এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  বাকিসব  নেট-ঠেক-কড়চা

  • আমাগো ভানু

    সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়
    বাকিসব | নেট-ঠেক-কড়চা | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ৫০২৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (১৩ জন)

  • আমার ঠাকুরদা মশাই, বাবু বিরাজমোহন, ছিলেন ২৫০% বাঙাল এবং আলাপচারিতায় ঢাকা বিক্রমপুরের ‘হল অফ ফেম’ এ নাম ওঠানোর যোগ্যতাসম্পন্ন। দেশভাগের সময় কলকাতায় এসে থিতু হয়েছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার লেক-সন্নিহিত কেয়াতলায় আমাদের বাড়িটি ১৯৫১-৫২ সালে স্থাপিত হয়। পাঁচ আর ছয়ের দশকে দাদু আর তাঁর চার বন্ধুর (হাইকোর্টের জজসাহেব, সিভিল সার্জেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্কের ম্যানেজার – সবাই অবসরপ্রাপ্ত)
    ‘অ-মাইক’ কণ্ঠের “ডরাই কারে?” ইত্যাদি শব্দে লেকের দক্ষিণ প্রান্ত সকাল-বিকেল উচ্চকিত হতো।

    সে হেন দাদু কলকাতায় আসার পরে মাত্র দু’টি সিনেমা দেখেছিলেন। ঠাকুমার সঙ্গে, আলেয়া হলে, ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ আর বন্ধুদের সঙ্গে আর একটি ছায়াছবি। দাদু নিজেই সে কথা শুনিয়েছেন বহুবার – “বোঝলা না, আমরা চার জইনে ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিকে গেছিলাম কালিঘাটের উজ্জ্বলা সিনেমায়। পতাইক্যা (জজসাহেব; পতাকাভূষণ... পদবী মনে নেই) কইল –‘আরে, ফেব্রুয়ারির বিশ তারিখ বায়োস্কোপখান বাইরোইসে, এখন নিশ্চয় টিকিট পাওয়া যাইব।’ গিয়া দেখি কি লাইন! যাই হোক, দ্যাখলাম সিনেমা। কি অ্যাক্টোই না করসে ঢাকার পোলাখান – আরে, আমাগো ভানু! হলের থিকা বাইরইয়া কিছুক্ষণের জইন্য দ্যাশ ছাড়োনের দুঃখ ভুইলা গেসিলাম, দাদুভাই। আহা!”


    সেই থেকে তিনি আমাদের বৃহত্তর পরিবারের একজন হয়ে গিয়েছিলেন।
    “আমাগো ভানু”।
    শুনেছিলাম বাড়ির সবাইকে দাদু সেই ছবি – ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দেখতে পাঠিয়েছিলেন। কেয়াতলা তখন ছোট পাড়া। অধিকাংশ বাসিন্দারই পূর্ব বাঙলার যোগসূত্র রয়ে গিয়েছিল। তাই পাড়ার বহুলোকেরই তিনি হয়ে উঠলেন না-দেখা আপনজন।

    ইতিমধ্যেই জ্যাঠা আর কাকারা বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করে ফেললেন। যেমন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু কাঠ-বাঙালই না, অন্ধ ইস্টবেঙ্গল সাপোর্টারও। সেই ১৯৪১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে কলকাতা আসা-ইস্তক ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন উনি। ১৯৪২ সালে উনি ইস্টবেঙ্গলের মেম্বার হন, কার্ড নাম্বার ছিল ২১৩। এমনকি, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের লাল-হলুদ জার্সি-পরিহিত তাঁর একখানা ছবিও যোগাড় করে ফেলেছিলেন তাঁরা। এ-ও জেনেছিলেন যে বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর শুদ্ধ বাঙাল ভাষায় আড্ডা হয় রাসবিহারী মোড়ের ‘অমৃতায়ণে’।


    এই পাড়াতুতো আত্মীয়তার আর একটি গল্প আমি মাঝে মাঝেই শুনতাম পিসিমাদের কাছে। সেই ১৯৫৩ সালের বিজয়ার জলসার ঘটনা। কেয়াতলার বিখ্যাত জলসায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন জানা গেল। মাঠ ভরে গিয়েছে মানুষের ভিড়ে। ‘উনি’ আসলেন। ভানু তখন গর্বিত ২৯ ইঞ্চি ছাতির মালিক। স্টেজে উঠেই আওয়াজ দিলেন – “মাসিমা, মালপোয়া খামু!”
    পাড়ার অন্তত পনেরো জন বয়োজ্যেষ্ঠা ‘মাসিমা’ থালা-ভরা মালপোয়া নিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রত্যুৎপন্নমতি ‘আমাগো ভানু’ও কয়েক মিনিটের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ভালবাসার এই প্রকাশে – এই অর্পণে। উনি সকলের কাছ থেকে মালপোয়া নিয়েছিলেন, তারপর নাকি সকল সহ-শিল্পীদের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েওছিলেন। বলেছিলেন – “বাড়ি গিয়া মায়েরে কমু, মাসির দরদ কারে কয় – আইজ দেখলাম।”


    পাড়ার তো বটেই, আমাদের একেবারে নিকটতম প্রতিবেশী ছিলেন উৎপলা সেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। সঙ্গীতের এমন যোগ্য সমাহার খুব কমই দেখা গেছে বোধহয়।

    উৎপলা সেন, যাঁকে আমরা বেলুন পিসিমা বলতাম, তিনি ছিলেন দারুণ হাসিখুশি, প্রাণবন্ত এক মহিলা। তুলনায় সতীনাথবাবু (না, ওঁকে পিসেমশাই বলে ডাকার সাহস আমি অন্তত করিনি) ছিলেন বেশ রাশভারী, গান-মগ্ন প্রকৃতির – অবশ্যই ভীষণ ভদ্র। বেলুন পিসিমার ছিল একটিই ছেলে। গানের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না তার। মনে পড়ে, খুব ঘটা করে সরস্বতী পুজো হত। বেলুন পিসিমা কিন্তু দারুণ রান্নাও করতেন!

    আমাদের পাড়ার দুর্গাপুজোর খুব একটা নাম-ডাক ছিল না। কিন্তু বিজয়া-সম্মিলনী বা জলসা বললে লোকে এক ডাকে চিনত। ঢাকুরিয়া, যাদবপুর তো বটেই, ভবানীপুর, চেতলা থেকে মানুষজন দুপুর দুপুর এসে পড়তেন। পাড়া, না বেপাড়া – এই বেয়াড়া প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার মানসিকতা তখন কারোর ছিল না।

    সতীনাথ-উৎপলা ছিলেন আমাদের জলসার শিল্পী সংগ্রাহক। ওঁদের জন্য পুজোর চাঁদা ধার্য করা থাকত সেটাই। কে না এসেছেন – লতা-আশা-মুকেশ-রফি ছাড়া যত দূর মনে পড়ে সব্বাই প্রায় কোনো না কোনো বছর এসেছেন সেই জলসায়। কোন কোন শিল্পী আসবেন, সেটা ছিল সেই বছরের সবচেয়ে বড়ো সিক্রেট। বেলুন পিসিমার এক্কেবারে পার্সোনাল রিকুয়েস্ট যেত। শিল্পীরাও যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন একটু সময়ের জন্য হলেও আসবার – দুটো গান হলেও গাইবার। ভানু বন্দোপাধ্যায় বহুবার সঞ্চালক হয়েছিলেন। উনি আসতেন সস্ত্রীক। শ্রীমতী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কি অসাধারণ গাইতেন! নজরুল গীতি শোনানোর জন্য আবদার করতেন শ্রোতারা। একটি বিশেষ গান শুনতে চাইতেন ভানু বাবু নিজেই –
    “বাঁশি বাজাবে কবে আবার বাঁশুরিয়া” – কি অপূর্ব সেই গান!

    শচিন দেববর্মন তো ছিলেন পড়শি-পাড়ার প্রতিবেশী। আহা, ওঁর সাদার্ন পার্কের সেই বাড়ি এখন অবহেলায় পড়ে আছে। উনি পুজোর সময় শহরে থাকলে এসেছেন কত্তোবার। একবার এসেছিলেন গীতা দত্তকে নিয়ে। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় তখন তরুণ। জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন সেই ভীষণ সুন্দরী, ভীষণ স্মার্ট – গীতাজির সাথে। এদিকে শচিন-কর্তা তাঁর সেই ব্যাচেলার সং ধরেছেন – ‘হায় কি করি এ মন নিয়া!’

    গান শেষ করে এস.ডি. নেমেছেন কি নামেননি – ‘আমাগো ভানু’ স্টেজে উইঠা হট্টগোল জুড়লেন – “দেখসেন কাণ্ডখান! শচিন কত্তাও আর পারলেন না। আমাদের মনা, মানবেন্দ্র যা শুরু করছস তুই – গাইয়া দিলেন – হায় কি যে করি এই মনা নিয়া!” গীতা দত্ত ততক্ষণে লজ্জারুণা।

    শ্যামল মিত্র তখন সদ্য দারুণ নাম করছেন। ‘ছিপখান তিনদাঁড়’, ‘হংসপাখা দিয়ে’, ‘যাক্ – যা গেছে তা যাক্’ রেকর্ড বাজারে পড়তে পারে না, মশাই!
    সে হেন শ্যামল মঞ্চে উঠছেন – মাইক নিয়ে নিলেন ভানু - উৎপলা সেনকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “শ্যামল ছ্যামরারে আজ আর রসগোল্লা দিয়া কাম নাই – গলা আরো মিঠা হইলে, ব্যাবাক গায়কের অন্ন মারা যাইব কিন্তু! “

    হেমন্ত বাবুর সেই গান – “নিলাম-ওয়ালা ছ’আনা” তখন ভীষণ জনপ্রিয়। সেবার সবাই আশা করেছিল উনি আসবেন তো বটেই, গাইবেনও সেই গান। জলসা অনেক দূর এগিয়ে গেছে, উনি আর আসেন না। আসলে সেদিন ওঁর আরো দু’টি অনুষ্ঠান ছিল। একটি তো আবার তাঁর আদি পাড়া ভবানীপুরে। বেলুন পিসিমার অনুরোধে, ভবানীপুর যাওয়ার রাস্তায় উনি অ্যাম্বাসাডার থেকে নেমে স্টেজে উঠে, একবার সেই মধুঢালা কণ্ঠে সুর তুললেন – “নিলাম – ও য়া লা!”
    তারপর মৃদু হেসে বললেন – “আসবে আসবে, একটু অপেক্ষা করুন”, বলেই আবার উধাও।

    আমরা কিছু বোঝার আগেই লর্ড ভানুর উদয়। “নিলাম-ওয়ালার ভেঁপু আজ বাজারে জব্বর কাটতাসে। ঠেলাগাড়ি নিয়া অন্য পাড়ায় গেছে – আইল বইলা। ততক্ষণে আমার বিটার-হাফের (শ্রীমতী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়) গান শোনেন!”


    “আমি কুষ্টে (কুষ্টিয়া)-পাবনা–খুলনে–যশোরের ছাওয়াল না, আমি ঢাকার পোলা।”
    মাইক হাতে নিয়ে এমন ভাবেই শুরু করতেন ‘আমাগো ভানু’। সম্মিলিত বাঙালকুল (পড়ুন বাঙাল-ঘটি সব্বাই) উচ্ছ্বসিত হতেন প্রতিবার। জলসা চলাকালীন মাঝে মাঝে চা-পান করতেন। একবার কেয়াতলার পুজোর সাংগঠনিক সভাপতি ছিলেন কোনো এক বড়সড় চা কোম্পানির আরো বড় সাহেব। জলসার প্রাঙ্গণ ভরিয়ে দিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনের ফেস্টুনে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেজে উঠলেন এক পেয়ালা চা হাতে নিয়ে। বললেন – “উৎপলা দিদিমণির পাড়ার ব্যাপারই আলাদা। চা তো হক্কলেই দেয়, কিন্তু চায়েও যে এমন ‘ওয়ারান্টি’ দেওন যায়, কেডা জানতো? সাবাশ কেয়াতলা। সাবাশ আপনাগো প্রেসিডিন্ট সাহেব!”
    আসলে চা-কোম্পানির নাম ছিল -Warren Tea!

    ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে তাঁর নিজস্ব স্টাইলে শোনাতেন নানা গল্প। তাঁর বিয়ের গল্প, শাড়ি কেনার গল্প, এমনকি ছেলের জন্মের গল্পও। বাস্তবে এমনটি হয়েছিল (হয়নি তো অবশ্যই) কিনা, শ্রোতৃমণ্ডলী তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কোনোদিন।

    তখন ‘ভানু’র একুশ বছর বোধহয়। একুশ না হলেও তেইশ-চব্বিশের বেশি কোনোমতেই নয়। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই কতবার তাঁর বিয়ের গপ্পো করেছেন – রসিক মানুষ তো রসিয়েই করবেন বলাই বাহুল্য! বলতেন অনেকটা এ ভাবেই – “আমার তো আর্লি ম্যারেজ। গেসিলাম চড়কডাঙ্গায় পুজার ফাংশনে। দেখি, একটা পিচ্চি মাইয়্যা, নীলিমা না কি নাম, গাইতে উঠল শিশির কণা ধর চৌধুরী দিদির ক্লাসিকাল বেহালা বাজনার পর। হক্কলে প্রমাদ গুণলাম- গেল রে ছেমরি!
    কি কমু! এমন গাইল – রাগের কি বিস্তার গলায়! শুইন্যা তো বি ফ্ল্যাট – মানে ভানু ফ্ল্যাট! শুনলাম আমাগো মানবেন্দ্রর খুড়ামশাই মধুদার (সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়) কাছে তালিম নেয়। নাম ঠিকানা জোগাড় কইরা পরের দিনই হাজির হইলাম তেনার বাসায়। আমারে চিনতে পারল। বাপের সাথে আলাপ করাইয়া দিয়া কয় কি না – ‘এই হইল ভানু দা – খুব মজার মজার ফাজলামি করে’।
    এরপর একদিন আমিও তেনাদের সব খুইল্যা কইলাম। কথায় কথায় তাঁরা কন, ‘বরযাত্রী কয়জন আইবো?’ কইলাম একজনও না। ‘বর’ মানে আশীর্বাদ করবেন তো আপনারা, আর ‘যাত্রী’ তো আমরা দুইজন- এক্কেরে সহযাত্রী! ব্যস্‌।
    শেষ পর্যন্ত বিয়া হইল। বরযাত্রীও গেসিল কয়েকজন – শ্যামল, মানবেন্দ্র, জহর... হ, উত্তমও ছিল। সে তো হক্কলের আগে গিয়া আমার পাশে এক্কেরে নিতবর হইয়া বইস্যা গেল। যেই আসে, তারেই কয় – ‘আমার নাম উত্তমকুমার। আমি ভানুর সাথেই সিনেমা করি।’ আমিও লজ্জার খাতিরে কইতে লাগলাম – উত্তম কিন্তু দারুণ অভিনয় করে। দ্যাখবেন ওর সিনেমা।”
    (এরপরেই কিন্তু লর্ড ভানু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলতেন – “উত্তম নাই তো ধারে-কাছে?”)


    ভানু-নীলিমার সুখের সংসার দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। ভরা থাকত সুরে, ছন্দে আর হাসিতে নিরন্তর।

    ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পায় ১৯৫৩ সালে। পরের বছর, ১৯৫৪ সালে, উতুদা-সুচিদি জুটির ছয়খানি ছবি ‘রিলিজ’ করে। ওরা থাকে ওধারে, অন্নপূর্ণার মন্দির, সদানন্দের মেলা, অগ্নিপরীক্ষা, গৃহপ্রবেশ আর মরণের পরে! সব ক’টিই মারকাটারি হিট। তাঁর সেই skit-এর গল্প বহুবার শুনেছি বাড়িতে। তাঁর বয়ানে শোনাই একটু।

    “আর কইয়েন না মশাই। কি আতান্তরেই না পড়সিলাম এইবার। আমার Bitter Half
    (শ্রীমতী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়) তো পূজার আগে থিক্যাই ঘ্যান ঘ্যান করতাসিল – ‘এইবার আমার লাইগ্যা ‘মরণের পরে’ শাড়ি আনবা। সুচিত্রা সেন পরসিলো... কি gorgeous লাগতাসিলো!
    কইয়া দিতাসি... আনবাই আনবা।’
    তারপর ক্যামন কইরা একটু তাকাইয়া, মুচকি হাইস্যা... দিত এক ছুট! ভাবেন, এরপরেও না আইন্যা পারি? তো, পূজার দুই দিন আগে গেছিলাম ঢাকেশ্বরীতে। নিতাইবাবু (নিতাই সাহা, মালিক) ঢাকার লোক, খাতির করে। চা-বিস্কুট খাওনের পরে কইলাম – আমারে একখান ‘মরণের পরে’ শাড়ি দিয়েন তো।
    আইন্যা দিল।
    কিছুই তো দেখিনা! না ডিজাইন, না জংলা পাড়, না সুতার কাজ!
    নিতাই রে, এইডা কি দিলি!
    নিতাইয়ের কি হাসি রে মশাই! কয় কি না – ভানুদা, আপনার সব কিসুতেই মস্করা! কইলেন তো ‘মরণের পর’ শাড়ি। তাই তো আনলাম। আরে, মরণের পর তো এইটাই চলে! সাদা থান।

    সিনেমার ফ্যাশন এক্কেবারে ফাঁসাইয়া দিসিল ‘আমাগো ভানু’রে।


    এইটি শুনুন। উনি বলতেন – পথে হল দেরি – ‘লেট করার’ গল্প।
    ছেলের বিয়ের রেজিস্ট্রেশন হবে। ভানু নিজেই গেছেন Witness হয়ে। পাত্রী ও বাকি লোক-লস্কর সব্বাই হাজির রেজিস্ট্রারের আপিসে, শুধু পাত্র-র দেখা নেই! সময় বয়ে যাচ্ছে – অন্য পার্টিরাও এসে অপেক্ষা করছেন – রেজিস্ট্রার সাহেব তো এবার মেজাজ হারিয়ে ফেললেন বলে।
    এদিকে ভানুবাবু, বরের বাপ, কেবলই বলছেন – “আরে মশয়, সাড়ে চারটায় টাইম দিসেন তো… পাঁচটায় আইবোই আইবো! লিখ্যা দিতাসি আমি।”
    রেজিস্ট্রার সায়েব রেগে গিয়ে বললেন – “আপনি এতো সিওর, মশাই?”
    ভানু হেসে উত্তর দিলেন, “শোনেন তবে। পোলা যখন ডেলিভারি হয় – বালিগঞ্জ ইশটিশনের কাছে আমাগো ফ্যামিলি ডাক্তারবাবুর নার্সিংহোমে – আমি তো এক্কেরে নার্ভাস! সিগারেট ধরাইতে বাইরে আইসি... যাহ্‌, দিয়াশলাই আর খুঁইজ্যা পাই না! এদিকে রাত তখন অনেক। দোকান হক্কলটাই বন্ধ... হাঁটতে হাঁটতে কখন যে গড়িয়াহাট ছাড়াইয়া চইল্যা আইসি! অবশ্যাষে ম্যাচিস পাইলাম।
    ফিরতে দেরি হইলো। লেবার রুমের কাছাকছি যাইতেই আয়া-মাসিমণির কি বকা রে ভাই!
    ‘যান ভিতরে। ডাক্তারবাবু ডাকছেন কখন থেকে!’
    গেলাম ভিতরে। ডাক্তার তো এই মারে, কি সেই মারে!
    ‘আপনি কনসেন্ট ফর্ম সই করেননি! আধ ঘন্টা আগেই ডেলিভারি হয়ে যায়! কেমন বাবা হবেন আপনি!’
    তা, আমার জন্যই পোলার আসতে আধা-ঘন্টা লেট হইলো!
    আর কমু কি? ওই তিরিশ মিনিট লেট ব্যাটা আজ অবধি আর মেকআপ-ই করতে পারলো না!”


    সতীনাথ-উৎপলার বাড়িতে শিল্পীদের নৈশভোজের আয়োজন হত। ভানুর পছন্দমত পদ রান্না করতেন গৃহকর্ত্রী নিজে। তেল-কৈ, ইলিশ-পাতুরি, ট্যাংরার ঝাল। আর মাংস রান্না করতেন সতীনাথ নিজে। ভাবা যায়!
    ভানু বাবু রান্নায় দারুণ ঝাল খেতেন। তার সাথে পাল্লা দিতেন হাওড়া জেলার খাঁটি ঘটি হেমন্ত মুখুজ্যে। একসঙ্গে খেতে বসলে, ভানু বাবু বলতেন – “আজ ডার্বি অমীমাংসিত ভাবে শ্যাষ হইল। কেউ কাউরে গোল দিতে পারে নাই।”
    সেই সব দিন, সেই সব শিল্পীরা!

    ‘আমাগো ভানু’ আমাদের কাছে ছিলেন যেন এক phenomenon – যাঁকে অনুকরণ করার ব্যর্থ চেষ্টাতেও ধন্য হতেন মানুষজন। দক্ষিণ কলকাতায় সে রকমই দু’জন ছিলেন – বালা বোস আর বর্ষা দত্ত।
    ‘বালা’-দার বাঁ-কব্জিতে ছিল মোটা তামার বালা। ভালো একটা নাম ছিল নিশ্চয়ই – ক’জন জানত জানি না। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে ঢাকা সহ বিভিন্ন রেডিও স্টেশনে ঘোষকের কাজ করেছেন এই একনিষ্ঠ ভানু-ভক্তটি। ভানুবাবুর স্কিট ও কমিকগুলি দারুণ নকল করতেন এবং শেষে একটি প্রণাম করতেন ওঁর উদ্দেশ্যে। বর্ষা দত্তের একটি চোখ ছিল পাথরের। উনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতেন – “ভানুদা এই চক্ষুটার নাম দিসেন – ক্ষুধিত পাষাণ!” সেই পাঁচ ও ছয়ের দশকে এক অর্থে ‘ভানু ব্রিগেড’ পরিচালনা করতেন এই দু’জন। পাড়ায় এসে শোনাতেন মন্টু বোসের ‘বসুশ্রী’র (সিনেমা হলের) নানা আড্ডার গল্প।


    ভবানীপুর বসুশ্রী সিনেমা হল ছিল বাঙলার তৎকালীন সংস্কৃতির এক্কেবারে মহা-ঠেক। নিউ ইয়ারস, পয়লা বৈশাখ, বিজয়া, দোল, দেওয়ালি, বর্ষা-মঙ্গল হলেই হল কোনো পার্বণ। লাগল জলসা – আছে মন্টু বোস। কে আসত না সেই সব অনুষ্ঠানে! প্রেক্ষাগৃহ উপচে পড়ত বোদ্ধা দর্শক-শ্রোতায়। উতুদা-সুচিদি প্রবেশ করলে হাততালি পড়ত – “সিটি” নয়। বসুশ্রীর ঠিক গায়ে, মহিম হালদার স্ট্রিটের একটি বাড়িতে বসত Post Soiree Party। সাংবাদিক-ক্যামেরাম্যানরাও সেদিন আমন্ত্রিত হতেন সাদরে।
    এরকমই এক সন্ধ্যায় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল – ভানু দা, কে বড়? আপনি, না জহর রায়?
    জহরের কাঁধে হাত রেখে লর্ড ভানু নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “সারাদিন আমরা একই প্যাচাল পাড়ি। তখন দুজনেই same। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পরে ছোটা ব্রিস্টলের বেয়ারা যারে সাহেব কয় – সে বড়। আর রাত দশটার পর উত্তম যারে দাদা কয়, সে-ই হইল বয়সে ছোট!”
    এক্কেবারে গুরুমুখী উক্তি, মশাই।

    শুনেছিলাম, এই বসুশ্রীতেই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিৎ রায়ের আলাপচারিতার গল্প। যদিও সত্যজিৎবাবুর ছবিতে শেষ পর্যন্ত ভানুর অভিনয়ের সুযোগ হয়নি, তবে দু’জনের পরিচয় অবশ্য ‘পথের পাঁচালী’র সময় থেকে। বসুশ্রীতে সেই ছবি দেখে মন্টু বসুর অফিস ঘরে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন ভানু। সত্যজিৎও তখন সেখানে বসে। ভানু তাঁকে চেনেন না। পরিচয় হতেই ভানুর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘‘মশাই, করেছেন কী! আপনি তো কালে-কালে কানন দেবীর মতো বিখ্যাত হবেন!’’
    অনেকদিন পরে, এই বসুশ্রীতেই, সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’র প্রথম ‘শো’-য়ের শেষে বেমক্কা প্রশ্ন করেছিলেন কোনও সাংবাদিক। শুনে আমাগো ভানুর ঝটিতি জবাব, “লেখাপড়া না-জানলে উনি (সত্যজিৎ রায়) তাঁর ছবিতে পার্ট দেন না।”
    শুনে অপ্রস্তুত সত্যজিৎ রায় তখনই ‘না-না’ বলে ওঠেন। সবিনয় বলেন, আমি ওঁর খুবই গুণগ্রাহী। উপযুক্ত রোল থাকলে অবশ্যই ভানু বাবুকে নেব।”


    ‘আমাগো ভানু’ তাঁর বাকচাতুর্য আর হাজির-জবাবের রসিকতায় নাজেহাল করেছেন অজস্র মানুষকে। তিনি যেন ঢাকার রসবোধের মধুর বাতাসটুকু সারাজীবন বহন করেছেন তাঁর যাপনে, মননে আর মনস্বিতায়।
    একবারের কথা বলি। কেয়াতলার জলসার স্টেজে উঠে প্রথমেই বললেন – “উৎপলা দিদিমণির চয়েসই আলাদা! পূজায় যে ধুতি আর জামদানি শাড়িখান দিসে আমাগো – উফ্‌ফ্‌, কি আর কমু!”
    বেলুন পিসিমা অপ্রস্তুত হয়ে এগিয়ে এলেন – “এই ভানুদা, কি হইতাসে? আমি দিই নাই কিসু।”
    -“আরে, বৌদিদি আর দাদারেই তো দিসস। মনে করব কেডা?”
    উৎপলা সেন সে যাত্রা – “কি অসইভ্য লোক, দেখসেন আপনারা!” ইত্যাদি বলে পার পেলেন।

    এ হেন ভানু বাবুও একবার নিদারুণ জব্দ হয়েছিলেন এক মহিলার কাছে। সেটা ১৯৬১ সালের জলসার কথা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্টেজে উঠলেন। সঙ্গে বাইশ-তেইশ বছরের একটি মেয়ে। হেমন্ত বাবু বললেন, “ও একটু গান গাইবে। কেমন?” হেমন্ত শুরু করলেন একটি হিন্দি গান দিয়ে। নতুন, না শোনা গান – ‘না তুম হামে জানো’। কিছুটা গাওয়ার পরে মেয়েটি শুরু করল – একা। সে কি সুরে-ঢালা কণ্ঠ! মায়ের কাছে শুনেছি, হেমন্ত বাবুর গাওয়া সঞ্চারি-আভোগ যেন সেদিন ম্লান হয়ে যাচ্ছিল।
    গান শেষ হল। উনি পরিচয় করিয়ে দিলেন – সুমন কল্যাণপুর।
    ভানু বাবু স্টেজে উঠে বললেন – “আইজ হেমন্ত সঙ্গে লইয়া আইসে এক চিরবসন্তের শিল্পীরে। আমি ত্যামন হিন্দি কইতে পারিনা, আমার হইয়া হেমন্ত বাবুই শুভকামনা জানাইয়া দ্যান।”
    এইবার সেই ‘পিচ্চি ছেমরি’ ভানু বাবুর পা ছুঁয়ে বলে উঠল – “ও ভানুদা, আমি কিন্তু ঢাকার মাইয়া। আমার বাপে ছিলেন সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ম্যানিজার। জন্ম-ইস্তক আট-নয় বছর ঢাকায় কাটাইসি। জীবন মুখুইয্যার কাছেই গান শেখার শুরু। আপনের মজার ফাইতরামির কতো রেকর্ড আসে আমাগো বাসায়।”
    ‘আমাগো ভানু’ এক্কেরে কট এ্যান্ড বোল্ড। যারে কয়, জব্দ উইথ ক্যাপিটাল ‘জ’!
    কোন রকমে সামলে নিয়ে বললেন, “এমন কণ্ঠ! কোকিল খাইসো নাকি ছোটবেলায়?”
    - “না গো,ভানু দাদা। মুক্তাগাছার মণ্ডা খাইসিলাম।”
    ‘আমাগো ভানু’ এইবার ‘স্টাম্পড’।


    রাস্তা থাকলেই যেমন ক্রসিং, ফোন থাকলেই তেমন ক্রস-কানেকশন। সেই সাতের দশকের কথা মনে পড়ে? ক্রস কানেকশন হতই। আর তার মধ্যে দু’একটা তো উমদা–স্মরণীয় হবেই। তখন সবে ডাক্তারি পড়ি। বোধহয় ১৯৭৫ সাল। একটা ছুটির দিনে মামাবাড়িতে ফোন করতে গিয়ে সেই বিপত্তি! ক্রস কানেকশন।
    ওদিক থেকে ভদ্রলোক বলছেন, “কে দ্বিজেন? দ্বিজেন... আমি ভানুদা বলছি।”
    ওই কণ্ঠ! সেই নাম! কোন ভুল নেই। হয়তো দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়কেই চাইছেন! কিন্তু আমি কি তাঁকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারি? পারা যায়? আপনারাই বলুন!
    একথা সেকথা বলার পরে (একেবারে এদেশি উচ্চারণ তখন তাঁর) উনি প্রায় অনুনয় করলেন, “দেখুন আপনি লাইনটা না কেটে দিলে তো… আমার মেয়ের বিয়ে আজ। বুঝতেই পারছেন!”
    আমি স্মার্টনেস দেখানোর জন্যে বললাম, সে কি ভানুদা, আমি আপনার এত কাছের লোক আর আমাকেই বললেন না?
    ‘আমাগো ভানু’ এবার স্ব-মহিমায় প্রকাশিত হলেন।
    “ভাইরে, বাসা পাল্টাইয়া কই চইল্যা গেলি... ঠিকানাটা তক দিয়া গেলি না। নিমন্তন করুম ক্যামনে?”
    এরপর কথা চলে না। নমস্কার জানিয়ে ফোন রাখতে যাব, ভানুচিত স্কোয়্যার কাট করলেন – “কোন ক্লাসে পড় তুমি?”
    বাড়িতে বাহবা কুড়োতে গিয়ে প্রচুর বকুনি খেয়েছিলাম। দুঃখ পাইনি মোটেও। আজ মনে হয়, ইস্, যদি সেলফোন থাকতো! যদি রেকর্ড করে রাখতাম! সবটাই তো যাকে বলে গিয়ে - সংযোগ।

    ‘জাম্প কাট’

    আমি ডাক্তারি পাশ করে কিছুদিনের জন্য দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় বেসরকারি হাসপাতালে বিখ্যাত ডাক্তার কে. এন. জালানের ইউনিটে নিযুক্ত হয়েছি। একসময় সেখানেই কয়েকদিনের জন্য ভর্তি হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় – হার্টের ও পেটের সমস্যা নিয়ে। ডক্টর জালান ছিলেন গম্ভীর মানুষ। ভানু-সুলভ রসিকতার মর্মোদ্ধার কতটা করতেন জানিনা। একবার পেশেন্ট-রাউন্ডে এসে ওঁকে বললেন – “খালি কবে বাড়ি যাব, কবে বাড়ি যাব করেন। আপনি রেডিওতে ফুটবলের কমেন্টারি শুনলেও তো পারেন।”
    ‘আমাগো ভানু’ অম্লান বদনে বললেন – “এখন তো হক্কলেই ‘বিশ্বকাপার’ হইতে চায়। আমাগো সময়ে ‘নিঃস্বকাপার’। পিকে-চুণী-বলরামের খেলা দেখনের পরে এই সব শুনতেও ইচ্ছা হয়না।”

    আরেকদিন,
    - “মিঃ ব্যানার্জি, আজকে এক্স -রে রিপোর্ট দেখে, দরকার হলে আপনার পেটটা খুলতে হবে।”
    - “ক্যান? আমার প্যাটখান কি তোরঙ্গ না সুটকেস? যখন মন চায় খুলবেন-বন্ধ করবেন! ইল্লি পায়া হ্যায়?”
    ডাঃ জালান হাসলেন না। তাই অন্যান্য ডাক্তার-নার্সরাও হাসলেন না। আমি সর্বকনিষ্ঠ। দাদুর কথা মনে পড়ল, “ডরাই কারে?” হেসে উঠলাম। আরে এ বস্তু যে ‘আমাগো ভানু’ exclusive – আগেও শুনিনি, পরেও শুনব না। না হেসে থাকা যায়? বলুন না!


    রাউন্ডের পরে ফিরছি, দেখি নার্স-দিদি ভানু বাবুকে নিয়ে চলেছেন এক্স-রে করাতে। ‘আমাগো ভানু’ আমার মুখোমুখি। পায়ে হাত ছোঁয়াতেই, উনি শশব্যস্ত-ভাবে বললেন – “আরে করেন কি! ডাক্তার হয়ে রুগির পায়ে হাত দিচ্ছেন? তাও হাসপাতালের ভিতর!”
    আমি বললাম – “আমার দাদু-বাবা ঢাকা বিক্রমপুরের আদি বাসিন্দা... বজ্র-যোগিনী।”
    “কও কি! তাইলে তো তুমিও ‘বাই ডিফল্ট’ ঢাকার পোলা।”
    কত কথা বলার ছিল আমাদের নিজের মানুষটির সঙ্গে। কত দিনের প্রস্তুতি। ‘আমাগো ভানু’র অত্যুজ্জ্বল চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আমি কেমন যেন ভেবলে গেলাম। উনি বললেন, “বিয়া করসো?”
    - “না, করিনি।”
    - “বাঁইচা গ্যাসো। কইরো না। “
    উনি একটু হাসলেন। এক্স-রে ডিপার্টমেন্ট এসে গেল। পরের দিন গিয়ে শুনলাম, উনি ছুটি করিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন।

    ‘আমাগো ভানু’ কত বড় অভিনেতা ছিলেন ইত্যাদি বিশ্লেষণ করার কোন যোগ্যতাই আমার নেই। তাই, চলচ্চিত্রের আলোচনায় না গিয়ে, বিজয়ার জলসার, প্রধানত আমাদের কেয়াতলার সেই হারিয়ে যাওয়া গান ফুরানো জলসা ঘরের গল্পগুলির কথাই শোনালাম।
    সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একবার তাঁর মূল্যায়নে বলছিলেন, ‘‘ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বললে শুধুই একটা হাসাবার যন্ত্র মনে পড়ে না। একটা জীবন-ধারণা, জীবন সম্পর্কে একটা মন্তব্য যেন মনকে ছুঁয়ে যায়।”

    তাঁর কমিকে/স্কিটে চরিত্রগুলি যেন তাদের বিপন্নতা ফুটিয়ে তোলে। তাদের আয়নায় নিজেকে দেখে দর্শক। ভানুবাবু হয়ে ওঠেন নিজেদের একজন, এপার-ওপার-অপার বাঙলার একান্নবর্তী পরিবারের সোনাভাই – “আমাগো ভানু”।



    কৃতজ্ঞতা ঃ শ্রী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়কে
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • বাকিসব | ০৬ অক্টোবর ২০২১ | ৫০২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Mousumi Banerjee | ০৮ অক্টোবর ২০২১ ১৭:০৯499312
  • ভারী সুন্দর।
  • Mousumi Banerjee | ০৮ অক্টোবর ২০২১ ১৭:১০499313
  • স্বর্ণযুগের ছবি ও কথা। বড় ভালোলাগা, বড় মন ছোঁওয়া।
  • tuhin kumar bhowmick | ০৮ অক্টোবর ২০২১ ২০:২০499318
  • ভালো লাগলো। 
  • Arka | 103.144.***.*** | ০৯ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৪২499351
  • কি সব  দিন। 
  • Mridha | 2601:647:5280:5c20:6467:281c:ba32:***:*** | ১০ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৪১499409
  • প্রাণটা ছুঁয়ে গেলো , আমাগো দ্যাশ ঢাকা জিলার বিক্রমপুরের দিঘলী গ্রাম..........সেই লেগ্যাসির মানুষগুলোর সাথেই আমার বড় হওয়ার দিনগুলো...... 
     
    My grandparents both father and mother side were from a place name Dighali Gram of Dhaka District of present Bangladesh. One section of refugees thrown out from the Dighali Gram established a little neighborhood in a small town named Bhadreswar, Hooghly at present West Bengal.
    In this newly established Dighali Palli beside Hooghly river, some of the broken, uprooted families, tried to continue their survival struggle, preserving and carrying some of their cultural heritage including dialects of their root from Dighali gram. It was a strongly interconnected ecosystem almost like a joint family, in which I grew up.
     
    এই একটা মানুষের গল্প অনেক অনেক মানুষের স্মৃতি তাজা করে দিল।  তাদের অনেকেই আজ ...... মনে হয় এবারের পূজোর এটাই সব থেকে বড় প্রাপ্তি। 
     
  • Siddhartha Mukherjee | ১০ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৫০499415
  • Mridha 
    আপনে আমার অনেকখানি ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা লইবেন। 
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন