরা মেয়েটাকে কিছুই দেয়া হবে না চিন্তা করে তার মন বিষাদগ্রস্ত হয়ে পরে, অলস দুপুরে একাকী শুয়ে বিষন্ন মনে অনাগত দিনের অনিশ্চিত জীবনের কথা ভাবে। মেয়ে যদি মায়ের জমির অংশ না পায়, তাহলে এই ভিটের জমিই-বা আসল কোথা থেকে। এই ভিটের জমি তো তার বাপের, রোশনি বেগমের ভায়েরা তো তাকে বাবার জমি থেকে বঞ্ছিত করেনি। তাহলে তার ছেলেরা কেন একমাত্র বোনকে বঞ্ছিত করতে চায়? আর সে-তো এখন মরণাপন্ন না, কিন্তু দুই ছেলে এখনই জমি নিজেদের নামে নিয়ে নিতে চায়। রোশনি বেগম এ কথা মুখ ফুটে বলতে চায় কিন্তু পারে না। রোশনি বেগম ভেবে পায় না, হাশেম নিয়মিত নামাজ-রোজা আদায় করে, রাত জেগে গ্রামের ওয়াজ-মাহফিলে শোনে। তো তার মনে একবার কথাটা আসে না যে, মায়ের সম্পত্তিতে বোনেরও হক আছে- এটা আল্লাহ’র-ই হুকুম!

    হাশেম বোধ হয় ঘরে যাচ্ছিল, কাশেমের কথা শুনে ঘুরে দাঁড়িয়ে অনেকটা উচ্চকণ্ঠেই বলল, ‘মুখ সামাল দিই কতা কবি, মা’র সম্পত্তি মা কাকে দিবি না দিবি, তা মা-ই ঠিক করবিনি। তুই কতা কওয়ার কিডা?’ সাতসকালে দুই ভায়ের বিবাদ শুরু হয়ে গেল, কাটাকাটি চলল কিছুক্ষণ। হঠাৎ কাশেম উত্তেজিত হয়ে বউয়ের সামনে রাখা বটিখানা টান দিয়ে নিয়ে ঝড়ের বেগে এগিয়ে এসে হাশেমের বুক বরাবর কোপ দিল, লাগল পেটে। পেট থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে সামনের দিকে দু’হাত দূরে মাটিতে পড়ল। কাশেম পেট চেপে ধরে মাটিতে লুটিয়ে পরল। হেমন্তের ¯স্নিগ্ধ এক সকাল যখন সদ্য আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠছে, সে মুহূর্তে সম্পত্তি নিয়ে ভায়ে ভায়ে বিবাদ, সম্পত্তিতে অন্যায্য দাবি, সামান্য কথা কাটাকাটি, আর এ থেকে কিনা এক ভায়ের শ্বাপদ হিংস্রতায় কুয়াশাসিক্ত শক্ত ধূসর মাটি লোহিত বর্ণ ধারণ করল, সদ্য সকালের আলো মানুষগুলোর মনকে কৃষ্ণকালো বিষাদে আবৃত করল। উত্তেজিত কাশেমের উত্তেজনা মুহূর্তে বুদ্ধিমত্তায় রূপান্তরিত হলো, সকল অপরাধীর ক্ষেত্রে এমনই ঘটে বুঝি-বা। দেরি না করে সে উঠোন থেকে বাইরে দৌড় দিল। পেছনে রয়ে গেল স্ত্রী, দুগ্ধপোষ্য একমাত্র ছেলে আর প্রাণের সম্পত্তি। ছেলে হওয়ার পরে গাঁয়ের শিক্ষিত ছেলে কাউসারের কাছে গিয়েছিল ছেলের জন্য শহুরে একটা নাম জানার জন্য। তার দেয়া নামই সে রেখেছিল- সোহাগ।

    দৌড় দিলে মানুষ সন্দেহ করবে, তাই বাড়ির সামনে দিয়ে মেঠো পথে না হেঁটে ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে গ্রামের বিপরীত দিকে হাঁটা শুরু করল কাশেম। সে হাঁটতে থাকে, তবে দ্রুত পায়ে; কিছুক্ষণের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যায়। তার হিসাব পরিষ্কার, উল্টোপথে চলতে হবে; এতে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। বাসস্ট্যান্ডে বন্ধুস্থানীয় এক দোকানীর কাছ থেকে দুশো টাকা ধার চাইল। এত সকালে বেচাবিক্রি হয়েছে যে দুশো টাকা ধার দিবে? কাশেম বলল, সন্ধ্যার সময় পঞ্চাশ টাকা সুদসমেত আসলও ফেরত দিবে। মাত্র ক’ঘণ্টার ব্যবধানে পঞ্চাশ টাকা সুদসমেত আড়াইশ টাকার কথা শুনে দোকানী বন্ধু দুশ টাকা বের করে দিল। প্রাগপুর-কুষ্টিয়া বাসে না উঠে উল্টোপথে চুয়াডাঙ্গার লোকাল বাসে উঠে বসল কাশেম। অনেক অনুরোধ-অনুনয় করে অর্ধেক বাসভাড়ায় পৌঁছে গেল চুয়াডাঙ্গা। বাস ভাড়া অর্ধেক দেয়ায় কন্ডাকটার তাকে বসতে দিল না, পুরো রাস্তা তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। চুয়াডাঙ্গায় যখন পৌঁছল বেলা তখন দ্বিপ্রহর, ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ। একটা রেস্টুরেন্টে দশ টাকায় সামান্য নাস্তা করে নিল- সকালে তৈরি ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে যাওয়া আটার দুটো রুটি আর ঠান্ডা মুগডাইল। সে জানে তার এখন তার টাকা দরকার, অথচ টাকা রোজগারের বন্দোবস্ত নাই; খুয়ার জন্য ঠাকা খরচ করা যাবে না, যে করে হোক তাকে ঢাকায় পৌঁছতে হবে। ঢাকায় সে আগেও গিয়েছে। তার মনে হলো, ঐ শহরই তার জন্য এখন নিরাপদ। ঐ বিশাল জনারন্যে তার মতো এক সাধারণ মানুষ, যার নামে কোনো মামলা-মোকাদ্দমা নেই, তাকে পুলিশ খুঁজে পাবে না। ভিক্ষে করে হলেও তাকে কিছু টাকা যোগাড় করতে হবে ঢাকায় যাওয়ার জন্য, আপাতত এই শহরে দু’দিন থাকার জায়গা প্রয়োজন। রেস্টুরেন্ট মালিককে জিগ্যেস করে জানতে পারল শহরে একটা মাজার আছে- বুজরুকগড়গড়ি মাজার। পথ চিনে নিয়ে হেঁটেই পৌঁছাল সেখানে। মাজারে গিয়ে যা দেখল তাতে মনের অজান্তেই স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল কাশেমের। মাজারে বার্ষিক ওরশ চলছে, শতশত মানুষের কলতানে ওয়াজ পর্যন্ত শোনা দায়। দ্রুত সে একটা টুপি কিনে মূল প্যান্ডেলে ঢুকে পড়ল। সুবিধাজনক জায়গায় বসে গভীর মনোযোগে ওয়াজ শুনতে লাগল। নির্ধারিত সময়ে মুফতে খাবার, তাও আবার মাংস-সহযোগে। ওয়াজ থেকেই জানতে পারল তিন দিনব্যাপী ওরশের আজ প্রথম দিন অর্থাৎ আরও দুদিন এখানে থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যা হবে না; এই দুদিনে ঢাকায় যাবার চিন্তা করবে সে।

    ওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে কাশেম ঢাকার মানুষ খোঁজে- দ্বিতীয় দিনে পেয়েও গেল। তার সাথে সাথেই থাকে সে। এক পর্যায়ে বলল তাকে- সে গরিব মানুষ, ঢাকা থেকে কষ্ট করে এসেছে, কিন্তু যাওয়ার মতো টাকা নেই। তিনি আশ্বাস দিলেন, তাদের রিজার্ভ করা বাস আসবে। এদিক সেদিক করে একজনের যাওয়া হয়ে যাবে। একই পীরের মুরিদ যখন, এটুকু না করলে হুজুরের আত্মা কষ্ট পাবে- এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। দীর্ঘ বয়ানশেষে সন্ধার নামাজের পরে ততোধিক দীর্ঘ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ওরশ শেষ হলো। ঢাকাগামী বাসে ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিন কভারের ওপরে কাশেম বসার জায়গা পেল। ভোর রাতে বাস ঢাকায় পৌঁছে গেল। মিরপুর শাহ আলী মাজারকে সে তার আপাত গন্তব্য ঠিক করে নিল। গাবতলী থেকে হেঁটে হেঁটে অল্প সময়ে সেখানে পৌঁছে গেল সে।

    এ মাজার চুয়াডাঙ্গার মাজারের মতো নয়, এখানে নানা কিসিমের মানুষের আনাগোনা। ভিক্ষুক, সর্বস্বত্যাগী মাজার সেবক, গঞ্জিকাসেবী, মাস্তান সব ধরনের মানুষের আনাগোনা মাজার-প্রাঙ্গনে। এরা কেউ নামাজের ধারে-কাছেও ঘেঁষে না। মসজিদটুকুন রয়েছে শুধু নামাজের জন্য সংরক্ষিত। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাশেম এর ওর কাছ থেকে জানতে পেল মাজার-প্রাঙ্গনের আশেপাশে পুলিশের লোকও রয়েছে। তাদের কেউ দোকানদার, কেউ-বা হকার, এদেরকে বলে পুলিশের সোর্স। কাশেম ঠিক করল এক জায়গায় বেশিদিন থাকা ঠিক হবে না। সে স্থান পরিবর্তন করে হাইকোর্ট মাজারে চলে গেল। সেখান থেকে গোলাপ শাহ মাজার, পীরজঙ্গী মাজার- ঢাকার প্রায় সব কটি মাজার তার পরিচিত হয়ে উঠল। কাশেম চলাফেরা করে রাতে, তবে যেখানে যায় সেখানেই সে অন্য মাজারে পরিচয় হয়েছে এমন মানুষ পেয়ে যায়। বিষয়টি তার কাছে বেশ অস্বস্তির, কারণ সে অপরাধী; যে-কারণে এর-ওর সাথে পরিচিত হতে চায় না, যে-কারণে আবার অন্য মাজারে চলে যায়। এভাবেই বছর পেরিয়ে গেল। কাশেম আর সেই আগের কাশেম নেই।

    বছর বাদে কাশেমকে দেখে চেনা দায়- গলায় পাঁচ কী ছয়টা রুদ্রাক্ষের মালা, হাতের কব্জিতে তামা-পিতলের বালা। পরনে লাল কাপড়ের লুঙ্গি, গায়ে সেলাইবিহিন সাদা এক ফালি কাপড়। দাড়ি-গোঁফ কাটা হয়নি এক বছর। গোঁফ নীচের দিকে নেমে ঠোঁটজোড়াকে এমনভাবে ঢেকেছে তা দেখাই যায় না। বিভিন্ন মাজারের আশেপাশে এর-ওর সাথে শুয়ে মাথায় ভর করেছে রাজ্যের উকুন। যে কারণে মাথায় জটা করার ইচ্ছা থাকলেও তা হয়ে ওঠেনি। তবে চুলের বহর নেহাত ছোটোও না।

    মাজারের এই জীবন তার ভালো লেগে গেছে। কাজ নেই, কষ্ট নেই, সপ্তাহের শিরনিতে ভরপেট গোশত-ভাত মুফতে পাওয়া যায়। অন্যদিনও ভাতের অভাব নেই, নারীসঙ্গÑ চাইলে তাও পাওয়া যায়; কাশেম তা উপভোগই করে। এই জীবন ছেড়ে বাড়িতে বউ-বাচ্চাকে দেখতে যাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে রেখেছে, যদিও কচিৎ-কদাচিৎ তাদের কথাও মনে পড়ে। কিন্তুওদেরকে দেখতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরতে চায় না সে। ধরা পড়লে ভাতৃহত্যার অপরাধে নির্ঘাত ফাঁসি। এই বয়সে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলে সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চায় না। ফুলেশ্বরী গ্রামের নামকরা ডাকাত আকমল সর্দার বউ-বাচ্চাকে দেখতে এসেই না পুলিশের কাছে ধরা পড়ল, সে ও পথ মাড়াতে চায় না। কাশেম জীবনটাকে এভাবেই উপভোগ করতে চায়। সে শুনেছে সিলেটে বাবা শাহজালালের মাজার নাকি এতই বড়ো যে ওখানে একবার ভেতরে ঢুকতে পারলেই হলো; জনমের তরে নিরাপদ। তবে ওখানে খাওয়া মুফতে হলেও নারীসঙ্গ পাওয়া যায় না, এটা চিন্তার বিষয় বৈকি। তবুও নিরাপদ জীবনের জন্য সেখানে যাওয়ার ফন্দি-ফিকির করতে লাগল সে।

    কাশেম তখন বিনোদবিবির মাজারে। সেখানে তার এক সাগরেদ খবর দিল হাইকোর্টের কাছাকাছি রাস্তার ধারে ছোটো একটা মাজারে তার এক সময়ের গুরু তাবিজ বাবা গুরুতর অসুস্থ। বাবা তাকে দেখা করতে বলেছেন। দেরি না করে সেদিন রাতেই কাশেম তাবিজ বাবার আস্তানায় হাজির হলো। বাবাকে দেখে কাশেমের মনে হলো, তার অবস্থা বিশেষ সুবিধের নাÑ শ্বাসকষ্ট প্রবল। সারাজীবন গাঁজা খাওয়ায় শ্বাসযন্ত্রটা বোধ হয় একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। পেটে কী হয়েছে কে জানে, বাবার সেবিকা কুলসুম বিবি জানাল খাওয়া-দাওয়া তিনি একেবারেই ছেড়ে দিয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসায় বাবার অনাস্থা প্রবল। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর বিখ্যাত কবিরাজ হাতেম আলীকে খবর দেয়া হয়েছিল। তিনি এসে দাওয়াই দিয়ে গেছেন, কিন্তু অবস্থার উন্নতি তো দূরের কথা অবনতি হচ্ছে। কাশেম ভাবল, হায় হায় তাবিজ বাবার তাবিজে নাকি কত মানুষের কত উপকার হয়েছে আর এখন তার নিজের এই অবস্থা। এত ক্ষমতাধর বাবার এই অবস্থায় কাশেম দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। তাবিজ বাবার শরীর সুস্থ করার জন্য তাবিজ দেয়ার জন্য তো এই ভূবনে কেউ নাই। আকাশ-পাতাল অনেক কিছুই ভাবল সে, বাবা কি মরে যাবে? বাবা মরে গেলে এই মাজারের খাদেম কে হবে? বাবার কাছে এই মাজারের দায়িত্ব চাওয়াটা কি ঠিক হবে? বাবা একসময় তাকে ¯স্নেহ করতেন, বাবা যদি মরেই যায়, মৃত্যুর আগে কি তাকে মাজারে গদিনশিন করে যাবে? সে তো তাবিজ দিতে জানে না, বাঁঝা বউ-ঝি’র সন্তান ধারণের চিকিৎসাও জানে না। কিন্তু কুলসুম বিবির ভূমিকা কী হবে? সে কি তাকে মেনে নিবে? কুলসুম বিবির বয়স ত্রিশের কোঠায়। কালচে-শ্যামলা কুলসুমের শরীরের বিভিন্ন স্তরে খাঁজতোলা ভাঁজ আর সুডৌল স্তন তার মতো পুরুষের মাস্তিষ্কে মুহূর্তে ঝড় তুলে দেয়। মেয়েটার ডাগর চোখে কত কথা যে রয়েছে, ওর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। উদ্ভিন্নযৌবনা এই উর্বশী তরুণী আধাবুইড়া তাবিজ বাবার কাছে কেন থাকে কাশেম বুঝে উঠতে পারে না।
    কাশেমের আগমনে বাবা চোখ মেলে তাকালেন। তাকে বাগেরহাটে যেতে বললেন, সেখানে হজরত খান জাহান আলীর মাজারে আছেন বাবা শাহ সূফি আজমত আলী খান। তার সাথে দেখা করে তাবিজ নিয়ে আসতে বললেন তিনি। কুলসুম বিবি রাহা খরচ দিয়ে দিল। সেদিন রাতেই কাশেম বাগেরহাট চলে গেল। হজরত খান জাহান আলীর মাজারে বাবা শাহ সূফি আজমত আলী খানকে খুঁজে বের করে তাঁর কাছ থেকে তাবিজ, পানিপড়া ও ভেষজ ঔষধ নিয়ে পরের সন্ধ্যায়ই ঢাকায় রওনা হলো কাশেম। ভোরবেলা তাবিজ বাবার মাজারে পৌঁছতেই সে বুঝে গেল, তার জীবনে নতুন পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে।

    মাঝরাতে বাবা মারা গেছেন- মুরিদরা তাঁর দাফনের আয়োজন করছে। তাবিজ বাবার অধ্যায় শেষ- দাফন শেষে মুরিদরা কুলসুমের কাছে বসল, কুলসুমের কোনো ভাবান্তর নেই। সে জানিয়ে দিল জানপাখি উড়াল দেবার আগে তাবিজ বাবা কাশেমকে এই মাজারের খাদেম ঘোষণা করে গেছেন, চল্লিশ দিন বাদে বাবার কুলখানি করা হবে। সেদিনই কাশেম তাবিজ বাবার মাজারের নতুন খাদেম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিবে।

    তাবিজ বাবার মাজারে কাশেমের নতুন জীবন শুরু হলো। মাজারের পেছনে টিনের ঘওে থাকার জায়গা। বাইরে থেকে দেখে মনে হয় একটাই ঘর, প্রকৃতপক্ষে ভেতরে রয়েছে দুটো ঘর। তবে দুই ঘরের মধ্যে টিনের একটা বেড়া দরজার মতো। সেই পথে কুলসুমের ঘরে যাওয়া যায়। দিন কয়েক পৃথক ঘরে থাকলেও অচিরেই কাশেম ও কুলসুমের একত্রবাস শুরু হলো।
    প্রথম দিনে কাশেম বেশ বেকায়দায়ই পরে গেল। কেননা সে এতদিন বিভিন্ন মাজারের গুরুদের সেবা করেছে, বিনিময়ে মুফতে খেয়েছে। তাবিজ দেয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে। কুলসুম বলল, ‘চিন্তা করন লাগব না। আমি আছি না? সব ব্যবস্থা কইরা দিমুনে। তুমারে শুধু পীরগিরি করতে হইব। আর অ্যাট্টা কথা হুনো, বহুদিন মাজারে মাজারে ঘুরছ, বাবাগো ভাবভুব তো দেখছ, বাবাগোর নাহাল ভাব ধরতে হইব। তা না হইলে মাইনষে আইব না।’ পেয়াদা থেকে রাজা হয়ে কাশেম পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকল। কুলসুম তাকে সকলের সামনে একেবারে পীরবাবার মতোই আদব-ভক্তি করতে থাকল।

    চল্লিশ দিনের মাথায় তাবিজ বাবার কুলখানি হলো। মরহুম তাবিজ বাবার মুরিদ, ভক্ত জনা পঞ্চাশেক লোক কুলখানিতে অংশগ্রহন করল। কুলখানিতে দোয়া-মাহফিল পরিচালনা করতে হবে শুনে সকাল থেকেই কাশেম ভয়ে তটস্থ। ঢাকায় এসে কাশেম ঢাকার স্থানীয় ভাষা রপ্ত করেছে যেন তাকে কেউ কুষ্টিয়ার মানুষ না ভেবে বসে। কাশেম কুলসুমকে বলল, ‘কুলসুম, তুমি আমারে মিলাদ পড়াইতে কও? আমি কি মিলাদ পড়াইছি নি? কী কইতেছ তুমি? আমি মিলাদ পড়াইবার পারুম না।’ শেষে ভক্তদের মধ্যে একজন দোয়া-কালাম পড়াল, বৃদ্ধ এক ভক্ত তাবিজ বাবার পাগড়ি কাশেমের মাথায় পরিয়ে দিল। তাবিজ বাবার আর পাগড়ির এক প্রান্ত ধরে কাশেম চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে দোয়া-কালাম পড়ল নাকি বিপদ ধেকে উদ্ধার পাবার জন্য আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করল, তা কাশেম আর আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝল না। উপস্থিত মুরিদ ও ভক্তবৃন্দ পাগড়ির অপর প্রান্ত ধরে কাশেমের হস্ত চুম্বন করে বায়েত গ্রহণ করল। কাশেম তাবিজ বাবার মাজারে গদিনশিন পীর হয়ে গেল। কুলসুম আগের মতোই পীর-মা থেকে গেল।

    তাবিজ বাবার মাজারে কাশেম পীরগিরি করলেও তার মন চলে যায় হজরত খান জাহান আলীর মাজারে। সে সিলেটের হজরত শাহজালালের মাজারেও যেতে চায়। কোনো এক নিভৃত কথোপকথনে কুলসুমকে মনের ইচ্ছা জানালে কুলসুমই বুদ্ধি বাতলে দিল। সে অনুযায়ী মাজারের গেটে সিলেটে মাজার জিয়ারতের লাল কাপড়ে মোড়ানো বাক্স বসানো হলো। লিখেও দেয়া হলো, ‘সিলেটে বাবা শাহজালালের মাজারে ওরশ মোবারকে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক ঈমানদার ব্যক্তিবর্গকে দান করার অনুরোধ করা হলো। বাবা শাহজালালের মাজারে ওরশ মোবারকে অংশগ্রহণ করে দোজাহানের নেকি হাসিল করুন।’ কুলসুম জানাল বাক্সে প্রথম দিন থেকেই টাকা পড়তে শুরু করেছে।

    মাস তিনেক যেতে না যেতেই বাক্সের তালা খুলে কুলসুম জানাল টাকা জমা হয়েছে মাত্র ত্রিশ হাজার। কাশেমের খুব শখ ছিল বাস রিজার্ভ করে মুরিদদেরকে নিয়ে সিলেটে যাবে। এত অল্প টাকায় তা হবে না, অবশেষে জনা বিশেক ভক্তকে নিয়ে ট্রেনে করে সিলেটের ওরশে অংশগ্রহন করল। সেখান থেকে ফিরে মাসখানেক পরেই সে কুলসুমকে নিয়ে গেল হজরত খান জাহান আলীর মাজারে। এই মাজার তাকে বরাবরই টানে, এই মাজারটি খুব বড়ো জায়গা নিয়ে, সিলেটের মাজার বেশ সঙ্কীর্ণ। খান জাহান আলীর মাজারের বিশালত্ব, বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করেছে। দীঘির পাড়ে বসে থাকতে তার খুব ভালো লাগে। হঠাৎ করেই যখন কুমির দেখা যায় তখন পরম আগ্রহে সে তা দেখে- মুগ্ধ হয়। সাথে কুলসুম। কাশেম জানে ও বারোয়ারি মেয়ে ছিল, কিন্তু এখন তার। খুবই বিশ্বস্ত ও অনুগত। স্ত্রী হিসেবেও খুব ভালো, আর ওকে ছাড়া রাজত্বও ধরে রাখা যাবে না।

    এর পর সে হজরত খান জাহান আলীর মাজারের ওরশের তারিখ জেনে নিয়ে প্রতি বছরই সেখানে অংশগ্রহণ করতে থাকল। সাথে কুলসুম। ওরশে যখন আসে তখন সে তাবিজ বাবার মাজারের দায়িত্ব বিশ্বস্ত একজন ভক্তকে দিয়ে আসে। তবে একেক বছরে একেক জনকে দেয়; যেন কারোর মাথায় মাজার দখল করার চিন্তা না আসে। খান জাহান আলীর মাজারে গেলে বাড়ির কথা মনে পরে। এখান থেকে বাড়ি খুব একটা বেশি দূরে না, মা বেঁচে আছে কিনা কে জানে? ভাইকে তো শেষ করে এসেছে। ভায়ের বউ, ছেলে-মেয়ে নিশ্চয় ও বাড়িতেই আছে। এক বছরের সোহাগ গত পাঁচ বছরে বড়ো হয়েছে। বউ রমেলা কি ঐ বাড়িতে আছে, নাকি অন্যত্র বিয়ে করেছে? কে জানে? বউটা তাকে খুব ভালোবাসত। রাগের মাথায় কী যে করে বসল সে? প্রথম বছরটা পুলিশের ভয়ে সে বউ-বাচ্চা নিয়ে তেমন ভাবেনি। কিন্তু তাবিজ বাবার মাজারে বেশ আরাম-আয়েশে দিন কাটছে। অলস দুপুরে পুরনো দিনের স্মৃতির মন্দিরে চাগাড় দেয় মাঝেমধ্যে। রাতের বেলায় কুলসুমের পাশে শুয়ে তার মনে হয়েছে, রমেলা বাচ্চাটাকে নিয়ে একাকী শুয়ে নাকি সে অন্যজনকে বিয়ে করে তার পাশে? অনেকবার মনে হয়েছে, ওদের খাবার জুটছে কিভাবে? হয়ত ভাতের অভাবেই রমেলার বাবা এসে ওদের নিয়ে গেছে, রমেলার আর একটা বিয়ে দিয়েছে। ঐ বয়সের একটা মেয়ে আজীবন স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকবে নাকি? রোমেলা নিশ্চয় নতুন স্বামীর সাথে রাত্রিযাপন করছে।

    হ্যাঁ, রমেলা ভাতের অভাবে বাবার বাড়ি চলে গেছে, তবে বিয়ে করেনি। বাবা অনেক বলা সত্বেও সে তার ছেলে সোহাগকে নিয়ে আবারও বিয়ে করতে রাজি হয়নি। তাছাড়া গ্রামের মসজিদের ইমাম তার বাবাকে জানিয়েছে, কাশেমের সাথে তালাক না হলে পুনরায় বিয়ে ধর্মমতে সিদ্ধ হবে না। রমেলা বাবার বাড়িতেই থাকে। বছরান্তে এক কী দু’বার স্বামীর সন্ধানে বিভিন্ন মাজারে শিরনি দিতে যায়। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন মাজারগুলোতে সে গিয়েছে, চুয়াডঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি মাজারেও গিয়েছে; সাথে ছেলে আর কোনো না-কোনো ভাই। দূরবর্তী মাজার বলতে ভেড়ামারা থেকে রাজশাহীতে শাহ মখদুমের মাজারে গিয়েছে ট্রেনে করে। সিলেটের মাজারে যাওয়ার ইচ্ছাও তার আছে। খান জাহান আলীর মাজারের ওরশে শিরনি দিয়ে অনেকের নাকি মনোবাসনা পূরণ হয়েছে। রমেলা সেখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার বাবাকে জানাল। একমাত্র মেয়েকে তিনি সম্মতি দিলেন এই শর্তে যে, এর পরে আর অন্য কোনো মাজারে যাওয়ার টাকা তিনি দিতে পারবেন না। খান জাহান আলীর মাজারের ওরশ হয় অগ্রহায়ন মাসের আট ও নয় তারিখে সে অনুযায়ী রমেলা প্রস্তুতি নিল। ছেলেটাকে মায়ের কাছে রেখে ভাইকে নিয়ে রওনা দিল।

    প্রথম দিনের ওরশেই হাজার মানুষের ভিড় হয়েছে। সকালের দিকেই মাজারের কুমির দেখে মাজার গেটের বাইরে আসতেই একজনকে দেখে তার শরীরের রোমকুপ সোজা দাঁড়িয়ে গেল। চেনা চেনা লাগে, চেহারায় মিল আছে; কিন্তু পুরোপুরি চেনা যায় না। লোকটির সাথে একটা মেয়েও রয়েছে। লোকটার পরনে লাল লুঙ্গি, গায়ে সাদা কাপড়, গোঁফ-দাড়িতে মুখের অর্ধেক ঢাকা, চুলও বেশ লম্বা। বয়স বেশি না। হাতে একটা লাঠি, লাঠির গায়ে তামা-পিতলের টুকরো বসানো। রমেলা ভাইকে বিষয়টা বলল। তার ভাই মানুষটাকে দেখল, কিন্তু একে কাশেম বলে তার মনে হলো না। রমেলা লোকটার কাছাকাছিই অলক্ষ্যে ঘোরাফেরা করতে লাগল। সে মানুষটার পিঠ দেখতে চায়। কাশেমের পিঠে আছে বড়ো এক জরুল। আর দেখতে চায় তার বাম হাত; ঐ হাতে রয়েছে একটি অতিরিক্ত আঙুল। কিন্তু লোকটা এমনভাবে সাদা কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে রেখেছে যে, না দেখা যায় পিঠের জরুল, না বাম হাতের আঙুল।
    গোটাদিন আড়ালে থেকে রমেলা কাশেমকে অনুসরণ করল। ছয়টি বছর হৃদয়মন্দিরে স্বামীর জন্য কত-না কথাই জমা হয়েছে। ছেলে সোহাগকে নিয়ে রাত যাপনের জন্য একটু আশ্রয়, আর দু’মুঠো ভাতের জন্য কত-না কষ্ট করতে হয়েছে। লোকটি আর কোনোদিন কোনোভাবেই খোঁজ নিল না বউ-বাচ্চার? স্বামীপ্রবর তার বেশ তিরিক্ষে মেজাজের মানুষ ছিল, কিন্তু বউ-বাচ্চার প্রতি সে ছিল বেশ নমনীয়। আয়-উপার্জন তার কম ছিল, গ্রামে কখনও দিনমজুরের কাজ পেয়েছে কখনও পায়নি; কাজ না পেলে বেশ কষ্টে দিন কেটেছে তাদের। তবে না খেয়ে থাকতে হয়নি, তিন বেলা না হলেও দু’বেলা ভাত জুটেছে। রমেলা স্বামীকে শহরে যেতে বলেছে। শহরে নাকি দিনমজুরের কাজের কমতি নেই। কিন্তু কাশেম রাজি হয়নি, বলেছে, ‘তোদের এইহানে রাইখি আমি কুনুখানে যাতি পারব না-রে রোমো। বউ-বাচ্চাক গাঁয়ে থুইয়ি ট্যাকা কামাই করতি শহরে যাতি মন চায় না।’ সেই মানুষটা একটা ঘটনা ঘটিয়ে সেই যে পালাল, আর খোঁজও নিল না কোনোদিন কোনোভাবে?

    রমেলা আশা করেছিল দুপুরেই চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাবে। গোসলের সময় সে দেখে নিশ্চিত হবে এই মানুষটি কাশেম কিনা? কিন্তু সে গুড়ে বালি, লোকটা আজ গোসলই করল না। তারপরও তার কাছাকাছিই থেকেছে। অগ্রহায়ন মাসে গ্রামাঞ্চলে কিছুটা ঠান্ডা। তখন বিকেল, পশ্চিমাকাশে সূর্য এই ডোবে, সেই ডোবে অবস্থা। হালকা কুয়াশার চাদর গোটা এলাকায় নির্বিবাদে নেমে আসছে। ঠান্ডার একটা হালকা আমেজ অনুভ‚ত হয়। বোধ হয় চাদর জড়ানোর জন্য লোকটি গায়ের সাদা কাপড় খুলেছিল, অমনি রমেলা নিশ্চিত হয়ে গেল, গোঁফ-দাড়িতে মুখের অর্ধেক ঢাকা, লম্বা চুল, অদ্ভুত বেশধারী মানুষটি তার স্বামী কাশেম- পিঠে সেই জরুল, বাম হাতের কনিষ্ঠার সাথে ঝুলছে ছোট্ট একটি অতিরিক্ত আঙুল। রমেলার গোটা শরীরে শিহরন বয়ে গেল, শরীরে কাঁপন অনুভূত হলো। কণ্ঠনালী শুকিয়ে কাষ্ঠবৎ। ভাইকে বলল তৎক্ষণাত; ভাই নিরুত্তর- তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ, নিষ্পলক।

    ভায়ের দিকে না তাকিয়ে রমেলা দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল কাশেমের দিকে। কাশেম তখন মাটিতে বসা, পাশে কুলসুম। রমেলা দু’হাঁটু গেড়ে কাশেমের সামনে বসে পড়ল। মাথায় ঘোমটা টেনে কাশেমের দিকে সরাসরি তাকাল, রমেলাকে চিনতে কাশেমের বিলম্ব হয়নি, কাশেম বিস্মিত, বিব্রত। মাত্রই তো ছয় বছর হয়েছে, যে মানুষটার সাথে দুটো বছর এক বিছানায় ঘুমিয়েছে তাকে না চিনতে পারার কথা না। রমেলা অস্ফুট স্বরে কেঁদে উঠল। ‘সোহাগের বাপ, তুমি এইখিনে? আমাক চিনতি পারতিছ না? তুমার ভাই মরেনিগো, বাঁইচি আছে। ভাইকে মাইরি সেই যে পলাইলা, আর কুনুদিনই বউ, ছেলের এট্টা খবর পয্যন্ত নিলি না?’

    কাশেম উদভ্রান্তের ন্যায় বলে উঠল, ‘তুই ক্যাডা-রে? সর এইহান থেইকা। ভাইগা যা কইতাছি।’ কাশেম লাঠিতে ভর করে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যেদিকে অনেক মানুষের ভিড় দেখা যায় সেদিকে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিল। পেছনে রমেলার ক্ষীন কণ্ঠ শুনতে পেল, ‘শুইনি যাও-গো, ও সোহাগের বাপ এট্টা কতা শুইনি যাও।’কাশেম চলে গেল মাজারের বাইওে নির্ধারিত স্থানে- আসরে, সে এখন কোনো চিন্তা করতে চায় না। গঞ্জিকা সেবন করে তাবিজ বাবার সাথে দেখা করতে চায়। কথা হবে দিলে দিলে, আত্মায় আত্মায়- উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাবার হুকুম নিতে হবে। থেমে থেমে কয়েক ঘন্টা গঞ্জিকা সেবনের পরে তার চিন্তাশক্তি প্রায় লোপ পেয়েছে। গভীর রাতে নির্ধারিত জায়গায় ফিরে দেখল, কুলসুম না ঘুমিয়ে তখনও তার জন্য অপেক্ষা করছে। কুলসুম বেড়ে উঠেছে একরকম বেওয়ারিশ প্রাণির মতো। তার কাছে পুরুষ মানুষ নারীর ভাগ্যবিধাতা। নারী তার খিদমতগার মাত্র, পুরুষের সম্পত্তি। এটাই তার আজন্ম লালিত জ্ঞান। কিশোরী বয়সে তার বিয়ে হয়েছে, বছর পেরিয়েছে সন্তান হয়নি। স্বামীপ্রবর তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে অন্যের কাছে গছিয়ে দিয়েছে, হয়ত বিক্রি করে দিয়েছে। এর পরে অনেক হাত ঘুরে তাবিজ বাবার আশ্রয়ে থাকতেই তার ভালো লেগেছে। কেননা, বুড়াবাবার কাছে খাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল, নিজের শীওে তাকদ না থাকায় জ্বালা-যন্ত্রণাও করত কম। বেচারা মরে গেল, আজ পাঁচ বছর কাশেমের সাথে। সে গাঁজা খায়। এছাড়া তার আর কোনো দোষ নাই। কুলসুম বাঁঝা জেনেও দিব্যি পাঁচটা বছর তার সাথে কাটিয়ে দিয়েছে কাশেম। এই লোকটাকে সে ছাড়তে চায় না। ঐ মেয়েটা যে তার আগের বউ তা বুঝতে তার অসুবিধা হয়নি। সে স্পষ্টতই বুঝেছে যে কাশেম বাড়িতে কোনো এক দূর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে বেড়ানো মানুষ। কুলসুম খাবার বের করে দিল। কাশেমের নেশার ঘোর কিছুটা কেটে যাওয়ার পর সামান্যই খেল। খাওয়ার পরে কাশেমের নেশার ঘোর আরও কেটেছে বলে মনে হলো কুলসুমের কাছে। গড়গড় করে সে তার নিজ বাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে ফেলল। এ-ও বলল, আজই সে জানল, ভাই মরেনি। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে দেখে সে ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল।

    কুলসুম জিগ্যেস করল, ‘বাড়িত যাইবা, নাকি তাবিজ বাবার মাজারে যাইবা?’
    ‘নারে কুলসুম বাড়িত গিয়া কাম নাই? তর লগেই থাকুম।’
    ‘আমি তোমারে পোলাপাইন দেবার পারুম না। বাড়িত্ তুমার একটা পোলা আছে। আজ রাইত ভাইবা দ্যাহ। যদি ঢাকায় ফিরবার চাও, কাইলকার দিনডা ঘরেই চুপচাপ বইয়া থাহ, রাতের বাসে পলাইয়া যামু। তুমার বউ কাল হারাদিন তামাম মাজারে তুমারে খুঁজব।’

    কাশেম শুয়ে ঘুমের ভান করে রইল কিছুক্ষণ। বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন এর বাইরে খুব বেশি চিন্তা সে কোনোদিনই করতে পারে না। আজ তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে- বড়ো সিদ্ধান্ত। চিন্তা করতে চাইল, কোথায় যাওয়া তার উচিত? তাবিজ বাবার মাজারে নাকি বাড়িতে? যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করল। কিন্তু শুরুতেই তার চিন্তার তার কেটে গেল। সে শুধু এতটুকুই ভাবতে পারল যে, সে বাড়িতে গেলে কুলসুম আর একজনকে খুঁজে নেবে। বাড়িতে না গেলে রমেলা যেভাবে জীবন পার করছে সেভাবেই করবে। তার মনে হলো মানুষের ভাগ্য মানুষ নিজে কদাচিৎ-ই গড়তে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নিয়তির দাস, সে চেষ্টা করে মাত্র। অল্প কিছু মানুষ চেষ্টার দরুন কিছু কাক্সিক্ষত বা অনাকাক্সিক্ষত ফল লাভ করে। তবে তার মতো দরিদ্র মানুষের ভাগ্য গড়ে নেয়ার সুযোগ এই পৃথিবীতে কম। অমোঘ নিয়তিই তাদেরকে চালিত করে।

    গত ছয়টি বছর সে ছন্নছাড়া জীবনযাপন করছে, এক ধরনের ভীতি তাকে তাড়িয়ে ফিরত- সেটা পুলিশভীতি। আজ সে সেই ভীতি থেকেও মুক্ত হলো। তার ভাই মরেনি, যে কারণে পুলিশ তাকে ধরার জন্য খোঁজেনি। আজ থেকে সে মুক্ত। মাজারে বিনাশ্রমের জীবন, ভরপেট খাবার, ভক্তকুলের কাছ থেকে পাওয়া সম্মান- এতসব কিছু ছেড়ে গ্রামে কষ্টকর জীবনে ফিরে যাওয়া কি ঠিক হবে? এ কথাটি সে আজ, এখনই কুলসুমকে জানিয়ে দিতে চায়- সে গ্রামে যাবে না। কুলসুমকে নিয়ে সে ঢাকায় পালিয়ে যাবে। ইত্যকার নানা ভাবনায়, গাঁজা সেবনের প্রভাবে অজান্তেই ঘুমের রাজ্যে চলে যায় কাশেম। কিছুক্ষণ পরে ঘুম ভেঙে যায়, হালকা নাক ডাকার শব্দ শুনতে পায় সে। কিছুটা বিস্মিত হয়, কুলসুমের তো নাক ডাকার অভ্যেস নেই, নাক ডাকার অভ্যেস ছিল রমেলার- আজ কেন কুলসুমের নাক শব্দ শুনছে সে? কাশেম উঠে বসে কুলসুমের দিকে তাকাল। কুলসুমের দিকে তাকিয়ে সে ভয় পেয়ে যায়, কোথায় কুলসুমÑ এতো রমেলা? রমেলা তার পাশে কেন? কুলসুম কোথায়? নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ায় সে। মস্তিষ্কে তার একটাই ভাবনা- রমেলার অজান্তে এখান থেকে বেরোতে হবে, তারপরে কুলসুমকে খুঁজতে হবে। সে কোনোদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার করেনি ভয়ে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে পুলিশ আসামীকে ধরে ফেলে। এ কারণেই সে এতদিন সাবধানতা অবলম্বন করেছে সে। কিন্তু এত বড়ো মাজারে, এই রাতের বেলায় সে কুলসুমকে খুঁজে পাবে কিভাবে? তবুও সে বের হয়ে পড়ে। কাশেম ভাবল, দুই দিন পার হয়েছে। বিভিন্ন আসরে সে সময় কাটিয়েছে, কিন্তু খানজাহান আলীর মাজার জেয়ারত করা হয়নি, এটা একটা বড়ো গুনাহের কাজ হয়েছে। এই গুনাহের জন্যই তার ভাগ্যে এই শাস্তি নেমে এসেছে। আগে সে মাজার জেয়ারত করবে।

    কাশেম মূল মাজারের দিকে রওনা হলো। মাঝরাত পেরিয়েছে বেশ আগে বোধ হয় আর কিছুক্ষণ বাদেরই সুবহে সাদিকের লগ্ন, ক্ষীণ আলোয় পৃথিবীকে প্রস্তুত করবে পূর্ণাঙ্গ আলো গ্রহনের জন্য। কাশেম কিছুটা দূর থেকেই মাজার প্রাঙ্গনে আলো-আঁধারীতে বেশ অনেক মানুষ দেখতে পায়। কাছে গিয়ে সে আবারও ভয় পেয়ে যায়। তার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে, এ কি দেখছে সে? সকলে একই চেহারা নারী। দশ, বিশ, পঞ্চাশজন নারী- সকলেই রমেলা। সে না রমেলাকে ঘরে রেখে আসল! এরা কারা? এটা কি সম্ভব? কাশেম সদর রাস্তার দিকে দৌড় দিল। পেছন থেকে আবারও সেই আওয়াজ ভেসে আসছে, ‘সোহাগের বাপ, সোহাগের বাপ আমার কতা শুইনি যাও।’ কাশেম আরও জোরে দৌড়ায়। ওরাও পিছে পিছে দৌড়ে আসছে। অনেক নারীর কণ্ঠের আওয়াজ আরও উচ্চকিত হচ্ছে। হেমন্তের কুয়াশাসিক্ত হালকা হিমেল আবহাওয়াতেও কাশেম ঘেমে যায়। দৌড়ানোর শক্তি বুঝি-বা নিঃশ্বেষ হয়ে আসে। ঘর্মাক্ত শরীরের কাশেমের পা আর যেন চলে না, কাশেম জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৫ জুন ২০২০ | ১৬৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন