

"গোদি মিডিয়া" শব্দবন্ধটি এখন আর খুব অচেনা নয় প্রায় কারুর কাছেই। এমনকি যাঁরা তথাকথিত "অরাজনৈতিক", তাঁরাও এসব জেনে বসে আছেন - কী আর করা যাবে, এই জালিম দুনিয়া আপনাকে নিষ্পাপ থাকতে দেয় না। "গোদি" শব্দটি হিন্দিতে ব্যবহৃত হয় "কোল" অর্থে - আর এর অন্ত্যমিল রয়েছে মোদির সঙ্গে - এক্কেরে খাপে খাপ পঞ্চার বাপ। মোদির গোদিতে (কোলে) বসে এই নিষ্পাপ ভারতীয় মিডিয়া (বৃহদংশ) ডুডু খায় - তারা এতই ইনোসেন্ট যে দেখলে চোখে জল চলে আসে। রাজনীতির কলুষ তাদের স্পর্শ করতে পারে না - তারা সাচ্চা ভক্ত। মোদিজী যা বলেন, যেভাবে বলেন, সেভাবেই তারা মানুষের কাছে খবর পৌঁছে দেন চির অনুগত সেবকের মতন। সেবকের সেবক। প্রধান সেবকের প্রধান সেবক। তার সেবক। এক কথায় সেবক টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।
তো এই ইনফিনিটি সেবকদের সক্রিয়তা প্রায় ইনফিনিটিতে পৌঁছেছিল ২০১৯ এ, গত লোকসভা ভোটের ঠিক আগে। অর্থনীতির প্রশ্নে, কৃষিনীতির প্রশ্নে যখন মোদী সরকার জেরবার, হারছে একের পর এক রাজ্য এবং উপনির্বাচন, তখন লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে দেশের অন্য সমস্ত সমস্যাকে সাইড করে দিয়ে ঢক্কানিনাদে প্রচারিত হয়েছিল মোদিজীর সার্জিকাল স্ট্রাইক। পুলওয়ামার জবাবে (যে পুলওয়ামায় ফৌজিরা কাদের অপদার্থতায় শহিদ হয়েছিলেন তা নিয়ে অসংখ্য লেখালেখি হয়েছে) ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে নাকি উড়িয়ে দিয়ে এসেছে জঙ্গিঘাঁটি। সে এক্কেরে হইহই রইরই মারমার কাটকাট ব্যপার। পোচুর জঙ্গি নাকি পটকে গেছে। তারপরে অবশ্য ফিরে আসতে গিয়ে একজন পাইলট পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়ে গেলেন - এবং পরে পাকিস্তান তাঁকে মুক্তিও দেয় - সে অন্য কাহিনি।
গোদি মিডিয়া যখন এই সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে ফেলেছে, দেশদ্রোহী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম কিন্তু পুরো ব্যপারটাকে পাত্তাই দিল না। ভারতীয় বাদে প্রায় সারা পৃথিবীর মিডিয়া রিপোর্ট করল যে ভারত হামলা করেছে ঠিকই, কিন্তু তা একটা ফাঁকা, পরিত্যক্ত জায়গায়, এবং কেউ হতাহত হয়নি। কোন জঙ্গি ঘাঁটিও ধ্বংস হয়নি, তবে দু-তিনটি পাইন গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে পাকিস্তানের তেমন কিছু ক্ষতি না হলেও ভারত একজন দক্ষ পাইলটকে প্রায় হারাতে বসেছিল, তাদের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সও বেশ ভালমাত্রায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল এবং সর্বোপরি, আবহাওয়া বুঝে এই অভিযানের পরিচালনা যিনি করছিলেন, যুদ্ধ এবং অ্যাভিয়েশন, উভয় বিষয়েই তাঁর অভিজ্ঞতা শূন্য - এসব অন্য গপ্প। আসল গপ্প হল, এই সর্বনাশা সার্জিকাল স্ট্রাইক কিন্তু তার মূল লক্ষ্য ভেদ করেছিল সাফল্যের সঙ্গেই - ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফলে বেশ ভালমত প্রভাব ফেলে।
এখন এই মুহূর্তে সরকার আবার বেকায়দায়। দেড় মাসের ওপর হল দিল্লির রাজপথে বসে আছেন প্রধানত পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং ক্রমশ অন্যান্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কৃষকেরা, আলোচনার পর আলোচনা ব্যর্থ হচ্ছে, সমাধানসূত্র খুঁজে পাননি সরকার। মিডিয়া আপ্রাণ চেষ্টাতেও এই কৃষকদের জঙ্গি বা দেশদ্রোহী প্রমাণ করে উঠতে পারেনি। এবং তখনই গোদি মিডিয়ায় হঠাৎ জেগে উঠেছে সেই মুশকিল আসান সার্জিকাল স্ট্রাইক।
প্রথমে সংবাদসংস্থা ANI এবং তারপরে তাদের সূত্র ধরে রিপাবলিক, এবিপি নিউজ, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, জি নিউজ মায় এন ডি টিভি সহ প্রায় প্রতিটি ভারতীয় মিডিয়ায় হইহই করে প্রচারিত হচ্ছে একটি ভিডিও ক্লিপ যেখানে প্রাক্তন পাকিস্তানি কূটনীতিবিদ জাফর হিলালি নাকি স্বীকার করেছেন যে বালাকোটে সেই সার্জিকাল স্ট্রাইকে প্রায় ৩০০ জঙ্গি মারা গিয়েছিল সেদিন। লোকজন হুব্বা - বলে কী রে ভাই! এত সরল মানুষ পাকিস্তানে থাকে? বাঁশ কেন ঝাড়ে বলে দৌড়ে গিয়ে ডেকে আনছে নিজের গ্রহবাসীর দ্বারে! হতেও পারে বা - সাররিয়াল পৃথিবী, বলা যায় না, হিলালিবাবু হয়ত ভক্ত হয়ে গেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে খড়গপুরে বিজেপির ক্যান্ডিডেটও হয়ে যেতে পারেন।
তা যথারীতি বেয়াড়া বাচ্চারা আবার মিডিয়ার দ্বারে কাঠি করতে নেমে পড়েছে। অলট নিউজ না কে এক দেশদ্রোহী আবার দেখিয়ে দিয়েছে যে যথারীতি ভিডিওটি ম্যানিপুলেটেড। তারা আবার আসল ভিডিওটিও ফাঁস করেছে যেখানে হিলালির বক্তব্য, ভারতের উদ্দেশ্য ছিল প্রায় ৩০০ লোককে মারা - জঙ্গি নয়, একটি মাদ্রাসার ৩০০ ছাত্রকে মারার উদ্দেশে তারা বোমা ফেলেছিল, কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত একটি ফুটবল মাঠের ওপর পড়ে (এতদ্বারা তিনি অবশ্য পাইন মারা তত্ত্বকেও নস্যাৎ করলেন - মানে ফুটবল মাঠে তো আর পাইন গাছ থাকে না, এক যদি না গোলপোস্টের কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে)। দেখা যাচ্ছে যে টুইটার হ্যান্ডল থেকে ভারতীয় সংস্থাগুলি ভিডিওটি নিয়েছে সেখানে ০.৭ সেকেন্ডের একটা অংশ মুছে দেওয়া হয়েছে - যেখানে হিলালির বলা "মারনা হ্যায়" শব্দটি হয়ে গেছে "মারা হ্যায়"। হিলালির বক্তব্যের পরবর্তী অংশ, যেখানে তিনি ভারতীয়দের ফুটবল মাঠে বোমা ফেলার দাবী করেছেন, সেটি মিডিয়াতে আসেইনি।
"ফ্যাক্ট চেক" শব্দবন্ধটি ভারতীয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া কোনদিনই তেমন জরুরি মনে করেনি। খবরের সূত্র, তার নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই বা কে মাথা ঘামায়? নতুন যুগের ভারতীয় খবর সৃষ্টি করে চলেছে এক নতুন ঘরানা - খাঁটি বৈদিক সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা। একে বৈদিক ধারার পাশাপাশি গৈদিক ধারা বললেও কিছু অত্যুক্তি হয় না। দু হাজার টাকায় চিপই বলুন বা আগস্ট মাসে কোভিডের ভ্যাক্সিন কিম্বা সার্জিকাল স্ট্রাইক আর তিনশো জঙ্গির মৃত্যু - এই গোদিয় সাংবাদিকতা কোথাও আপনাকে হতাশ করবে না। মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।
সায়ন্তন চৌধুরী | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১০:৪০101846আধখানা হলো তো; টিআরপি স্ক্যাম, বার্কের সাথে চ্যাট?
তা কংগ্রেস এর আমল যে মিডিয়া রা ছিল তারা দেশ কে কোন ভালো পথে নিয়ে গেছে ? বোফোর্স থেকে শুরু করে ২জি ৩জি কমনওয়েলথ গেমস স্ক্যাম কি হয়নি , তারা তখন ও সেই সময় কার সরকার এর কোলে বসেই ছিল . আসলে সাধারণ মানুষের ভালো করতে কেউ যায়না , যায় নিজের ক্ষমতা চরিতার্থ করতে .
আমার তো প্রতিবেদন টি পরে মনে হচ্ছে প্রতিবেদক পাকিস্তানকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন .
dorshok | 164.***.*** | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১২:২৪101850'2G scam' নিয়ে সি বি আই কোর্ট এর জাজমেন্ট টা পড়ে ফেলুন বন্ড স্যার। তারপর আর গল্প দেয়ার জায়গা পাবেন না।
Indrani Chattopadhyay | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ১৯:২৫101865ভালো হল, তবে অনেক না বলা বাণীও থেকে গেল। হয়তো আসছে বারে বাকিটা । আর হ্যাঁ, গোদিবাবুরা অসহ্য ঠিকই, তবে আমাদের ঘরের মানুষ "আসুন, বসুন, গল্প করুন" আর তার ভাই বন্ধুরাও খুব বেশি পিছিয়ে(মোদি-দিদি জপনে) নেই।
santosh banerjee | ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ২০:৪১101869সোজা কথা বলুন না ভাই , অত প্যাচ পয়জার কেন ??ওই কংগ্রেস আর এই বিজেপি দুটোই শুওরের বাচ্চা !!ওই কে গালি দিয়ে এই কে স্তুতি কেন ?? দেখতে পাও না ।।.৬৭ বছরের ইতিহাসে কংগ্রেস এ দেশ মাতৃকা কে ধর্ষণ করেছে ।..আর গত ৭ বছর এনারা করছেন ।..তবে এনারা সামূহিক বলাৎকার করছেন ।..এই যা !!দুটোই সালা পচা মাল !!হনূমান ভক্ত রা একটু বেশি লাফাচ্ছেন তো ??অপেক্ষা করুন ।...আসুক না বর্বর পার্টি টা ।।।।..একেবারে জাতী বাঁশ ঢুকবে সবার ইয়েতে ...!!!
সে কী! মূল বিষয় নিয়ে কারো কোন বক্তব্য নাই?
পারমিতা | 2409:4060:2095:277a:efef:f583:eece:***:*** | ২০ জানুয়ারি ২০২১ ১১:০৪101885আরো বিস্তারিত লেখা চাই মিডিয়া নিয়ে।
স্বাতী রায় | ২০ জানুয়ারি ২০২১ ১২:২৩101891এখন সব থেকে বড় সমস্যা হল কোন খবরই পড়ে এক কথায় বিশ্বাস করা যায় না। কোন মিডিয়ার ই না। যারা জেনেবুঝে মিথ্যে খবর ছাপে তাদের বাদ দিলেও বাকীদের রিপোর্টিং ও বেশ বাজে রকমের বায়াসড। অনেক কথা চেপে যায়।
Hiren Singharay | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৩৪102138অসাধারন লিখেছেন। বিদেশে যে বালাকোট নিয়ে কোন কথা শোনা যায় নি এটা ভারতীয় মিডিয়া জানাতে চায় নি। অবশ্য বন্ড ০০৭ নামের পাঠক আপনার লেখায় পাকিস্তান প্রীতি খুঁজে পান। এমনি করেই গোয়বলস ইহুদী জুজু দেখাতেন রোজ।
লিখুন । আরো লিখুন