(আমার বাবা ও পিসিমাদের তিনি ছিলেন অতি শ্রদ্ধার ও ভালোবাসার 'রাজু-দিদি'। তাই এই লেখার অনেকটাই শ্রদ্ধাচারণ।)
বাংলা কবিতায় রাজলক্ষ্মী দেবী বিস্মৃতপ্রায় হয়েও দাঁড়িয়ে আছেন নিজের জোরে। তিনিই প্রথম নারী হিসেবে বাংলা কবিতায় আধুনিক ভাষা ও আঙ্গিক আত্মস্থ করেন। পঞ্চাশের দু'জন শক্তিশালী এবং স্বতন্ত্র কবি কবিতা সিংহ, নবনীতা দেব সেন, এমনকি অকালপ্রয়াত মঞ্জুলিকা দাশের পূর্বসূরি তিনি। আজীবন প্রবাসী, তবু বাংলা কবিতার মূল ধারার সঙ্গে নিবিড় সংযোগ বজায় রেখেছেন রাজলক্ষ্মী দেবী। দর্শনের অধ্যাপিকা, গল্পকার, ঔপন্যাসিক – এই পরিচয়ের বাইরে প্রধানত তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চাশের কবি – চল্লিশের মধ্যভাগ থেকে পত্রপত্রিকায় কবি হিসেবে যাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘সুস্পষ্ট কবিতা-ভাবনা যে আমার মধ্যে নেই, সে বিষয়ে আমি ওয়াকিবহাল’ একথা বললেও, পাঠক জানেন কবি হিসেবে তাঁর শক্তি এক মনোগত নিজস্ব ভূমি।
মৈমনসিংহের বিদ্যাময়ী স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সারা বাঙলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হন রাজলক্ষ্মী ভট্টাচার্য । কলকাতার বেলতলায় এসে ক্লাসে সহপাঠিনী হিসেবে পেলেন মহাশ্বেতা দেবীকে। দু'জনে মিলে প্রকাশ করলেন হাতে লেখা পত্রিকা ‘ছন্দ-ছাড়া’। লেখার অভাবে দুই বন্ধু নামে বেনামে অজস্র লেখায় ভরিয়ে তুললেন পত্রিকার পাতা। তারপর কবি হিসেবে বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’, সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘পূর্বাশা’ এবং ‘দেশ’ পত্রিকায় পাতায় তিনি মন জয় করে নিলেন পাঠকের। বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় মুদ্রিত হল তাঁর প্রথম কবিতা ‘ওথেলো।’ সেইসব দিনগুলির স্মৃতিচারণায় তিনি লিখেছেন –
“যখন বি.এ-র প্রথম বছর, তখনকার যুগের ভাষায় থার্ড ইয়ার, অর্থাৎ কলেজের থার্ড ইয়ার, তখন ‘ওথেলো’ কবিতাটা লিখে ফেলি। সাহস করে’কবিতা’ পত্রিকাতে পাঠাই। বুদ্ধদেব বসুর স্বহস্তে লেখা চিঠিতে আশ্বাস পাই – কবিতাটি তাঁর ‘ভালো লেগেছে’। উঃ, সে যে কী এক আনন্দ-গৌরবের মুহূর্ত। একই সাহসের বন্যায় এবার ‘দেশ’ পত্রিকাতে লেখা পাঠাতে শুরু করি। প্রথম কবিতা, বোধহয় ‘মহাসাধক’ – দ্বিতীয়টি ‘সাঁকো পার’। দু'টিরই কেন্দ্রবিন্দু মহাত্মা গান্ধী – যিনি তখন নোয়াখালি পরিব্রজ্যা করছেন।"
ইতিমধ্যে, বি.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন এবং তারপরে প্রাইভেটে এম.এ পরীক্ষা দিয়ে দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন পুণেতে অধ্যাপনা করেছেন। শুনেছি দারুণ ছানার ডালনা করতেন... কমলালেবুর পায়েস, চাপড় ঘণ্ট। আর ভারি মিঠে হাত ছিল বেহালায়। বিদুষী শিশিরকণা ধরচৌধুরির কাছে তালিম নিয়েছিলেন কিছুদিন। সেই বেহালা এসেছে তাঁর কবিতায় ষাদে -বিষাদে।
"কাঁকুলিয়া রোডের বেহালাদারকে
–
ও বেহালাদার,
তুমি এ-সব কঠিন তান
ছড়ে-ছড়ে টেনো না এখনই।
হিমাদ্রি-পর্বত যার ত্রিকোণ গাঁথুনি---
সেই নিরাকৃতি ধ্বনি
ব্যক্ত করবে আজই ?
কিছু ঊহ্য রাখো,---
কিছু রাখো অসম্পূর্ণ, দূর।
ও বেহালাদার---
হালকা জীবনের উৎসবেই
ঢালবে তুমি এই সব সুর!
ও বেহালাদার,
আমি দেখেছি সমস্ত গেলে
ঘাসের সবুজ রং থাকে,
শ্লেট-মোলায়েম হাওয়া, ছপছপে অন্ধকার
ছোঁয় এসে নিভৃত আত্মাকে।
মীনাক্ষী-মন্দির যার চৌকোণ গাঁথুনি,---
সেই নিরাকৃতি ধ্বনি
চিরকাল থাকে।
তুমি ছড়ে-ছড়ে সব তান
টেনো না এখনই।
ও বেহালাদার,
আছে মৃত্যু আছে, দুঃখ আছে আছে অন্ধকার।
কার হাত ধরে আমি সমস্ত বাধা এড়িয়ে
সে-প্রশস্ত তীর্থ হবো পার ?
কার হাত ধরে আমি সহস্রেক সিঁড়ি ভেঙে
সহসা দেখবো সূর্যপীঠ
ঝিলিঝিলি মিনারের জানালায় ?---
ঊহ্য রাখো, তুলে রাখো তোমার সংগীত।
তাদের বাজাতে দাও
তিনটে শব্দের মিলে
তারাফুল ঝরায় না যারা
শব্দের পায়ের নিচে কান পেতে
কোনোদিন শোনেনি নিস্তব্ধতার ধারা।
কৃত্রিম ফুলঝুরি দিয়ে তাদের সাজাতে দাও
জীবনের অলীক রাত্রিকে।
ও বেহালাদার --
তুমি ছড়ে টান দিয়ো,
যদি ফুল দেবে মৃত্যুর যাত্রীকে। "
★
সূচনাপর্বের কবিতার পটভূমিতে রাজনৈতিক ভাবনা থাকলেও পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে চালিত হয়েছে তাঁর কবিতা। গঠনে এবং ভাবে তাঁর কবিতায় বুদ্ধদেব বসুর প্রত্যক্ষ প্রভাব আছে। তবু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই – প্রথম কাব্যগ্রন্থ থেকেই তিনি অত্যন্ত পরিণত। সমাজ ও সংসারের কথায় তাঁর কবিতায় ছায়া ফেলে এক অন্তর্ভেদী মায়া। সব কিছুই প্রথা মাফিক অথচ বলিষ্ঠ উচ্চারণে নিজস্ব।
পড়েই দেখুন।
"কী যে ভালোবাসি আমি এই শীত। থেমে গেলে কথা,
সাড়ে সাতটায় নামে মধ্যরাত্রি। সামনে পাহাড়ে
কুয়াশার টুপি, – ভোরে রোদ্দুরের উচ্চ আমন্ত্রণ।
মরশুমি ফুলে ফুলে হাসিখুশি আমার উঠোন।”
(শীতঋতু)
একথা নিশ্চিত, রাজলক্ষ্মী দেবী মূলত ভালোবাসারই কবি। তাঁর কবিতার প্রধান ভরকেন্দ্র অন্তর্নিহিত এক গোপন ভালোবাসায়। তার যন্ত্রণা আছে কিন্তু আশাতীত কোনো নিরাপত্তা নেই। কখনও সে অযাচিত কড়া নাড়ে জীবনের দুয়ারে। তবু বরণের দুঃসাহস নেই। ১৯৬২ সালে ‘অমৃত’ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ‘যে রূপকথায় রাজপুত্র নেই’ গল্পটির কথা বলি। এই গল্প ভাঙাচোরা এক রাজপ্রাসাদের গল্প। মৃত মা আর নিরুদ্দেশ বাবার ছন্নছাড়া মেয়ে হেমার গল্প। তাদের ভাঙাচোরা বাড়িতে একদিন মুদি দোকান খোলেন একজন বিপত্নীক মাড়োয়ারি দোকানদার। রাক্ষসের মতো কুৎসিত এই লোকটিকে ভয় পেত হেমা। হয়তো হাবাগোবা, মাতৃহীন, সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন মধ্যবয়স্ককে ভালবেসেছিল হেমা। একদিন তার বাবা হঠাৎ ফিরে আসে। সে এখন বিত্তবান। বাড়ি বিক্রি করে হেমাকে নিয়ে যেতে চায় কলকাতায়। একদিন রাজা এসে বাড়ি বিক্রি করে রাজপুরীর সবাইকে নিয়ে চলে গেল। হেমার গোপন চোখের জলের মূল্য রইল না। একজন মধ্যবয়স্ক বিপত্নীক মোটা অসহায় মানুষের সাধ্য কী, রাজপুত্রের দাবি নিয়ে দাঁড়ানোর! তবু রইল। ভাঙাচোরা রাজপ্রাসাদের গোপন কড়ি-বরগায়। রাজলক্ষ্মী তাঁর কবিতায় বলেছেন’ ভালোবাসা এক নির্জনতা মাত্র।’ হেমা কিংবা মধ্যবয়স্ক মাড়োয়ারি জীবন দিয়ে তা বুঝেছে। যতক্ষণ সানাই গোলাপ ততক্ষণ ভালোবাসা। ‘কিন্তু যেই ঝরে যাবে ফুল, / চলে যাবে ভালোবাসা বিদেশী বাউল।’
এর বিপরীতে রাজলক্ষ্মীর কবিতায় আছে নারী হৃদয়ে ভালোবাসার সার্থকতা এবং পূর্ণ প্রকাশ।
★
রাজলক্ষ্মী দেবীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘হেমন্তের দিন’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ ‘ভাব ভাব কদমের ফুল' (১৯৬৬) প্রকাশিত হয় ‘কৃত্তিবাস’ প্রকাশনী থেকে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কবিতার বই ‘এ আলোকে এ আঁধারে’ (১৯৭০), ‘রক্ত-অলক্তক' (১৯৭৬), ‘আয়না, নিভৃত অংশীদার’ ( ১৯৮৮), ‘জল ফেলে জল'(১৯৯৫), ‘ঘরকোণ থেকে বলছি'(১৯৯৯), ‘কালসমুদ্রে ভাসছি বোতল’ (২০০০), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (২০০০)। কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন ‘লাজুকলতা’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস। কয়েকটি অসামান্য গল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘দেশ’, ‘অমৃত’ ,’হাওয়া৪৯’, ‘প্রবাসে নিজভাষে’ প্রভৃতি পত্রিকায়। অনুবাদ করেছেন দক্ষ হাতে।
মনেপ্রাণে রাজলক্ষ্মী দেবী বিশ্বাস করেছেন কবিতা ‘সৃজনী লাভাস্রোতের গভীর উৎক্ষেপ’ জাত। প্রেম, নারীর অন্তর্মনের নিভৃত বাসনা কিংবা গার্হস্থ্য অনুভব তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়, কিন্তু তা একমাত্র এবং একমাত্রিক ভাবলে ভুল হবে। বরং তাঁর অন্তর্দৃষ্টি প্রখর। বৃহত্তর সমাজের জীবন কখনও তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি। তাঁর কবিতার শ্লেষ আমাদের বিস্মিত করে। ‘শরীর, শরীর তোমার মন নাই কুসুম?’ এই প্রশ্নের উত্তরে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন কবি –
"মন? আছে বই কি ছোটবাবু,
কিন্তু মন দিয়ে ছুঁতে গেলে
আপনিই তো শরীরে নেমে আসবেন,-
আসবেন না?”
তাঁর কবিতায় উঠে আসে নারীর স্বাধীন সত্তার উন্মোচন। কোথাও ভাষা বা ছন্দে শিথিলতা নেই। পরিমিতি বোধ তাঁর কবিতার এক বড় গুণ ও রসায়ন।
★
তাঁর প্রতিবাদী গদ্য কিন্তু কবিতারও পূর্বে প্রকাশ পেয়েছে। সেই ১৯৫০ সালে দারুণ হইচই ফেলে দিয়েছিল তাঁর লেখা। পড়বেন নাকি?
রাজলক্ষ্মী দেবী তার সৃষ্ট নবপরিণীতার বয়ানে লিখছিলেন –
“সেই প্রথম দ্বৈধের সাক্ষী আমার ফুলশয্যার রাত্রি। সে রাতে তোমরা যারা আমায় সযত্ন প্রসাধনে সাজিয়ে মিলন কক্ষের দরজায় পৌঁছে দিয়ে গেলে; তোমরা কি একবারও ভেবে দেখেছিলে; প্রিয় সম্ভাষণে যাবার সত্যিকারের প্রস্তুতি আমার কতটুকু? আমার চরণ কাঁপেনি কোনো সপুলক সংকোচে, হৃদয়ে ছিল না আবেগের আলোড়ন, কুণ্ঠায় নত হয়নি ব্যাকুল নয়ন। শুধু অন্তরে ছিল সেই ছবি,– তাই বারে বারে ধিক্কার দিচ্ছিলাম ভাগ্যহত হৃদয়কে। তবু সেদিন যে ছিল সত্যি সত্যি আমার মিলনেরই পিপাসু, যার ছিল প্রথম যৌবনের সচেষ্ট অনুরাগ, সহজ দৈহিকতা, তাকেও তো সহ্য করতে পারিনি। যে তিক্ততা আমার হৃদয়কে আকণ্ঠ ভরেছিল, মিলনের মধু-পাত্রে তাই পরিবেশন করলাম আমি তাকে”।
একদিকে সমাজকে রাজলক্ষ্মী প্রশ্ন করেছেন যে, কেউ কি তার কাছে জানতে চেয়েছে, সে ফুলশয্যার মিলনের জন্য প্রস্তুত কি না। আবার অন্যদিকে নিজের শারীরিক কামনার কথাও সে গোপন করেনি। আমার শরীর তোমার সাথে মিলিত হতে চাইছে মানেই যে আমার এই মিলনে সমর্থন আছে এমন কিন্তু নয়। সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিক পরিসরে নাগরিক মহিলাদের একাংশ তখন রীতিমত ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। তারা নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন নতুন করে। রাজলক্ষ্মীর রচনা, মহিলাদের ব্যক্তিগত Interiority-র ইতিহাসকে সামনে আনছিল।
সেই ১৯৫০ নাগাদ রাজলক্ষ্মী দেবীর 'সেই মেয়েটি' তার স্বামীর উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন –
“প্রথম সম্বোধনের দূরত্ব নিয়ে অভিযোগ করল সে। আরও নিকটতর করে নেবার চিরাচরিত অনুরোধ জানালো। আপনির বদলে তুমি করলেই কি নিকট হওয়া যায়, অন্তরে যদি থাকে দূরত্ব? – অপ্রত্যাশিত জবাব দিলাম আমি তাকে। তবু সে বুঝল না, এ খেলার ছলে বলা নয়, – তপ্ত হৃদয়ের অগ্ন্যুৎপাত। তার জীবনের প্রথম মিলন রাত্রিকে বাঁচাবার অন্ধ আগ্রহেই ভুল বুঝল হয়তো। বললো – দূরত্বকে হৃদয়ের মূল্যে জয় করার সাধনাই আমার। ওর দুরাশাকে হিমালয়ের মত মনে হল। মনের মধ্যে চেয়ে দেখলাম, ভবিষ্যতের আকাশে কোথাও আলোকরেখা চোখে পড়ল না। তবু সামনে আমার ভবিষ্যতের কর্ণধার, নির্বোধ স্পর্ধায় দিতে অশেষ আশা এবং আশ্বাস। এবার করুণা করলাম আমি তাকে। তার দুই চোখে উৎসাহী যৌবন,– হয়তো কতো স্বপ্নের রচনা তার হৃদয়ে,– প্রথম প্রেমের উন্মাদনায় সে দুঃসাহসিক,– কুমার-চিত্তের ধ্যানলোক থেকে বাস্তুক পৃথিবীতে নির্বাসন এখনও তার সম্পূর্ণ হয়নি।”
পাঠক, এমন গদ্য সত্তায় ছ্যাঁকা লাগায়... ফোসকা ফেলে।
সামাজিক বিচারে দু’ভাগে বিভক্ত ‘লক্ষ্মীমন্ত’ এবং ‘পিশাচিনী/ মায়াবিনী/বাজে মেয়ে’-র বৈপরীত্যের বাইরে অবস্থান করে রাজলক্ষ্মী সৃষ্ট মহিলারা।
যারা ফুলশয্যার রাতে স্বামীকে নিজের দেহভোগ করতে দিয়ে বলতে পারে – আমি আসলে করুণা করলাম তোমায়।
এভাবেই রাজলক্ষ্মী নিজের Home Space-র মধ্যেই নীতি নিয়মের বেড়া জাল মেনে তার প্রতিরোধের পথ তৈরি করেছেন আজীবন।
★
আর তাঁর গল্পগুলি!
মনে পড়ল রাজলক্ষ্মী দেবীর ‘ভেতরের সেই নীল আলো' (দেশ,১৯৬২) নামক অসামান্য গল্পটির কথা। একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষের জীবন যুদ্ধে দৌড় আর সফলতার গল্প। শুধু কাজ। ছোটবেলা থেকে ভালো ছেলে হওয়ার মাশুল দিয়ে চলেছে সে। ভিতরের স্বপ্নের নীল আলো হারিয়ে ফেলে সে। বরং প্রতিযোগিতায় হয়ে ওঠে অগ্নিগোলক। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গুরুদয়ালজির মৃত্যু তাকে আয়নার মুখোমুখি করে। কর্মনিষ্ঠ মানুষ হয়ে তিনি যেন কর্মকীটে পরিণত না হন। আর তাই শেষপর্যন্ত ভালবাসার মাসুল দিতে তিনি ফিরে তাকান জীবনের দিকে – ‘অথচ,সর্বক্ষণ, ভেতরে এক নীল বাতি জ্বলছে। নীল সমুদ্রের মত এক বিস্তার অবগাহনের অপেক্ষায় আছে।’ এই অপেক্ষার আরেক নাম ভালবাসা। "
হৃদয়ের বাসনা আর রক্তের সংস্কারের দ্বিরালাপে এক নাগরিক ভাঙাচোরা রাজপ্রাসাদের ছায়া সে লুকিয়ে ফেলে মাঝে মাঝে।"
★
বাড়ি / রাজলক্ষ্মী দেবী
"পূর্বপুরুষের বাড়ি কথা বলে। প্রত্যেক কোণায়
উদ্যত তর্জনী তোলে রক্তের সংস্কার। জ্যোৎস্নায়
জড়িয়ে জড়িয়ে বাঁধে মনপ্রাণ প্রাচীন মায়ায়,
ফিস ফিস শাসনের তাল তোলে আজব ছায়ায়।
আলো নিবে গেলে আমি একা। এই বাড়ি মুখোমুখি।
পূর্বপুরুষেরা আসে। সুখে সুখী তারা,দুখে দুখী।
দীর্ঘদিন কেটে গেছে,সেই সব স্মৃতি কথা বলে
এ বাড়ির কোণে-কোণে। সন্ধ্যায় সমস্ত আলো জ্বলে
একবার। তখন স্বপ্নেরা আসে, ঘরে-ঘরে মূর্তি হয়ে বসে।
বাড়ি তো নির্জন নেই, আছে ঠিক যেমন ছিল সে।
আহা,তবু সন্ধ্যাদীপ হাতে নিয়ে যে যায় একাকী,
সে-ই বোঝে কী শূন্যতা,কী বেদনা। – সব স্বপ্ন ফাঁকি।"
★