ধরা যাক, আকাশে চাঁদ ফুটে আছে। কদমগাছের তলায় সেই আলো ডাবের শাঁসের মত ঘন। অদূরে ঝোপঝাড়। সেইখানে জোনাকির আলো। জ্বলছে, নিভছে। পাশেই ঝিল। চাঁদের আলোয় তা চকচকে। হাওয়া দিলে ঢ্যামনা সাপের মত জলের উপরিতল নড়ে। হাওয়া দিচ্ছে। নিঃশব্দে লক্ষ্মী পেঁচা উড়ছে। ইঁদুরেরা গর্তে ঢুকে যাচ্ছে। আরও ধরে নেওয়া যায়, ঐখানে, চাঁদের ঐ গোলাকার থালা দেখে মানবেতর প্রাণীটি আবাক, আশ্চর্য্য হয়েছে।
অতএব, মহাকাব্যের মত, করম আলি তবে কি সেই কদমগাছের তলায় গিয়ে বাঁশি বাজাবে? তার বাঁশি শুনে প্রেয়সীরা উতলা হয়ে উঠবে?
পরনে খাটো লুঙ্গি, খালি গা, হাঁপানির টান রয়েছে, হাঁটলে পাঁজরের দাঁড় দেখা যায় নিশ্চিত – এই মানুষটি, যে এখুনি চালা ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে, নিজেকে প্রমাণ করবার মত যার কাছে কোন প্রমাণপত্র নেই; ধরে নেওয়া যাক, মানুষটি করম আলি।
করম আলি ঘন হয়ে আসা আলোর মধ্যে, গোল ও চুড়ান্ত চাঁদের উপস্থিতিতে কদমগাছের তলায় এসে দাঁড়ায়। সোজা দাঁড়াতে পারে না। হাঁটু থেকে কোমর সামান্য বেঁকে আছে। দু-দন্ড জিরোয়। শ্বাস টানে। হু-হু করে বাতাস ঢুকে যায় তার বুকের ভেতর। বাতাসের সঙ্গে ঝোপঝাড়ের কেঁপে ওঠা, ঝিলের জলে প্রতিবিম্বিত চাঁদের থিরথির, জোনাকির আলো নয়; আলোর জ্বলে ওঠাটা আর নিভে যাওয়াটা - তার রক্তমাংসের ভতের সেঁধিয়ে যেতে থাকে। সে খোলতাই পেট চীরে, তারই মত কোন মানুষের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে ওঠে, কেউ আছে? কেউ আছে? শুনতে পাআআও...
কিন্তু তার স্বর ফিরে ফিরে আসে। কদমতলা ছাড়িয়ে, গ্রাম ছাড়িয়ে, শহরের দরজা, জানালা, মনুমেন্ট ছাড়িয়ে, বরানগর, বাবুঘাট, আলিমুদ্দিন স্ট্রীট ছাড়িয়ে, প্রতিদ্ধনিত হতে হতে, গঙ্গা পেরিয়ে হাওড়া ব্রীজে ধাক্কা খেতে খেতে, লালবাড়ি, নীলবাড়ি, সবুজসাথীর দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে, ভেঙে, চুরচুর হতে হতে ফিরে আসে। ফিরতেই থাকে।
দূরের রচনাবলীতে, মহান রচনাবলীতে মানুষকে লেখা হয়েছে - টারজনকে লিখবে কে?