কত গল্প করতো বুড়ো -- ঘুড়ি তো ছিল ছুতো ! মেটেবুরুজ-কলুটোলা - রাজাবাজার - গ্যাস স্ট্রীটের দোকানগুলোর মাঞ্জা ছিল লা-জবাব কিন্তু কোন কথা জিজ্ঞেস করলে জবাব পাওয়া যেত না ! জনাবের মুখভর্তি যে পান -জর্দা- সূর্তি ! ... ...
মজুমদার মশাই সেদিন নাস্তানাবুদ হয়ে গিয়েছিলেন দুই সুন্দরী শিল্পীকে বোঝাতে 'হেথা শুধু বাণী... দরশ নাহি জানি'। তবে ওই এক অনুষ্ঠানে ওনার নিশ্চয়ই পদোন্নতি নিশ্চিত হয়েছিল ... ...
বিলিতি কম্পানির বড় সাহেবদের জন্য সাপ্লায়ার সমূহ প্রেরিত "ডালা"। যত বড় সাহেব ততো বড়ো চ্যাঙারি। তাতে বাছাই করা ফল-বাদাম - বিস্কুট - চকলেট - রসে ডোবানো আনারসের "সুদর্শন" চক্র যেমনি থাকতো... থাকতো Gold Coin Apple Juice, সোডাপানি আর লাঠি হাতে বুড়ো ছাপ কালো বাক্সের লালজলের বোতল। কেন জানি সেটা দেখলেই আমার 'আবোলতাবোল' এর 'কাঠবুড়োর' কথা মনে হতো ! ... ...
ওনাকে ভারতের Commercial Art এর জনক বলে গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। মানুষটি ছিলেন স্বদেশীয়ানার "ফ্লেভারে" ভরপুর। Lipton Co. র কাজ হাতে নিয়েছিলেন এই শর্তে -- " আমি কিন্তু স্বদেশী চা বাগানের মালিকের বিজ্ঞাপনও বানাবো সাহেব ! ইচ্ছে হয় আমায় রাখো, নয়ত চল্লুম। " দেশের মানুষের জন্য বিজ্ঞাপন করতেন বিনা পারিশ্রমিকে। ... ...
আরে দাদুভাই, আর কইয়ো না। আজ এক্কেরে বেকুব বইনা গেসি। বিকাল বিকাল লেকে যাইতাসি। ওই সাদার্ণ এভেনিউয়ের মাঝের ঘাসের বুলেভার্ডে পোলাপানরা তো ঘুড্ডি উড়াইতাসে। তা উড়াক যত ইচ্ছা। হঠাৎ দেখি গোল পার্কের দিক থিকা একখান কাটা ঘুড্ডি, সঙ্গে অনেক মাঞ্জাসুতা, ভাসতে ভাসতে আইতাসে এদিকে। ব্যাবাক পোলাপান লাগাইলো দৌড় ! তাগো সব্বাইরে পিছনে ফেইল্যা আগে আগে আইতাসে একটা কালা ভূশন্ডি ছ্যামরা -- খালি গা আর দড়ির হাফ-প্যান্টুল পরা ! সে যে কি ছুট -- কি কমু ! ... ...
সেই ঘনায়মান আঁধারে এক সময় বালুদা এসে বসে ছিল আমার পাশটিতে। নেশা মেশানো নীচু গলায় বলেছিল : দাদাবাবু, আমার বড় সপপন ছিলো লালন মুর্দাফরাশ হবে না। জিন্দা আদমি তুলবে... ইলাজের জন্য হাসপাতাল আনবে এম্বুলেন্স চাপিয়ে। .... হল না । শালা মর্গে ডিউটি পেল -- অ্যানাটমি ঘরেও নয়। সবাই বলে ওখানে পয়সা আছে। ডেড দের গায়ের আংটি-হার ঘুরিয়ে দিলেই হলো। আমি লেকিন হেরে গেলাম দাদাবাবু। ..... মুর্দাফরাশের বেটা ডাক্তার হবে তো ভাবলাম না -- এটেন্ড্যান হবে... এটা তো ভাবা যায় বলুন? লালন তো ইন্টার পাশ ভি করল! তবুও.... "। স্তোকবাক্য শুনিয়েছিলাম বালুদাকে। বলেছিলাম : আরে, লালনের বিয়ে হবে... ছেলেমেয়ে হবে...তাদের ভালোভাবে পড়িয়ো... হয়ত একদিন কেউ ডাক্তারই হবে ! সেদিন যেন জানাতে ভুলোনা দাদা! " বালুদা ম্লান হেসে বলেছিল : দাদাবাবু, আর একটু মানসু নিতেই হবে লেকিন । ... ...
বাবু বিলাসের মধ্যমণি রায় দিলেন : দোয়াতদানি বরফ জলে চুবিয়ে আনা হোক... তারপর সেই বিকচ স্ফটিক-সম দ্রাক্ষারিষ্ট ঢেলে দেওয়া হলো তাতে। যেন বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ জল-বারান্দায় বসা মানুষ জনের শহুরে বোধের মরম ছুঁয়ে গেল ! এলো ইলিশ-কেভিয়ার ! নাহ, সেই Royal Mother Of Pearl এর চামচ দিয়ে নয় -- দু আঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে তাকে চেখে দেখার নিদান দিলেন সেই ঋজু-পুরুষ । স্বাদ কোরক গুলি বুঝি এক অজ্ঞাতপূর্ব আশ্লেষে... আবেশে অশেষ হয়ে উঠেছিল সেই প্রথম পরশনে... দরশনেও বটে ! ইলশে গুঁড়ির আনন্দে ততক্ষণে বারান্দার মেহগিনি কাঠের রেলিং সেজে উঠেছে - "রোদ্দুরে রিমঝিম"। সেই মাটির পাত্র যখন স্বাদে -আনন্দে - সুরে আর সুরায় উচ্ছল, লালাদা কেন জানি গেয়ে উঠেছিলেন -- : বেদনায় ভরে গিয়েছে পেয়ালা -- পিয়ো হে পিয়ো। : গান শেষে চোখ মুছে বললেন : : এটা কেন গাইলাম ? ইলিশ মাছের "এলিজি " ! এই মানুষ "কোয়েলের কাছে" লিখবেন না তো কে লিখবে ? ... ...
সর্বজয়া ভৈরবী সুরের সেদিন যে কি সর্বগতা রূপ দেখেছিলাম -- আজ সকালে কেন জানি মনে পড়ে গেল। 'ফেড আউট' হতে চলা স্মৃতিকে অজস্র ধন্যবাদ তার জন্য। ... ...
কাবলিওয়ালার ঝোলা যেমন হিং-সুর্মার গন্ধে আমোদিত হতো, এই সব ডাক্তার জ্যেঠুদের গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগ --- না, ব্রিফ কেস নয় -- কালো বা বাদামি চামড়ার হাতে ঝোলানো গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগ খুললেই ছড়িয়ে পড়ত স্পিরিট -- টিংচার আয়োডিন আর ইউকিলিপ্টাস অয়েলের মিশে যাওয়া একটি ঘ্রাণ। আর তখনই মনে হত -- এই তো আমি ভাল হয়ে যাচ্ছি। মা আজ বিকেলেই খেলতে যেতে দেবেন। ... ...
জনা পনেরো ডাক্তার-নার্স-আয়া-ওয়ার্ডবয়ের 'টিপিন' মাখতেন হাসিমুখে। একেবারে শেষ পর্যায়ে তিনি বাড়ি থেকে নিয়ে আসা 'কিছুমিছু' আচারের তেল আর পেটমোটা লংকার অন্তর্বাসী মশলা (উনি হেসে বলতেন "মশল্লা") মেশাতেন - অতো জোড়া উৎসুক, খিদে খিদে দৃষ্টির সামনে। তারপর... যাহ্ , লঙ্কা আনা হয়নি ! ... ...