এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • ইতিহাসবিদ সালাহ্‌উদ্দীন আহমদের সাক্ষ্যতে

    কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ১৭ আগস্ট ২০১১ | ৭০৯ বার পঠিত
  • পূর্ববাংলার মানুষের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের শাসন শোষণ থেকে বাঙালি জাতি যখন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে, তখন শেখ মুজিবুর রহমান সকলের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানকে কবরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এই বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে — এটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের বৃহত্তর লক্ষ্য।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। সে হত্যা একাত্তরে বাংলাদেশের অর্জনকেই হত্যা করার নামান্তর। তার পর থেকেই বাংলাদেশের পাকিস্তানের ভূতের দিকে যাত্রা চলছে। জিয়া এরশাদের সামরিক শাসন, একনায়কতান্ত্রিক শাসন, খালেদা-হাসিনার দায়িত্বহীন রাজনীতি একাত্তরের অর্জনের কাছে আর রাষ্ট্রকে ফেরাতে দিচ্ছে না। মানুষের আশা ভরসার স্থানটি গেছে। এখন মানুষ আশঙ্কা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। নানাবিধ বিভেদের শিকার হচ্ছে। আবার বাংলাদেশের মানুষ আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়ে গেছে। এর পিছনে বঙ্গবন্ধুরও কিছু ভুল রাজনীতি ছিল।

    এই পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ অগ্রজ ইতিহাসবিদ প্রফেসর সালাহউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি কিছু কথা বলেছেন বাংলাদেশর লেখক সাংবাদিক মশিউল আলমের সঙ্গে। বর্তমান আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের নানারকম প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডের কারণে নানারকম প্রশ্ন উঠছে বঙ্গবন্ধুর ভুমিকা, কর্মকান্ড ও আদর্শ নিয়েও। এমনও প্রশ্ন আসছে যে বঙ্গবন্ধু আসলেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন কিনা, কিম্বা স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে তাঁর অবদান আসলেই কতটুকু? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর মেলে মশিউল আলমের নেয়া প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ-এর সাক্ষাতকারটিতে। সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্য।

    সালাহ্‌উদ্দীন আহমদের জন্ম ফরিদপুরে ১৯২২ সালে। তিনি ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৫৩ সালে। ১৯৬১ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

    ১৯৪৮ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। ১৯৫৪ সালে যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৭২ সালে তিনি চলে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেখান থেকে ১৯৭৮ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মননশীল অনেক গ্রন্থের রচয়িতা অধ্যাপক সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ ১৯৮৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

    সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ বলছেন- "তাঁর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার মানুষ, বাঙালি ও অন্যান্য ভাষা-সংস্কৃতির মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমবারের মতো একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এটিই বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান। তাঁর আগে এই ভূখণ্ডের মানুষের একক কোনো রাষ্ট্র ছিল না।' তিনি আরো বলছেন, বাঙালীর জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু ছাড়া তাঁর আগে আরো অনেকেই দেখেছেন কিন্তু সফল হতে পেরেছেন একমাত্র বঙ্গবন্ধুই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই এই ভূখণ্ডের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতিনির্বিশেষে সব সম্প্র্রদায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের শেষে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি একক স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাঁর ভুলত্রুটি-সীমাবদ্ধতা সবকিছু সত্ত্বেও শুধু এ কারণেই তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

    সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, এই ভুখণ্ডের ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতিনির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্যবদ্ধ করার কারণটি হল -- বঙ্গবন্ধু আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষতাকে। ধর্মে ধর্মে বিভেদ-বিভাজন থাকলে তো সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাষ্ট্র গঠনের কাজে উদ্বুদ্ধ করা যায় না। তাঁর অনুপ্রেরণায় পূর্ববাংলার হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষ জীবন বাজি রেখে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটা সম্ভব হয়েছিল তাঁর অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের কারণে। বঙ্গবন্ধু নিজে ধার্মিক ছিলেন, নিষ্ঠাবান মুসলমান ছিলেন। কিন্তু তিনি ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে জড়াননি।

    অথচ- কট্টর ডানপন্থী ধর্ম ভিত্তিক দলগুলোর বাইরে থেকেও আপাত দৃশ্যে উদার, প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ, বি এন পি উভয়ই ঘৃণ্য রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে ব্যবহার করছে ধর্মকে। কলুষিত হচ্ছে ধর্ম ও রাজনীতি উভয়ই। বিসমিল্লাহকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে কী লাভ হচ্ছে রাজনীতির? অথবা ধর্মের? সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ-এর কাছ থেকে জানা যায়- "শুধু বঙ্গবন্ধুর সময় কেন, মুসলিম লীগের আমলেও ছিল না। জিন্নাহ সাহেব কোনো দিন বিসমিল্লাহ বলে বক্তব্য শুরু করতেন না। আমাদের শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী সাহেব, এমনকি মওলানা ভাসানীও রাজনৈতিক বক্তব্য বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন না।'

    সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ কিন্তু তাই বলে বঙ্গবন্ধু কোনোভাবেই বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্মের লেবাসকে রাজনীতিতে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অপরাপর ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ধর্মকে ছোট করতে চান নি। এ কারণেই তাঁর "ভায়েরা আমার!' ডাকে মুহুর্তেই জেগে উঠেছিল সমগ্র বাংলাদেশ। পূর্ব বাংলার সকল মানুষ প্রথমবারের মতো পেয়েছিল এমন একজন নেতা যাকে বিশ্বাস করা যায়। এবং একই সাথে যিনি কোনো ধর্ম নয়, বরং সমগ্র জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করেন।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে বন্দুকে খোঁচায়।

    সামরিক স্বৈরাচার সংবিধান থেকে হটিয়ে দিয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে। গণতন্ত্রকে। সমাজতন্ত্রকে। এখন রাষ্ট্রধর্ম নামে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মকে।

    সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি শুধু মুসলমানের রাষ্ট্র নয়, এখানে অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষও আছে, তারাও এই রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার ও মর্যাদার দাবিদার। রাষ্ট্রীয় বা সরকারি পদে নিয়োজিত একজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে কোন ধর্মের অনুসারী সেটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়। মুসলমানরা এ দেশে সংখ্যায় বেশি বলেই তাদের ধর্ম রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে, তাদের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্মের মর্যাদা দিয়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মকে খাটো করতে হবে—এটা গণতন্ত্র নয়। জন স্টুয়ার্ট মিলের একটি উক্তি এখানে উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের জবরদস্তি নয়। কোনো নাগরিকের যেন মনে না হয় তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো আচরণ করা হচ্ছে। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার ফলে অমুসলমান জনগোষ্ঠীর মনের অবস্থা কী হয়েছে, সেটিও তো আমরা বোঝার চেষ্টা করিনি। যে পাকিস্তান ভেঙে আমরা বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি, আমরা তো সেই পাকিস্তানের মতোই হয়ে গেলাম। এবং এটা ছিল সামরিক শাসকদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ফেলা।

    সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এরশাদ সেই কাজটিই করেছেন সুচতুরভাবে। আর খালেদা জিয়া-হাসিনাও ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরেছেন। আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর নামে সেই টুটি চাপা গণতন্ত্রেরই বিকৃত রূপটিকে বহাল রেখেছে।

    সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ তাই বলেন, এই গণতন্ত্র, গণতন্ত্র নয়! গণতন্ত্র মানে সংখ্যাগরিষ্ঠের জবরদস্তি নয়।

    "স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে'। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে এসে স্বাধীন বাংলাদেশে এখন প্রখ্যাত খুনীরা পাচ্ছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমাভিক্ষা, পুলিশ-রযাবের হাতে নির্বিচারে বিনা বিচারে ক্রস ফায়ারে মরছে অসংখ্য মানুষ। আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে মানুষ, পুলিশের প্রশ্রয়-আশ্রয়েই অহরহ ঘটছে গণপিটুনীর বর্বরতা। নিত্য নৈমত্তিক হত্যা, ধর্ষণ, খুন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণের নিরাপত্তাহীন এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু চান নি।

    ধনী-গরীব বৈষম্য কমিয়ে সকল মানুষের নূন্যতম মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ধারণ করেছিলেন সমাজতান্ত্রিক আদর্শ। ঐ আদর্শ থেকে সরে এসেছি আমরা বহু আগেই। দিনের পর দিন ব্যবধান বেড়েই চলেছে ধনী আর গরীবে।

    সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল এমন একটি দেশ গড়ে তোলা, যেখানে সব মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা পাবে। মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর লক্ষ্য ছিল এটাই। এ জন্য প্রয়োজন সুশাসন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। এটা শুধু মুখে বললে হবে না, কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে দু:খের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, লক্ষ্মীপুরের বিএনপির নেতার হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড আওয়ামী লীগের সময়ে রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দিয়েছেন—এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আইনের শাসনের প্রতি বিরাট অবজ্ঞা প্রকাশিত হয়েছে এর মধ্য দিয়ে। এতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    তা ছাড়া ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামে যেসব উচ্ছৃঙ্খল আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে, সেসবও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের কাছে প্রত্যাশিত নয়। সুতরাং, শক্ত হাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একটা বিষয় আগেও আমি বলার চেষ্টা করেছি, রাজনৈতিক দল যখন নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, তখন দলের নেতারা মন্ত্রিত্বসহ বড় বড় সরকারি পদ গ্রহণ করেন। এর ফলে জনগণ থেকে তাঁদের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। দলের কাজ হচ্ছে সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতু রচনা করা। দল কাজ করবে সরকারের ওয়াচডগ হিসেবে। সরকারের কর্মকাণ্ডে জনগণ কীভাবে প্রতিক্রিয়া করছে, দলের নেতারা সেটা সরকারকে জানাবেন, সরকার সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করবে। দল শুধু দলীয় কর্মী-সমর্থকদের স্বার্থ দেখবে না, দেশের সব মানুষের স্বার্থ দেখবে, সেই অনুযায়ী সরকারকে পরামর্শ দেবে। কিন্তু এটা করা হয় না।

    স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম মূলনীতি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের মতো ব্যবস্থা বোঝানো হয়নি, মানুষের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার বোঝানো হয়েছে। লক্ষ্য ছিল মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ, ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা। কিন্তু এই সমাজতন্ত্রকে তো আমরা এক কলমের খোঁচায় বাদ দিলাম। দেশে আজ ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য যে ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে, তা এককথায় অমানবিক। বিপুলসংখ্যক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন এটা ছিল না, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এটা ছিল না। অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নে এ দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। তাই আমাদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ বিসর্জন দিলে চলবে না। বঙ্গবন্ধু বলতেন, সমাজতন্ত্র হচ্ছে দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।

    সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী জারি করে বঙ্গবন্ধু একদরীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এটা করা বঙ্গবন্ধুর একটা বড় ভুল ছিল বলে প্রফেসর সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা থেকে তাঁর সরে যাওয়া ঠিক হয়নি। দেশের পরিস্থিতি তখন বেশ জটিল ছিল, শক্তিশালী সরকারের প্রয়োজন ছিল—এসবই সত্য, কিন্তু সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যেত, সংবিধান সংশোধন করা ঠিক হয়নি। বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য বঙ্গবন্ধু সারা জীবন সংগ্রাম করেছিলেন, বাকশাল গঠন করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা তাঁর জন্য স্ববিরোধী কাজ হয়েছে। সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ সেই সাথে এটাও যোগ করেন- "তিনি বিকেন্দ্রীকরণের যে কাজ শুরু করেছিলেন, যা সম্পন্ন করার সময়-সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি, সেটি ছিল একটি বড় কাজ'।

    গণ মানুষের নেতা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর দেশ কাজ শেষ করতে দেয় নি বঙ্গবন্ধুর খুনীরা। এরপর আজও তাঁর নাম নিয়ে যারা ক্ষমতায় আসেন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন তারা কতটা ধারণ করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে? স্বপ্নকে?

    সালাহ্‌উদ্দীন আহমদ বলেন- "প্রতিকৃতিতে ফুলের মালা দিয়ে, শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কোনো অর্থ নেই, যদি আমরা তাঁর আদর্শগুলো মনে না রাখি, যদি তাঁর স্বপ্ন-আদর্শ থেকে সরে যাই।'
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ১৭ আগস্ট ২০১১ | ৭০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন