এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • চলনবিল

    সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
    ইস্পেশাল | উৎসব | ০২ নভেম্বর ২০২০ | ৪৮৪২ বার পঠিত

  • ~~~~

    আবহমান ...

    পদ্মা -মেঘনা-ভৈরব-
    আন্ধারমাণিকের ঢেউ বেয়ে মহাকাব্যের মতো বড় নৌকো আর স্টীমারগুলো এসে দাঁড়াত সদর ঘাটে। সেখান থেকে পাড়ি জমাতে হতো ছইতে ফুল-লতাপাতা আঁকা সনেটের মতো ছোট পানসিতে।

    কোন গাঁয়ের নাম সিদ্ধিপাশা, কোনটা বজ্রযোগিনী। দেউড়ি ঘাটে মুনিষজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেজকত্তা, সোনাভাই আর কাজ করতে এসে... সেই কবে থেকে নিজেরজন হয়ে যাওয়া...শ্যামাপিসি।
    তর বুঝি আর সয়নি জেলেবৌ আবিদা দিদি আর নাপতানি সনকার।
    সরু, শক্ত- পোক্ত মেছো ডিঙ্গি নিয়ে নিজেরাই রওয়ানা দেবার তোড়জোড় শুরু করে দেয়।
    বিশু মাঝি কে ধমক লাগায়
    :" তোমরা গিয়া মালপত্র হ্যাকাঢ্যাকা যা আসে নিয়া আসো, এ্যাদ্দিনবাদ জামাই ছাড়া আমাগো মাইয়্যা আইতাসে -- আমরাই নিয়া আসুম। "
    মেজকত্তা হাঁ-হাঁ করে ওঠার মুহূর্তে শ্যামাপিসি আরেক ধমকে থামিয়ে দিলেন : "তুই থাম্ বিজু। আমিই তো যাইতাম, নেহাত ছাতু পিষা হয় নাই....।"
    পিসির পরে বড়কত্তারও কথা চলেনা। অতএব.....

    নৌকো খানিকদূর যাবার পড়ে, শ্যামাপিসির কি যেন মনে পড়ে...
    " ওলো আবিদা...সনকা, লীলা নাও-এ ওঠোনের আগে একটু মিছরি আর মাখন ওর মুখে দিবা কিন্তু। ভুলবা না। "

    দাঁড়ে অল্প হেলান দিয়ে আবিদা উত্তর দেয় --
    " ভাইব্যো না গো পিসি , মিছরি -মাখন দুইয়োটাই সঙ্গে নিসি....। "

    আগ্রহী বাতাস ছোট্ট নৌকোটিকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে আরেকটু দ্রুত।
    বাতাসের আর নৌকোর আজ অনেক কাজ।

    আজ দুদিন হলো মেয়েরা শ্বশুরঘর থেকে নিজের ঘরে ফিরছে। মা-বাবা, ভাইদের খুশি আর ধরে না -- আজ বাদে কাল চৈত্র সংক্রান্তি। বচ্ছরকার দিন --
    " ভাই-সংক্রান্তি " যে !

    ভাইদের কাছে ভারি সুন্দর এক একটা টক-মিষ্টি ডাক নাম হতো দিদিদের। বড়জন হয়তো
    চিনি দি, মেজো - মিছরি দি, বাঁশি দি, সবচেয়ে ডানপিটের হয়ত শান্ত দি আর সব ছোটটিকে হতেই হবে কুট্টি দি।
    ভাইয়ের নামও কি পিছিয়ে থাকতে পারে ?
    সোনাভাই, মধুভাই, ধনভাই, টোনাভাই, মনিভাই.... শেষে আবার কুট্টিভাই !

    ~~~~~~


    সংক্রান্তির দিন উৎসব যেন শুরু হয়ে যেত কাকভোরেই।
    দীঘি-পুষ্করিণীতে স্নান সেরে নতুন পোষাক আষাক পরে হাজিরা দিতে হতো নাটমন্দিরে - ঠাকুরঘরে। পুরোহিত মশাই নয়, পুরোহিত গিন্নী সেদিন লালপেড়ে শাড়ী পরে
    প্রদীপ ধূপ জ্বালিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতেন গৃহদেবতার। তারপর ভাইয়ের হাতে বোন তুলে দিতো যবের ছাতু।

    সেই অনুষ্ঠানের নাম ছিল "ভাই-ছাতু" -- যেন শহর সংস্করণ ভাই-ফোঁটার, মফস্বল প্রকাশনা।

    ছাতু দেবার লাইন হতো যেন গ্লোব সিনেমা হলের বারো-আনার টিকেটের লাইন! ছয় দিদি আর বোন...তাদের ধরুন গিয়ে আরো চার পাঁচ দাদা কিংবা ভাই ! প্রায় অ্যানুয়াল পরীক্ষার দশ নম্বরের Permutation Combination এর অংকের হিসেব !

    বাড়ির সব্বাইয়ের সেদিন দুধ-কলা-নারকোল-বাতাসা ( শিকেয় সযত্নে তুলে রাখা খেজুরগুড় ও, কোনো বছর )দিয়ে ছাতু মাখা খাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। শ্যামাপিসির আদরের ভাইপো-ভাইঝিদের মিলতো আরেকটি বেশি মন্ড। আহা, কি অপূর্ব ছিল তার স্বাদ !
    জয়নগরের মোয়াকে যে কোন সময় দাঁড়িয়ে পাঁচ গোল দিতে পারতো মশাই !

    ~~~~~~


    দুপুরের আহারে আমিষের ছোঁয়া থাকত না। থাকত তিতার ডাইল আর শাক -বড়ি ভাজা।
    গিমা , নাইল্যা, দণ্ডকলস, আমরুল, থানকুনি, নিম, নিশিন্দা, তেলাকুচা, মালঞ্চ, কানশিরা -- দশ রকমের তিতা স্বাদের শাক থাকতো কাঁসার থালায় Queen's Necklace এর মতো।
    আর ঘরে পাতা "খোড়া " ভরা চিনিদই !

    বিকেলের " ছাতু ওড়ানো"র পরে ঘরে ফিরে সকলের একসাথে " আম ছাতুয়া " -- ছাতু আর আম পোড়ার সরবত খাওয়া।

    তারপর, রাত্তিরে শ্যামাপিসি আর বড়কত্তামায়ের হাতের সেই দারুন রান্নাটা -- ফুলকচি উচ্ছে দিয়ে আড় -কালবাউশ- চিতলপেটির ঝাল ঝোল।

    খেতে বসে লীলাবতী --ভাইদের মিছরি দিদি -- বলে ওঠে -
    : " অ পিসি, আছি তো আরো
    কয়দিন.... তেল কই আর ইলশা মাছের মুড়াঘন্ট কর না একদিন। গোবিন্দভোগ চাউল-- ডুমা ডুমা অল্প ভাজা আলু - নামাইবার আগে একটু ঘি.... করো না গো পিসি! "
    : "করুম রে মনা... তর সাইধে করুম !
    মুড়াঘণ্ট খাইলে পোলা অইব -- কইয়া দিলাম ।"
    : "পিসি, যদি পোলা না...."
    : থাম্ তো রে, ছেমরি। খালি অকথা কুকথা ।"

    ~~~~~~


    বছরের শেষ অপরাহ্নে কোনও নদী বা জলাশয়ের ধারে ভাই বোনেরা একসঙ্গে এসে দাঁড়াতেন।
    একটি ছোট ধামায় আলাদা পুঁটুলিতে থাকতো
    ছাতু আর ছাই। থাকতো একটি ছুরি আর
    নিম বা নিশিন্দাপাতা খানিকটা।
    আর থাকতো একটি রঙ্গিন কূলো।

    বয়ে যাওয়া জলে বেয়ে যাওয়া নাও-য়ের চেনা মাঝি বদরু একটু থমকে যেত ।
    : "অ দিদি, কবে আইলা? আমাগো নামেও একটু ছাতু উড়াইয়ো গো ! য্যান ঝড়ে-আন্ধিতে না পড়ি।"
    : "উড়ামু গো ...উড়ামু ।"
    : "ভাইগ্নার মুখেভাতে না কইলেও আমু কিন্তু ! মনে থাকে য্যান ।"

    ~~~

    ~~~


    ভাই আগে ছাই ওড়াতেন - বোনেরা কূলোর বাতাস দিয়ে তা ছড়িয়ে দিত দূরে।

    ভাই ছুরি দিয়ে নিমপাতা খন্ড-বিখন্ড করে জলে ছুঁড়ে ফেলতেন, বোনের দল উলুর জয়ধ্বনি ছড়িয়ে দিতেন জলের তরঙ্গে।

    তারপর... ভাইয়ের হাতে তারা তুলে দিতেন যবের ছাতু। ভাই অঞ্জলির ফুলের মতো যতদূরে সম্ভব সেই ছাতুমুষ্টি ছুঁড়ে দিতেন আর বোনের প্রবল কুলোর বাতাস, সেই ছাতু উড়িয়ে নিয়ে যেত দূরান্তরে।

    মিছরি দি, বাঁশি দি, কুট্টদির সমবেত সুরেলা কন্ঠ বলে উঠত :

    " শত্রুর মুখে দিয়া ছাই
    ছাতু উড়াইয়া ঘরে যাই।
    তাগো ঘরে যদি মান না পাই
    নাইওর নিতে যাইও ভাই ।। "

    শেষ লাইন দুটো বলতে গিয়ে লক্ষ্মীমন্ত মিছরি দির গলা বুঝি একটু কাঁপত .... সদ্যকিশোর কুট্টি ভাই কি বুঝতো কে জানে, দিদির হাতটা শক্ত মুঠিতে ধরে এগিয়ে যেত ঘরের পানে।

    চৈত্রের শুকনো বাতাসে মেঠো পথের ধূলো আর ছাতু .... ভাইয়ের অহংকার আর বোনের সম্মান -- মিলেমিশে একাকার হয়ে ঢেকে দিত বছরের শেষ সূর্যকে।

    ~~~~~~



    ~~~~

    মনপবনের নাও...

    নীলফামারি, ঝিনাইদহ,
    দুপচাঁচিয়া, ঈশ্বরদী,ভঙ্গুরা, চাটমোহর.... গ্রামগঞ্জের এমনধারা চিত্রল নাম আর মানুষগুলোর অগুন্তি পালাপার্বণ একুশ জম্মেও পালটায় নি।

    জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লাপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে গ্রামের সধবা সন্তানবতী মায়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সেই সাতসকাল থেকে। উপোস করে স্নান সেরে ডালা -হাতপাখা-প্রণামী সাজানোর ধূম পড়ে গেছে বাড়ীতে ঘরে।
    বেতের কি নিদেনপক্ষে তালপাতার ডালায় গোলা সিঁদুরের স্বস্তিকা আর টিপ আঁকবে বাড়ির সধবা বড় বৌ। সাজানো হবে ছয় রকম ফল -- আপেল, আঙুর, ন্যাসপাতি এসব বিলিতি কায়দার ফল নয়। ঠাকুমার কথায় -
    : "আরে ফ্যালাইয়া থো তগো ওই সকল সাহেব-বিবি ফলপাকুড় ! ক্যান, আমাগো আম-জাম -কাঁঠাল - নোনা - বড়ুই -ডালিম কি কেউ শীতলক্ষ্যার জলে ভাসাইয়া দিসে ? "
    ছয়টি পান, ছয়টি সুপুরি, ছয়টি তলতা বাঁশপাতা, হলুদছাপা কাপড়ের টুকরো, নতুন ছ'গাছা সুতো, তেল, হলুদ, পাতলা চিঁড়ে, ফুটফুটে খৈ আর ঘরে পাতা চিনিদই দিয়ে সম্পূর্ণ করা হবে সেই আয়োজন।

    তারপর রওনা হবার পালা।
    এয়োতি, আইবুড়ো শাঁখ বাজিয়ে চলল আগে আগে... মাঝে হাফপ্যান্ট আর পায়জামা পরা ছেলেছোকরার দল আর শেষে শ্যামাপিসির মতো বিধবা আশ্রিতা আর জেলে-বৌ, নাপতানি , মুনিস-বৌ আর লাঠিধারী পাহারাওলার মিছিল।

    :" অ জেঠী, কই যামু এইবার ? অশথ গাছ তো বাজে পুড়ছে গেলবছর ! "
    :"পুড়ছে তো... পড়ে তো নাই ! আমাগো তিন পুরুষের বনষ্পতি -- অইখানেই যামু। তাড়াতাড়ি আউগা এইবার। পুরোইত আইস্যা গ্যাসে এতক্ষণ ! "

    একটি বালক, মেজকাকীর ছোটছেলে জেঠীর আঁচল ধরে বলে উঠল
    : "জানো তো জেঠী , নসু গুড় আর মুড়ি খাইয়া আইসে।"
    : "না জেঠী , ও মিছা কথা কয়। আমি মাইখ্যা রাখসি শুধু। বাড়ি গিয়া খামু ।"

    শ্যামা পিসি পিছন থেকে ধমক লাগায় : "ওলো লীলা , ডালা সোজা কর! দইয়ের পাতিলা তো উল্টাইয়া যাইব। এখনও কি ছেমরি আসো? মা হইসো তো! হুঁশ হওন লাগে তো এইবার !"



    ~~~~~~


    দেড়শো বছরের পুরোনো অশথ তলা এসে গেল। পুরোহিত মশাই-- সইত্য পুরোইত -- এসে গুছিয়ে নিয়েছেন। এবার পূজো শুরু। বেশ ঘটাপটা করে মন্ত্র ফলমূলের নৈবিদ্য দিয়ে সময়সাপেক্ষ পূজো। প্রতিবারই কেউ না কেউ সংক্ষেপ করার আবেদন জানায় এবং " সইত্য ঠাকুর " সেটি মঞ্জুরও করেন। ছেলেদের কপালে হলুদ ছুঁইয়ে, হলুদ রঙের ষাট সুতো তাদের হাতে বেঁধে দেন। মেয়েদের বাঁহাতে তাগা বাঁধা হয়। উলু আর শাঁখ ঘনঘন বেজে ওঠে। এবার শুরু হবে ব্রতকথা।
    : এই যে পূজা আজ হইল -- এ কিন্তু বহুু পুরানো প্রথা। এদেশে তো বটেই বিহার-উড়িষ্যা-মানভূম সর্বত্র এই ষষ্ঠী দেবীর পূজা হইতাসে শতেক বছর ধইর‍্যা। বৃন্দাবন দাসের " চৈতন্যভাগবত " - এ দেখা যায় চৈতন্যের জন্মের ছ'দিন পরে ষষ্ঠী পূজার আয়োজন হইছিল। তারপর, ধরো গিয়া, কাশ্যপসংহিতায় এই "জাতহরণী " ষষ্ঠীর ব্রত ও পূজার সূত্র আছে। এই দেবী কিন্তু রাগী দেবী। চেইত্যা গিয়া সন্তানের ক্ষতিসাধন করতে পারে। তাই সন্তান -- সে পোলা-ই হউক কি মাইয়া... পোলার বৌ হউক কি জামাই -- সকলের মঙ্গল কামনা কইরা আজ এই পূজা আর ব্রতপালন। "
    এই বলে তিনি শুরু করেন সেই এক যৌথ পরিবারের ছোট বউ আর কালো বেড়ালের গল্প।
    ষষ্ঠী মঙ্গলের কাব্যকথা। সেখানে ষষ্ঠী দেবী নিজের পূজা প্রচার করতে গিয়ে ব্রাহ্মণীর বেশ ধারণ করে সপ্তগ্রামের রাজা শত্রুজিৎ -এর রানিকে এই গল্প শুনিয়েছেন।
    দেবীর রোষে ছয়পুত্রকন্যা নাশ আর দেবীর সন্তোষে সব্বাইকে ফিরে পাওয়া। ঘরজোড়া সুখ তো বাড়তি পাওনা। ইতি ব্রতকথা সমাপতে ।
    : "এই যে ষষ্ঠী মঙ্গলা দেবী পূজিতা হইলেন আজিকার তিথিতে -- এই উপলক্ষে গৃহকর্তা সাধারণত জামাই-মাইয়ারে বাড়িতে নিমন্ত্রণ কইর‍্যা নতুন কাপড় উপহার দ্যান। তাই ইহারে কয় জামাই ষষ্ঠী। আর যাহাগো জামাই -মাইয়া বিদেশ বিভূঁই তে আছে -- তাঁরা করেন এই গাছের নামে উৎসর্গ। এইতেও দম্পতির মঙ্গল। নাতি-নাতনির শুভ। সর্ব সুখ।
    এই হইল আমাগো 'অরণ্যষষ্ঠী '। "

    ~~~~~~


    ব্রতীগণ পূজোর ফল -ফলার মুখে দিয়ে জলপান করলেন। কুচোকাঁচারা প্রবল উৎসাহে গাছের চারধারে ঘুরে ঘুরে অরণ্যষষ্ঠীর ছড়া বলতে শুরু করলো -
    : " জামাইষষ্টী আইলে পরে
    জামাই আসে শ্বশুর ঘরে।
    উড়নি--ধুতির গোলাপি রং
    শালিগো লগে কতোই ঢং !
    কিসের ধনী কিসের জাত
    মাছে -মাংসে ভরা পাত।
    লালপদ, দই, রসগোল্লা
    চমচম আর কাঁচাগোল্লা।
    কালুয়া ল্যাংড়া, ফজলি আম
    জামরুল , আতা, কালোজাম।
    ক্ষীর, মিষ্টান্ন, চিতোই পিঠা
    তিলচাক্তি বড়ই মিঠা।
    সাহেব জামাই আপেল খাইবা..আঙুরফল ?
    পরাণ জুড়াইব লাল কলসির শীতল জল।
    পান-খয়ের আর ধুতি -চাদর
    এরেই কয় জামাই -- আদর ।। "

    ~~~

    ~~~


    লীলাবতীর মেয়ে হয়েছে... সেই থেকে সে বাপের বাড়িতে। জামাই কলকাতায় মার্চেন্ট আপিসের চাকুরে। এখনো এসে উঠতে পারেননি। সইয়েরা আড়ালে বলে -
    : "পোলা হইলেও কথা ছিল! মাইয়া দেখনের জন্য গোয়ালন্দ উজাইয়া আসনের তাড়া থাকব ক্যান ? "
    জামাইষষ্ঠীতেও আসলো না সে।
    শ্যামাপিসি দু-কদম এগিয়ে এসে লীলার পিঠে হাত রাখে।
    : " মনা রে শোন, কষ্ট পাইস না। আমাগো জীবন হইলো চলনবিলের মতো। বাঁকের মুখে কি আসে, কেউ জানে না। ভাটিগাঙে বাপের বাড়ির থন দাদা - ভাই আসে নাইয়োর লইতে। বৌ চলে বাপের বাড়ি। আবার জোয়ারের কালে বজরা ভাসাইয়া তার সোয়ামি আসে...
    মাইয়া যায় শ্বশুর ঘর।
    তর সে -ও আইব।যুদ্ধের বাজার...ছুটি পাইতাসে না হয়ত।
    শোন ছেমরি, জামাই আইলে তারে কইস পিচ্চি মাইয়াটার একটা সুন্দর নাম দিতে। কল্যাণী, সুধা... এইরকম।আর কইবি বেটিরে য্যান পড়শুনা করায়। আর কি কি মিঠা কথা কইবা, সে তোমাগো নিজের ব্যাপার ! "
    লজ্জারুণা লীলা ছদ্মকোপে একটি মৃদু চিমটি কাটে পিসির বাহুতে।
    বসতভিটে বুঝি দেখা যাচ্ছে।

    ~~~~~~


    এবার ঘরে ফেরার পালা।
    : "ওলো তরঙ্গি, দ্যাখতো সদর দরজার সামনে একখ্যান বলদের গাড়ি খাড়াইয়া আসে না? জামাই আইলো নাকি কলকাত্তার থন ! ও শ্যামা, আউগাইয়া যাও তো। আমি ক্যামনে যাই... আমি তো শাশুড়ি ....।"
    যমুনা নাপতানি লীলাদিদির হাতে আলতো চিমটি কাটলো -
    : "ও দিদি , হক্কলের হইছে বনষষ্ঠী আর তোমার হইল জামাইষষ্ঠী !"
    পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০২ নভেম্বর ২০২০ | ৪৮৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বাণীব্রত বসু | 223.235.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০২০ ১৪:১৫99594
  • অসাধারণ!!

  • Bhudeb Sengupta | ০৩ নভেম্বর ২০২০ ১৬:১০99596
  • অনবদ্য লেখনী। এই পরবের ব‍্যাপারে ঠিক জানা ছিলনা।লেখক একেবারে জীবন্ত করে দিলেন। 

  • স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ০৩ নভেম্বর ২০২০ ২২:৫৮99601
  • ভারি মায়াময় লেখা। মনে পড়ে গেল  আমাদের ও ছোটবেলায় ভাই ছাতু ছিল। সকাল সকাল স্নান করে ছাতুর দলা তুলে দেওয়া ভাই এর হাতে।   তারপর গোটা অনুষ্ঠানটাকেই  একসময়  উড়িয়ে দেওয়া হল কলকাতার আকাশে।  

  • দীপঙ্কর দাশগুপ্ত | 2409:4060:303:7832::1cac:***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৫:২৮99617
  • কী অসামান্য লেখা। মুহূর্তে মনটা কোথায় যে চলে গেল! আমার ছোটবেলায় পরিবারে ভাইছাতুর রেওয়াজ ছিল। মুুুষ্টিবদ্ধ  হাতের ওপর থেকে যবের ছাতু ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া।  তারপরে ঘরে পাতা দই, সবরি কলা সহযোগে বাটিতে করে  যবেের ছাতু মেখে খাওয়া  চিনি আর লবন দিয়ে। অমৃত।

  • সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | 117.99.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০২০ ১৬:০৭99619
  •  ঘুঘু ডাকা ছায়ায় ঢাকা গ্রামখানি কোন মায়া ভরে

    শ্রান্তজনে হাতছানিতে ডাকত কাছে আদর করে সোহাগ ভরে

    নীল শালুকে দোলন দিয়ে রঙ ফানুসে ভেসে।
    ঘুমপরী সে ঘুম পাড়াত এসে কখন যাদু করে
    ভোমরা যেত গুনগুনিয়ে ফোঁটা ফুলের পাশে
    আকাশে বাতাসে সেথায় ছিল পাকা ধানের বাসে বাসে সবার নিমন্ত্রণ। 

    সেখানে বারোমাসে তেরো পাবণ আষাঢ় শ্রাবণ কি বৈশাখে
    গাঁয়ের বধুর শাঁখের ডাকে লক্ষ্মী এসে ভরে দিত
    গোলা সবার ঘরে ঘরে... "

                ★

      সময়ের অমৃতযাপন । 

  • প্রকাশ পাল | 2401:4900:1108:3310:bd6c:a5dc:bd7d:***:*** | ০৫ নভেম্বর ২০২০ ১১:৪৮99659
  • আমাদের  ছোটবেলায়ও এরকম ভাইছাতুর রেওয়াজ ছিল। মুুুষ্টিবদ্ধ  হাতের ওপর থেকে যবের ছাতু ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া।  তারপরে খাওয়া দাওয়া ।


    মনে পড়াতে খুব ভালো লাগল ।

  • Yashodhara Raychaudhuri | ০৯ নভেম্বর ২০২০ ১২:৩৬99798
  • একটি হীরক খন্ড লেখা!!! 

  • মহাশ্বেতা চক্রবর্তী | 157.4.***.*** | ১০ নভেম্বর ২০২০ ০১:৫০99831
  • অসাধারণ। মুগ্ধ হয়ে দুইবার, তিনবার করে পড়লাম। কোনো অনুষ্ঠানে পড়বার অনুমতি  প্লিজ??

  • Piu Mukherjee | 2409:4060:181:7c8b::1d92:***:*** | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৩:০৩100117
  • Amar দাদুর বাড়িতে আছে জটাধারী তলা ....

  • | 117.194.***.*** | ১৩ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৩100132
  • বাকরুদ্ধ, অন্তর স্থির করে দেয়।

  • Prativa Sarker | ২১ নভেম্বর ২০২০ ১২:০১100522
  • বিরাট ক্যানভাসে আঁকা একটা অপূর্ব ছবি। মন্ত্র যেখানে ব্যক্ত করে তাগোর ঘরে মান না পাবার আশংকা, আর ভাইয়ের মুঠো আরো শক্ত হয়ে, এঁটে বসে দিদির হাতে, সেইখানে এসে মন কেমনের পাহাড় ভেঙে পড়ে।


    এই সব পালাপরবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে জীবনের সুগন্ধ, জীবনের নিষ্ঠুর আঁচড় ! 


    আরো লেখা হোক, এইরকম মরমি, এইরকম মায়াময় ! 

  • Prativa Sarker | ২১ নভেম্বর ২০২০ ১২:০১100521
  • বিরাট ক্যানভাসে আঁকা একটা অপূর্ব ছবি। মন্ত্র যেখানে ব্যক্ত করে তাগোর ঘরে মান না পাবার আশংকা, আর ভাইয়ের মুঠো আরো শক্ত হয়ে, এঁটে বসে দিদির হাতে, সেইখানে এসে মন কেমনের পাহাড় ভেঙে পড়ে।


    এই সব পালাপরবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে জীবনের সুগন্ধ, জীবনের নিষ্ঠুর আঁচড় ! 


    আরো লেখা হোক, এইরকম মরমি, এইরকম মায়াময় ! 

  • Prativa Sarker | ২১ নভেম্বর ২০২০ ১২:০১100520
  • বিরাট ক্যানভাসে আঁকা একটা অপূর্ব ছবি। মন্ত্র যেখানে ব্যক্ত করে তাগোর ঘরে মান না পাবার আশংকা, আর ভাইয়ের মুঠো আরো শক্ত হয়ে, এঁটে বসে দিদির হাতে, সেইখানে এসে মন কেমনের পাহাড় ভেঙে পড়ে।


    এই সব পালাপরবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে জীবনের সুগন্ধ, জীবনের নিষ্ঠুর আঁচড় ! 


    আরো লেখা হোক, এইরকম মরমি, এইরকম মায়াময় ! 

  • দীপক দাস | 103.3.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০২০ ১৩:৫৪100526
  • খুব সুন্দর। চলবিলে সহজ বাতাসে কাঁপন তোলা জলতরঙ্গের মতো গদ্য। সুন্দর স্বচ্ছ।

  • Mitali Bera | ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০০:১৮100582
  • মনে হল, বাঙলাদেশে এখনই যাই।♥️♥️

  • santosh banerjee | ১২ নভেম্বর ২০২১ ১৮:২৩501059
  • দেশভাগ, শিকড় থেকে বিচ্যুত হবার বেদনা, বাস্তুভিটা হারিয়ে একটা জাতি সব ভুলে থাকতে চায়... কিন্তু ভোলা সম্ভব ? সেই স্মৃতির বাক্স আপনি খুলে দিলেন। ধন্যবাদ । 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন