-তারপর কী করলি?
- পাশের ভাঙ্গা রাস্তাটা দিয়েই দৌঁড়ুতে শুরু করলাম।
- বলিস কি, ঐ রাস্তায় তো অনেক বড় বড় গর্ত! তারপর আবার থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি!
-সেজন্যই ত এই রাস্তা ধরলাম। এখানে ওরা কেউ আসত না নিশ্চিত।
ড্রইং রূমে বসে একটি নিউজ চ্যানেলের পর্দায় পুরো মনোনিবেশ করেছিলেন সাদেক সাহেব। আর তখনই হন্তদন্ত হয়ে ঢোকে শুভ্র। স্কুল-পোশাক না ছেড়েই সে বলতে শুরু করে ঘটনাটা। স্কুল থেকে বেরিয়ে সে যখন জুরাইন রেলগেটের কাছে এসে পড়ে, তখন না কি তাকে বহনকারী রিকশাটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে একটি বিক্ষোভ সমাবেশকে সামনে পড়তে দেখে। তো সে এরপর বাসার দিকের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে। সে সময়ই তার চোখে পড়ে জিনিসটা – একটি ধোঁয়া, সেটি কি টায়ার জ্বালানো থেকে, না কি, ককটেল বিস্ফোরণের কারণে, তা ভাবার সময় ছিল না এক মুহূর্ত; কারণ সেটি খুব কাছে না থাকলেও একেবারে দূরেও ছিল না।
-ভাল করেছিস্। এখন ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
সাদেক সাহেবের এই কথার পরেও নড়তে দেখা যায় না শুভ্রকে। তখনো হাঁপাচ্ছিল, কিন্তু ক্লান্তি ছাপিয়ে মুখে মূর্ত হয়ে উঠছিল অভিমানের অধিবৃত্ত। সব বাদ দিলেও সে যে দূর থেকে জিনিসটি দেখতে পেয়েছিল, তারও কি কোন …!
-বাবা, জানো, আমার সাথে কিন্তু রিকশায় পুলকও ছিল।
-সে কি, ওর কী খবর?
পুলক শুভ্রর অনেক বন্ধুর একজন, আর কয়েকবার তাদের বাসায় দেখেছেনও। এর বেশী কিছু জানা নেই সাদেক সাহেবের। কিন্তু দুশ্চিন্তা হতে লাগল ছেলেটির জন্য।
-ওর খবর জানি না। রিকশা থেকে নামার পর আমরা তো একই সাথে হাঁটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু ও যেরকম চোখ বুঁজে হাঁটে, হয়ত ধোঁয়াটা চোখেই পড়েনি।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি পেড়ে বাবার দিকে এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে থাকে। এবার হয়ত মিলবে স্বীকৃতি!
-তার মানে, তুই বন্ধুকে রেখেই চলে এলি? কাজটা একেবারেই ঠিক করিস না। যা, যা, দাঁড়িয়ে না থেকে পুলকের খোঁজ নে ।
হতাশা মুহূর্তেই ক্রোধে রূপান্তরিত হয়, আর তাকে মুখের পর্দায় পরিষ্কার ফুটিয়ে তুলে শুভ্র যখন বেরিয়ে যায় ড্রয়িং রুমটা থেকে, তা ঠিকমত লক্ষ করার সময় হয় না সাদেক সাহেবের; কারণ চোখ পুরোই আটকে গেছে টিভির পর্দায়।
‘আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া!’ –বলতে বলতে বসা থেকে উঠে পড়েন তিনি।
পর্দায় তখনো দৌঁড়ে বেড়াচ্ছিল ব্রেকিং নিউজটাঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাইক্লোনটি এ মুহূর্তে ভারতের দিকে অনেকটাই সরে গেছে। বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা খুবই কম।
(সমাপ্ত)
……………………………………………………………………………………………………………..
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।