ব্লগের কোন ভূমিকা লেখার প্রথা নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে দুয়েকটি কথা পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন।গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গী বিস্ফোরণে মারা যান ৪২ জন সৈনিক। সেই ঘটনাটি দুঃখজনক এবং তা নিয়ে কোনরকম ঠাট্টা করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু তারপর থেকে দেশজুড়ে যা চলছে ওই ঘটনাটির দোহাই দিয়ে, সেই কুনাট্য নিয়েই বর্তমান লেখা।এবং পুরো অবস্থাটা এতটাই অ্যাবসার্ড যে তাকে নিয়ে কোন সিরিয়াস লেখা সত্যিই আসছে না।
বিগত দশ দিন যাবৎ দেশের আকাশ বাতাস "মার মার" "ধর ধর" "কাট কাট" শব্দে পুনরায় মুখরিত হইয়াছে। বীরভোগ্যা বসুন্ধরার মাঝে যে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা - তাহার যে বীরের অভাব নাই তাহা এক্ষণে সর্বজনবিদিত। সুকুমার রায় ইহাদের কথা ভাবিয়াই একদা বলিয়াছিলেন - "বীর বলে বীর! ঢাল নেই তরোয়াল নেই খামচা মারেঙ্গা"। সেই খামচার ঠেলায় অস্থির ভারতবাসী অতঃপর অস্থিতে অস্থিতে টের পাইয়াছেন বীরত্ব কাহাকে বলে। কলেজ ছাত্র হইতে ইস্কুল মাস্টার, গৃহবধু হইতে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার হইতে আইটির ভাইটি - কেহ বিন্দুমাত্র দেশদ্রোহের আভাসমাত্রও দেখাইলেই বীরপুঙ্গবগণ লাঙ্গুল শক্ত করিয়া তথায় উপস্থিত হইয়া নিজ বীরত্ব প্রদর্শনপূর্বক কদলী ভক্ষণ করিয়া পাকিস্তানকে সমঝাইয়া দিয়াছেন।ভীত সন্ত্রস্ত পাকিস্তানিগণ তাহাদের প্রধানমন্ত্রীকে গুলিও করিয়াছিল, কিন্তু কোন এক দেশদ্রোহী উহাকে ভুল খবর বলিয়া তথ্যপ্রমাণ দিয়া দিয়াছে। এমনকি পাকিস্তানের ম্যাপ যে পৃথিবী হইতে মুছিয়া গিয়াছে - সেই চিত্রও এই পামর গদ্দারগণ খিল্লিতে পর্যবসিত করিয়াছে। ইহাদের ছাড়া হইবে না। অখিল ভারত বীরপুঙ্গব পরিষদ ইহাদের শায়েস্তা করিবার জন্য বীর বিক্রমে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি দড়ি দিয়া কোমর বাঁধিয়াছেন।
জনতা নিশ্চই এক্ষণে প্রশ্ন করিবেন না যে হঠাৎ এরূপ বীরত্বের বেগ আসিবার কারণটি কী? কারণ তাহা সকলেই অবগত আছেন এবং পাকিস্তানই যে এই সকলের মূলে তাহাও সকলে অবগত আছেন - কিন্তু আপনারা যাহা জানেননা - কারণ দিনান্তে আপনারা সেই আকুন্তল জনতা, তাহা হইল, এই ষড়যন্ত্রের পিছনে আছে সেই আদি ও অকৃত্রিম বামৈস্লামিক ষড়যন্ত্র। বামৈস্লামিকের কীর্তিকলাপ আমাদের মহান দেশপ্রেমিক ঈশান বাঁড়ুজ্যের কল্যাণে আপনারা অনেকেই অবগত হইয়াছেন। যাঁহারা জানেন না, তারা সত্বর জানুন কারণ আজিকার যুগে তথ্যই শক্তির ভাণ্ডার - এবং তাহা ভুল তথ্য হইলে আরো অধিক শক্তির আধার - ইহা মনে রাখিবেন।
এক্ষণে আপনাদিগের জন্য একটি ধাঁধা। বলুন তো, কাশ্মীর ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য কি না? হাসিবেন না - ইহা যত সহজ ভাবিতেছেন, তত সহজ নহে। বেশী গম্ভীরও হইবেন না - ইহা যতটা জটিল ভাবিতেছেন, ততটাও নহে। প্রশ্নটাকে একটু ভাঙিয়া বলিলে এরূপ দাঁড়ায় যে ধরুন আপনি যদি কাহারো নামে এরূপ বলেন যে অমুকদের কাছে বেড়াইতে যাইবেন না, উহাদের থেকে জিনিষপত্র কিনিবেন না - তাহলে তাহার যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত হইবে যে অমুক আপনার শত্রুপক্ষ। ইহাতে ধাঁধা নাই। ধন্ধে পড়িবেন তখনই যখন তিনি শুনিবেন আপনিই আবার অমুকের বাসস্থান লইয়া বলিতেছেন যে উহা আমাদের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নিজ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের হাড়গোড় কেহ কেন নিজেই ভাঙিতে চাহিবেন ইহা তৃতীয় ব্যক্তির নিকট ধাঁধা বলিয়া প্রতিভাত হয়।
পূর্বপ্রতিশ্রুতিমত আপনাকে বেশী গম্ভীর অথবা গৌতম গম্ভীর না করিয়া এই ধাঁধার সমাধান দেওয়া আমাদিগের অবশ্যকর্তব্য - অতএব শুন সাধুজন - ইহাও বুঝিলি না রে তোপসে? উহার গৃহটি আমার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, গৃহবাসী নহে। তাহারা দ্রুত উচ্ছন্নে যাউক, আমি দ্রুত গৃহটি দখল করি, ইহাই মনোগত ইচ্ছা। তাই আপনাদিগের কাছে অনুরোধ, আপাততঃ অমরনাথ যাইবেন না, পুণ্যটুণ্য মহান হিন্দুরাষ্ট্রের স্বার্থে আপাততঃ মূলতুবী থাক - কাশ্মিরী শাল বা কার্পেট কিনিবেন না (কদিনের তো ব্যপার - মার্চ মাসে ভোট হইয়া গেলেই আবার সব কিনিতে পারেন), আসুন, বীর হউন, নিরীহ শালওয়ালা দেখিলে পিটাইয়া দিন (একা যাইবেন না, ততটা নিরীহ না-ও হইতে পারে), কাশ্মিরী শিক্ষককে ওম মণিপদ্মে হুমকি দিন। আচ্ছে দিন এখনো কদিন রহিয়াছে - ভয় পাইবেন না।
ছাপ্পান্ন ইঞ্চির মহাবীর অবশ্য আপাততঃ যুদ্ধু টুদ্ধুর বিষয়ে বিশেষ কিছু কহিতেছেন না - বড়দাদা ধমকাইয়া দিয়াছেন। তবে তাহা ঠিকই আছে - ভক্তরা যাহা বলিবেন, মসিহাকে তাহার শতভাগের এক ভাগ বলিতে হইবে, ইহাই শাস্ত্রের বিধান। অতএব এক্ষণে বীরত্ব দেখাইবার প্রকৃষ্ট সময় উপস্থিত। কেহ আপনাকে জম্মু-তাওয়াই মেলের টাইম টেবিল বলিয়া ঝামেলায় ফেলিতে পারিবে না। আপনি তাহাদের নিশ্চিন্তে পাকিস্তানে যাইতে বলিতে পারেন - সেখানে টমেটো নাকি ১৩০ টাকা কিলো! আপনার স্বদেশে পেট্রোল আশি টাকা লিটার ইহা না ভাবিলেও চলিবে। আপনার কৃষকেরা আত্মহত্যা না করিয়া লং মার্চ কেন করিতেছে, তাহা ভাবিয়া নিজ বীরত্বের হানি হইতে দিবেন না - মনে রাখিবেন, থুড়ি - ইয়াদ রাখিবেন, উহাদের পাকিস্তানে যাইবার পরামর্শ দিলে তবেই আপনার প্রকৃত বীরত্ব বিভাব প্রকাশ পাইবে। জয় হো।