এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বলবই

  • সমাজতন্ত্রের নতুন দিশার সন্ধানে কোবাড গান্ধী

    সোমনাথ গুহ
    পড়াবই | বলবই | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬৬০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৪ জন)

  • ২০০৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর কোবাড গান্ধী দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার না বলে এটাকে ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ বলা যেতে পারে। তিনি কিছু কম্পিউটার সামগ্রী কিনে একটি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ একটি এসিইউভি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। কয়েকজন ষন্ডাগুন্ডা লোক বেরিয়ে এসে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাঁর সমস্ত জিনিসপত্র কেড়ে নেয় এবং তাঁকে ঠেলে গাড়িতে তুলে দেয়। প্রায় বারো ঘন্টা গাড়িটি তাঁকে নিয়ে দিল্লির রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। অপহরণকারীদের কোনও কথা কোবাড বুঝে উঠতে পারেন না, কারণ তারা তেলুগুতে কথা বলছিল। মাঝেমধ্যে শুধু এয়ারপোর্ট কথাটা ভেসে আসছিল এবং কোবাড আশঙ্কা করছিলেন কুখ্যাত অন্ধ্রপ্রদেশ-পুলিশ তাঁকে কোনও জঙ্গলে নামিয়ে ভুয়ো সংঘর্ষে খতম করে দেবে। তিন দিন বাদে মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ: বড়সড় এক মাওবাদী চাঁই পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। তিনি জানতে পারেন, যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ – তিনি মাওবাদী দলের পলিটব্যুরোর সদস্য, দেশের নানা রাজ্যে অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত। ২১শে সেপ্টেম্বর তাঁকে তিহার জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। কোবাডের তখন ঘুণাক্ষরেও ধারণা ছিল না, যে প্রবল লাঞ্ছনা, অপমান, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়ন সহ্য করে তিহার সহ বিশাখাপত্তনম, পাতিয়ালা, হাজারিবাগ, সুরাট ইত্যাদি জেলে দশটা বিভীষিকাময় বছর তাঁকে কাটাতে হবে।

    ২০১২-২০১৩ সালে তিনি মেইনস্ট্রিম পত্রিকায় বিভিন্ন প্রবন্ধে সমাজতন্ত্র ও দেশ বিদেশের কম্যুনিস্ট আন্দোলন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন তুলে ধরতে শুরু করেন। মার্ক্সবাদ ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে তাঁর সমালোচনাগুলো পরিচিত, তাতে অভিনব খুব একটা কিছু নেই। যদিও সেগুলি এখনো খুবই প্রাসঙ্গিক; বহু বছর ধরেই চিন্তাবিদরা এই ধরণের সমালোচনা করে আসছেন। যেমন ধরা যাক, অতি পরিচিত একটি সমালোচনা – যাতে বলা হয়ে থাকে মার্ক্সবাদ মূলত অর্থনীতির ওপর জোর দেয়, মানুষের প্রকৃতি, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মনস্তত্ত্বর সেখানে কোনও স্থান নেই; কিংবা আমাদের দেশের কম্যুনিস্টরা মার্ক্সবাদের ভারতীয়করণ করে উঠতে পারেননি। প্রাথমিক ভাবে সিপিআই (মাওবাদী) এই সমালোচনাগুলোকে লঘু চোখে দেখে। উল্টে জানা যায়, যে এই সময়ে দলের অভ্যন্তরের একটি সার্কুলারে কোবাড গান্ধী সহ চারজন বরিষ্ঠ নেতার মুক্তির জন্য চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে দল কোবাডের ওপর জেলে নির্যাতনের প্রতিবাদ করে প্রেস বিবৃতিও দেয়। ২০১৯ এর অক্টোবরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। ২০২১ এর মার্চে রোলি বুকস থেকে তাঁর বই ‘ফ্র্যাকচার্ড ফ্রীডম: আ প্রিজন মেমোয়ার’ প্রকাশিত হয়। প্রায় আট মাসের এক অস্বস্তিকর নীরবতার পর দল তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে।

    তাঁকে বহিষ্কার করার মূল কারণগুলি হল নিম্নরূপ:
    (১) তিনি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং বুর্জোয়া অতীন্দ্রিয়বাদে সুখ ও স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছেন।
    (২) তিনি মাওবাদী হিসাবে নিজের পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছেন যদিও তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অন্যতম একজন ছিলেন।
    (৩) তিনি জেলের গ্যাংস্টারদের গুণগান করেছেন এবং একই সাথে জেলের মাফিয়ার সাথে নক্সালদের যোগসাজশের কথা উল্লেখ করে পার্টিকে হেয় করেছেন। আরও অভিযোগ – কারাগারে নক্সালদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ঐতিহ্যকে নসাৎ করে তিনি জেলের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে বন্দীদের নিয়ে কোনও প্রতিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করেননি। বরঞ্চ জেলে তিনি আরামে জীবন কাটিয়েছেন।
    (৪) জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দলের সাথে যোগাযোগ করার কোনও চেষ্টা করেননি।
    (৫) দলের অনুমতি ছাড়াই নিজের বই প্রকাশ করেছেন।

    দ্বিতীয় অভিযোগটি নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা যেতে পারে। এটা সত্যি – তিনি মাওবাদী হিসাবে নিজের পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছেন। ‘গ্রেপ্তার’ এর সময় কোবাড গান্ধীর মানসিক অবস্থা পর্যালচনা করে দেখা যেতে পারে। আঠেরো মাস আগে তিনি তাঁর প্রিয় জীবনসঙ্গিনী অনুরাধা গান্ধীকে হারিয়েছেন। চিকিৎসার কারণে তিনি মুম্বাই থেকে দিল্লি এসেছিলেন। তিনি প্রস্ট্রেট ও মূত্রাশয়ের সমস্যা এবং অর্থোপেডিক ও উচ্চচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। এটা পরিষ্কার, মানসিক ও শারীরিক ভাবে তিনি ভালো অবস্থায় ছিলেন না। এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, বন্দী জীবনের প্রথম মুহুর্ত থেকে যে কোনও মূল্যে বেঁচে থাকাটাই হয়তো তাঁর কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। এর কারণ হতে পারে, যে অপহৃত হওয়ার আগেই তাঁর মধ্যে পার্টি-লাইন সম্পর্কে সংশয় জন্মেছিল। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন মাওবাদী নেতা হিসাবে নিজের পরিচয় স্বীকার করে নিলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে। এই জন্য তিনি ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করেছেন, যে তিনি দলের পলিটবুরোর সদস্য ছিলেন এবং বলেছেন এটি একটি সাজানো অভিযোগ এবং মিডিয়ার রটনামাত্র।

    জেলে তিনি আরামে জীবন কাটিয়েছেন এই কথাটি আদৌ সত্য নয়। দশ বছরের বন্দী জীবনের প্রায় সাত বছর তিনি তিহার জেলে কাটিয়েছেন। তাঁর বইয়ে তিহার জেল সম্পর্কে তিনি প্রথমেই মন্তব্য করছেন, তিহার জেল এমনভাবেই তৈরি, যা আপনাকে পিষে ফেলবে – যদি না আপনি পুরোপুরি অসংবেদনশীল হন কিংবা আপনার চামড়া মোটা হয়। অথচ এটাকে বলা হয় তিহার আশ্রম! এখানে প্রশাসনের মানসিকতা এমনই, যে কেউ আনন্দে থাকুক এটা তারা চায় না। বন্দীদের যত বেশি হেনস্থা করা হয়, তত তারা মজা পায়। পদে পদে অভাবনীয় লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়। কারাগারে ঢোকামাত্র তাঁকে নগ্ন করে সার্চ করা হয়েছিল – একবার নয়, বারবার। বয়স ও অসুস্থতার কারণে তাঁকে একটি আলাদা সেল দেওয়া হয়; স্পন্ডিলাইটিসের কারণে চেয়ার টেবিল দেওয়া হয়। নক্সাল হওয়ার অভিযোগের কারণে তিনি জেল পাঠাগার ব্যবহার করতে পারতেন না; একই কারণে কারাগারে IGNOU-এর একটি শাখা থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে কোনও কোর্স করা তাঁর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ ছিল। শুরুতে তাঁকে একটি রেডিও রাখতে দেওয়া হয়েছিল, পরে সেটি নিয়ে নেওয়া হয়। হাতঘড়িও নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সপ্তাহে দু’দিন মাত্র পাঁচ মিনিট করে শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে ফোন করা যেত, কোনও বন্ধু এমনকি আইনজীবীকেও নয়। যাকে ফোন করা হচ্ছে, সে যে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় – এটা প্রমাণ করার জন্য হলফনামা দাখিল করতে হত। বিনা কারণে যখন তখন হাই রিস্ক বন্দীদের ফোন করা বন্ধ করে দেওয়া হত। তাঁদের জন্য টিভি নিষিদ্ধ ছিল। প্রথমে তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে প্রতিদিন দেখা করতে পারতেন, পরে এটা সাপ্তাহিক করে দেওয়া হয় – তাও মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য। যেহেতু দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কেস ছিল, তাই বিভিন্ন শহর থেকে তাঁর আইনজীবীরা আসতেন। নতুন নিয়মের ফলে তাঁদের দিনের পর দিন রাজধানীতে এসে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে হত। এইভাবে তাঁর আইনি সাহায্য পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকারকে ব্যাহত করা হয়েছিল।

    তিহারে অনেকগুলি জেল আছে। প্রতি তিন মাস অন্তর, হাই রিস্ক বন্দীদের, একটা থেকে আরেকটায় বদলি করা হত। এটি একটি রীতিমতো অবমাননাকর প্রক্রিয়া। নিজের জিনিস গোছানোর জন্য ঘণ্টাখানেক সময় দেওয়া হত; প্রস্তুত না হলে জিনিসপত্র ঘরের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত। সেল থেকে সরানোর জন্য শারীরিকভাবে তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হত। কোবাডের ওপর জেল প্রশাসন বিশেষ ভাবে বিরূপ ছিল, কারণ তিনি কিছু কর্মচারীর দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে সমস্ত বন্দীদের সই করা একটি পিটিশন জমা দিয়েছিলেন। এই বদলি প্রথার বিরোধিতা করে তিনি বারবার অনশন করার চেষ্টা করেছেন, যার জন্য তাঁকে বেশি করে হেনস্থা করা হয়েছে। এটাকে কি আদৌ তিনি জেলে আরামে ছিলেন বলা যায়?

    এটা কোনও নতুন কথা নয়, যে জেলে গ্যাংস্টাররা নক্সালদের সমীহ করে। এই বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ‘কবির কলা মঞ্চ’র সাগর গোর্খে ও রমেশ গাইচোরের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তাঁরা একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, নক্সাল কি – সেটা এই দুর্বৃত্তরা বোঝেন না, বা বুঝতেও চান না। তাঁরা শুধু জানেন, নক্সালরা পুলিশের বিরুদ্ধে এবং তাঁদেরও পুলিশের ওপর রাগ আছে; সুতরাং দুইয়ে দুইয়ে চার। ঝাড়খন্ডে কারাবাসকালে সেই রাজ্যের মাওবাদী আন্দোলন সম্পর্কে কোবাড গান্ধীর কিছু অভিজ্ঞতা হয়, যা তাঁকে একই সাথে হতবাক ও হতাশ করে। প্রথমেই তিনি লিখছেন, যখন আমাকে হাজারিবাগ জেলে বদলি করা হল, আমি আবিষ্কার করলাম যে সেখানকার মাফিয়ার প্রায় অনেকটাই খোদ নক্সাল বন্দীরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি দেখেছেন, ঝাড়খন্ডের নক্সাল বন্দীরা নিজেদের রাজ্য, এমনকি নিজের গ্রাম সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানেন না। তিনি সেই রাজ্যের মাওবাদী আন্দোলনের নৈতিক অবক্ষয় খুঁটিয়ে বর্ণনা করেছেন। ক্ষমতা ও অর্থ কীভাবে তাঁদের উদ্ধত ও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছে সেটা তিনি নির্দ্বিধায় তুলে ধরেছেন। ঝাড়খন্ডের এই অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবে মাওবাদী রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর মোহভঙ্গ সম্পূর্ণ করেছিল। এরপরে কেন তিনি মুক্তি পাওয়ার পর দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, বা কেন বই প্রকাশনার জন্য দলের অনুমতি নেননি – এই প্রশ্নগুলি আলোচনা করা অর্থহীন হয়ে যায়।

    মাওবাদী পার্টি কোবাড গান্ধিকে বহিষ্কার করার অন্যতম যে কারণটি উল্লেখ করেছে, সেটি হল তিনি মার্ক্সীয় দর্শন পরিত্যাগ করে বুর্জোয়া অতীন্দ্রিয়বাদে আশ্রয় নিয়েছেন। কোবাড, তাঁর বইয়ে এবং করন থাপার সহ অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাৎকারে, বারবার যেটা উল্লেখ করেছেন এবং যেটা আসলে তিনি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছেন সেটা হল – ষাটের দশকে তিনি যখন রাজনীতিতে এসেছিলেন, তখন অর্ধেক বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ছিল আর আজ অর্ধ শতাব্দী বাদে তাঁদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। এই নিদারুণ ব্যর্থতা কেন, কীভাবে হল? কোবাড খুব নিশ্চিত, যে পুঁজিবাদ মানুষের কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, বরঞ্চ তা আরও ঘনীভূত হবে। সীমিত সময়ের জন্য হলেও, সমাজতন্ত্রই মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করেছে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু সমাজতান্ত্রিক আদর্শ আজও অম্লান। ধরে নেওয়া হয়েছিল, যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই মানুষের মধ্যে আপনা থেকেই সমাজতান্ত্রিক চেতনা গড়ে উঠবে। কিন্তু সেভাবে হয় না, যে কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ান সমৃদ্ধ হয়ে উঠলেও সেই ‘নিউ ম্যান’ গড়ে তোলার ভাবনা অধরাই থেকে যায়। এর কারণ, সমাজতন্ত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে। সমাজ পরিবর্তনের এই প্রজেক্টের মধ্যে তিনটি উপাদান যুক্ত করতে হবে – সুখ, স্বাধীনতা এবং মূল্যবোধ। তিনি মনে করেন, জীবিকার সংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ যাতে আনন্দে থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। মানুষকে স্বাধীন হতে হবে, তার নিজের মধ্যে স্বাধীনতা উপভোগ করতে হবে। তিনি নিজে যদি স্বাধীনতা অনুভব না করেন, তাহলে তিনি অন্যকে স্বাধীন করবেন কী ভাবে? – তিনি প্রশ্ন করেন। আজকের ভোগবাদী সমাজে মানুষ একটা বিচ্ছিন্ন জীব, যে নিজের মধ্যে গুমরোয়, হতাশায় অবসাদগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে তাকে মুক্তি দিতে হবে; তার দৈনন্দিন অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোটাই যথেষ্ট নয়। তৃতীয় উপাদানটি হল মূল্যবোধ, যে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর স্ত্রী অনুরাধা গান্ধীর জীবনকে মডেল হিসাবে তুলে ধরছেন। অনুরাধা ছিলেন একজন নিবেদিত মাওবাদী নেত্রী। তাঁর প্রবন্ধ সংকলন, ‘SCRIPTING IN TIME’এ তিনি জাতপাত ও লিঙ্গ সমস্যা নিয়ে যে ক্ষুরধার আলোচনা করেছেন, তা ভারতবর্ষের কোনও কম্যুনিস্ট নেতানেত্রী আজ অবধি করে উঠতে পারেননি। কোবাড বলছেন, একজন মার্ক্সবাদীকে সরল, সাদাসিধে হতে হবে; দম্ভ, অহংবোধ, আত্মপ্রচার পরিহার করতে হবে, সর্বদা হাসিখুশি থাকতে হবে এবং প্রায় শিশুসুলভ সারল্য নিয়ে মানুষের সাথে মিশতে হবে।

    দুঁদে সাংবাদিক করন এই বিষয়টিকে আরও একটু উস্কে দেন। তিনি বলেন, কম্যুনিজম ব্যর্থ হয়েছে, কারণ মার্ক্স মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি (HUMAN NATURE) বুঝে উঠতে পারেননি। মানুষ আদপে স্বার্থপর, নিজের এবং পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি ছাড়া কিছু বোঝে না। কোবাড বলে ওঠেন, এটা একশো শতাংশ ঠিক, কিন্তু ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী বাল্যকালের প্রথম পাঁচ-ছয় বছরে একজন মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা, রুচি নির্ধারিত হয়ে যায়। বাকি জীবনে সেই মানসিকতাই বারবার তাঁর বিভিন্ন কাজকর্মের মধ্যে ফুটে ওঠে। এই চক্র থেকে কী ভাবে উদ্ধার পাওয়া যায়, তা ভাবতে হবে। ‘ফ্র্যাকচার্ড ফ্রীডম’-এর শেষ দিকে মানুষের ওপরে তাঁর দৃঢ় আস্থা তিনি ব্যক্ত করেন। তিনি লিখছেন, আশা ও উৎকর্ষের বীজ মানুষের চরিত্রে মজ্জাগত; কোনও একদিন তা ফুল হয়ে বিকশিত হবে।

    স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্যকে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, কোনও আন্দোলন অহিংস না সহিংস হবে – এই প্রশ্ন অবান্তর। প্রশ্নটা কেন অন্যভাবে করা হয় না? হিংসা তো সর্বত্র, সর্বব্যাপী; রাষ্ট্র তো সামান্য অজুহাতে নিরীহ, অসহায় নাগরিকদের দমন-পীড়ন করে, গুলি চালায়, হত্যা করে। উপনিবেশ স্থাপন করার সময় ইউরোপীয় দেশগুলি কত আদিম জনজাতিকে সম্পূর্ণ নিকেশ করে দিয়েছে। আসল ব্যাপারটা হল, ‘কীভাবে’ জিততে হবে। তাতে হিংসার প্রয়োজন হতেও পারে, নাও হতে পারে। তিনি কৃষক আন্দোলনের উদাহরণ উত্থাপন করেন, কীভাবে তাঁরা সম্পূর্ণ অহিংস পন্থায় রাষ্ট্রকে নতজানু হতে বাধ্য করেছেন। তাঁরা আদানি-আম্বানিকে বয়কট করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়কার বয়কট আন্দোলনকে ফিরিয়ে এনেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কম্যুনিস্টরা কোনদিনও এসব নিয়ে ভাবেননি। আমাদের দেশের কম্যুনিস্টরা ভীষণ গোঁড়া, সংকীর্ণমনা, উদ্ভাবনী চিন্তাকে আমল দেন না; বাস্তবে কোনও নতুন চিন্তাকে নেতৃত্ব বিপজ্জনক মনে করেন এবং সেই ব্যক্তিকে দলে টার্গেট করে কোণঠাসা করে দেওয়া হয়। তাঁদের বহু বিতর্কিত সাংগঠনিক ব্যবস্থা ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’র কথা ধরা যাক। তত্ত্বগতভাবে এর থেকে বেশি গণতান্ত্রিক কিছু হয় না: সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত সবার ওপর বর্তাবে এবং মতামতের ভিন্নতা থাকলেও, তাঁরা সেটা মেনে চলবেন। বাস্তবে নেতা এবং তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নিজেদের খুশি মত যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ সম্পর্কে আমাদের ভক্তি, সুফি আন্দোলন, চার্বাক থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, যা আমরা কোনওদিনই চেষ্টা করিনি।

    ভবিষ্যতের কথা বলতে গিয়ে তিনি মনে করান যে রুশ, চিন – দু’টি বিপ্লবই দুই মহাযুদ্ধের সময়ে হয়েছে; এমনকি পারি কমিউনের সময়ও প্রাশিয়ান যুদ্ধ চলছিল। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রাম অনিবার্য হতে পারে, কিন্তু শান্তির সময়ে তা আদপেই কার্যকরী নয়। এখন হিংসার সময় নয়। যে সাংবিধানিক অধিকারগুলি আমরা অর্জন করেছি, সেগুলি আমাদের রক্ষা করতে হবে। নির্বাচন বয়কট করে নক্সালরা ভুল করছে, তাঁদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। প্রবল এই সংকটের সময়েও, শেষের সময় আগত এটা বিশ্বাস করতে আমি অস্বীকার করি। আমি আশাবাদী।




    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ | ২৬৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:5e2:56f3:b2d0:***:*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:১০502215
  • ভাল লাগল 
  • সীমা ঘোষ | 103.199.***.*** | ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:০৭502246
  • খুব ভালো একটি প্রবন্ধ পড়লাম, আমার বেশ কিছু ভাবনার সমর্থনে এ লেখাকে পেয়ে গেলাম। কমিউনিস্ট পার্টি খুব রক্ষণশীল। তত্ত্ব  তাদের যত উচ্চ আদর্শ থাক, বাস্তবে একটি বিরোধী মত শোনার ধৈর্য নেই। অনেক সময় কলেজে দেখতাম দল বেঁধে কাউকে কী ভাবে কোনঠাসা করার চেষ্টা হতো, সত্যি বলতে এ বিষয়টি এই  সংকীর্ণতার সপক্ষে দাঁড় করাতাম মনে মনে । 
    সোমনাথদা, লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
  • কল্লোল | ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫৮502247
  • কোবাদের লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা বিস্তারে থাকলে ভালো লাগতো। সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা নিয়ে এখানে কোবাদের মত বলে যা লেখা আছে তাতে একেবারেই একমত নই। মার্ক্স সমাজতন্ত্র বলতে যে মডেল খাড়া করেছিলেন এবং লেনিন-স্তালিন-মাও ইত্যাদিরা যে মডেল প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আদতে পুঁজিবাদ। পুঁজির মালিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জায়গায় রাষ্ট্র। এবং তাতেই গন্ডোগোল। রাষ্ট্র একটি সমাজবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান, সে পুঁজির মতো একটি সামাজিক শক্তির নিয়ন্ত্রা হতে পারে না। আদতে সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে মার্ক্স থেকে মাও কারুরই কোন ভাবনা ছিলো না। তারা পুঁজিকেই শেষ কথা বলে ধরে নিয়েছিলেন। পুঁজির বাইরে বের হওয়ার কথা ভাবেন নি। ফলে পুঁজি ছাড়া উৎপাদন বা সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ভেবে উঠতে পারেন নি। সেটা ভাবতে পারলে অন্য সমস্যাগুলো (গণতন্ত্র, মানুষের স্বাধীনতা ইত্যাদি) দূর করা যেতো। এনিয়ে বহু বহু কাল আগেই গুরুতে আমি লিখেছিলাম - সমাজতন্ত্রের সংকট - কিছু ভাবনা।  লেখাটা গুরুর পুরোনো ফর্ম্যাটে, তাই ঠিক মতো পড়া যায় না। আর একবার লেখাটা প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করছি। 
  • কল্লোল | ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:৫৯502248
  • কোবাদের লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা বিস্তারে থাকলে ভালো লাগতো। সমাজতন্ত্রের ব্যর্থতা নিয়ে এখানে কোবাদের মত বলে যা লেখা আছে তাতে একেবারেই একমত নই। মার্ক্স সমাজতন্ত্র বলতে যে মডেল খাড়া করেছিলেন এবং লেনিন-স্তালিন-মাও ইত্যাদিরা যে মডেল প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আদতে পুঁজিবাদ। পুঁজির মালিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জায়গায় রাষ্ট্র। এবং তাতেই গন্ডোগোল। রাষ্ট্র একটি সমাজবিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান, সে পুঁজির মতো একটি সামাজিক শক্তির নিয়ন্ত্রা হতে পারে না। আদতে সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা নিয়ে মার্ক্স থেকে মাও কারুরই কোন ভাবনা ছিলো না। তারা পুঁজিকেই শেষ কথা বলে ধরে নিয়েছিলেন। পুঁজির বাইরে বের হওয়ার কথা ভাবেন নি। ফলে পুঁজি ছাড়া উৎপাদন বা সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা ভেবে উঠতে পারেন নি। সেটা ভাবতে পারলে অন্য সমস্যাগুলো (গণতন্ত্র, মানুষের স্বাধীনতা ইত্যাদি) দূর করা যেতো। এনিয়ে বহু বহু কাল আগেই গুরুতে আমি লিখেছিলাম - সমাজতন্ত্রের সংকট - কিছু ভাবনা।  লেখাটা গুরুর পুরোনো ফর্ম্যাটে, তাই ঠিক মতো পড়া যায় না। আর একবার লেখাটা প্রকাশ করার তাগিদ অনুভব করছি। 
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ২২:৫২502270
  • ১  অর্থনীতির ক্ষেত্রে মার্ক্সের যুগান্তকারী কাজ হোল পুঁজির গতিশীলতা এবং পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ডায়নামিক্সের বিশ্লেষণ। কেইন্সের যেমন শর্টটার্ম মডেল (উনি বিশ্বাস করতেন দীর্ঘকালীন বিশ্লেষণ অপ্রাসঙ্গিক), মার্ক্সের তেমনই লং টার্ম ডায়নামিক্স। সারপ্লাস ভ্যালুর সংযোগে পুঁজির সঞ্চয়ীকরণ ও বৃদ্ধি হোল পুঁজিবাদী ব্যবস্থার গতিশীলতার কারণ।
      এবং টেকনোলজির অগ্রগতির (  অর্গানিক  কম্পোজিশন অফ ক্যাপিটালে ক্রমশঃ শ্রমশক্তির অনুপাত কমে যন্ত্র ও তরল পুঁজির অনুপাত  বৃদ্ধি) দূরগামী প্রভাব (সমাজে ও আর্থিক ব্যবস্থায়) নিয়ে মার্ক্স ও শ্যুম্পেটার ভেবেছেন। কিন্তু কম্যুনিস্ট পার্টি এসব নিয়ে অনুধাবন না করে 'কৃষি আমাদের অমুক ও শিল্প আমাদের তমুক গোছের গোলগোল কথা বলে গেছেন।
     
    ২ কিন্তু তারপর? কীভাবে নতুন পরিবর্তিত সমাজে উৎপাদন ও পুঁজি নির্মাণ হবে, টাকার জায়গায় উৎপাদন, বিনিময় , উপভোগ ও বিতরণের পদ্ধতি কীহবে? বাজার ব্যবস্থা কীভাবে কমতে কমতে ইতিহাসের পাতায় যাবে -এসব নিয়ে স্পষ্ট ভাবনা মার্ক্স থেকে মাও অবধি কারও গড়ে ওঠেনি, সম্ভবও ছিলনা। তাঁরা কেউ ত্রিকালজ্ঞ ঋষি ছিলেন না, মানুষ ছিলেন।
    ৩ চীন ও রাশিয়ার কথিত সমাজতন্ত্রে পুজির সামাজিকীকরণ হয়নি, রাষ্ট্রীকরণ হয়েছে। ফলে এক ধরণের স্টেট ক্যাপিটালিজম গড়ে উঠেছিল, তাতে পার্টির আমলারা হয়ে উঠেছিলেন বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণী।
      আজও ভারতের কমিউনিস্টদের অবচেতনে পাবলিক সেক্টর ও সমাজতন্ত্র প্রায় সমার্থক, শুধু পুঁজির ব্যক্তি মালিকানা = পুঁজিবাদ।
     ৩ মার্ক্স ও লেনিনের স্বপ্নে ছিল-- রাষ্ট্র নামক শ্রেণীগত দমনের যন্ত্রটি ক্রমশঃ ক্ষয় হতে হতে শূন্যে বিলীন হবে। বাস্তবে হয়েছে উলটো। আজ যেকোন ব্যবস্থায় রাষ্ট্র একটি লেভিয়াথান--সমাজ ও দেশের উর্ধে এক প্রকান্ড দানব যে নাগরিকের ব্যক্তিগত স্পেসটুকু দখল করতে চায়। এর শুরু স্তালিনের সিস্টেমে।
    ৪ প্রলেতারিয়ান ডিক্টেটরশিপ  নামের সোনার পাথরবাটি ধারণাটি এক বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল।মাওবাদী দলের মধ্যেও ক'বছর আগে প্রয়াত নারায়ণ সান্যাল এই শতকের গোড়ায় প্রশ্ন তুলেছিলেন-- কীভাবে পার্টি ও সমাজবাদী সিস্টেমের মধ্যে একটা ক্রস চেক ও ব্যালান্সের ব্যবস্থা করা যায় যাতে ক্ষমতা একটি ছোট গ্রুপের হাতে কুক্ষিগত নাহয়। এর সমাধান আজও মার্ক্সবাদীরা করে উঠতে পারেননি। তাই ইল জং ও শি পিংদের নানান অবতার নিয়মিত ভাবে দেখা যায়।
     
    ৫ গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা আর একটি গাল্ভরা শব্দ --ওই সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মত। এতে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের লাইন জারি রাখার সুবিধে পায়। এই ব্যবস্থায় অল্পসংখ্যকের বা বিকল্প মতের জায়গা সংকুচিত হয়।
       সংখ্যাগরিষ্ঠের মত মানেই যে সঠিক মত হবে তার কোন মানে নেই। তাই দরকার বিকল্প মতকেও ব্যাখ্যা ও প্রচারের এবং বিতর্কের জায়গা দেওয়া। সেটা শক্তির পরিচয়। অন্য কিছু শুনলেই 'গেল গেল' ভাব করাটা দুর্বলতা।
  • Somenath Guha | ২২ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:৪০502271
  • এটা ঘটনা নামে সমাজতন্ত্র হলেও রাশিয়া ও চিনে পার্টি চালিত পুঁজিবাদ প্র্যাকটিস হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কোনো বাস্তব রূপরেখা এখনো আমরা পাইনি। 2015 সালে নোবেল পাওয়া এক বেলারুশের সাংবাদিক তাঁর বই দ্য লাস্ট অফ দ্য soviets এ লিখছেন কম্যুনিস্টরা একটা ইনসেন প্রজেক্ট নিয়েছিল, সেটা হচ্ছে টু বিল্ড আ নিউ ম্যান। সত্যিই সেই নিউ ম্যান অধরা থেকে গেছে যে নিজের থেকে সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেবে। আর এক দলীয় শাসনে সত্যি কি গণতন্ত্র পাওয়া যায়, সম্ভব, যেখানে মানুষের কোনো চয়েস নেই। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা সম্পর্কে যত কম বলা যায় ভালো। পার্টির মধ্যে ভিন্ন মত দমন করার জন্য এটা ব্যবহার করা হয়েছে, হচছে। অনেক সমস্যা। কিন্তু পুঁজিবাদ ও তো নিদারুণ ভাবে ব্যর্থ। সুতরাং এই পথ খোঁজা চলবেই।
  • Ranjan Roy | ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১৫:০৫502278
  • ঠিক বলেছেন সোমনাথ।
  • Sumi Khan | ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৪১502343
  • কোবাড গান্ধীর সাথে শতভাগ একমত আমি। বাম চিন্তার ধ্বজাধারী রা আত্মসমালোচনা করেন না।ত্যাগী কর্মী দের কতো সহজে প্রত্যাখ্যান করেন! যেমন খুশি অভিযোগ তাদের মনমতো সাজান! 
     এমন ত্যাগী মেধাবী যুক্তিবাদী নেতাকে বারবার স্যালুট জানাই! 
    তিনি বিনা অপরাধে অত্যাচারিত হলেন, প্রিয়তমা জীবনসঙ্গীকে হারালেন! কতো ভয়ঙ্কর অপরাধী বুক চিতিয়ে সমাজে ঘুরছে অসাধু অবৈধ পথে বিপুল বিত্তবৈভব গড়ে!  অথচ জ্ঞানী গুণি জনেরা এ সমাজে নিঃস্ব ধিকৃত,  দল থেকেও বহিস্কৃত!  
    ১০ টি বছর তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেলো নির্মম বর্বরোচিত নির্যাতন, মধ্যযুগীয় মিথ্যাচার অনাচারে! আমি সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেললাম।  
    কোবাড গান্ধীর জয় হোক! সত্যের জয় হবেই
    অশেষ কৃতজ্ঞতা গুরুচন্ডালী, তোমাদের জন্যেই কোবাড গান্ধীকে জানবার সুযোগ হলো! তাঁর সঙ্গে আছি  আমি এবং আমরা!
  • Sobuj Chatterjee | ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৫৯502355
  • ঋদ্ধ হলাম। লেখার সঙ্গে আলোচনা ও সমান গুরুত্বপূর্ণ! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন