এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • হারিয়ে যাওয়া কোলকাতার জলছবি (দ্বিতীয় ভাগ) পর্ব ১

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৮ জুন ২০২৪ | ৪৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • পর্ব ১
    দ্বিতীয় ভাগ (১৯৬৬-৭০)

    (১)

    আড়াল বুঝে আঁধার খুঁজেঃ হারিয়ে যাওয়া কেবিনের দিন
    ‘ট্যাঁশগরু গরু নয়, আসলেতে পাখি সে’

    কেবিন শব্দটির সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় সাত আট বছর বয়সে, একটি বিশেষ বইয়ের কিশোর সংস্করণ হাতে পেয়ে – হ্যারিয়েট বীচার স্টো’র “আংকল টমস্‌ কেবিন”। বইয়ের মলাটের ছবিটবি দেখে কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল।

    একটা আমার মতই কালোকোলো লোক হাঁটু গেড়ে বসে চাবুক খাচ্ছে, পাশে একটা চেনে বাঁধা কুকুর দাঁত খিঁচোচ্ছে। আর তার ঠিক পেছনে একটা সাদামাটা কাঠের বাড়ি, যাকে ঘর বলাই সমীচীন। বুঝলাম, তুলোর ক্ষেতে খেটে মরা বয়স্ক লোকটি ওই কেবিনে থাকে।

    এরপর একদিন দেখলাম বাংলা অনুবাদে বইটির নাম ‘টম কাকার কুটির’। তখন থেকেই আমার কাছে কেবিন মানে একটা কোনরকমে মাথা গুঁজে থাকার জায়গা। আর ওখানে থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন।

    না, কেবিন শব্দটি নিয়ে মনের মধ্যে তখন কোন উলুত পুলুত বা রোম্যান্টিক অনুভূতি হত না। তারপরে এল সেই বয়েস — যখন ঠোঁটের উপর পাতলা গোঁফের রেখা দেখা দেয়, গলার আওয়াজ প্রথমে ভাঙে, তারপর একটু মোটা হয়।

    পাড়ায় চিঠি বিলি করতে আসা পিওনকাকা একদিন কোন কারণে খচে গিয়ে আমাদের মধুর সম্ভাষণে বলেছিলেন — ঢ্যামনা ছেলে, নতুন রস হয়েছে !
    সে যাই হোক, মানে সেই নতুন রস, তা সে খেজুরের হোক বা আখের, আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। আমরা মেয়েদের অন্য চোখে দেখতে লাগলাম। পাড়ায় যাদের সঙ্গে রুমাল চোর, পিট্টু, দাড়িয়া বান্ধা, খো খো , কবাডি খেলে বড় হয়েছি, তাদের কাছে অসহজ হয়ে পড়লাম। তাদের অনেকেই কোন যাদুবলে গুবরে পোকা থেকে কাঁচপোকা বা গুটিপোকা থেকে প্রজাপতি হয়ে গেল।

    আমাদের খুব দোষ দেওয়া যায় কি! ওরা কখন ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ধরল? কথা বলতে গেলে চোখ নামাতে হয়। দৃষ্টি আপনাআপনি সরে যায় যেখানে ‘খাজুরাহো কোণারক বুকের উঠানে’।
    আর কখন যেন আমরা সজাগ হলাম যে শহর কোলকাতায় খাওয়ার জায়গা মানে শুধু পাইস হোটেল নয় — যেখানে বারো আনায় এক থালা ভাত, ডাল, বেগুন বা আলুভাজা, একটুকরো মাছের পিস, এক ফালি লেবু ও এক চিমটে নুন পাওয়া যায়।
    আবার পাড়ার নড়াদার চায়ের দোকানও নয় -- যেখানে পাঁউরুটি, ঘুগনি, ডিমের মামলেট আর কাঁচের গেলাসে ফুটন্ত ল্যাঙোট চা পাওয়া যায়।

    টীকাঃ যেখানে উনুনের উপর কালো হওয়া সসপ্যানে ফুটন্ত পাউডার মিল্কের মধ্যে কিছু চিনি এবং চা পাতার গুঁড়ো ঢেলে বার বার ফোটানো হয় আর সেই চা খদ্দের চাইলে একটা কালো মত ন্যাকড়ার পুঁটলিতে ছেঁকে গেলাসে ঢেলে দেওয়া হয় তার নাম ‘ল্যাঙোট চা’। এই নামকরণ কতটা সঠিক সেটা ওই চা ছাঁকার কালচে ন্যাকড়ার দিকে তাকালেই বুঝতে পারবেন।

    তারপর?
    খাওয়ার দোকানের আরেকটা প্রজাতি আছে যারে কয় রেস্টুর‍্যান্ট, আড্ডায় কোন বইমুখো চশমাপরা বন্ধু শুধরে দেয় – সঠিক উচ্চারণ হল রেস্তোরাঁ, ওটা ফরাসি শব্দ। আমরা ইংরেজের কলোনিয়াল দাস হয়ে মূল শুদ্ধ উচ্চারণ শিখতে পারি নি। যেমন মোপাসাঁ হয়েছেন মপাসান্ট!

    যাকগে মরুকগে! ওটা ফরাসি না ফার্সি জেনে আমার কোন পরমার্থ লাভ হবে? ওই রেস্টুর‍্যান্ট বা রেস্তোরাঁয় ঢুকতে গেলে রীতিমত রেস্তো লাগে যেটা আমাদের কারোরই নেই।
    তবে এটুকু জানি যে অনেক রেস্তোরাঁর নামে রয়েছে কেবিন শব্দটি — বসন্ত কেবিন, দিলখুসা কেবিন, অনাদি কেবিন। আর জানি যে তাদের কোন কোনটার ভেতরে রয়েছে ‘কেবিন’, বেশির ভাগের ভেতরে নেই। আর সেই কেবিন বলতে একটা অন্ধকারমত খুপরি ঘর, পর্দাটানা—যেখানে ঢুকলে কেমন যেন দমবন্ধ ভয় ভয় অনুভূতি হয়।

    “পুরানো জানিয়া চেয়ো না আমারে আধেক আঁখির কোণে”

    একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।

    আমি বলছি ষাট বছর আগের কোলকাতার গল্প, মানে বিগত শতাব্দীর ষাট এবং সত্তরের দশকের গল্প।

    তখন দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাত্র দুটো দশক পেরিয়েছে। কোলকাতা আমাদের মত সীমান্ত পেরিয়ে আসা উদবাস্তু বাঙালদের ভীড়ে ‘কল্লোলিনী তিলোত্তমা’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

    আমাদের মত অধিকাংশ পরিবার থাকেন ভাড়াবাড়িতে। বেশিরভাগ একান্নবর্তী পরিবার। সেখানে বসবার ঘর বা ড্রইং রুম বলে কিছু হয় না। একটাই বড়সড় শোবার ঘর, সেখানে রাত্তিরে পাশাপাশি বিছানা পাতা হয়, সকালে সেটাই গুটিয়ে তুলে রাখার পর মাদুর পেতে ছোটরা পড়তে বসে, বাড়ির কর্তা হয়ত একটি মাত্র কাঠের চেয়ারে বসে চা-জলখাবার খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়েন। বাড়ির মহিলারা থাকেন ভেতরে একটা ছোট ঘরে, রান্নাঘরের লাগোয়া।

    সেই পরিবেশে ‘প্রাইভেসি’ কথাটাই কেমন বুর্জোয়া-গন্ধ মাখা অশ্লীল শোনায়। তাই উঠতি বয়সের বন্ধুরা এলে তাদের বাড়ির ভেতরে ডাকার প্রশ্ন নেই। তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে আমাদের নাম ধরে ডাকে। ভেতর থেকে কেউ পালটা চিৎকারে জানান দেন – আসছে, একটু দাঁড়াও।
    বন্ধু তো দাঁড়াবার জন্যে তৈরি হয়েই এসেছে। সে রাস্তায় পায়চারি করে।
    না, তখন উঠতি বয়েসের ছেলেকে মাসিক হাতখরচা বা ‘পকেট মানি’ দেওয়ার প্রথা ছিল না। দরকার কী! বাড়ি থেকে দু’বেলা খাবার, চা-জলখাবার, থাকার জায়গা, জামাকাপড়,পড়ার খরচ দেওয়া হচ্ছে। ওর আর কী চাই!

    ছোটদের হাতে টাকা দিতে নেই। কী দরকার সেটা জেনে জিনিসটা কিনে দিতে হয় — জামাকাপড়, চটি বা পাঠ্যবই। অপাঠ্য বইয়ের জন্যে পাড়ার লাইব্রেরি আছে। হাতে টাকা পেলে ছেলেরা বয়ে যায়, বিড়ি খায়, রেস্তোরাঁয় যায়, সিনেমায় যায়।

    ব্যস, এবার তার ইহকাল-পরকাল ঝরঝরে। তাছাড়া আমাদের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মাসিক বাজেটে ছেলের পকেট মানির প্রশ্নই ওঠে না। ওসব বড়লোকের ছেলেদের জন্যে, যারা বাবাকে ড্যাডি বা মা’কে মামি বলে, কী অসভ্যতা!

    ওরা তাড়াতাড়ি বখে যায়। সিগ্রেট খায়, হোটেলে যায়, মদ ধরে। ওদের লেখাপড়া হয় না, বয়েস হলে বাপদাদার চেনাজানার সূত্রে কোন চাকরিতে ঢুকে পড়ে। আর বিজনেসম্যান হলে বাপের গদিতে বসে। টাকাপয়সা ভাল জিনিস নয়।

    মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রাম থেকে কোলকাতায় আসা ঈশ্বরচন্দ্র যদি ফুটপাথে বসে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পড়াশুনো না করতেন তাহলে কি বিদ্যাসাগর হতেন?

    তাই কবি গাহিয়াছেন -
    হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান,
    তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীস্টের সম্মান।

    হ্যাঁ, ছয় দশক আগের কোলকাতায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের দারিদ্র্য আমাদের বাপ-কাকাকে মহান করে খ্রীস্টের সম্মান দিয়েছে। আর আমাদের মাথায় উঠেছে হীনম্মন্যতার কাঁটার মুকুট।

    মহাপাতক! মহাপাতক!
    সে যাই হোক, তখন স্কুলে থাকতে সিগ্রেট ফোঁকা বিষম অপরাধ।
    আর রেস্তোঁরায় ঢোকা? ওরে বাবারে! সে তো মদ খাবার মতই মহাপাতক।

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কোন এক কিশোর পুজোবার্ষিকীতে লেখা গল্পে দেখিয়েছিলেন যে একটি ছেলে খগেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘গহন বনের স্বপ্ন’ বইটি ধার চেয়ে পড়বে বলে জিওমেট্রি বক্সের টাকা দিয়ে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কুঞ্জ নামের এক মার্কামারা বখাটে ছেলেকে একটি হোটেলে চপ খাওয়ায়।
    সেই অপরাধে তার গৃহশিক্ষক তাকে এই বলে বেধড়ক ঠ্যাঙান — কুঞ্জর সঙ্গে মিশছ! হোটেলে ঢুকতে শিখেছ? রাসক্যাল!

    আর মেয়েদের কথা না বলাই ভাল! ওদের যে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে সেই ঢের। কলকাতায় খুব কম স্কুলেই সহশিক্ষা ছিল। বেশিরভাগ ‘বয়েজ স্কুল’ আর ‘গার্লস স্কুল’।
    কলেজের পড়া শেষ হতে না হতে অধিকাংশ মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। ততদিন তাকে মুখ বুঁজে বাড়ি থেকে স্কুল, সেখান থেকে সোজা বাড়ি — এই করতে হত। রাস্তাঘাটে কোন ছেলের সঙ্গে হাসিমশকরা নয়, তাহলে পাড়ায় বদনাম হবে, বিয়ের সম্বন্ধ পেতে অসুবিধে হবে। বাবা-মা’র নাককাটা যাবে।

    তখনকার মেয়েরা খুবই বাধ্য ছিল বোধহয়। তাই আমি চেনাজানার মধ্যে কোন নাককাটা বাবা-মা দেখি নি।
    তো সেই মেয়েরা রেস্তোরাঁয় ঢুকবে? কেবিনে? হে ঈশ্বর!

    বলে রাখা ভাল, তখন পাড়ায় পাড়ায় এত ফাস্ট ফুড, এগরোল চাওমিনের দোকান দূরে থাক, ঠেলাগাড়িও হয় নি। তাদের একটিই নিষিদ্ধ বস্তু ভক্ষণ চোখে পড়ত — ফুচকা!
    হ্যাঁ, অলিগলিতে বিহারী ফুচকাওলাদের দেখা যেত। পাশের দোতলা বাড়ির বড় মেয়ে অপুদি ফুচকাওলাকে ডেকে নিজেদের পোর্টিকোর নিচে আসতেন এবং দোতলার ব্যালকনির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে গোগ্রাসে ডজন খানেক ফুচকা গিলে ফেলতেন। আর ছিল হলদে রঙের হাতঠেলার গায়ে ম্যাগনোলিয়া লেখা কাঠি-আইসক্রিম।

    আর একটু বলি, মেয়েদের জন্য আরেকটি ক্ষমার অযোগ্য মহাপাতক ছিল ছোট করে চুল কাটানো। এটাও সত্যি যে তখন বিউটি পার্লার খুঁজতে হলে নিউ মার্কেট যেতে হত। সেখান থেকে চুল ছেঁটে আসা-- অবশ্যই পয়সাওলা বাড়ির-- মেয়েদের যে চোখে দেখা হত সেটা না বলাই ভাল।
    হয়ত দূরদর্শনে খবর পড়তে আসা মেয়েদের মেকাপ আমাদের বাবা-মাদের বিউটি পার্লার এবং তার পেশাকে একটু ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে শেখাল।

    ততদিন
    স্বপ্নে থাকে রেস্তোরাঁ-কেবিন।

    “ঘুমের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে আমরা যখন যুবক হলাম”

    একটা দশক পেরিয়ে গেছে। আমরা ফুলপ্যান্ট পরছি। চার আনার সেলুনে গিয়ে গালে ব্লেড লাগাচ্ছি, কবে যে চোখে পরার মত শ্মশ্রুগুল্ম উদিত হবেন! পায়ে হাওয়াই চপ্পল। তেল না দেওয়া রুখু রুখু চুল, গালে ব্রণ, দৃষ্টিতে একটা উদভ্রান্ত ভাব।

    আমরা মেয়েদের দেখি, কোন মেয়ে আমাদের দেখে না; বা আমাদের মত উনপাঁজুরে লক্ষ্মীছাড়াদের দেখেও না দেখার ভান করে। আমরা বাড়িতে ঝগড়া করি। আমাদের ঘরে বাইরে কেউ বোঝে না যে!
    আমরা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অভিমানী ‘চতুর্থ সন্তান’। কে দিব্যি দিয়েছিল যে আমাদের এই পৃথিবীতে আনতেই হবে?

    সিগ্রেট ধরেছি। না, পকেট মানি পাওয়ার প্রশ্ন নেই। তাই রোজ ঘুম থেকে উঠে বাজারে যাই। বউনির মুখে দরদাম করে কিছু পয়সার সাশ্রয় হয়, সেটা নির্বিবাদে আমার পকেটে সেঁধোয়।
    র‍্যাশন ধরতে যাই। একান্নবর্তী পরিবারে অনেকখানি গমের বরাদ্দ। গম পেষার কলে বলি - দু’কিলো কম করে ফেরত দাও। তার আদ্দেক দাম আমার পকেটে। না, আমার বিবেক মহাশয় গাঢ় নিদ্রায়, পকেট মানি দেয় নাই ক্যান!

    এবার একটা সিগ্রেট ফুঁকি তিনজনে মিলে। শর্ত হল কেউ হাতে রেখে কথা বলে সিগ্রেট নষ্ট করতে পারবে না। বুকভরে দুটো টান মেরে হাঁফিয়ে উঠে ধোঁয়া গিলছ, তো সিগ্রেটটা পাশের ছেলেকে চালান কর। নইলে খিস্তি খাবে। আর গালাগাল জুটবে ঠোঁটের লালায় সিগ্রেটটা ভিজিয়ে ফেললে।

    আমাদের এই সময়ের অ্যাংস্ট্‌কে ভাষা দিলেন শিল্পী ও কবি পূর্ণেন্দু পত্রী। ওঁর কলমে জন্ম নিল এই অমর পংক্তি —“ফুলের গন্ধ নেবার জন্যে ,নারীর স্পর্শ পাবার জন্যে, ঘুমের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে আমরা যখন যুবক হলাম”।

    আজকের প্রজন্মের কথা বলতে পারব না, কিন্তু আমাদের প্রজন্ম নিঃসন্দেহে যুবক হয়েছিল — ঘুমের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে।
    আর ভোলা যাবে না তপন সিংহের ‘আপনজন’ সিনেমার জন্যে ওনার করা দেওয়াল লিপিঃ
    “স্কুল কলেজে খিল,
    রাস্তায় মিছিল,
    ক্র্যাকারের শব্দে কাঁপে রাজপথ কিনু গোয়ালার গলি।
    হীরের টুকরো ছেলেরা সব অশ্বমেধের বলি।
    বারুদ-গন্ধ বুকে নিয়ে আকাশে ওঠে জ্যোৎস্না,
    ময়লা হাতে ওকে কেউ ছোঁস না”।

    দুটো টিউশন করি, বাড়িতে না জানিয়ে। এবার মাঝেমধ্যে রেস্তোরাঁয় যাওয়া যেতেই পারে। কিন্তু কেবিন? তারজন্যে চাই নিদেন পক্ষে একজন সঙ্গিনী। পকেটে টাকা হল পাসপোর্ট, কিন্তু সঙ্গিনী হলেন কেবিনে ঢোকার ভিসা।

    নাঃ, প্রেসিডেন্সি কো-এড বটে, কিন্তু আমার কলেজ মৌলানা আজাদ একেবারে বয়েজ ওনলি। চলে যাই কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে। হ্যাঁ, এখানে মেয়েরা আড্ডায় অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। পঁচিশ নয়া পয়সায় কফি, চল্লিশ পয়সায় কোল্ড কফি। কিন্তু কেবিন যে দূর্‌ অস্ত্‌!
    দূর থেকে দেখি কবি ও সম্পাদক বেলাল চৌধুরিকে। বয়সে সামান্যই বড়।

    ওনার ছড়া পড়েছিলাম।
    “কোমর দোলালে ট্যুইস্ট জেনো,
    কাঁধ ঝাঁকালেই রাম্বা।
    অক্সন ব্রীজের মধ্যিখানেতে
    ষাঁঢ় ডেকে ওঠে হাম্বা”।

    কেউ দেখায় কোণার টেবিলে আড্ডায় মেতে থাকা তিন মাঝবয়েসীকে। উসকে দেয় -- যা, ওই ঢ্যাঙামত মুখচোরা চেহারার ভদ্রলোকের কাছে। উনি বিনয় মজুমদার। গিয়ে চার আনা দিবি, উনি তোকে একটা পাতলা কয়েক পাতার কবিতার বই দেবেন। তারপর গ্রাফ এঁকে বোঝাবেনঃ
    এখানে কোলকাতার কফি হাউসে বিনয় বসে আছে — একটা বিন্দু। আর ওইখানে লণ্ডনের কফিহাউসে চিকি বসে আছে। চিকি ওঁর প্রেমিকা। আর একটা বিন্দু। তার পর জেড অ্যাক্সিস এঁকে দুই বিন্দুকে মিলিয়ে একটা উর্ধগামী লাইন টেনে দেখাবেন কীভাবে বিনয় ও চিকি মিলিত হয়ে ঈশ্বরের কাছে যেতে পারে।

    আমি ঘাবড়ে গেলাম, তখনও বিনয়ের “ফিরে এসো চাকা” প্রকাশিত হয় নি যে!

    অন্য টেবিল থেকে ডেকে আনি কবি তুষার রায়কে। সেই ব্যান্ডমাস্টার কবিতা।

    কফির অর্ডার করি আমরা ক’জন। উনি শোনান আজগুবি সব গল্প — কাবলিওলার সঙ্গে ভাব করা এবং বড়বাজারের বিশেষ দোকান থেকে ফট্‌ সন্দেশ খেয়ে ফট্‌ হয়ে যাওয়া। আর শঙ্খের মত গ্রীবা এক নারীর – সে এমন ফর্সা যে পান খেলে গলার ভেতর দিয়ে পিক নামার দৃশ্য বাইরে থেকে দেখা যায়। তারপর সেই নারীর “ড্রি -রি-রি-ড্রাঁও স্ট্রোকে বন্যা জাগে চুলে”।
    ভাবি, সেই নারী কি কোনদিন কেবিনে ঢুকবে?

    পড়াশুনোয় মন বসে না। সেন্ট্রাল ক্যালকাটার কলেজ কেটে চলে আসি পাড়ার কলেজে, দীনবন্ধু এণ্ড্রুজ বা গড়িয়া কলেজ — কপালগুণে কো-এড। আড্ডা মারি নাকতলা স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে, ওরা দলবেঁধে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছে যে! আমিই দলছাড়া দামড়া।
    ওরা মনে করিয়ে দেয় যে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার আগে পেছনের বেঞ্চে বসে বন্ধুদের বলেছিলাম – আমাদের স্কুলটা যদি কো-এড হত, তাহলে কেউ ক্লাস বাংক করত না। ছুটির দিনেও স্কুলে আসতে চাইত।

    আমরা আড্ডা দিতাম গড়িয়া কলেজের গেটের উলটো দিকে একটা চাটাইঘেরা চায়ের দোকানে। তার সামনে জ্বলে কয়লার উনুন, নীলচে ধোঁয়া, পাখার বালাই নেই। যে মালিক সেই বয়, পাওয়া যেত চারমিনার এবং পানামা, ঘুগনি, লেড়ো বিস্কুট এবং চা।

    এমন সময় গড়িয়া বাসস্ট্যাণ্ডের গায়ে খুলে গেল একটি রেস্তোরাঁ — বিন্দু কেবিন। তাতে রয়েছে ফোমের গদিআঁটা চেয়ার এবং বেঞ্চি মতন। টেবিলে প্লাইয়ের সুদৃশ্য টপ। সিলিং ফ্যান। এবং তাতে নাকি রয়েছে রীতিমত চারটি কেবিন।
    আমাদের নিকোটিনের ধোঁয়ায় অন্ধকার - বুকে আশার আলো জ্বলে উঠল।

    এই আশাকে পুর্ণেন্দু পত্রী ধরলেন দেশ পত্রিকার পাতায় এক দীর্ঘ কবিতায় যা কয়েক দশক পরের জয় গোস্বামীর “বেণীমাধব বেণীমাধব” (মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়) কবিতার মতই অল্পবয়েসীদের মুখে মুখে ফিরতে লাগল।

    “আমি ছাড়া অনেককে তো অনেক দিলে।
    এর আকাশে ওর আকাশে ওষ্ঠপুটের অনেক পাখি উড়িয়ে দিলে।
    পায়রাকে ধান খুঁটতে দিলে খোয়াই জুড়ে;
    ঠোঁটের উপর রোদের রেখা কালো চোখের নীল রুমালে মুছিয়ে দিলে।
    ------------ ---------------
    বুকের দুটো পর্দাঢাকা জানলা খুলে
    অনেককেই তো হাত ডোবানো বৃষ্টি দিলে”।

    আমরা মার্গসংগীতের সমঝদার শ্রোতার মত অমন গমক তানের শেষে ওয়াহ্‌ ওয়াহ্‌ করে উঠলাম।
    তারপর নিজেদের মত করে ওই রূপকের ব্যখ্যা করলাম। পর্দাঢাকা জানলা মানে রেস্তোরাঁর ভেতরে পর্দা ঢাকা কেবিন!

    মাসের প্রথমে টিউশনির পয়সা পকেটে আসায় দুইবন্ধু দুরু দুরু বুকে ঢুকে পড়লাম বিন্দু কেবিনে — উদ্দেশ্য মহৎ, রেকি করা।
    হ্যাঁ, সত্যি সত্যি চারটে কেবিন আছে, পর্দা টানা, আবছা আলো। মেনুকার্ড দেখে পিলে চমকে গেল — বড্ড দাম! কিন্তু এখন পেছনো যায় না। হাজার হোক আমাদের কলেজের পাড়ার দোকান।

    দুটো কফি অর্ডার করে কেবিনে ঢুকতে গেলাম। যমদূতের মত এক পেয়াদা এসে সামনে দাঁড়াল। বলল — এগুলো ফ্যামিলি কেবিন। আপনারা বাইরের অতগুলো খালি চেয়ার টেবিলের যে কোন একটায় বসতে পারেন।
    কফির স্বাদ তেতো হয়ে গেল।

    ফিরে এসে আমরা আমাদের নিত্যকর্মের কাঠের বেঞ্চের ঠেকের নামকরণ করলাম — পোঁদে গরম ঠেক, আর বিন্দু কেবিন হল পোঁদে আরাম ঠেক।
    বিন্দু কেবিন আমাদের ভিসার দরখাস্ত নাকচ করে দিল।
    আমরা বুঝতে পারি নি যে গড়িয়া কলেজের অধিকাংশ মেয়েই আসে কাছাকাছি পাড়া থেকে। ওদের কাছে কলেজের কাছের রেস্তোরাঁয় ছেলেদের সঙ্গে যাওয়াটাই দুঃসাহসী নিষিদ্ধ অ্যাডভেঞ্চার। মিসফায়ার হলে বাড়িতে আটকে রেখে বলবে – তোর আর কলেজে গিয়ে কাজ নেই। ঢের হয়েছে, এবার প্রাইভেটে পরীক্ষা দে।

    কিন্তু উদবাস্তু এলাকার ছেলেমেয়েদের কাছে কলেজ তো মুক্তির আস্বাদ। আকাশে ডানা মেলে দেওয়া। এটা মেয়েদের কাছে আরও বড় সত্যি।
    উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট হয় নি তো কী হয়েছে? অনার্স না পেলেও চলবে, পাসকোর্স তো আছে।
    তাই কলেজ থেকে নাম কাটানোর রিস্ক নেওয়া যায় না।

    বুঝে গেলাম যে ওই ‘পোঁদে গরম ঠেক’ই আমাদের ভবিতব্য। বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন আমাদের কপালে নেই।

    “যেথায় সুখে তরুণ যুগল পাগল হয়ে বেড়ায়”
    কিন্তু বঙ্কিম ঠিক বুঝেছিলেন- ‘এই যৌবন জলতরঙ্গ রোধিবে কে’!

    আমাদের সময়ের যৌবনের জলোচ্ছাস সমাজ ও গার্জেনদের বেঁধে দেওয়া বাঁধের বন্ধ লকগেট দেখে নীচু জমি খুঁজে নেয়। কেবিন না হোক, পকেটে রেস্ত না থাকুক, আছে নাকতলা স্কুলের মাঠ যার তিনদিকে স্কুলবিল্ডিং এবং ‘সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, রাত্রে পড়ে না ঝাঁট’।

    কৃষ্ণপক্ষ। কিন্তু আকাশে সাতটি তারার তিমির। অন্ধকারে ডজন খানেক জোড়া গায়ে গায়ে লেগে ঘাসের উপর। তাদের চাপা ফিসফিসানি, অনুযোগ, অভিমান, চাপা কান্না – সবই কান পাতলে শোনা যায়।

    ওরা নিজেদের মধ্যে এক ভার্চুয়াল কেবিন বানিয়ে নেয়। তাতে পর্দা টানা রয়েছে। কেউ এসে অর্ডার নেবার অজুহাতে বিরক্ত করবে না, উঁকি মারবে না। ওরা “আড়াল বুঝে আঁধার খুঁজে সবার আঁখি এড়ায়”।

    ষাট-সত্তরের ভিক্টোরিয়ান কোলকাতার বাঙালি মধ্যবিত্ত একান্নবর্তী পরিবারকে সম্মান করে, কিন্তু দু’জনার একান্ত প্রাইভেসির তোয়াক্কা করে না। জনগণ মরিয়া হয়ে ছোটে ঢাকুরিয়া লেকের কাছে লিলি পুলে, চিড়িয়াখানার পাখিরালয়ের আশেপাশে, বসে পড়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আঙিনায়।
    এখানে পাড়ার কারও সঙ্গে দেখা হবে না।
    উত্তর কোলকাতার যৌবনের জন্য আছে দক্ষিণেশ্বরে পঞ্চমুন্ডির আসনের কাছে গঙ্গার ধার। তবে আমাদের বিন্দু কেবিনের মতন ওদিকেও দর্পণা সিনেমার কাছে এবং বিডন স্ট্রিটের আশেপাশে ছিল কিছু রেস্তোরাঁ - যাতে ছিল পর্দাটানা কিছু ‘ফ্যামিলি কেবিন’।

    তবে ভিক্টোরিয়া হল উত্তর-দক্ষিণ সবার জন্য গসাগু — গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক। সুর্য ঢলতে না ঢলতেই সবাই খোঁজে সেই পর্দাঢাকা রহস্যময় কেবিন, তাকে গড়ে তোলে ভার্চুয়ালি।
    কিন্তু এসব জায়গায়ও ফ্যামিলি কেবিনের সেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্ত নেই। ভিক্টোরিয়ার সিকিউরিটি গার্ড সুর্য ডুবতেই বাগানে জোড়ায় জোড়ায় বসে থাকা ছেলেমেয়েদের দূর দূর করে খেদিয়ে দেয় পাঁচিলের ওপাশে। নিরুপায় যৌবন তার অসমাপ্ত পূর্বরাগের পরবর্তী অংক শেষ করতে বাইরে গিয়ে পাঁচিলের গায়ে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ে।
    তারপর শুরু হয় শেয়াল ও হায়নার শিকার উৎসব।
    মর‍্যাল পুলিস সেজে, কখনও বা খাকি গায়ে আসে কিছু শকুন ও তোলাবাজ।

    মন্দিরা বিন্দু কেবিনে যেতে রাজি হল না। বলল — ফালতু টাকা নষ্ট। আর কেউ না কেউ ঠিক দেখে ফেলবে। তোমার বন্ধুরাই আওয়াজ দেবে।
    কথাটা ঠিক। আমি ওদের চিনি, ঠেকের মধ্যে পালটা আওয়াজ দিয়ে বলি-বঞ্চিত বাঞ্চোতেরা!

    শেষে ঢাকুরিয়া লেকে দু’দিন ঘুরে বেড়ানোর পর ওকে একটু মন্দিরা থেকে মান্তু করার চেষ্টায় ছিলাম। কিন্তু জলের ধারে গাছের ছায়ায় দুই জোড়া জায়গার অভাবে একে অন্যের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে হামলে চুমো খাচ্ছে দেখে ওর পিত্তি চটে গেল। মানুষ কী করে জন্তু-জানোয়ারের পর্যায়ে নেমে আসতে পারে!
    আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি। সায় দিয়ে বলি — যা বলেছ, অভাবে স্বভাব নষ্ট।

    কিন্তু আমাদের বন্ধুদের মধ্যে একজন গিয়েছিল বিন্দু কেবিনে, অনেক পরে। সঙ্গে ছিল ভিসা, কলেজের কেউ নয়, ওর পাশের বাড়ির মেয়েটি। তখন ও পাশ করে সদ্য একটি সরকারি চাকরি পেয়েছে।

    অকপটে বলল যে শীতের দুপুরেও ওদের দুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল, অর্ডার দিতে গিয়ে গলার স্বর খাদে নেমে গেছল। এসব দেখে অভ্যস্ত বেয়ারার দলের কেউ নির্বিকার মুখে সঙ্গে করে তিন নম্বর কেবিনে বসিয়ে দিল।খুপরি ঘরে একটা কাঠের টেবিলে সানমাইকা টপ, আর দুটো চেয়ার।

    বেয়ারা পর্দা নামিয়ে চলে যাচ্ছিল, চামেলি আঁতকে উঠে বলল — না না, পর্দা নামাতে হবে না। বেয়ারা ছেলেটি না শোনার ভান করে ভাল করে পর্দা টেনে চলে গেল। বন্ধ প্রায় অন্ধকার কেবিনে বসে ওদের কথা বন্ধ হয়ে গেল। ওরা ঘামতে লাগল।
    একটু পরে বিজন আস্তে করে টেবিলের উপরে বিছিয়ে রাখা চামেলির হাত নিজের হাতে টেনে নিল। চামেলি বাধা দিল না। কিন্তু কেমন যেন শক্ত হয়ে গেল।বিজন সাহসী হয়ে ওর হাত টেনে নিয়ে আলতো করে ঠোঁটে ঠেকাল।

    তক্ষুণি পর্দা সরিয়ে আগের বেয়ারাটি দু’প্লেট মোগলাই পরোটা নিয়ে ভেতরে ঢুকল। বিজন এখন আরও সাহসী হয়ে স্পষ্ট গলায় বলল – কফি একটু পরে দিয়ে যেও।
    তারপর কাঁটা চামচ সরিয়ে হাত দিয়ে মোগলাই খাওয়া শুরু করার আগে ও শিশিরে ভেজা নম্র গলায় বলল — চামেলি, আমায় বিয়ে করবে?

    এতক্ষণে সহজ হয়ে আসা চামেলি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল — আমার ভাল নাম পারমিতা। ঠিক করে প্রপোজ কর, হাঁটু গেড়ে!

    একবছর পরে ওরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে গেল। তার আগে ওরা গেছে কাফে ডি মনিকো, কাফে ডি অনিল এবং আরও কোন কোন টম কাকার কুটিরে।
    সেসব জায়গায় কেবিনের বাইরে একটা লাল বাল্ব লাগানো থাকে। সেটা জ্বলতে থাকলে সবাই বুঝবে ভেতরে কাস্টমার আছে। টেবিলের পাশের দেয়ালে রয়েছে কলিং বেলের বোতাম। সেই আহ্বান শুনলে তবেই কোন বেয়ারা পর্দা সরিয়ে ভেতরে উঁকি দেবে, নচেৎ নয়।

    যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইব কত আর।
    আজ সেই আড়ালের দরকার নেই। অপেক্ষারত বন্ধুদের রাস্তায় না দাঁড় করিয়ে ঘরে এনে বসানোই এখন দস্তুর।
    এখন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নিজেদের বন্ধুদের ঘরে এনে সম্মানের সঙ্গে বসায়। বাবা-মা খানিকক্ষণ চা-জলখাবার দিয়ে কুশল বিনিময়ের পর ভেতরের ঘরে চলে যান অথবা ওরাই বন্ধুকে নিয়ে নিজের পড়ার ঘরে ঢুকে দরজায় খিল এঁটে দেয়।

    তিন কুড়ি বছর পেরিয়ে আজ কোলকাতা অনেক সহনশীল। কফিহাউসের ধারে, পথে ঘাটে মেয়েদের হাতে সিগ্রেট বা অলিপাবে ছেলেমেয়েদের একসঙ্গে বিয়ার সহযোগে আড্ডা মারা দেখে কোন পদিপিসী গেল-গেল রবে চিল-চিৎকার জুড়ে দেয় না।

    শরীর নিয়ে ছুঁৎমার্গ অনেকখানিই উপে গেছে। ফলে বন্ধ কেবিনের একটুকু ছোঁয়া লাগে’র আকুতি আজ অপ্রাসঙ্গিক। আজ কোন শশী কোন কুসুমকে বলবে না - ‘শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম’?
    দুজনেই জানে -- শরীরকে বাদ দিয়ে মনের কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু মোবাইলের যুগে যেমন চিঠি লেখা বন্ধ হয়ে গেছে, টেলিগ্রাম, ইনল্যাণ্ড লেটার হারিয়ে গেছে, তেমনই ইন্টারনেটের মায়াজালে অনেক কিছুই এখন সহজপ্রাপ্য।

    মার্ক্স বলেছিলেন বটে যে টেকনোলজির প্রগতি মানুষের জীবন বদলে দেবে। কিন্তু উনি কি ভাবতে পেরেছিলেন যে মজুরের বস্তিতেও দেখা যাবে কেবল টিভির তার এবং কাজের মাসিদের হাতে থাকবে মোবাইল। ওরা কামাই করলে সেটা টেক্সট করবে বিরক্ত বৌদিদের এবং মাসকাবারে মাইনে পাবে নেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে?

    আজ চন্দ্রায়নের ফলে চাঁদের ভূগোল, তার খানাখন্দ, এপিঠ ওপিঠ, সবই আমাদের কাছে পরিচিত। তেমনি উন্নত টেকনোলজির যুগে মানবশরীরের প্রাকৃতিক ভূগোলের মানচিত্রও আর রহস্যাবৃত অজানা নয়। টেকনোলজি নিয়ে আসে সহজতর বিকল্প।

    তাই কেবিনের দিন ফুরিয়েছে।

    সময় সত্যিই বদলে গেছে। একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে এখন সর্বত্র নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ধ্বজা উড়ছে। এখনকার ছেলেরা রাস্তায় বড়দের দেখলে সিগ্রেট লুকোয় না। মলে ছেলেমেয়েরা অনায়াসে গা ঘেঁষে বা গলায় হাত রেখে স্বচ্ছন্দে বসে থাকে।
    যে বুড়োদের অস্বস্তি লাগে তারা কেটে পড়ুক। নাঃ , তারও দরকার নেই। দে ডোন্ট এগজিটস ফর দ্য ইয়ং।

    ফলে কেবিনের দিন গেছে, এখন সবমাসই মধুমাস।

    তবে নাকতলা স্কুলের খেলার মাঠ দেখছি উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, তাতে দুটো গেট লাগানো হয়েছে, লোহার দরজা, তালা ঝুলছে। আমার মত বাইরের লোক যখন তখন ঢুকে যাবে — সেটি হবার নয়। কাজেই সন্ধ্যেবেলা ওখানে আর চাঁদের হাট বসে না।

    বিন্দু কেবিন উঠে গেছে। কাফে ডি মনাকো গোছের যত কেবিন রয়েছে তাতে আর কেবিন নেই, মানে সেই পর্দাঢাকা ফ্যামিলি কেবিন। তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আজ লিঙ্গসাম্য এবং স্বাধীনতার জোয়ারে পদীপিসিদের তর্জনী তোলা অনেক কমেছে।

    উঠে গেছে গড়িয়াহাটের নির্মলা, কলেজ স্ট্রিটের বসন্ত কেবিন হারিয়েছে তার গৌরব। দিলখুসা কেবিন উঠব উঠব করেও ওঠেনি। অনাদি কেবিন রাত ন’টা পর্য্যন্ত জোগান দিচ্ছে মোগলাই পরোটা এবং আজকের রুচি অনুযায়ী কিছু অন্য পদ। নিজামে এখন আর বীফ পাওয়া যায় না। আমিনিয়া, বিজলি গ্রীল, সাঙ্গুভ্যালি, চাঙওয়া ইত্যাদি শুধু খাবার জোগায়।

    কিন্তু যেসব রেস্তোরাঁয় এখনও কেবিন রয়েছে তাতে কেউ ভেতরে গিয়ে বসে না। ওদের অবস্থা যেন পুরনো সিনেমাহলের ব্যালকনির গদিছেঁড়া ধূলোভরা আরশোলা-ওড়া সীটগুলোর মত। এখন ছেলেমেয়েরা খোলাখুলি খোলা জায়গায় বসে, সে টেরেসে হোক কি হলে।
    ব্যাপারটা কি জানতে গিয়ে নতুন প্রজন্মের এক মেয়ের থেকে উত্তর পেলাম — কারণ দুটো।

    এক, আজকে সেই ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’র প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

    দুই, উন্নত প্রযুক্তির বিপদও আছে। কেবিনে যদি অদৃশ্য ক্যামেরা লাগানো থাকে? বা কেউ যদি মোবাইলে ফটো তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় অথবা ব্ল্যাকমেল করে? দুই দশক আগে বলিউডের দুই উঠতি নায়ক-নায়িকার রেস্তোরাঁর প্রেম নিয়ে অন্তরঙ্গ ভিডিওর স্ক্যাণ্ডাল কেউ ভোলে নি।

    তাই ওরা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ অনেক বেশি নিরাপদ অলিপাবের মত জায়গায় – যেখানে খানাপিনা অনেক সহজ।
    আজ মেয়েদের সিগ্রেট কেনা বা ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে কোন রেস্তোরাঁয় গিয়ে খোলাখুলি আড্ডামারা কোন ব্যাপার নয়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাচের ফ্যাশন – গরবা, বলিউড, হিপহপ, সাম্বা ইত্যাদি।

    আজকাল অনেক মধ্যবিত্ত বাবামায়ের মাসিক বাজেটে ধরা থাকে ছেলেমেয়েদের জন্য হাতখরচের বরাদ্দ। এহ বাহ্য। ওরা নিজেদের হাতখরচা নিজেরাই জুটিয়ে নেয়।
    সাবেকি টিউশনির কথা ছেড়ে দিই -- আজকের মেয়েরা বিউটি পার্লার চালায়, জিম চালায়। স্পোর্টস টিচার, গানের এবং নাচের টিচার হয়। টিউটোরিয়ালে কাউন্সিলর হয়, রেস্তোরাঁয় অফিস ম্যানেজার হয়। পেট্রল পাম্পে কাজ করে। কেউ কেউ হোটেলে বাউন্সার হয়।
    বেশির ভাগ মেয়ে পড়াশুনো চালিয়ে যায় ভাল ক্যারিয়ার গড়তে, বিয়ের জন্যে নয়। অনেকে অন্য শহরে কাজ খুঁজতে বা কাজ করতে যায় -- একা । সঙ্গে কোন সতর্ক খুঁতখুঁতে বাবা-কাকা- জ্যেঠু থাকে না।

    আজকে স্কুল কলেজ কো-এড হওয়াটাই নিও নর্মাল। আমার নাকতলা স্কুলে এখন মেয়ে টিচার! মৌলানা আজাদ কলেজ এখন কো-এড্‌ -- ভাবা যায়!
    আগে এমন হলে আমি কি আর নিজের কলেজ ছেড়ে গড়িয়া কলেজে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করতাম। বিধাতা বড্ড একচোখো!

    কিন্তু পকেটে রেস্তোরাঁয় ঢোকার রেস্ত না থাকলে! সেই লিলিপুল আর ভিক্টোরিয়া! শেয়াল ও হায়নার ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়া! তবে কি ফ্যামিলি কেবিনের নিভৃত অন্তরঙ্গতার প্রয়োজন সত্যিই ফুরিয়েছে? তাহলে আর সে নিয়ে হা-হুতাশ করে কী হবে!

    “সময় তোমাকে সব দান করে গেছে বলে
    সুদর্শনা, তুমি আজ মৃত”।

    কিন্তু উত্তরটা সেদিন পেয়ে গেলাম পাটুলির ঝিলের পাশে বেড়াতে গিয়ে। ভর বিকেলে সুজ্জি ডোবার আগে বসে গেছে চাঁদের হাট। কারও ভ্রূক্ষেপ নেই আমাদের মত প্রবীণ পথচারীদের নিয়ে। কেউ কেউ ছাতাখুলে রোদ্দূর আড়াল করে অন্তরঙ্গ হয়েছে। এক দুঃসাহসী চিত্রাঙ্গদা তার ওড়না খুলে ঢেকে নিয়েছে নিজেদের মাথামুখ। এইভাবে গড়ে তুলেছে নিজেদের ভার্চুয়াল ফ্যামিলি কেবিন।

    না; নতুন শতাব্দীর ছেলেমেয়েরা অনেক সাহসী। ওরা অনায়াসে বলতে পারে – ইয়ে মেরী লাইফ হ্যায়! তোমরা নাক গলাবার কে হে?

    বুঝতে পারি, টেকনোলজি পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ডের একতরফা চিঠির জায়গায় এনেছে সংক্ষিপ্ত কিন্তু দ্রুত কথাচালাচালির টেক্সট মেসেজ। একইভাবে বদলে যাওয়া সময়ে যৌবন খুঁজে নিয়েছে যুগের উপযোগী ফ্যামিলি কেবিন, নতুন রূপে

    কেটে পড়ার ফাঁকে গুনগুন করি — হে বাসরঘর, বিশ্বে প্রেম মৃত্যুহীন, তুমিও অমর।

    ===============
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১
  • ধারাবাহিক | ২৮ জুন ২০২৪ | ৪৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ জুন ২০২৪ ১৭:৫৯533828
  • রনজন 
     
    এতো সহজে আমাদের এতো বছরের আশা আনন্দ সুখ দু:খকে ধরে ফেললে! পদ্ম পাতার জলে আমার জীবনটার ঝলক দেখলাম। আরো অনেক কথা বলবার আছে। এটা প্রথম কিস্তি॥ 
     
    সোনার দোয়াত কলম বা কী বোর্ড হোক 
  • Suhas Basu | ২৮ জুন ২০২৪ ১৮:২৯533830
  • বেশ ভালো লাগলো। আপনার বাড়ি কি ঐ দিকে ছিল — নাকতলা গড়িয়া বাঁশদ্রোনি ?
    যদি এমন হয় তাহলে ঐ অন্চল সমূহ নিয়ে আরো লিখুন না — বিজয়গড় নেতাজি নগর পল্লীশ্রী লায়েলকা নাকতলা ও আপনার গড়িয়া।
    ঐ সময় ( অনুমান করি ৬০ এর শেষ থেকে সত্তর দশক) কি ভাবে কলকাতার মূল অংশের সংগে যোগাযোগ রাখতেন , রফি আমেদ কিদোয়াই রোডে কি ভাবে যেতেন ( মৌলানা আজাদ একটি এমনই কলেজ সামনে থামা বাস ট্রাম কই )। এগুলো নিয়ে যদি লেখেন — রোজকার যাতায়াত , দুই শহরের মানস ও ব্যবহারিক পার্থক্য ইত্যাদি,তাহলে কিন্ত একটি জ্যান্ত ইতিহাস তৈরী হয়।
    লিখুন । 
    অপেক্ষায় রইলাম।
    সুহাস বসু
  • রঞ্জন | 106.202.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ১৯:১০533832
  • আপনাদের দুজনের পিঠ চাপড়ানিতে সাহস পেলাম। 
    আপনাদের আগ্রহের সম্মান রাখতে চেষ্টা করব। 
    প্রতি সপ্তাহে বা দশদিনে একটা করে কিস্তি।
  • kk | 172.56.***.*** | ২৮ জুন ২০২৪ ২০:১২533834
  • উপভোগ করছি। লেখা চলুক।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ জুন ২০২৪ ২০:৫৯533836
  • সাপ্তাহিক কিস্তি ইজ এ মাস্ট । অন্যথায় খি
  • সমরেশ মুখার্জী | ০৩ জুলাই ২০২৪ ১৫:০৭534113
  • বেশ লাগলো। জমাটি এবং অকপট।

    কিছু দৃষ্টি কাড়া বাক‍্যবন্ধ বা সিচুয়েশন:

    রেস্তোরায় ঢুকতে রেস্ত লাগে। 

    বিন্দু কেবিনে ঢুকতে গিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেয় - কপালে।

    "আমাদের সময়ের যৌবনের জলোচ্ছাস সমাজ ও গার্জেনদের বেঁধে দেওয়া বাঁধের বন্ধ লকগেট দেখে নীচু জমি খুঁজে নেয়।"

    "কাফে ডি মনিকো গোছের রেস্তোরাঁর কেবিনের বাইরে একটা লাল বাল্ব লাগানো থাকে। সেটা জ্বলতে থাকলে ...." - অপারেশন অন - অত‌এব DND. বেড়ে ব‍্যবস্থা।

    "পাটুলির ঝিলের পাশে ... কেউ কেউ ছাতাখুলে রোদ্দূর আড়াল করে অন্তরঙ্গ হয়েছে।" এটা পড়ে মনে পড়লো - ১০/১৬এ এক হপার একাকী এর্ণাকুলাম ভ্রমণের একটি দৃশ্য। কেরালা হাইকোর্ট দেখে মেরিন ড্রাইভ ধরে হাঁটছি। বাসনা বোটে করে যাবো ফোর্ট কোচি। চোখ পড়লো পাটূলীর মতোই - ভরদুপুরে খোলা চত্বরে নামিয়ে ধরা ছত্রতলের নির্মিত আড়ালের আঁধারে ঘনিষ্ঠ যুগল… অতঃপর যে কখনো সুযোগ মতো উম.ম.ম.ম.ম.... তা তো সহজেই অনুমেয়। heart 
     
    তো এমন অনমোল মুহূর্ত যদি ধরতে না পারলাম তাহলে আর দুম্বো DSLR গলায় ঝুলিয়ে যাওয়া কেন।


     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন